এ কেমন ভালবাসা পর্ব-০৪

0
154

#এ_কেমন_ভালবাসা?🤗
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
🌺৪🌺

আস্তে আস্তে চোখ পিটপিট করে তাকালো আদিবা।মাথাটা বড্ড ঝিমঝিম করছে।দু-হাতে মাথা চেপে ধরে উঠতে নিলেই পা নাড়া পড়ায় ” আহহহ” করে উঠলো ওর আওয়াজ পেয়েই সোফা থেকে হুরমুর করে আদিবার পাশে এসে বসলো আদ্র।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো সে,,
—” আদিবা কি হয়েছে? ব্যাথা করছে?কোথায় আমাকে বল।পায়ে আবার ব্যাথা পেয়েছিস?কি হলো বল?”

আদিবা থেকে কো জবাব না পেয়ে আদ্র এইবার জোড়ে অনন্যাকে ডাক দিলো।আদ্র এর আওয়াজ শুনে সবাই আসলো আদিবাকে দেখতে।সবাই এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আদিবা কারো সাথে কথা বলছে না।চোখ বন্ধ করে খাটে হেলাম দিয়ে রয়েছে।এইবার জাহানারা মেয়ের ব্যবহারে রেগে গিয়ে বলেন,,

—“আদিবা এইটা কোন ধরনের অসভ্যতা! সবাই কিছু জিজ্ঞেস করছে উত্তর দে?”

মার কথাহ ছলছল চোখ সবার দিকে তাকায় আদিবা। আদ্র এর বুকটা ধক করে উঠলো আদিবার এহেম চাহনী দেখে।

—” আদিবা কি হয়েছে কষ্ট হচ্ছে না বললে বুজবো কিভাবে?”

আদ্র এর কথার কোন জবাব দিলো না আদিবা।তাজবির দিকে অভীমানি চোখ তাকিয়ে আদিবা বলে,,

—” তোমরা খুব পপপচা ভাইয়া! আমাকে ব্যাথা দিয়েছো?আমি কান্না করার পরেও তোমরা জোড় করে আমাকে ব্যাথা দিয়েছ? আমি কারো সাথে কথা বলবো না।তাজবী ভাইয়া তুমি এমন টা কেন করলে? আদ্র ভাইয়া,মেহেদি ভাইয়া আর আসিফ ভাইয়ার কথা না-হয় বাদ দিলাম।তুমি আমাকে কষ্ট কি করে দিলে?”

বলতে বলতে আদিবা কেদে দিলো।বোনের অভীমানি কথা গুলো শুনে বুক ফেটে যাচ্ছে তাজবীর ওই বা কি করতো আদিবার পা সেলাই লেগেছে ৪ টা না করলে ইনফেকশন হয়ে যেতো।আদিবা আবার বলে,,

—” আহান ভাইয়া থাকলে আমায় একটুও ব্যাথা দিতো না! তোমরা খুব পচা ভাইয়ারা আমি কারো সাথে কথা বলবো না।”

বলেই দু-হাত দিয়ে চোখ মুচ্ছে আর কান্না করছে আদিবা।মেহেদি আর আসিফ বোনের পাশে বসলো।আসিফ বলে,,

—” বোনু ভাইয়ারা এত্তো গুলা সরি তোকে যদি সেন্সল্যাস না করতাম তুই পা সেলাই করতে দিতি।তখন তোর পা আরো ব্যাথা করতো তখন কি করতি সারাজীবন ব্যাথা পা নিয়ে থাকতে পারতি।”

আসিফ এর কথার পেরিপেক্ষিতে আবার মেহেদি বলে,,

—“হ্যা তখন ব্যাথা কিভাবে সজ্য করতি?এখন তো মাত্র ১ সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যাবে?কিন্তু যদি সেলাই না করতি তাহলে সব সময় ব্যাথা করতো?”

আদিবা নাক টেনে দু-হাতে চোখ মুছে ঠোট উল্টিয়ে বলে,,

—” আমি চকোলেট খাবো! আমাকে চকোলেট এনে দিলে মাফ করে দিবো!”

আদিবার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর মায়াপরীর দিকে। এ দেখার যেন শেষ নেই।তাজবী খাটে বসে পিছন থেকে একটা প্যাকেট বাহির করে আদিবাকে দিলো।আদিবা দেখে চকোলেট এর প্যাকেট খুশিতে তাজবীকে জড়িতে ধরতে গিয়ে আবার পায়ে ব্যাথা পায়,,

—” আউউউউউ!! মা গোওও!!”

আদ্র ওকে ব্যাথা পেতে দেখে রেগে বলে উঠলো,,

—” স্টুপিট একটা! পায়ে ব্যাথা তাও এর লাফালাফি কমে না।এখন মন চাচ্ছে তুলে নিয়ে ব্যালকনি থেকে ফেলে দেই।”

আদিবা কাদো কাদো হয়ে বলে,,

—” এই অবস্থাও আপনি আমাকে বকছেন?”

আদ্র দাতেদাত চেপে বলে,,

—” নাহ তুই তো মহৎ কাজ করেছিস তোকে নোবেল দেওয়া দরকার গাধী একটা।”

তাজবী আদ্রকে থামিয়ে বলে,,

—“আহা!! আদ্র বাচ্চা মানুষ করবেই এতো ধমকাস না।”,

আদিবা মিন মিন করে বলে,,

—“রাক্ষস একটা তাই তো সারাদিন আমাকে ধমকায়!”

আদ্র ভ্রু-কুচকে বলে,,

—” মিনমিন করে আমাকে গালি না দিয়ে জোড়ে দে সবাই শুনুক।”

আদ্র এর কথা শুনে আদিবার কাশি উঠে গেলো।ব্যাটার কান না অন্য কিছু! একটা কিছু যতো আস্তে বলুন সে। আদ্র শুনে ফেলবেই।

সবাই আসতে আসতে চলে গেলো আদিবা আর আদ্র কে কথা বলতে দিয়ে।আদিবা হাসফাস করছে।সবাই এই রাক্ষস টার কাছে তাকে কেন রেখে গেলো ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আদিবার।আদ্র অনেক্ষন যাবত তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে শান্ত চোখে।মেয়েটা যখন ব্যাথা চিৎকার দিচ্ছিলো আদ্র এর মন চাচ্ছিলো মরে যেতে।সে আদিবার বিন্দু মাত্র কষ্ট সয্য করতে পারে না।ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে ব্যাথায় কি রকম করছিলো। আদ্র হুট করে আদিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এতোক্ষনে অশান্ত মন টাতে যেন একটা দমকা হাওয়া এসে সব শীতল করে দিলো।বুক টা বড্ড জ্বালা করছিলো।আদিবাকে বুকে নিতেই এক পশলা বৃষ্টির মতো বুকটা জুরিয়ে গেলো।আর আদিবা সেতো পুরো জমে বরফ হয়ে গেছে।মাথা একদম খালি খালি লাগছে।বুকিটা ধরাস ধরাস করছে।কি হলো না হলো কিছু ভেবে পাচ্ছে না।আদ্র আদিবাকে জরিয়ে ধরেই বলে,,

—” কেন বাচ্চামো করিস।আর বাচ্চামো করতে গিয়ে ব্যাথা পাস।তুই বুজিস না তুই সামান্য ব্যাথা পেলেও আমার কলিজাটা ছ্যেৎ করে উঠে! কেন আমাকে জ্বালাস? এভাবে আর কতো পোড়াবি আমাকে?আমার অনুভূতি গুলো কি কিছুই বুজিস না তুই?”

তারপর আদিবাকে ছাড়িয়ে আদিবার কপালে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিলো আদ্র।আদ্র এর স্পর্শ যেন আদিবার পুরো শরীর ঝংকার দিয়ে কেপে উঠলো।পুরো শরীর শিরশির করছে।এটা কি ছিলো তার এমন কেন লাগলো হৃদপিন্ডটা মনে হয় লাফাফে লাফাতে এইবার ব্লাস্ট হয়ে যাবে। হুট করে আদ্র আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক মতো হেলাম দিয়ে বসিয়ে বলে,,

—” এখানে বসে থাক! আমি খাবার নিয়ে আসছি, খেয়ে মেডিসিন নিবি।”

আদিবা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা দুলালো।আদ্র আদিবার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে চলে গেলো।আদ্র এর ছোয়ায় আদিবা যেন ফ্রিজ হয়ে যায়।এমন কেন লাগে তার?ভেবে কূল পায় না সে।”

ওর ভাবনার মাজেই ওর ৩ বোন আর দুই বেস্টি হাজির।আবার তাদের পিছে কোমড় দুলিয়ে হেলেদুলে আসছে সারা। সারা হলো তার খালাতো বোন আর আদ্র এর বড়ো ফুপির মেয়ে। একদম ওভার ন্যাকামো দিয়ে ভরপুর এই মেয়ে।আদিবাকে একটুও দেখতে পারে না।অবশ্য এতেও আদিবার কিছু যায় আসে না।সেও কথা বলে না দরকার ছাড়া শুধু ভদ্রতার খাতিরে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।সারা সোফায় ঢং করে বসে আদিবাকে বলে,,

—” হেই আদিবা হাউ আর ইউ?”

আদিবা হাসি মুখেই বলে,,

—” আলহামদুলিল্লাহ আপু! তুমি কেমন আছো?”

—” এইতো কোনরকম ইউ নো ওয়াট আমি এই গ্রাম একদম পছন্দ করি না।বাট মাম্মা এর জন্য আসতে হলো।ইয়াক!! চারদিকে শুধু ডার্টিনেস এ ভরা।”

আদিবার চরম বিরক্ত লাগছে এই মেয়ের কথা শুনে। গ্রাম পছন্দ না। কিন্তু আদ্র গ্রামে আসলে তো ঠিকিই ঢ্যাংঢ্যাংগিয়ে এখানে এসে পড়ে আবারো ন্যাকামো করে।আদিবা সারাকে মনে মনে কয়েকশো গালি দিয়ে দিলো। সবার কথার মাজেই আদ্র খাবার নিয়ে আসলো।আদ্রকে দেখেই সারা দৌড়ে গিয়ে আদ্র কে জড়িয়ে ধরে বলে,,

—” ওহহ আদ্র আই মিস্ড ইউ সো মাচ!কোথায় ছিলে তুমি আমি তোমাকে কতো খুজলাম।”

সবাই এই দৃশ্য দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো।আদ্র রেগে গেলো মেয়েটা একদম গায়ে পড়া টাইপ ওকে দেখেলেই চিপকে থাকতে চায়।আর একটু হলেই তো খাবার গুলো পড়ে যেতো।আদ্র রেগে দাত সারাকে হেচকা টানে সরিয়ে দাত খিচে বলে,,

—” হুয়াট ইজ দিছ সারা? আমি তোকে কতোবার বলেছি এইভাবে হুটহাট জরিয়ে ধরবি না।আক্কেল নাই তোর সর সামনে থেকে!”

—” হুয়াট’স রোং ইউথ দিছ।শহরে তো সবাই করে একটা হাগ করলে কি ম্যাটার করে আদ্র।”

আদ্র দাতেদাত চেপে বলে,,

—“ফার্স্ট এটা শহর না গ্রাম। আর যে জায়গা হোক আই ডোন্ট লাইক দিছ।এন্ড সেকেন্ড আমি তোর বড় ভাই সো আদ্র ভাইয়া ডাকবি।”

বলেই ধুপধাপ পা ফেলে ধপাস করে আদিবার পাশে বসে পড়লো।ভাত মেখে আদিবার মুখের সামনে ধরতে আদিবা চুপ-চাপ খেয়ে ফেললো।দেখা যাবে এখন আদিবা না খেলে এক থাপ্পরে আদিবার দুনিয়া দারি ঘুরিয়ে দিতো।আদিবাকে আদ্র খাইয়ে দিচ্ছে দেখে সারার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।সে বলে,,

—” তুমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছো কেন আদ্র?ওর পায়ে ব্যাথা হাতে তো না ও তো নিজ হাতে খেতে পারবে।”

সারা’র কথা শুনে আদ্র অগ্নিশর্মা হয়ে তাকায় সারা’র দিকে তারপর বলে,,

—” ও নিজের হাতে খেতে পারবে কি পারবে না তোমার ভাবতে হবে না।আর আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।এনি প্রোবলেম? তোর যদি সমস্যা থাকে ইউ কেন লিভ নাউ!”

বলেই আবার আদিবাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো এদিকে রিক্তা,অনন্যা,জেরিন,তাহমি আর নিলা মুখ টিপে হাসছে।ওদের হাসতে দেখে সারা রেগে হনহনিয়ে চলে গেলো।

—” এর প্রতিশোধ আমি তোর থেকে নেবো আদিবা।আমি বুজিনা আমার মতো একটা সুন্দরি মেয়ে রেখে এই গাইয়া টার ভীতরে কি দেখলো আদ্র। জাস্ট ডিসগাস্টিং।”

চলবে,,,

ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন.।