এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০২

0
162

#এ_কেমন_ভালোবাসা🤗
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি

🌺.০২.🌺
জাহানারা বেগম সেই ১ ঘন্টা যাবত চিল্লাচ্ছেন মেয়েকে তৈরি হবার জন্য।কিন্তু আদিবা কিছুতেই তৈরি হবে না।সেধে কি কেউ রাক্ষসের মুখে যায়।তাই সেও নিজের প্রান বাচাচ্ছে রাক্ষসের কাছ থেকে।জাহানারা বেগম হলেন আদিবার মা।আদিবারা ১ বোন,২ ভাই,বাবা আফজাল তালুকদার।গ্রামের ব্যাবসা আদিবার বাবাই দেখে আর বড় ভাই শহরের টা দেখাশোনা করে।ছোট ভাই এখন সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে।
.
আদিবা বসে আছে ঘাটে ঘাপটি মেরে মানে সে কিছুতেই তার মার সাথে যাবে না।দুনিয়া উল্টে গেলেও সে এই বাড়ি থেকে একপাও বাহিরে দেবে না।বুজছেন মাতো আদিবা কেন এমন করছেন।জাহানারা বেগম হলেন আদ্র এর ফুপ্পি মানে আদ্র হলো আদিবার মামাতো ভাই সাথে তাজবি,মেহেদি আর আসিফ তো আছেই।আর আজ আদ্রদের বাড়িতে একটা ছোট খাটো গেট টুগেদার রেখেছন তারা।অবশ্য প্রাই রাখে যখন আদ্র শহর থেকে গ্রামে আসে।আজ আদ্র গ্রামে ফিরেছেন তাই তো এতো এতো আয়োজন।আর সেখানেই যাবে আদিবার পুরো ফ্যামিলি সেখানে আদিবা যাবে না।কিছুতেই না।একগাদা বকেও যখন আদিবাকে নেওয়া গেলো না বাধ্য হয়ে জাহানারা বেগম রওনা হলেন ছোট ছেলে নিয়ে আর আফজাল পরে যাবেন কাজ শেষ করে চৌধুরি বাড়ি সোজা চলে গেলেন।জাহানারা বেগম যেতেই একটা সস্থির নিশ্বাস নিলো আদিবা।

–“যাক বাবা বাচা গেছে!আজকে অন্তত এই রাক্ষস থেকে বাচা যাবে।নিলা আর তানহাকে ফোন দিয়ে আসতে বলি হেব্বি মজা হবে।”

আদিবা খুশিতে গদগদ হয়ে নিলা আর তানহাকে গ্রুপ কল দিলো।কিছুক্ষন রিং হওয়ার পরেই রিসিভ করলো তারা।

–” হ্যালো ফকিন্নি’স!”,হাসি হাসি মুখে বললো আদিবা।

নিলা রেগে বলে,,

–“ভালোভাবে কথা বললে বল নাহলে রাখি।”

আদিবা চেচিয়ে উঠে,,

–“,এই না না আমি তো ভালো মেয়ে ভালোভাবে কথা বলবো।”

তানহা হাই তুলতে তুলতে বলে,,

–“,কি দরকার তাড়াতাড়ি বল।আমার ঘুম পাচ্ছে।”

আদিবা নাক-মুখ কুচকে বলে,,

–” কতো ঘুমাতে পারিস তুই।ঘুম বাদ দিয়ে দুজনেই আমাদের বাড়ি আয়।হেব্বি মজা হবে মা বাড়িতে নেই।”

নিলা ভ্রুকুচকে বলে,,

–“চাচি বাড়ি নেই মানি কোথায় গেছেন?”

আদিবা বিরক্তি নিয়ে বলে,,

–“, চৌধুরি বাড়ি আদ্র ভাইয়া এসেছেন তাই ছোট করে আয়োজন করেছে।”

তানহা অবাক হয়ে বলে,

–“তুই যাস নাই ক্যান তাইলে?”

আদিবা এইবার চরম বিরক্ত হয়ে বললো,,

–“,তোরা দুইটা এমন গোয়েন্দা গিরি শুরু করেছিস কেন?আমি যাবো না কেন তোরা জানিস না।আসলে আসবি না আসলে নাই রাখি। ”

বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো সে।ওদের কথা আর শুনতে ইচ্ছে করছে না তার।আদ্র নাম টা শুনতেই তার বিরক্ত লাগে।আগে স্কুলে পড়াকালিন সব মেয়েরা তাকে জ্বালাতো।বলতো আদ্র না তোর ভাই আমাদের ফোন নাম্বার টা দিবি।আরে ভাই যেখানে সে আদ্র এর নাম শুনলেই হার্ট এট্যাক ওয়ালা কাপা-কাপি শুরু হয়ে যায়।সেখানে আদ্র এর ফোন নাম্বার রাখবে তার কাছে ইম্পসিবল।আদিবা এতো বড় রিস্ক নিতে পারবে না।আর তখন পারবেই না কিভাবে তখন তো তার ফোন ছিলো না।কলেজে উঠেছে আজ ৮ মাস হলো এই ৮মাস ধরে সে ফোন ইউজ করে।অবশ্য তা আদ্রই তাকে দিয়েছে।সে কি কান্নাকাটি সে কিছুতেই আদ্র এর দেওয়া ফোন নিবে না।আগাধ্য এর ৪৪০ ভোল্টের আত্মা উরিয়ে দেওয়া ধমক খেয়ে ফোন নিয়েছে।🤦‍♀।আদ্র যে সিম দিয়েছিলো সেটা ওর বাবাকে দিয়ে আবার নিউ সিম আনিয়েছে।যাতে আদ্র তাকে ফোন দিতে না পারে।কিন্তু ওর নিউ নাম্বার টাও আদ্র পেয়ে যায়।আর এই কাজ ওর বন্ধু নামের শত্রুদের কাজ তা আদিবা ভালো করে জানে।হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজে সেদিকে চলে গেলো আদিবা।দরজা খুলে দেখে নিলা আর তানহা দাড়িয়ে।ওদের ভীতরে আসতে বলে দরজা বন্ধ করে সেও ঘরের ভীতর ডুকে গেলো।
___________________________

চৌধুরি বাড়ি বেশ রমরমা ভাব।বাড়ির বড় কর্তারা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আলাপে ব্যস্ত।তাদের গিন্নিরা অন্যরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।তাজবি কিছুক্ষন পর পর উকি দিচ্ছে সেই রুমে আর ইশারায় তার বউ মানে সামিয়া কে ডাকছে।এতে সামিয়া প্রচুর বিরক্ত।মোবাইলে টুং করে আওয়াজ হলে সামিয়া মোবাইল ওন করে দেখে তার গুনধর স্বামি মেসেজ দিয়েছে যা এরকম,,

” 5 mnt er maje roome dekhte cai..nahole khub kharap hoye jabe”

মেসেজ টা পরে সামিয়া মুখ ভেংচি দিয়ে হাটা ধরলো রুমের দিক।কি লজ্জাজনক ব্যাপার তার ননদ রা মিটিমিটি হাসছে।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে।

.
সবাই যখন কথা বলায় ব্যস্ত।তখনি ধুপ-ধাপ পা ফেলে আদ্র ধরাম করে সোফায় বসে পড়লো।মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে।এলোমেলো চুল, এ্যাশ কালার গেঞ্জির সাথে কালো থ্রীকোয়াটার প্যান্ট।আদ্র চোখ গুলো খানিক ডোলে খানিক চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো তারপর ভ্রু-কুচকে ডেকে উঠলো,,

–“আসিফ,মেহেদি কাম ফাস্ট।”

আদ্র এর বলতে দেরি তার ভাইদের আসতে দেরি নেই।দুজনেই ঝড়ের গতিতে এসে আদ্র এর দু-পাশে বসে পড়লো।আদ্র আবারো বললো,,

–“সবাই এসে গেছে?”

মেহেদি মাথা দুলিয়ে বলে,,

–“হ্যা সবাই এসে গেছে।”

আদ্র আবারো এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো,

–“ছোট ফুপ্পি এসে গেছে?”

আসফি বলে,,

–“হ্যা এসে গেছে।কিন্তু তুমি যার সন্ধান কদছো সে আসে নাই।”

আদ্র এইবার সোজা হয়ে বসে বললো,,

–“আসে নাই মানে ফুপ্পি এসেছে ফুপাই কেও দেখতে পাচ্ছি,ছোট্ট ইমরান টাকেও দেখছি তাহলে সে আসে নাই কেন?”

মেহেদি একটু শ্বাস ফেলে বলে,,

–” ফুপ্পি সেই বকা দিয়েছে আসার জন্য। তাকে বলে টেনেও আনা যায়নি।পণ করেছে আসবে না।

–“কেন?”

আসফি দ্রুত জবাব,,

–” কেন আসবে জানো না?তোমার জন্যই তো আসবে না।তুমি এসেছো তাই আসবে না।”

আদ্র খানিকক্ষন চুপ থেকে বাকা হেসে বলে,,

–“, গাড়ি বাহির কর যা!”

দ্রুপ তার দুই ভাই ছুটলো।আদ্র পাশের টেবিল থেকে একটা ব্রেড নিয়ে মুখে দিয়েই চললো পাশ থেকে ফারজানা মানে আদ্র এর মা চিল্লাচ্ছে,,

–” কোথায় যাচ্ছিস আদ্র।দারা বলছি ব্রেকফাস্ট করে যা!”

কিন্তু কে শুনে কার কথা সে ছুটলো গাড়ি নিয়ে আদিবাকে আনতে।

..
এদিকে ফুল ভলিউমে গান বাজছে,,,

🎶যাই ভুলে যাই পিছু স্মৃতি,
যাই ভূলে যাই গোমড়া মুখি🎶

আর এইগানেই তিন আদিবা,নিলা,তানহা উড়া ধুড়া নাচছে।গানের ভলিউম বেশি হওয়ায় তারা গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাইনি।তাইতো এখনো নেচে যাচ্ছে।আদ্র,আসিফ,মেহেদি গাড়ি থেকে নেমেই এতো জোড়ে মিউজিক এর আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকালো ঘড়ের জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে আদিবা রা গানের তালে তালে নাচ্ছে,সেদিক তাকিয়েই আদ্র বলে উঠে,,

–” এ আবার নাচ ও জানে?আর কতো ভাবে আমাকে ঘায়েল করবে এই মেয়ে!”

সেদিকে তাকিয়ে বাকা হেসেই ঘরের কলিংবেল চাপ দিলো।এইবার আদিবা শুনতে পেয়েছে বেশ অনেক্ষন যাবত কলিংবেজ বাজছে তো তাই।আদিবা নাচতে নাচতেই বলে,,

–” তানহা যা তো কে এসেছে দেখে আয়!”

তানহা মুখ বাকিয়ে চলে গেলো নিলাও ওর পিছুপিছু রুমের দরজা অব্দি গেলো দেখার জন্য কে এসেছে। তানহা দরজা খুলতেই হা করে রইলো এদিকে নিলা চোখ বড়বড় করে দ্রুত মিউজিক বন্ধ করে আদিবাকে বলে,,

–” আদিবারে লুকা তোর রাক্ষস এসেছে?”

আদিবার মনে হয় দিন দুনিয়া ঘুরে গেলো যার জন্য সে ও বাড়িতে যাই নি।সে স্বয়ং এখানে এসে হাজির। কি করবে সে কোন কিছু না ভেবেই এক দৌড়ে সে দোতলায় উঠে গেলো একেবারে দোতলার লাস্ট রুম টায় গিয়ে ডুকলো সে তারাহুড়ো করে কোথায় লুকাবে বুজতে না পেরে আলমাড়ির ভীতরে ডুকে গেলো সে।আদিবা বেচারি ভয়ের চোটে যে দরজা লক করবে তাই ভূলে গেছে।

এদিকে আদ্র আদিবার দৌড় দেখে টেডি স্মাইল দিলো। তানহা এখনো হা করে রয়েছে আসিফ বলে,,

–” কিগো সুন্দরী ভীতরে যেতে দিবা না।”

তানহা মুখ বাকিয়ে দ্রুত সরে গেলো দরজা থেকে।নিলা আড়চোখ একবার আদ্রদের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার উপরে তাকাচ্ছে।মেহেদি এগিয়ে আসে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,,

–” ড্যান্স করার সময় তোমাকে হেব্বি লাগে।”

নিলা এক ঢুক গিলে চলে গেলো অন্য রুমে বিড়বিড়িয়ে বললো,,

–” ভাইরা ভাইরা সব অসভ্য।”

এদিকে আদ্র সোজা উপরে উঠে সেই রুমটাই ডুকলো যেটায় আদিবা আছে ডুকেই এদিক সেদিক তাকালো কিছুক্ষন ভ্রুজোড়া কুচকে গর্জন করে উঠলো,,

–“আদিবা কাম আউট!”

আদিবা প্রাই ভূমিকম্পের মতো কেপে উঠলো আদ্র এর গর্জনে তাও বের হলো না সে।এইবার আদ্র রেগে দাতে দাত চেপে বলে,,

–” ইফ আই ফাউন্ড ইউ দেন ইউ হেভ টু পে ফোর দিছ্ আদিবা!”

এইবার আদিবার কাপা-কাপা একশ ভাগ বেরে গেলো মনে মনে সে বলছে,,

–“ওহ! আল্লাহ সেভ মি ফ্রোম দিছ রাক্ষস!”

ওর মনে মনে দোয়া করা শেষ হওয়ার আগেই আদ্র ধরাম করে আলমাড়ির দরজা খুলে ওকে টেনে বের করে নামালো তারপর ওর গাল গুলা চেপে ধরলো শক্ত করে যেন এখনো ওর গাল এর মাংশপেশি ওর আদিবার চোয়াল ভেদ করে বের হয়ে যাবে,,আদ্র অগ্নিশয্যা হয়ে বলে,,

–” তোর সাহস বেরে গেছে না!চল আমার সাথে আমিও দেখবো এতো সাহস তুই কোথায় পাস।”

আদ্র আদিবার হাত ধরেই টেনে হনহনিয়ে নিচে হাটা ধরলো।আর আদিবা অসহায়ভাবে তার পিছেপিছে চললো।
চলবে,,