এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৪

0
259

গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৪
লিখা:- AL Mohammad Sourav

এখন মাত্র সময়ের অপেক্ষা আগামীকাল দেখবে সবকিছু উলট পালট হয়ে যাবে। ভাবি তুমি সত্যি অনেক ভালো। আমাদের প্ল্যান একদম কাজে দিবে। তখনি আমি ওদের সামনে যেতে ছিলাম। আর তখনি পেছন থেকে আমার কাদের উপর কেউ একজন হাত রেখেছে। আমি পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে দেখি সৌরভ আমার কাদের উপর হাত রাখছে। তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? এসো আমার সাথে বলে আমার হাত ধরে নিয়ে গেছে রুমের ভেতরে। কি হলো ঐখানে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে কি শুনছিলে?
সুমি:- সোনালী আর বড় ভাবি মিলে কি সব প্ল্যান করছে।
সৌরভ:- কি প্ল্যান?
সুমি:- সবটা শুনতে পারিনি তবে মনে হচ্ছে আমাকে আপনার কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো প্ল্যান করছে। তখনি সৌরভ আমার হাতটা ধরে টান মেরে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
সৌরভ:- এই তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি আর কে আছে আমাদের আলাদা করবে? সুমি তুমি যতটা স্বহজ সরল এতটা স্বহজ সরল হলে চলবে না। কিছুটা চালাক হতে হবে।
সুমি:- আপনি আমাকে বোকা বলতেছেন তাইনা?
সৌরভ:- তা নয় তো কি? তুমি যদি চালাক হতে তাহলে তুমি অনেক কিছু বুঝতে। আচ্ছা এখন তোমাকে কিছু কথা বলি।
সুমি:- হ্যা বলেন।
সৌরভ:- সোনালীর ব্যাপারে নিশ্চিৎ না হয়ে কোনো প্রকার কথাবার্তা বাড়ীর কাওকে কিছু বলবে না। আগে আমি নিজে সোনালীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে যদি দেখি ওর কথা সত্যি তাহলে আমি নিজেই এসব ব্যপারে কথা বলবো। সোনালী তোমাকে যতই যা বলুক তুমি কিন্তু এই ব্যপারে কোনো কথা বলবে না।
সুমি:- ঠিক আছে।
সৌরভ:- আচ্ছা এখন ঘুমাও আগামীকাল তোমাদের বাড়ীতে যেতে হবে। তোমার বাবা ফোন করে বলছে তোমার ছোট বোনকে পাঠাবে কিন্তু আমি নিজেই বলেছি সুমিকে নিয়ে আসবো কাওকে পাঠাতে হবে না।
সুমি:- আগামীকালকে না সোনালীকে নিয় হাসপাতালে যাবেন?
সৌরভ:- সোনালীকে সকালে নিয়ে যাবো তারপর তোমাকে নিয়ে যাবো।
সুমি:- আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে সোনালী আমাদের সাথে মিথ্যা কথা বলতেছে।
সৌরভ:- নিজের সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা বলবে কেনো? ঠিক তখনি শ্বাশুড়ি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পর্দার আড়াল থেকে বলতেছে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ রুমে আছিস? শ্বাশুড়ির আওয়াজ শুনে আমরা দুজন দুজনকে ছেড়ে দিয়েছি। তখন সৌরভ বলে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ আগামীকাল আমি একটু ডাক্তারের কাছে যাবো। আমার সাথে কি তুই যেতে পারবি?
সৌরভ:- কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?
শ্বাশুড়ি:- এই তো বিকালের দিকে।
সৌরভ:- আব্বাকে নিয়ে যান। আমি আগামীকাল সুমিকে নিয়ে ওদের বাড়ীতে যাবো।
শ্বাশুড়ি:- আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে তোর বৌকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়াটা তোর কাছে জুরুরী হয়ছে এখন? সব দোষ এই সুমির নিশ্চই তোকে বলেছে আগে বাপের বাড়ীতে যাবে।
সৌরভ:- মা আপনি আব্বাকে সাথে নিয়ে যান। যদি ওনি যেতে না চাই তাহলে আমি নিয়ে যাবো। তাও শুধু শুধু সুমিকে দোষ দিয়েন না। সুমো সবসময় আপনাকে খুশি রাখতে চাই তাও আপনি ওর দোষ খুঁজে খুঁজে বের করেন। মা সুমি গরীবের মেয়ে বলে অবহেলা না করে একবার আপনি নিজেকে সুমির জায়গাতে অবস্থান রেখে চিন্তা করেন।
শ্বাশুড়ি:- হয়ছে বৌয়ের হয়ে উকিলাতি করতে হবে না। আমি একা একা যেতে পারবো বলে আমার শ্বাশুড়ি বেড়িয়ে গেছে। সৌরভ মন খারাপ করে বসে পড়ছে। আজকে আমিও তেমন কিছু বলিনি। চুপচাপ শুয়ে পড়েছি কিছুক্ষণ পর সৌরভ শুয়ে পড়ছে। সকালে প্রতিদিন যেভাবে শুরু হয় আজকেও ঠিক একিরকম ভাবে শুরু হয়ছে। সবাই নাস্তা করে যার যার মত করে চলে গেছে। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সেজে গুজে রেডি হয়েছি তখনি শুনতে পারছি নিচে অনেক জোঁড়ে কথার শব্দ হচ্ছে। আমি তাঁড়াতাড়ি করে নিচে গিয়ে দেখি আমার ফুপি শ্বাশুড়ি আর ইমরান এসেছে তখন সৌরভ ওদের সাথে রাগারাগি করছে। তখন আমার শ্বশুর এসে বলে।
শ্বশুর:- সৌরভ তুই ভুলে যাসনা মরিয়ম কিন্তু আমার বোন লাগে। আর ইমরান আমার ভাগনা। তোর শ্বশুর বাড়ীর ব্যপারটার জন্য তুই ওদের সাথে এমন আচরোন করতে পারিস না। বিয়ের সময় এমন অনেক কথা হয়ে থাকে তারমানে এই না যে সবসময় এক কথা নিয়ে ঝগড়া করতে হবে।
সৌরভ:- আব্বা আপনার কি মনে হয় আমি বিয়ের ঘটনা নিয়ে ঝগড়া করতেছি! তখনি আমাে শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- তা নয় তো কি? আমরা সবাই জানি তুই বিয়ের ঘটনা নিয়ে মরিয়ম আপার সাথে এমনটা করছিস? তখন এক এক করে বাড়ীর সবাই এসে হাজির হয়ে গেছে। তখন সৌরভ গিয়ে ওর ফুপিকে আর ইমরানকে টেনে বাড়ীর বাহিরে পাঠিয়ে দিতে ছিলো তখনি সফিক ভাই গিয়ে সৌরভকে থামিয়ে বলে।
সফিক:- সৌরভ আমি ফুপিকে আর ইমরানকে ডেকে আনছি। তোর যদি ওদের সহ্য না হয় তাহলে তুই রুমে গিয়ে বসে থাক।
সৌরভ:- ভাইয়া আগে আমার কথাটা তো শুনো।
সফিক:- হ্যা বল কি কথা?
সৌরভ:- যাক সবাই যেহেতু উপস্থিত আছো এখানে তাহলে বলেই দেয়। এই বলে সৌরভ গিয়ে সোনালীকে টেনে কাছে এনে বলে সোনালী আমি তোর সাথে আছি। তুই সবটা খুলে বল? তখনি সোনালী কিছুটা আশ্চর্জ হবার মত করে বলে।
সোনালী:- কি খুলে বলবো ভাইয়া? সোনালীর এমন কথা শুনে সৌরভ তো অবাক হয়ছে সাথে আমিও হয়েছি। তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- তুই তোর ভাবিকে আর আমাকে যা বলেছিস তা বল! তখনি সোনালী বলে।
সোনালী:- আমি ভাবির কাছে যা বলেছি তার জন্য তুমি এখনও রেগে আছো আমার উপর।
সৌরভ:- সোনালী আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে।
সফিক:- সৌরভ তুই সোনালীর সাথে এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো?
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ কি করেছে আমার মেয়েটা। এই সোনালী তুই সৌরভকে আর ওর বউকে কি বলেছিস? তখনি সোনালী কান্না করতে করতে বলে।
সোনালী:- আমি তো ভাবিকে বলেছিলাম সৌরভ ভাইয়া বিয়ের আগে অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। তারপর মেয়েটাকে অন্য একটা ছেলের সাথে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। জানো আম্মা ভাবি এই কথাটাও ভাইয়ার কাছে আমার নামে বিচার দিছে। তখন আমি ভাইয়ার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। তাও আমাকে ক্ষমা করছে না তখনি সৌরভ সোনালীকে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর সোনালী আমার উপরে এসে পড়ে। আমি সোনালীকে ধরে নিয়েছি তখনি সোনালী কানের কাছে আস্তে করে বলে। আজকে তোমাকে এই বাড়ী থেকে চলে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। সোনালীকে থাপ্পড় দেওয়ার সাথে সাথে আমার শ্বশুর অনেকটা রেগে গিয়ে বলে।
শ্বশুর:- সৌরভ তুই সোনালীর গায়ে হাত তোলেছিস কেনো? বিয়ের আগে তুই প্রেম করেছিস এই কথাটা আমরা সবাই জানি। আর তুই সেই মেয়েটার জন্য আমাদের সবার সাথে কেমন আচোরন করেছিস তা কিন্তু আমরা ভুলে যায়নি।
সৌরভ:- আব্বা আপনারা সবাই আমাকে আর সুমিকে নিয়ে কেনো এমন করছেন? সোনালী নিজে বলেছে সে প্রেগন্যান্ট। আর সেইটার জন্য ইমরান দায়। তখন সবাই অবাক হয়ে গেছে। আর আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ নিজের বোনের নামে এসব কি বলতেছিস? তোর মাথাটা কি একদম গেছে?
সৌরভ:- আমার মাথা যাবে কেনো? সোনালীকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে তো সবটা জানতে পারবেন?
শ্বাশুড়ি:- সোনালী তোর ভাই যা বলছে তা কি সত্যি?
সোনালী:- ছিঃ ভাইয়া তুই আমার নামে এমন মিথ্যা কথা বলতে পারলি? আমি কখন বলেছি আমি প্রেগন্যান্ট? ইমরান ভাইয়ার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক নেই। আম্মা আমার মনে হয়। এসব কিছু ভাবির ভাইয়াকে ইচ্ছে করে বানিয়ে বানিয়ে আমার নামে মিথ্যা কথা বলছে।
সৌরভ:- সোনালী তুই এমনটা কেনো করলি? তখনি আমার শ্বশুর জোঁড়ে দমক দিয়ে বলে।
শ্বশুর:- সৌরভ একদম চুপ আর একটাও কথা বলবি না। সোনালীর নামে আর একটাও মিথ্যা কথা শুনতে চায়না।
সফিক:- সৌরভ নিজের বোনের নামে এমন কথা বলতে তোর লজ্জা করছে না। এই ইমরান সৌরভ যা বলছে তা কি সত্যি?
ইমরান:- ভাইয়া আপনাদের কি মাথায় দোষ পড়ছে? সোনালী আমার ছোট বোন ওর সাথে কেনো এমন কিছু করতে যাবো। সৌরভ ভাইয়া কেনো এমনটা বলছে তার কারণ হলো আম্মা ওনার শ্বশুর বাড়ীর নামে একটু খারাপ বলেছে তাই এমনটা বলেছে। সৌরভ ভাইয়া প্লিজ অন্তত নিজের বোনের নামে এমন কথা বলো না।
সৌরভ:- একদম চুপ কোনো কথা বলবি না। আমি বুঝতে পারছি কোথাও একটা ভুল তো হয়ছে। আচ্ছা আমার একটা লাস্ট কথা। সোনালী তুই কি সত্যি সুমির সাথে বলিসনি তুই প্রেগন্যান্ট? তখনি শ্বশুর আরও রেগে গিয়ে সৌরভকে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তখন বাড়ীর সবাই একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। আর তখনি শ্বশুর বলে।
শ্বশুর:- সৌরভ আজ তোকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলি। বিয়ের পর থেকেই তুই তোর বৌয়ের কথা মত চলিস বলেই আজকে আমাদের সংসারে এই অশান্তি হচ্ছে। তবে আমি আর পারছি না। এখন তোকে একটা কথা বলি। আর সেই কথাটা হলো তোকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সৌরভ:- কি সিদ্ধান্ত?
শ্বশুর:- হয় আমাদেরকে আর না হয় সুমিকে নিয়ে থাকতে হবে। এখন তুই বল কি করবি। তখন সৌরভ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আমার বুকের হার্টবির্ট বাড়তেছে। তখন সৌরভ যা বলেছে তা শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি সৌরভের দিকে। তখনি সৌরভ আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে আর আমার সমস্থ শরীর দিয়ে চিকন ঘাম দিছে। সৌরভ কেনো এমনটা বলেছে?

চলবে,,,,