গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-১৩+১৪

0
334

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৩
________________

কলিংবেল বাজতেই মা এসে দরজা খুলে দিলো। দরজার সামনে আদ্রিজা আর ওর হাতে পুঁচকে বিড়ালছানাকে দেখে অবাক হয়ে বললো আদ্রিজার মা,

‘ এটা কি?’

প্রতি উওরে একগাল হেঁসে বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ কেন বিড়াল।’

আদ্রিজার কথা শুনে আদ্রিজা মা গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো,

‘ এটা বিড়াল তা আমিও জানি। কিন্তু এটাকে কোথা থেকে এনেছিস তুই?’

মায়ের কথা শুনে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো আদ্রিজা,

‘ পেয়েছি এক জায়গা আর এখন থেকে এটা আমার কাছেই থাকবে মা?’

‘ তোর কাছে থাকবে মানে তাড়াতাড়ি এটাকে যেখানে পেয়েছিস সেখানে রেখে আয়।’

মায়ের কথা শুনে নিরাশ হলো আদ্রিজা। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বললো,

‘ তুমি এমন করো কেন মা। আজ থেকে ও আমাদের সাথেই থাকবে।’

‘ এর আগের বার যেটাকে এনেছিলি সেটা কোথায় গেছে ভুলে গেলি?

‘ ভুলে নি মা কিন্তু ও যাবে না।’

‘ তোর কানে কানে বলেছে নাকি ও যাবে না। আগের একটা বিড়ালের জন্য পাশের বাসার ভাবির কম কথা শুনিনি আমি। তাড়াতাড়ি এটাকে যেখানে পেয়েছিস সেখানে রেখে আয়।’

‘ তুমি এমন করো কেন মা থাকুক না কি হবে।’

‘ কি হবে মানে আগেরটার মতো এটাও যদি পাশের বাসার ভাবির রুমে ঢুকে মাছ চুরি করে খায় তখন।’

‘ খাবে না মা। আর আগেরটা বড় ছিল এটা তো পুঁচকে। আমার রুম থেকে বেরই হবে না দেখো। প্লিজ এইবারে মতো এটাকে রেখে দেও। আমি কথা দিচ্ছি আর বাড়িতে কোনো বিড়াল আনবো না। প্লিজ প্লিজ এটাকে রেখে দেও মা।’

মেয়ের মিনতির স্বরের কথা শুনে হাল্কা মন গলে আদ্রিজার মায়ের। বলে,

‘ ঠিক আছে তবে এটাই কিন্তু লাস্ট।’

মায়ের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় আদ্রিজা। ফট করেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলে সে,

‘ আমার মিষ্টি মা।’

‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন বল পাত্রপক্ষ কি বললো আরুকে পছন্দ হয়েছে তাদের।’

‘ সামনাসামনি কিছু বলেনি। তবে আরুর বাবাকে বলেছে ফোন করে পরে জানাবে।’

আদ্রিজার কথা শুনে আদ্রিজার মা শুধু এতটুকুই বলে,

‘ ওহ।’

‘ হুম মা। এখন বলো তো আজ রান্না কি কি করছো আমার খুব খিদে পেয়েছে।’

আদ্রিজার কথা শুনে আদ্রিজার মাও বেশি না ভেবে বললো,

‘ তোর পছন্দের গরুর মাংস রান্না করেছি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার বারছি।’

উওরে আদ্রিজাও আর কথা না বাড়িয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে।’

এতটুকু বলে বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো আদ্রিজা।’

_____

রাত বারোটার কাছাকাছি।’

রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আরু। মনটা বড়ই উতলা তাঁর। কারন কিছুক্ষন আগেই মায়ের মুখে শুনেছে পাত্রের বাবা নাকি আরুর বাবাকে ফোন করে বলেছে আরুকে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁরা আরুকে তাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চায়। আর এই কথাটা শোনার পর থেকেই মনটা অস্থিরতার শীর্ষে আরুর। কিছুতেই বুঝতে পারছে না কি করলে তাঁকে আর ওই হাঁদারাম মার্কা ছেলেটাকে বিয়ে করতে হবে না। হঠাৎই কিছু একটা করার বুদ্ধি আসলো আরুর মাথায় তক্ষৎনাত সে ফোন লাগালো আশিকের নাম্বারে। কারন এই মুহূর্তে কেউ হেল্প করতে পারলে আশিকই পারবে। প্রথম কলেই ফোনটা ধরে ফেললো আশিক। আরুর ফোন করেছে দেখেই চমকে অবাক হয়ে বললো,

‘ আজ সূর্য কোনদিক দিয়ে গেল বলতো তুই আমায় ফোন দিয়েছিস? আমার কবিতা শুনতে মন চাইলো নাকি।’

বিরক্ত হলো আরু আশিকের কথা শুনে। বিরক্ত নিয়েই বললো সে,

‘ তুই কি কবিতা ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা বলতে পারিস না।’

‘ আচ্ছা আজ আর কবিতা বলবো না বল কি হয়েছে এত রাতে ফোন দিলি জরুরি কিছু।’

উওরে হতাশা ভরা গলাতেই বললো আরু,

‘ হুম জরুরি তো। দোস্ত আমার তোর হেল্প লাগবে?’

আরুর কথা শুনে আশিক অবাক হয়ে বললো,

‘ হেল্প লাগবে কি হেল্প?’

‘ তুই আসছিস কবে?’

‘ কাল সকালে বাসে কেন বলতো।’

‘ গুড তাড়াতাড়ি আসিস দোস্ত।’

‘ তা নয় আসলাম কিন্তু হেল্পটা কিসে লাগবে?’

উওরে আশিককে কিছু বলে আরু। আরুর কথা শুনে আশিক চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ কি? না না আমি এসব করতে পারবো না।’

‘ প্লিজ প্লিজ দোস্ত এমন করে বলিস তুই হেল্প না করলে কি করে হবে বল।’

আরুর মিনতি শুনে আর না করতে পারলো না আশিক। বললো,

‘ ঠিক আছে তবে তোমায়ও আমায় কথা দিতে হবে বিয়েটা যদি ভেঙে যায় তাহলে আগামী এক মাস নিরদ্বিধায় আমার কবিতা শুনতে হবে তোকে।’

আশিকের কথা শুনে আরুরও বেশি না ভেবে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে।’

‘ ঠিক আছে। এবার তো তবে আরু ছুনার বিয়ে ভাঙতেই হবে।’

প্রতি উওরে শুধু শুকনো হাসে আরু।’

____

সকালে অফিস যাওয়া সময় বাড়ি থেকে বের হতেই আদ্রিজার সাথে সাক্ষাৎ হলো অভ্রের। দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকছি আদ্রিজা আর ভিতরে ঢুকতে নিচ্ছিল আদ্রিজা। দুজনেই মুখোমুখি হলো আবার। আদ্রিজা আজও ব্ল্যাক পড়েছিল। ব্লাক গোল ফ্রক সাথে লেডিস জ্যাকেট। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, সাথে চুলগুলো বাধা। অভ্র সত্যি বুঝে না এই মেয়েটা কালোই বেশি পড়ে কেন? কোনোদিন সুযোগ মিললে নিশ্চয়ই প্রশ্নটা করবে সে। অতঃপর দুজনের মাঝে চোখাচোখি হতেই অভ্র প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো,

‘ পায়ের ব্যাথা কমেছে তোমার মিস ব্ল্যাকবেরি?’

উওরে আদ্রিজাও মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ হুম।’

আদ্রিজার কথা শুনে শুধু হাল্কা হাসে অভ্র। আর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল সে বাড়ি থেকে। আর আদ্রিজাও বেশি কিছু না ভেবে ঢুকে পড়ে ভিতরে।
চুপচাপ বসে রয় সোফায়। আর অপেক্ষা করতে লাগলো আরুর জন্য।’

___

সময় চলছিল সময়ের মতো। আর আদ্রিজা অভ্রের জীবনও চলছিল তাদের মতো। আদ্রিজা ধীরে ধীরে শ্রাবণের প্রতি হয়ে যাচ্ছিল আসক্ত। তার ভালোবাসা হয়ে যাচ্ছিল গভীর থেকে আরো গভীরও তর। রোজ ভার্সিটি ফাঁকি দিয়ে এদিক সেদিক যাওয়া, রাত জেগে ফোনে কথা বলা, সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্রাবণের ‘গুড মর্নিং’ মেসেজ আর রাতে শ্রাবণের ‘গুড নাইট’ মেসেজ পাওয়াই ছিল আদ্রিজার দৈনন্দিন জীবনের রুটিনের একটা অংশ। এই দুইটা ছাড়া যেন তাঁর দিন শুরু আর রাত শেষই হয় না। শ্রাবণের বিষয়টা অনেকবারই আরুদের বলতে চেয়েছে আদ্রিজা কিন্তু পারে নি। যতবারই বলতে চেয়েছে ততবারই কোথাও না কোথাও আঁটকে পড়েছে সে। বার বার মনে হয়েছে শ্রাবণের কথা বললে ওঁরা বিশ্বাস করতে চাইবে তো তাঁকে। আদ্রিজা নিজেও জানে না বলতে কেন পারছে না সে তাঁর ভালোবাসার কথা তাঁর বন্ধুমহলদের কাছে। আরুরও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেই ছেলের সাথে। যদিও এখন পর্যন্ত আরু আর সেই ছেলের সাথে সরাসরি কথা হয় নি। আরু মন থেকে চায় এই বিয়েটা যেন না হয় তাই ছেলের সাথে সরাসরি কথা বলতে চায় সে। কিন্তু দেখা হচ্ছে না। কারন ছেলে কিছুদিনের জন্য কাজের সুবাদে দেশের বাহিরে গেছে। ফিরে এলেই দিনক্ষন ঠিক করে বিয়ে করিয়ে দেওয়া হবে তাদের। আরুর সেদিন আশিকের সাথে প্ল্যান কিছু করতে চেয়েও করতে পারে নি। কারন যাকে কিছু বলবে সেই তো দেশে নেই। তাই আরু অপেক্ষা করছে ছেলের আসার। হাঁদারামটা এলেই নিজের ফন্দি মতো আটা কাজটা সেরে ফেলবে আরু। আর বাকি রইলো অভ্র সেও অপেক্ষা করছে লাবণ্যের কিন্তু লাবন্যের খোঁজখবর নেই। সেদিনের পর আর দেখা মেলে নি লাবন্যের সাথে অভ্র। তবে অভ্র অপেক্ষা করছে লাবণ্যের। লাবন্য এলেই তাঁর মনের কথা বলে ফেলবে তাঁকে।’

আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি। বৃষ্টির প্রলাপে আজ ভার্সিটিও যায় নি আদ্রিজা। তবে শুধু সে যায় নি বললে একটু ভুল হবে আদ্রিজাদের বন্ধুমহলের কেউই যায় নি ভার্সিটি। বর্তমানে ছাঁদের চিপচিপে পানির ওপরে খালি পায়ে পা ভিজিয়ে হাঁটছে আদ্রিজা। বৃষ্টি কমেছে কিছুক্ষণই হলো মাত্র। গোধূলি বিকেল চলছিল সবে। আকাশটা পুরো লালচে মাখা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। নিস্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ। আদ্রিজাদের বাড়িটা চারতলা বিশিষ্ট উঁচু বিল্ডিং। ওঁরা দোতলায় থাকে। বাড়িওয়ালারা তিনতলায়। চারতলার উপরের ছাঁদ থেকে নিচের সবকিছুই অল্প স্বল্প ছোট ছোট দেখাচ্ছে। আদ্রিজাদের বিল্ডিংটার ডানদিক থেকে মাঝখানে অনেকখানি ফাঁকা রেখে অপরপ্রান্তেই রয়েছে পাঁচতলা উঁচু বিল্ডিং। বিল্ডিংটা দেখতেও ভাড়ি সুন্দর। সেই বিল্ডিংয়ের পাশেই রয়েছে বিশাল এক কদম গাছ। কদম হয়েছে খুব। আদ্রিজার দৃষ্টি বর্তমানে সেদিকেই। মাঝে মাঝে তো আদ্রিজার ইচ্ছে করে ওই গাছের সব কদমগুলো ছিঁড়ে নিয়ে আসতে। কিন্তু আফসোস এমনটা হয় না। হঠাৎই আদ্রিজার ফোনটা বেজে উঠল উপরে আরুর নাম্বার দেখে খুশি মনে বললো সে,

‘ হুম বল?’

আদ্রিজার কথা শুনে অপর প্রান্তের আরু কর্কশ কন্ঠে বললো,

‘ কোথায় তুই?’

আরুর কথা শুনে আদ্রিজা অবাক হয়ে বললো,

‘ কোথায় মানে বাসায়।”

‘ বাসায় থাকিস আর যাই করিস আধ ঘন্টার মধ্যে তোকে আমাদের বাসায় দেখতে চাই আদ্রিজা।’

আরুর এবারের কথা শুনে আরো বেশি অবাক হলো আদ্রিজা। হতভম্ব গলায় বললো,

‘ এখন কি করে যাবো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে আর বৃষ্টিও আসবে বোধহয় এইসময় কি করে যাবো?’

‘ অতশত জানি না তুই আসছিস মানে আসছিস ব্যস।’

‘ কিন্তু আরু,

আর কিছু বলতে পারলো না আদ্রিজা কারন তার আগেই আরু ফোনটা কেটে দিয়েছে। আরুর কাজে আরোই বিস্মিত হলো আদ্রিজা। দু’বার আরু আরু বলেও লাভ হয় নি আর। এরই মাঝে আবারো বেজে উঠল আদ্রিজার ফোন। প্রথমে আরু ভেবে ফোনটা দেখলেও পরমুহূর্তেই শ্রাবণের নাম্বার দেখে খুশি হলো আদ্রিজা। আনমনেই মুচকি হেঁসে ফোনটা তুলে বললো,

‘ হুম বলুন?’

‘ দু ঘন্টা পর কি একবার বাসা থেকে বের হতে পারবে আদ্রিজা,তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল।’

আদ্রিজা অবাক হলো, চরম অবাক হলো শ্রাবণের কথা শুনে। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ সারপ্রাইজ! কিসের সারপ্রাইজ?’

‘ সেটা তো এলেই দেখতে পারবে তুমি কি আসবে একবার।’

আদ্রিজা অনেক ভেবে চিন্তে বললো,

‘ ঠিক আছে।’

সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণ খুশি হয়ে বললো আদ্রিজাকে,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ আদ্রিজা। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আমি একটা রেস্টুরেন্টের এড্রেস দিয়ে দিচ্ছি তুমি চলে এসো?’

‘ ঠিক আছে।’

অতঃপর ফোন কাটলো শ্রাবণ। শ্রাবণ ফোন কাটতেই আকাশ পথে তাকিয়ে মুঁচকি হাসলো আদ্রিজা। আনমনেই বললো,

‘ আবার কি সারপ্রাইজ দিবেন আমায় শ্রাবণ?’

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৪
________________

হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা আরু শরীফ,সিফাত, তুলি, বুশরা আর আশিকের দিকে। সে কল্পনাও করতে পারে নি এই ভরসন্ধ্যা বেলা তাঁকে ডেকে জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিবে এঁরা ছয়জন। খুশিতে আদ্রিজার চোখ ভেসে আসলো। কিছুক্ষন আগে, মাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে বাসা থেকে বের হয় আদ্রিজা। প্রথমেই আরুদের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কারন শ্রাবণ তাঁকে প্রায় আটটা নাগাত যেতে বলেছে রেস্টুরেন্ট। তাই সবার আগে আরুদের বাড়িতেই চলে আসে আদ্রিজা। বাড়িতে ঢুকতেই আরুর মা আদ্রিজাকে আরুর রুমে যেতে বলে। আদ্রিজাও তাই করে। রুমে ঢুকতেই তাঁর বন্ধুমহলের সবাই প্রায় হামলে আসে তাঁর সামনে সাথে বার্থডে স্প্রে দিয়ে পুরো ভূত বানিয়ে দিয়ে বলে তাঁকে,

‘ হেপি বার্থডে আমাদের নিরিবিলি আফা।’

আকস্মিক সকলের এমন কান্ডে চোখ বড় বড় হয়ে যায় আদ্রিজার। সে কল্পনাও করে নি এমন কিছু হওয়ার। কারন আজ যে তাঁর বার্থডে এটাই তো ভুলে গিয়েছিল আদ্রিজা। বর্তমানে ছলছল চোখে সবার দিকে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজা। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তাঁর মনে হচ্ছে জীবনে আর কিছু পাক বা না পাক ভাগ্য করে কিছু বন্ধুবান্ধব পেয়েছে সে। যাঁরা তাঁকে ভীষণ ভালোবাসে। আদ্রিজার রিয়েকশন দেখে বলে উঠল আরু,

‘ কিরে চমকে গেলি তো?’

উওরে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে মাথা নাড়িয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ সত্যি খুব চমকেছি আমি ভাবতেও পারি নি তোরা আমার জন্য,,

বলতে বলতে কেঁদে ফেললো আদ্রিজা। আদ্রিজার কান্ডে সবাই ওর দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আরে পাগল কান্দিস কেন?’

প্রতি উওরে বলে আদ্রিজা,

‘ আমি সত্যি খুব লাকি যে তোদের মতো এত ভালো বন্ধু পেয়েছি।’

আদ্রিজার কথা শুনে সিফাত বলে,

‘ আমরাও লাকি তোর মতো এত ভালো বন্ধু পেয়ে।’

উওরে মুচকি হাসলো আদ্রিজা। হঠাৎই আশিক বলে উঠল,

‘ এইদিন, সেইদিন
আজ আমাদের আদ্রিজা আফার জন্মদিন।’
গরম আলু, বলছে খালু
বেশি কানলে খাওয়াইয়া দিমু বালু।’

আশিকের কবিতা শুনে চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠল আরু,

‘ থামবি তুই। ইমোশনাল মুহূর্তে ফালতু কবিতা বলিস।’

‘ আতা গাছে, তোতা পাখি, ডালিম গাছে মউ
আমার কবিতার তুমি কি বুঝবা আমার না হওয়া বউ।’

সঙ্গে সঙ্গে আশিকের পায়ে একটা পারা দিলো আরু। আরুর কান্ডে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো আশিক। আশিক কিছু বলার আগেই আরু বলে উঠল,

‘ আর একটা কথা বলতে তোরে আমি যে কি করমু তুই নিজেও জানোস না। আর এসব বউ টউ কি আয়। আদ্রিজা কেক কাটবে এখন, তুই যদি তোর উল্টো পাল্টা কবিতা শুনাছ তাহলে কিন্ত?’

আরুর থ্রেট শুনে বললো আশিক,

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে আর কমু না যা।’

‘ হুম।’

অতঃপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো আরু,

‘ হয়েছে সব ইমোশনাল ড্রামা। এখন আদ্রিজা কেক কাটবে। আদ্রিজা আফা চলে আসো কুইকলি।’

আদ্রিজাও গেল। আরুর পুরো রুমটাই বেলুন রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। এই সব কিছুই এই ছয় বন্ধু মিলে করেছে। অতঃপর আদ্রিজা কেক কেটে সেলিব্রিট করলো তাঁর জন্মদিন।’

____

ঢাকার এক বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে বসে আছে অভ্র। অপেক্ষা করছে সে কিছু ক্লাইন্টের আসার জন্য। একটা নতুন প্রজেক্টের হাত দেওয়ারই পূর্ণ প্রচেষ্টা চলছে অভ্রের। বর্তমানে সেই কাজের জন্যই কিছু ক্লাইন্টের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে এসেছে সে। বিকেলে আসার কথা ছিল তাদের। কিন্তু বৃষ্টির কারনে আসা হয় নি। এখন বৃষ্টি নেই, তাই ক্লাইন্টেরা নিজেরাই ফোন করে বললো অভ্রকে এখন আসার জন্য। অভ্রও রাজি হয়ে যায়। আর এই কারনেই বর্তমানে রেস্টুরেন্টে বসে আছে অভ্র।

অন্যদিকে,

সেইম রেস্টুরেন্টেই বসে আছে শ্রাবণ। অভ্রের টেবিলের থেকে দুই টেবিল পরেই বসে আছে সে। অপেক্ষা করছে সে আদ্রিজার। যদিও সে জানে আদ্রিজার আসতে এখনো প্রায় আধ ঘন্টার মতো সময় লাগবে। মাঝে মাঝে নিজের কাজের জন্য নিজেরই গর্ব হয় শ্রাবণের। একসাথে কতগুলো গার্লফ্রেন্ডকে গোল খাওয়ায় সে।’

কফি হাতে একজন ওয়েটার যাচ্ছিল অভ্রের পাশ দিয়ে আর বলতে লাগলো শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে,

‘ না জানি আজ আবার কোন নতুন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে এই ছেলে। রোজ রোজ নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে হাজির হয় রেস্টুরেন্ট।’

বলতে বলতে যেতে লাগলো ওয়েটার। অভ্র শুনলো ওয়েটারের কথা। সাথে তাকালোও সামনের ছেলেটিকে দেখার জন্য কিন্তু শ্রাবণ উল্টোদিক ঘুরে থাকায় ফেসটা দেখতে পায় নি সে।’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত অভ্রের ক্লাইন্ট। তাদের দেখেই অভ্রের পিএ ইউনুস বলে উঠল,

‘ বস ওনারা চলে এসেছে।’

ইউনুসের কথা শুনে অভ্রও তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো সামনে। ক্লাইন্টরা সামনে আসতেই সৌজন্যতার খাতিরে উঠে দাঁড়ালো অভ্র। অভ্রকে দেখেই নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললেন ক্লাইন্ট,

‘ হ্যালো মিস্টার অভ্র,

অভ্রও খুশি মনে হ্যান্ডসেক করলো ক্লাইন্টদের সাথে। বললো,

‘ হ্যালো মিস্টার আরিফুর জামান।’

অতঃপর সামনাসামনি বসলো চারজন। ওয়েটার ডেকে কফির অর্ডারও দিলো অভ্র। তারপর কথা বলতে লাগলো অভ্র ক্লাইন্টদের সাথে।’

_____

বেশ খানিকটা বিরক্ত নিয়েই বসে আছে শ্রাবণ। কারন আদ্রিজা এখনো আসছে না। ফোনও করেছে সে কিন্তু ফোন ধরে নি আদ্রিজা। এতে যেন আরো বিরক্ত লাগছে শ্রাবণের। এই মেয়েটা অলওয়েজ দেরি করে। শ্রাবণের এত গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে এই আদ্রিজাই চরম লেটুস পদের যেটা মাঝে মাঝে শ্রাবণকে চরম বিরক্তে ফেলে। এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসলো শ্রাবণের আরেক গার্লফ্রেন্ড সুমিতা। শ্রাবণকে দেখেই খুশি মনে দৌড়ে এসে বললো সে,

‘ বেবি তুমি এখানে?’

সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো শ্রাবণ তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সুমিতার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ হোয়াট এ সারপ্রাইজ তুমি এখানে?’

‘ আমি তো বন্ধুদের সাথে এসেছিলাম কিন্তু তুমি এখানে কি করছো তুমি না বললে তোমার কোন কাজ আছে? এটা তাহলে তোমার কাজ।’

‘ তুমি আমায় ভুল বুঝচ্ছো? এখান থেকে চলো আমি তোমায় সব বুঝিয়ে বলছি,

বলেই সুমিতার হাত ধরে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল শ্রাবণ। কারন এখানে থাকা সেইভ হবে না যখন তখন আদ্রিজা চলে আসতে পারে।’

বিষয়টা একপলক খেয়াল করলো অভ্র। তবে বেশি কিছু না ভেবে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো সে।’

____

হঠাৎই নিজের ফোন চেক করতেই শ্রাবণের দশটা মিসকল দেখে চমকে উঠলো আদ্রিজা। সে তো প্রায় ভুলেই গিয়ে ছিল শ্রাবণের কথা। আদ্রিজা বেশি কিছু না ভেবেই নিজের ব্যাগটা নিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আমাকে যেতে হবে দোস্তরা?’

হুট করেই আদ্রিজার এমন তাড়া দেখে সবাই বেশ অবাক হয়েই বললো,

‘ হুট করে এত তাড়া আন্টি ফোন দিয়েছিল নাকি?’

আদ্রিজার ইচ্ছে করছে না মিথ্যে বলতে। আদ্রিজার সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। তারপর বললো,

‘ না।’

‘ তাহলে,

‘ আমার তোদের সবাইকে কিছু বলার আছে?’

আদ্রিজার কথা শুনে বুশরা বলে উঠল,

‘ হুম বল।’

‘ এখন নয় কাল ভার্সিটি বসে বলবো, এখন আমি একটু তাড়াই আছি।’

বলেই নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল আদ্রিজা। আর আদ্রিজার এমন কান্ডে সবাই জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার যাওয়ার পানে। ইদানীং আদ্রিজার আচরণেও কিছুটা পরিবর্তন দেখছে সবাই। তবে কেউ বুঝতে পারছে না আদ্রিজার এমন হুট পরিবর্তনের কারন। সবাই বেশ হতাশ হয়েই বললো,

‘ কাল আমাদের কি বলবে আদ্রিজা?’

তুলির কথা শুনে শরীফ বলে উঠল,

‘ সেটা তো কালই জানা যাবে।’

____

অভ্র তাঁর ক্লাইন্ট মিটিং শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। আরিফুর জামানও উঠে দাঁড়ালো পূনরায় অভ্রের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন উনি,

‘ এবারের ডিলটা তবে আমরাই পাচ্ছি মিস্টার অভ্র?’

উওরে মুচকি হেঁসে বললো অভ্র,

‘ ইনশাআল্লাহ।’

অভ্রের জবাব শুনে হাসলো আরিফুর জামান। বললো,

‘ ওকে ডিয়ার বাকি কথা পরে হবে।’

‘ ঠিক আছে।’

অতঃপর আরিফুর জামান বেরিয়ে গেলেন রেস্টুরেন্ট থেকে। ওনারা বের হতেই অভ্র তাঁর পিএ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ গাড়িটা সামনে নিয়ে আসো ইউনুস।’

উওরে ইউনুসও বেশি না ভেবে বললো,

‘ ওঁকে স্যার।’

বলেই দৌড়ে চলে গেল ইউনুস। আর অভ্র কিছুক্ষন দাঁড়ালো চুপচাপ। এরই মাঝে রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে ভিতরে আসলো আদ্রিজা। পরনে তাঁর পার্পল কালার জর্জেট থ্রি-পিচ। আজ প্রথমই হয়তো অভ্র আদ্রিজাকে কালো রং ব্যতীত দেখলো, তবে স্টাইলটা সেইমই আছে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর চুলগুলো একদিকে বেনুনী করা। ঠোঁটে আজ হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক দিয়েছে আদ্রিজা। খারাপ লাগছে না। সাধারণত্বের মাঝেও ভালো লাগছে আদ্রিজাকে। হঠাৎই অভ্রের মাথায় একটা প্রশ্ন এঁটে বসলো,

‘ কিন্তু এই মেয়েটা একা এখানে কেন?’

____

এদিকে আদ্রিজা রেস্টুরেন্টে ভিতরে আশেপাশের কোথাও তাকিয়ে শ্রাবণকে দেখলো না।’
তবে কি শ্রাবণ রাগ করে চলে গেছে রেস্টুরেন্ট থেকে। কথাটা মাথায় আসতেই একরাশ ভয় এসে গ্রাস করলো তাঁকে। এমন সময় পিছন থেকে বলে উঠল অভ্র,

‘ মিস ব্ল্যাকবেরি তুমি এখানে কি করছো?’

‘ব্ল্যাকবেরি’ নামটা শুনতেই হকচকিয়ে উঠলো আদ্রিজা। এই নামে তো শুধুমাত্র আরুর ভাই অভ্রই তাঁকে ডাকে। তবে কি অভ্রও এসেছে এখানে। খানিকটা ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকালো আদ্রিজা। সত্যি সত্যি অভ্রকে তাঁর পিছনে দেখে বেশ অবাক হয়েই বললো সে,

‘ আপনি এখানে?’

#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️