এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৭

0
223

গল্প:- #এমনটা কথা ছিলো না পর্ব-০৭
লিখা:- AL Mohammad Sourav

তুমি আগামীকাল থেকে কাজ করে শেষ করতে পারবেনা। পড়ার সময় পাবে কখন? আমিও দেখবো কি করে তুমি পড়া লেখা করতে পারো। আমি শ্বাশুড়ির কথা গুলি শুনে চুপচাপ বেড়িয়ে এসেছি সৌরভের সাথে। আমর মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে আছে। সৌরভ গিয়ে বাইকটা নিয়ে এসেছে। আমি পেছনে বসেছি কোনো কথা বলছিনা তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- সুমি কি হয়ছে মন খারাপ?
সুমি:- নাহ ভালোই।
সৌরভ:- তাহলে কখন ধরে দেখছি মনটা খারাপ করে রাখছো! আবার অনেক্ষণ হয়ে যাচ্ছে একটাও কথা বলছো না। আসার সময় মা কিছু বলেছে?
সুমি:- হ্যা বলেছে।
সৌরভ:- কি বলেছে?
সুমি:- বলেছে বাড়ীর কাজ শেষ করতে পারবোনা আর পড়বো কখন?
সৌরভ:- ও এই কথা! তাঁর জন্য মন খারাপ করে বসে আছো? আরে বোকা আমি আছি তোমার সাথে। দেখো সবকিছু ম্যানেজ করে নিবো। এখন একটু হাসো। তখনি আমি হেসে উঠেছি। আর সৌরভ কিছুটা খুশি হয়েছে। ঘন্টা খানেক পর আমাদের বাড়ীতে এসেছি। সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। আমি বাড়ীতে গিয়ে বোরকাটা খুলেই চাচাদের বাড়ীতে চলে এসেছি। চাচি আমাকে দেখেই বলে।
চাচি:- সুমি এতদিন পর আমাদের কথা তোর মনে পড়ছে?
সুমি:- চাচি সবার কথা ভিষণ মনে পড়ে। কিন্তু কি করবো বলেন আপনাদের জামাই তো ছুটি পায়না। আচ্ছা চাচি চাচা কোথায়?
চাচি:- তোমার চাচা একটু জমি দেখতে গেছে।
সুমি:- ঠিক আছে তাহলে আমি এখন আসি। আমি এখুনি চলে যাবো। চাচাত ভাই দুইটা পিচ্চিকে আদর করে দিয়ে চলে এসেছি। তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- সুমি তুই এসেই চলে গেছিস কোথায়? জামাইকে একটু নিজের হাতে সবকিছু খেতে দিবি তানা শুধু ঘুরতে চলে গেছিস।
সুমি:- চাচাদের বাড়ীতে গেছিলাম। তোমার জামাই এত খাবার পেটু না। আর তাছাড়া তোমরা সবাই তো আছো তাইনা?
আম্মা:- হয়ছে এখন কথা কম বলে কাপড় চ্যাঞ্জ কর।
সুমি:- কাপড় চ্যাঞ্জ করতে পারবোনা। এখুনি চলে যাবো আমরা বলেই আমি গিয়ে আমার বই সহ যাবতীয় কাগজ পত্র গুলা একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছি।
সৌরভ:- সুমি তোমার হয়ছে?
সুমি:- হ্যা হয়ছে। আসুন খেয়ে রওনা দিবো। সৌরভ আর কিছু বলেনি আমরা দুজনে খেয়ে রওনা দিয়েছি। সৌরভ আসার সময় আমার হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলো আম্মাকে দিতে। আমি প্রথমে বারণ করেছি কিন্তু সৌরভ কিছুটা রাগ করেছে তাই নিতে বাধ্য হয়েছি। সারা রাস্তা সৌরভ আমাকে একটা কথা বলেছে।
সৌরভ:- সুমি দুনিয়াতে কেউ কাওকে জায়গা করে দেয় না। নিজের জায়গা কেউ ছেড়ে দিয়ে বলে না নাও এসো আমার জায়গাটা তোমাকে দিলাম। সবাই নিজের জায়গা নিজে তৈরি করে নিতে হয়। তোমার পাশে তোমার স্বামী আছে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে বলো? আমি তোমাকে সবসময় সাপুট করবো তুমি তোমার সবটা দিয়ে পড়বে। মা একটু অন্য টাইপের তবে যদি তুমি একবার মায়ের মনে জায়গা তৈরি করে নিতে পারো তাহলে আর কেউ তোমার লক্ষ থেকে আটকাতে পারবে না। তবে তোমাকে আমি যে বিশ্বাসটা করি সেই বিশ্বাসের মর্যাদাটা দিও প্লিজ।
সুমি:- আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা আমি সবসময় দিবো ইনশাআল্লাহ। তখনি ওনি বাইকটা থামিয়ে বলে।
সৌরভ:- সুমি নামো আমরা এসেছি। আমি নেমেছি। তখনি ওনি বলে। সুমি তুমি ভিতরে যাও আমি ব্যাগ নিয়ে আসতেছি।
সুমি:- আমি আপনার সাথে ধরি তাহলে আপনার জন্য সহজ হবে।
সৌরভ:- থাক দরকার নেই। তুমি ভিতরে গিয়ে রাতের খাবার তৈরি করে নাও। মনে হয়না কেউ রাতের খাবার রান্না করবে।
সুমি:- ঠিক আছে যাচ্ছি। আমি ভিতরে ঢুকতেই বড় ভাবি বলে।
ভাবি:- কি কপাল নিয়ে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি আর ফকিরের মেয়েটা কি কপাল নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে!
সোনালী:- একেই বলে কপাল। একটু রূপ আছে তা দেখিয়ে আমার ভাইটাকে পাগল করেছে।
ভাবি:- রূপে পাগল করেছে নাকী বাবা মা সহ সবাই মিলে তাবিজ করেছে কে জানে?
সোনালী:- মনে তো হয় তাবিজ করেছে। তানা হলে সৌরভ ভাইয়ার মত ছেলে কি*না ফকিন্নীর মেয়ে বিয়ে করে। তখন আমি কিছু বলতে যাবো তাঁর আগেই আমার শ্বাশুড়ি এসে বলে ফেলে।
শ্বাশুড়ি:- কি মহারানীর বাড়ীতে আসার সময় হয়ছে? তা যদি ঘুরাঘুরি শেষ হয়ে থাকে তাহলে গিয়ে রাতের জন্য রান্নাটা বসিয়ে দাও।
সোনালী:- মনে তো হয় বাপের বাড়ী থেকে খেয়ে এসেছে আলুভর্তা আর পান্তা ভাত। রাতের খানার কোনো দরকার পড়বেনা। তখনি সৌরভ বলে উঠে।
সৌরভ:- সুমি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তখনি শ্বাশুড়ি সৌরভের কাছে আমার বইয়ের ব্যাগ দেখে বলে উঠে।
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ এই ব্যাগে কি?
সৌরভ:- সুমির বই আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ওর বাবার বাড়ী থেকে নিয়ে এসেছি।
শ্বাশুড়ি:- তাহলে সত্যি সত্যি সুমি আবার পড়ালেখা করবে?
সৌরভ:- হ্যা করবে। আর তাছাড়া বাড়ীর মধ্যে তেমন আহামুড়ি কাজ নেই যে সুমির পড়তে সমস্যা হবে। মা এখন থেকে সুমি সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার তৈরি করবে। দুপুরবেলা খাবারটা যারা বাড়ীতে থাকবে তাদেরকে দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েন।
শ্বাশুড়ি:- বউকে কলেজে পাঠানোটা কতটা যৌক্তিক আমার চিন্তায় আসে না। সৌরভ তুই কিন্তু বেশী মাথায় তুলে ফেলছিস?
সৌরভ:- মা সুমির প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। সুমি এমন কোনো কাজ করবে না। যে কাজের জন্য আমার মাথা নিচু করতে হবে। আচ্ছা মা অনেক ক্লান্ত লাগছে আমি রুমে যাই ফ্রেশ হবো।
শ্বাশুড়ি:- এত বিশ্বাস ঠিক আছে দেখা যাবে। তখন সৌরভ আর কিছু বলেনি সোজা রুমে দিকে হাটা দিছে আর এদিকে আমিও ওনার পিছু পিছু রুমে এসেছি। প্রথমে ওনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে এরপর আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে রান্নাঘরে ঢুকেছি। রাতের খাবার তৈরি করে নিয়েছি ঘন্টা দুয়েকের ভিতরে। রান্না শেষ করে রুমের দিকে যাচ্ছি তখনি খেয়াল করে দেখি সোনালীর রুম থেকে কেমন একটা সন্দেহের আওয়াজ আসছে। আমি দরজাটা আস্তে করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেছে। রুমে হাল্কা করে তাকাতেই আমি যা দেখেছি তা দেখে আমার মাথা ঘুরে গেছে। ছিঃ এতটা বিশ্রি হয় কি করে? মনে মনে কথাটা বলেই ভাবছি চলে আসবো তখনি মনে মনে আবারো চিন্তা এসেছে নাহ যদি এমন কাজ আমার ছোট বোন করতো তাহলে কি আমি এমন ভাবে চুপচাপ দেখে চলে যেতাম। যাই গিয়ে দেখি সবটা বলেই রুমের ভেতরে ঢুকে গেছি আর দেখি সোনালী কাপড় বিহিন ভিডিও কলে কথা বলছে। আমাকে দেখেই মোবাইলটা লুকিয়ে নিয়ে দ্রুত বাথরুমে চলে গেছে। আমি অপেক্ষা করছি কিছুক্ষণ পর সোনালী এসেই আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার মত করে হাত তুলেছে আর আমি হাতটা ধরে উল্টো আমি জোঁড়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলি।
সুমি:- সোনালী তুমি যা করছো তা একদম ঠিক করছো না। নিজের সম্মান যদি নিজেই শেষ করে দাও তাহলে অন্যের দোষ কোথায়? তোমার বয়স এখন কম তুমি যা করছে তা একদম ভুল করছো। তুমি যদি এমন কিছু আর কোনো সময় করো তাহলে আমি বাধ্য হবো তোমার মা ভাই বাবাকে জানাতে।
সোনালী:- তুই ফকিন্নীর মেয়ে হয়ে আমাকে উপদেশ দিতে এসেছিস? আর তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস? দেখিস আমি মাকে সব বলবো।
সুমি:- তুমি কি বলবে! আমি নিজেই বলবো আর আমার মোবাইলে ভিডিটা তোমার মাকে দেখাবো। তখনি সোনালী চুপ করে গেছে। তখন আবার বলি। তুমি যদি আর কোনো সময় মোবাইলে এসব কিছু করো তাহলে আমি আজ তোমার যা যা রেকর্ড করেছি সব তোমার বাড়ীর সবাইকে দেখাবো।
সোনালী:- প্লিজ ভাবি ক্ষমা করে দেন। আমি আপনার পায়ে পড়ি আর জীবনেও এমন কোনো কাজ করবো না। আপনি দয়া করে কাওকে কিছু দেখাবেন না। মাকে কিছুই বলবেন না প্লিজ।
সুমি:- যদি আমার সব কথা মেনে চলো তাহলে আমি কিছুই করবো না। আর কাওকে এসব কিছু বলবো না। তুমি কি রাজি আছো আমার কথা?
সোনালী:- হ্যা ভাবি সব রাজি আছি।
সুমি:- ঠিক আছে আমিও কাওকে আপদত কিছুই বলবো না আর দেখাবো না। তুমি এখন রেস্ট নাও পরে তোমার সাথে কথা বলবো। সুমি রুম থেকে বেড়িয়ে মুচকি হেসেছে। কারণ সুমি সোনালীর কোনো কিছুই ভিডিও করেনি। তাও মিথ্যা বলেছে শুধু মাত্র সোনালীকে ভয় দেখানোর জন্য। সুমি রুমে এসে দেখে সৌরভ খাটের উপরে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে কি যেনো দেখছে তখনি সুমি এসে সৌরভকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। সৌরভ মোবাইল রেখে সুমির সাথে দুষ্টমিতে মেথে উঠে। কিছুক্ষণ দুষ্টমি করার পর দুজনে রাতের খাবার খেতে যাই। বাড়ীর সবাই এক সাথে খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে যাই। সুমি সবকিছু গুচিয়ে রুমে গিয়ে দেখে সৌরভ সুমির সবগুলা বই গুচিয়ে রেখেছে।
সৌরভ:- আজ থেকে তোমাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা সময় বেশী দিবো তোমার পড়ার জন্য।
সুমি:- মাত্র দুই ঘন্টা?
সৌরভ:- এইটা তো রাতের বেলা। আর দিনের বেলা তো সারাদিন ফ্রি থাকবে। তখন সময় করে পড়ে নিবে কেমন?
সুমি:- মা যদি আমাকে সারাক্ষণ কাজের উপরে রাখে তখন কি করবো?
সৌরভ:- প্রয়োজনীয় যে কাজ সেই গুলা করবে বাকী সময় দরজা বন্ধ করে পড়বে। আসো এখন অনেক রাত হয়ছে সকালে তোমার কাজ আছে সাথে আমারও অনেক কাজ আছে।
সুমি:- এখন থেকে আমাকে প্রতিদিন কলেজে নামিয়ে দিবেন কিন্তু।
সৌরভ:- সেটা তোমাকে বলতে হবে না। আমি অফিসে যাবার সময় তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবো। যদিও আমার এখন একটু রাস্তা ঘুরতে হবে তাও আমি ঘুরবো। তখনি টান মেরে আমাকে বুকে নিয়ে আমার ঘারে ছোট ছোট চুমু দিয়ে দিচ্ছে। আমিও আজ সারা দিলাম। দুজনে দুজনকে অনেকটা কাছে টেনে নিলাম। প্রতিদিনের মত আজ সকালেও দুজনে উঠে নামাজ পড়েছি। আমি গিয়ে সকালের নাস্তা তৈরি করে সবকিছু গুচিয়ে খাবার টেবিলে রেখে রুমে এসে ফ্রেশ হয়েছি। তখনি সৌরভ বলে। সুমি তুমি একদম তৈরি হয়ে নিচে আসো। আমি তোমাকে কলজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যাবো।
সুমি:- ঠিক আছে। আমি একদম বোরকা পড়েই নিচে এসেছি। সবাই খাবার টেবিলে বসে এক সাথে নাস্তা করেছি। এক এক করে নাস্তা সবাই শেষ করে উঠে গেছে সৌরভ সোফায় বসে আছে তখনি আমি টেবিল পরিষ্কার করতেছি তখনি শ্বাশুড়ি বলে।
শ্বাশুড়ি:- সুমি তুমি এসব রাখো। সৌরভ মনে হয় তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি চলে যাও আমি টেবিল পরিষ্কার করতেছি।
সুমি:- মা এখনো সময় আছে আমি পরিষ্কার করে যেতে পারবো।
শ্বাশুড়ি:- সময় কেমন আছে তা আমি জানি। তোমাকে যা বলেছি তা করো। সৌরভ অপেক্ষা করছে তুমি যাও। আমি আর কোনো কথা বলিনি সোজা হাত দুয়ে চলে আসতেছি তখনি পেছন থেকে আমার শ্বাশুড়ির ডাক দিয়ে বলে।

চলবে,,,