কি আশায় বাঁধি খেলাঘর পর্ব-১১

0
262

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (১১)

চন্দ্রর মনে হলো মা বাবার সাথে বসে খাবার খাচ্ছে। খেতে বসে চন্দ্র বুঝতে পারলো হাসনাত সাহেব আর মনোয়ারা বেগম অত্যন্ত ভালো মানুষ। শুধু ভালো না,প্রচন্ড ভালো।

হাসনাত সাহেব নিজে চন্দ্রকে খাবার বেড়ে দিলেন।
ইলিশ মাছ প্রিয় হবার পরেও চন্দ্র সবসময় ইলিশ মাছ ইগ্নোর করে যেতো কাঁটা বাছার ভয়ে।কিন্তু এখন খেতে বসে দেখলো সর্ষে ইলিশ রান্না ও আছে।
চন্দ্র গরুর মাংস নিলো।সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস,চিলি চিকেন,ঝাল ঝাল করে আলুভাজি,টমেটো দিয়ে পাতলা ডাল,চিংড়ি মাছ দিয়ে লাউ রান্না,ডিমের কোরমা।

খাবারের মেন্যু দেখে চন্দ্র অবাক হলো।

সাতকরা দিয়ে গরুর মাংসের রান্না এতো বেশি মজা হয়েছে যে চন্দ্র শুধু এটা দিয়েই খেতে লাগলো।
হাসনাত সাহেব এক পিস মাছ তুলে দিলেন চন্দ্রর পাতে।সাথে সাথে চন্দ্রর মুখ শুকিয়ে গেলো।
নিষাদ বিষয়টি খেয়াল করে বললো,”বাবা,জিজ্ঞেস না করে কেনো মাছ দিলে,ওনার হয়তো ইলিশ মাছ অপছন্দ।”

হাসনাত সাহেব নিষাদকে ঝাড়ি মেরে বললেন,”চুপ কর তুই।জ্ঞান দিবি না।জাতীয় মাছ ইলিশ মাছ আর এটা না-কি কারো অপছন্দ। ”

চন্দ্র জবাব দেয়ার আগেই প্রভা বললো,”আংকেল,ও ইলিশ মাছ খায় না কাঁটার ভয়ে।”

হাসনাত সাহেব হেসে বললেন,”এটা কোনো ব্যাপার না।”

নিজ হাতে চন্দ্রকে মাছের কাঁটা বেঁছে দিলেন। আবেগে চন্দ্রর চোখ ভিজে এলো।
নিষাদ তাকিয়ে রইলো চন্দ্রর দিকে তারপর মনে মনে বললো,”শুধু একবার আমার জীবনে আসো,এই কান্না তোমার জন্য নিষিদ্ধ করে দিবো।কান্না তোমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”

চন্দ্রকে কাঁদতে দেখে হাসনাত সাহেব বললেন,”একটা জোকস শুনবে তোমরা? ”

প্রভা উৎসুক হয়ে বললো,”বলুন আংকেল”

“মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতিদিনের মতো সকালে গিয়েছেন রোগীদের খোঁজখবর নিতে। এক নম্বর কক্ষে ঢুকে দেখেন, একজন মাটিতে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা কাটছে। আরেকজন উল্টো হয়ে ছাদের একটা কাঠে পা বেঁধে ঝুলে আছে! চিকিত্সক প্রথমজনকে জিজ্ঞেস করলেন, কী করছেন আপনি?
-কেন দেখতে পারছেন না, আমি একটা কাঠ কাটছি!
-ও আচ্ছা, কাঠ কাটছেন, ভালো কথা। ছাদের জনকে দেখিয়ে বললেন, কিন্তু উনি ছাদে এভাবে উল্টো হয়ে ঝুলে কী করছেন?
-কী আর করবে, সে আসলে নিজেকে একটা বাল্ব ভাবছে।
চিকিৎসক চিন্তিত মুখে বললেন, কিন্তু তার সব রক্ত তো মাথায় চলে এসেছে, ভয়ানক ব্যাপার এটা! আপনি তার বন্ধু হয়েও এটা দেখছেন! তাকে নামানোর চেষ্টা করছেন না কেন? তা শুনে প্রথমজন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে, আরে ধুর, ওরে নামাইলে তো সব অন্ধকার হয়ে যাবে! তখন আমি কাজ করব ক্যামনে?”

চন্দ্র হাসতে হাসতে বিষম খেলো।তড়িঘড়ি করে নিষাদ গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে পানি ফেলে নিজের শরীর ভিজিয়ে ফেললো।

তারপর বোকার মতো চন্দ্রর দিকে তাকিয়ে রইলো। নিষাদের কর্মকান্ডে চন্দ্র অবাক হলো। কিন্তু বুঝতে দিলো না কিছু।চন্দ্রর নিষাদকে কিছুটা চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু মনে করতে পারছে না।
চন্দ্র খাবার শেষ করে বললো,”চাচী,আপনার রান্না অসম্ভব ভালো। ”

মনোয়ারা বেগম বললেন,” তাহলে মা,আজ থেকে তোমরা দুজন আমার বাসায় খাবে।”

চন্দ্র অবাক হয়ে প্রভার দিকে তাকালো। প্রভা নিজেও অবাক। কি বলছেন উনি!

চন্দ্র বললো,”না চাচী,এতো কষ্ট দিতে চাই না আপনাকে।”

মনোয়ারা বেগম গাল ফুলিয়ে কিশোরী মেয়ের মতো অভিমানি গলায় বললেন,”আমাকে আপন ভাবতে পারছো না বুঝি তুমি?
তাই খেতে চাও না আমার কাছে?”

চন্দ্র জিহবায় কামড় দিয়ে বললো,”ছি চাচী,এভাবে বললেন না।আপনি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার প্রতিদানে আমার প্রাণ দিয়ে দিলেও আমি শোধ করতে পারবো না।আমি জানি অন্তত আমার মনে আপনার জন্য কী শ্রদ্ধা,সম্মান,ভালোবাসা জন্মেছে।আপনি ছাড়া কেউ আমাকে এভাবে কাছে টেনে নেয় নি চাচী।আমার বাবা মা মারা গেছেন ছোট বেলায়।তারপর থেকেই আমি হোস্টেলে থেকে বড় হয়েছি।এই জীবনে কেউ এভাবে আমাকে আদর দিয়ে কাছে টেনে নেয় নি চাচী।”

মনোয়ারা বেগম কেঁদে ফেললেন চন্দ্রর কথা শুনে।তারপর চন্দ্রর হাত ধরে বললেন,”তবে আর আপত্তি করো না মা।”

চন্দ্র প্রভার দিকে তাকালো। প্রভা ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো।
চন্দ্র চোখ মুছে বললো,”ঠিক আছে চাচী,আপনার কথাই হবে।”

চন্দ্ররা চলে যেতেই নিষাদ বাবা মা’কে বললো,”একটা কথা বলি বাবা?”

হাসনাত সাহেব বললেন,”বল।”

নিষাদ বললো,”বাবা,এই মেয়েটিই সেই মেয়ে,যাকে আমরা সেদিন পার্কে দেখেছি।একেই আমি ভালোবাসি বাবা।ভাগ্যের কি খেলা বাবা দেখো,যাকে আমি পুরো পৃথিবী খুঁজে বেড়াচ্ছি সে বসে আছে আমার নাকের ডগায়। ”

অতি উত্তেজনায় মনোয়ারা বেগমের প্রেশার বেড়ে গেলো। কি বলছে নিষাদ এসব তার বিশ্বাস হচ্ছে না কোনো।

নিষাদ ফোন থেকে চন্দ্রর প্রথম দিনের ছবি বের করে দেখিয়ে বললো,” এই ছবিটি দেখো।”

হাসনাত সাহেব আর মনোয়ারা বেগম দুজনেই দেখলেন ছবিটি। তাদের বিস্ময় কাটছে না যেনো।একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।
শেষে হাসনাত সাহেব বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ,এতো আনন্দের খবর রে ব্যাটা,আমি কালই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।”

চলবে…..?

লিখা: জাহান আরা