ইরাবতীর চুপকথা পর্ব-০৭

0
388

#ইরাবতীর চুপকথা
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৭

‘ ভাবি? কে ভাবি? ‘

আজ পরিবেশ গুমোট। রোদ নেই, বাতাস নেই। এমন পরিবেশে ভালো লাগার থেকে খারাপটাই বেশি লাগে। আরও যদি করতে হয় কারো অপেক্ষা, তাহলে তো কথাই নেই। মেজাজ থাকে তুঙ্গে চড়ে। ইরার মেজাজটাও বিঘরেছে, তার উপর কুহুর বিলোপ শুনে মস্তিষ্ক নড়ে উঠলো। মেজাজ আগুন হলো এবার। ইরার করা তিক্ন, দাড়ালো প্রশ্নে কুহু সহজ উত্তরে বললো,

‘ কে আবার? তুমি! ‘

‘ এসব কি আলতু-ফালতু কথা কুহু? কোন জন্মের ভাবি হই আমি তোমার? ‘

কুহু ইরার কথা কানে তোলার প্রয়োজন বোধ করলো না। ব্যাগ থেকে এন্ড্রয়েড ফোনটা বের গ্যালারির সবচেয়ে প্রথমের ছবিটাতে ক্লিক করে ইরার হাতে গুজে বলে উঠলো,

‘ তাহলে এটা কি? ‘

কুহুর দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো ইরা। অতঃপর ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই ভূ-মন্ডল কেঁপে উঠলো ইরার। বিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে। ছবিতে ইরা আর আয়াত। যখন ইরার কানে আয়াত কিছু বলছিলো, তখনের তোলা ছবি এটা। কিন্তু কে তুললো? আয়াত? নাকি কুহু? নাকি আগে থেকেই আয়াত কাউকে বলেছিলো? এমন হাজারো আশঙ্কায় বুক ধুক করে উঠলো ইরার। কুহু একটানে ফোন কেড়ে নিতেই সম্ভিত ফিরলো ইরার। কুহুর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,

‘ কে তুলেছে ছবিটা কুহু? ‘

কুহু মুচকি হাসলো। ছোট করে বললো,’আমি।’

‘ তুমি আমাদের দেখেছিলে? ‘

‘ হুম। চুপিসারে জাস্ট ফটো টা নিয়েছি। এরপর আর ডিস্ট্রাব করবো না তাই… ‘

‘ এটা সত্য নয়, সব দেখা সত্যি হয় না। ‘

কুহু ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ এটা ভুল হতে পারে না! আমি সচক্ষে দেখেছি। ‘

‘ ভুল দেখেছো। রং টাইমে এসেছিলে তুমি। আর… ‘

কথাটা বলার পরপরই থেমে গেলো ইরা। কিছু একটা ভাবতেই মাথায় খেলে গেলো দুষ্টু একটা বুদ্ধি। মুখের অবাক ভাব মুহুর্তে কাটিয়ে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটলো ইরার। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠলো,

‘ তুমি ঠিকি’ই ধরেছো কুহু। দুই বছরের সম্পর্ক আমাদের। ‘

কুহু যেন আকাশ থেকে পড়লো। এই এক্ষনি বললো এটা সত্য নয় আর এখনি বলছে দু বছরের সম্পর্ক? শ্বাস আটকানো কন্ঠে বললো,

‘ এটা সত্যি তাহলে? ‘

অনিমেষ কন্ঠ ইরার, ‘ একদম! ‘

‘ হায় আল্লাহ! দুই বছরের সম্পর্ক আর ভাইয়ার বিয়ে তিনদিন পর। তুমি মানে তোমরা কি চাইছো বলবে প্লিজ? ‘

‘ এটা তোমার ভাইয়াকে বলো তুমি। ‘

‘ ভাইয়াকে বলেছিলাম। ও তো রাজি বিয়েটাতে। তোমরা কি পালানোর টালানোর প্লান করছো নাকি? ‘

ইরা শূন্যে তাকিয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। এক, দুই, পুরো তিন মিনিট ভেবে হঠাৎ কেঁদে উঠে ইরা। আচমকা ইরার কান্নায় থতমত খেয়ে দাড়িয়ে রইলো কুহু। কাঁদো কাঁদো গলা ইরার,

‘ জানো কুহু? তোমার ভাই আমার সাথে কালকে ব্রেকাপ করেছে। বললো আমার থেকেও বেটার কাউকে নাকি পেয়ে গেছে সে। তাই কাল আমার সাথে ব্রেকাপ করে গেছে আয়াত। আমি সহ্য করতে পারছি না। আজ রাতে গলায় দড়ি নেবো ঠিক করেছি। ‘

চোখদুটো বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো কুহুর। ইরার বনানো জালে পা দিয়ে বড়ো ভুল করে বসলো কুহু। সেই সময় আগত! শাস্তির!
__

ব্যাস্ত সময় কাটছে আয়াতের। আজ গায়ে হলুদ। সকাল থেকে কাজিনমহল নেমেছে আড্ডায়, উল্লাসে। আয়াতদের বাড়ি জাঁকজমকপূর্ণ। আত্মীয় ঠাসা একদম। দম ফেলবার জায়গা নেই। খানিক বাদেই প্রথম হলুদ। বেশ করে সাজানো হয়েছে মিষ্টির প্লেট। সাথে ফলমুলের ঝুড়ি। একটু ফাঁকা পেলে হয়তো ভালো লাগতো। কিন্তু ছাঁদ, ঘর, বেলকনি সব জায়গায় মানুষ। আয়াতের বর্তমানে প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই। তার রুমেই কলাহল সবচেয়ে বেশি। তাই ড্রইংরুমের সোফাতেই বসে সে। ইরফান আলী এতো খুশি বলে বোঝাবার নয়। ত্রপা বেগম তো এখনি প্লান করে রেখেছেন তার আর তার হবু বউমার কাজ। এতো আয়োজন, ব্যাস্ততার মাঝেও কুহু আহত দৃষ্টিতে সোফার এক কোনে বসে আছে। একটু পরপর ফুস করে উঠছে। আয়াতকে দেখছে। মুখচোখে গম্ভীর্যতার ছটা তার। বিরক্তিকর ভাব। যেনো এসব কিছুই মনে ধরছে না তার। কতজনে ডেকে গেলো, কুহু সারা দিলো না। ইচ্ছে হয়নি গিয়ে কোন আনন্দে সামিল হবার। কেন হবে? এ বিয়েটাই তো অন্যায় তার মতে। ইরার মতো সুন্দরী ভাবি হাতছাড়া হলো। আরে ভাবীকে দিয়েই দশ বারোটা বয়ফ্রেন্ড যোগার করা যেত। সেখানে অতি চালাকচতুর মেম সাহেব আনা হচ্ছে আয়াতের বউ হিসেবে। তার উপর আবার আয়াতের কুকর্ম! কিছুই ভালো লাগছে না কুহুর। এককথায় চরম বিরক্ত সে!

‘ কুহু…আমি চলে এসেছি। ‘

পরিচিত একটি রিনরিনে কন্ঠ কানে আসতেই সচকিত হয়ে তাকালো কুহু। দরজায় ইরা দাড়িয়ে। কুহু চোখদুটি বড়বড় করে তাকিয়ে দেখলো, না! সত্যিই এক্স এর বিয়ে খেতে এসেছে ইরা। কুহুকে মূর্তির মতো বসে থাকতে দেখে ইরা একা একাই ডুকে পড়লো। ড্রইংরুমে বসে থাকা আয়াত ইরাকে দেখতেই থমকে গেলো। থিতিয়ে গেলো সমস্ত বিরক্তির ছটা। ইরা সোজা কুহুর কাছে চলে গেলো। কুহু সেন্টি খাওয়া স্মাইল দিলো। বললো,

‘ তুমি? ‘

ইরা কুহুর পাশে বসে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, ‘ হুম আমি। আমায় দাওয়াত দিয়েছেন সয়ং তোমার ভাই। তাই ফেলতে পারিনি। ‘

কুহু আয়াতের দিকে কটমটে চাউনি নিয়ে তাকালো। ‘লম্পট’ বললো মনেমনে। অতঃপর রাস ভারী কন্ঠে সু স্বাগতম জানাতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠলো। ইরা বলেছে আজ সারাদিন থাকবে। কুহু খুশিই হলো। এই মেয়েটা পাশে থাকলে ভালো লাগে। প্রচুর কথা বললেও এতটুকু বিরক্ত হয়না। বাঁচাল মানুষের সাথে ইরার মতো মানুষকেই মানায়। কুহু আর ইরা কথা বলতে লাগলো।

কিছুটা দূরে বসে থাকা আয়াত ভেবে পেলো না এ কি সেই লাজুক মায়াবতী তার? যে অল্পতেই খুব কাঁদে, সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে! এতো পরিবর্তন কিভাবে? এতটা পরিবর্তন ও কি সম্ভব কোন মানুষের? সম্ভব! নিজ চোখকে তো আর সে অবিশ্বাস করতে পারেনা তাই না?
__

সাদা সেন্টো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়ানো হয়েছে আয়াতকে। উদোম ফর্সা আয়াতের শরীর যেন জ্বলছে চকচকে রোদে। সবাই ব্যাস্ত হলুদ লাগাতে। ইরা পরিচিত হলো কুহুর সব কাজিনদের সাথে। মজা করলো অনেক। তবে আয়াতের মা বাবার সাথে পরিচয় হয়নি। কাজিন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রইলো।

‘ তোমার এক্সকে হলুদ লাগাবে না ইরা? ‘

বললো কুহু। ইরা হা হুতাশ করে বলে উঠলো,

‘ লাগাবো তো! ‘

‘ তাহলে চলো। ‘

ইরা আর কুহু লাগাতে গেলো হলুদ। ইরা হলুদ হাতে নিয়ে এগোতেই চমকে উঠলো আয়াত। ইরা একটু হলুদ আলতো করে গালে লাগিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

‘ খুব বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। ‘

আয়াত থমকালো, হকচকিয়ে উঠলো। কি সারপ্রাইজ? আর এতো খুশিই বা কেন ইরা? আয়াত অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে সক্ষম হলো না। শুধু মনেমনে বললো,

‘ কে জানে। কি করতে চলেছে মেয়েটি! ‘

#চলবে….