এল এ ডেইস পর্ব-১২+১৩

0
159

#এল_এ_ডেইস
পর্ব – ১২
লেখনীঃ মাহীরা ফারহীন

বড় লোহার গেটটা হাট করে খুলে রাখা। বেশ কিছুক্ষণ পর পর একেকজন শিক্ষার্থী ভেতরে প্রবেশ করছে। এখন পৌণে আটটা বাজে। ক্লাস শুরু হয় সাড়ে আটটায়। সুতরাং স্কুলের গেটে শিক্ষার্থীদের ঢল নামতে দেড়ি আছে। পরিষ্কার নীল আকাশে পাতলা পেলব সাদা মসলিনের মতো মেঘের চাদর। মেঘের এই অদ্ভুত গড়ন কদাচিৎ দেখা মেলে। গেটের থেকে কয়েক গজ দূরে একটা সাইকেল বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রায়েদ মাদিহ মাঝ রাস্তায় সাইকেলে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন। চেহারায় গম্ভীরতার ছাপ। চোখে আনমনা ভাব। সে ভাবছে, ওফ এর আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এত ভাবতে হয়নি যতটা এটা নিয়ে ভাবছি। এমনতেই আজ এপ্রিলের এক তারিখ অর্থাৎ এপ্রিল ফুল ডে। স্কুলে আজ পাগলামি চরম পর্যায় উঠবে। এই এপ্রিল ফুল একদম ভিত্তিহীন একটা জিনিস। তার ওপর আজই আবার ইভেন্টের প্রাইজ গিভিং সেরেমনিটা ফেলসে। কিন্তু আমি এখন কি করবো। স্কুলের সামনে পর্যন্ত তো এসেই পরেছি। এখন ভেতরে ঢুকবো কি ঢুকবো না। ভেতরে গেলেই আমি ফেঁসে যাবো। খুব ভালো করে জানা আছে। এই সেরেমনির ভিড়ভাট্টার মাঝে মাহীন আমাকে টানাটানি করে নিয়ে যাবেই। মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত কিছু একটা আছে। ওকে দেখলেই কী বলবো আর কীরকম আচরণ করব সব গুলিয়ে যায়। অন্যদের ওপর খাটানো কৌশল ওর ওপর খাটে না। তার ওপর আরেকটা সমস্যা হলো ওর সান্নিধ্যে থাকলে হৃদয় বুঝি অন্য কোনো গ্রহের আইনে চলে। ওকে একটুও বুঝি না বাবা! ওফ প্রথম থেকেই ওর সাথে অন্যদের মতই কঠোর আচরণ করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু সেটাও কেন হয়ে উঠল না তা আমার বোঝার বাইরে। একবার একটু স্বাভাবিক আচরণ করেছি শুধু আর ব্যাস! আমাকে আর ওইভাবে ও দেখেই না যেভাবে অন্যরা দেখে। ততক্ষণ পর্যন্ত এটা ঠিক আছে যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপারটা ওর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু এখন ও আমাকে সবার মাঝে সেরেমনিতে নিয়ে গেলে, তখন তো আর তা সীমাবদ্ধ থাকবে না। ওখানে ওর বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে পরিবার সবাই থাকবে। কিন্তু আমি কিছুতেই এসবের ভেতর যাবো না। এসবের মাঝে যাওয়াটা আমার মানায় না। কিন্তু সেটা ও কিভাবে বুঝবে? আমি জানি ও যাই করার যেভাবে চেষ্টা করছে সেটা এই পর্যায় এসে পারবে না। এতদিন আমি বুঝতে পেরেও ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করেছি কারণ এতে না কেউ কিছু জানছে, না সকলের কাছে আমার চিরচেনা খারাপ চিত্রে কোনো প্রভাব পরছে। মাহীন যেকোনো কারণেই হোক এসব কিছু সকলকে বলে বেড়ায় না। তাছাড়া সবচাইতে বড় কথা আমি এমন কেন? কেন এমন আচরণ করি? কেন সকলের কাছ থেকে দূরে থাকি? এবং কিছুদিন পর পর কোথা থেকে মারামারি করে আসি? কি এমন ঝামেলায় জড়িয়ে যাই। এসব কিছুই সকলের প্রধান প্রশ্ন। কারোও সাথে এইজন্যেই স্বাভাবিক আচরণটাও করি না। কারণ করলেই তারা এসব প্রশ্ন করা শুরু করবে। অথচ মাহীন এখন পর্যন্ত একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেনি!’
” মর্নিং।” হঠাৎ কারোও কন্ঠে রায়েদ চমকে উঠল। ডান দিকে ফিরে চাইলো। মাহীন সাইকেল নিয়ে এসে ওর পাশে থেমেছে। বলল,

“তুমি এই মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেন?…আচ্ছা কোনো ভাবে তুমি স্কুলে না যাওয়ার কথা ভাবছো না তো?”

রায়েদ আত্মাসংযম করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“মোটেও না। আমার পা ব্যাথা করছিল তাই একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

মাহীন ভ্রু উঁচিয়ে বলল,”ওহ আচ্ছা। তাও ভালো তোমাকে এখানে দেখা পেলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম তুমি আজ স্কুলে আসবাই না।”

রায়েদ বলল,”তার কারণ?”

“ওই যে আজকের সেরেমনি। যাবে তো তাই না?”

“না, আমি ওমন সেরেমনিতে যাই না। আজকেও যাবো না।”

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে যেও না। অন্তত এখন স্কুলের ভেতর চলো।” রায়েদ কিছুটা অবাক হয়ে চাইল ওর দিকে। তবে কিছু বললো না। ওরা দুজন সোজা পার্কিং লটে গিয়ে নিজেদের সাইকেল রেখে আসল। তারপর বড় গেট দিয়ে প্রবেশ করল। দুজনই নিশ্চুপ ভাবে হেঁটে চলেছে।
মেয়েটার পাশে পাশে হাঁটতে রায়েদের বড় অস্বস্তি হচ্ছে। ইদানীং নতুন কিছু অনুভূতিরা মনের আঙ্গিনায় এসে হানা দিয়ে যায়। যারা একেবারেই নতুন। এসব অনুভূতির সঙ্গে পূর্ব পরিচিত নয় রায়েদ। ঠিক চত্ত্বরের কাছাকাছি এসে রায়েদ বাম দিকের পথ ধরলো। সবসময়ের মতই ও লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছে। মাহীন পেছনে আবার ছুটে আসল ওকে ডাকতে ডাকতে। রায়েদ মনে মনে ভাবলো,’ওফ তাই তো অবাক হচ্ছি ও কিভাবে আমার সেরেমনি জয়েন করার ব্যাপারটা নিয়ে আর কিছু বললো না। এইযে এখন ঠিকই বলবে।’ মাহীন এসে ওর সামনে দাঁড়াল। রায়েদ বিরক্ত কন্ঠে বলল,

“দেখো একবার বলেছি যে সেরেমনিতে…ওকে থামিয়ে দিয়ে মাহীন বলল,
“এক মিনিট আমি তো সেরেমনির কথা বলতে আসিনি।”

“তাহলে?”

“আমি বলছি যে তোমার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম,টুইটাট, অথবা তোমার নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ আছে?”

রায়েদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। বলল,”তুমি হঠাৎ এসবের খোঁজ করছো কেন? কি করবা?”

“আহা থাকলে আমাকে তোমার আইডি দাও, আমার দরকার।”

রায়েদ কঠোর গলায় বলল, “দেখো মাহীন এসব নিয়ে যদি কোনো গোলমাল করেছো এবং কাউকে দিয়েছো তাহলে কিন্তু ভালো হবে না। এবং আমার থাকলেও আমি দিবো না।”

মাহীন বলল,”আহা আমি এখন পর্যন্ত তোমার সাথে সম্পর্কিত কোনো কিছু নিয়ে গোলমাল করেছি? বলো করেছি? আর তুমি না আমাকে থ্রেট দিয়েছিলা যে তোমার নম্বর যেনো অন্য কারো কাছে না যায়। সুতরাং সেটা তো রেখেছি। নম্বর আর কারোও কাছে যায়নি।”

“ঠিক আছে মানলাম সেই কথা রেখেছ। কিন্তু এখন এসব দিয়ে কি করবা?”

“ওফ এত প্রশ্ন করো না। আজকেই জানতে পারবা আমি কি করবো। এবং এতে কোথাও কোনো ঝামেলা হবে না, তোমার আইডি লিকও হবে না এবং এ সম্পর্কে কেউ কিছু জানবেও না।”

রায়েদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“আমি এসব কিছু চালাই না।”
“নাহ বিশ্বাস হলো না। একবিংশ শতকে কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকে?অন্তত ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের কোনো একটা আছে?”

“না, এগুলোয় শুধু সময় নষ্ট।”

“টুইটারও না?”
‘না।’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘হোয়াটসঅ্যাপ?’

এবার রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,’আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। হ্যা আমার আছে হোয়াটসঅ্যাপ।”

মাহীন বিজয়ির হাসি হেসে বলল,’তোমার নম্বরেই তো?’
‘হ্যা। তবে মনে রেখো আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমাকে কখনো ফোন করবে না। কখনো না মানে কখনো না। তাহলে তুমি আমার হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে করবাটা কি?’

মাহীম বিরক্তি জড়ানো কন্ঠে বললো, ‘আবার তোমার ওভার থিংকিং তোমাকে পেয়ে বেসেছে। আমি কখন বললাম আমি তোমাকে ফোন দিবো? শুধু স্কুল ওয়াইফাই খোলা রেখো।’ বলেই হাঁটতে লাগল।

রায়েদ উচ্চস্বরে বলল,’ওয়াইফাই কেন খোলা রাখব? এর মানে তো এটা দাড়াচ্ছে তুমি আমাকে ফোন দিবা।…মাহীন!’ ততক্ষণে মাহীন দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে রায়েদ থেকে পনেরো গজ দূরে এগিয়ে গিয়েছে। আর পেছনে ফিরে চাইলো না। রায়েদের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল। তারপর ঘুরে আবার লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে নিজের অন্যান্য বই খাতা বের করে রাখল। আজকে কোনো ক্লাস নেই। এবং স্কুল বিল্ডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পাওয়াও যাবে না। সকলেই এখন স্কুল অডিটোরিয়ামে রয়েছে। সেরেমনি নয়টার সময় শুরু হবে। রায়েদ ওর পড়ালেখা নিয়ে বসল। কিছুক্ষণ ফিজিক্স পড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই মন বসছে না। ফিজিক্সের কনসেপ্টগুলোর দিকে তাকিয়ে মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কাজেই এরপর ইংলিশ খুলে বসল। কিন্তু সেটাতেও মন বসানো সম্ভব হলো না। যেই ভাষায় প্রতিনিয়ত কথা বলছে তাও যেন অতি দূরবদ্ধ ঠেকল। অবশেষে বইখাতা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। বারবার ওই মেয়েটা মাথার মধ্যে হাজির হয়ে বিরক্ত করছে। দূরে থেকেও পিছুই ছাড়ছে না। বড় মুশকিল তো! বই ভড়া সেলফগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগল এবং ভাবতে লাগল, মাহীন আবার আমার হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে কি করবে? আমাকে কেন ফোন করবে ও? যেভাবে বলল, ফোন করবে না সেটা স্রেফ এমনিই বলেছে। আসলে ও ফোন ঠিকই করবে। ওইদিনও ওই একই সুরে বলেছি যে, “কে বলেছে আমি তোমার জন্য আইসক্রিম আনতে যাচ্ছি?” অথচ কি করলো। ওফ আল্লাহ জানে এই মেয়েটা আমাকে কি ঝামেলায় ফেলবে। কিন্তু আমি শুধু ওয়াইফাই অফ রাখলেই কাজ শেষ। ফোন আসবে না। কিন্তু তখন আবার এমনি ফোন দিবে। সেখান থেকেও তো আর ওকে ব্লক করে দেওয়া যায়। তবে তা ভালো দেখাবে না। আর সেইদিন যেটা হলো। অবশ্য সেই ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো রহস্যই আছে যে, যেদিন প্রথম ও আমাকে ফোন দিয়েছিল তখন ফোনটা রিসিভ করা হয়েছিলো। তাহলে কেন ও সবসময় বলে যে আমি এবং লিমের মধ্যে কেউই ফোন ধরিনি? আমার ফোন, আমি জানি ফোন রিসিভ হয়েছে। কমপক্ষে চার পাঁচ সেকেন্ড লাইনে ছিল। তারপরও মাহীনের মুখ থেকে একবারও এটা বের হয়নি যে আমি ফোন ধরেছিলাম। আসলেই কি তার কারণ এটা যে, ও জেনে শুনেও আমাকে জিজ্ঞেস করতে চায়নি যে, ওই কাঁচ ভাঙ্গার শব্দটা কিসের ছিলো। ফোন ধরেছি এটা বললেই তো প্রসঙ্গটা চলেই আসত। অথচ ও খুব সাবধানে সেটা এড়িয়ে গেছে। ও আসলে কি ভেবে এরকম অদ্ভুত কিছু কাজ করে সেটা তো শুধু ওই বলতে পারে।’ কতক্ষণ পায়চারী করার পর আবার নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। তারপর নিজের সেল ফোনটা বের করে ওয়াইফাই অন করল। যদিও ওর অফ রাখার কথা ছিলো। তারপর সেল ফোনটা টেবিলের ওপর রাখল। মনের ভেতর থেকে এক অচেনা কন্ঠস্বর কিছুতেই ওয়াইফাই অফ রাখার অনুমতি দিল না।ভাবল, দেখা যাক ওর মাথায় কি চলছে। সেরেমনি হয়তো এতক্ষণে শুরু হয়ে গেছে।’ এরপর প্রায় আধাঘন্টার বেশি পার হল। হঠাৎ রায়েদের সেল ফোনটা বেজে উঠল। রায়েদ দেখল, হোয়াটসঅ্যাপে “দ্যা স্ট্রেঞ্জ গার্ল” নামে সেভ করা নম্বর থেকে ভিডিও কল আসছে। মাহীনকে ফোন নম্বর নিয়ে যাই বলুক না কেন নিজে নম্বরটা ঠিকই সেভ করে রেখেছে। রায়েদ কিছুটা অবাক হয়ে সঙ্গে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ভাবল, কি ব্যাপার এখন ও আবার আমাকে ভিডিও কল করছে কেন? আসলেই পাগল না তো মেয়েটা। একই জায়গায় আছি। কিছু বলতে হলে তখনই বলতে পারত, এখনো এসে বলতে পারে। আমি হাজার বার মানা করার পরও কল করছে তাও আবার ভিডিও কল। তাও যা ভালো আমি এখন এখানে আছি। বাসায় থাকা অবস্থায় যদি কল দিতো তাহলে কখনোও ওকে মাফ করতাম না। কিন্তু আমি এখনো ফোন ধরবো না।’ ফোনটা বেজেই চলেছে। কিন্তু কল আর কাটে না। রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ‘সমস্যাটা কী? এই কল ইগনোর করলে কি বেশি সময় ধরে বাজে নাকি? কাটে না কেন? আর না কাটা পর্যন্ত কেমনটা যে লাগে, যে অপর পাশ থেকে কেউ অপেক্ষা করে আছে আমার ফোন ধরার আর আমি দেখেও ফোন তুলছি না।…ওফ কি মানসিক টর্চার!
ফোনটা বাজতে বাজতে শেষ পর্যন্ত কাটল। রায়েদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কী ফেললো না তার আগেই
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পুনরায় বাজতে লাগল। রায়েদ বিরক্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর কল রিসিভ করে ক্যামেরা অফ করে দিলো। কিন্তু অপর পাশের ক্যামেরায় মাহীনকে দেখা গেলো না। তার বদলে দেখা গেল, সারি সারি ছোট ছোট চেয়ার। তার সামনে বড় একটা স্টেজ। আশপাশ থেকে শিক্ষার্থীদের সোরগোল শোনা যাচ্ছে। রায়েদ বলল,

“মাহীন তুমি…ওর কথা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলল,

‘আমি মাহীন না। আমি লিম জু। দেখো মাহীন যাচ্ছে স্টেজের দিকে। আর কিছু মনে করো না। আমি কিন্তু কল দেইনি। মাহীন কল দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে গেছে।’

রায়েদ ভ্রু কুঁচকে চাইল। ভাবল, তাহলে এই ছিলো ওর মনে। এই ভাবে আমাকে সেরেমনির সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য এত কিছু করলো। তবুও আমাকে সশরীরে না হলেও ভার্চুয়ালি ঠিকই সেরেমনি তে নিয়ে গেলো। এই মেয়ের বুদ্ধির তুলনা হয় না।’ আনমনেই হালকা প্রসারিত হলো ঠোঁট।

লিম জু বলল,
” ওহ এটা তো বলিইনি। যে আমাদের আর্টিকেলটা তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে! ওফ প্রথমবার আমার তৈরি কিছু এই পর্যায় পৌছাল। মাহীন স্টেজের দিকে গেছে। আমি যাইনি। আমার নার্ভাস লাগে।” রায়েদ বেশ অবাক হলো, সঙ্গে উচ্ছ্বসিত হলো। তবে মুখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘কংগ্র্যাটস’। লিম জুকে কিছু বলতে শোনা গেলো না। মাহীনকে দেখা গেলো স্টেজের ওপর উঠছে। প্রিন্সিপাল সেলটন কিছু একটা বলে মাহীনকে একটা ম্যাডেল পরিয়ে দিলেন। তারপর মাহীন মাইক হাতে নিয়ে হাসি মুখে বলল,
‘আমি এই স্কুলে নতুন… ছাত্রী। এখানে এসেছি তার এক মাসও না হতেই এমন কিছু একটা পেয়ে যাবো ভাবতেও…এর ভালো ভাবে শোনা গেল না। আবার মৃদুভাবে শোনা গেল, অসংখ্য ধন্যবাদ।’ সঙ্গে সঙ্গে চারিপাশে করতালির শব্দ শোনা গেল।মাহীন স্টেজ থেকে নেমে গেলো। সেখান থেকে সোজা ও ভিড়ের মধ্যে চেয়ার টেবিলগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। লিম জু সেদিকে পুরপুরি ক্যামেরা ঘুরালো না বলে ভালো ভাবে দেখা গেল না। এবং সম্ভবত লিম জু মোবাইল হাতে নিয়ে তালি দিচ্ছে ফলে সব ঝাকানাকা দেখা যাচ্ছে। রায়েদ ভাবল, ওহ হ্যা আমি ঠিকই ধরেছিলাম! মাহীন এই স্কুলে নতুন। হয়তো ও আমার সম্পর্কে এতকিছু জানেই না। অথবা শুধু মুখে মুখে শুনে অতটা পাত্তা দেয়নি। নাহলে কেউ আমার সাথে কাজ করতে কেন রাজি হতো।’ ভাবতে ভাবতেই মাহীনের কন্ঠস্বর শোনা গেল। রায়েদ চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ফোনের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মাহীন খুব সম্ভবত পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, বলছে,
“লিম লিম আমাকে মোবাইলটা দাও।” লিমের কন্ঠ শোনা গেল,
“হ্যা নাও। আমি যাই ওখানে গিয়ে বসছি। দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করছে।” ক্যামেরাটা নড়াচড়া হলো এবং খট খট শব্দ হলো। তারপর মাহীনকে দেখা গেল। মাহীন হাসি মুখে বলছে,
“তোমার মেডেলটা মিসেস রেয়ের কাছে আছে। আমাকে দিতে বললাম, দিলো না।”

ওপাশ থেকে রায়েদ বলল,
“সমস্যা নেই। উনি আমাকে পরে দিয়ে যাবেন।” মাহীন একটু দূরে খোলা করিডোরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ভিড় এবং হৈচৈ কম।
মাহীন উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,
“হুম। আচ্ছা দেখলা তো তোমাকে কিভাবে সেরেমনি এটেন্ড করালাম। তোমার লাইব্রেরিতে বসেই। কেউ কিছুই জানল না। কেমন লাগল আমার আইডিয়াটা?”

রায়েদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“হুম ভালোই।”

মাহীনের মুখ হাসি উধাও হয়ে গেল। বিরক্ত কন্ঠে বলল,
“ধ্যাৎ! তুমি ” ভালো” ছাড়া আর কোনো কমপ্লিমেন্টারি ওয়ার্ড পারো না? নাকি চার বছর ধরে ব্যবহার না করতে করতে ভুলে গেছ?” রায়েদ আর কিছু বলার পূর্বেই লাইন কেটে গেল। রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হাসল। মনে অনেক কিছুই আসে কিন্তু মুখ পর্যন্ত সেসব কথা আসে না। সেল ফোনটা টেবিলের ওপর রাখল। তারপর ভাবতে লাগল, এক মিনিট ও শেষ কথাটা কি বললো? চার বছর ধরে কমপ্লিমেন্টারি ওয়ার্ড ব্যবহার না করতে করতে ভুলে গেছি? চার বছর? চার বছর বললো কেন ও? ওহ না। মাহীন তো নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে এসব জানতেই পারে। যারা এখানে আট নয় বছর ধরে পড়াশোনা করছে তাদের কাছে তো কোনো কিছু অজানা নয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

#এল_এ_ডেইস
পর্ব – ১৩
লেখনীঃ মাহীরা ফারহীন

“না না না না না, মিসেস রে। আমি এবার কিছুতেই যাবো না। আপনারা আমাকে কি পেয়েছেনটা কি বলুন তো? প্রতিবার সব আমার ওপরই কেন চাপিয়ে দেন? পার্টনারদের ফোন করতে হবে তো আরেকবার মনিটর বলে ছাত্রের বাড়িতে অভিযোগ পত্র পাঠাতে হবে। আমি পারব না এসব করতে!”

শীতল কন্ঠে বলল মাহীন। মিসেস রেয়ের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও। আশেপাশে আর কেউ নেই। অতি দরকার না হলে মিসেস রেয়ের কাউন্টারের ত্রিসীমায় কারোও ছায়াও চোখে পরে কদাচিৎ। মিসেস রে কাউন্টারের অপর পাশ হতে শান্ত কন্ঠে বললেন,

“দেখো মাহীন আমি মোটেও সব কিছু তোমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। লিমকে তো ওর অনারেবল পেপার আমিই দিয়েছি। আর রায়েদ ফোন তুলছে না বলেই তোমাকে বলছি।”

মাহীন তিক্ত কন্ঠে বলল, “ওহ তাই। আর আমার কি দায় পরেছে যে আমি সেখানে যাবো? ঠিক আছে বুঝলাম রায়েদ ফোন ধরছে না। তো কি হয়েছে। আপনি যান। মনিটরকে পাঠান। আমাকেই কেন যেতে হবে? মানে আমাকেই প্রতিবার হ্যাংলার মতো ওখানে যেতে হবে? রায়েদ নিজে থেকে কয়বার এসেছে আমার সাথে কথা বলতে?”

হঠাৎ করেই মাহীনের মধ্যে এক গাদা সাহস এসে জমা হয়েছে। মিসেস রেয়েকেও আর ভয় লাগছে না। বরং এই মহিলার সাথে আজ একটা বিহিত না করলেই নয়।

মিসেস রে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “আমি যেতে পারব না। আর ডেক্সটারও কোথায় গিয়ে ডুবে মরসে ওই জানে। আর দেখো ডিয়ার তুমি তো অন্যদের মতো না। আজ কত বছর পর কেউ আবার ওর সাথে পার্টনার হিসেবে কাজ করল। এবং এত ভালো একটা পজিশনে আসল।”

মাহীন তীব্র কন্ঠে বলল, “দেখেন আমি অবশ্যই অন্যদের মতো না। এজন্যেই হয়তো ওর সাথে কাজ করেছি। শুধু নিজে নয় লিম জুকে দিয়েও কাজ করিয়েছি। কিন্তু আমার ওর পিছে লেগে থেকে কি লাভ? আর এটা ওর অনারেবল পেপার। সুতরাং এটা ও পেলো কি পেলো না সেটা ওর মাথা ব্যাথা। আমার নয়।”

মিসেস রে আবার কিছু বলার পূর্বেই মাহীন চোখ সরু করে চাইল ওনার দিকে। তারপর সন্দেহ জড়ানো কন্ঠে বললো, “আপনার মতলবটা কি বলুন তো? কি চান টা কি আপনি? আমি ওখানে গেলে কি হবে? আমার পেছনে লেগে আছেন কেন? পরিষ্কার করে বলুন।”

মিসেস রে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর বললেন,”ঠিক আছে শোনো। রায়েদকে কি তোমার খারাপ মনে হয়েছে?”

“না”। এক মুহূর্ত দেরি না করেই বলল মাহীন।

“অবশ্যই না। ও তেমন না যেমনটা ও দেখায়। আমি ওকে এগারো বছর ধরে চিনি। এবং সবসময় ওর ভালো চাই। তুমি জানো আমি ওকে কতদিন হাসতে দেখি না। সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সবকিছু! ওর কোনো বন্ধু নেই এটাও তুমি জানো নিশ্চয়ই। কিন্তু একসময় ছিলো। তাদের সাথে ওর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন আর কেউ নেই। কিন্তু ওর সত্যিই দরকার। এবং আমি এতদিন অন্য কেউ যেন ওকে খোঁচাতে না যায় সেদিকে কড়া নজর রাখতাম। কারণ অন্যরা সেভাবে ব্যাপারটাকে নিজের মধ্যে রাখতে পারে না যেভাবে তুমি রাখো। কিন্তু কেউ এমন একজন যদি ওর বন্ধু হয় যে ওকে বুঝবে এবং ওকে ওর মতোই থাকবে দেবে। ওকে খোঁচাবে না এমন কাউকেই তো প্রয়োজন। এবং সেটাই তোমার মধ্যে দেখতে পেয়েছি এই কয়দিনে। হয়তো তুমি ওর বন্ধু হতে পারলে ও ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। নিজেকে হয়তো সবকিছু থেকে গুটিয়ে রাখবে না। আড়াল করে রাখবে না। যদিও এর জন্য প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন। একটা মানুষকে বিশ্বাস করে তার সাথে ফ্রি হতে ওর অনেক সময় লাগবে কিন্তু তা অসম্ভব নয়।”

মাহীন হা করে চেয়ে আছ। স্তব্ধ হয়ে গেছে। কথাগুলো হঠাৎ ওর মনের ভেতরে সেই অন্যরকম অচেনা অনুভূতিগুলোকে নাড়া দিয়ে গেল যেন। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ধীরে ধীরে বলল,

“ওর সাথে আসলে হয়েছেটা কি? আমাকে নিয়ে যখন এত আশা আপনার তখন এতটুকু কি আমার জানার অধিকার নেই?”

মিসেস রে ইতস্তত করে বললেন, “আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি বলতে পারবো না। মাফ করো। রায়েদ তোমাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করতে পারলে তো ও নিজে থেকেই বলবে। আমার তোমার ওপর আস্থা আছে।”

“আচ্ছা অন্তত এটা বলুন আপনি সেদিন রাতে আমাকে কেন বলেছিলেন ওকে ফোন করতে? যেখানে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে ওকে ফোন করলে ও কতটা বিরক্ত হয়।”

“আমি জানি। তখন দরকার পরেছিলো বলেই বলেছিলাম। এমনিতে স্কুলে থাকা অবস্থায় ওকে ফোন করলে ও তেমন একটা কিছু মনে করে না। কিন্তু অন্য সময় ওকে কখনো ফোন দিও না।”

মাহীন সায় জানিয়ে আলতোভাবে মাথা ঝাকাল। মিসেস রে জিজ্ঞেস করলেন, “তো তুমি যাচ্ছো?”

মাহীন নিশ্চুপ রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, “ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। কিন্তু এরপর আর কখনো কোনো কিছুর জন্য কিন্তু ওইখানে যাবো না আমি। যদি না ও নিজে আমার সাথে কথা বলতে আসে। এই আপনাকে বলে রাখলাম।”

মিসেস রে মুচকি হেসে বললেন,”আমার মনে থাকবে।”

মাহীন অনারেবল পেপারটা নিয়ে গোমড়া মুখে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। এখান থেকে সোজা লাইব্রেরিতে গেল। সকাল বেলা হলেও খুব অদ্ভুত ভাবে এখন লাঞ্চ ব্রেক চলছে। মাহীন লাইব্রেরি তে পৌঁছে সরাসরি না গিয়ে সেলফের গলি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সেলফ ঠাসা বইগুলো দাঁড়িয়ে শুধু দেখতেও ভালো লাগে। মাহীন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর কোণার টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু সেলফের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার পূর্বেই দুটো কন্ঠস্বর শুনতে পেল। ফলে থমকে দাঁড়ালো ও। দুটো ছেলের কন্ঠ। একজন তো অবশ্যই রায়েদ এবং অপর জনের কন্ঠটা চেনা চেনা লাগলেও ধরতে পারল না মাহীন। হয়তো বুঝতে পারতো যদি তারা ইংলিশে কথা বলতো। কিন্তু ওরা অন্য কোনো ভাষায় কথা বলছে। মাহীন সাবধানে সেলফের আড়াল থেকে উঁকি দিলো সেদিকে। দেখতে পেলো রায়েদ যথারীতি নিজের চেয়ারে বসে আছে এবং ওর পাশের চেয়ারে বসে আছে র‌্যবিট। মাহীন আবার ভেতরে এসে দাঁড়াল। ভাবতে লাগল, র‌্যবিট? মানে র‌্যবিট রায়েদের সঙ্গে কথা বলছে। তাও আবার টার্কিশ ভাষায়। রায়েদ আবার টার্কিশ পারে। ওহ হ্যা রায়েদ তো মুসলিম। তো এটা অসম্ভব নয় যে ও আসলে টার্কিশ। কিন্তু রায়েদ আর কারোও সাথে কথা বলে না সেখানে স্কুলের টপ ফাজিলের সঙ্গে কথা বলছে। তাও আবার দুজনই অন্য একটা ভাষা পারে।’ র‌্যবিট উচ্চস্বরে কিছু একটা বলে উঠতেই মাহীন চমকে উঠল। ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে আবার উঁকি দিলো সেদিকে। র‌্যবিট কিছু একটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলছে এবং রায়েদের ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। মাহীন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ভাবতে লাগল, ওরে বাপরে সম্পর্ক তো মনে হয় খুব ভালো দুজনের। আজ পর্যন্ত আমার সামনেই হাসতে দেখলাম নাহ। মিসেস রে তো বললেন, রায়েদের কোনো বন্ধু নেই। তাহলে উনি কি র‌্যবিটের কথা জানেন না? যাই হোক উনি যেটা বললেন সেটা অবশ্য খুব একটা ভুল কিছু বলেননি। কিন্তু এটা বলতে সমস্যা কি ছিলো যে রায়েদ এমন কেন? ঘটনা টা কি? তাছাড়া এখন বুঝলাম ওনার রায়েদের প্রতি এত সহানুভূতি কেন। উনি সবই জানেন ওর সম্পর্কে। আর রায়েদ যেমন বেশির ভাগ সময় অথবা সবসময় খিটমিটে মেজাজে থাকে তেমনি মিসেস রেও সবসময় তিরিক্ষ মেজাজে থাকেন। কিন্তু এখন এটা বুঝতে পারলাম যে মিসেস রেয়ের দুনিয়ার দয়া,স্নেহ, ভালোবাসা সব রায়েদের জন্য। আর আমি রায়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করি। অন্যদের মতো আচরণ করি না বলেই উনি আমাকেও পছন্দ করেন। এবং আমার কাছে দেখি ওনার অনেক আশা।’ হঠাৎ কাঠের চেয়ার নাড়াচাড়ার শব্দ ভেসে এলো ওপাশ থেকে। র‌্যবিট এতক্ষণে ইংলিশে বিদায় জানাল। ওর হেঁটে যাওয়ার পদশব্দ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। আরোও পাঁচ ছয় মিনিট মাহীন সেলফের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর এমন ভাবে বেরিয়ে আসল যেন ও মাত্র এসেছে। রায়েদ নিজের সেলফোন হাতে নিয়ে গম্ভীরমুখে বসেছিল। র‌্যবিট চলে যেতেই মুখে গম্ভীরতা টেনে নিয়েছে যেন। মাহীন অনারেবল পেপারটা টেবিলের ওপর রাখল। মনে মনে ভাবল, আচ্ছা মুশকিল তো। রায়েদকে দেখলেই স্নায়ুর ওপর এতো চাপ পরে কেন? এত অদ্ভুত লাগে কেন? আবার ওর আশেপাশে থাকলে ভালোও লাগে।’

রায়েদ এদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, “ওহ থ্যান্কস্।”

মাহীন মুখভঙ্গি ভাবলেশহীন রেখে মৃদু কন্ঠে বললো,
“প্লেজার”।

বলেই মাহীন চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই রায়েদ বলল,” কি ব্যাপার আজকে কি তোমার মুড অফ? কোনো কথা না বলেই চলে যাচ্ছো যে?”

মাহীনের হৃদপিণ্ডে হৈচৈ পরে গেল। আরোও বেশি অস্বস্তি হতে লাগল। আবার ঘুরে দাঁড়াল। শান্ত কন্ঠে বলল,”তোমার কিছু বলার থাকলে বলো।”

“নাহ আমার কি বলার থাকবে। এখানে এসে কখনো কথা না বলে চলে যেতে দেখিনি তাই বললাম আরকি।”

মাহীন টেবিলের ওপর হাতের তালু ছুঁইয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। হাতটা সরাতেই একটা পেন্সিল নিচে পরল। মাহীন বলল, “ওহ না। আমি তুলে দিচ্ছি।” বলে নিচে ঝুঁকল।

রায়েদ তড়িঘড়ি বলল,”এই না দরকার নেই।”

কিন্তু মাহীন পেন্সিলটা খুঁজবে কি তার বদলে চোখে পরল রায়েদ ওর জুতা খুলে রেখে পা দুটো টেবিলের কাঠের তক্তার ওপর তুলে রেখেছে। এবং ওর ডান পায়ের পাতার পাশ দিয়ে বেশ খানিকটা কেটে গিয়েছে। যেন কোনো ধারাল বস্তু দ্বারা বেশ গভীরভাবে আঘাতটা বসেছে। এবং দেখে মনে হলো না কোনো ঔষধ লাগানো হয়েছে। খুব অযত্নের সঙ্গে শুধু রক্তটা মুছে ফেলা হয়েছে। বাকি রক্তটুকু শুঁকিয়ে গিয়েছে। এ দৃশ্য দেখে খারাপ লাগা থেকে মনকে সংযত রাখতে পারল না মাহীন। রায়েদ মূহুর্তেই ওর পা নামিয়ে ফেললো এবং জুতা পরতে ব্যস্ত হলো। বলল,

“পেন্সিল খুঁজতে গিয়েছো না গুপ্তধন? এত সময় নিয়ে কী করছ। খোঁজার দরকার নেই।”

মাহীন তাড়াহুড়ো করে টেবিলের নিচে থাকা অবস্থায় উঠতে গিয়ে মাথায় বারি খেলো। রায়েদ উৎকন্ঠিত গলায় বলল,

“ইয়া আল্লাহ! তুমি কি করছোটা কি?”

মাথার যেখানে লেগেছে সেখানে হাত দিয়ে হালকা মালিশ করে মাহীন উঠে দাঁড়াল। তারপর নিজের ব্যাগ থেকে ফার্স্টএইড বক্স বের করল। হাতে থাকা সেল ফোনটা টেবিলের ওপর রাখল। এরপর টেবিলের অপর পাশে রায়েদের চেয়ারের সামনে এসে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল। তারপর ফার্স্টএইড বক্সটা খুলে তুলা ও সেলাইন সলিউশন বের করল। মনের মধ্যে উদ্বিগ্নতার দারুন উদ্রেক ঘটল মাহীনের। রায়েদ ভারি কন্ঠে বলল,

“দেখো মাহীন এসব করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার পা যেমন আছে ঠিক আছে।”

মাহীন কোনো কথা বলছে না। রায়েদ ফট করে উঠে দাঁড়াতে যেতেই মাহীন কঠিন স্বরে বলল,”খবরদার উঠবে না! তুমি নিজেকে ভাবোটা কি হ্যা? কোনো ঔষধ ছাড়াই তোমার আঘাত ঠিক হয়ে যাবে? যেন তোমার কোনো বিশেষ শক্তি রয়েছে। তা তো হবে না, হবে ইনফেকশন।”

হঠাৎ করেই মাহীনের বড্ড রাগ হলো। কেনো হলো তা ও নিজেও বলতে পারবে না। রায়েদ উঠতে গিয়েও উঠলো না। বাধ্য ছেলের মতো বসেই রইল। মাহীনের এরূপ আচরণে রাগ হলো না। বিরক্তও হলো না। বরং অদ্ভুত এক ভালো লাগার অনুভূতি তিরতির করে মনের আঙ্গিনায় ছড়িয়ে যেতে লাগল। মাহীন রায়েদের পায়ের পাতা শক্ত করে ধরে সেখানে সলিউশনটা ছোঁয়াল। রায়েদ নড়ে উঠলো।

মাহীন জিজ্ঞেস করল,”ব্যাথা লাগছে?”

রায়েদ ইতস্তত করে বলল, “না”।

“তাহলে নড়ছো কেন?”

“আমার..কাতুকুতু লাগে।” মিনমিন করে বলল রায়েদ।

মাহীনের হাসি পেল। কিন্তু ও হাসি চেপে গিয়ে গম্ভীর মুখভঙ্গি বজায় রাখল। শুঁকিয়ে যাওয়া রক্তগুলো পরিষ্কার প্রায় হয়ে এসেছে। রায়েদ এমন সময় জিজ্ঞেস করল,

“তুমি জানো সকলে আমাকে কোন চোখে দেখে?”

এই একটি মাত্র কথা মাহীনের মনে নাড়া দিলো। রায়েদের কন্ঠে অন্যরকম কিছু ছিলো বোধহয়। হৃদয় এলোমেলো ভাবে চলতে শুরু করেছে। ওর পায়ের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই গাঢ় কন্ঠে বলল,

“জানি। তাতে কি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে?”

“তাতে কি কোনো পার্থক্য হয়েছে?”

মাহীন এবার মাথা উপরে তুলে রায়েদের দিকে চাইল। বলল, “দৃষ্টিভঙ্গি চাইলেই বদলানো যায়। সকলে যেভাবে তোমাকে দেখতে চায় সেভাবেই দেখে। কিন্তু আমি অন্য সকলের মতো করে দেখতে চাই না।”

“তাহলে তুমি আমাকে ভালো মনে করো?”

“না করার কোনো কারণ আছে?”

“ঠিক আছে নাহয় তাই মনে করো। কিন্তু তবুও আমি তো আর বদলে যাইনি। এতে তো কোনো পার্থক্য হলো না। হয়েছে?”

মাহীন হালকা ভাবে বাঁকা হাসল। বলল, “কি পার্থক্য জিজ্ঞেস করছ? তাহলে শোনো। অন্য যারা তোমাকে খারাপ মনে করে, এড়িয়ে চলে। তারা হঠাৎ করে তোমার কাটা স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দিতে চাইলে, তুমি দিতে?”

রায়েদ নিশ্চুপ রইল। তারপর মৃদুভাবে না সূচক মাথা ঝাকাল।

মাহীন বলল, “এটাই পার্থক্য যে আমাকে কেন দিলে তা একটু ভেবে দেখ।”

বলে আবার দৃষ্টি নিচে ফিরিয়ে বক্স থেকে নিওস্পোরিন বের করল। এবং কাটা স্থানে লাগাতে ব্যস্ত হলো। রায়েদ আর কিছু বললো না। মনের মধ্যে গভীর উথাল-পাথাল। সবসময় গুছিয়ে চিন্তা ভাবনা করে ও। সেটাও কেমন ভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো নিমিষেই। হঠাৎ মনে হলো, নাহ মাহীনকে আমি কেনোই বা আমার এত কাছে চলে আসার অনুমতি দিলাম? কী আছে ওর মধ্যে? কত দিন পর কেউ আমার জন্য কেয়ার করছে সেটার লোভই কী ছাড়তে পারলাম না? তবে শুধু এতেই এমন অদ্ভুত অনুভূতির কারণ কী? আগে যখন অন্যরাও আমার যত্ন করত তখনো ভালো লাগত। তবে এ ভালো লাগা এবং সে ভালো লাগার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ তীব্র ভালো লাগায় অস্থিরতা রয়েছে।’ মাহীন ওর পায়ে ঔষধ লাগানো শেষ করে ব্যান্ডএইড দিয়ে কভার করে দিলো কাটা স্থান। এরপর ফার্স্টএইড বক্সটা গুছিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর গিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। রায়েদ বলল, “সেদিন লিম জুই তোমাকে ফোন করেছিলো তাই না?”

মাহীন ভ্রু কুঁচকে চাইল। বলল, “কোনদিন?”

“সেদিন যখন তুমি একটা আইসক্রিম রেখে গিয়েছিলা।এবং যাওয়ার একটা বাহানা খোঁজার জন্য লিম জুকে বলেছিলা কল দিতে তোমাকে। তাই নয় কি?”

মাহীন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ঠোঁট কামড়াল। তারপর আবার এদিকে ফিরে বলল, “আহ! কে বললো ও ফোন দিয়েছে। আর তোমার এমন কেনোই বা মনে হলো?”

রায়েদ বলল, “আমার যতদূর মনে হয় তোমার মোবাইলে যেই কলটা এসেছিলো সেটা লিম জু দিয়ে সেভ করা আছে। আমার অর্ধেকটা চোখে পরেছিলো।”

“আরেহ ওটা তো অন্য কিছুও হতে পারে। আর আমি কেনোই বা ওর ফোনের বাহানায় সেখান থেকে বের হবো? আর আইসক্রিমটা ভুলবশত ফেলে গিয়েছিলাম।”

মাহীনের সেল ফোনটা এখনো টেবিলের ওপরই রাখা আছে। রায়েদ সেটা ফট করে হাতে নিয়ে বলল,

“সেদিনের কল লিস্ট দেখলেও বোঝা যাবে।”

মাহীন বাঁকা হেসে বলল, “দেখতে পারলে দেখো।”

রায়েদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর মাহীনের সেল ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি রাখল। কিছুক্ষণ পর মাহীন জিজ্ঞেস করল,

“আরেহ আমার ফোন তো লক করা। তুমি করছোটা কী?”
রায়েদ নিরুত্তাপ কন্ঠে বলল, “দশ বার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে ফোন পার্মানেন্টলি লক হয়ে যায়। এইতো আটবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলাম। এখন…ওর কথার মাঝখান দিয়ে মাহীন উৎকন্ঠিত গলায় বলল,

“এই না! একদম আমার ফোন পার্মানেন্টলি লক হলে কিন্তু ভালো হবে না।”

বলে জানালার সামনে ছুটে গেল। কিন্তু রায়েদের হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার পূর্বেই রায়েদ ফোন শুদ্ধ হাত জানালার বাইরে বের করে ধরল। মাহীন উদ্বিগ্নভাবে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

“আরেহ আমার ফোন পরে যাবে তো! এটা যদি কিছু হয় না তাহলে মা আমাকে আর কোনো মোবাইল কিনে দিবে না। দয়া করে ছেড়ো না। আমার আইফোন!” রায়েদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

“আইফোন লেটেস্ট মডেল থার্টিন ম্যাক্স প্রো? তাই ফোনের প্রতি এত ভালোবাসা?”

মাহীন কঠোর গলায় বলল, “ধ্যাৎ আইফোন বলে কথা না। যেকোনো ফোনই তো আর নদীতে শতসহস্র শাপলার মতো ভেসে থাকে না।” বলে রায়েদের অপর হাতের বাহু ধরে ঝাঁকাতে লাগল।

রায়েদ বলল,”আরেহ মাহীন এমন ঝাকাঝাকি করো না। তোমার মোবাইল এমনিই পরে যাবে আমার হাত থেকে।”
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে থেমে গেল। তারপর মুখ গোজ করে বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে। আমি মানছি আমিই লিম জুকে বলেছিলাম আমাকে ফোন করতে। শান্তি?”

রায়েদ মুচকি হাসল এবং হাতটা ভেতরে ফিরিয়ে এনে মোবাইলটা মাহীনের হাতে তুলে দিলো। মাহীন নিজের মোবাইল হাতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মুখ ভারি করে বলল, “তুমি খুব খারাপ কিন্তু”।

রায়েদ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসিটা ঝুলিয়ে রেখেই বলল, “জানি।”

মাহীন বলল, “তুমি সবকিছু এতো নজরে রাখবা আমি ভাবিই নি।”

রায়েদ বলল, “আসলে এটা তোমাকে কখনো বলিনি কিন্তু তুমি আমার দেখা সবচাইতে অদ্ভুত মেয়ে। একটা আইসক্রিমের জন্য কত কি কান্ড করলা।”

মাহীন হাসল। আরেকবার অদ্ভুত ভালো লাগাটা খেলে গেল মনের অন্দরমহলে। রায়েদের দিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভাবল, আহা রায়েদের ডায়মন্ড আকৃতির চেহারা। ঠিক রবার্ট পেটিনসনের মতো। ওহ হ্যা হাসলে তো ওকে অমনই লাগে। বাহ আগে তো খেয়াল করিনি।’ ভেবে হালকা হাসল। রায়েদ সেটা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করল, ‘এখানে বসে তুমি এমন কী ভাবো বলোতো যেটা তোমাকে এত হাসায়।’
‘তুমি রবার্ট পেটিনসনের মতো দেখতে ‘ ফট করে বলে ফেললো মাহীন। রায়েদের চেহারায় হালকা হাসি হাসি একটা ভাব ফুটে উঠলো। মাহীন ভাবল, আমি কি ওকে এখন এটা জিজ্ঞেস করব? ফিফটি ফিফটি চান্স আছে উত্তর পাওয়া আর না পাওয়ার। থাক করেই দেখি। যেহেতু ওর মন মেজাজ এর চাইতে ভালো থাকতে আর কখনো দেখিনি।’ মাহীন ধীরে ধীরে সাবধানে জিজ্ঞেস করল,

“আচ্ছা রায়েদ।”

রায়েদ নিজের চেয়ারে বসে বলল, “হ্যা?”

মাহীনও অপর পাশের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করল,
“পরশু দিনের বাস্কেটবল ম্যাচেও কি আসছো না?”

রায়েদের মুখমণ্ডল থেকে যেন হাসিখুশি ভাবটা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। তবে শান্ত কন্ঠে বলল, “না। এসব কোনো স্কুল ইভেন্টই আমি এটেন্ড করি না।” মাহীন শুধু উপরে নিচে মাথা ঝাঁকাল।

রায়েদ বলল,”আর দয়া করে অদ্ভুত কোনো কান্ড করে বসো না আমাকে ম্যাচ এটেন্ড করানোর জন্য।”

মাহীন বলল,”নাহ এখানে আমি আবার কিই বা করতে পারি।”

রায়েদ বলল,”তোমার কোনো ভরসা নেই। এর আগে এই একই সুরে দুই বার মুখে বলেছো এক কথা, কাজে করেছো আরেক।” তারপর ভাবতে লাগল, ‘ঠিক আছে আমার জন্য এত কিছু যখন করলা হয়তো এরপর আর কোনো কিছুতে ইনভাইট করলে আমি মানা করবো না। অন্তত কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে হলেও একবার তোমার কথা রাখবো।’ মাহীন ওর ব্যাগটা খুলে ভেতরে ফার্স্টএইড কিটটা খুললো এবং নিওস্পোরিন মলমটা বের করল। তারপর রায়েদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আর দয়া করে দিনে তিনবার করে তোমার কাটা স্থানে নিওস্পোরিন লাগিয়ে নিও যতক্ষণ না ক্ষতটা ঠিক হচ্ছে।”
রায়েদ বলল, “হুম তোমার দেখছি আমার ক্ষত নিয়ে আমার থেকে বেশি চিন্তা। তাহলে তুমিই এসে লাগিয়ে দিয়ে যেও তিন-তিনবার। আমার এসব ঔষধ টোষধ ভালো লাগে না।”

মাহীন গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “এবার তো শুধু আমার চোখে পরে গিয়েছিলো বলে লাগিয়ে দিলাম। আমার চোখে না পরলে কারোও জন্য কিছু করে দেইনা। আর চোখে পরবেও না কারণ আমি এখানে আর আসব না।”

এই কথাটা দমকা হাওয়ার ঝাপটার মতো আলোড়ন ফেললো রায়েদের হৃদয়ে। রায়েদ অবাক হয়ে বলল,

“ওহ তাই। আর না আসবার কারণ?”

“কি আবার কারণ? এখানে কেউ আসলে ব্যাপারটা তোমার ভালো লাগে না তাই। আর এই কয়েকদিনে প্রতিবারই প্রয়োজনে এসেছিলাম। এখন তো আর মনে হয় না কোনো প্রয়োজন পরবে।” মুখে এই কথা বললেও চিনচিনে ব্যথার এক তীব্র অনুভূতি স্নায়ুতন্ত্রের শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে গেল। রায়েদ সায় জানিয়ে মাথা নেড়ে পানসে কন্ঠে বলল,

“হুম তাও ঠিক।”

মাহীন উঠে দাঁড়াল। ব্যাগটা কাধে নিয়ে বলল,”আচ্ছা যাই। বোধহয় আমার এবং তোমার দুজনেরই কোনো একটা ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে।”

রায়েদও সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। বলল, “ওহ হ্যা আমারও তো ক্লাস আছে।”

মাহীন চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। একটা কথাই মাথায় আসল, এখানে না আসলে যদি আর ওর দেখা না মেলে। কাজেই সাহস করে পুনরায় পেছনে ফিরে বলল,
“আচ্ছা চলো আমরা একসাথে যাই।”

রায়েদ নিজের ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে বলল, “হ্যা চলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।