আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-০৭

0
283

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৭

আনহা বুঝে যায়,যে আকাশ হয়তো তার থেকেও বেশি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেছে!তাই সে আকাশকে রেখে চটজলদি জমিন থেকে গায়েব হয়ে পরী-পালকে চলে যায়।এদিকে আকাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনহার এমন অদ্ভুত আচরণের কথা চিন্তা করছে!সে অনেকটা সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আনহার জন্য।কারন শুরুতে তার মনে হয়েছে আনহা তিন সেকেন্ডের নিয়মবিধি মেনে পরী-পালকে গিয়েছে।
কিন্তু তিন সেকেন্ডের জায়গায় দশ মিনিটের ও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে আকাশ আনহার জন্য অপেক্ষা করছে,কিন্তু আনহা আর জমিনে আসেনি।তাই সে আবার অন্য একটা রিক্সা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
বাসায় এসে সে আনহার অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে।সেই সময়েই তার মা তার রুমে উঠে এসে তাঁকে বলে…

–তোর বাবা তোকে নিচে জলদি ডাকছে।
তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয়।

–আচ্ছা মা তুমি যাও আমি আসছি।
মা চলে গেলো।তার কিছুক্ষণ পরেই নিচে নেমে বাবার সাথে দেখা করলাম।হুম বাবা বলো….

–তোর সমস্যাটা কোথায় আকাশ?

–কই কিসের সমস্যা বাবা?

–আমি অসুস্থতার জন্য আজকেও কাজে যেতে পারি নাই।তাই উপরে তোর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তুই কলেজে যাস নাই।কাহিনী টা কি একটু বলবি?
আমি যেদিন এই বাসায় থাকি,সেদিন এই তোকে দেখি বাসায়।তুই পড়ালেখা করিস কখন?

–বাবা আসলে একটা কাজে গিয়েছিলাম।
তাই কলেজে যাওয়া হয়নি।

–তোর কলেজ থেকেও কাজ বেশি হয়ে গেছে হ্যাঁ?
তুই তো দেখছি আমাকে কবরে না পাঠিয়ে শান্তি হবি না।একে তো আমার রক্তমাংস চুষে চুষে খাচ্ছিস,তার উপরে আবার পড়ালেখাতেও ফাঁকিবাজি।তোর মধ্যে সত্যিই আমি পরিবারের জন্য ভালোবাসা নামক কিছুই দেখছি না।অবশ্য থাকবেই বা কি করে,আমার রক্ত হলে তো ঠিকই আমার কষ্ট বুঝতি।অন্যের ময়লা আবর্জনা তুলে এনেছি দেখেই আজকে এই দশা তোর।তোর মায়ের কথা সেদিন না শুনে তোকে রাস্তার ধারেই ফেলে রেখে চলে আসা উচিৎ ছিলো।তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।কেউ না কেউ তোকে তুলে নিয়ে যেতো।

–বাবার মুখে এসব কথাবার্তা শুনে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো!বাবা কিসব বলছো তুমি‌!

–হুম সত্যিই বলছি।তোর মতন কুলাঙ্গারকে পথেরধার থেকে আমাদের উঠিয়ে আনাই আমাদের জীবনের সব চাইতে বড় ভুল ছিলো।তাই তো তোর জন্মদাতা মা তোকে ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে রেখে চলে গেছে।কারন তারা জানতো,যে তুই ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অকর্মা ছেলে হবি।যে কিনা মানুষের রক্তমাংস চুষে খেয়ে বড় হবি।তোর ভবিষ্যতে তারা আগ থেকে জেনেই তোকে এভাবে ময়লার স্তুপের মধ্যে ফেলে রেখে চলে গেছে।আর সেই ময়লা আমরা ঘরে তুলে এনে জীবনের সব চাইতে ভুল করেছি।যদি সঠিক করতাম,তাহলে সংসারের জন্য কিছু করার চিন্তা-ভাবনা তোর মাথায় থাকতো।

–বাবার মুখে লুকায়িত নিজের চিরন্তন সত্য কথা গুলো শুনে নিজের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে আমার!চোখ থেকে টলমল করে পানি ঝড়ছে!আমি অন্যের সন্তান দেখেই হয়তো বাবা নামক মানুষটার কাছ থেকে আজ এতোটা অবহেলা পাচ্ছি।তাছাড়া আমার উপরে সর্বক্ষন ক্ষিপ্ত থাকার কারন এই হয়তো এটা ছিলো।এতোদিন বাবা আমার উপরে ক্রোধিত থাকলেও আজ তার আসল কারনটা আমার জানা হয়ে গেছে।বাবার কথার প্রতিত্তোরে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।তাই চুপচাপ চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি।তখনি তিনি আমার বলে উঠলো….

–তোর এই চোখের পানির কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।না হয়তো আমি যে রক্তমাংস খয় করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলি,এবং তার সাথে কষ্টের তাড়নায় মাঝেমধ্যে চোখের পানিও ঝড়ে,সেই কষ্টটা তুই উপলব্ধি করতে পারতি।এবং কোনো চাকরি বাকরি খুঁজে নিতি।কিন্তু তুই তা না করে পড়ালেখা করে করে দিন পাড় করছিস।যেই পড়ালেখার ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন রকমের।আমি যেদিন এই বাসায় থাকি সেদিন এই তোর সাথে আমার মোলাকাত হয়।তাহলে কোন ছাতার মাথার পড়ালেখা করছিস তুই?

–বাবা আমি কোথায় গিয়েছি সেটা তো শুনবে তুমি।

–নাহ আমার কোনোকিছু শোনার প্রয়োজন নেই।
অনেক শুনেছি তোর কথা।এবার তুই আমার কথা শুনবি।তোর কাছে খালি দু’টো রাস্তা আছে।হয় তুই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা,এবং নিজের পথ বেছে নে।দুই না হয়তো পড়ালেখা বাদ দিয়ে রেখে সংসারের হাল ধর।
কারন তোর যেই পড়ালেখার ধরণ দেখছি,সেটা দ্বারা তরো ভবিষ্যৎ কি হবে,তা আমি আগ থেকেই দেখতে পাচ্ছি।সো এবার তুই সিদ্ধান্ত নে কি করবি….

–বাবা তুমি না শুনলেও আমি কয়েকটা কথা বলি।
মনে করো এটাই আমার শেষ কথা।তাই কথা গুলো আমার বলা থেকেও তোমার শোনা প্রয়োজন।
দেখো একটু আগে আমার জীবনের ভয়ংকর এক রাজ খুললে তুমি আমার সামনে।যার পরে দুনিয়ার সমস্ত কিছু পানসে হয়ে গেছে আমার জন্য।তাছাড়া তোমরা সব সময়ই আমাকে বলো কিছু করতে।আমি আজ বহুদিন যাবৎ কিছু করার ট্রাই করছি।কিন্তু আজকে ফাইনালি আমার ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে।আমার একটা ভালো জব লেগেছে।তাই আজকে আর কলেজে যাওয়া হয়নি।জবের কাজ শেষ করে বাসায় চলে এসেছি।যাতে করে তোমাদের সবাইকে এই কথা জানিয়ে দিয়ে কিছুটা সময় আনন্দ উল্লাস করতে পারি।কিন্তু তার আগেই আমার জীবনের এক ভয়ংকর অতীত খুলে বসেছো তুমি।এবং তার সাথে সাথে আমাকে দুনিয়ার সব চাইতে দুর্গন্ধময় জিনিস ময়লা,তার সাথে কিনা তুলনা করলে।শুধু তাই নয়,আমার জন্মসূত্রটাকেও খারাপ ভাবে ডেডিকেট করলে তুমি।যেখানে আমি তোমাদের সবাইকে খুশির সংবাদ দিতে আসলাম,সেখানে তোমরা আমাকে একদম পা দিয়ে কচলে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে।বাবা আমি ভাবতেও পারি নাই,যে আমি অন্যের সন্তান।বাবা আমি ভাবতেও পারি নাই,যে আমার উপরে তোমার জন্মানো ক্রোধ টা শুধু এই কারনেই যে,আমি তোমার সন্তান নই।তবে সমস্যা নেই।এখন আমি জেনে গেছি।এরপর আমার জন্য তোমাকে আর কোনো ধরনের কষ্ট উঠাতে হবে না।আমি আগামীকাল সকালে চিরতরে চলে যাবো।আমার এই মুখ তোমার সামনে আর কখনো পড়বে না।তবে আমার কথা শুনে এটা ভেবো না,যে আমি চাকরি পেয়েছি বলে ঘর ছাড়ছি।
আমি ঘর ছাড়ছি এই কারনে,যে এই ঘরে আমার রক্তের কেউ নেই।তাই আমি ঘর ছাড়ছি।ভালো থেকো বাবা।আমি খালি আজকের দিনটাই এই বাসায় থাকবো।আগামীকাল সকাল হলে আমার চেহারাটা তুমি আর দেখতে পাবে না।তারপর নিজের রুমে চলে এসেছি।নিজের রুমে এসে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বালিশ ভেজাচ্ছি।দুপুরের খাবার টাও খাইনি।না খেয়ে রুমের দরজা আঁটকে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি।সেই দুপুরের এক ঘুমে রাত এগারোটায় ঘুম থেকে উঠেছি।তাও নিজ ইচ্ছায় ঘুম থেকে উঠিনি।ঘুম থেকে উঠেছি কারোর হাতে স্পর্শে।ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আনহা আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।আমি উঠে গেছি দেখতে পেয়ে আনহা আমাকে জিগ্যেস করলো…

–আকাশ কি হয়েছে তোমার?তুমি কান্না করেছো কেন?

–কান্নার কারনটা কি তুমি সত্যিই জানো না আনহা?
তোমার অলৌকিক শক্তিতে কি ভাঁটা পড়েছে নাকি?

–নাহ এমনটা নয়।আমি সব কিছুই জানি।তাও তোমাকে জিগ্যেস করেছি আবার।

–জানার পরেও জিগ্যেস করে কেন আমার কষ্টটাকে দ্বিগুন করে দিচ্ছো?

–সরি আকাশ।

–সরি টরির প্রয়োজন নেই।তুমি খালি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।

–কি প্রশ্ন?

–আমার কাছ থেকে তোমার কোনো স্বার্থ উদ্ধার করা বাকি আছে নাকি সেটা বলো তো আমায়?

–আকাশ হটাৎ এমন কথা কেন বলছো?

–কারন আমি যাকে সেই ছোট থেকে বাবা বলে জেনে এসেছি,সে নিজেই আজকে আমার থেকে স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় ঘর ছাড়তে বলছে।সেখানে তুমি তো বহু দূরের মানুষ।আমার থেকে যে তোমার কোনো স্বার্থ নাই,সেটার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে নাকি।সো থাকলে বলে দাও….
.
আকাশের মুখে এমন কথা শুনে আনহা তাজ্জব হয়ে যায়!তার উপরে তার মনের মধ্যেও কষ্টের ভাঁটা পড়ে।কারন একে তো আকাশ সবার কাছে অবহেলিত।দ্বিতীয়ত তার চাহিদাকে আনহা খতম করে দিয়েছে।যার দরুন আনহার চাহিদা ছাড়া আকাশ কখনোই আপন করতে পারবে না।তাই আনহার প্রচন্ড খারাপ লাগছে আকাশের জন্য।আনহা আকাশকে নিয়ে ভাবুক হয়ে গেছে।অন্যদিকে আকাশ আনহার কাছে কোনো উত্তর না পেয়ে তাঁকে আবার জিগ্যেস করে….

–কি হলো আনহা কোনো কথা বলছো না যে?
তোমার কি কোনো স্বার্থ উদ্ধার করা বাকি আছে নাকি আমার কাছে?
.
আকাশের কথায় এবার আনহার হুঁশ ফিরে আসে।
তাই সে এবার উত্তর দেয়…

–নাহ আকাশ আমার কোনো স্বার্থ উদ্ধার করা বাকি নেই তোমার কাছ থেকে।আর তুমি তোমার বাবার কথায় মন খারাপ করিও না।আমি তোমার মন পড়ে সব জেনে গেছি যে তুমি আগামীকাল ঘর ছেড়ে চলে যাবে।সো আমি সর্বরকমের সাহায্য করবো তোমায়।

–যাক তাহলে তো ভালোই।

–হুম…
আচ্ছা আকাশ আমি যে এগারোরটার দিকে তোমায় না বলে চলে গেছি,তার জন্য কি তুমি কষ্ট পেয়েছো?

–আরেহ বাবা নামক মানুষটার থেকে যেই কষ্ট পেয়েছি,তার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত কষ্ট ফিকে পড়বে।

–তার মানে তুমি কষ্ট পেয়েছ আমার আচরণে?

–নাহ কষ্ট পাইনি।তবে অবাক হয়েছি!কারন হুট করে কখনো তো আমায় না বলে চলে যাও না।তাই আরকি…

–আসলে পরী-পালকে একটু সমস্যা হয়েছিলো।যার দরুন আমার তড়িঘড়ি করে চলে যেতে হয়েছে।
.
আনহা আকাশকে এগারোটার বিষয় নিয়ে মিথ্যা কথা বলে।কিন্তু আকাশ সেটা ধরতে পারে না।

–ওহহ আচ্ছা…
আচ্ছা এখন আবার চলে যাও।কাল সকালে জমিনে এসো আবার।

–নাহ আমি এখন যাবো না।আজ সারারাত আমি তোমার সাথে থাকবো।এবং তোমার দুঃখ কষ্টের ভাগ কিছুটা নিজে নিব।

–কি প্রয়োজন আনহা এমনটা করার?

–আকাশ একদম কথা বলবে না তুমি।আমি থাকবো তো থাকবোই।

–ওকেহ ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে।

–হুম আমার ইচ্ছে।
আচ্ছা তুমি চোখটা বন্ধ করো তো একটু…

–কেন?

–আরেহ করো না।

–হুম করলাম…

–আমি চোখ খুলতে বললে খুলবে।
আমি না বলা পর্যন্ত কিন্তু একদম চোখ খুলবে না।
.
আকাশ চোখ বন্ধ করে।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আনহা আকাশকে চোখ খুলতে বলে।আকাশ চোখ খুলেই অবাক হয়ে যায়!কারন আনহা তার শরীর থেকে অনেকখানি কাপড় সরিয়ে ফেলেছে!যেটা দেখে আকাশ তাজ্জব হয়ে আনহাকে জিগ্যেস করে…

–এই কি করেছো এটা?

–কি করেছি সেটা তো দেখতেই পাচ্ছো।খামোখা প্রশ্ন করো না তো।
.
আনহা আকাশকে থামিয়ে দিয়ে তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার গলায় চুমু খেতে আরম্ভ করে।আকাশ আনহার স্পর্শে কেঁপে উঠে!কিন্তু সে আনহাকে কিছুই বলে না।সে তার মতন চুপচাপ হয়ে আছে।আনহা আকাশের গলায় বুকে অনেকটা সময় ধরে চুমু খায়।তারপর হুট সেই সে আকাশকে বলে উঠে..

–এই তুমি আমার শরীর নিজের আয়ত্তে নাও।তারপর যা ইচ্ছে হয় করো।আজ তোমায় কোনো ধরনের বাঁধা দিব না আমি।তুমি আমার মাঝে ডুব দিয়ে মনের সমস্ত কষ্টকে বিদায় করো।
.
আকাশ আনহার আচরণে প্রথমবার কিছু না বললেও এবার বলে বসে…

–আনহা আমি এসব করে নিজেকে শান্ত করতে চাই না।আমার একটা ঠাঁই দরকার মাথা গুজার মতন।এছাড়া আমার কিছুই প্রয়োজন নেই।

–আচ্ছা তাহলে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো তুমি।

–ঠিক আছে শুবো,কিন্তু তুমি নিজের কাপড় ঠিক করো।কারন না হয়তো ভিতরের শয়তান আমাকে কুমন্ত্রণা দিবে।যাতে করে অন্য কিছু করে বসবো আমি।

–তো কি হয়েছে?অন্য কিছু করলে করবে।তাতে কার কি সমস্যা?আমি আর তুমিই তো নাকি?

–নাহ তাও আমি এসব কিছু এখন করতে চাইনা।বিয়ের পর হাজারো রাত পড়ে থাকবে এসব করার জন্য।তখন স্বামীর অধিকার নিয়ে সেসব করবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি তোমাকে আর খেয়ালহীন করছি না।তবে যেমন চাইবে,আমি তেমনটাই করবো।কারন তোমার মতন মানুষ হয় না দুনিয়ায়।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতো সময়ে ফায়দা লুটতো আমার।কিন্তু তুমি আমার সঙ্গ চাও,তবে সেটা ভিন্ন ভাবে।আর আমি তোমাকে তোমার চাহিদা মতোই সঙ্গ দিব।সো নাও শরীর ঠিক করেছি।এবার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ো।সকাল হলে আমি তোমায় ডেকে দিব।পরে তুমি তোমার গন্তব্যের জন্য বেরিয়ে যেও।

–ঠিক আছে…
তারপর আনহার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি।
ভোরের আজান হতেই আনহা আমায় ডেকে দিয়েছে।ঘুম থেকে উঠে দেখি তার বুকে এখনো মাথা রেখে শুয়ে আছি।আর সেও সারারাত আমার সাথে ছিলো।বেশ খুশি লাগছে আনহার বুকে মাথা রেখে সারা রাত কাটাতে পেরে।বহুদিন পর একদম তৃপ্তি পুরিয়ে ঘুমিয়েছি।কিন্তু পরক্ষনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঘর থেকে চলে যাবো বলে।কিন্তু মন খারাপ করলেও আমার কাছে আর কোনো অপশন বাকি নেই।বাধ্যগত আমার ঘর ছাড়তে হবে।তাই নিজের বইপুস্তক এবং কিছু জামা কাপড় নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছি।ঘর থেকে বেরোনোর সময় চোখ জোড়া পানিতে টলমল করছিলো।তার সাথে মায়ের জন্যেও অনেক খারাপ লাগছিলো।মা হয়তো এখনো কোনো কিছুই জানে না আমার বিষয়ে।আর এই ঘরে খালি একজন মানুষ এই আছে,যে কিনা আমাকে কোনো স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসে।মায়ের ভালোবাসাকে ত্যাগ দিয়ে চিরতরে ঘর ছেড়ে দিয়েছি।তারপর ঘন্টা তিনেক সময় রাস্তায় কাটিয়ে নাসির ইন্ডাস্ট্রিতে চলে গেলাম।সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে পাকাপোক্ত ভাবে কথা বলে চাকরির বিষয়টা নিশ্চিত করে নিলাম।তিনি আমায় আগামীকাল দুপুর দুইটা থেকে অফিসে কাজে যেতে বলেছে।আমার ডিউটি হচ্ছে দুপুর দুইটা থেকে রাত আট’টা পর্যন্ত।আর বাকি সবার জন্য সকাল দশটা থেকে রাত আট’টা পর্যন্ত।অবশ্য আমি জিগ্যেস করেছি,কেন তিনি আমায় দুপুর দুইটা থেকে অফিসে যেতে বলেছেন,কারন সবার অফিস টাইম তো সকাল দশটা থেকে।তিনি আমার কথার উত্তরে বলেছে,আমি যার রেফারেন্সে এসেছি,তিনিই নাকি এমনটা বলেছে।
কারন আমি নাকি স্টুডেন্ট।সকালে আমার ক্লাস থাকে।চেয়ারম্যান মুখে এমন কথা শুনে লোকটার জন্য হাত তুলে দোয়া করতে ইচ্ছে করছে।যে কিনা আমায় এতো ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।তবে বর্তমানে হাত তুলে দোয়া করার মতন পরিস্থিতি নেই।তাই মন থেকে দোয়া পাঠিয়ে দিলাম লোকটার জন্য।পরিশেষে চেয়ারম্যান আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলেছে আগামীকাল থেকে ঠিক দুইটায় অফিসে চলে আসতে।আমি খামটা হাতে নিয়ে অফিস থেকে ভদ্রতার সহিত বেরিয়ে এলাম।বাহিরে এসে খাম খুলে দেখি সেটার ভিতরে টাকার একরা বান্ডিল।তার উপরে আবার একটা কাগজ ও আছে।আমি টাকাটা পকেটে রেখে কাগজটা ওপেন করলাম।কাগজটা ওপেন করতেই দেখি কালো কালিতে লিখা।এই পঞ্চাশ হাজার টাকা আপনার অগ্রিম বেতন।আপনার রেফারেন্স আমায় বলে দিয়েছে আপনার বেতনটা যেনো অগ্রিম দিয়ে দেই।তাই আপনার এক মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে দিয়েছি।সো আগামীকাল থেকে সময় মতন চলে আসবেন।খুশিতে এবার আত্মহারা হয়ে আনহার কথা স্বরণ করলাম।কারন তার জন্যই আমার এতো ভালো চাকরি মিলেছে।আনহার কথা স্বরণ করতেই সাথে সাথে সে চলে এলো।তাঁকে সমস্ত কিছু খুলে বলেছি।সেও বেশ খুশি।আমি অফিসে ঢুকবার সময় সে চলে গিয়েছিলো।অফিস থেকে বের হতেই সে আবার জমিনে প্রকট হয়েছে।তারপর দুজনে মিলে আমার জন্য একটা বাসা ঠিক করলাম থাকার জন্য।যেটার মাসিক ভাড়া আট হাজার টাকা।আনহা অলৌকিক শক্তির দ্বারা অনেক জিনিসপত্রই এনে দিয়েছে আমাকে।আমার ঘর একদম পরিপূর্ণ করে দিয়েছে আসবাবপত্র দ্বারা।তারপর ঘরে উঠে গেলাম।আর ২০ হাজার টাকা একটা খামে করে মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।আর সাথে একটা চিঠিও দিয়েছি।তারপর ভাড়া করা ঘরে থাকতে শুরু করেছি।দেখতে দেখতে এক সাপ্তাহ কেটে গেছে।আনহা বেশিরভাগ সময় আমার বাসায় কাটায়।আমার রান্না-বান্না ও সে করে দেয়।কিন্তু হুট করেই এর মধ্যে একদিন বাড়ি ওয়ালা আমাকে তার বাসায় ডাকে।বাড়ির ওয়ালার ডাকে তার ফ্ল্যাটে গেলাম।তিনার ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর কাজের লোক এসে বললো সোফায় বসতে।তিনি নাকি পাকের ঘরে রান্না করছে।রান্না শেষ করে কিছু সময়ের মধ্যে আসছে।আমার বাড়ি ওয়ালা একজন মহিলা।বসে বসে সোফায় ওয়েট করছি,আর আশেপাশে তাকিয়ে ঘর টাকে খুঁটে খুঁটে দেখছি।তখনি ঘরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা একটা ছবির দিকে আমার চোখ গিয়ে আঁটকে পড়ে।যেই ছবিটা দেখার পর আমি সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম….

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।