আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-০৩

0
415

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৩

–সে যদি পরী হয় তাহলে ব্যথা পায় কি করে!
তাঁদের কাছে এতো’এতো অলৌকিক শক্তি,তারা নাকি বলে খাট থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথায় কান্না করে!এই আপনি যদি পরী হন,তাহলে ব্যথায় কান্না করছেন কেন?পরীরা কি কান্না করে নাকি?
.
আকাশের কথা শুনে আনহার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়!তাই সে কান্নার গতিবেগ কিছুটা কমিয়ে রাগান্বিত ভাবে আকাশকে বলে…

–এই খচ্চর ছেলে,তুই আমাকে ফেললি কেন সেটার উত্তর দে আগে?

–আপনি আমার সাথে অদ্ভুত আচরণ করায় এমনটা করেছি।

–তাই বলে কি তুই আমাকে এভাবে খাট থেকে ফেলে দিবি নাকি?

–আসলে দুঃখিত নিজের অজান্তে করেছি এমনটা।
নেক্সট টাইম আর এমনটা হবে না।সো এবার আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন,যে আপনি পরী হলে ব্যথা পেলেন কি করে?অলৌকিক শক্তির প্রকট করে তো বেঁচে যেতে পারতেন ব্যথা পাওয়া থেকে।
.
আকাশের সরি শুনে আনহা এবার শান্ত হয়ে যায়।
তাই সে নিজেকে শান্ত করে আকাশকে বলে…

–কারন হলো আমি তোমার স্পর্শে এসেছি।আর তাছাড়া কোনো পরী যদি কোনো মানুষের সামনে দেখা দেয়,তাহলে তার দেওয়া সমস্ত আঘাত সেই পরীর শরীরে লাগে।কারন পরী হলেও সে নিজের রূপ নিয়ে মানুষের সামনে এসেছে।তাই সেই মানুষটার সামনে পরীর সুপারন্যাচারাল পাওয়ার বেশি একটা কাজে লাগে না।পরী তখন তার কাছে মানুষের মতোই হয়ে যায়।একজন মানুষ যেমন অন্য মানুষকে আঘাত করলে যেমন চোট পায়,পরীও ঠিক সেম ভাবে চোট পায়।কারনটা ঐ যে বললাম,সে মানুষের সাথে দেখা দিয়েছে।এবং তার আসল রূপ নিয়ে সেই মানুষটার সামনে এসেছে।

–ওহ আচ্ছা…
কিন্তু আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে।

–কি প্রশ্ন?

–আপনি না বলেছিলেন পরী যদি জমিনে নেমে এসে কোনো মানুষকে স্পর্শ করে,তাহলে পরী-পালকে কম্পন হয়।এবং পরী-পালকের সবাই জেনে যায় যে কেউ একজন জমিনে নেমে মানুষের স্পর্শে গিয়েছে।
তো এখন তো আপনি নিজেই আমার শরীরে স্পর্শ করেছেন।এখন কি সমস্যা হবে না?

–এতোক্ষণে সমস্যা হয়ে গেছে।তাই আমার যেতে হবে এখুনি।তাই আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু এক ঘন্টা বা আধঘন্টা পর আবার আসবো।তখন আসার সময় তোমার বিশ্বাস হয় মতন কিছু একটা নিয়ে আসবো।

–ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু।কারন আমার ঘুমোতে হবে।

–হুম জলদিই আসবো।এখন গেলাম।আর তুমি তোমার জানালার দিকে তাকাবে না আমি লাফিয়ে পড়ার সময়।

–ঠিক আছে।
তারপর পরীটা ঘরের জানালা দিয়ে নিচে লাফ দিলো।
আর আমি অন্যপাশ ফিরে শুয়ে রইলাম।কারন আমি নিজের বিপদ ডেকে আনতে চাইনা জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে।তবে যদিও এখনো আমার পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি সমস্ত কিছু।তবে আবার এখন পুরোপুরি অবিশ্বাস ও হচ্ছে না আনহা নামক পরী টার কথা শুনে।তাই সে আসার জন্য অপেক্ষা করছি।দেখি সে আমার অবিশ্বাসকে পুরোপুরি বিশ্বাসে পরিবর্তন করতে পারে কিনা।দেখতে দেখতে চল্লিশ মিনিট হয়ে গেলো।আমি বিছানার এপাশ ওপাশ করছি শুয়ে শুয়ে।তখনি হুট করে জানালা দিয়ে সেই মেয়েটা প্রবেশ করলো।তারপর সে আমায় জিগ্যেস করলো…

–ঘুমিয়ে গেছো নাকি চেতন আছো?

–নাহ ঘুমাইনি।

–যাক ভালোই হয়েছে।
এই নাও তোমার জন্য পরী-পালক থেকে এক জাতীয় বিস্কিট এনেছি।এই বিস্কিট’টা সকাল বেলা খুলে তুমিও খাবে,এবং তোমার মা’কেও খাওয়াবে।দেখবে এটা খেয়ে তোমার মা তোমাকে বলবে,এমন মজার বিস্কিট তিনি আর কোনোদিন ও খায়নি।আর তোমারো এমনটাই মনে হবে তোমার মায়ের মতন।কারন এমন বিস্কিট জমিনের কোথাও পাওয়া যায় না।এই বিস্কিট খালি আমাদের পরী-পালকের এক বয়স্ক পরী বানায়।

–আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়াবো।
কিন্তু আপনি আমাকে এটা বলেন,যে আপনি একটু আগে আমার ভাঙ্গাচুরা দোতলা বাড়ি থেকে নিচে লাফ দিলেন,আপনার কোথাও কি ব্যথা ট্যথা লাগে নি?কারন নিচে তো ইটের কংকর রাখা আছে।

–নাহ আমার লাগে নি।

–যাক তাহলে তো ভালোই।

–হুম…
আচ্ছা বিস্কিট খেয়েও তোমার বিশ্বাস হবে কি পুরোপুরি ভাবে আমার কথা?

–দেখেন আসলে আমি একদম অবিশ্বাস করছি যে তা না।কারন অনেক অলৌকিক ঘটনাই ঘটেছে আপনার সাথে সেই কয়েকরাত আগে দেখা হওয়ার পর থেকে।
তাই কিছুটা বিশ্বাস হচ্ছে।কিন্তু পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছে না।মনের কোনো এক কোনায় এখনো মনে হচ্ছে সব কিছু আমার ভ্রম।

–আচ্ছা বিশ্বাস হলে হোক।আর না হলে সমস্যা নাই।
কারন সেটা এক সময় আপনা আপনিই তোমার বিশ্বাস হবে।তবে তোমায় আরেকটা কাহিনী বলি।আমি তোমার স্যারের বাড়িটা গাছের উপরে লটকে রেখেছিলাম দুপুরে মনে আছে?

–হুম মনে আছে।

–দেখবে তোমার সেই স্যার আগামীকাল কলেজে যাবে না।কারন সেই স্যার এবং তার বাড়ির উপরে মায়া করেছি আমি।যার দরুন তার এবং তার পরিবারের লোকজন একদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে।তারা এই দিনের কথা বলতেও পারবে না।কেউ যদি তোমার সেই স্যারকে আগামীকালের কথা জিগ্যেস করে,তাহলে দেখবে তোমার স্যার উত্তর দেওয়ার বদলে নিজেই বলবে কোনদিনের কথা বলছেন আপনি।

–ঠিক আছে আমি কালকে কলেজে গিয়ে দেখবো বিষয় টা।আর আগামী পরশুদিন আমি নিজেই স্যারকে
আগামীকালের কথা জিগ্যেস করবো।আর আপনি স্যারের মায়া আগামীকাল রাতে কাটিয়ে দিবেন।

–হুম আমিও এমনটাই ভেবেছি,যে আগামীকাল মাঝ রাতে মায়া কাটিয়ে দিব।যাতে করে রাত পোহালে সকালে তাঁদের ঘুম ভাঙ্গে।তবে এতোকিছুর পরেও যদি তোমার ভ্রম মনে হয়,বা পুরোপুরি বিশ্বাস না হয়।তাহলে তোমাকে পরী-পালকের মায়াকাল আয়নার সামনে নিয়ে যাবো।যার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি মনের যে কোনো বাসনা পূরণ করতে পারবে।তুমি মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যেটাই মনে মনে কল্পনা করবে,সেটাই তুমি আয়নার মাধ্যমে দেখতে পাবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় সেই সময় দেখা যাবে।কিন্তু সব কিছুর ভিড়ে আমার অনেক জটিল একটা প্রশ্ন আছে।

–কি প্রশ্ন?

–জমিনের বুকে এতো মানুষ থাকা সত্বেও আপনি আমার মতন আহাম্মক একটা ছেলের সামনে প্রকট হলেন কেন?

–সেসবের উত্তর তোমাকে আমি পরে দিব।

–কেন এখন দিলে কি হবে?

–কারন এখনো সেই সময়টা হয়নি।তাই তোমাকে এখন এসব বলা যাবে না।যখন সময় হবে,তখন তোমাকে আমি নিজেই সব কিছু খুলে বলবো।

–ঠিক আছে।
এবার আপনি চলে যান।আমি ঘুমাবো এখন।

–হুম আমি চলে যাবো।তবে সেটা তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।কারন তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখে আজ আমার অনেক মায়া লেগেছে।অবশ্য মায়াটা যদিও আগ থেকে তোমার উপরে ছিলো।কিন্তু আজকে তোমার কান্নারত চেহারাটা দেখে আরো মায়া বেড়ে গেছে তোমার উপরে।
তাই তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা এক নজর দেখেই আমি চলে যাবো।

–ঠিক আছে আমি ঘুমালেই না হয় আপনি চলে যাইয়েন।কিন্তু লাস্ট একটা কথা ক্লিয়ার করেন তো,যে আমার উপরে আগ থেকে আপনার মায়া কাজ করে মানি জিনিসটা বুঝলাম না।

–আকাশ প্লিজ এসব এখন জানতে চেও না।কারন তোমার আগের প্রশ্নটার সাথে এই প্রশ্নটাও একই সুতোয় বাঁধা।তাই এটার উত্তর ও এখন দিতে পারবো না তোমায়।সো তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আমি তোমার পাশে বসে আছি।

–আচ্ছা আমি ঘুমিয়ে পড়ছি।
.
তারপর আকাশ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রয়াস করে।
আর আনহা তার পাশেই বসে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।কিছুটা সময় এভাবে অতিবাহিত হতেই আকাশ ঘুমিয়ে পড়ে।আকাশ ঘুমিয়ে পড়তেই আনহা আবার আকাশের উপরে একটা মায়া করে তার ঠোঁটে স্পর্শ করে।যার কারনে আকাশ এবার কিছুই বুঝতে পারে না।আনহার মায়ায় সে এবার গভীর নিদ্রায় হারিয়ে গেছে।আনহা কয়েকবার আকাশের ঠোঁটে স্পর্শ করে আগের ন্যায় জানালা দিয়ে নিচে লাফ দেয়।আর আকাশ সেভাবেই ঘুমিয়ে থাকে।এই ঘুমের ইতি ঘটে একদম ভোর সকালে।আকাশ ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে আছে।তখনি সে লক্ষ্য করে তার জিহ্বায় মিষ্টি জাতীয় কিছু একটার স্বাদ পাচ্ছে সে।তাই সে হাতের তালু দিয়ে ঠোঁটে ঘষা দেয়।সে মনে করেছে তার ঠোঁটে হয়তো মিষ্টি জাতীয় কিছু লেগেছে,যার দরুন সেই মিষ্টির স্বাদ তার জিহ্বা পর্যন্ত গিয়েছে।কিন্তু তার ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয়।সে হাত দিয়ে ঠোঁটে ঘষা দিতেই সেই মিষ্টি স্বাদটা তার পুরো ঠোঁটেও ছড়িয়ে যায়।কিন্তু সে হাত দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না।তাই সে মনে মনে বলে….

–আরেহ আমার ঠোঁট আর জিহ্বায় কেন এতো মিষ্টি লাগছে!আমি তো রাতে তেমন কোনো মিষ্টি খাবার এই খাইনি।তাহলে কোথা থেকে এলো এই মিষ্টি স্বাদটা!
.
আকাশ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয়।কিন্তু সে এসবের কোনো উত্তর এই খুঁজে পায় না।যার কারনে সে ভাবা বাদ দিয়ে রেখে আনহার দেওয়ার বিস্কিটের প্যাকেট টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে তার মায়ের কাছে যায়।তার মাও ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।কারন তিনার নাস্তা বানাতে হবে সবার জন্য।তাই তিনি কিচেনে নাস্তা রেডি করছে।অন্যদিকে আকাশ কিচেনে গিয়ে বিস্কিটের প্যাকেটটা খুলে সেখান থেকে একটা বিস্কিট নিয়ে তার মা’কে খেতে দেয়।তার মা তার থেকে বিস্কিট’টা নিয়ে তাঁকে জিগ্যেস করে…

–এই তুই বিস্কিট পেয়েছিস কোথায়?
.
আকাশের মায়ের প্রশ্নের উত্তর আকাশ তার মা’কে মিথ্যা বলে…

–মা গতকাল কিনে এনেছি।বিস্কিট’টা অনেক মজার।তুমি একটু খেয়ে দেখো।

–আচ্ছা ঠিক আছে দে খাচ্ছি।
.
তারপর আকাশের আম্মু বিস্কুট’টা মুখে দিতেই আকাশের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে!যেটা দেখে আকাশ তার মা’কে জিগ্যেস করে….

–মা,কি হয়েছে?
তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

–আকাশ এই বিস্কিট কোথা থেকে কিনে এনেছিস রে তুই?

–মা,মোড়ের দোকান থেকে কিনে এনেছি।
কিন্তু কেন বলতো মা?

–বিস্কিট’ টা তো অনেক মজার।এতো মজার বিস্কিট আমি আমার জন্মেও কোনোদিন খাইনি।মনে হচ্ছে যেনো অমৃত খেয়েছি।এই তুই আরো কয়েক প্যাকেট নিয়ে আসিস তো বিস্কিট টা।আমি তোকে টাকা দিব।
.
আকাশ তার মায়ের কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দেয়।কারন গতরাতে বলা আনহার কথা মিলে গেছে।সে তার মা’কে বিস্কিট’টা এনে দিবে বলে বিস্কিটের প্যাকেটটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।তারপর সেও ভক্ষণ করে বিস্কিট’টা।তারো মাথা আউলে যায় তার মায়ের মতন বিস্কিট’টা খেয়ে!কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়।কারন সে জানে এই বিস্কিটের উৎপত্তি কোথায়।তার বিশ্বাসের মাত্রা আরো বেড়ে যায় আনহার উপরে।সে এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আনহার কথা।এর মধ্যে আকাশের মা নাস্তা রেডি করে আকাশকে ডাক দেয়।সে তার মায়ের ডাকে নাস্তা করতে নিচে চলে যায়।পরে নাস্তার পালা শেষ করে কলেজে রওয়ানা হয়।মাঝ পথে গতকালের সেই বডগাছটার উপরে সে তার স্যারের বাসা ঝুলে থাকতে দেখে।যেটা দেখে তার চরম পরিমাণে হাসি পায়।কিন্তু সে নিজেকে কন্ট্রোল করে কলেজে চলে যায়।কলেজে গিয়ে দেখে সেই স্যারটা কলেজে আসেনি।ক্লাস শেষ হয়ে ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে,কিন্তু সেই স্যার আজকে কলেজেই আসেনি।
এবার তার পাকাপোক্ত ভাবে বিশ্বাস হয় আনহার কথা।
যে আনহা তাঁকে যা বলেছে সব কিছুই সত্যি।আর আনহা একজন পরী।সমস্ত কিছু তার মনের কোনো ভ্রম নয়।এসব।দেখতে দেখতে সারাটাদিন কেটে যায়।কিন্তু আনহা আজকে আর জমিনে নেমে আসে না।কারন গতকাল আনহা জমিনের বুকে দুইবার প্রকট হয়েছে,আর দুই বারই সে আকাশকে স্পর্শ করেছে।যার দরুন পরী-পালক অনেক বড় কম্পন হয়েছে।তাই আজকে পরী-পালকের মেইন দরজায় আজকে অনেক কয়জন পাহারায় লেগেছে।তাই আনহা আজকে আর জমিনে আসেনি।তবে সে চাইলে আজকেও জমিনে আসতে পারতো,কারন শুরা পান করলে কেউ তাঁকে জমিনে আসা থেকে আটকাতে পারবে না।কিন্তু সে তার পরেও রিক্স নেয়নি।কারন তার এতো বছরের সাধনা সে একদিন জমিনে নেমে নষ্ট করতে চায় না।তাই সে আজকে আর আসেনি জমিনে।কিন্তু অপরদিকে আকাশ তার অপেক্ষায় সারাদিন বসে ছিলো।কিন্তু সে না আশায় মন খারাপ করে ঘুমিয়ে যায় রাতের বেলায় আকাশ।পরেরদিন আকাশ কলেজে যাওয়ার পথে স্যারের বাসাটাকে সে আর বটগাছের উপরে দেখতে পায় না।কারনটা হলো অতিবাহিত হয়ে যাওয়া রাতে স্যারের উপর থেকে আনহার করা মায়া জাদু টা কেটে গেছে।তাই সে কোনো কিছু না ভেবে কলেজে চলে যায়।কলেজে গিয়ে সে দেখতে পায়,সেই স্যারটা তার আগেই কলেজে চলে এসেছে।তাই সে স্যারের কাছে গিয়ে জিগ্যেস করে….

–স্যার গতকাল কি শরীর খারাপ ছিলো আপনার?

–কেনো বলতো আকাশ?

–স্যার গতকাল কলেজে আসেন নি যে তাই জিগ্যেস করলাম।

–এই আকাশ কি সব উল্টো পাল্টা বলছো তুমি হ্যাঁ?
আমি গতকাল কলেজে আসিনি মানে কি?

–স্যার আপনাকে সত্যিই গতকাল কলেজে দেখতে পাইনি তো।

–আকাশ তোমার মাথায় সমস্যা হয়েছে।তুমি ভালো একজন ডক্টর দেখাও।কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছো তুমি!আমি যদি গতকাল কলেজে না আসি,তাহলে তোমাকে দাঁড় করিয়ে পড়া কে শুনেছে?

–স্যার সেটা তো পরশুদিনের কাহিনী।

–আকাশ উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করে ক্লাসে যাও।
চরম পরিমাণে রাগ উঠছে তোমার উপরে আমার।
.
আকাশ আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ক্লাসে চলে যায়।কারন টা তার জানাই।গতকালের সৃতি আনহার মায়া জাদুর কারনে স্যারের মাথা থেকে সরে গেছে।তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসে চলে গেছে।
প্রতিদিনের ন্যায় আজকে ক্লাস করে বাড়ি ফিরছিলো হেঁটে হেঁটে,তখনি হুট করে সে অনামিকাকে দেখতে পায়।যে কিনা রাহুল বাদে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে চিপকা-চিপকি করে বাইকে করে যাচ্ছিলো।যেটা দেখে তার চরম পরিমাণে রাগ উঠে যায়!কারন তার আর্থিক অবস্থা খারাপ দেখে অনামিকা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে রাহুলকে ধরেছে।কিন্তু সে আজকে আবার অন্য আরেকটা ছেলের সাথে বাইকে চিপকা,চিপকি করে যাচ্ছে।যেটা দেখে তার মাথায় আগুন ধরে গেছে!তার ভালোবাসার মানুষ এতো জনের সাথে মেলামেশা করছে,সেটা সে কোনো মতেই সহ্য করতে পারছে না!তার ভিতরটা যেনো ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে!তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় এখুনি গিয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সে নিজের প্রাণ দিয়ে দিবে।সে অনেক দূর থেকে একটা বড় গাড়ি টেনে আসতে দেখে।যার পরপরই সে রাস্তার একদম মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়।অপরদিকে আনহা পরী-পালক থেকেই টের পায়,যে আকাশের কোনো বিপদ হতে চলেছে।তাই সে তখনি জমিনে প্রকট হয়।এদিকে আকাশ রাস্তায় একদম মধ্যে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।দূর থেকে টেনে আসা সেই বড় গাড়িটা আকাশের একদম সামনে চলে এসেছে।আকাশ নিজের চোখেই তার মৃত্যুকে দেখতে পারছে।এমন সময় গাড়িটা টেনে এসে আকাশের গায়ের উপরে তুলে দিয়ে সে চলে যায়।কিন্তু অবাক করা বিষয় আকাশের কিছুই হয় না!গাড়িটা আকাশকে পিষে দেওয়ার আগেই আনহা জমিনে প্রকট হয়ে তাঁকে জড়িয়ে নিজের বাহুতে নিয়ে নেয়।যার কারনে গাড়িটা তার শরীরের উপর দিয়ে গেলেও অলৌকিক ভাবে আকাশ বেঁচে যায়।যেটা দেখে আশেপাশের সবাই আকাশের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে!কারন এতো বড় গাড়ি আকাশের উপরে চড়ে যাওয়ার পরেও তার কিছু হয়নি!সবাই হতবাক হয়ে আছে এই দৃশ্য দেখে!আর হতবাক হওয়ার এই কথা।কারন তারা খালি আকাশকে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যেতে দেখেছে।কিন্তু তাঁকে কে বাঁচিয়েছে,এবং তার পিছনে কে দাঁড়িয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করেছে,সেটা কেউ এই দেখতে পাচ্ছে না।সবাই এখনো চোখ পাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!এর মধ্যেই আনহা আকাশের গালে কোষে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়।যেই থাপ্পড়”টা খাওয়ার পরে আকাশ নিজের তালগোল হারিয়ে ফেলে….

চলবে…..

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।