এক টুকরো নূর পর্ব-১৫+১৬

0
121

#এক_টুকরো_নূর
——————(১৫ পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

নূরা চলে চলে গেল মায়ের সাথে।হক সাহেব আর মিসেস লিপি বসে বসে ভাবছেন ঘরটা ফাঁকা হয়ে গেল একেবারে।
সাদমান রাত করে ফিরলো।কেউ জেগে নেই তখন।নূরা প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করে।আজকে আর অপেক্ষা করার মতো কেউ নেই তার।ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এলো।কতদিন পর সোফা ছেড়ে বিছানায় ঘুমাচ্ছে।যে মেয়েটাকে সহ্য করতে পারতো না নিজের ঘরে সেই মেয়েটাও আজ নেই।আজকে তো তার খুশি হওয়ার কথা।অথচ বুকের ভিতরটাতে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন!মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ডের একটা অংশ ক্ষয়ে গেছে।প্রিয় কোনো বস্তু হারিয়ে গেলে যেমন লাগে তেমন।সাদমান এপাশ-ওপাশ করলো কতক্ষণ।ঘুম কিছুতেই আসতে চাইছে না তার।উঠে বেলকনিতে গেল।এখানেই নূরা বসে রোজ চাঁদ দেখতো।আচ্ছা আজও কী সে চাঁদ দেখছে? নাকি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে?
সাদমান নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না তার এমন অস্বাভাবিক কষ্ট লাগার কারণ কী! কেন এত শূন্য শূন্য লাগছে তার! চাঁদটাও যেন আজকে সাদমানকে দেখে হাসছে বিদ্রুপ করে বলছে,আমার পাশে আকাশ ভর্তি তারা আছে কিন্তু তোমার পাশে কেউ নেই।তুমি শূন্য হয়ে গেছো।একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছো।এবার তোমার নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পালা।

সাদমানের থেকে যোজন মাইল দূরে নূরা বসে আছে খোলা আকাশের নিচে।একমনে তাকিয়ে আছে চাঁদটার দিকে।তার চাঁদ দেখার সঙ্গী হয়ে উঠেছিল সাদমান।এই কয়দিনে হৃদয়ের অনেক কাছে চলে এসেছিল মানুষটা।বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে মনের ভিতর।কিছুতেই যেন তাকে সেই জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না।মন থেকে মুছে ফেলা যাচ্ছে না।না চাইতেও মনে পড়ে যাচ্ছে বার বার।এর আগে তো কোনো মানুষের জন্য এত মন পুড়েনি নূরার।তবে আজ কেন এমন হচ্ছে! নূরার চোখ গড়িয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে।হঠাৎ নোহা এসে বসলো পাশে।নূরা দ্রুত চোখ মুছে স্বাভাবিক হলো।নোহা নূরাকে পরখ করে বললো,”আপা তুমি কাঁদছিলে?”
“কই”
“না তো বলতে পারবে না, কারণ তুমি মিথ্যে বলতে পারো না।
নূরা চুপ করে রইল।
নোহা মুচকি হেসে বললো, ” মাত্র কয়েক দিনের জন্য তো আজই এসেছো।এখনই কান্নাকাটি শুরু।এত ভালোবাসো ভাইয়াকে?”
নূরা এবারও কোনো জবাব দিলো না।কারণ শুধু সে জানে, এই চলে আসা কয়েক দিনের জন্য ছিল না।চিরজীনের জন্য ছিল।
নোহা নূরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”মন খারাপ করে না আমার সোনা আপা।”
নূরা আস্তেকরে বললো,”মন খারাপ না।”
“তাহলে কাঁদছিলে কেন?”
“জানি না একা একা লাগছিল খুব।”
“আমরা থাকতেও একা লাগে?এখন বর সবচেয়ে আপন হয়ে গেছে তাই না?আমরা কেউ না।”
“এমন কিছু না পাগলী।”
নোহা বললো,”তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন আপা?”
“ঘুম আসছে না রে।”
“শুনো আপা এখন আমরা তো মামাবাড়ি থাকি।তুমি এলে বলে এতদিন পর বাড়িতে এলাম।আগের মতো লাগছে সবকিছু। আগে যেমন দুইবোন মিলে রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে গল্প করতাম।ঠিক তেমন।”
“মামা বাড়িতে তোদের কষ্ট হয় নোহা?”
“তেমন কিছু না।মামার অবস্থা তো জানোই।কোনোরকমে চলে যায়।আম্মাও সেলাইয়ের কাজ করে কিছু টাকা পায়।
আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করেছি আপা।ভাবছি কিছু টাকা জমে গেলে তারপর পরীক্ষার ফিশটা দিয়ে দিবো।স্কুলে তো আর যাওয়া হয় না পরীক্ষায় বসতে দিবে কী না কে জানে!
নূরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মা বোনকে কতটা অসহায় পরিস্থিতিতে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল সে।এখন আবার ফিরে এলো।তাদের বোঝা বাড়াতে।এবার একটা কাজ জোগাড় করা লাগবেই তার।
নোহা আবার বললো,”আপা একটা কথা বলি?”
“বল”
“আমরা এসেছি থেকেই তোমার মন খারাপ।বেড়াতে এসে এত মন খারাপ করার তো কারণ নেই।সত্যি করে বলবে কী হয়েছে?”
নূরা মাথা নিচু করে রইলো।তারপর ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,”আম্মাকে এখনই কিছু বলিস না নোহা।আমি একেবারে চলে এসেছি।”
নোহা আঁতকে উঠলো, “কী বলছো এসব আপা?একেবারে কেন চলে এসেছো?”
“মানুষটার সাথে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না তাই।”
“উনি কী তোমাকে চলে আসতে বলেছে।”
“না তা বলেনি কিন্তু আমাকে আটকে রাখতেও চায়নি।তুই তো জানিস বিয়েটা কীভাবে হয়েছে।ওনার মত ছিল না বিয়েতে।সে মিহি নামের একজনকে ভালোবাসে।আমাকে পছন্দ করে না।তার আর আমার কিছুতেই মিলে না।সে নামাজ পড়ে না নোহা।ধর্মকর্ম কিছুই জানে না।সারাদিন সিনেমার শুটিংএ ব্যস্ত থাকে।নেশা’দ্রব্য পান করে।
এমন একটা মানুষকে আমি কেন ভালোবেসে ফেললাম রে নোহা।
নূরা নোহাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
নোহার চোখেও জল জমেগেছে।কোনোরকমে চোখ মুছে বললো,” আপা তুমি তো কোনো ভুল করোনি।তোমার তো ওনার সাথে বিয়ে হয়েছে।ভাইয়া তোমার স্বামী। তুমি তো সব সময় বলো আমাকে যে বিয়ের পরের ভালোবাসাটা পবিত্র,হালাল।সাদমান ভাইয়ার মাঝে হয়তো অনেক ইসলামিক জ্ঞানের কমতি আছে।তাকে তুমি কতটা জানানোর চেষ্টা করেছো বলো তো?
“আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু যেই মানুষটা আমাকে স্ত্রী বলে মানে না সেই মানুষটার সাথে আমি কী করে থাকবো বল?উনি আমাকে আর মিহিকে ডেকে নিয়ে একসাথে বলেছিল আমি যেন তাদের জীবন থেকে সরে যাই।আমি সেটাই করেছি।আমি মানুষটার জন্য সারাজীবন দোয়া করবো আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত নসিব করেন।”
“আর তুমি সারাজীবন কষ্ট পাবে?”
“আল্লাহই আমাকে শান্তি দিয়ে দিবেন।যে মানুষটা কখনই আমার ছিল না তার জন্য কষ্ট পাওয়াই তো বোকামী।”
“মানুষটা তোমার স্বামী ছিল আর এখনও আছে আপা।তুমি এত সহজে হাল ছেড়ে দিতে পারো না।একটা বিয়ের সম্পর্ক তো আল্লাহই তৈরি করে দেন।
আল্লাহ তো পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করিনি? — আন-নাবা ৮
তোমার আর ভাইয়ার জোড় তো আল্লাহই মিলিয়ে দিয়েছেন।উনিই তোমাদের মিলিয়ে দিবেন একদিন ইনশাআল্লাহ।
নুরা চোখ মুছে বললো,” অনেক বড় হয়ে গেছে আমার বোনটা।চল এখন ঘুমাতে যাই।নাহলে আম্মা ঘুম ভেঙ্গে আমাদের না দেখলে ভয় পাবে।”
—————–
সাদমানের ঘুম ভাঙ্গলো বেলা এগারোটায়।আজকে শুটিং নেই তার।উঠে ফ্রেশ হলো সে।আমেনা কফি নিয়ে এলেন।সাদমান আনমনে বললো,”তুমি কফি নিয়ে এলে নূরা কোথায়?”
আমেনা ফিক করে হেসে দিলেন।
সাদমান ঢোক গিলে বললো,”কফিটা রেখে যাও।”

আমেনা গিয়ে কথাটা লিপিকে বললেন।দুজনেই এটা নিয়ে হাসাহাসি করলেন।সাদমান নাস্তার টেবিলে আসলে লিপি আর আমেনা নূরাকে নিয়েই কথা বলছিল।
সাদমান চেঁচিয়ে উঠলো, “এই বাসায় কি নূরা ছাড়া আর কোনো টপিক নাই?নূরার বানানো নাস্তা ভালো।নূরা নাই বাসা ফাঁকা,নূরা থাকলে ভালো হতো এসব কথাবার্তা বন্ধ করা হোক।প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে কানটা পঁচে গেল।
লিপি খানিকটা অবাক হয়ে বললেন,”আজকেই তো নূরার কথা হচ্ছে প্রথমবার।প্রতিদিন তুই কীভাবে এসব কথা শুনিস?”
সাদমান কিছু না বলেই নাস্তার টেবিল থেকে উঠে ঘরে চলে গেল।
লিপি মুখ টিপে হাসলেন।ছেলে যে বউমাকে মিস করছে তার প্রমাণ তো তিনি পেয়েই গেলেন।হক সাহেবকে কথাটা জানাতে হবে।

সাদমান ঘরে বসে রইলো কিছুক্ষণ।ভালো লাগছিল না দেখে তাওসিফকে কল করে বাসা থেকে বের হলো।একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তাওসিফ আর সাদমান।তাওসিফ গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে।সাদমান কিছুই অর্ডার করেনি নিজের জন্য।তাওসিফ খেতে খেতে বললো,”কিছু একটা তো অর্ডার কর।আমি কি একাই খাবো ?”
“আমার ইচ্ছে করছে না তুই খা।”
“তোর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছুই খাসনি?”
“না আসলে ক্লান্তি ছাড়ছে না আজকে,সকালে কফিও খাইনি।”
“কেন খাসনি?”
“আমেনা খালা বানিয়েছিল বিস্বাদ পুরাই।”
“জন্ম থেকে তো আমেনা খালার বানানো কফিই খাস তুই।”
“নূরা বানিয়ে দিতো রোজ।”
“বাহ!এখন তাহলে বউয়ের হাতের কফি ছাড়া মুখে রোচে না।দারুণ ব্যপার।”
তাওসিফ শব্দ করে হাসছে।
“হাসবি না।”
তাওসিফ হাসি থামিয়ে বললো,”যখন নূরাকে ছাড়া থাকতেই পারবি না তাকে যেতে দিয়েছিস কেন?”
“সে চলে গেছে।আমি যেতে না দেয়ার কে?”
“কেউ না?”
“না কেউ না।”
“তোর কথাবার্তা শুনে ইদানীং খালি হাসি আসে আমার।”
“তাওসিফ আমি তোর কাছে আসি মানসিক শান্তি পেতে আর তুই আজাইরা কথা বলিস সারাক্ষণ।”
“মানসিক শান্তি খুঁজবি বউয়ের কাছে আমার কাছে কেন?”
সাদমান চুপ করে রইলো।
তাওসিফ কিছুক্ষণ হাসলো।তারপর হাসি থামিয়ে বললো,”ঠিক আছে এখন আমি সিরিয়াস।সত্যি করে বল তো নূরা চলে যাওয়ার পর থেকে মনটা খচখচ করছে না?”
“না”
“এত সহজে একটা মিথ্যে কথা বলতে পারলি?শুন সাদমান আমার সাথে হয়তো মিথ্যে বলতে পারবি।লুকাতে পারবি কিন্তু নিজের মনের থেকে লুকিয়ে বাঁচবি কী করে?”
“আমি আমার নিজেকেই তো বুঝতে পারছি না রে।
” এটাই আসলে তোর প্রব্লেম।নিজের অনুভূতি নিজেই বুঝিস না।দেখ মিহির জন্য তোর মনে যেটা ছিল সেটা আর যাই হোক ভালোবাসা ছিল না।মোহ ছিল।দেখেছিস কত সহজে কেটে গেছে?কিন্তু নূরার জন্য তোর চোখেমুখে যে শূন্যতা আমি দেখছি সেটা আর কখনই দেখিনি বিশ্বাস কর।খাটি সোনা চিনে নে এখনও সময় আছে।নিজে যেটা চাস,নিজের মন চেটা চায় সেটাই কর।নাহলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে।”
সাদমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“সবাই মিলে আমাকে উপদেশই দিয়ে যাও কেউ আর আমাকে বুঝতে এসো না।
তাওসিফও খাবার ছেড়ে উঠলো।সাদমান অবশিষ্ট খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,” খাবার অপচয় করবি না।অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।”
তাওসিফ বসতে বসতে বললো,”নূরা বলেছে এটা তাই তো?নূরার প্রত্যেকটা কথা মনে ধরা শুরু করেছে।তবুও বলবি ওর জন্য তোর কোনো অনুভূতি নেই?”
“তুই খাবার শেষ করে আয় আমি যাচ্ছি।” কথাটা বলে সাদমান রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল।

একটা বোরকা পরা মেয়ে হেটে যাচ্ছে একদম নূরার মতো।সাদমানের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

এভাবেই বিষন্নতা নিয়ে সাদমানের কয়েকটা দিন কেটে গেল।সকালে ঘুম থেকে উঠে আনমনে নূরাকেই খুঁজে।শুটিংয়ে মন বসে না।রাতে ফিরে এসে একা ঘরে নিঃসঙ্গতা তাকে ঘিরে ধরে।আকাশের চাঁদটাই যেন একমাত্র সঙ্গী। মাঝে মধ্যে ভাবে নূরা তো চাঁদ দেখতে পছন্দ করে নিশ্চয়ই সেও চাঁদ দেখছে।বিড়বিড় করে বলে,”কী ভিষণ মায়ায় তুমি আর আমি একই আকাশের চাঁদ দেখি অথচ কেউ কাউকে ছুঁতে পারি না।”
——————-
নূরা চা বানিয়ে এনেছে।মা- মেয়ে তিনজন মিলে চা খেতে বসেছে।আলেয়া চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,নূরা আম্মা তোকে সারাক্ষণ মনমরা দেখি কেন?কিছু কী হয়েছে?
নূরা না সূচক মাথা নাড়ালো।
,”সাদমান বাবার সাথে ফোনে কথা বলেছিস?”
নোহা বললো,”সাদমান ভাইয়া কল দেয়নি একবারও।লিপি আন্টি কল দিয়েছেন কয়েকবার।”
আলেয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,”ছেলেটা ব্যস্ত থাকে তো তাই হয়তো।”
হঠাৎ গাড়ির হর্ণ শুনা গেল।আলেয়া বললেন,”কে এলো রে নোহা?”
নোহা দরজার পর্দা খানিকটা সরিয়ে বাইরে তাকালো।তারপরই উৎফুল্ল হয়ে বললো,”আম্মা সাদমান ভাইয়া এসেছে।”
নূরার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো।
আলেয়া তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে বেরোলেন।সাদমানকে ভিতরে নিয়ে এলেন।
নূরা কাচুমাচু করে ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে আছে।আলেয়া সাদমানকে বসিয়ে নোহাকে বললেন।যা গিয়ে শরবত নিয়ে আয় তোর ভাইয়ার জন্য।নোহা চলে গেল।সাদমান আলেয়াকে বারন করে বললো,”না আন্টি আমি কিছু খাবো না।আসলে আমি নূরাকে নিতে এসেছি।এখনই বেরিয়ে যাব।”
আলেয়া বেগম মুচকি হেসে বললেন,”এসেছো যখন আজকে থেকে যাও।কালকে নাহয় চলে যাবে।”
আলেয়া বেগম চলে গেলেন রান্নাঘরে।
নূরা আস্তেধীরে হেটে এলো সামনে।অভিমান মেশানো কন্ঠে বললো,”আমি আর যাব না।”
সাদমান নিজের চুলে হাত বুলিয়ে বললো,”আমিও বা তোমাকে কেন নিতে আসবো কোনো কারণ ছাড়া?”
“কীসের কারণ?”
“মা অসুস্থ হয়ে গেছে তোমার জন্য।মাকে দেখতে যাবে না?”
“কী হয়েছে মায়ের?”
“গেলেই দেখতে পাবে তাড়াতাড়ি তৈরি হও।”
নূরা তড়িঘড়ি করে তৈরি হলো।আলেয়াকে বুঝিয়ে বলে বেরিয়ে পরলো।”

নূরা চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে।কোনো কথা বলছে না।সাদমান নিরবতা ভেঙ্গে বললো,”আইসক্রিম খাবে?”
“না।”
“পছন্দ করো না?”
“করি”
“তাহলে খাবে না কেন?”
“এখন কী আইসক্রিম খাওয়ার সময়?”
“আইসক্রিম খাওয়ার আবার সময় লাগে নাকি।”
“মায়ের জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার।”
“আইসক্রিম খেলে দুশ্চিন্তা কমে যাবে।”
সাদমান একটা দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো।
নূরা চুপচাপ আইসক্রিম খাচ্ছে।সাদমান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরার দিকে।

বাসায় এসে নূরা দ্রুত মিসেস লিপির ঘরে গেল। লিপি আলমারি গোছাচ্ছেন। নূরা খানিকটা অবাক হলো।লিপি ঘুরে তাকিয়ে নূরাকে দেখতে পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন,”আরে নূরা তুমি।কখন এলে।কার সাথে এলে।”
নূরা বিভ্রান্তি নিয়েই বললো,”আপনার ছেলে নিয়ে আসলেন।আপনি সুস্থ আছেন মা?”
“হ্যাঁ মা ভালো আছি।”
ততক্ষণে সাদমান মায়ের ঘরে প্রবেশ করেছে।নূরা সাদমানের দিকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকালো।সাদমানকে বেশ বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে….
চলবে…

#এক_টুকরো_নূর
—————-(১৬পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

নূরা নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছে।সাদমান ঘরে প্রবেশ করে গলা পরিষ্কার করলো।নূরা ভ্রুক্ষেপহীন।
সাদমান নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে কথা শুরু করবে।এক পর্যায়ে সংকোচ নিয়েই বলে ফেললো,”চুপচাপ বসে আছো কেন?”
নূরার চোখেমুখে ক্ষোভ ফুটে উঠলো,”আপনি এরকম মিথ্যা একটা কথা বলতে পারলেন?মিথ্যা কথা আমার খুবই অপছন্দ। তাছাড়া অহেতুক মিথ্যেটা বললেনই বা কেন?”
সাদমান কাচুমাচু করে বললো,”সরি।তবে মিথ্যাটা আর কয়েকদিন গেলেই সত্যি হয়ে যেতো।মা তোমার জন্য অসুস্থ হয়ে যেতো।আমি শুধু অগ্রীম কথাটা বললাম।”
“আপনি মোটেও ঠিক কাজ করেননি।”রাসূল (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা মিথ্যাবাদী থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’ (তিরমিজি : ১৯৭২)
“বললাম তো সরি।তাছাড়া কথাটা না বললে তো তুমি আমার সাথে আসতেই চাইতে না।”
“না আসতাম কী হতো তাতে?”
“ওই যে মা কয়েক দিন পর অসুস্থ হয়ে যেতো।”
“হ্যাঁ আপনাকে তো সেটা ভূতে এসে বলে গেছে।”
নূরাকে আজ বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছে।সাদমান মিটিমিটি হাসছে।এর আগে নূরাকে এই রূপে দেখেনি সে।সাদমানকে হাসতে দেখে নূরা বললো,”আপনি হাসছেন?আপনাকে বুঝা বড় দায়।কী যে চলে আপনার মনের ভিতরে বুঝি না আমি।”
সাদমান মনে মনে আওড়ালো, আমার মনের ভিতর তুমি চলো।তুমি দূরে থেকেও সারাক্ষণ মনের আঙিনায় ছুটাছুটি করো।সেই জ্বালাতন সহ্য করা যায়? সে জন্য তো কাছে নিয়ে এলাম।অথচ সে মুখে কথাটা বলতে পারলো না।নিশ্চুপ চেয়ে রইলো নূরার দিকে।

নূরা রান্নাঘরে কাজ শেষ করে সুহার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো।থেমে দাঁড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কে কাঁদছে।কৌতুহল নিয়ে দরজায় নক করলো।কয়েকবার ডাকার পরে সুহা দরজা খুললো।চোখ-মুখ ফুলে আছে তার।নূরাকে দেখতে পেয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,”কেন বার বার নক করে আমাকে ডিস্টার্ব করছো?”
নূরা ভিতরে প্রবেশ করে বললো,”তুমি কাঁদছিলে কেন?”
সুহা বেশ ঘাবড়ে গেল।মনের যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে কাঁদছিল সে, বাইরে থেকে যে কেউ শুনতে পারে এটা ভাবেনি।
সুহা আমতা আমতা করে বললো,”না তো।আমি কাঁদছিলাম না।তুমি ভুল শুনেছো।”
“নূরা সুহার গালে হাত রাখলো,” এই যে এখনও কান্না লেগে আছে তোমার গালে।কোনো কিছু নিয়ে কষ্ট হচ্ছে? কষ্টটা কারোর সাথে ভাগ করে নিলে অনেকখানি কমে যায়।তোমাকে দেখলে আমার সব সময় নোহার কথা মনে পড়ে।তুমি তো নোহার মতোই আমার ছোটবোন হও।আমাকে নিঃসংকোচে বলে ফেলো তোমার কষ্টটা।”
সুহা আর নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ফুপিয়ে উঠলো।তারপর কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,”তুমি আবার কাউকে বলে দিবে না তো? ভাইয়াকে বা মা -বাবাকে।
“কাউকে বলবো না।”
“আমাকে ভুল বুঝবে?”
“তুমি যদি কোনো ভুল না করো তাহলে কেন ভুল বুঝবো সুহা? তুমি নিঃসংকোচে বলো আমাকে।”
সুহা এক মুহুর্ত কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো,”দরজাটা বন্ধ করে এসো।”
নূরা দরজা বন্ধ করে এসে সুহার বিছানায় বসলো।
সুহা চোখ মুছে বলা শুরু করলো,”আমার একটা ছেলের সাথে রিলেশন আছে।তার নাম সামি।আমি তাকে অনেক ভালোবাসি।সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার অনেক যত্ন করে।খেয়াল রাখে।রাগ করে আমি না খেলে সেও খায় না।রোজ একবার আমার হাতে না খেলে তার পেট ভরে না নাকি।আমাকে প্রতিদিন ছোট ছোট কিছু না কিছু গিফট দেয়।এভাবেই চলছিল সবকিছু।কিন্তু সে হঠাৎ আমাকে একটা অফার দিয়েছে যেটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।আমি বলে ছিলাম বিয়ের আগে এমন কিছুতে জড়াবো না।আর তখনই সে বদলে গেল।আমাকে বললো, হয় তার কথা শুনবো নাহয় সে আমার সাথে সারা জীবনের মতো সম্পর্ক শেষ করে ফেলবে।আমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।আর তার কথাতে রাজিই বা কী করে হবো।এগুলো তো খুব খারাপ কাজ তাই না?”সুহা ডুকরে কেঁদে উঠলো।

নূরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মেয়েটা অবুঝ হতে পারে।ভাইয়ের মতোই ধার্মিক জ্ঞান কম তার মধ্যে কিন্তু মন থেকে খারাপ না।এখনও একটা ভালো সত্তা কাজ করে তার ভিতরে।
সুহাকে শান্তনা দিয়ে নরম গলায় বললো,”আমার কথা শুনো সুহা।শান্ত হও।ভেঙ্গে পড়া মানে নিজের কাছে হেরে যাওয়া।এমন একটা পরিস্থিতিতে নিজের কাছেই হেরে যেও না।তোমাকে জিতবে হবে।বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হচ্ছে যিনা।এটা ভয়াবহ পাপ।মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা পথ।”
(সূরা ইসরা -আয়াত:৩২)
তারপর হচ্ছে তোমার সম্মান।একটা ছেলের কাছে নিজের আত্মসম্মান কেন বিসর্জন দিবে তুমি? নিজের আত্মমর্যাদা নিজেকেই রক্ষা করতে হবে সুহা।যে তোমাকে এরকম একটা ঘৃণিত প্রস্তাব দিতে পারে সে কখনও তোমাকে ভালোই বাসেনি।বিশ্বাস করো তার কাছে তোমার কোনো মূল্যই নেই।নাহলে তোমাকে এভাবে অপমান করতে পারতো না।সে নিজ স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করতে চাইছে। সে তোমাকে ভালো দৃষ্টিতে না লোলুপ দৃষ্টিতে দেখে।যদি তোমাকে সত্যিকার অর্থে সে ভালোবাসতো বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাইত তখন ।এভাবে অসম্মান করতে পারতো না।যার কাছে তোমার সম্মানের কোনো দাম নেই।তোমার কোনো মূল্য নেই।তার জন্য কেন কষ্ট পাবে তুমি?সে তোমাকে কী ছাড়বে? যদি আত্মমর্যাদা বলে কিছু থেকে থাকে তোমার তাহলে তুমিই তাকে ছেড়ে দাও।এমন খারাপ মানুষের সাথে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখো না আর।”
সুহা কাঁন্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,কিন্তু আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি তো তাকে সত্যি সত্যিই ভালো বেসে ছিলাম।”
“এই ভালোবাসার মধ্যে আল্লাহর রহমত নেই সুহা।এটা হারাম।আর হারামে কখনই শান্তি নেই।ভালোবাসা হতে হয় আল্লাহর জন্য।সম্পর্ক গড়তে হয় আল্লাহর খুশির জন্য।তবেই তুমি সত্যিকার অর্থে সুখী মানুষ হতে পারবে।আর এই যে সাময়িক কষ্ট পাচ্ছো এটাও চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহ সয়ং পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন। [সুরা তালাক্ব]।
আল্লাহ আরও বলেন,” অবশ্যই যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদেরকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা-শক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। তারা হয় আত্ম সচেতন মানুষ।(সূরা আরাফ :আয়াত-২০১)

তুমি নিশ্চয়ই একজন আত্মসচেতন মানুষ।নিজের বিবেককে জাগ্রত করো।কষ্ট কমানোর উপায়।মনকে শান্ত করার উপায় আমি বলে দিবো।
সুহা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল,”কি সেটা?”
“নামাজ।নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সব কষ্ট খুলে বলবে।ওনার কাছে মনের শান্তি ভিক্ষা চাইবে ভিকারিনীর মতো। পড়তে পারো তো?”
“হ্যাঁ আম্মু ছোটবেলায় শিখিয়েছিল।কিন্তু অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছি।”
“আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।আগে তুমি অযু করে আসো।আর পোষাকটা পালটে নাও।এসব পরে নামাজ হবে না।সেলোয়ার-কামিজ পরে নাও।
” আমার তো সেলোয়ার-কামিজ নাই।”
“আমি আমার একটা পোষাক তোমাকে এনে দিচ্ছি দাঁড়াও।”
নূরা ঘর থেকে একটা পোষাক নিয়ে এলো ।সুহা সেটা পরে এলো।তারপর দুজনেই অযু করলো।নূরা সুহাকে নামাজ কীভাবে পড়তে হয় শিখিয়ে দিলো।দুজনেই একসাথে এশার নামাজটা শেষ করলো।তারপর সুহাকে বললো, এবার প্রানভরে দোয়া করে আল্লাহর কাছে চেয়ে নাও যা চাওয়ার।তিনি মহান।চাওয়ার মতো চাইতে পারলে সব দান করেন।”
নূরা সুহাকে একা ছেড়ে দিলো।বেরিয়ে এলো তার ঘর থেকে।কিছু মুহুর্ত একান্ত নিজের হয়।এখন সুহার আত্ম উপলব্ধির সময়।রবের কাছে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে সমর্পণ করার সময়।নির্জনতা খুব প্রয়োজন তার।

নূরা টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজালো।সাদমান শুটিং থেকে ফিরেছে।অন্যদিন অনেক রাত করে ফিরে কিন্তু আজকে বেশ তাড়াতাড়িই চলে এলো।হাত মুখ ধুয়ে সেও খেতে বসলো।খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত শুধু সুহা নেই।লিপি চিন্তিত হয়ে বললেন,”সুহার আবার শরির খারাপ করলো নাকি?”
নূরা দ্রুত বললো,”আমি ওর ঘরে খাবার নিয়ে যাই মা? ওর মনে হয় এখানে আসতে ইচ্ছে করছে না।”
“আচ্ছা যাও”
নূরা খাবার নিয়ে যাওয়ার আগেই সুহা এসে টেবিলে বসলো।নূরার দেয়া সেলোয়ার-কামিজটা তার পরনে।মাথায় ওড়না।একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে তাকে।
হক সাহেব মৃদু হেসে বললেন,”মাশা আল্লাহ আমার মেয়েটাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
সুহা কৃত্রিম হাসলো।
নূরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
খাবার শেষে আমেনা সব গোছাচ্ছিলেন।নূরা তাকে সাহায্য করছিল।সুহা পেছন থেকে ডাকলো, “ভাবী একটু এদিকে এসো।”
নূরা চমকে উঠে পেছনে তাকালো।সুহার মুখ থেকে এই প্রথমবার ভাবী ডাক শুনলো সে।
নূরা মুচকি হেসে বললো,”কী বলবে বলো।”
“তুমি যখন ফজরের নামাজ পড়তে উঠবে আমাকে একটু ডেকে দিও।এলার্ম অনেক সময় শুনি না আমি।”
নূরার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।একটা মানুষ হেদায়েতের পথে পা বাড়াচ্ছে।এই ব্যপারটা ভিষণ সুন্দর।উৎফুল্ল হয়ে বললো,”অবশ্যই ডেকে দিবো তোমাকে।”

নূরা সাদমানকে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।সাদমানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে সে।সাদমান তখন সিগারেট ফুঁকছিল।সেটা ফেলে কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,”এখন যে আমার কফি খেতে ইচ্ছে করছে কী করে বুঝলে তুমি?”
“মনে হলো।”
“আমার ব্যপারে কতকিছু বুঝে যাও তুমি।”
“কিন্তু আপনি বুঝেন না”
নূরার কথাটাতে অভিমানের সুর স্পষ্ট শুনালো।
সাদমান নূরার দিকে তার ব্ল্যাক কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো,”একটু খেয়ে দেখো তো কেমন খেতে এটা। ”
নূরা কিছুটা বিস্মিত হয়েই কফিতে চুমুক দিলো।একদম বিস্বাদ মনে হলো তার কাছে।মুখ বিকৃত করে বললো,”একদম স্বাদহীন।”
“আমি যদি বলি এটা তোমার রোজ খেতে হবে, খেতে পারবে?”
নূরা নিশ্চুপ রইল।
সাদমান হেসে বললো,”পারবে না।কারণ এটা খেয়ে তোমার অভ্যাস নেই।কোনো অভ্যাস যেমন সহজে ছাড়া যায় না।সেরকমই নতুন করেও কোনো অভ্যাস করা যায় না।সময় লাগে সবকিছুতে।সিগারেট খাওয়া তোমার পছন্দ না আমি জানি।কিন্তু এটাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।ছাড়তে হলে সময় দরকার।তবে সেইদিন নিশ্চয়ই খুব দূরে নয় যেদিন আমি এটা একেবারে ছেড়ে দিবো।”
নূরা আবেগমিশ্রিত কন্ঠে বললো,”আমার জন্য সিগারেট ছেড়ে দিতে পারেন আর যেই আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহর জন্য পাপ কাজ ছেড়ে দিতে পারেন না? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাস করতে পারেন না?
সাদমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”নূরা আমার ক্যারিয়ার আমার অনেক পরিশ্রমের ফল।এই বিষয়টা নিয়ে তুমি কথা না বললেই আমি খুশি হবো।আর রইলো নামাজের ব্যপারটা।মন থেকে যদি ইচ্ছেটাই না আসে তোমার কথা শুনে নামাজ পড়ার মানে আছে কোনো?”
নূরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় শুতে গেল।চোখ বন্ধ করে ভাবছে কবে এই মানুষটার হেদায়েত দেখতে পাবে।সেই দিনটা কী আদৌ দেখবে সে!

নূরা ফজরের আযান শুনে চোখ মেলে তাকালো।কেউ একজন তাকে ডাকছে।সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত।আতরের সুঘ্রাণ স্পষ্ট নাকে এসে লাগছে।নূরা কেঁপে উঠলো।চট করে উঠে বসলো।চোখ পরিষ্কার করে তাকাতেই দেখলো,সাদমান দাঁড়িয়ে আছে।সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা টুপিতে অপূর্ব দেখাচ্ছে তাকে।এর আগে এই মানুষটাকে এত সুন্দর লাগেনি নূরার চোখে।নূরানী চেহারা লাগছে একদম।সাদমান হাত বাড়িয়ে দিলো নূরার দিকে।নরম সুরে ডাকলো,”এসো নূরা,আমার প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী। দুজনে একসাথে নামাজ পড়বো।ফজরের সময় হয়ে গিয়েছে।”
নূরার কানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর ডাক যেন এটাই।মোহগ্রস্ত হয়ে গেল সে।হঠাৎ সাদমানের দাড়ির দিকে চোখ পড়লো নূরার।গালভর্তি দাড়ি।সাদমানের গালে তো খুঁচা খুঁচা দাড়ি।চাপ দাড়ি তো তার গালে নেই।নূরার চোখের সামনে সবকিছু যেন কেমন ঝাপসা হয়ে উঠলো।আস্তে আস্তে পাঞ্জাবি পরিহিত সাদমান ধোয়ার মতো মিলিয়ে গেল।
নূরার ঘুমটা মুহুর্তেই ভেঙ্গে গেল।এত সুন্দর স্বপ্ন সে এর আগে কখনও দেখেনি। কেন ভেঙ্গে গেল ঘুম।আরেকটু দীর্ঘ হলে কি ক্ষতি হতো।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকালো সাদমানের দিকে।বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে।নূরা উঠে ফজরের নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলো।

নূরা ঘরের কাজ করছিল।লিপি এসে বললেন আজকে নূরার চাচার ফ্ল্যাটে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।সেখানে সন্ধ্যায় যাবেন ওনারা।নূরাও যেন প্রস্তুত হয়ে নেয়।
আবার সেই বাসায় যেতে হবে, যেই বাসা থেকে তারা অপমানিত হয়ে বেরিয়ে এসেছিল।নূরার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।ওনাদের অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছে সে।কিন্তু পলি চাচিদের বাসার দাওয়াত মানে সেখানে এমন অনেক কিছুই হবে যেগুলো নূরার ভালো লাগবে না।সেগুলো ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল তার।কিন্তু মিসেস পলিকে বুঝতে না দিয়ে বললো,”ঠিক আছে।”
অজানা ভয় কাজ করছে তার মনে।ওখানে আবার জাহিদ আসবে না তো!..
চলবে…