গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-০৬

0
361

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৬
________________

অফিসে নানান ভাবনায় মগ্ন ছিল অভ্র। এমন সময় সেখানে ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসলো তুষার। বললো,

‘ আই এম কামিং অভ্র ভাই,

হুট করে ঝড়ের গতিতে তুষারকে নিজের দিকে আসতে দেখে ভড়কে গেল অভ্র। বললো,

‘ ব্রেক মার তুষার,

তুষার শুনলো। এসে সটান হয়ে দাঁড়ালো অভ্রের টেবিল জুড়ে। সাথে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বললো,

‘ আই এম কামিং ব্রো,

তুষারের কথা শুনে অভ্রও বলে উঠল,

‘ তা তো দেখতেই পাচ্ছি তুই কত জলদি কামিং

প্রতি উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিলো তুষার। তারপর অভ্রের সোজাসুজি চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

‘ তুই জানিস না আমি কতটা এক্সাইটেড বিষয়টায়। অবশেষে তুই ললিতা সুন্দরীকে প্রপোজ করবি কথাটা ভাবতেই খুশিতে আমার বুকটা ফুলে যাচ্ছে।’ উফ অবশেষে ভাই আমার সিঙ্গেল থেকে ডাবল হবে।’

তুষারের কথা শুনে অভ্র হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ তুই তো দেখি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড,

অভ্রের কথা শুনে অভ্রের দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে এক্সাইটেড হয়ে পুরো একশ্বাসে বললো তুষার,

‘ তা নয় তো কি। এখন বল কবে কোথায় কখন কিভাবে প্রপোজ করবি?’

‘ আরে আস্তে আস্তে দম ফেল।’

‘ দম ফেলার টাইম নাই আগে বল কিভাবে প্রপোজ করার কথা ভেবেছিস তুই?’

তুষারের কথা শুনে অভ্র স্বাভাবিক গলায় বললো,

‘ কিভাবে প্রপোজ করলে ভালো হবে বলতো,,

মুহূর্তের মধ্যে অভ্রের কথা শুনে তুষারের এক্সাইটিং ভাবটা কমে গেল। চুপসে গলায় বললো,

‘ এ,, তুই এখনো সেইটাই ভাবিস নি কিভাবে প্রপোজ করলে ভালো হবে।’

উওরে না বোধক মাথা নাড়ায় অভ্র। অভ্রের মাথা নাড়ানো দেখে টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানি খেতে খেতে বললো তুষার,

‘ তুই ঝিমা ভাই মুই যাই।’

তুষারের কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ যাই মানে কোথায় যাবি তুই। শোন আমি একটা হোটেল বুক করেছি রুম নাম্বার ৫০৭। ভাবছি ওই রুমে বসেই প্রপোজটা করে ফেলবো লাবন্যকে। রুমটা সাজানোর কথাও বলা হয়ে গেছে এখন শুরু গেলেই হবে।’

অভ্রের এবারের কথা শুনে তুষার যেন আবার তাঁর এক্সাইটিং ভাবটা ফিরে পেল। বললো,

‘ ওহ তাইলে তো হয়েই গেছে। ললিতা থুড়ি লাবন্যকে আসতে বলেছিস,

‘ হুম,

‘ কখন?’

‘ বিকাল ৫ঃ০০টায়।’

______

ভার্সিটি থেকে আজ খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছে আদ্রিজা। মাথার মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরছে তাঁর। শ্রাবণের সাথে কথা হয়েছে মাত্র এক রাত্রি। এর মাঝে কি এমন সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলছে শ্রাবণ। শ্রাবণের হাবভাব যেন কিছুই বুঝতে পারছে না আদ্রিজা। মোবাইলের শ্রাবণের মেসেজটা আবারো দেখলো আদ্রিজা। একটা বড়সড় হোটেলে যাওয়ার কথাই বলেছে শ্রাবণ। আদ্রিজার মন টানছে না হোটেলে যাওয়ার জন্য। আর এত বড় হোটেলে গিয়ে সে কি করবে? আর বাড়িতেই বা কি বলে যাবে। নানান কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলছিল আদ্রিজা। একবার ভাবলো শ্রাবণকে ফোন করে না বলে দিবে। যে বাসা থেকে যেতে দিবে না। আদ্রিজা ফোনটা হাতে নিলো শ্রাবণের নাম্বারটায় ডায়াল করতে নিলো ঠিকই কিন্তু আবার কোথাও যেন আঁটকে গেল। আদ্রিজা কল না করে মেসেজ দিলো শ্রাবণকে। লিখলো,

‘ আজ না গেলে হয় না শ্রাবণ?’

মেসেজ দেওয়ার কিছুক্ষনের মাঝেই ফোনে কল আসলো আদ্রিজার। শ্রাবণ কল করেছে। আদ্রিজা তুললো ফোনটা। বললো,

‘ হ্যালো?’

আদ্রিজার হ্যালো শুনেই কিছুটা সিরিয়াস ভাবে বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ তোমার কি আমাকে বিশ্বাস হয় না আদ্রিজা?’

তক্ষৎনাত চমকে উঠলো আদ্রিজা। হতাশা ভরা গলায় বললো,

‘ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?’

‘ যা বলছি তাঁর উওর দেও আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না তাই।’

শ্রাবণের কথা শুনে খানিকটা বিষন্নমাখা মুখ নিয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ বিশ্বাস করি না আমি তা কখন বললাম?’

‘ কি বলো নি তুমি?’

‘ আপনি কি রেগে গেছেন আমার ওপর,

প্রতি উওরে চুপ থাকলো শ্রাবণ। শ্রাবণকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ আপনি কি কথা বলবেন না শ্রাবণ।’

এবারও চুপ শ্রাবণ। এবারও শ্রাবণকে চুপ থাকতে দেখে বেশ হতাশ হয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ ঠিক আছে আপনি যা বলবেন তাই হবে আসবো আমি,

আদ্রিজার কথা শুনে খুশি হয়ে গেল শ্রাবণ। খুশি মনেই বলে উঠল সে,

‘ তুমি সত্যি আসবে?’

‘ হুম।’

‘ ঠিক আছে দেখা হচ্ছে বিকেল ৫ঃ০০টায়।’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ হুম।’

‘ ঠিক আছে রাখছি এখন।’

বলেই ফোন কাটলো শ্রাবণ। আর আদ্রিজাও তপ্ত নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

‘ মাঝে মাঝে আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষটাকে খুশি করার জন্য এমন এমন কাজ করে ফেলি যেটা আমাদের জন্য হয়তো ঠিক হয় না। আমরা জানি আমরা ভুল করছি কিন্তু তারপরও ভালোবাসার মানুষটিকে একটু খুশি করার জন্য সেই বেঠিকটাকেই ঠিক বলে মনে করি।’

যেমন আদ্রিজা এখন মনে করছে। আদ্রিজা জানে না শ্রাবণের মনে আসলে কি চলছে? আর কিসেরই বা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলছে সে।’

___

বিকেলে ৪ঃ০০টার কাছাকাছি। ঢাকার বড়সড় একটা ফাইভস্টার হোটেলের রুম নাম্বার ৫০৭ তে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র আর তুষার। তুষার পুরো হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে রুমটা। খুব স্পেশাল ভাবেই সাজানো হয়েছে রুমটা। সাদা বেড সিটটায় পুরো লাভের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে চারপাশ। সাথে সাদা লাল ক্যান্ডেল জ্বলছে চারদিকে। রুমের এমন অবস্থা দেখে অভ্র বলে উঠল,

‘ এত সাজাতে কে বলেছে আমি এখানে প্রপোজ করতে এসেছি নাকি হানিমুন করতে?’

অভ্রের কথা শুনে তুষার পুরো ধ্যানমগ্ন গলায় বললো,

‘ তুই যাই বল রুমটা কিন্তু সাজিয়েছে সেই ভাবে, হাউ রুমেন্টিক। আমি বিয়া করলে এই হোটেলেই হানিমুনে আমু,

তুষারের কথা শুনে অভ্র হতভাগ। হতভাগ হয়েই বললো অভ্র,

‘ আমার তো মনে হচ্ছে হোটেলে না এসে কোনো রেস্টুরেন্টে গেলে ভালো হতো। এত জাঁকজমক চাই নি আমি। আমি শুধু একদম নিরিবিলি জায়গা চেয়েছিলাম যাতে গুছিয়ে লাবন্যকে মনে করা বলতে পারি। রেস্টুরেন্ট বুক করি নি কারন আশেপাশে লোক থাকতো, কোনো নদীর পাড়ে যাই নি কারন লাবন্য পছন্দ করে না। আর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আমিও কিছু বলতে পারতাম কি না সন্দেহ আছে আমার। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই আলিশান ঠান্ডা এসি সমৃদ্ধ রুমটা বুক করেছিলাম একদিনের জন্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি আমি। এসব দেখলে লাবন্য প্রপোজ একসেপ্ট তো দূর আমার সাথে কথা বলাই না বন্ধ করে দেয়। প্রপোজ ক্যান্সেল আমি অন্য আরেকদিন প্রপোজ করবো।’

বলেই চলে যেতে নেয় অভ্র। অভ্রের কাজ দেখে চোখ মুখ কুঁচকে এলো তুষারের। অভ্রের হাত ধরে
হতভাগ হয়ে বললো সে,

‘ তোর কি মাথাটা গেছে কত সুন্দর করে রুমটা সাজালো আর তুই কি না। শোন লাবন্য আমায় মেসেজ দিয়েছিল ও বেরিয়ে পড়েছে হোটেলের কাছাকাছি চলে এসেছে হয়তো। তাই উল্টো পাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে যেটা বলতে এসেছিস সেটা আগে বল। আর লাবন্য আমাদের অচেনা কেউ নাকি বন্ধু আমাদের। তাই প্যারা নাই চিল,

‘ কিন্তু তুষার,

‘ কোনো কিন্তু আজ প্রপোজ করতেই হবে। আচ্ছা আমি গেলাম শোন যেভাবে শিখিয়েছি সেইভাবে বলবি। হাঁটু গেঁড়ে বসে কিনে আনা আংটিটা দিতে ভুলিস না আবার।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল তুষার। সামনে দিয়ে দরজা আঁটকে গেল সে। বিশ্বাস নেই এই অভ্রকে, কে জানে সে বেরিয়ে গেলেই হয়তো বেরিয়ে যাবে রুম থেকে।’

অভ্র তাকিয়ে রইলো তুষারের যাওয়ার পানে। হয়তো তুষার ঠিকই বলছে।’

_____

বড়সড় সেই সেইম ফাইভ স্টার হোটেলের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। বুক কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে তার। এতবড় হোটেলে এর আগে কখনো আসে নি আদ্রিজা। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভেবেই সময় চলে যাচ্ছে তাঁর। অতঃপর অনেক ভেবে চিন্তে নিজের চোখের চশমাটা ঠিক করে তপ্ত নিশ্বাস ভিতরে যেতে নিলো আদ্রিজা।’

এদিকে,

রিসিভশনের একটা মেয়ের কাছে অভ্রের রুমের চাবিটা দিয়ে বললো তুষার,

‘ এক্সকিউজ মি মিস, এই চাবিটা রাখুন। আর শুনুন এক্ষুনি একটা মেয়ে এখানে আসবে আর উনি এলেই রুমের চাবিটা তাঁকে দিবেন।’

উওরে মেয়েটিও বললো,

‘ ঠিক আছে স্যার।’

মেয়েটির কথা শুনে বেশি ভাবলো না তুষার। চটজলদি মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো সে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ভিতরে ঢুকে আদ্রিজা। তবে নিজেদের ভাবনায় মগ্ন থাকায় আদ্রিজা তুষার খেয়াল করে নি একে অপরকে….

#চলবে…..