আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-০৮

0
298

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮

–ঘরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা একটা ছবির দিকে আমার চোখ গিয়ে আঁটকে পড়ে।যেই ছবিটা দেখার পর আমি সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম!কারন ছবিটা একটা বাচ্চা ছেলের।এবং এই ছবির বাচ্চাটার মতন একটা বাচ্চার ছবি মায়ের কাছে আছে।তিনি সেটা বহু আগে আমায় দেখিয়ে বলেছিলো,এই ছবিটা নাকি আমার ছোট বেলার ছবি।কিন্তু কথা হচ্ছে একদম হুবহু সেম চেহারার ছবি এই বাড়ি ওয়ালায় বাসায় কেন!মাথায় তো কিছুই খেলছে না।একরোখা হয়ে তাকিয়ে আছি দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা ছবিটার দিকে।এভাবে কয়েক মিনিট কাটতেই বাড়ি ওয়ালা মহিলাটার উপস্থিতি টের পেলাম।তিনি রান্নার কাজ সেরে আমার কাছে এসেছে।তাই নিজেকে সংযত করে সালাম দিলাম।তিনি আমার সালামের উত্তর দিয়ে জিগ্যেস করলো…

–কি হলো বাবা তুমি এই ঘরে উঠেছো আজ এক সাপ্তাহ।কিন্তু এরমধ্যে একবারো তোমার সাথে আমার মোলাকাত হয়নি।তার উপরে তোমার বিষয়ে পুরোপুরি ভাবে আমি জানিও না।আর আমার বাসায় কম্ফোর্ট কিনা সেটাও তো বলো নি তুমি।

–আসলে আন্টি কলেজ আর চাকরি নিয়ে বিজি থাকায় আপনার সাথে পরবর্তীতে আর আলাপ-আলোচনা করা হয়নি।আর আপনার বাসাটা অনেক সুন্দর।কম্ফোর্ট না হওয়ার কিছুই নেই।

–যাক বাবা শুনে খুশি হলাম।
কিন্তু তুমি কিসে জব করো যেনো বলেছিলে?

–জ্বি আন্টি নাসির ইন্ডাস্ট্রিতে।

–যাক মাশাল্লাহ ভালোই।
তো বাবা তোমার আম্মু আব্বু কি করেন?

–মা,ঘরে থাকে।আর বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান।

–তাহলে তুমি আলাদা বাসা নিলে কেন?আর তুমি এতো ভালো চাকরি করতে তোমার বাবা কেন দিনমজুরি করে?তুমি কি তাঁদের দেখাশোনা করো না?

–আসলে আন্টি বাবার জন্যই ঘর ছেড়ে দিয়েছি।কারন আমি নাকি অকর্মা।তবে ঘর ছাড়লেও লুকিয়ে কিছু টাকা আমি মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেই।আর আমার জীবনে একটা ভয়ংকর অতীত আছে।সেটা পরে কোনো এক সময় বলবো।মূলত এই অতীতের কারনেই আমি বাবার কাছে অবহেলিত।তাই ঘর ছেড়ে দিয়ে আলাদা থাকি।

–ওহহ আচ্ছা..
তবে তুমি কষ্ট পেয়ো না।আমি তোমার মায়ের এই মতন।তোমার কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে।

–অবশ্যই আন্টি…

–আচ্ছা তোমায় শেষ আরেকটা প্রশ্ন করি।যদি তোমার কাছে উত্তরটা জানা থাকে,তাহলে আমাকে উত্তরটা দিও।

–জ্বি আন্টি…

–আসলে দেখো তুমি যেই ফ্ল্যাটে উঠেছো,সেই ফ্ল্যাট টা আমার কাছ থেকে অনেকেই ভাড়া নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে।কিন্তু আমি কাউকেই দেই নাই।তবে তুমি আমার কাছে এসে ফ্ল্যাটটা ভাড়া চাইতেই কেন জানি ঘরটা তোমায় ভাড়ায় দিয়ে দিয়েছি।তোমায় প্রথম দেখাতেই খুব মায়া হয়েছে আমার।তাই কেন জানি তোমায় না করতে পারিনি।তোমার কাছে কি আমার এই অদ্ভুত আচরণ বা প্রশ্নের কোনো উত্তর আছে?

–আন্টি জানি না আমার উত্তরটা কতটুকু মিলবে!তাও উত্তর দেওয়ার ট্রাই করছি।আসলে আমার যা মনে হয় উপর ওয়ালা আমার উপরো সহায় হয়েছে।কারন আমি বাদে বাকি যারা এসেছিলো আপনার কাছে ঘর ভাড়ায় নিতে,তারা হয়তো আমার মতন প্রয়োজন পড়ে আসেনি।তাঁদের সকলের এই ঘরবাড়ি আছে।কিন্তু আমার যাওয়ার কোনো জায়গাই ছিলো না।আমি একদম ফকিরের ভেসে আপনার কাছে আশ্রয়ের জন্য এসেছি।তাই হয়তো উপর ওয়ালা আপনার মনকে আমার জন্য শিথিল করে দিয়েছে।যার দরুন আপনি আমাকে ঘর ভাড়া দিয়েছেন।না হয়তো আমার থেকেও প্রয়োজনে পড়ে কেউ আসলে আজকে এই বাড়িতে আমার বদলে সেই জরুরত ওয়ালা মানুষ গুলোই থাকতো।কিন্তু আমার প্রয়োজন টা বেশি থাকায় হয়তো আমার নসিবে মিলিছে ঘরটা।

–তোমার লজিকটা যুক্তিসম্মত।কিন্তু তার পরেও আমার ভিতরে অন্য রকম কিছু একটা কাজ করেছে।
আর কি কাজ করেছে,সেটাই আমার অজানা!
তবে হ্যাঁ আল্লাহ তোমার উপরে সহায় হয়ে হয়তো আমার মনকে গলিয়ে দিয়েছে।কিন্তু সত্যি বলতে তোমাকে প্রথমবার দেখেই আমার ভিতরে কেমন যেনো একটা নাড়া দিয়ে উঠেছে!আমি সেই বিষয়ে যাস্ট তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে পারবো না!

–আন্টি আমি যাস্ট কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।কারন আপনি যেই কারনেই হোক না কেন ঘর ভাড়া দিয়ে থাকতে দিয়েছেন আমায়।

–আরেহ কৃতজ্ঞতা বাদ দাও।
আর ছাড়ো এখন ওসব কথা।এখন বলো কি খাবে তুমি?

–নাহ আন্টি কিছুই খাবো না।

–এই ছেলে এটা বললে তো হয় না।
তুমি আজকেই আমার বাসায় এসেছো।না খেয়ে তো তোমায় যেতে দিচ্ছি না।সো তুমি একটু বসো।আমি তোমার জন্য নিজের হাতে চা বানিয়ে আনছি।

–আমাকে চুপ করিয়ে দওয়ে বাড়ি ওয়ালা আন্টি চলে গেলো।আর আমি আবারো সেই ছবিটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।দেখতে দেখতে মিনিট পাঁচেক কেটে গেছে।কিন্তু আমার মনের কৌতূহল এখনো মেটাতে পারিনি।এরমধ্যে আবার আন্টি চা করে নিয়ে এসে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে।

–এই আকাশ নাও চা খাও।

–ট্রে থেকে একটা চায়ের কাপ উঠিয়ে নিয়ে চা খেতে আরম্ভ করলাম।চা খেতে খেতে আরো অনেকটা সময় আড্ডা দিয়েছি উনার সাথে।চা শেষ করে আড্ডার ইতি টানলাম।আচ্ছা আন্টি এখন চলি আমি।রান্না বারা করতে হবে।

–ঠিক আছে যাও।তবে শোনো,তুমি কিন্তু মাঝেমধ্যে এসে আমার সাথে আড্ডা দিবে।তোমার সাথে কথা বলে কেন জানি অনেক ভালো লেগেছে!

–আচ্ছা আন্টি আমি মাঝেমধ্যে আসবো।
তারপর বিদায় নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে চলে এলাম।
নিজের ফ্ল্যাটে এসে দেখি আনহা রান্নাবান্না করে রেখেছে।যাক মাশাল্লাহ ভালোই হয়েছে।
তবে আজ চেয়েছিলাম আমিই রান্না করবো।কারন আজকে শুক্রবার হওয়ায় অফিস নেই।কিন্তু আনহা রান্না করে আমার কাজ কমিয়ে দিয়েছে।অবশ্য সব সময়ই আনহা রান্নাবান্না করে।এই সাত দিকে এক বেলা খালি আমি রান্না করেছি।কারন সে কোনো এক কারনে একদিন সকালে জমিনে প্রকট হয়নি।যার কারনে সেদিন সকাল এবং দুপুরের রান্নাটা আমারই করতে হয়েছে।দিন বেশ ভালোই কাটছে।নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছি আজ এক মাস হতে চলেছে।এর মধ্যে বাড়ি ওয়ালা আন্টির সাথে একদম ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি।উনার সম্পর্কে এখন অনেক কিছুই জানা আমার।উনি একা পুরো বাড়ির মালিক।উনার হাসবেন্ড নাকি সেই বহু বছর আগে উনাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।উনি উনার হাসবেন্ডকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন।যার কারনে তিনি আর বিয়েসাদী করেননি।উনার জীবনের অনেক কাহিনী উনি আমার সাথে শেয়ার করেছেন।কিন্তু ছবির সেই পিচ্চি ছেলেটার বিষয়ে কোনো কিছুই বলেনি।আর আমিও আগ বাড়িয়ে জিগ্যেস করিনি।কারন মানুষ সৃতিকে ফ্রেম বন্দী করে।উনার সৃতিটা কি কষ্ট দায়ক নাকি আনন্দময় সেই বিষয়ে আমি এখনো ক্লিয়ার নই।তাই জিগ্যেস করেনি।হতে পারে আমার জানতে চাওয়াটা উনার কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়াবে।এভাবেই একদিন এক শুক্রবারে উনার সাথে আড্ডা দিয়ে বাসা থেকে বের হলাম কিছু কেনা কাটার জন্য।ঘড়ির কাটা সাতটা ছুঁই ছুঁই।কেনা কাটা শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম।হুট করেই কয়েকটা মানুষকে দেখে আমার হৃদয় কেঁপে উঠলো!যার দরুন চুপচাপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লাম।আর মানুষ গুলাও দাঁড়িয়ে গেলো।মানুষগুলো আর অন্য কেউ নয়।তারা হচ্ছেন আমার বাবা,মা এবং ছোট বোন সাবিহা।তিনজন মিলে হয়তো ঘুরতে বের হয়েছে।তাঁদেরকে দেখে চোখ টলমল করছে।ঠিক সেই সময় মা নামক মানুষটা আকাশ বলে ডাক দিলো…

–এই আকাশ এদিকে আয়…

–আমি মায়ের ডাকে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গেলাম।কিন্তু তৎক্ষনাৎ বাবার বলা সেই অপমান জনক কথা গুলো মনে পড়লো।যে আমি নাকি পথের কুলাঙ্গার।তাই আবার পিছনে মুড়ে হাঁটা দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।কারন মা একা নয়।মায়ের সাথে বাবাও আছে।চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।কিন্তু আমার কিছুই করার নেই।কারন আমি সেই মানুষ গুলোর জীবনে একটা বোঝা হয়ে ছিলাম।তাই এখন তাঁদেরকে মুক্ত করে দিয়ে নিজের সংগ্রামী জীবনে পা রেখেছি।আর দূর থেকে তাঁদের চাহিদা মেটানোর ট্রাই করছি।আমি চলে আসার সময় মা অনেক কয়বার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডেকেছে।কিন্তু আমি আর পিছু ফিরিনি।সেখান থেকে এসে বাসায় মন মরা হয়ে শুয়ে আছি।এর মধ্যেই আনহা রান্না ঘর থেকে নাস্তা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।সে রান্না ঘরে নাস্তা রেডি করছিলো আমি ফিরে আসলে আমায় খেতে দিবে বলে।সবাই হয়তো ভাবছেন আনহার কাছে অলৌকিক শক্তি থাকার পরেও কেন সে নিজের হাতে রান্না বান্না করছে।আসলে আমিই তাঁকে বলেছি শক্তির প্রয়োগ না করে আমার জন্য নিজের হাতেই রান্না করতে।কারন ভবিষ্যতে আমি তার হাতের রান্নাই খাবো।আর সে এখন বেশিরভাগ সময় আমার বাসাতেই থাকে।দিনের বেলায় পরী-পালকে তিন সেকেন্ডের রুলস মোতাবেক যাতায়াত চলে।আর সন্ধ্যা হলে একদম সারা রাতের জন্য জমিনে নেমে আসে।আবার সকালে সূর্য উদয় হওয়ার আগেই চলে যায়।এভাবেই দিন কাটছে আমাদের।কিন্তু আমি মন খারাপ করে শুয়ে আছি দেখে আনহা আমার জন্য বানানো নাস্তা টাকে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে আমায় এসে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো…

–এই পাগল একদম মন খারাপ করে না।

–আনহা মন খারাপ হওয়ার হলে কেউ তা আঁটকে রাখতে পারে না।আর তাছাড়া আমার মায়ের বদলে যদি বাবা আমায় ডাকতো তাহলে তেমন কোনো সমস্যা ছিলো না।কারন তিনার কাছে আমার অবস্থান ময়লার ডাস্টবিনের মতন।কিন্তু তিনি আমায় ডাকেন নি।ডেকেছে আমার মা।যেই মা কিনা আমায় অনেক বেশি ভালোবাসতো।সেই মায়ের ডাকে আমি সাড়া না দিয়ে বেয়াদবের মতন চলে এসেছি।যার দরুন মায়ের চোখ থেকে অনেক পানি ঝড়েছে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
তো বলো মন খারাপ হবে না কেন?যেই মা আমায় ভালোবাসে,আমি তার চোখ দিয়েই পানি ঝরিয়েছি।

–আকাশ তোমার কথা সঠিক।কিন্তু কি করবে বলো?
তোমার কাছে তো কোনো অপশন এই ছিলো না।তাই তো এমনটা করতে হয়েছে তোমার।

–আনহা অপশন থাকুক আর না থাকুক,মায়ের চোখ থেকে তো পানি ঝরেছে আমার জন্য।

–আকাশ প্লিজ নিজেকে সামলে নাও।দেখো পরিস্থিতি সব সময় নিজের অনুকূলে থাকে না।কিছু সময় পরিস্থিতির চাপে আপন মানুষকে কষ্ট দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করতে হয়।আর তুমি এমনটাই করেছো।তুমি যদি তোমার মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনার কাছে যেতে,তখন যদি তোমার বাবা আবার তোমায় এটা সেটা বলতো?তাহলে তো আরো বেশি কষ্ট পেতো তোমার মা।

–হুম এই কথাটা ঠিক বলেছো।কিন্তু আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে মায়ের জন্য।

–আচ্ছা তুমি নিজেকে শান্ত করো।আমি তোমাকে আগামীকাল খবর নিয়ে তোমার মায়ের সাথে আলাদা ভাবে দেখা করার একটা সুযোগ করে দিব।তখন তুমি তোমার মায়ের সাথে প্রাণ ভরে কথা বলে নিও।এবং এই মাসে তাঁদের জন্য পাঠানো টাকাটা তোমার মায়ের হাতে তুলে দিও।

–ঠিক আছে।
আনহা আমায় শান্ত করে ফেলেছে।তারপর আনহা আমার জন্য বানিয়ে আনা নাস্তাটা আমায় খেয়ে শেষ করতে বললো।তার কথা মতন নাস্তা টা খেয়ে শেষ করলাম।পরে দুজনে মিলে গল্প গুজব করতে করতে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছি।পরেরদিন সকাল বেলায় আনহা আমাকে কলেজে যেতে নিষেধ করে সে গায়েব হয়ে গেলো।আমি আনহার কথা মতন ঘরেই রয়ে গেছি।ঘন্টা দুয়েক যেতেই আনহা আবার প্রকট হয়ে বললো..

–আকাশ তুমি এখন তোমার বাসায় গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে এসো।কারন তোমার বাবা কাজে গেছে।এবং সাবিহা স্কুলে।আমি তোমার বাসা থেকে ঘুরে এসেছি।

–ঠিক আছে।তারপর ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে চলে গেলাম।মা আমায় দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেছে।মা’কে শান্ত করে অনেকটা সময় কথাবার্তা বললাম।কিন্তু তিনি শান্ত হয়েছি ঠিক,তবে আমাকে আবার এই বাসায় চলে আসতে বলছে।তখনি বাবার কড়া কথা গুলো মা’কে শুনালাম।তিনি আমার মুখের সমস্ত কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেছে!তিনার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে বাকি নাই,যে তিনি আমার ঘর ছাড়ার বিষয়ে তেমন কিছুই জানে না।তাই তিনাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।সমস্ত ঘটনা শুনে মা আমায় আর আটকালো না।কারন আমি তিনার আপন সন্তান নই,সেটা আমি জেনে গেছি।এবং তিনার প্রাণ প্রিয় স্বামীই আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে আপন সন্তান নই বলে।তার পরে তিনি আর কোন মুখে আমায় আটকাবে।তাই তিনি আর আমার পথ আটকায় নি।বাসা থেকে বেরিয়ে আবার নিজের বাসায় চলে এসেছি।আর মায়ের কাছ থেকে আসার আগে ২০ হাজার টাকা মায়ের হাতে গুজিয়ে দিয়ে এসেছি।এবার মন হালকা লাগছে।তখনি আনহা প্রকট হয়ে জিগ্যেস করলো…

–কি জনাব মন ভালো হয়েছে তো?

–হুম হয়েছে।

–যাক শুকরিয়া খোদার কাছে,যে তোমার মন ভালো হয়েছে।আচ্ছা এবার কি খাবে বলো?
কি রান্না করবো?

–তোমার যা খুশি রান্না করো।কারন তোমার হাতের সব কিছুই আমার ভালো লাগে।

–আচ্ছা…

–আনহা রান্না ঘরে চলে গেলো।
আর আমি রুমে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি।
দিন কাটছে আপন গতিতে।বলতে গেলে আনহাকে বিয়ে না করেও দুজন মিলে সংসার করছি।এভাবে আরো সপ্তাহ দশদিন কেটে যায়।কিন্তু হুট করেই একদিন আনহা জমিনে আসে না।সারা দিন আনহার জন্য অপেক্ষা করি।কিন্তু সে সেদিনটায় আর জমিনে আসে না।পরেরদিন ও অপেক্ষা করছি,কিন্তু আনহা আজ ও আসে নি।এভাবে পর পর চার-পাঁচদিন কেটে যায়।কিন্তু তার আসার কোনো নাম গন্ধ নাই।
এবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে আনহার জন্য!আজকে চার-পাঁচদিন ধরে আনহা জমিনে প্রকট হচ্ছে না তার কারনটা কি!চিন্তা হচ্ছে প্রচুর আনহার জন্য।তাও নিজেকে শান্ত করে আরো দুই একদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।এরপরেও যদি না আসে,তখন না হয় কিছু একটা ভাবা যাবে।এরমধ্যে শেষ অপেক্ষার আরো দুই-তিন দিন পেরিয়ে গেছে।কিন্তু আনহার কোনো দেখাই নাই।আনহাকে আজ ছয়-থেকে সাতদিন দেখতে না পেয়ে মনের ভিতরে ব্যাপক আকারে একটা ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে।তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি।আচ্ছা মেয়েটা তো এমন করবার কথা নয়!নিশ্চয় তার কোনো বড় ধরনের বিপদ হয়েছে।হয়তো আমার সাহায্য তার খুবই প্রয়োজন।কিন্তু কি করে আমি তার সাহায্য করবো!আমি তো জমিন থেকে পরী-পালকে যেতে পারবো না তার সাহায্য ছাড়া।মাথায় যেনো কিছুই খেলছে না!
এরমধ্যেই পাগলিটার জন্য চোখ থেকে পানি ঝড়তে আরম্ভ করছে।শুয়ে শুয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছি আর কল্পনা করছি।ইশ আমি যদি পরী-পালকে যেতে পারতাম।এমন কল্পনা করতেই হুট করে আমি বিছানা থেকে গায়েব হয়ে সেই দ্বীপের মধ্যে চলে গেলাম!যেখানে আনহা তার সোল আমার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আমাকে পরী-পালকে পাঠিয়েছিলো।ভয়ংকর দ্বীপের মাঝে একাকী দাঁড়িয়ে আছি।ঢেউয়ের আওয়াজ আগের বারের ন্যায় কানে ভেসে আসছে।
কি করবো আরো তালগোল হারিয়ে ফেলছি!কারন একে তো আনহা আজ বহুদিন ধরে জমিনে নামছে না!তার উপরে আমি কল্পনা করতেই দ্বীপের মাঝে চলে এসেছি!দ্বীপের মাঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সমস্ত কিছু বোঝার ট্রাই করছিলাম।তখনি দেখি আমার সারা শরীরের চামড়া পাল্টে গিয়ে ধবধবে সাদা হয়ে গিয়েছে!
এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে আমি আমার অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।আমার সাথে এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটার কারন হচ্ছে,কেউ হয়তো চায় আমি পরী-পালকে
প্রবেশ করি।না হয়তো আমি কল্পনা করার সাথে সাথে এই দ্বীপের মাঝে আসতাম না।এবং আমার গায়ের রং ও পরিবর্তন হতো না।যেহেতু আমি কল্পনা করার সাথে সাথে দ্বীপের মাঝে চলে এসেছি,এবং গায়ের রং ও পরিবর্তন হয়ে গেছে।তার মানে আমি বর্তমানে মানুষ থেকে অন্য কিছু হয়ে গেছি।আর এই অন্য কিছুটাই আমাকে স্পষ্ট ভাবে জানান দিচ্ছে বা এলান করছে পরী-পালকের ভিতরে প্রবেশ করতে।তাই কোনো কিছু না ভেবেই বাকি প্রশ্নের উত্তরের জন্য পরী-পালকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি….

চলবে…..

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।