গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৯+১০

0
377

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৯
________________

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র আদ্রিজার হাতের আংটিটার দিকে। সে সত্যি ভাবে নি সুইমিংপুলের চুবানি খেতে খেতেও আদ্রিজা তাঁর আংটিটা উঠাবে। অভ্র অবাক হয়ে আদ্রিজার হাত থেকে আংটিটা নিয়ে বললো,

‘ তুমি আংটিটা উঠিয়েই ছেড়েছো?’

উওরে শুঁকনো হেঁসে বললো আদ্রিজা,

‘ হুম। এত দামের আংটি এমনি এমনি ছেড়ে দিতাম নাকি আর আপনি কত শখ করে লাবন্য আপুর জন্য আংটিটা কিনেছেন এভাবে ছেড়ে দেই কি করে বলুন।’

আদ্রিজার কথা শুনে শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অভ্র আদ্রিজার মুখের দিকে। তবে কিছু বললো না।’

রাতের আকাশ হয়ে উঠেছে তখন কালো। সন্ধ্যা গিয়ে চলে এসেছে রাত। তবে বেশি সময় হয়নি তখন রাত আটটার কাছাকাছি এমন। হঠাৎই ভেজালো অবস্থায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিজা। বললো,

‘ এবার আমায় যেতে হবে?’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ এইভাবে যাবে,

উওরে নিজের দিকে তাকিয়ে কিছুটা নিরাশ গলায় বললো আদ্রিজা,

‘ আর তো উপায় নেই কোনো। আমি তো এখানে জামাকাপড় আনি নি।’

____

অভ্রের বুক করা রুম নাম্বার ৫০৭ এর ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। সাথে অপেক্ষা করছে সে অভ্রের জন্য। কিন্তু অভ্রের খবর নেই। কোথায় গেছে কে জানে। কিছুক্ষন আগেই অভ্র আদ্রিজাকে তাঁর রুমে যেতে বলে যদিও আদ্রিজা প্রথমে আসতে চাই নি। কিন্তু অভ্রের ধমক খেতেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে এসেছে সে। তাঁকে রুমে রেখে কোথাও একটা বেরিয়ে যায় অভ্র। আর সেই থেকেই গায়ে টাওয়াল জড়িয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। হঠাৎই কারো রুমের আসার পায়ের শব্দ পেতেই টনক নড়লো আদ্রিজার। তবে কি অভ্র এসেছে?’

কথাটা ভেবে আলতো পায়ে যেতে লাগলো আদ্রিজার সামনে। কিন্তু কেউ তাঁর দিকেই আসছে বুঝতে পেরে তক্ষৎনাত ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিল আদ্রিজা।’

এদিকে,

হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে অভ্র এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে। তারপর দরজায় নক না করেই বলে উঠল সে,

‘ মিস ব্ল্যাকবেরি তোমার জন্য একটা ড্রেস এনেছি। বিছানার ওপর রাখলাম সেটা পড়ে নিও।’

বলেই হাতের প্যাকেটা বিছানার উপর রেখে চলে গেল অভ্র অন্যরুমে। তাঁকেও ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।’

অভ্র যেতেই আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি ঝুঁকি মারলো আদ্রিজা। আশেপাশে কোথাও অভ্রকে না দেখে বিছানার উপর তাকালো সে। সত্যি সত্যি বিছানার উপর একটা প্যাকেট দেখে বেশি কিছু না ভেবে টাওয়াল জড়িয়ে ধরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো আদ্রিজা। তারপর বিছানার উপর থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আবারো ঢুকে পড়লো সে ওয়াশরুমের মধ্যে।’

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেজালো চুলগুলোকে টাওয়াল দিয়ে ভালো মতো মুছে চুলটা ঠিক করছিল অভ্র। পড়নে তাঁর ওয়াইট শার্ট সাথে ব্লাক জিন্স। মুখে গুন গুন আওয়াজ করছিল সে। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিজা পড়নে তাঁর ব্লাক চুড়িদার, চুলগুলো খোলা আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। সামনের দরজা টপকে সাদা পর্দা সরিয়ে এগিয়ে আসছিল সে। অভ্র আয়নাতেই দেখে আদ্রিজাকে। আদ্রিজাকে দেখেই পিছন ঘুরে তাকায় সে। বলে,

‘ হয়ে গেছে তোমার?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে,

‘ হুম।’

‘ গুড।’

বলেই পুনরায় আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে অভ্র,

‘ আচ্ছা তুমি আমায় এটা বলো তুমি এখানে কি জন্য এসেছিলে?’

অভ্রের কথা শুনে থমকে গেল আদ্রিজা। এখন কি বলবে সে? শ্রাবণের কথা তো কোনোভাবেই বলা যাবে না অভ্রকে তাহলে কি বলবে। আদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বললো অভ্র,

‘ কি হলো তুমি কথা বলছো না কেন?’

অভ্রের কথা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিজা। কিছুটা আমতা আমতা করে হাত কচলাতে কচলাতে বললো,

‘ আসলে,

আদ্রিজা আরো কিছু বলবে ঠিক সেই মুহূর্তেই তাঁর ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের শব্দ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল আদ্রিজা। তক্ষৎনাত একবার অভ্রের দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো সে। উপরে মায়ের নাম দেখে বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুললো সে। বললো,

‘ হ্যালো মা,

আদ্রিজার ‘হ্যালো মা’ শুনেই কর্কশ কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিজার মা,

‘ কোথায় আছিস তুই রাত কয়টা বাজে ঠিক আছে। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবি বলে গিয়েছিলি এখন কটা বাজে।’

বলেই নানা কিছু বলে বকাঝকা করতে শুরু করে আদ্রিজাকে আদ্রিজার মা। আর আদ্রিজা মাথা নিচু করে চুপচাপ সব শুনতে লাগলো। পরক্ষণেই কথার মাঝখানে বলে উঠল সে,

‘ মা আমি এক্ষুনি আসছি।’

আদ্রিজার কথা শুনে আদ্রিজার মাও বলে উঠল,

‘ আধ ঘন্টার মধ্যে বাড়ি না আসলে আজ তোর খবর আছে আদ্রিজা?’

মায়ের কথা শুনে আদ্রিজা আবারো অভ্রের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে অসহায় গলায় বললো,

‘ আসছি মা আসছি আমি।’

বলেই ফোনটা কাটলো আদ্রিজা। তারপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ আমায় যেতে হবে আর দেরি হলে মা আমায় বাসায় ঢুকতেই দিবে না।’

আদ্রিজার কথা শুনে হেঁসে ফেলে অভ্র। অভ্রকে হাসতে দেখে বললো আদ্রিজা,

‘ আপনি হাসছেন আধ ঘন্টার মধ্যে বাড়ি না গেলে খবর আছে আমার তাই আমি যাই।’

বলেই নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো আদ্রিজা। হঠাৎই অভ্র কিছু একটা ভেবে বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ দাঁড়াও,

দরজার বাহিরে যাওয়ার জন্য সবেমাত্র পা রেখেছিল আদ্রিজা। হঠাৎই অভ্রের কন্ঠ শুনে সামনে না গিয়ে পিছনে পা ফেলে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ হুম বলুন?’

‘ আমি তোমায় পৌঁছে দিচ্ছি চল।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা বলে উঠল,

‘ না না তাঁর প্রয়োজন নেই আমি একাই যেতে পারবো।’

‘ তুমি পারবে কি পারবে না সেটা শুনতে চাই নি আমি। তোমায় আমি পৌঁছে দিচ্ছি মানে পৌঁছে দিচ্ছি আর আমার জন্যই তো তোমার লেট হলো তাই আমিই পৌঁছে দিবো তোমায়। চল তুমি?’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল অভ্র। অভ্রের কান্ডে আদ্রিজা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না আর। শেষমেশ কোনো উপায় পেয়ে সেও চললো অভ্রের পিছু পিছু।’

..

আদ্রিজাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো অভ্র। অভ্র গাড়ি থামাতেই নিজের সিট বেল খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসলো আদ্রিজা। তারপর বললো,

‘ আজ তো আমাদের বাড়িতে চলুন, চা বা কফি খেয়ে যাবেন।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র মুচকি হেঁসে বললো,

‘ আজ হবে না, তবে এর পরেরবার আসলে নিশ্চয়ই যাবো।’

‘ আপনি আগের বারও সেইম কথা বলেছিলেন।’

‘ পরের বার আর বলবো না এন্ড থ্যাংক ইউ।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা অবাক হয়ে বললো,

‘ ধন্যবাদ কেন?’

‘ বারে তুমি আমার জন্য সন্ধ্যা বেলা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটলে আমার আংটিটা খুঁজে দিলে ধন্যবাদ তো দিতেই হয়।’

অভ্রের কথা শুনে হেঁসে ফেলে আদ্রিজা। বলে,

‘ ধন্যবাদ তো আমার দেওয়া উচিত আপনায় আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’

‘ ইট’স ওঁকে আজ তবে আসি আবার পরে দেখা হবে মিস ব্ল্যাকবেরি।’

অভ্রের কথা শুনে মুচকি হাসলো আদ্রিজা। বললো,

‘ ঠিক আছে।’

প্রতি উওরে অভ্র আর কিছু না বলে গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে গেল নিজের গন্তব্যের দিকে। আর আদ্রিজা আজও কিছুক্ষণ অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে চললো বাড়ির ভিতরে। না জানি মা আজ কি করে তাঁকে? তবে খুব বেশি বকবে না কারন যা বকা দেওয়ার সব মোবাইলেই দিয়ে ফেলেছে আদ্রিজার মা।’

____

পরন্ত বিকেল বেলা। কফি হাউজের মাঝ বরাবর একটা টেবিল জুড়ে বসে আছে শরীফ,সিফাত, তুলি, বুশরা, আশিক, আরু আর আদ্রিজা। মুলত কফি খেতে সাথে আড্ডা দিতে এসেছে তাঁরা। কফি অর্ডার করাও হয়ে গেছে এখন শুধু আসার অপেক্ষা। এই অপেক্ষার মাঝেই হঠাৎই সিফাত বলে উঠল,

‘ আচ্ছা আমাদের মধ্যে সবার আগে বিয়েটা কে করবে বলতো?’

সিফাতের এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে হতভাগ প্রায় সবাই। আর হতভাগ হয়েই বললো তুলি,

‘ তুই কি আর কোনো প্রশ্ন খুঁজে পেলি না।’

তুলির কথা শুনে সিফাত বলে উঠল,

‘ কেন প্রশ্ন পছন্দ হয় নি?’

উওরে আরু বাদে সবাই একসাথে বলে উঠল,

‘ না।’

সবার একসাথে না শুনে কানে হাত দিলো সিফাত। বললো,

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে অন্য কিছু বলছি। আচ্ছা আমার বিয়ায় তোরা কি গিফট দিবি ক দেহি?’ ভালো ভালো গিফট দিবি কিন্তু যাতে বাসর ঘরে আমি আমার বউরে গর্ব করে বলতে পারি দেখো আমার প্রাণ বন্ধুরা কত ভালো। কত সুন্দর সুন্দর গিফট দিয়েছে আমাদের?’

সিফাতের কথার মাঝখানেই আশিক ফট করে বলে উঠল,

‘ আচ্ছা তোর বিয়ায় একটা বড় বদনা দিমু আনে যাতে তুই আর তোর বউ বাথরুমে গেলেই আমার কথা মনে করতে পারোস।’

আশিকের কথা শুনপ নাক ছিঁটকে বললো বুশরা,

‘ ছিঃ ছিঃ আর কিছু পেলি না শেষে কি না বদনা।’

বুশরার কথা শুনে আশিক বললো,

‘ ওতো নাক ছিঁটকাইও না ওরে একটা দিলে তোরে দুইটা দিমু আনে,

‘ তোর বদনা তুই রাখ।’ (বুশরা)

এদের কথা শুনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো আরু,

‘ হচ্ছে টা কি এটা কফি হাউজ ভুলে গেলি তোঁরা?’

আরুর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল সবাই। সাথে কিছুটা হতাশ হয়ে বললো তুলি,

‘ কি হয়েছে তোর সেই আসার পর থেকেই দেখছি তুই চুপচাপ কিছু কি হয়েছে আরু?’

তুলির কথা বাকি সবাই বেশ জোর দিয়ে বললো,

‘ সত্যি কি কিছু হয়েছে আরু?’

সবার কথা শুনে আরু নিরাশ হয়ে বললো,

‘ কি হবে কিছুই হয় নি।’

আরুর কথা শুনে এবার আশিক বলে উঠল,

‘ ও আমার আরু ছুনা
এভাবে মন খারাপ করে না।
মন খুলে হাসো যদি
বেরিয়ে যাবে সব দাঁতকপাটি।’

আশিকের কবিতা শুনে তুলি ফট বলে উঠল,

‘ মারো তালি,

সঙ্গে সঙ্গে টেবিল জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেল। শুধু হাসলো না আরু। মনটা তাঁর সত্যি খারাপ আজ। আরুকে এখনও হাসতে না দেখে, সাথে আশিকের কবিতা শুনে রাগ করতে না দেখে এবার বেশ সিরিয়াস হলো সবাই। সত্যি বড় সড় কোনো ঘটনা ঘটেছে আরুর সাথে যার জন্য আরু চুপচাপ। কিন্তু ঘটলো টা কি?’

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১০
________________

বেশ চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সবাই আরুর মুখের দিকে। তাঁরা সত্যি বুঝতে পারছে না হুট করে আরুর হলোটা কি?’ সবাই একে অপরের দিকে চোখাচোখি করলো একবার। তারপর সবার মাঝ থেকে আদ্রিজা বলে উঠল,

‘ কি হয়েছে তোর আরু?’

প্রতি উওরে আরু আবারও বলে উঠল,

‘ কি হবে কিছুই হয় নি।’

আরুর জবাব শুনে হতাশ হলো সবাই। সিফাত বললো,

‘ কিছু একটা তো হয়েছেই না হলে তুই আজ এত চুপচাপ কেন?’

‘ সেটাই তো বল না আরু কি হয়েছে তোর?'(বুশরা)

‘ হুম বল আরু আমরা তো তোর বন্ধুই আমাদের না বললে কাকে বলবি বল তো?'( তুলি)

‘ হুম আরু ছুনা প্লিজ বলে ফেলো কি হয়েছে তোমার (আশিক)

এভাবে এঁকে এঁকে সবাই জোর করতে লাগলো আরুকে বলার জন্য। এমন সময় সেখানে দুজন ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেল তাদের। আর আরুও সবার জোড়াজুড়িতে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে বলছি।’

আরুর কথা শুনে সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো আরুর মুখের দিকে। আর সবার চাহনি দেখে নিরাশ হয়েই বললো আরু,

‘ বাবা বলেছে কাল নাকি কোন ছেলে দেখতে আসবে আমায়?’

আশিক সবেমাত্র কফির কাপটা হাতে নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে ছিল। হুট করেই আরুর কথা শোনার সাথে সাথে বিষম খেল সে। সঙ্গে কাশিও উঠে গেল আশিকের। আশিক কাশতে কাশতেই বলে উঠল,

‘ কি তোকে দেখতে আসবে আলহামদুলিল্লাহ বিয়েটা হলে একদম বেঁচে যাবো। আমার কবিতার দুষমন।’

আশিকের কথাটাতে আপাতত কেউ পাত্তা না দিয়ে সিফাত বললো,

‘ সত্যি তোকে দেখতে আসবে আরু?’

সিফাতের কথা শুনে আরুও নিরাশ হয়ে বললো,

‘ হুম মা তো তাই বললো।’

‘ ওহ এই জন্যই মুখ গোমড়া করে বসে আছিস? (আদ্রিজা)

উওরে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো আরু। আরুর মন খারাপ দেখে সবাই এঁকে এঁকে বলে উঠল,

‘ আরে মন খারাপ করিস না। আর দেখতে এলেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।’ (আদ্রিজা)

‘ সেটাই তো প্যারা নাই চিল দোস্ত, (তুলি)

‘ কাল তোরা যাবি তো আমাদের বাড়িতে মা তোদের যেতে বলেছে ( আরু)

আরুর কথা শুনে বেশ এক্সাইটেড ভাব নিয়েই বললো আশিক,

‘ আমি যাবো সবার আগে দেখতে হবে না কোন মহাপুরুষ তোকে দেখতে আসবে।’

‘ হুম যাইস। (আরু)

প্রতি উওরে খুব এক্সাইটেড ভাব নিয়েই গলা ঝেড়ে বললো আশিক,

‘ কাইল আমি বান্ধবীর বাড়ি যামু আলু পটল দই নিয়া,
আমার কবিতার শত্রু, আরু ছুনার নাকি হবে বিয়া।’

মারো তালি।’

আশিকের কথা শুনে মাথায় হাত সবার। এই ছেলে শুধরানোর নয়।’

____

রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে জানালার ধারে চুপচাপ বসে আছে আদ্রিজা। অপেক্ষা করছে সে শ্রাবণের ফোনের। আদ্রিজা ভাবছে অনেক কিছু। এবার হয়তো আরু ওদের তাঁর ভালোবাসা কথা বলে দেওয়া উচিত। আদ্রিজা ভেবে নিয়েছে কাল যখন আরুদের বাড়িতে যাবে তখন সুযোগ বুঝে তাঁর আর শ্রাবণের ভালোবাসার কথাটা বলে দিবে সবাইকে। না জানি তাঁর কথাগুলো শোনার পর সবাই কেমন রিয়েকশন দেয়। হয়তো তাঁরা বিশ্বাসই করতে চাইবে না।
আনমনেই মুচকি হাসলো আদ্রিজা তারপর ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে তাকালো আকাশ পথে। এমন সময় তাঁর ফোনটা বেজে উঠল শ্রাবণ ফোন করেছে। আদ্রিজা ভীষণ খুশি হয়ে ফোনটা তুললো। বললো,

‘ হ্যালো।’

অতঃপর প্রেমআলাপ জুড়ে দিলো দুজন।’

টেবিলের উপর মাথা গুঁজে একটা সুন্দর শোপিচের দিকে তাকিয়ে আছে অভ্র। শোপিচটা লাবণ্য গিফট করেছিল তাঁকে। খুব পছন্দের অভ্রের, সহজে কাউকে ধরতে দেয় না এটা। অভ্র টেবিলের ওপর থেকে মাথা উঠালো। তারপর শোপিচটার দিকে তাকিয়ে নীরব কন্ঠ বললো,

‘ কবে তোকে বলবো ভালোবাসি? কবে মনটা হবে শান্ত। আমি যেন দিনে দিনে ব্যাকুলতার শীর্ষে লাবণ্য। আচ্ছা আমি ভালোবাসি বললে তুইও কি ভালোবাসি বলবি আমায়। কেন যে কাল এলি না তুই। একবার তো আসা উচিত ছিল কত আশা নিয়ে গিয়েছিলাম বলতো। তুই আসলেই খুব বাজে লাবণ্য। খুব বাজে।’

বলেই অভিমানি অভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ধৈর্য্যের এবার বাদ ভেঙে যাচ্ছে তাঁর।’

____

সূর্যের মিটমিট আলোর মাঝে কাঁথা জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে অভ্র। হঠাৎই সূর্যের প্রখর আলো এসে মুখে পড়তেই নড়েচড়ে উঠলো সে। পাশ ফিরে অন্যদিকে ঘুমালো আবার। হঠাৎই কানে ঝুনঝুনাঝুন শব্দ ভেসে আসলো অভ্রের। এতে খানিকটা বিরক্ত হলো অভ্র। কারন এই শব্দের কারনে সে ঘুমাতে পারছে না। ধীরে ধীরে এই শব্দটা যেন আরো প্রখর হলো, ভেসে আসতে লাগলো আরও কাছ থেকে। অভ্র বিরক্ত হলো, ভীষণ বিরক্ত হলো। আর বিরক্ত নিয়েই শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। কোথা থেকে আসছে এই শব্দ কে সকাল সকাল তাঁর ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে দিল। অভ্র কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে শব্দটা খেয়াল করলো কেউ একজন তাঁর রুমের বাহিরেই ঘনঘন শব্দ করে চলেছে। অভ্র বেশি কিছু না ভেবেই চরম বিরক্ত নিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। কোনো ভাবে যদি এই শব্দের পিছনে তুষারের হাত থাকে তাহলে আজ কোনোভাবেই ছাড়বে না তাঁকে। প্রচন্ড রাগ নিয়েই বেরিয়ে গেল অভ্র রুম থেকে। রুম থেকে বের হতেই হঠাৎই তার পায়ের সামনে একটা ধবধবে সাদা রঙের বিড়াল এসে হাজির। সাদা বিড়ালটা দেখে চরম অবাক হলো অভ্র কারন তাদের বাড়িতে সচরাচর কোনো বিড়াল আসে না তাহলে এটা আসলো কোথা থেকে?’ এরই মাঝে সামনের সিঁড়ি বেয়ে কালো জর্জেট থ্রি-পিচ পরে, পায়ে পায়েল পড়ে, চুলগুলো বিনুনি করে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে এক প্রকার দৌড়েই উপরে এগিয়ে আসলো আদ্রিজা। এই সাদা বিলাইটা বড্ড জ্বালাচ্ছে তাঁকে। কি কারনে যে রাস্তা থেকে উঠিয়ে আনতে গেল কে জানে?’

আদ্রিজা সামনের দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে পড়লো চুপচাপ। কারন তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অভ্র আর অভ্রের পায়ের কাছেই রয়েছে কতক্ষন আগে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া পুঁচকে একটা সাদা বিলাই। আদ্রিজা শুঁকনো ঢোক গিললো। কারন কতক্ষণ আগেই আরু বলেছিল তাঁকে,

‘বিড়াল আনছো আর যাই করছো খেয়াল রাখিস অভ্র ভাইয়ার রুমে যেন না যায়। কারন ভাইয়া এইসব পছন্দ করে না। দেখলে কিন্তু ভীষণ রেগে যাবে। তাই সাবধান।’

আরুর কথাগুলো মনে পড়তেই কিছুটা ঘাবড়ে গেল আদ্রিজা। যদিও এখন পর্যন্ত অভ্রের রাগটা দেখে নি সে। আদ্রিজা একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো অভ্রের দিকে।’

এদিকে,

অভ্র তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার দিকে। মেয়েটা যেন বারে বারে কালোতেই তাঁর সামনে আসে। আচ্ছা মেয়েটা কি কালো রঙ খুব প্রচন্ড করে। যতবারই এই মেয়েটাকে দেখেছে অভ্র শুধু কাল বাদে কালোতেই দেখেছে বারে বারে। অবশ্য কাল তো সে নিজেও কালো রঙের চুরিদার এনে দিয়েছিল আদ্রিজাকে। অভ্র তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার আসার পানে, সাথে আদ্রিজার পায়ের দিকটাও খেয়াল করেছে সে। কারন ঝুনঝুনাঝুন শব্দটা তাঁর পায়ের কাছ থেকেই আসছে। অভ্র বুঝলো আদ্রিজা আজ আনকমন একটা জিনিস পড়েছে সেটা হলো পায়েল। কিন্তু এই আনকমন জিনিসটা যে চরম বিরক্ত করছে তাঁকে। অভ্রের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না শব্দটা।’

আদ্রিজা একটু একটু করে এগিয়ে এসে থামলো অভ্রের সামনে। পাল্টা কিছু বলবে তাঁর আগেই বলে উঠল অভ্র,

‘ এই বিড়াল তুমি এনেছো, মিস ব্ল্যাকবেরি?’

আদ্রিজা থমকে গেল অভ্রের কথা শুনে। মাথা নিচু করেই বললো সে,

‘ আমি দুঃখিত। বিশ্বাস করুন বিড়ালটাকে হাজার বার বারন করেছি যাতে ওটা এখানে না আসে ধরেও রেখেছিলাম। কিন্তু বদমাশ বিড়ালটা কথা শোনেনি আমার। দৌড়ে চলেই আসলো। আরো একবার আসায় নিয়েও গিয়েছিলাম কিন্তু আবার হাত থেকে ছুটে চলে আসে এখানে। একবার হাতে পাই দু’দিন খেতে দিবো না। আমাদের পাশের বাসায় একটা মেয়ে বিড়াল আছে ভেবেছিলাম এনে দিবো সেটাকেও আর আনবো বাড়িতে। প্লিজ রাগ করবেন না।’

অভ্র হতভাগ। এতকিছু বলে দিল মেয়েটা। আদ্রিজার লাস্টের কথাগুলো শুনে ভীষণ হাসি পায় অভ্ররের কিন্তু হাসে নি সে। অভ্র বেশ গম্ভীর ভাব নিয়ে বললো,

‘ তোমার বিড়াল যে ভুল করেছে তাঁর শাস্তি হিসেবে তুমি যা বললে তা নয় মানলাম কিন্তু তুমি যে ভুল করেছো তাঁর বেলা।’

আদ্রিজা অবাক হলো, ভীষণ অবাক হলো। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ আমি কি ভুল করেছি?’

‘ কি ভুল করেছো পায়ে কি পড়ে এসেছো তুমি?’

অভ্রের কথা শুনে নিজের পায়ের দিকে তাকালো আদ্রিজা। তেমন কিছু চোখে না পড়াতে বললো সে,

‘ পায়ে কি পড়েছি কই কিছু না তো।’

আদ্রিজার কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো অভ্র,

‘ জানো তো অভ্র মিথ্যে বলা পছন্দ করে না।’

‘ আমি সত্যি বলছি আমি কিছু পড়িনি।’

‘ আবারও মিথ্যে বলে, পায়ে ঝুনঝুন শব্দ করো নি তুমি, আর পায়ে পায়েল পড়েছো কেন?’ জানো কি তোমার এই পায়েলের ঝুনঝুন শব্দে কতটা বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠেছি আমি।’

আদ্রিজা হতভম্ব। সে সত্যি বুঝতে পারে নি অভ্র এতক্ষণ তাঁর পায়েল সম্পর্কে বলছিল। আজ হুট করেই এটা পড়তে মন চাইছিল আদ্রিজার তাই পড়েও নিয়ে ছিল সে। কিন্তু তাঁর এই পায়েল যে কারো ঘুমের বেঘাত ঘটাবে এটা বুঝতে পারে নি আদ্রিজা। তক্ষৎনাত মাথা নিচু করে ফেলে আদ্রিজা। বলে,

‘ আমি সত্যি বুঝতে পারি নি আমার পায়েলে আপনার সমস্যা হবে। আমি খুবই দুঃখিত।’

আদ্রিজায় কথায় কপাল চুলকালো অভ্র। বললো,

‘ কথায় কথায় সরি বলা এটা কি তোমার অভ্যাস মিস ব্ল্যাকবেরি?’

অভ্রের কথা শুনে মাথা উঁচু করলো আদ্রিজা। খানিকটা বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ভুল করলে তো সরি বলতে হয় তাই না।’

‘ হুম তা ঠিক আছে। তবে জানো তো সব ভুলের ক্ষমা হয় না।’

‘ ঠিক বুঝলাম না।’

‘ বেশি বুঝে কাজ নেই আরুর জন্যই এসেছো তো?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে আদ্রিজা,

‘ হুম।’

এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসে তুলি। বলে,

‘ আদ্রিজা কোথায় তুই সেই কখন থেকে খুজচ্ছি তোকে? আরু ডাকছে চল,,,

তুলির কন্ঠ শুনতেই বলে আদ্রিজা,

‘ আমাকে যেতে হবে আরু ডাকছে?’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও বলে,

‘ হুম যাও তোমার বিড়াল নিয়ে যেও কিন্তু?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজাও বেশি না ভেবে বিড়ালটাকে ধরে কোলে তুলে নিলো। তারপর বললো,

‘ আমার বিড়াল আর আমার পায়েলের জন্য আমি খুবই দুঃখিত।’

বলেই চলে যায় আদ্রিজা। আর অভ্রও কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকে আদ্রিজার যাওয়ার পানে। আনমনেই বলে,

‘ এই মেয়েটা যেন বড্ড বেশিই সাদাসিধে।’

অতঃপর অভ্র আর বেশি ভাবলো না। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে চলে যায় তাঁর রুমের ভিতরে….

#চলবে….