ইরাবতীর চুপকথা পর্ব-১১

0
388

#ইরাবতীর চুপকথা
লেখক: হৃদয় আহমেদ
পর্ব ১১

আয়াতের কথাগুলি ইরার কানে পৌছাতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিতল কিছু ছুটে গেলো। পায়ের নিচের মাটি শিরশির করে উঠলো। কপালে পড়লো সূক্ষ্ণ তিনটি ভাজ। এসব কি বলছে আয়াত? সে খুশি? কিন্তু কেন? কুহু তো বলেছিলো আয়াতের পরিপূর্ণ মত রয়েছে এ বিয়েতে। তাহলে? ইরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। তার অজান্তেই এতো বড় ভালো করলো ইরা? চরম শত্রুর বিরুদ্ধে স্টেপ নিলো, তাও ভালো হলো তার’ই? নাকি এখন এমনিই এসব বলছে আয়াত? নিজেকে উপরে উপরে খুশি দেখাচ্ছে?

‘ কি ট্রিট চাই মিস ইরাবতী? যা চাইবেন তাই পাবেন! ‘

ইরা কটমটে চোখে আয়াতের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

‘ আপনাকে আমি ছাড়বো না! খুন করে ফেলবো একদম। ‘

আয়াত আরেকটু ঝুঁকে পড়লো ইরার উপর। বাঁকা হেঁসে বললো,

‘ সে তো তিন বছর আগেই করেছেন মিস ইরাবতী। আমার মন! ‘

ইরার মেজাজ এবার আকাশস্পর্শ করলো। নিজের এতো বড় বোকামির জন্য নিজেকে নিজের’ই ঘৃনা হলো ইরার। চুল ছিঁড়ে পাগলি হওয়ার ইচ্ছে জাগলো। মন চাইলো চড়টা নিজের গালেই ফেলতে। কাঠকাঠ গলায় বললো ইরা,

‘ আপনাকে আমি ছাড়বো না। ‘

‘ বিয়ের পর যা করার করিয়েন। সহ্য করে নিবো। ‘

এতো লোকের মাঝে ইরার সাধ জাগলো পাঞ্জাবীর কলার টেনে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় বসিয়ে দিতে আয়াতকে। কিন্তু এমনটা করাটা ঠিক হবে না। দমাতেও পারছে না সহ্য ও করতে পারছে না ইরা। রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো ইরার শরীর। আয়াত মৃদু হেঁসে ইরার উপর থেকে সরে গেলো। ধির পায়ে হেঁটে ইরফান আলীর সামনে গিয়ে দাড়ালো আয়াত। ক্ষীণ স্বরে বললো,

‘ আমি পাপ মোচন করতে চাই। ইরাকে বিয়ে করে! ‘

কথাটি কর্নকুহরে পৌছাতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো ইরার। অবাক চোখে তাকালো সেদিকে। বিয়ে করতে চায় মানে কি? আয়াত ফের বলতে লাগলো,

‘ যেহেতু আমি ওকে ঠকিয়েছি, বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। তাই আমি আমার ভুল স্বিকার করে ইরাকে বিয়ে করতে চাই। ‘

কোথথেকে কুহু ছুটে এলো ইরার কাছে। ভয়ে জমে থাকা ইরার ঘারে হাত রেখে কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘ এবার কি হবে? ভাইয়া তো খেলাটাই ঘুড়িয়ে দিলো একদম। ‘

ইরা একপলক কুহুর দিকে তাকিয়ে বিদগ্ধ দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকালো। ইরফান আলী আয়াতকে পাশ কাটিয়ে ইরার সামনে গেলেন। শান্ত গলায় বললেন,

‘ তুমি কি চাও? ‘

দু’চোখ ভরা অবিশ্বাস, স্তব্ধতা নিয়ে ইরা তাকালো ইরফান আলীর দিকে। কথা বলতে গিয়ে ইরা বুঝলো, তার কন্ঠ আঁটকে আসছে। অজানা ভয়ে শিউরে উঠছে শরীরের প্রতিটা অংশ। আয়াত ও ইরার সামনে গেলো। অপরাধবোধ নিয়ে নিচু গলায় বললো,

‘ আমায় ক্ষমা করে দাও ইরা। আ’ম রিয়েলি সরি। ‘

থমকে গেলো ইরা। অবাস হতে লাগলো সারা দেহ। কি থেকে কি হচ্ছে এসব? ইরা বুঝলো না। মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়লো। পাশ থেকে কুহু শক্ত কন্ঠে ইরার পাশে দাড়ালো,

‘ সরি ভাইয়া, তোমাকে তো আমারি ঘৃণা হচ্ছে। ইরা এ বিয়ে করবে না। ‘

ইরফান ধমকে উঠলেন,’ আহ্ কুহু! ইরা তুমি বলো। ‘

কুহু পাশ থেকে চিমটি কাটতেই ইরা হকচকিয়ে উঠলো। চেয়াল খিচে মৃদুস্বরে ইরাকে বললো কুহু,

‘ এখন এমন চুপ থাকলে জিবন শেষ! বলো কিছু। ‘

ইরা ছোট করে ‘হুম’ বলে আয়াতের দিকে তাকালো। একপা এগিয়ে সোজাসুজি দাড়ালো সম্মুখে। বললো,

‘ মাফ করবেন আঙ্কেল। আমি পারবো না বিয়ে করতে। আপনার ছেলে কি কখনো আমায় ভালোবেসেছে? বাসেনি! আজ চাপে পড়ে এই কথাগুলো বলছে। আর যে আমায় ভালোই বাসেনা আমি তার সাথে সারাজীবন তো দূর একটা সেকেন্ড ও থাকতে পারবো না। আজ পরিস্থিতি ওনাকে বলছে, বিয়েটাই একমাত্র বাঁচার উপায়। কিন্তু আমারো মান-সন্মান রয়েছে। এটা উনি বোঝেননি। আর যেটা তিন বছরেও আয়াত বুঝলো না, সেটা কি আর বুঝবে কখনো? সম্ভব? নয়! ‘

কুহু ইরার সাথে তাল মেলালো। বললো,

‘ ফুপা ইরা ঠিক বলছে। চল, তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।’

বলেই ইরার হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো কুহু। আয়াত শব্দ করে হেঁসে উঠলো। অতঃপর পাশে ইরফান আলীর অস্তিত্ব টের পেতেই মিলিয়ে গেলো মুখের হাসি। ইরফান আলীর চোখেমুখে পাষবিক বিরক্তি। কেউ কিভাবে এতকিছুর পর হাসতে পারে তিনি বুঝলেন না। ‘বলদ’ শব্দটি মনেমনে আওড়ে স্থান ত্যাগ করলেন।

দুই জনে বেড়িয়ে এসেই ফুটপাত ধরলো। রাত তখন সাড়ে নয়টার বেশি। ভ্যান বা রিকশা তেমন নেই। আর একটু এগোলে হয়তো পাওয়া যাবে। সামনেই বাজার। কুহু ওই বাড়ি থেকে একটু দূরে আসতেই শব্দ করে হেঁসে উঠলো। বললো,

‘ যাক! মিশন সাকসেসফুল! ‘

ইরার মুখচোখে গম্ভীরতা। গম্ভীর গলাতেই বললো,

‘ কই আর হলো। একটু রাগ করলে তাও মনটা শান্ত হতো। ‘

‘ কি বলো এইসব তুমি? ‘

‘ ঠিক’ই বলছি কুহু। তোমার ভাই তো একটু রাগও করলো না। আমার মনে হয় আরও একবার টাইট দেয়া উচিত! ‘

‘ তুমি বরং বিয়ে করে নাও! ‘

ইরা অবাক চোখে তাকালো। বললো,

‘ বলো কি? ওনাকে বিয়ে করা মানে…’

ইরাকে থামিয়ে কুহু বলে ওঠে, ‘ বাসররাতে ঘর মোছাবে, দশ হাত দূরে রাখবে, মেঝেতে শুতে দেবে, তাহলেই তো হলো! ‘

‘ না! হলো না। জব্বর কিছু ভাবছি ওয়েট। ‘

‘ ইরা…আয়াত কিন্তু ভাই হয় আমার। আমি আর কোন কিছু তে নেই। যা করার তুমি করো। ‘

‘ আচ্ছা! আমিই করবো। ‘

তারা হাঁটতে লাগলো। কিছুক্ষণ কাটলো নীরবতা। আর একটু হলে বাজার। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। সামনে ছোটখাটো একটা ব্রীজ। ইরা আর কুহু সেখানে যেতেই থমকে গেলো ইরা। ব্রীজের ওয়ালে ঠেস দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে আকাশ। ইরা থমকে গেলো। আকাশ তো সিগারেট খায় না। তাহলে? কথা বলার ইচ্ছে হলো না ইরার। নিজ মনে হাঁটতে লাগলো সে। জিবনের সবথেকে নির্মম ক্ষতটা পিছনে ফেলে আসার জন্য ছটফট করে উঠলো মন। কিন্তু হায়! সময় সায় দিলো না। পেছন থেকে বড্ড পরিচিত স্বরটা ভেসে এলো,

‘ কেমন আছেন? ইরা? ‘

ইরা থমকে গেলো। আটকে গেলো সেখানেই পা’দুটি। ইরার দেখাদেখি কুহুও থামলো। আকাশ হাতের সিগারেটটা পায়ের তলায় পিশে ছুটে এলো ইরার সামনে। বললো,

‘ এতো রাতে বাইরে কি করো? ‘

#চলবে_