এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০১

0
221

#এ_কেমন_ভালোবাসা🤗
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
০১.

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্যের গ্রাম কাজললতা।এখন চলছে শরৎকাল। প্রকৃতি নেমেছ এক অপার সৌন্দর্য্যের লীলা খেলায়।কে কতো বেশি তার ভালোবাসার রং ছড়াতে পারবে।আকাশে মেঘেদের দেখে মনে হয় সমুদ্র সাদা ভেলা গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে আর তার মাজেই উকি দিচ্ছে সূর্যি মামা।নদীর পানিগুলি রোদের কারনে চিকচিক করছে আর তার পাড়েই অসংখ্য কাশফুলের ছড়াছড়ি।অসম্ভব ভালো লাগার মতো মনকারা দৃশ্য।আর এই সুন্দর প্রকৃতির মাজে নিজেকে বিলীন করতে চাইছে এক কিশোরীর মন।তার তাকেই অবাক দৃস্টিতে দেখে যাচ্ছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আদ্র পুরো নাম আদ্র চৌধুরি আয়াশ।বাবা, মার একমাত্র ছেলে সন্তান আদ্র চৌধুরি রাজ অবশ্য তার বোন আছে একটা ছোট নাম ইয়ানা চৌধুরি মাত্র ক্লাস ফাইভ এ পড়ে।চৌধুরি বংশের মেজো ছেলে। চার চাচাতো ভাইদের মধ্যে আদ্র মেজো,তাজবি বড়,মেহেদি সেজো,আর আসিফ ছোট।এইদিকে তাজবির একটু বয়স ডিফারেন্স তাদের থেকে তার বউ ও আছে।তাজবি পারিবারিক ব্যাবসা সামলায়। মেহেদি, আসিফ জমজ ভাই তারা আদ্র থেকে ৬ মাসের ছোট ভাইদের ভাইদের একদম গলায় গলায় ভাব।আদ্র রাগী,জেদি,একঘেয়ি,গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু মেহেদি আর আসিফ পুরো উল্টো ভীষন দুষ্টু তারা।আর তাদের নিয়েই গাড়িতে করে আদ্র ব্যাস্ত আছে তার প্রেয়সীকে দেখতে।এদিকে প্রকৃতিতে মত্ত কিশোরি জানেই না যে কেউ তাকে গভীরভাবে দেখে চলেছে।সে আপন মনে ছুটাছুটি করছে কাশফুলের মাজে। পাশ থেকে নিলার ডাকে সেদিকে তাকায় সে,,
–” কিরে আর কতো ভীতরে যাবি এইবার এইদিকে আয় আর ভীতরে যাস না সাপ থাকতে পারে।জলদি আয় আদিবা।”
নিলার বলা “সাপ আছে” কথাটা শুনে কলিজা শুকিয়ে গেলো আদিবা দ্রুত ছুটলো তাদের দিকে।একদৌড়ে সে রাস্তার উপর ব্রিজে এসে পড়েছে।পিছন থেকে যে তার ২ বান্ধবি ডেকে চলেছে তার খেয়াল নেই।ব্রিজের উপরে উঠে হাপাচ্ছে সে সাপকে প্রচুর ভয় পায় সে। হাপাতে হাপাতে পিছে দিক হাটা শুরু করতে নিলেই চোখ গুলা রসগোল্লা সাইজ বড়বড় আকার ধারন করলো তার হা হয়ে গেছে। ওর দুই বান্ধবি দৌড়ে ওর কাছে এসে ওকে এইভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তানহা বলে উঠে,,

–“কিরে এইভাবে আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে আছিস কেন?”

আদিবা একটা শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলে,,

–” উউউনি ককবে গগগ্রামে এসেছেন?”

আদিবার কথা শুনে নিলা চরম বিরক্ত সে বুজে না আদিবার সমস্যাটা কি আদ্র ভাইয়াকে দেখলে সবাই প্রেমে পড়ে ফিট হয়ে যায় সেখানে এই মেয়ে ভয় পেয়ে কাপাকাপি করতে করতে ফিট হয়ে যায়।নিলা বললো,,

–“,আজ সকালেই এসেছে।আমি বুজিনি এরজম একটা ড্যাসিং ছেলেকে দেখেলে যেখানে সবাই প্রেমে পড়ে যায় আর সেখানে তুই কাপতে কাপতেই আধমরা হয়ে যাস।”

আদিবা নিলাকে করুন গলায় বলে,,

–“উনার হাতের একটা ঢাই কিলোর থাপ্পর খেয়ে দেখিস৷ তারপর চিন্তা করবি প্রেমে পড়বি না-কি কাপাকাপি করবি।”

এইবার আবারো সামনে তাকালো।এখন সে বাড়ি যাবে কিভাবে এই ব্রিজ পার হয়েই তার বাড়ি।সে কাদো কাদো হয়ে তাকিয়ে রইলো।তানহা এগিয়ে এসে তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,,

–“চিন্তা করিস না চল কিছু হবে না।এদিক ওদিক না তাকিয়ে সুরসুর করে সামনে হাটতে থাকবি।”

আদিবা আবারো সামনে তাকায় দেখে লোকটা এখনো তার দিক তাকিয়ে আছে।ভয়ংকর সেই চাউনি। একদম কাপা-কাপি টাইপ দেখলেই আদিবার হার্ট ধরাস ধরাস করতে থাকে।সে তানহা আর নিলার হাত দুটো শক্তভাবে চেপে ধরে হাটা দিলো।চোখ নিচের দিক দিয়েই হাটছে এদিক ওদিক ও তাকাচ্ছে না। ব্রিজের মাজ বরাবর আসতেই আদিবার ডাক পড়ে গেলো।এইবার মনে হয় সে কেদেই দিবে যতো চায় লোকটা থেকে দূরে থাকতে ততোই লোকটা ওকে কাছে ডাকে।কাদো কাদো হয়ে ঠোঁট উল্টে সে তাকালো নিলার দিকে। নিলা অসহায় ভাবে বলে,,

–“যেতেই হবে তোকে বোন নাহলে দেখা যাবে আমাদের তিনজনকেই ব্রিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।”

তানহাও মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,,

–“,ভাইরা ভাইরা রাক্ষস থেকে কম না।”

নিলা দিলো এক ধমক,,

–” তুই চুপ থাক বেশি পটর পটর করিস।”

এদিকে মেহেদি ডেকেই চলেছে,,

–“আদিবায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া ওওওও আদিবায়ায়ায়ায়া।”

অগাধ্য আদিবাকে যেতেই হলো তাদের কাছে।গুটিগুটি পায়ে গিয়ে সামনে দাড়ালো বললো,,

–” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়ারা। ”

মেহেদি আর আসিফ হাসি মুখেই বলে,,

–“ওলাইকুম আসসালাম। ভালো আছো আদিবা”

–” জ্বি ভাইয়া আপনারা কেমন আছেন?”

দুজনেই হাসি হাসি মুখে বলে,,

–” হ্যা আমরা অনেক ভালো আছি।”

আদিবা এইবার আড়চোখে আদ্র এর দিকে তাকালো সে এখন সিগারেট খেতে ব্যস্ত। আদিবা একটু সাহস জুগিয়ে ছোট করে বলে,,

–” আআদ্র ভভভাইয়া আআমি সসালাম দিয়েছি।”

বলেই আবার মাথা নিচু করে ফেললো।আদ্র সিগারেট টায় লাস্ট টান দিয়ে ফেলে দিয়েই আদিবার একটু কাছে এসে বলে,,

–” ওলাইকুম আসসালাম।”

ব্যস আদ্রর মুখের সিগারেট এর ধোয়া আদিবার নাকে মুখে গিয়ে লাগলো।সাথেই সাথেই সে নাক মখ কুচকেই কাশতে শুরু করলো।সেকি কাশি কাশতে কাশতে বেচারির ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।আদ্র জলদি গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে আদিবার কাছে গেলো,

–” পানি খা আদিবা।”

আবারো আদিবা দু-পা পিছিয়ে গেলো কাশতে কাশতেই বলে,

–“দদূরে থথাকুন সসসিগরেট এর গন্ধ আপনার মুখে।আমার ককষ্ট হহচ্ছে।”

ওর অবস্থা দেখে আসিফ বলে,,

–” ভাই তুমি যেও না ওর কাছে পানির বোতল টা তানহাকে দেও।”

আদ্র তানহার কাছে পানির বোতল টা দিলো তানিহা আদিবাকে পানি পান করিয়ে দিয়ে মাথায় পানি ডেলে দিলো।ওরনার একপাশ ভিজিয়ে ওর নাক-মুখ মুছিয়ে দিলো।আদিবা জোড়ে জোড়ে নিস্বাশ নিচ্ছে।ওর প্রচুর কষ্ট হচ্ছে নিশ্বাস নিতে। চেহারাটা লাল হয়ে আছে।নিলা ওকে ধরে রেখেছে। ততোক্ষনে আদ্র একটা স্প্রিট খেয়ে নিয়ে এখন চুইংগাম চিবুচ্ছে যেন গন্ধ চলে যায়।আদ্র এগিয়ে এসে বলে,,

–” তানহা ওকে নিয়ে গাড়িতে বসো আমরা পৌছে দিচ্ছি।”

আদিবা চোখ পিটপিট করে বলে,,

–” আমি ঠঠিক আছি ললাগবে ননা।”

আদ্র ধমকে বলে,,

–” তোকে জিজ্ঞেস করেছি! বেশি কথা বলে ব্রিজ থেকে ফেলে দেবো।”

আদিবার মুখ মূহুর্তেই কালো মেঘে ছেয়ে গেছে লোকটা কোনদিন ও ভালোভাবে কথা বলতে পারে না তার সাথে।শুধু ধমকা ধমকি করে।নিলা, তানহা আদিবা ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।আদ্র আড়চোখ আদিবার দিক তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো সাথে তো তার দুই ভাই আছেই।গাড়ি চলতে শুরু করলো।বেশিক্ষন সময় লাগে না ব্রিজ থেকে যেতে এই ১৫ মিনিট।ড্রাইভ করছে মেহেদি।আদ্র এখনো আদিবার দিক তাকিয়ে। যে এখন আপাতত চোখ বন্ধ করে নিলার কাধে মাথা দিয়ে আছে।বাতাসে তার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে।মায়াভরা মুখ,ডাগর ডাগর চোখ গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোট অসম্ভব রূপবতী। আর তার এই রূপ টাই যে একজনের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তা কি এই রূপবতী জানে।যা নিভাতে সক্ষম একমাত্র সেই।গাড়ি পৌছালো আদিবাদের উঠোনের সামনের রাস্তায়।নিলা আসতে করে ডাক দিলো,

–” আদিবা উঠ এসে গেছি।”

আদিবা আস্তে আস্তে চোখ খুলে “হুম” বলে নামতে শুরু করলো তাকে সাহায্য করলো তানহা আদ নিলা।এইদিকে আদ্র ওর দুই ভাইকে কিছু ইশারা করতেই তারা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমেই ওদের আদিবার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।আদিবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,

–“, এইসব কি ভাইয়া? ”

মেহেদি ৩২ পাটি দাত বের করে বলে,

–” তা আমি তো জানি না। তুমি আদ্র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো?”

আদিবা আড়চোখে তাকালো আদ্র এর দিকে।আদ্র অন্যদিক তাকিয়ে আছে।গম্ভীর স্বরে বলে,,

–” এখন রাস্তাই দাড়িয়ে থাকবি না-কি বাড়ি যাবি?”

আদিবা থতমত খেয়ে আদ্র এর আড়ালে মুখ ভেংচি দিয়ে হাটা দিলো বাড়ির দিক।আদিবা হেলেদুলে হাটছে তার কোমড় অব্দি চুল ঢেউ খেলে যাচ্ছে।আদ্র একদৃষ্টিতে সেদিক তাকিয়ে।আদিবা যে তাকে ভেংচি কেটেছে তা সে স্পষ্ট দেখছে।আদ্র মুচকি হাসলো।আদিবাকে বাড়ির ভিতর ঠুকতে দেখেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো সে।

চলবে,,,