এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৫

0
226

গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৫
লিখা:- AL Mohammad Sourav

যখনি আমার শ্বশুর বলেছে সৌরভ হয় তুই তোর বউকে নিয়ে থাকবি আর নয় আমাদের সাথে থাকবি। এত যন্ত্রনা আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। আমি এর থেকে মুক্তি চাই। ঠিক তখনি সৌরভ সবার সামনে বলে উঠে। বাবা আমি সুমিকে কথা দিয়েছি ওর সাথে সারা জীবন থাকবো। এখন যদি সুমির জন্য আপনাদের সবার সমস্যা হয় তাহলে আমি সুমিকে নিয়ে আলাদা থাকবো। যদি কখনও আপনাদের আমার প্রয়োজন হয় তাহলে বলিয়েন আমি আমার সাধ্য মত চেষ্টা করবো। এই কথা সৌরভ বলার সাথে সাথে সবাই আমার দিকে তাকিয়েছে। আর সৌরভ আমার কাছে এসে বলে। সুমি রুমে চলো ব্যাগ গুচিয়ে নাও আমরা আজকেই চলে যাবো। এই বলে সৌরভ আমার হাত ধরে রুমের দিকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে আর তখনি সৌরভের মা ডেকে বলে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্তই ভালো হয় না। তোর বাবা একটু রাগের মাথায় কি বলেছে আর তুই কিনা বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছিস? মাথা ঠান্ডা করে একটু বসে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে।
সৌরভ:- মা আজ যা হয়ছে এরপরেও আমি যদি এই বাড়ীতে থাকি তাহলে আমার নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো। মা মাত্র অল্প কিছুদিন আমি বিয়ে করেছি। এতে করে আপনারা সবাই সুমির সাথে যেভাবে আচোরন করতেছেন এমনিতেই সুমি বেশীদিন এই বাড়ীতে থাকতে পারবে না। তাঁর চাইতে ভালো হবে আজকেই আমি সুমিকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো বলেই সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে এসে বলে। সুমি তোমার যা আছে সবকিছু ব্যাগে ঢোকিয়ে নাও। আমি কিছু বলতে সাহোস পাচ্ছিনা তাও অনেকটা ভয় নিয়ে বলি।
সুমি:- আচ্ছা আমরা এখন যাবো কোথায়?
সৌরভ:- তোমাদের বাড়ীতে। সাপ্তাহ খানেকের ভিতরে একটা রুম ভাড়ে করে নিবো। এক সাপ্তাহ তোমাদের বাড়ীতে থাকা যাবে?
সুমি:- হ্যা তা থাকতে পারবেন। তবে বাবা মা বাকী সবাইকে ছেড়ে গেলে ওরা সবাই আমাকে দোষবে। সবাই বলবে আমি আপনাকে আলাদা হতে বাধ্য করেছি।
সৌরভ:- এখন তুমি কি বলতে চাচ্ছো? ঠিক তখনি জোঁড়ে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেলাম। সৌরভ রুমে বসে আছে আমি বলি।
সুমি:- এমন জোঁড়ে চিৎকার দিলো কে? মনে হচ্ছে মা কান্না করছে। চলেন নিচে গিয়ে দেখী কি হয়ছে?
সৌরভ:- শুনো তোমাকে যা বলেছি তুমি তাই করো। তখন আরও কান্নার শব্দ পেলাম। আমি রুম থেকে বেড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি শ্বশুর সোফায় বসে আছে আর শ্বাশুড়ি বুকে মালিশ করছে। বাকী সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে। তখনি আমি দৌড়ে রুমে এসে সৌরভকে বলি।
সুমি:- মনে হয় বাবার কোনো সমস্যা হয়ছে। আপনি তাঁড়াতাড়ি নিচে চলেন। তখনি সৌরভ দৌড় দিছে সাথে আমিও। দুজনে নিচে এসে দেখি শ্বশুর কেমন ছটফট করছে আর সমস্থ শরীর ঘামতেছে তখনি সৌরভ কাছে গিয়ে বলে।
সৌরভ:- মা কি হয়ছে বাবার? বাবা এই বাবা কথা বলছেন না কেনো?
সুমি:- ওনাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয় চলেন। তখনি চেয়ে দেখি আমার ছোট দেবর একটা ডাক্তার নিয়ে এসেছে। ডাক্তার অবশ্য আমাদের বাড়ীর পাশে একটা ফার্মেসী ছিলো সেখান থেকে সবুজ গিয়ে নিয়ে এসেছে। ওনি কিছুক্ষণ শ্বশুরকে দেখে বলে ভয়ের তেমন কোনো কারণ নেই। হঠাৎ করে বড় কোনো শক খেয়েছে তাই পেশারটা একটু বেড়ে গেছে। যার ফলে শরীর দিয়ে ঘাম ছেড়ে দিছে। আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিলাম। এখুনি এনে খাওয়াই দেন। আর ঘরে যদি টক জাতীয় কোনো খাবার থাকে তাহলে একটু খায়িয়ে দেন। তখন সুমি গিয়ে ফ্রিজ থেকে লেবু বের করে সরবত করে এনেছে। আর ভাবি রুম থেকে তেঁতুলের আচার নিয়ে এসেছে। দুজনে এক সাথে এগিয়ে দিয়েছে কিন্তু মা সুমির হাতের সরবতটা বাবাকে খেতে দিছে। আর সবুজ গিয়ে ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে এসেছে। মা বাবাকে ঔষধ খায়িয়ে দিয়েছে। সবাই চুপচাপ কারও মুখে কোনো প্রকার কথা নেই। তখনি সৌরভের ফুপি বলে।
ফুপি শ্বাশুড়ি:- এসব কিছু আমার জন্য হয়ছে। আমি আর কখনো এই বাড়ীতে আসবো না। ইমরান চল মনে করবি তোর মা এতিম। তোদের মামার বাড়ী বলতে কোনো কিছু নেই। নিজে নিজে কথা গুলি বলে চলে আসতেছে তখনি সৌরভের বড় ভাই বলে।
সফিক:- ফুপি এখানে তোমার দোষ হবে কেনো? দোষ তো আমার আমি তোমাকে দাওয়াত করে এনে যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। তাঁর জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ফুপি:- না সফিক তোর কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার। আচ্ছা জশিম তোর এখন কেমন লাগছে?
শ্বশুর:- হ্যা আপা এখন অনেকটা ভালো লাগছে।
শ্বাশুড়ি:- চলেন রুমে চলেন। বলে শ্বশুরকে রুমের দিকে নিয়ে গেছে। শ্বশুরের সাথে সাথে সবাই ওনার রুমের দিকে গেছে এমন কি আমিও গেছি। শুধু মাত্র সৌরভ আসেনি। শ্বশুর খাটের উপরে শুয়ে বলে।
শ্বশুর:- সফিকের মা সৌরভকে বলে দিও বাড়ী থেকে এখন যেনো কোথাও না যাই।
শ্বাশুড়ি:- এই নিয়ে আপনি কোনো চিন্তা করোনা। সৌরভ কোথাও যাবে না আপনি একটু ঘুমিয়ে থাকুন।
সফিক:- বাবা আমি সৌরভের সাথে কথা বলবো এখন আপনি রেস্ট নেন। আচ্ছা এখন আমরা সবাই যাই। সবাই সবার মত করে বেড়িয়ে এসেছে। আমি রুমে এসে দেখি সৌরভের চোখ গুলি লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কান্না করছে আমাকে দেখে ওয়াশ রুমে চলে গেছে। আমি ব্যাগটা নিচে রেখেছি তখনি আমার শ্বাশুড়ি এসেছে।
শ্বাশুড়ি:- বৌমা সৌরভ কোথায়?
সুমি:- ওয়াশ রুমে গেছে। তখনি সৌরভ বেড়িয়ে এসেছে। আর আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ যা হয়ছে সব ভুলে গেলে ভালো হবে। আমিও জানি আজ বাদে কাল আলাদা হতে হবে। তবে এখন তোর বাবা রাগের মাথায় এসব বলে ফেলেছে। আর তুইও রেগে ছিলি। এখন আমি বলি আপদত কোথাও যাবার দরকার নেই যা হয়ছে সবকিছু ভুলে গেলে ভালো হবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে আমি ভুলে যাবো তবে বাবা সুস্থ হলে আমি সুমিকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবো। মা আমি জানি সুমি গরীব ঘরের বলে ওকে কেউ মেনে নিতে পারছে না।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ আমি এখন এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলছি না। এখন তোর বাবা যেহেতু বলেছে কোথাও না যায়তি সেহেতু না যাওয়াটা ভালো। তুই তোর বউ নিয়ে আলাদা থাকবি এটা সুন্দর কথা আমি নিজেই তোদের সবাইকে আলাদা করে দিবো। এখন কাওকে বাড়ী ছেড়ে যাবার দরকার নেই। এই কথা বলে আমার শ্বাশুড়ী চলে গেছে।
সৌরভ:- সুমি সবকিছু জায়গা মত গুচিয়ে রেখো। আর তোমার বাবাকে ফোন করে বলে দাও আজকে আমরা আসতে পারবো না।
সুমি:- ঠিক আছে। ওনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। আমি মনে মনে কিছুটা খুশি হলাম। আজ সারাদিন কারও সাথে কেউ তেমন কোনো রকম কথা বলেনি। এভাবে সাপ্তাহ খানেক কেটে গেছে আমি রুমে বসে আছি তখনি সৌরভ এসে বলে।
সৌরভ:- সুমি তোমার কি পড়ার আগ্রহো আছে? মানে তুমি কি ইন্টার পরীক্ষাটা দিতে চাও? ওনার মুখে পড়ার কথা শুনে আমি অনেকটা খুশি হয়ে বলি।
সুমি:- হঠাৎ করে আমাকে পড়ার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
সৌরভ:- যা বলেছি তাঁর উত্তর দাও।
সুমি:- হ্যা অনেক আগ্রহো আছে। আমি তো মুখ ফুঁটে বলতে পারছি না যে আমি পড়তে চাই আর আজ আপনি নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছেন।
সৌরভ:- হ্যা করছি। যদি পড়তে চাও তাহলে আবার কলেজে যাবে।
সুমি:- বাড়ীর সবাই মানে মা বাবা ওনারা যদি রাগ করে?
সৌরভ:- তোমাকে আমি যা বলি তা শুনো। বাবা মা কোনো কিছু বললে বলবে আমি বলেছি। তোমার কি কি লাগবে আমাকে বলো আমি সবকিছু ম্যানেজ করে দিবো।
সুমি:- এখন তেমন কিছু লাগবে না। আমি তো ইন্টার দ্বীতীয় বর্ষে পড়তে ছিলাম আমার সব কিছু আছে। তবে অনেকদিন ধরে পড়ি না তাঁর জন্য একটু বেশী সময় দিতে হবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে সেইটা না হয় হবে আর তোমার যা যা লাগবে সব হবে। তুমি আগামীকাল এক ফাকে গিয়ে তোমার বাড়ী থেকে সবকিছু নিয়ে এসো।
সুমি:- ঠিক আছে। তবে চলেন নিচে যাই খাবার খেতে হবে। বলে আমি যখনি দরজার দিকে তাকালাম তখনি চেয়ে দেখি পর্দাটা নড়ে উঠেছে। আমি সাথে সাথে গেলাম। দেখি কেউ নেই। মনে হয় বাতাশে পর্দা নড়ে চড়ে উঠেছে। আমি আর সৌরভ আর আমি দুজনে নিচে এসেছি। কিছুক্ষণ পড় আমার শ্বাশুড়ি সফিক ভাই আর ওনার বউ তিনজন মিলে এক সাথে খাবার টেবিলে এসে বসেছে। যখনি আমি গিয়ে খাবার গুলি টেবিলের উপরে এনে রেখেছি। তখনি সফিক ভাই বলে।
সফিক:- বাবা মা তোমাদের বউ চাচ্ছে যদি তোমরা অনুমতি দাও আবার পড়া লেখা শুরু করবে।
শ্বাশুড়ি:- এখন পড়া লেখা শুরু করবে মানে? বিয়ের আগেই তো বলেছি বিয়ে পড় কোনো রকম লেখা পড়া করা চলবে না। আর তাছাড়া সফিক তুই ভুলে যাস না। তোর ব্যবসটা কিন্তু আমার টাকা দিয়ে শুরু করেছিস। এখন ব্যবসা ভালো বলে আবার আলাদা হয়ে যাবি এইটা কিন্তু একদম বেইমানি করবি। তখনি সৌরভের ভাবি বলে।
ভাবি:- মা আপনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে। আপনি যদি পড়া লেখা করতে অনুমতি দেন তাহলে করবো আর যদি নিষেধ করেন তাহলে করবো না।
শ্বাশুড়ি:- যতটুকু পড়া লেখা করেছো তাতেই যথেষ্ট। আমি যে লেখা পড়া করিনি এতে কি আমার জীবন যায়নি? আমি কি আমার ছেলে মেয়ে শিক্ষিত বানায়নি? বড় বউ আমার কথায় রাগ করতে পারও কিন্তু আমি তোমাকে পড়ার অনুমতি দিতে পারবো না। এখন যদি তুমি মনে করো তাহলে পড়তে পারো।
ভাবি:- নাহ মা আমার বাবা মা এমন শিক্ষা আমাকে দেয়নি। আমি আপনার কথা অমান্য করে পড়তে যাবো।
শ্বাশুড়ি:- যাক শুনে খুশি হলাম। দুআ করি তুমি জীবনে অনেক সুখী হও। যদিও সৌরভ সব গুলা কথা শুনেছে তাও চুপচাপ ছিলো। আমিও শুনেছি তবে মনে মনে ভাবছি আমাকে সৌরভ আবার কলেজে যেতে বলছে তার জন্য ওনারা ইচ্ছে করে এসব বলছে না তো? তাও সৌরভের দিকে তাকিয়ে আছি সৌরভ খানা শেষ করে উপরে গেছে আর আমি টেবিলেটা পরিষ্কার করে রুমের দিকে যাবো তখনি হঠাৎ করে একটা কথা পেলাম। কিছুটা দাঁড়িয়ে গেছি তখনি বড় ভাবি বলে।
ভাবি:- মা আমার অভিনয়টা কেমন হয়ছে?
শ্বাশুড়ি:- ঠিকঠাক করেছো। শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি মুচকি হেসে চলে আসতেছি আর মনে মনে ভাবতেছি মনে হয় না আমার পড়া লেখাটা হবে।

চলবে,,,,