উল্টোরথে-১০
তিথি সময়মতো কলেজে পৌঁছে গেলেও ডিকেন এলো বেশ কিছুক্ষণ দেরী করে। তিথির কলেজ গেটে এসে তিথিকে ফোন করল, তিথি, আমি জানি তুমি এসেছ। আমি অপেক্ষা করছি। প্লিজ সামনে এসো৷
তিথি বের হয়ে এলো।
তিথিকে দেখে ডিকেন অবাক হয়ে গেল। এই তিথি তার ভীষণ অপরিচিত। সেই আগের উড়নচণ্ডী ভাবটা নেই। ওয়েস্টার্ন পোশাকের বদলে সালোয়ার কামিজ পরা, সাথে কানের গলার সোনার গয়না তার স্বর্ণবন্ধনের চিহ্ন বহন করছে৷
ডিকেনের খুব অস্থির লাগল তিথিকে দেখে।
চলো বসি কোথাও?
তিথি বলল, যা বলতে চাও, এখানে বলো। আমি কোথাও যাব না।
তিথি একটা সত্যি কথা বলো, তুমি কি তোমার স্বামীকে ভালোবাসো?
তিথি একটু বিব্রত হলো৷ পারভেজকে ও ভালোবাসে না। এখন অবধি না।
তোমার আর কিছু বলার আছে?
তুমি শুনতে চাইলে অনেক কিছু বলতে চাই তিথি।
না, আমি বেশি কিছু শুনতে চাই না। কেন এসেছি সেটাও জানি না। না আসলেই হতো। তোমার বউ আমাকে চূড়ান্ত অপমান করেছে, তোমার বাচ্চাও আছে ডিকেন! একটা মানুষ কোন লেভেলে ইতর হলে বউয়ের সাথে শোয়ার পরে আবার আরেকটা মেয়েকে…….
তিথি, তুমি যা খুশি বলতে পারো, তোমার সেই অধিকার আছে। একবার আমার কথা তো শোনো! তারপর বলো। তিথি চলো ছবির হাটে বসি।
না। আমি চলে যাচ্ছি।
ডিকেন তিথির হাত ধরে ফেলল।
এসেছ তোমার ইচ্ছেতে কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছায়।
তিথি জোরে বলল, ডিকেন হাত ছাড়ো।
ছাড়ব না।
কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়ল।
কি হইছে ম্যাডাম? কোনো সমস্যা?
ডিকেন বলল, আমাদের সমস্যা আমরা দেখতেছি, আপনারা আপনাদের নিজেদের পথ দেখেন!
আরে মিয়া, একটা মেয়ের অনিচ্ছায় হাত ধরে আছেন!! আর বলছেন আপনাদের সমস্যা! হাতটা ছাড়ুন!
ডিকেন কনফিডেন্স নিয়ে বলল, ও আমার বউ! বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করেন!
তিথি হতভম্ব হয়ে গেল! সে অস্বীকার করবে? অস্বীকার করলে এরা যদি ডিকেনকে মারে!
কি ম্যাডাম উনি যা বলছে সত্যি!
তিথি বলল, আমরা দেখছি, আপনারা আসুন!
আরে রং ঢং ঘরে বসে করেন না! রাস্তায় নেমে নাটক যত!
লোকগুলো হেঁটে চলে গেল।
তিথি উঠে এসো।
ডিকেন তিথিকে জোর করল।
তিথি ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় উঠে বসল! ডিকেনকে তো এড়িয়ে যেতে পারছে না। গত তিন মাসে যা করেনি! আজ সেরকমই করল। তাও বিয়ের পরে! তিথি এত হ্যাংলা, ছ্যাচড়া! ছি!
নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হতে লাগল।
বাইক পার্ক করে তিথির হাত মুঠোতে শক্ত করে ধরে ডিকেন হাঁটতে লাগল। ডিকেনের হাতটা খসখসে লাগছে, শীত পড়তে শুরু করেছে, বোধহয় এখনো স্কীন কেয়ার শুরু করে নি। এক মুহুর্তে তিথি আগের সবকিছু ভুলে যেতে শুরু করল মনে হয়!
হাতে লোশন গ্লিসারিন কিছু দিচ্ছ না?
ডিকেন বলল, সময় হয় নি! কেউ খেয়াল রাখারও নেই বোধহয়!
তিথির মনে পড়ে গেল ডিকেনের বউয়ের কথা!
তোমার বউ?
ও বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত। তিথি মায়ের কথা রাখতে আমি বিয়েটা করেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝবে, আমি সুযোগটাই পেলাম না।
তিথি কিছু বলল না।
তিথি বাদাম খাবে?
না।
দুপুর হয়েছে তো, চলো লাঞ্চ করি?
না।
একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে ডিকেন গাছের নিচে বসে পড়ল। তিথিও বসল। ডিকেন কাছে এগিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে চাইল, তিথি সরে গেল।
ডিকেন, আমার মনে হয় তোমার কথা শেষ, তোমার যা বলার ছিল, তুমি বলে দিয়েছ, আমিও শুনেছি। তোমার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো শেষ হয়ে গেছে। আমি শান্তিতে সংসার করতে চাই। আর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করো না। সবাই সব কিছু পায় না।
তিথির গলা ভার হয়ে এলো।
ডিকেন শুনলো তিথির কথা। তারপর আচমকা তিথিকে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করল। আকস্মিকতায় তিথি বাঁধা দিতে পারল না। ডিকেন তিথিকে ছেড়ে দিলো না। চুমু খেতেই লাগল, তিথি প্রথমে নিস্ক্রিয় হলেও ডিকেনকে অগ্রাহ্য করতে পারল না। ডিকেনকে আঁকড়ে ধরল। ডিকেন সব সময়ই এমন, একটা প্রবল আকর্ষণ ওর মধ্যে, ওর শরীরের ঘ্রাণেও তিথির নারী সত্তা জেগে ওঠে আদিমতায়! পারভেজের সাথে নিশ্চিন্ত, নিরাপদ যৌনতায় তিথি জেগে উঠতে পারে নি। অথচ ডিকেনকে সাড়া দিলো!
ডিকেন বেশ কিছু সময় পরে তিথির চোখে চুমু খেয়ে বলল, তুমি সাড়া না দিলে আমি ভাবতাম আমার প্রতি তোমার অনুভূতি শেষ। মুখে বললেই তো সব শেষ হয় না তিথি। আমরা একটা জটিলতায় আটকে গেছি! এই সময় থাকবে না তিথি!
তিথির এবার কান্না পেল, এটা কী করল সে! আগের তিথি তো এখন নেই! পারভেজের সামনে কীভাবে দাঁড়াবে তিথি!
বিয়ে করাটা ভুল হয়েছে, এখন এই জটিলতায় পারভেজও জড়িয়ে গেছে!
কেঁদো না তিথি! তুমি এডাল্ট, আমরা কোনো ভুল করিনি!
একটু সময় দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে!
কিচ্ছু ঠিক হবে না। সব এলোমেলো, অগোছালো হয়ে গেছে তিথির! কিছুই ঠিক হবার নয়।
তিথি, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি?
না দরকার নেই!
দরকার আছে, অন্তত তোমার এলাকার কাছাকাছি কোথাও গিয়ে তোমাকে রিক্সা না সিএনজি করে দিচ্ছি। আর ফোনটা রিসিভ করো প্লিজ! আমি অসময়ে তোমাকে কল করব, পরে সময় মত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিব!
আর কোনো সিদ্ধান্ত হয় না ডিকেন!
সেটা সময়ই বলে দিবে। এখন এসো।
তিথিকে ডিকেন বাসার কাছে গিয়ে রিক্সায় তুলে দিলো। এটা আগেও করেছে সব সময়! আচ্ছা ওইদিন পারভেজ তো তিথিকে একাই বাসায় পাঠাল! পারভেজ ডিকেনের মতো না। কেনই বা ওর মতো হবে!
বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে সিংকে তিথি অনেকক্ষণ মুখ ধুয়ে নিলো কাঁদতে কাঁদতে। এতোটা খারাপ মেয়ে তিথি, কই আগে তো জানত না! মনে হচ্ছে ডিকেনের স্পর্শ সাবান ঘষে তুলে ফেলবে তিথি!
আহারে, সাবানে যদি সব পরিস্কার করা যেত!
চলবে
শানজানা আলম