গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-১১+১২

0
326

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১
________________

আয়নার সামনে বসে আছে আরু। বিরক্ত লাগছে তাঁর। আরুর এই মুহূর্তে বিয়ে সাদি করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। কিন্তু হুট করে যে কোন হাঁদারাম তাঁকে দেখতে আসছে কে জানে? আরু মন থেকে চাইছে ছেলের যেন তাঁকে কোনোভাবেই পছন্দ না হয়। একবার পছন্দ হয়ে গেলে বিয়েটা আর আটকাতে পারবে না আরু কারন বাবার মুখের ওপর না করার ক্ষমতা আরুর নেই। আরুর ভাবনার মাঝেই কোলে বিড়ালছানা নিয়ে হাজির হলো আদ্রিজা। বললো,

‘ কি রে ডেকেছিলি আমায়?’

আদ্রিজার কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো আরুর। পিছন ফিরে বললো সে,

‘ এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো সেই কখন থেকে ডাকছি তোকে কোথায় ছিলি?’ আর তুলি কই?’

উওরে সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বললো আদ্রিজা,

‘ আর বলিস না বদমাশ বিড়ালটাকে ধরতে ধরতেই দেরি হয়ে গেছে। আর তুলি বাহিরে গেছে বুশরা ওঁরা সবাই এসেছে নাকি। ওদের আনতেই গিয়েছে তুলি।’

আদ্রিজার কথা শুনে আরু অবাক হয়ে বললো,

‘ ওহ। কিন্তু বিড়াল আনতে তোর দেরি হলো কেন?

‘ আর বলিস না হাত থেকে ছুটে গিয়েছিল আর সেটাকে ধরতে ধরতেই এত দেরি।’

‘ কি?’

‘ হুম,

‘ কোনো ভাবে ভাইয়ার রুমে যায় নি তো।’

উওরে আরুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ তা যায় নি কিন্তু?’

‘ কিন্তু কি?’

‘ ওনার রুমের দরজা পর্যন্ত গিয়েছিল।’

‘ ভাইয়া দেখে নি তো তোদের?

‘ দেখছে তো,

‘ কিছু বলে নি?’

‘ না তেমন কিছু বলে নি।’

আরু অবাক হলো আদ্রিজার কথা শুনে। তাঁর ভাই রাগ দেখালো না। হয়তো আদ্রিজা দেখেই রাগ দেখায় নি সে হলে তো এতক্ষণে পুরো বাড়ি মাথায় করতো। আরু তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বললো,

‘ যাক ভালো হয়েছে তবে একটু সামলে রাখিস তোর বিড়াল ছানাকে।’

আরুর কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো আদ্রিজা,

‘ ঠিক আছে।’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো তুলি, বুশরা, সিফাত আর শরীফ। শুধু আসলো না আশিক। আদ্রিজা ওদের দেখেই বললো,

‘ তোরা সবাই চলে এসেছিস?’

উওরে সিফাত বললো,

‘ হুম।’

হঠাৎই আরু বললো,

‘ তোরা সবাই এসেছিস কিন্তু আমাদের কবি মশাই তো এখনো এলো না ও আসবে না?’

আরুর কথা শুনে আদ্রিজাও খেয়াল করলো বিষয়টা। বললো,

‘ সত্যি তো আশিক কেন আসে নি কাল তো দেখলাম ওই সবার আগে আসার কথা বলেছিলো।’

আদ্রিজার কথা শুনে শরীফ বললো,

‘ আর বলিস না সকালে ফোন দিয়েছিলাম বললো হুট করেই ওর কোন বোনের ছেলে না মেয়ে হয়েছে সেখানে গিয়েছে। আসতে চাইছিল কিন্তু আসতে পারে নি।’

শরীফের কথা শুনে আরু বললো,

‘ ভালোই হইছে বান্দরটা আসে নি। আসলেই তো ওর ফালতু কবিতা শোনাতো।’

আশিকের নাম নিলো কি এরই মাঝে আরুর ফোনটা বেজে উঠল উপরে আশিকের নাম দেখে বললো আরু,

‘ শয়তানটার নাম নিলাম আর শয়তানটাই ফোন দিলো।’

আরুর কথা শুনে হাসলো সবাই। বুশরা বললো,

‘ ধর ফোনটা লাউডে দিস আমরাও তো শুনি কি বলে তোকে,

উওরে আরুও বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুলে বললো,

‘ কি হয়েছে?’

আরুর ভয়েস কানে আসতেই আশিক গলা ঝেড়ে বলে উঠল,

‘ ওগো আমার প্রিয়তমা।
আমি দাঁড়ি তুমি কমা,

আশিকের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে দিল। আর আরু বললো,

‘ তুই থাক তোর কমা নিয়ে আমি সেমিকোলনেই ঠিক আছি।’

‘ এভাবে বলে না আরু ছুনা, আজ বাদে কাল হয়ে যাবে তুমি অন্যকারো জানু ছোনা মোনা।’

আশিকের কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করলো আরু। বললো,

‘ এ থামবি তুই তোর ফালতু কবিতা নিয়ে।’

আরুর কথা শুনে হাসলো আশিক বললো,

‘ আরে মজা করছিলাম তো। তা ছেলে পছন্দ হয়েছে।’

প্রতি উওরে আরু কিছু বলার আগেই তুলি বলে উঠল,

‘ ছেলেপক্ষ তো এখনো এসেই পৌছালো না।’

তুলির কথা শুনে আশিক অবাক হয়ে বললো,

‘ আরে কস কি আমি ঢাকা দিয়া বরিশাল চইলা আসলাম আর আরুর জামাই এখন পর্যন্ত আরু গো বাসাতেই যাইতে পারলো না।’

‘ তুই তো আর কথাই কইস না কাল বললি সবার আগে তুই আসবি আরুদের বাসায় আর এখন বরিশাল যাইয়া উঠছোস।’ (তুলি)

‘ আর বলিস না আসার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু কাল রাতে হুট করেই বাবা বরিশাল যাওয়ার কথা উঠালো। আমার দুঃসম্পর্কের এক বোনের মেয়ে হইছে সেখানে আসছি বুঝলি। তবে চিন্তা করিস না কাল বা পরশুর মধ্যেই আসছি আমি। জামাইর ছবি তুলতে ভুলবি না কিন্তু।’

এরই মাঝে আশিকের ডাক পড়লো। আশিক খানিকটা বিস্মিত গলায় বললো,

‘ আচ্ছা এখন তবে রাখি বুঝলি পরে কথা হবে।’

বলেই ফোনটা কাটলো আশিক। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আরুর মা বললেন উনি,

‘ কিরে আরুকে সাজানো কমপ্লিট হয়েছে তোদের ওনারা তো চলে এসেছে।’

প্রতি উওরে আদ্রিজা বলে উঠল,

‘ জ্বী আন্টি হয়ে গেছে।’

‘ খুব ভালো আমি বললেই ওকে নিয়ে আসিস কিন্তু।’

আরুর মায়ের কথা শুনে আদ্রিজাও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ ঠিক আছে আন্টি।’

‘ হুম।’

বলেই বেরিয়ে গেলেন আদ্রিজার মা। আদ্রিজার মা যেতেই নিজের মোবাইলটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মেরে বললো আরু,

‘ ফালতু আমি যাবোই না।’

_____

সিঁড়ি বেয়ে খুব পরিপাটি সাজে নিচে নেমে আসলো অভ্র। সে নামতেই অভ্রের বাবা পাত্রপক্ষের বাবাকে বলে উঠল,

‘ ও হচ্ছে আমার বড় ছেলে অভ্র।’

অভ্রের কথা শুনে পাত্রপক্ষের বাবাও খুশি মনে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ খুব ভালো।’

এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো আরু আর আরুর পাশেই আদ্রিজ নিয়ে আসছে তাঁকে। আর ওদের পিছনে তুলিরাও আসছে। অভ্র তাকালো একবার পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে গিয়ে বসলো বাবার পাশ দিয়ে। আরুকে দেখেই খুশি মনে বললো আরুর বাবা,

‘ আর এই হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে আরু। বিএ অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে এখন।’

আদ্রিজা আরুকে বসিয়ে দেয় ছেলের সোজাসুজি থাকা সোফাটায়। আরু মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে বিরক্ত লাগছে তাঁর। আসার একদম ইচ্ছে ছিল না তাঁর মায়ের জোরাজোরিতে আসতে হয়েছে তাঁকে।’

অতঃপর দেখা সাক্ষাৎ হলো দু’পক্ষের মাঝে। আরু একপলক দেখেছিল ছেলেকে তাঁর ভালো লাগে নি। কিন্তু ছেলের হাবভাব দেখে যা বুঝলো আরু তাঁকে ছেলের ভালো লেগেছে হয়তো।’

____

অভ্রের রুমের আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে আদ্রিজা। কারন তাঁর বদমাশ বিড়াল ছানাটা আবার কোথাও একটা চলে গেছে। আর সেটা এদিকেই দৌড়ে এসেছে আবার। আদ্রিজা বুঝে না এই বদমাশ বিড়ালটা বার বার এদিকেই কেন আসে। আজ একবার ধরতে পারলে বদমাশটাকে আর ছাড়বে না আদ্রিজা। ভালোই হচ্ছিল তখন রাস্তায় গাড়ির নিচে পড়তে নিয়েছিল ভালোবেসে বাঁচিয়ে সত্যি যেন ভুল করেছে আদ্রিজা। পাত্রপক্ষ চলে গেছে সেই কখন এখন সেও বাড়ি ফিরবে কিন্তু এই বদমাশ বিড়ালটার জন্য তাও পারছে না। কোথায় যে গেল বান্দরটা?’ — ভেবেই আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো আদ্রিজা। কিন্তু কোথাও দেখতে পেল না সেটাকে। হঠাৎই আদ্রিজার চোখ গেল অভ্রের রুমের খাটের তলার দিকে। বিড়ালটা সেখানেই বসে আছে চুপচাপ। আদ্রিজা বিড়ালটার কান্ডে অবাক হয়ে বললো,

‘ দেখছো ধলা বিলাইটার কান্ড আর জায়গা পেল না যে রুমটায় আসতে বারন করেছি সেটাতেই এসে বসে আছে।’

আদ্রিজা পড়লো মহা বিপদে এখন কি করবে সে। আরু তো বার বার বারন করেছিল তাঁকে বিড়ালটা যাতে অভ্রের রুমে না যায়। কিন্তু এই বদমাশ বিড়ালটা তো অভ্রের রুমে ঢুকেই বসে আছে। আদ্রিজা পায়চারি করতে লাগলো অভ্রের রুমের দরজার সামনে। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এটা ভেবে কনফিউশানে ভুগছে সে। এইভাবে হুট করে পারমিশন ছাড়া কারো রুমে ঢোকাটা তো অন্যায়। কিন্তু আর তো উপায়ও নেই।’

নিচের সব কাজ সেরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো অভ্র। আজ তুষার না থাকায় খুব একটা ভালো লাগছে না অভ্রের। অভ্র বুঝলো না তুষার আজ আসলো না কেন? সেই যে হোটেল থেকে ভয়ের চোটে পালিয়ে ছিল তারপর আর দেখাই হয় নি অভ্রের সাথে তুষারের। অভ্র ভাবলো রুমে গিয়ে একবার ফোন করবে তুষারকে। ছেলেটার বক বক না শুনলে ভালো লাগে না অভ্রের।’

হঠাৎই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই আবারো সেই ‘ঝুনঝুনাঝুন’ শব্দটা কানে ভেসে আসলো অভ্রের। শব্দটা কানে আসতেই অভ্র বুঝলো আদ্রিজা হয়তো উপরে আছে। কিন্তু আরু আর ওর বন্ধুরা তো সবাই নিচে আছে তাহলে এই মেয়ে একা উপরে কি করছে। অভ্র খানিকটা কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে চললো উপরে।’

আদ্রিজা অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো অভ্রের রুমে ঢুকবে সে। কারন আর কোনো উপায় নেই এছাড়া। আদ্রিজা জোরে নিশ্বাস ফেলে ভিতরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হবে হবে এমন সময় পিছন থেকে বলে উঠল অভ্র,

‘ মিস ব্ল্যাকবেরি তুমি একা এখানে কি করছো?’

আচমকাই অভ্রের ভয়েস শুনে খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিজা। পিছন ফিরে সত্যি সত্যি অভ্রকে দেখে খানিকটা ভীতু গলায় বললো সে,

‘ আপনি চলে এসেছেন?’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ কেন আমার আসা বারন ছিল নাকি?’

অভ্রের কথা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিজা। বিস্মিত গলায় বললো সে,

‘ এমা না না তা কেন হবে আপনার রুম, আপনাদের বারন কেন থাকবে?’

‘ তাহলে বললে যে,

আদ্রিজা কাঁপছে, সাথে হাতও কচলাচ্ছে। সাথে ভাবছে সকালে রাগ না দেখালেও এবার নির্ঘাত রেগে যাবে অভ্র। সাথে তাঁকেও কথা শোনাবে অনেক। মনে মনে হাজারটা গালাগালি করলো আদ্রিজা তাঁর বিড়াল ছানাকে।’

আদ্রিজাকে কাঁপতে দেখে বেশ অবাক হয়েই বললো অভ্র,

‘ কিছু কি হয়েছে আদ্রিজা?’

উওরে আহত দৃষ্টিতে তাকায় আদ্রিজা অভ্রের দিকে। আদ্রিজার চাহনী দেখে আবারো বলে উঠল অভ্র,

‘ কিছু কি হয়েছে? তুমি কি ভয় পাচ্ছো কোনো কারনে? কি হয়েছে বলো আমায়?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা বেশি না ভেবে ফটাফট করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ফেলে,

‘ আমি খুব দুঃখিত। সকালেও আমার জন্য আপনার ঘুমে বেঘাত ঘটলো, এখন আবার আপনার রুমের বাহিরে ঘুরঘুর করছি। বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি আমার ওই বদমাশ বিড়ালটা আবার আপনার রুম চলে গেছে। সকালে তাও আপনার রুমের বাহিরে ঘুর ঘুর করেছিল। কিন্তু এখন সাহস বেড়ে আপনার রুমে ঢুকে গেছে। প্লিজ রাগ করবেন না। আমি একবার ওটাতে সামনে পেলে খুব করে বকে দিবো। আর জীবনে কোনোদিন ওটাকে আপনাদের বাড়িতে আনবো না। আমি সত্যি খুব দুঃখিত, আই এম সরি। প্লিজ রেগে যাবে না।’

পুরো একশ্বাসে কথাগুলো বলে দম ছাড়লো আদ্রিজা। আর অভ্র আদ্রিজার কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে বললো,

‘ কি?’

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২
________________

খানিকটা বিস্মিত মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে অভ্র আদ্রিজার মুখের দিকে। কারন সে সত্যিই বুঝতে পারে নি আদ্রিজার ফরফর করে বলা কথাগুলো। অভ্র তাঁর বিস্মিত গলা নিয়ে আবারো বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ কি বললে তুমি? আমি ঠিক বুঝে নি আবার বলো।’

অভ্রের কথা শুনে হতাশ হলো আদ্রিজা। আবারো ফরফর করে কিছু বলতে নিবে। তার আগেই অভ্র বলে উঠল,

‘ এই আস্তে আস্তে বলো কেউ লড়াচ্ছে না তোমায় তাই ধীরে সুস্থে আস্তে আস্তে বলো।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজাও নিজেকে শান্ত করে ভয়ার্ত গলায় আস্তে আস্তে বলে উঠল,

‘ আসলে হয়েছে কি আপনার রুমের খাটের তলায় আমার সেই বদমাশ বিলাইটা ঢুকে পড়েছে। এখন আপনি কি খুব রেগে গেছেন। বিশ্বাস করুন আমি বদমাশ বিড়ালটাকে বার বার বারন করেছিলাম কিন্তু শোনে নি আমার কথা। এখন আপনি কি আমায় একটু হেল্প করবেন আপনার রুম থেকে বের করতে। আমি ওঁকে নিয়েই চলে যাবো।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র এগিয়ে গেল তার রুমের দরজার সামনে সত্যি সত্যি তাঁর খাটের তলায় আদ্রিজার বিড়ালটাকে বসে থাকতে দেখে চরম অবাক হলো অভ্র। এই মুহূর্তে যদি আদ্রিজার জায়গায় অন্যকেউ থাকতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে রেগে আগুন হয়ে যেত অভ্র। কিন্তু এই মুহূর্তে রাগটা যেন আসছে না। সকালেও আসে নি, কেন যেন আদ্রিজার ওপর রাগটা আসে না অভ্রের।’

অভ্র খানিকক্ষণ চুপ রইলো। অভ্রকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমতা আমতা করে বললো আদ্রিজা,

‘ আমি কি যাবো আপনার রুমে, বিশ্বাস করুন কিছু করবো না জাস্ট বিড়াল ছানাটাকে আপনার খাটের তলা থেকে নিয়ে চলে আসবো।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে তবে মাথায় রেখো কোনো জিনিসের ক্ষতি যেন না হয়।’

‘ হবে না আমি আপনায় কথা দিচ্ছি।’

উওরে শুঁকনো হেঁসে বললো অভ্র,

‘ ঠিক আছে যাও।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজাও খুশি মনে বললো,

‘ ধন্যবাদ আপনায়।’

এতটুকু বলে অভ্রের রুমের ভিতর ঢুকে পড়লো আদ্রিজা। আর অভ্র সেও ভিতরে ঢুকে দরজা পাশ দিয়ে দাঁড়ালো চুপচাপ।’

আদ্রিজা ভিতরে ঢুকে নিচে বসে ডাকলো বিড়াল ছানাকে। কিন্তু বদমাশ বিড়াল ছানাটা কথা শুনছে না আদ্রিজার। অন্যসময় হলে আদ্রিজা খাটের তলায় ঢুকে বের করতো বিড়ালটাকে কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় যার একমাত্র কারন হলো অভ্র তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে। আদ্রিজা আবারো বিড়াল ছানার দিকে নিজের হাতটা বারিয়ে দিয়ে বললো,

‘ আমায় কাছে আয় বিড়াল ছানা তুই এলেই আমরা বাড়ি চলে যাবো, প্লিজ আয়? তোকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে আইসক্রিম, চকলেট,ললিপপ খাওয়াবো নে। তারপরও প্লিজ আয় জানু।’

আদ্রিজায় কথায় একচুলও নড়লো না বিড়ালটা। বরং আরো আয়েশ করে শুয়ে পড়লো খাটের তলায়। বিড়ালের কান্ডে চরম হতাশ আদ্রিজা।’

এদিকে,

আদ্রিজার কান্ড আর কথা শুনে চরম হাসি পাচ্ছে অভ্রের। না চাইতেও হেঁসে ফেললো সে। অভ্রের হাসি দেখে আদ্রিজা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনি হাসছেন কেন?’

উওরে অভ্র আদ্রিজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ হাসবো না তো কি করবো লাইক সিরিয়াসলি ব্ল্যাকবেরি তুমি আইসক্রিম ,চকলেট, ললিপপ এর লোভ দেখিয়ে বিড়াল ছানাকে বের করতে চাইছো।’

‘ বলবো না তো কি করবো বলুন সেই কখন থেকে বসে আছে আপনার রুমের খাটের তলায় বেরই হচ্ছে না। এরপর না বের হলে আমি এটাকে রেখেই চলে যাবো বাড়ি,

আদ্রিজার কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বললো অভ্র,

‘ হুম এটা হবে না মিস ব্ল্যাকবেরি। একই তো রুমটা আমার আর আমার রুমে কোনো বিড়ালকে ট্রলারেট করবো না আমি। সো বাড়ি গেলে এটাকে নিয়েই যেতে হবে তোমায়?’

অভ্রের কথা শুনে হতাশ হয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ কিন্তু ওটা তো বের হচ্ছে না।’

‘ সেটা আমি কি জানি। আমি কি বলেছিলাম তুমি বিড়াল ছানা নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসো। আর এখন যখন নিয়েই এসেছো তখন ওটা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে তোমায়।’

অভ্রের কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিজা অভ্রের দিকে। তবে কিছু বললো না। আর এমনিতেও আদ্রিজা বিড়ালটাকে রেখে যেত নাকি। ওই কথাটা তো এমনি বলেছিল মাত্র।’

আদ্রিজা বেশি না ভেবে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে খাটের যে দিকটায় বেশি জায়গা নিয়ে বসে আছে বিড়ালটা সেদিকে চলে গেল। এইবার বিড়ালটাকে ধরেই ছাড়বে সে। আদ্রিজা ওদিকে যেতেই পুুঁচকে বিড়াল তার টুনটুনে ছোট্ট পা নিয়ে বেরিয়ে গেল খাট থেকে চলে যায় অন্য সাইডে। বিড়ালের কান্ডে আদ্রিজাও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ তবে রে বদমাশ বিড়াল, আজকে তো তোকে ধরেই ছাড়বো আমি।’

বলেই বিড়ালের পিছনে ছুট লাগায় আদ্রিজা। আদ্রিজা যত এগোচ্ছে বিড়ালটাও গোল হয়ে ঘুরছে পুরো রুমে।’

আদ্রিজা আর বিড়ালের কান্ড দেখে প্রচন্ড বেগে হাসি পাচ্ছে অভ্রের। পুঁচকে বিড়ালটা চরম ভাবে খাঁটিয়ে মারছে আদ্রিজাকে।’

হঠাৎই পুুরো রুম ঘুরতে ঘুরতে খাটের কোনায় পা লেগে পড়ে যেতে নেয় আদ্রিজা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর থেকে মাত্র কয়েক কদম দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অভ্র দৌড়ে গিয়ে ধরলো তাঁকে। আকস্মিক এমন কান্ডে আদ্রিজার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিস্মিত আর ক্লান্তিকর চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে অভ্রের মুখের দিকে। অভ্রও তাকিয়ে রয় আদ্রিজার চোখের দিকে।’

আদ্রিজা পায়ের আঙুলে ব্যথা পেয়েছে। খাটের কোনার সাথে বারি খেয়ে আঙুল ফেটে রক্ত বেরিয়ে গেছে তাঁর। প্রচন্ড যন্ত্রনা সাথে জ্বলছে তাঁর পা। বর্তমানে অভ্রের খাটে উপর চুপচাপ বসে আছে সে। অভ্রই তাঁকে বসিয়ে দিয়ে গেছে মাত্র।’

কিছুক্ষন আগে নিজেদের হুস আসতেই আদ্রিজা তক্ষৎনাত অভ্রকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে নেয় সাথে সাথে পায়ের আঙুলে ব্যাথা লাগতেই ‘আহ’ বলে শব্দ করে ওঠে। আদ্রিজার কান্ডে অভ্র এগিয়ে গিয়ে দেখে তাঁকে। আদ্রিজার বাম পায়ের আঙুল কেটে গেছে দেখেই পুরো চমকে উঠলো অভ্র। তক্ষৎনাত আদ্রিজাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কোথাও একটা যায় সে। বর্তমানে সেই আঙুল কাটা নিয়েই বসে আছে আদ্রিজা। আর তাঁর থেকে কিছুটা দূরে অভ্রের রুমের টেবিলের নিচে বসে আছে বিড়ালটা। আদ্রিজা সেটার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তোর জন্য ব্যাথা পেলাম তো দেখিস একবার তোকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হই তারপর তোকে রাস্তায় রেখেই চলে যাবো আমি। বদমাশ বিড়াল উফ কি ব্যাথা পাইছি পা টা এখনো ঝিম ধরে আছে।’

এমন সময় হাতে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এগিয়ে আসলো অভ্র। আদ্রিজা অভ্রকে দেখেই মাথা নিচু করে বসে রইলো। আদ্রিজার কান্ডে অভ্র গম্ভীর ভাব নিয়ে বললো,

‘ এখন মাথা নিচু করছো কেন?কিছুক্ষন আগে তো বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বললে কিছু হবে না। এখন কি হলো?’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা মাথা নিচু করেই বললো,

‘ সে তো আপনার রুমের কিছু হবে না সেটার কথা বলেছিলাম।’

‘ চুপ করো। এইভাবে কেউ বিড়ালের পিছনে ছুটে। মনে তো হচ্ছিল দুজন মিলে ছোঁয়াছুয়ি খেলার প্রাকটিস করছিলে।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবে বেশিক্ষণ চুপ না থেকে বললো,

‘ আমার কি দোষ বলুন ওই বদমাশ বি,,

আদ্রিজা আর কিছু বলার আগেই ওর কথার মাঝখানে ধমক দিয়ে বললো অভ্র,

‘ একদম অন্যের নামে দোষ দিবে না যেমন তুমি তেমন তোমার বিড়ার ছানা।’

অভ্রের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায় আদ্রিজা। দ্বিতীয়বারের মতো মুখ খুলে কিছু বলার সাহস হয় নি তাঁর। আদ্রিজাকে চুপ হতে দেখে অভ্রও আর কিছু না বলে ফাস্ট এইড বক্সটা খুলে স্যাভলন, মলম আর ব্যান্ডেজ বের করে আদ্রিজার ক্ষত স্থানটাকে পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছিল।’

অভ্রের কাজে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আদ্রিজার। সাহস করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলেই অভ্র বলে উঠলো তাঁকে,

‘ আমার কাজে কেউ ব্যাঘাত ঘটাক এটা আমি পছন্দ করি না মিস ব্ল্যাকবেরি?’

সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজা চুপ হয়ে গেল। কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারলো না সে।’

আচমকাই স্যাভলন ছোঁয়ার স্পর্শ পেতেই পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আদ্রিজার ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো তাঁর পা। তবে কিছু বললো না। খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো তক্ষৎনাত। আদ্রিজার কান্ডে অভ্র শান্ত দৃষ্টিতে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ জ্বলছে খুব?’

অভ্রের কথা শুনে চোখে খুলে তাকালো আদ্রিজা। তারপর শুরুতে হা বোধক মাথা নাড়ালেও পরক্ষণেই মাথাটাকে ডানে বামে নাড়িয়ে না বললো আদ্রিজা। আদ্রিজার কান্ডে হতভাগ অভ্র। এই মেয়েটা এমন কেন ব্যাথা পাচ্ছে তারপরও না বলছে। অভ্র আদ্রিজার পায়ে স্যাভলন আর মলম লাগিয়ে পায়ের আঙুলে ব্যান্ডেজ করতে করতে বললো,

‘ তুমি যদি কাউকে তোমার যন্ত্রনার কথা বা তুমি কারো কাজে আঘাত পাচ্ছো এটা যদি মুখ ফুটে না বলো তাহলে কিন্তু সেই মানুষটা তোমায় বার বার আঘাত করতেই থাকবে। কারন সে বুঝতে পারবে তোমার সহ্য ক্ষমতা হয়তো অনেক। সাথে বার বার তোমায় আঘাত করে মজা নিবে সে। কিন্তু সে এটা বুঝবে না তোমার সহ্যের ক্ষমতা অনেক থাকলেও যন্ত্রণাটা কিন্তু দ্বিগুণ হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই যন্ত্রণার পাল্লা আরো বাড়বে। আর জানো তো মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে আঘাত করে বেশি।
তাই কারো কাজে আঘাত পেলে মুখ ফুটে বলতে শিখো। প্রতিবাদী হও। কেননা আঘাতে আঘাতেই মানুষ একদিন নিঃস্ব হয়ে যায় মিস ব্ল্যাকবেরি?’ তাই সব ক্ষেত্রে চুপ থাকাটা বা মিথ্যে বলাটা নেহাতি বোকামি।’

আদ্রিজা অবাক হলো ভীষণ অবাক হলো অভ্রের কথা শুনে তবে কিছু বললো না। শুধু চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে অভ্রের মুখের দিকে।’

_____

পুঁচকে বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছে আদ্রিজা। সাথে ভাবছে অভ্রের বলা কথাগুলো। আজ অভ্র যা যা বললো তাঁর একটা কথাও মিথ্যে নয়। সে নরম বলে কত মানুষের কত কথা শুনেছে তাঁর হিসাব নেই। কিন্তু আদ্রিজা সেসব কিছুই মনে রাখে নি। কারো কথায় আঘাত পেয়েছে, নিরালায় একলা কেঁদেছে তারপরও মুখ ফুটে কখনো কাউকে কিছু বলে নি। সেদিন যখন শ্রাবণকে ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েছিল আদ্রিজা তখনও শ্রাবণের এক বান্ধবী না না কিছু বলে হাসি ঠাট্টা করেছিল তাঁকে নিয়ে। আদ্রিজা সেসব ভেবে আজ আনমনেই বললো,

‘ আমি কি তবে চুপ থেকে সত্যিই ভুল করি?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️