গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৭+৮

0
404

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৭
________________

খানিকটা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল আদ্রিজা রিসিপশনের কাছে। রিসিপশনের মেয়েটি তখন ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত ছিল। আদ্রিজা আশেপাশে চোখ বুলালো। ঠিক কি বলে চাবি চাইবে এটাই যেন বুঝতে পারছে না আদ্রিজা। জীবনে প্রথমবার একা একা এত বড় ফাইভস্টার হোটেলে এসেছে আদ্রিজা। ভয়ে যেন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। আদ্রিজা অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো শ্রাবণকে কল করবে একটা। শ্রাবণকে কল করার জন্য ফোন বের করবে আদ্রিজা ঠিক সেই মুহূর্তেই রিসিপশনের সেই মেয়েটি কান থেকে ফোনটা সরিয়ে বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ এক্সকিউজ মি ম্যাম?’

আচমকাই কোনো মেইলি কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আদ্রিজা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ ফিরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ জ্বী বলুন,

আদ্রিজার কথা শুনে রিসিপশনের মেয়েটি ভাবলো তুষারের বলা কথাগুলো। কিছুক্ষন ভেবেই তুষারের দিয়ে যাওয়া চাবিটা আদ্রিজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ একচুয়ালি এই চাবিটা ধরুন ম্যাম, স্যার আপনাকে দিতে বলেছিল?’

রিসিপশনের মেয়েটির কথা শুনে বেশ অবাক হলো আদ্রিজা। পরক্ষণেই শ্রাবণের কথা মাথায় আসতেই বেশি না ভেবে চাবিটা নিয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে ধন্যবাদ।’

‘ ম্যানশন নট ম্যাম।’

‘ আচ্ছা কোন দিক দিয়ে যাবো?’

প্রতি উওরে রিসিপশনের মেয়েটি বললো,

‘ ওই সামনের সিঁড়ি দিয়ে তিনতলা, তবে আপনি চাইলে লিফটও ইউস করতে পারেন ম্যাম।’

লিফটে প্রচুর ভয় আদ্রিজার আর একা একা সে কিছুতেই লিফটে উঠবে না যদি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় তখন। আদ্রিজা কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠল,

‘ লিফটের প্রয়োজন নেই আমি সিঁড়ি দিয়েই যাবো ধন্যবাদ আপনায়?’

‘ ওকে ম্যাম।’

অতঃপর আদ্রিজা এগিয়ে গেল। চাবির রিং টায় ৫০৭ লেখা দেখেই বুঝলো আদ্রিজা শ্রাবণ হয়তো ৫০৭ নাম্বার রুমেই তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেছে। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো আদ্রিজা, তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো সে।’

____

৫০৭ নাম্বার রুমের বিছানার পাশে দরজার ঠিক সোজাসুজি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। হাতে তাঁর লাবন্যের জন্য কিনে আনা একটা ছোট্ট নীল রঙের বাক্স যার ভিতরে রয়েছে একটা ডায়মন্ডের ছোট্ট আংটি। অভ্র নীল রঙের বাক্সটা খুলে বের করলো আংটিটা। তারপর হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে জোরে নিশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

‘ জানি না কিভাবে কি শুরু করবো বা কিভাবে বললে তুই বুঝবি আমার মনের কথা। সেই কলেজ লাইফ থেকেই,

না হচ্ছে না, এইভাবে হবে না ভেবেই খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অভ্র। সব গুলিয়ে যাচ্ছে তাঁর। তুষার এতকিছু বলে গেল সব গুলিয়ে যাচ্ছে অভ্রের। এই ভালোবাসি বলাটা যেন সত্যি খুব টাফ। অভ্র বার কয়েক নিশ্বাস ফেললো ঘন ঘন। তারপর আবারো হাঁটু গেঁড়ে বসে আংটিটা দরজার মুখোমুখি রেখে কাল্পনিকভাবে সামনে লাবন্য দাঁড়িয়ে আছে এমনটা মনে করে বলতে শুরু করলো অভ্র,

‘ আমি জানি না আজ আমি আমার অনুভতিগুলো তোকে গুছিয়ে বলতে পারবো কি না বা আমি বললেও তুই বুঝবি কি না। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি হলো আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি লাবন্য। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ?’

অভ্রের ‘লাভ ইউ’ বলার মাঝখানেই সামনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো আদ্রিজা। চোখাচোখি হলো দুজনেই। অভ্রের আই লাভ ইউ বলা লাইনটা সাথে অভ্রের হাতে আংটি দেখে পুরোই চমকে উঠলো আদ্রিজা, সাথে বিষম খেল অভ্র। আকস্মিক এমন ঘটনায় অভ্র আদ্রিজা দুজনেই পুরো অবাক। কারন দু’জনের জন্যই বিষয়টা একদম আনএক্সপেকটেড ছিল। অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে বললো,

‘ মিস ব্ল্যাকবেরি তুমি এখানে?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজাও চমকে উঠলো। বললো,

‘ আপনি এখানে?’

ঠিক সেই মুহূর্তেই সেখানে হতভম্ব হয়ে দৌড়ে আসলো তুষার। বললো,

‘ একটা ঘটনা ঘটে গেছে অভ্র ভা?’

আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে আদ্রিজাকে দেখে চরমভাবে অবাক হয় তুষার। বলে,

‘ তুমি এখানে?’

পর পর তিনজনের একই প্রশ্ন দেখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো তিনজন। আদ্রিজা পুরো শকট হয়েই বললো তুষাকে,

‘ আমারও তো সেইম প্রশ্ন ভাইয়া আপনারা এখানে?’

প্রতি উওরে বেশি না ভেবেই বলে উঠল তুষার,

‘ আমরা তো, ওই অভ্র লাবন্যকে প্রপোজ করবে তাঁর জন্য এসেছিলাম আর কি,

বলতে বলতে ঠোঁটে কামড় দিলো তুষার। আয় হায় এটা কি বলে ফেললো তুষার। তুষার তাকালো অভ্রের দিকে। চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে অভ্র তুষারের দিকে। এই ছেলেটা সবসময় ফটরফটর বেশি করে।’

তুষার এগিয়ে গেল অভ্রের দিকে। বললো,

‘ সরি ভাই। কিছুক্ষন আগে লাবন্য মেসেজ দিয়ে ছিল আমায় হুট করেই ওর বাবার সাথে ওদের গ্রামে বাড়ি যেতে হয়েছে লাবন্যকে তাই আজ ও আসতে পারবে না। তোকে নাকি ফোন করেছিল কিন্তু তুই ধরিস নি তাই আমায় বললো,

এবার অভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ কিন্তু তুই যে কিছুক্ষন আগে বললি ও হোটেলের কাছাকাছি চলে এসেছে সেটা।’

ঠোঁটে কামড় দিলো তুষার। বললো,

‘ তখন মিথ্যে বলেছিলাম ভাই যাতে তুই হোটেল ছেড়ে না যাস।’

তুষারের কথা শুনে অভ্র বলে উঠল,

‘ তা নয় বুঝলাম কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না আদ্রিজা এই রুমে কেন এলো?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা দরজার সামনে দাঁড়িয়েই বলে উঠল,

‘ আমায় তো রিসিপশনের মেয়েটা এই রুমের চাবিটা দিয়ে এখানে আসতে বললো।’

অভ্র অবাক হলো, ভীষণ অবাক হলো। বললো,

‘ রিসিপশনের মেয়েটা তোমায় কেন আসতে বললো।’

এবার তুষার মাথা চুলকালো। তাঁর মানে তখন রিসিপশনের মেয়েটা আদ্রিজাকে চাবিটা দিয়ে ছিল। তুষার শুকনো হেঁসে বললো,

‘ অভ্র ভাই আসলে হয়েছে কি?’

তুষারের হাবভাব আর কথা শুনে অভ্র বলে উঠল,

‘ এখানেও তোর হাত আছে?’

‘ আসলে হয়েছিল কি ভাই তুই যাতে রুম থেকে যেতে না পারিস তাঁর জন্য রুমটা লক করে চাবিটা রিসিপশনের মেয়েটাকে দিয়ে বলেছিলাম লাবন্য আসলে দিতে মেয়েটারও দোষ না আমি বলেছিলাম এক্ষুনি একটা মেয়ে আসলে তাঁকে চাবিটা দিতে আর তখন হয়তো,

অভ্র রেগে গেছে। ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে। এই তুষার অলওয়েজ তাড়াহুড়ো করে তাঁর কাজে ব্যাঘাত গটায়। অভ্র জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। যা দেখে বললো তুষার,

‘ ভাই তুই কি ভীষণ রেগে গেছিস আমি বুঝতে পারছি প্রথমবার প্রপোজ করতে এসে অন্য মেয়েকে প্রপোজ করে ফেলেছিস। কিন্তু আদ্রিজা কিছু মনে করে নি। ও আমাদেরই একজন।’

বলেই আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো তুষার,

‘ তাই না আদ্রিজা তুমি কিছু মনে করেছো বলো অভ্র ভুল করে বলে ফেলেছে সবটা।’

তুষারের কথা শুনে অভ্র তুষারের দিকে তেড়ে যেতে যেতে বললো,

‘ যদি আদ্রিজার জায়গায় অন্যকেউ থাকতো তাহলে আজকে তোর ফটর ফটর বার করছি দাঁড়া তুই সবসময় সবজায়গা তারাহুরো করোস আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন,

‘ সরি ভাই বিশ্বাস কর আমি জেনে বুঝে কিছু করি নি,

‘ কেন করিস নি,

‘ আসলে,

বলেই থেমে যায় তুষার কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুষার দরজার দিকে দৌড়ে যেতে যেতে বললো,

‘ সরি ভাই আমি যাই

বলেই এক প্রকার ঝড়ের গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তুষার। আর তুষারের পিছু পিছু অভ্রও যেতে যেতে বলে উঠল,

‘ তোকে যাওয়াচ্ছি দাঁড়া,

হঠাৎই ঝড়ের গতিতে সাথে রাগ নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিজার সাথে ধাক্কা লেগে যায় অভ্রের। হুট করে এমনটা হওয়াতে পড়ে যেতে নেয় আদ্রিজা। সাথে সাথে তাঁকে ধরে ফেললো অভ্র। আর আদ্রিজাও চোখ বন্ধ করে ঘাবড়ে গিয়ে ধরলো অভ্রের হাত। এমন কিছু ঘটার জন্য সত্যি প্রস্তুত ছিল না সে।’

___

‘ ভয় পাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে এখন চোখ খুলতে পারো মিস ব্ল্যাকবেরি?’

হঠাৎই অভ্রের ভয়েস শুনে চোখ খুললো আদ্রিজা। হুস আসতেই তক্ষৎনাত নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। বললো,

‘ ধন্যবাদ।’

আদ্রিজার কথা শুনে খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো অভ্র,

‘ আর ধন্যবাদ জীবনে প্রথমবার প্রপোজ করতে এসেও, যাক গে বাদ দেও আগে বলো তুমি এখানে কি করছো?’

এমন সময় আদ্রিজার ফোনটায় টুং করে একটা শব্দ হলো। আদ্রিজা দেখলো মোবাইলটা শ্রাবণ মেসেজ দিয়েছে। আদ্রিজা মেসেজটা দেখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি একটু তাড়ায় আছি পরে আপনার সাথে কথা বলবো,,

বলেই রুমের চাবিটা অভ্রের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল আদ্রিজা। আর অভ্র শুধু তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার যাওয়ার পানে,,

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৮
________________

পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা শ্রাবণের বলা রুম নাম্বার ৫০১ এর দিকে। পুরো রুমটাই খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে শ্রাবণ। রুমের ভিতরেই খাটের পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানে। শ্রাবণ আদ্রিজাকে দেখেই খুশি মনে বলে উঠল,

‘ তুমি এসেছো আদ্রিজা সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি,

প্রতি উওরে আদ্রিজা শুকনো হেঁসে বললো,

‘ আমি কি ভিতরে ঢুকবো শ্রাবণ?’

আদ্রিজার কথা শুনে শ্রাবণ কয়েককদম এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ হুম আসো,

আদ্রিজাও এগিয়ে গেল। আলতো পা ফেলে ভিতরে ঢুকতে নিলো সে। দরজার ভিতর দিয়ে ঢুকতেই পায়ে দড়ি জাতীয় কিছু বাজতেই উপর থেকে কিছু গোলাপের পাপড়ি এসে পড়লো আদ্রিজার মাথায়। আচমকা এমনটা হওয়াতে পুুরোই চমকে উঠলো আদ্রিজা। সাথে গায়ে ফুলের পাপড়িদের ছোঁয়া লাগতেই মুগ্ধ হলো সে। অবাক চোখে এগিয়ে যেতে লাগলো আদ্রিজা। পুরো রুমটায় চোখ বুলালো একবার। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে চারপাশ। হঠাৎই আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই শ্রাবণ হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে একটা আংটি এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ তুমি হয়তো অবাকই হয়েছো আমার কাজে। আসলে তোমায় প্রথম যেদিন ভালোবাসি কথাটা বলেছিলাম সেদিন যেন কিছু একটার খামতি ছিল খুব। কারন আমরা যে আমাদের ভালোবাসি দিনটার সেলিব্রেট করতেই ভুলে গেছি। কিন্তু আজ যেন সেই খামতিটা পূর্ন হবে। এই হোটেলটা বুক করার একমাত্র কারন হলো তোমায় মন খুলে ভালোবাসি বলা। সাথে চারদেয়ালের মাঝে থেকে ভালোবাসি দিনটার সেলিব্রেট করা। আই রিয়েলি লাভ ইউ আদ্রিজা। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ, ডু ইউ লাভ মি?’

আদ্রিজা অবাক হলো,ভীষণ অবাক হলো। সে ভাবে নি শ্রাবণ পূনরায় তাঁকে ভালোবাসি বলার জন্য এখানে ডাকবে। আদ্রিজা খুশি হলো শ্রাবণের কাজে। বললো,

‘ ইয়েস আই ডু।’

আদ্রিজার কথা শুনে শ্রাবণ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাতে থাকা আংটিটা পড়িয়ে দিল আদ্রিজার হাতে। আদ্রিজাও পড়লো। খুব খুশি হয়ে বললো,

‘ ধন্যবাদ আপনায়, আমি সত্যি ভাবি নি আপনি এমন কিছু করবেন।’

আদ্রিজার কথা শুনে রহস্যময়ী হাসি দিল শ্রাবণ। মনে মনে বললো,

‘ আমি এমন এমন জিনিস করতে পারি যেটা তোমার মতো মেয়ের জন্য সত্যি কল্পনার বাহিরে মিস আদ্রিজা।’

শ্রাবণের ভাবনার মাঝে আদ্রিজা বললো,

‘ কি ভাবছেন?’

‘ না কিছু না, চলো কেক কেটে আমাদের ভালোবাসার মুহূর্তটা সেলিব্রেট করি।’

শ্রাবণের কথা শুনে আদ্রিজা অবাক হয়ে বললো,

‘ আপনি কেকও এনেছেন শ্রাবণ?’

‘ হুম।’

বলেই আদ্রিজার হাত ধরে সামনের টেবিলটার কাছে নিয়ে গেল শ্রাবণ। আদ্রিজাও গেল, আদ্রিজা দাঁড়াতেই বাক্স থেকে কেকটা বের করলো শ্রাবণ। তারপর ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে কেক কেটে সেলিব্রেট করলো আদ্রিজা আর শ্রাবণ।’

কিছুটা সময় কাটালো দুজন। হঠাৎই শ্রাবণের ফোনটা বেজে উঠল। শ্রাবণ ফোনটা দেখে খানিকটা বিভ্রান্তের পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে মেসেজ লিখলো সে,

‘Just five more minutes, I’m coming darling.

লিখেই পাঠিয়ে দিলো শ্রাবণ। মেসেজ দেওয়ার দু’সেকেন্ডের মধ্যেই রিপ্লে আসলো,

‘ ওঁকে।’

মেসেজ দেখে হাসলো শ্রাবণ। শ্রাবণকে মিটিমিটি হাসতে দেখে বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ শ্রাবণ এখন তো আমায় যেতে হবে?’

আদ্রিজার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো শ্রাবণ। মনে মনে তো এটাই চাইছিল সে। শ্রাবণ খানিকটা মন খারাপ করে বললো,

‘ এখনই যাবে আদ্রিজা?’

‘ হুম এরপর বেশি দেরি হয়ে গেলে মা বকবে।’

‘ ঠিক আছে, তুমি কি একা যেতে পারবে নাকি আমি,

‘ না তাঁর দরকার পড়বে না আমি একাই পারবো।’

‘ ঠিক আছে আমার একটু তাড়া আছে আদ্রিজা,

‘ ঠিক আছে আপনি জান আমিও বেরিয়ে পড়ছি।’

‘ ঠিক আছে পৌঁছে ফোন করো কিন্তু?’

শ্রাবণের কথা শুনে খুশি হয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ ঠিক আছে আপনি যান?’

উওরে শ্রাবণও বেশি কিছু না ভেবে চটজলদি বেরিয়ে যেতে লাগলো রুম থেকে। তবে যাওয়ার আগে আদ্রিজাকে রুমের চাবিটা রিসেপশনিস্টের কাছের ফেরত দিয়ে যেতে বললো শ্রাবণ। পড়ে এসে কথা বলে যাবে শ্রাবণ। আদ্রিজাও বললো ঠিক আছে। শ্রাবণ যেতে যেতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবলো,

‘ তোমার মতো মেয়ের বিশ্বাস পাওয়ার জন্য সামান্য এই সেলিব্রেশনই যেন যথেষ্ট।’

ভেবেই বেরিয়ে গেল শ্রাবন। শ্রাবণ যেতেই নিজের হাতের আংটিটা দেখলো আদ্রিজা। খুশি মনে বললো,

‘ আপনি কি সত্যি আমায় খুব ভালোবেসে ফেলেছেন শ্রাবণ?’

বলেই আনমনে হাসলো আদ্রিজা।’
_____

সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেকক্ষণ আগে। সূর্য্যিমামাও বাড়ি চলে গেছে মাত্র। আকাশটা সাদাকালো রঙে রাঙিত তখন। আর এমন একটা মুহর্তে সুইমিংপুলের পাশে চুপচাপ বসে ছিল অভ্র। মনটা হাল্কা খারাপ তাঁর। জীবনে প্রথম বার কোনো মেয়েকে প্রপোজ করতে এসে এইভাবে হতাশ হতে হলো তাঁকে। অভ্র শব্দ করে নিশ্বাস ফেললো হাতে থাকা আংটি আরেকবার দেখলো সে। এমন সময় পিছন থেকে বলে উঠল কেউ,

‘ আপনি তাহলে আজ লাবন্য আপুকে প্রপোজ করতেই এই হোটেলে এসেছিলেন?

আচমকা কোনো মেইলি কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠলো অভ্র। সাথে সাথে তাঁর হাতে থাকা আংটিটা সুইমিংপুলের মধ্যে পড়ে গেল। আকস্মিক এমন কাজে আদ্রিজা এগিয়ে এলো সামনে। বললো,

‘ আরে এটা কি করলেন আংটি পড়ে গেল তো?’

অভ্র হতাশা ভরা চোখ নিয়ে তাকালো একবার আদ্রিজার মুখের দিকে। সে সত্যি বুঝতে পারে নি আংটিটা পড়ে যাবে এইভাবে। অভ্র নিরাশ হয়েই বললো,

‘ তুমি এখানে বাড়ি যাও নি এখনো?’

অভ্রের কথাটাকে পুরোই ইগনোর করে হতভম্ব গলায় বললো আদ্রিজা,

‘ সেসব পড়ে বলছি আগে আপনি আপনার আংটিটা তো উঠান।’

উওরে শব্দ করে শ্বাস ফেলে বললো অভ্র,

‘ উঠানো লাগবে না। আর তাছাড়া ওটা যার জন্য এনেছিলাম সেই তো আসলো না।’

অভ্রের কথা শুনে হতভাগ গলায় বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ তাই বলে উঠাবেন না, আর লাবন্য আপু তো সারাজীবনের জন্য চলে যান নি আজ নয় কাল ঠিক চলেই আসবে। তখন দিবেন,

আদ্রিজার কথা শুনে মন ভাঙা কন্ঠে বলে উঠল অভ্র,

‘ তখন না হয় আর একটা কিনে আনবো।’

‘ কিনে আনবেন মানে এটা কি পঁচে গেছে নাকি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি এটাকে উঠিয়ে দিচ্ছি।’

বলেই আশেপাশে তাকালো আদ্রিজা। হঠাৎই একটা শক্ত ডালের মতো চিকন লাঠি জাতীয় একটা পাতলা শক্ত পাইপ পেল আদ্রিজা। খুবই চিকন পাইপটা। আদ্রিজা তক্ষৎনাত সেটা হাতে নিয়ে সুইমিংপুলের কাজে এগিয়ে গেল। তারপর নিজের চোখের চশমাটা হাত দিয়ে একবার ঠিক করে চিকন পাইপটা দিয়ে সুইমিংপুলের ভিতর দিয়ে আংটিটা উঠানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পাইপটা লম্বায় সুইমিংপুলের গভীরতা থেকে ছোট হওয়ায় বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। আদ্রিজার কান্ডে অভ্র হতাশ হয়ে বললো,

‘ কি করছো কি তুমি উঠো বলছি। কিছু করতে হবে না ওটা উঠাতে হবে না মিস ব্ল্যাকবেরি?’

অভ্রের কথা শুনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ উঠাতে হবে না মানে মাগনা এসেছে নাকি?’

‘ কিন্তু তুমি যেভাবে উঠাতে চাইছো ওভাবে পারবে না তো।’

‘ পারবো পারবো আপনি টেনশন নিয়েন না। আমার হাতটা ধরুন তো একটু?’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ কি?’

‘ আপনি কি কানে শুনতে পাননা আমার হাতটা ধরুন? আসলে এখানে ধরার মতো কিছু নেই তো আপনি আমার হাতটা ধরলে আমি ঠিক পেয়ে যাবো তাই হাতটা ধরুন আমার,

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র ভাবলো কিছু। অভ্রের ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ কি হলো ধরুন আমার হাত,

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,

‘ হুম ধরছি,

অতঃপর অভ্র ধরলো আদ্রিজার হাত। অভ্র হাত ধরতেই আদ্রিজা খানিকটা সাহস পেল সুইমিংপুলের কাছাকাছি যাওয়ার। আদ্রিজা সুইমিংপুলের দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বলে উঠল,

‘ শক্ত করে ধরবেন কিন্তু ছাড়বেন আবার। আমরা ঠিক আপনার আংটিটা পেয়ে যাবো।’

বলেই সেই চিকন পাইপটা দিয়ে আংটি উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আদ্রিজা। কিন্তু পাইপটা সুইমিংপুলের গভীরতা থেকে খুবই ছোট। আংটিটার কাছাকাছি যাওয়ার জন্য আদ্রিজা আরো ঝুঁকে পড়লো। যা দেখে অভ্র বললো,

‘ কি করছো কি পড়ে যাবে তো?’

উওরে আদ্রিজার একটাই কথা,

‘ পড়বো না। দেখবেন এক্ষুনি আপনার আংটিটা পেয়ে যাবো আমরা,

বলতে বলতে আরো ঝুঁকে পড়লো আদ্রিজা। এবার অভ্রের ভয় হতে লাগলো এই মেয়ে নির্ঘাত আজ সুইমিংপুলের চুবানি খেয়ে ছাড়বে সাথে তাঁকেও খাওয়াবে। অভ্র হাল্কা ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,

‘ সাবধানে মিস ব্ল্যাকবেরি?’

‘ আরে কিছু হবে না,

বলেই আর একটু ঝুঁকতে নিলো আদ্রিজা। সঙ্গে সঙ্গে যা হওয়ার তাই হলো অত্যাধিক হারে ঝুঁকে যাওয়ার কারনে মুখ থুবড়ে সুইমিংপুলের মধ্যে পড়লো আদ্রিজা। অভ্র আদ্রিজার হাত ধরে থাকায় সেও বাঁচলো না ধপাস পড়ে গেল সুইমিংপুলের মধ্যে। তারপর আর কি অভ্র আদ্রিজা দুজনেই নাকানিচুবানি খেতে লাগলো সুইমিংপুলের মধ্যে,,

সময়টা সন্ধ্যা হওয়ায় আশেপাশে তেমন কেউ ছিল না। যার দরুন কেউ এলোও না অভ্র আদ্রিজাকে ধরতে।’

____

চোখ মুখ গরম করে তাকিয়ে আছে অভ্র আদ্রিজার দিকে। আর আদ্রিজা মাথা নিচু করে বসে আছে সুইমিংপুলের পাশে থাকা চেয়ারে। অভ্রও আছে তাঁর পাশের চেয়ারে। বর্তমানে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছচ্ছে তাঁরা দুজনে। কিছুক্ষন আগেই হোটেলের দুজন লোক এসে তাদের হাতে টাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে সেই টাওয়াল দিয়েই চোখ মুখ মুছচ্ছে তাঁরা দুজনে। হঠাৎই অভ্র কর্কশ কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ তোমাকে কতবার বারন করলাম আংটিটা উঠিয়েও না পারবে না ওইভাবে উঠাতে। কেন শুনলে না আমার কথা?’

উওরে আদ্রিজা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল অভ্র,

‘ এখন চুপ কেন আংটি তো উঠাতে পারলেই না উল্টো ভর সন্ধ্যা বেলা এইভাবে সুইমিংপুলে নাকানিচুবানি খাওয়া লাগলো।’

অভ্রের কথার মাঝেই বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ কে বললো আপনায়, আংটিটা উঠাতে পারি নি আমরা?’

অভ্র অবাক হলো, ভীষণ অবাক হলো আদ্রিজার কথা শুনে। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ মানে?’

অভ্রের কথা শুনে নিজের ডান হাত বের করে আংটিটা দেখিয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ মানে এটা।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️