এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৬

0
249

গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৬
লিখা:- AL Mohammad Sourav

মনে হয় না আমার আর কলেজে যাওয়াটা হবে? শ্বাশুড়ি আর বড় ভাবি মিলে আমাকে আমার স্বামীর থেকে আলাদা করার যে প্ল্যানটা করছে আমি সেই প্ল্যান কম্পিলিট করতে দিবো না। এখন থেকে যে আমাকে এতটা ভালোবাসে তাঁর সব কথা রাখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এই বলে রুমে গেছি তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি কখন যাবে তোমাদের বাড়ীতে?
সুমি:- আমি একা যাবো?
সৌরভ:- একা যাবে কেনো? যখন যাবে বলো আমাকে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।
সুমি:- আজকে বিকালে যদি আপনার সময় হয় তাহলে যাবো কেমন?
সৌরভ:- ঠিক আছে নিয়ে যাবো। আচ্ছা এখন আমি বেরুবো বলে সৌরভ বেড়িয়ে গেছে। আমি রুমে বসে সবকিছু গুচিয়ে নিলাম। আজ অনেকদিন পড়ে আমাদের বাড়ীতে যাবো। অনেক ভালো লাগছে আমি বাবাকে ফোন করে বলে দিয়েছি বাবাকে আজ বিকালে যাবো। আমি কিছুটা রুমে বসে নিচে গিয়ে রান্নাঘরের রুমে গেছি তখনি বড় ভাবি বলতেছে।
বড় ভাবি:- সুমি দেখছো আমাদের শ্বাশুড়ি কেমন? আমি পড়তে চায়ছি আর ওনি বারণ করে দিছে। সত্যি বলতে ওনি একদম ভালো মানুষ না।
সুমি:- ভাবি মা যেমনি হোক মা! আসলে ওনি ওনার জায়গা থেকে ঠিক আছে তবে বর্তমানে এমনটা আচোরন করা ঠিক না।
বড় ভাবি:- হ্যা একদম ঠিক বলেছো বেশী বেশী করে। আমিও বলে দিবো তোমার ভাইকে যদি আমাকে পড়তে না দেয় তাহলে আমি বাপের বাড়ীতে চলে যাবো।
সুমি:- আপনি যা ভালো মনে করেন। আচ্ছা ভাবি রান্না তো প্রায় শেষ পর্যায়ে আমি রুমে যাই। আপনি তরকারিটা একটু পড়ে নামিয়ে নিয়েন কেমন? ভাবি ঠিক আছে বলার পর আমি রুমে এসে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে গেছি। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়েছি তখনি আমার শ্বাশুড়ির চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলাম। তাও আমি নিচে যায়নি। বরং আমি বাড়ীতে যাবার জন্য একদম রেডি হয়ে সৌরভকে ফোন করেছি। তিনবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করেছে। তখন আমি বলি। আপনি কখন আসবেন?
সৌরভ:- সুমি তুমি রেডি হয়ে নাও আমি বিশ মিনিটের মধ্যে চলে আসবো।
সুমি:- আমি রেডি হয়ে আছি। তখন সৌরভ ফোন কেটে দিছে। এখনো শ্বাশুড়ি চেঁচামেচি করতেছে। যাই একটু নিচে গিয়ে দেখি কি নিয়ে এত চেঁচামেচি করছে। সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নিচে নামার পড়েই শুনি বড় ভাবি বলতেছে।
বড় ভাবি:- মা আমার কি দোষ! আমি তো সুমিকে রান্না ঘরের ভেতরে রেখে গেছি। তখনি আমি নিচে নামছি তখনি শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সুমি তুমি চুলার উপর তরকারি রেখে চলে গেছো কেনো?
সুমি:- তরকারি রেখে গেছি তো কি হয়ছে? তখনি শ্বাশুড়ি আমাকে তরকারির পাতিলটা দেখিয়ে বলে।
শ্বাশুড়ি:- দেখো সবটা তরকারি পুরে গেছে। সত্যিই সব তরকারি একদম পুরে গেছে আর গন্ধ ছুটে গেছে। তোমাদের এখন কিছু বলিনা বলে তাই তোমরা এমন করেছো?
সুমি:- মা আমি তো বড় ভাবিকে বলে গেছি যে ভাবি তরকারিটা নিচে নামিয়ে নিতে। ভাবি আপনি তরকারিটা নিচে নামান নাই?
ভাবি:- সুমি তুমি এমন একটা মিথ্যা কথা বলতে পারলে? আমি তো তোমার আগেই রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছি।
সুমি:- আমি মিথ্যা কথা বলবো কেনো? আপনাকে যখন বলেছি ভাবি তরকারিটা চুলা থেকে নামিয়ে রাখিয়েন তখন আপনি বলেছেন ঠিক আছে। তার জন্য তো আমি রুমে চলে গেছি।
ভাবি:- একদম মিথ্যা বলবে না বলে দিলাম। আমি তো মোবাইলে কথা বলতে বলতে রুমে চলে গেছি। নিজে ভুল করেছো আর এখন আমার উপর দোষ দিতেছো? আমি ভালো করেই জানি তোমাদের মত গরীব পরিবারর মেয়েরা জায়গার উপর হাজারটা কথা মিথ্যা বলতে পারে।
সুমি:- ভাবি আমি গরীব হয় আর ফকিন্নীর মেয়ে হয়। আমি কিন্তু এই বাড়ীতে নিজে থেকে আসিনি। আমাকে এই বাড়ীর সবাই গিয়ে আনছে। আপনার মত ভেসে চলে আসিনি।
ভাবি:- সুমি তোমার এত বড় সাহোস আমাকে এই কথা বলেছো? মা আমি আজকেই চলে যাবো এই বাড়ী থেকে।
শ্বাশুড়ি:- দেখো বড় বউ এখন ওর সাথে তর্ক করে কোনো লাভ নেই সৌরভ আসুক তখন আমি সবকিছু বলবো। নিশ্চই সৌরভ আমার কথা গুলি শুনে সঠিক বিচার করবে।
ভাবি:- ঠিক আছে মা আপনি বলেছেন বলে আমি এখন বাপের বাড়ীতে যাচ্ছি না। যদি এর সঠিক বিচার করা না হয় তাহলে আমি এই বাড়ীতে আর কোনো দিন আসবো না। তখনি আমার শ্বশুর এসেছে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে।
শ্বশুর:- সফিকের মা খাবার দাও আমার খিদা লাগছে।
শ্বাশুড়ি:- তুমি হাতমুখ ধুয়ে এসো আমি খাবার রেডি করে রাখছি টেবিলের উপর। তখন শ্বশুর চলে গেছে। আর শ্বাশুড়ি গিয়ে ডিম বাজি করে নিয়েছে। আমি আর কোনো কথা বলিনি তখনি সৌরভ এসেছে।
সৌরভ:- সুমি তুমি কি রেডি হয়ে আছো?
সুমি:- হ্যা। আপনি ফ্রেশ হবেন না?
সৌরভ:- নাহ এখন আর ফ্রেশ হবো না। একেবারে রাতে এসে ফ্রেশ হবো। তুমি এসো আমরা এখুনি বেরুবো।
সুমি:- এক মিনিট দাঁড়ান আমি রুম থেকে মোবাইলটা আর পার্স ব্যাগ নিয়ে আসতেছি।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাঁড়াতাড়ি এসো। আমি উপরে গিয়ে মোবাইল আর পার্স ব্যাগ নিয়ে নিচে এসেছি তখনি দেখি শ্বাশুড়ি সৌরভকে সবকিছু বলতেছে। আজ যা যা হয়ছে তা তা সব বলছে। আমি নিচে নামতেই সৌরভ বলে। সুমি তুমি বড় ভাবিকে কি বলেছো? তখনি আমি অনেকটা ভয় নিয়ে মাথাটা নিচের দিকে রেখে বলি।
সুমি:- আগে বড় ভাবি আমাকে বলেছে। আমার মত গরীবের মেয়েরা নাকী বানিয়ে বানিয়ে হাজার মিথ্যা কথা বলতে পারে। তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- আম্মা আপনি শুধু সুমি বড় ভাবিকে কি বলেছে সেইটা বলেছেন। আর ভাবি সুমিকে যা বলেছে তাঁর কিছুই তো বলেন নাই।
শ্বাশুড়ি:- দোষ তোর বৌয়ের কারণ তোর বৌ চুলার উপরে তরকারি রেখে রুমে চলে গেছে আর আজ সেই তরকারি পুরে একদম গন্ধ হয়ে গেছে। খাবারের একদম উপযুক্ত নেই।
সৌরভ:- মা এইটা কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে করবে না। হয়ত ভুলে এমনটা হয়ে গেছে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ তোর সাথে আমার এমনটা কথা ছিলো না। তখনি আমার শ্বশুর এসেছে আর সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি চলো। আমি এগিয়ে যাচ্ছি তখনি শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সুমিকে নিয়ে এখন কোথায় যাবি?
সৌরভ:- সুমিদের বাড়ীতে যাবো।
শ্বাশুড়ি:- এখন সুমিদের বাড়ীতে যাবি? কই আমাকে তো কিছু বলিস নাই।
সৌরভ:- আগে বলিনি তো কি হয়ছে এখন বলেছি। সুমিকে আমি আবার কলেজে যেতে বলেছি। ওকে এখন নিয়ে যাবো ওর বাড়ী থেকে ওর সবকিছু আনার জন্য। তখনি সফিক ভাই আর সবুজ দুজনে এক সাথে এসেছে। আর শ্বাশুড়ি রেগে গিয়ে বলে।
শ্বাশুড়ি:- বৌমা কলেজে যাবে মানে? তাহলে সংসারের কাজ করবে কে?
সৌরভ:- সংসারের কাজ করেই সুমি পড়ালেখা করবে।
শ্বাশুড়ি:- সংসারের কাজ করে লেখাপড়া করবে? কলেজে গেলে সংসারের করবে কখন? বাড়ীতে থেকে ঠিক মত সংসারের কাজ করতে পারে না আর কলেজে গেলে তো সংসারের কোনো কাজ করতে পারবে না।
সৌরভ:- সুমি তুমি কি বাড়ীর প্রয়োজনীয় কাজ করে লেখাপড়া করতে পারবে? তখন আমি আমার শ্বাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে আছি আর সৌরভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন সৌরভ আবার জিজ্ঞেস করে সুমি আমি কি বলেছি তোমাকে! তুমি কি বাড়ীর কাজ করে লেখাপড়া করতে পারবে? তখনি আমি সৌরভের দিকে তাকিয়ে বলি।
সুমি:- হ্যা আমি পারবো তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- মা সুমি বাড়ীর প্রয়োজনীয় কাজ করেই পড়ালেখা করবে। তখনি সফিক ভাই বলে।
সফিক:- মা যদি সৌরভের বৌ পড়ালেখা করে তাহলে আমার বৌ কেনো পড়তে পারবে না? তখন আমার শ্বশুর বলে।
শ্বশুর:- সফিক তোর বৌ যদি বাড়ীর কাজ করে পড়তে চাই তাহলে পড়বে। আর তাছাড়া সুমির তো বলেছে বাড়ীর সবকাজ করেই পড়বে। তখনি আমার শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- ঠিক আছে আমি তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আগে বাড়ীর কাজ পরে সুমি পড়তে পারবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাই হবে। সুমি এসো এখন আমরা যাই বলে সৌরভ বেড়িয়েছে তখন আমার শ্বাশুড়ি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে আগামীকাল থেকে তো তুমি কাজ শেষ করতে পারবে না পড়বে কখন?

চলবে,,,,