আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-০৫

0
315

#আয়নায়_বন্দী_পরী।
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৫

–চোখ মেলে তাকাতেই দেখি আনহা আমায় হাওয়ায় উড়িয়ে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে!যেটা দেখে কলিজাটা ভয়ানক ভাবে একটা মোচড় দিলো!কিন্তু আমি কিছু বলার মতন সাহস করতে পারছি না আনহাকে!তাই চুপচাপ সেভাবেই রইলাম।কিছুক্ষণ পর আনহা আমার উড়িয়ে নিয়ে সাগরের মাঝখানে একটা বিশাল দ্বীপের মাঝে ছেড়ে দিলো।সেখানে ছেড়ে দিতেই আমার নিশ্বাস ভারী হয়ে গেলো।আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না।যার কারনে হাত-পা ছুটাছুটি করতে আরম্ভ করলাম।মনে হচ্ছে যেনো এখুনি আমার প্রাণটা বের হয়ে যাবে।তখনি আনহা তার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দিয়ে পাম্প করতে লাগলো।যার পরপরই আমি লাফ দিয়ে উঠে গেলাম।যেটা দেখে আনহা আমায় বলে উঠলো….

–এই তোমার কি হয়েছে?
তুমি মহিষের মতন বিছানার মধ্যে এমনভাবে গড়াগড়ি কেন করছো?

–আনহার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম!
তাই চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি তার দেখি।যেটা দেখে সে আবারো বলে উঠলো…

–কি হলো কথা বলছো না যে?তোমরা মানুষরা বুঝি এমনটা করো ঘুমালে?

–আমি বিছানার মধ্যে গড়াগড়ি করছি মানে কি?
তুমি না আমায় হাওয়ায় উড়িয়ে একটা দ্বীপের মাঝে নিয়ে গিয়েছো।যেখানে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।যার কারনে তুমি আমার মুখে পাম্প করলে?

–এই মাথামোটা,তোমায় কোন শয়তানে ধরেছো সেটা বলো আমায়?আমি তোমায় হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছি মানে কি?আর কোথাও নিয়ে গেলে কি তোমার অনুমতি নিব না নাকি?আর তাছাড়া নিয়ে গেলেও তুমি এখন বিছানায় কি করছো তাহলে?

–আনহার কথা শুনে আবারো শকট খেলাম!আর আশেপাশে ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম।ওমাহ এ কি!আমি তো নিজের বিছানায় শুয়ে আছি!তার মানে কি এতোটা সময় আমি সেসব কিছু স্বপ্নে দেখছিলাম নাকি!আমার তো তাই মনে হচ্ছে এখন।কারন আমি তো নিজের বিছানায় শুয়ে আছি।আসলে আনহা সরি।আমি চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই ঘুম চলে এসেছিলো।আর ঘুমের ঘোরেই একটা স্বপ্ন দেখেছি।যেই স্বপ্ন টা দেখে সব কিছুই আমার বাস্তব মনে হচ্ছিলো।তাই এমন অদ্ভুত আচরণ করেছি।

–তোমার কথাবার্তা শুনে ইচ্ছে করছে ধ্রামমম করে একটা আছাড় দিয়ে তোমার পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলি।ইশ কতো সুন্দর একটা রোমান্টিক মূহুর্তে ছিলাম।কিন্তু সব কিছুতেই তুমি আমার পানি ঢেলে দিলে।

–সরি আনহা আমি বুঝতে পারিনি।

–সরিতে কাজ হবে না।কারন এতোটা সময় তোমার সাথে ঘুমিয়ে পড়া তোমার উষ্ণ ঠোঁট জোড়ায় স্পর্শ করছিলাম।কিন্তু এখন আমি তুমি জাগ্রত থাকা অবস্থাতেই স্পর্শ করবো।

–কিহহহ!

–হুম…
আমি এখন তোমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিব।
আর তুমি এতে একদম বাঁধা দিবে না।

–আল্লাহ কি রকম পরীরে বাবা তুমি!
এই অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি আমার একদম কাছে চলে আসছো।

–আমরা পরীরা এমন এই।আমরা যা করি সব কিছুই চটজলদি হয়।ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে কাজ করার প্রতিভা আমাদের কাছে নেই।কারন যেই কাজ পরে করবো,সেটা সময় থাকতে আগ থেকেই সামলে নিলে সেই সময়টা বেঁচে যায়।আর প্রেশার ও পরে না সেই কাজের।তাই এখন পরের কাজ আগে করবো।সো একদম চুপচাপ থাকো তুমি।
.
আকাশ আনহার তাড়াহুড়ো দেখে কিছু যে বলবে আনহাকে,সেই মনোভাব টা হারিয়ে ফেলেছে।এর মধ্যেই আনহা আকাশের ঠোঁটে নিজের অস্তিত্ব মিলিয়ে দিয়েছে।যেটা দেখে আকাশ আরো বড় শকট খায়!কিন্তু কি আর করার,আনহার পাগলামি তার এখন সহ্য করতে হবে।কারন পাগলকে শান্ত করতে হলে আপোষে শান্ত করতে হয়।উগ্র মেজাজে কোনো কিছু করলে পাগলের পাগলামির মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়।তাই আকাশ আনহাকে বাঁধা দেয় না।আনহা ইচ্ছে মতন আকাশের ঠোঁটে স্পর্শ করে।তারপর হুট করেই সে আকাশকে ছেড়ে দিয়ে বলে….

–আজকের মতন এখানেই সমাপ্তি।আবার পরে কখনো হামলা করবো তোমার ঠোঁটে।সো এখন আমি চলে গেলাম।
.
আনহার কথার প্রতিত্তোরে আকাশ খোঁচা মেরে বলে….

–আরেহ এতো জলদি তোমার পাগলামি বন্ধ হয়ে গেলো যে?এখনো তো সারাটা দুপুর পড়ে আছে।এই পাঁচ-দশমিনিট চুমু খেয়ে কারোর মন ভরে নাকি?
নাও আরো চুমু খাও।এদকম ঘন্টা পুড়িয়ে আমার ঠোঁটে স্পর্শ করো….

–তুমি চাইলে আমি সারা দুপুর এই তোমার ঠোঁট নিয়ে পড়ে থাকতে পারবো।আমার কোনো সমস্যা টমস্যা নাই এতে।

–মাপ চাই দোয়াও চাই।আনহা তুমি পরী-পালকে ফিরে যাও।তুমি কোন কাতারের মানুষ তা আমার বুঝা হয়ে গেছে।তোমাকে কিছু বলা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা।আমি তোমাকে কথাটা বললাম খোঁচা মেরে,কিন্তু তুমি তো দেখি উল্টো নাচতে শুরু করেছো।

–যাহ পাগল এভাবে বলে না।আসলে আমি অনেক বেশি রোমান্টিক।তাই রোমান্স করতে কৃপণতা করি না।
সো এখন কি আমি আবার শুরু করবো?

–হে-খোদা,আমাকে উঠাই নাও।
এই মেয়ে না হয় আমার মাথা খারাপ করে দিবে পুরা।

–এই আকাশ চুপ একদম।
একদম উল্টা-পাল্টা কথা বলবি না তুই।যা এখন আমি চলে যাচ্ছি।তুই তোর শান্তির ঘুম ঘুমা।

–হুম জলদি যাও।

–হুম যাচ্ছি….
.
আনহা তারপর উধাও হয়ে যায়।মানে হলো সে পরী-পালকে চলে গেছে।এদিকে আকাশ বিছানায় বসে বসে ভাবে…

–ভাইরে এটা কার পাল্লায় পড়লাম আমি!আজীবন বই পুস্তকে পড়ে আসলাম পরীরা হয় শান্তশিষ্ট এবং নমনীয়।কিন্তু আমার পাল্লায় যে পড়েছে সে তো পুরোপুরি তারছেঁড়া।কি অত্যাচার টাই না করলো এই কয়েক মিনিট আমার উপরে।তার আচরণে মনে হচ্ছিলো যে আমার ঠোঁটটা কোনো ঠোঁট না।সেটা যেনো দুই টাকা দামের সুইংগ্রাম।
.
আকাশ এসব নিয়ে ভাবছিলো।তখনি হুট করে আবার আনহা আকাশের সামনে প্রকট হয়।তারপর ধ্রামমম করে আকাশের পিঠের মধ্যে একটা ঠুয়া মেরে তাঁকে বলে…

–এই ছেলে একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না আমার নামে।আমি তোকে ভালোবাসি।সো তোর সাথে যখন যা ইচ্ছে হবে করবো আমি।কারন আমার করার মানুষ এই হলো একজন।যেটা হলি কিনা তুই।তাই আমার সমস্ত ইচ্ছে তুই পূরণ করবি।এবং আমার সমস্ত চাহিদার মূল্য দিবি।না হয়তো তোর খবর আছে।আর হ্যাঁ আমার নামে একদম উল্টোপাল্টা কথাবার্তা চিন্তা করবি না বা মাথায় আনবি না।না হয় আবারো প্রকট হয়ে এসে তোকে ঠুয়া মারবো।
.
আনহা এই সমস্ত কথা বলে আবার গায়েব হয়ে যায়।এদিকে নিরীহ আকাশ মদনের মতন চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে আনহার চলে যাওয়ার দিকে।আনহা চলে গেলে পরী-পালকে।তখনি আকাশ বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে…

–ও-আল্লাহ…
এই মেয়ের আসলেই মাথায় সমস্যা,না না মানে মাথা ভালো।আর কিছুই বলবো না আমি এই মেয়েকে নিয়ে।না হয় আবারো ভুতের মতন প্রকট হয়ে এসে কয়েকটা দিয়ে চলে যাবে।
.
আকাশ আনহার ভয়ে কিছু বলতে চেয়েও আর বলে না।কারন খামোখা মা’র খাওয়ার এতো ইচ্ছে নেই তার।তাই সে পরবর্তীতে কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়।
এভাবেই কিছু সময় কেটে যায়।আর আকাশ সময় নষ্ট না করে ঘুমের প্রয়াস করে ঘুমিয়ে পড়ে।এক ঘুমেই মাগরিব হয়ে যায়।মাগরিবের সময় উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বই নিয়ে নাড়াচাড়া করে।এরমধ্যে আনহা আর জমিনে প্রকট হয়নি।তবে আকাশ জানে আনহা এখন না আসলেও রাতে যাবে।তাই সে রাতের বেলায় আনহা আসার অপেক্ষা করতে থাকে।অপেক্ষার প্রহর কাটে রাত এগারোটার সময়।রাত এগারোটায় আনহা আকাশের সামনে প্রকট হয়।আনহাকে দেখে আকাশের মন খুশি হয়ে যায়।কারন সেও এখন আনহাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষকে দেখতে সবারই ভালো লাগে।আনহা আকাশের কাছে এসে তাঁকে বলে…

–আকাশ তোমায় পরী-পালকে নিয়ে যাওয়ার পন্থা আমি পেয়ে গেছি।

–কি পন্থা?

–তোমায় আমি স’শরীরে পরী-পালকের সামনে নিয়ে যাবো।তারপর তোমার মধ্যে আমার সোল মানে আত্মা প্রবেশ করিয়ে দিব।যার ফলে তুমি পুরোপুরি আমার রূপ ধারন করবে।এবং আমার সুপারন্যাচারাল সমস্ত পাওয়া তোমার মধ্যে কনভার্ট হয়ে যাবে।যার দরুন তুমি পরী-পালকে প্রবেশ করতে পারবে।

–আমার মধ্যে তোমার আত্মা প্রবেশ করালে তুমি কি ভাবে কি করবে?আত্মা ছাড়া তো তুমি মরে যাবে।

–না না মরবো না।তবে যতো সময় আমার সোল তোমার কাছে থাকবে,ততো সময় আমি মরাই থাকবো।আর তুমি পরী-পালকে প্রবেশ করে মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার যে কোনো একটা চাহিদা করে ফিরে আসবে।অবশ্য চাকরির চাহিদাটাই করবে।তারপর ফিরে এসে আমার কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাথে তোমার কনিষ্ঠ আঙ্গুল মিলিয়ে দিয়ে জোদনাম শব্দটা এগারো বার পাঠ করবে।এতে করে আমার সোল আবার আমার শরীরে ফিরে আসবে।

–ঠিক আছে।কিন্তু জিনিসটা আমার কেমন যেনো লাগছে!

–আরেহ তুমি এতোকিছু ভেবো না।তোমার জন্য আমার প্রাণ গেলে এতেও আমি খুশি।তবে আশা করি কিছুই হবে না।

–আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু কখন যাবে সেখানে?

–এখুনি।
তুমি চোখ বন্ধ করো।আমি যতো সময় পর্যন্ত তোমায় চোখ খুলতে বলবো না,ততো সময় তুমি চোখ খুলবে না।কারন এর মধ্যে চোখ খুললে তুমি নিচে চলে যাবে।

–আচ্ছা…

–হুম এবার চোখ বন্ধ করো…

–আনহার কথা মতন চোখ বন্ধ করতেই সে আমার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।চোখ বন্ধ করা অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই সে আমায় বললো চোখ খুলতে।
আমি চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিশাল বড় একটা দ্বীপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।যার আশেপাশে কারোর কোনো সাড়াশব্দ শুনতে পাচ্ছি না।ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা দ্বীপ।তবে দ্বীপটা সমুদ্রের মাঝামাঝি সেটা উপলব্ধি করতে পারছি।কারন ঢেউয়ের আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।আমি এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি খপ করে আনহা আমার হাত চিপে ধরে আমায় বললো…

–এখানের আবহাওয়া বেশি একটা ভালো না।তুমি বেশি একটা সময় এখানে নিশ্বাস নিতে পারবা না।তাই চটজলদি সব করতে হবে।তাই আমি কি বলি মন দিয়ে শোনো।কিছুটা দূরেই আমাদের পরী-পালক।আমি আমার সোল এখান থেকেই তোমার শরীরে কনভার্ট করে দিচ্ছি।যার দরুন তোমার চেহারা পরিবর্তন হয়ে আমার মতন হয়ে যাবে।তারপরেই তুমি পরী-পালকে ঢুকে যাবে।এবং সেখান ঢুকে কিছুটা পথ হাঁটলেই তুমি বিশাল বড় একটা আয়না দেখতে পাবে।যেটার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি তোমার চাকরির চাহিদা করে আবার চটজলদি ফিরে আসবে।এবং ফিরে আসার সময় এই যে নাও শুরার পানিটা পান করবে।না হয়তো পরী-পালকের দারোয়ানরা তোমায় ধরে ফেলবে।তারপর ফিরে এসে আমার শরীরে আমার সোল প্রবেশ করাবে তখনের বলা সেই মন্ত্রটা পড়ে।

–আচ্ছা ঠিক আছে।
আনহা সমস্ত নিয়ম কানুন আমাকে বলে দিয়ে কিছু একটা পড়তেই সে সজোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে বেহুঁশের মতন হয়ে নিচে পড়ে গেলো।যার পরপরই তার সোলটা তড়িৎগতিতে আমার শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলো।যার ফলে আমার সারা শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠেছে।কাঁপুনি শেষ হতেই আমি যেনো আর আমার মধ্যে নেই।কেমন যেনো একটা অনুভব হচ্ছে নিজের ভিতরে!তখনি দেখি আমার গায়ের রং পাল্টে সাদা হয়ে গেছে!এসব দেখে বুঝতে বাকি নেই যে আমি এখন আনহার রূপ ধারণ করেছি।তাই সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি পরী-পালকের দিকে রওয়ানা হলাম।মনের ভিতরে অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে।কিন্তু সব চাইতে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে আনহা তার সোল আমার শরীরে প্রবেশ করানোর সময় যেই চিৎকার টা দিয়েছে,সেই আওয়াজ টা।চিৎকার টা আমার কাছে খুব অদ্ভুত লেগেছে!মনে হয় মেয়েটা তার সোল আমার আমার শরীরে প্রবেশ করানোর সময় অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে।যার দরুন সে বিকট আওয়াজে চিৎকার দিয়েছে।এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে পরী-পালকের সামনে চলে আসলাম।দরজার সামনে আসতেই আমার মাথা ঘুরে উঠলো!কারন পরী-পালকের দরজাটা এতো বিশাল যে তার নিচের অংশ দেখা যাচ্ছে,কিন্তু উপরের অংশের পরিসীমা আমি দেখতে পাচ্ছি না!শকট খেয়েও দরজা দিয়ে প্রবেশ করে পরী-পালকের ভিতরে প্রবেশ করলাম।সেখানে প্রবেশ করতেই দেখি অনেক পরীরা যাতায়াত করছে।কিছুটা সময় তাঁদের দিকে স্তব্ধ ভাবে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলাম।তারপর আবার সামনের দিকে হাঁটা দিয়ে মায়াকাল আয়নাটার সামনে চলে গেলাম।আয়নাটার সামনে গিয়ে এবার পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কারন আয়নাটার চতুঃপার্শ্বে হিরে দিয়ে মলাট করা।যেটা দেখে চোখ গোলকধাঁধার মতন ঘুরপাক খাচ্ছে!আমি কি জন্য পরী-পালকে এসেছি সেটাই যেনো আমি ভুলে গেছি!মাথায় চুলকাতে চুলকাতে কি চাহিদা করবো সেটাই ভাবছি।যদিও বা আমি এসেছিলাম চাকরির জন্য,কিন্তু সেই টপিকটা আমার মাথা থেকে সরে গেছে।তখনি আনহার সেই বিকট আওয়াজে করা চিৎকারটা মনের মধ্যে বাজতে আরম্ভ করলো।তাই কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আনহাকেই চেয়ে বসলাম।যে আনহা যেনো চিরজীবন আমার থাকে।সে যেনো কখনো আমার থেকে আলাদা না হয়।তার সমস্ত বিপদ আপদে যেনো আমি তার পাশে থেকে তাঁকে সাহায্য করতে পারি।এসব চাহিদা করতেই আয়নার মধ্যে আনহাকে ভিডিও আকারে দেখতে পেলাম।যে সে অনেক বড় একটা মজলিসের মধ্যে সবার সামনে তার মাথার মুকুট টা খুলে আমার মাথায় পরিধান করিয়ে দিয়েছে।এবং সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিচ্ছে।তারপরই আয়নাটা ভিডিও দেখানো বাদ দিয়ে রেখে আবার আগের ন্যায় হয়ে গেলো।এসব দেখে খুশিতে মনটা ভরে গেছে।তখনি দেখি অনেকজন পরী-আয়নাটার দিকেই এগিয়ে আসছে।তাই তাড়াতাড়ি আনহার দেওয়া শুরাটা পান করে নিলাম।
শুরা পান করতেই দেখি আমি সেখান থেকে গায়েব হয়ে সোজা আনহার সামনে চলে এসেছি।আনহা এখনো সেই মাটির মধ্যেই পড়ে আছে।তাড়াতাড়ি আনহার কনিষ্ঠ আঙ্গুল চেপে ধরে এগারোবার জোদনাম শব্দটা পাঠ করলাম।যার ফলে আবারো শরীর একটা কাঁপুনি দিলো।আমি নিজেকে সামলে নিতেই দেখি আনহা আমার সামনে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দুই গালে সজোড়ে দুইটা থাপ্পড় মারলো!তারপর কান্না করতে করতে বলতে লাগলো….

–এই অমানুষ,তুই জমিনে এতো অপমান এতো লাঞ্চিত হওয়ার পরেও তুই চাকরির চাহিদা করলি না কেন?
তোর জন্য একটা ভালো চাকরির কতোটা দরকার তুই জানিস?

–আনহার হাতে থাপ্পড় খেয়ে সাথে সাথে গালে হাত দিয়ে ফেললাম।কারন আমার গালের চোয়াল ভয়ংকর রকমের ব্যথা করতে আরম্ভ করেছে তার হাতে থাপ্পড় খেয়ে।তখনি সে আবার আমাকে বলতে লাগলো…

–তুই চাকরির চাহিদা না করে আমাকে চাইলি কেন মায়া কাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দে?

–কারন আমার চাকরি বাকরি এবং দুনিয়াদারীর কোনো প্রয়োজন নেই।আমার একমাত্র তুমি হলেই চলবে।আমার আর কিচ্ছু চাইনা।জমিনের বুকে মানুষ আমাকে হাজার অপমান আর লাঞ্চিত করুক,তুমি আমায় ভালোবাসা দিয়ে সব কষ্ট দূর করে দিবে।আর তুমি আমার জন্য অনেক মূল্যবান একটা পার্সন।আমার চাকরির কোনো একটা ব্যবস্থা আমি করে ফেলবো।কিন্তু জীবনে চাহিদা করার একটাই সুযোগ পেয়েছি।তাই চাকরির থেকেও মূল্যবান জিনিসটাকে আমি চেয়ে নিয়েছি।
.
আনহা আকাশের মুখে এই সমস্ত কথাবার্তা শুনে খুশিতে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আনহা আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।অন্যদিকে আকাশের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।তখনি আনহা কোনো কথাবার্তা ছাড়া শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে উড়াল দেয়।আর আকাশ সাথে সাথে আনহার বলা ছাড়াই চোখ বন্ধ করে ফেলে।আনহা আকাশকে এনে তার রুমের বিছানার মধ্যে নামিয়ে দিয়ে তার বুকের উপরে উঠে বসে।তারপর বুকের উপরে বসে আকাশের গাল টেনে ধরে তাঁকে বলে….

–পরী-পালকে সত্তুর বছরে একবারই মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে কেউ একটা চাহিদা করতে পারে।তুমি আমার সোল দিয়ে তোমার চাহিদাটা করে এসেছো।কিন্তু আমার চাহিদাটা এখনো বাকি আছে।আর সেই চাহিদাটা আমি তোমার জন্যই করবো।
সো আগামীকাল তোমার চাকরির কিছু একটা হয়ে যাবে।

–নাহ তার কোনো প্রয়োজন নেই।কারন আমি তো বলেছিই যে তুমি আমার সাথে থাকলেই হবে।আমার আর কোনোকিছুর প্রয়োজন নেই।
.
আকাশের কথা শুনে আনহার রাগ উঠে যায়!তাই সে আকাশের গাল বাদ দিয়ে রেখে তার চুল মুঠো করে টেনে ধরে তাঁকে রাগান্বিত কন্ঠে বলে….

–তোর না লাগলেও আমার লাগবে।কারন আমার ভবিষ্যৎ সন্তানাদিকে লালন-পালন করার জন্য তোর একটা ভালো চাকরির প্রয়োজন।সো তোর চাকরির চাহিদাই আমি করবো।সো এর মধ্যে মাতব্বরি করতে আসবি না তুই।না হয় তোর চুল আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলবো হারামি।
.
আনহা আকাশের চুল টেনে ধরা সত্বেও সে ব্যথা পাওয়ার বদলে আনহার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!আর মনে মনে ভাবছে…

–পরী হওয়া সত্বেও কোনো অহংকার বা কোনো চাহিদা নেই তার কাছে।কিন্তু দুনিয়ার মানুষজন এতোটা নিকৃষ্ট যে,তারা চাহিদা পূরণের জন্য যে কোনো পন্থাই অবলম্বন করতে পারে।যাদের মধ্যে একজন হচ্ছে অনামিকা।সে কিনা স্বার্থের জন্যই আমাকে ছেড়ে গেলো।তবে যাক সমস্যা নাই।তার স্বার্থ সে খুঁজেছে।
কিন্তু আশা করি তার এই স্বার্থই একদিন তার সাথে স্বার্থকগিরি করবে।সেদিন সে কষ্টটা বুঝবে,আর আমায় খুঁজবে।কিন্তু তাতে হবেনা কোনো লাভ,তবে চিরতরে পাল্টে যাবে তার সেই লোভনীয় স্বাভাব।
.
আকাশ এসব নিয়ে কল্পনা জল্পনা করছিলো।আর অন্যদিকে আনহা তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কারন আকাশ অনামিকার কথা চিন্তা করায় আনহার জেলাসি হচ্ছে।অন্যদিকে আকাশের কল্পনাতেও নেই যে আনহা এবার তাঁকে আস্তো গিলে খাওয়ার প্লান করছে….

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।