গোধূলি বেলায় পর্ব-০১

0
663

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#সূচনা_পর্ব

সকাল সকাল ননদের রুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই রান্নাঘর থেকে তাড়াতাড়ি করে ননদের রুমে আসলো সাইমা।

সাইমা রুমে এসে দেখে জামা কাপড় সব ফ্লোরে পরে আছে। সাইমা তা দেখে বললো কি হয়েছে লিনা?

‘ কাল কতবার বলেছি তোকে আমার জামা কাপড় গুলো ধুয়ে দিস তারপরও কেনো ধুয়ে দেসনি?
রাগি কন্ঠে বললো লিনা।

‘ কাল আমার পেটে ব‍্যাথা ছিলো যার জন্য ধুয়ে দিতে পারিনি, আমি রান্নাটা করেই ধুয়ে দিতেছি।’
মলিন কন্ঠে বললো সাইমা।’

লিনা জামাকাপড় গুলো ফ্লোর থেকে উঠিয়ে সাইমার মুখে ছুড়ে মে’রে বললো
‘ এক ঘন্টার মধ্যে ধুয়ে দিবি আর শুন তোকে বলেছি না আমার নাম ধরে ডাক দিবি না আমাকে ছোট ম‍্যাম বলবি মনে থাকে যেনো।’

‘ আচ্ছা ম‍্যাম।’
মাথা নিচু করে বললো সাইমা।

তারপর লিনা রেগেমেগে রুম থেকে চলে গেলো। সাইমা লিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

-” এই বাড়িতে এসেছে প্রায় আট মাস। পরিবারের প্রতিটা মানুষ সাইমার সাথে বা’জে আচরণ করে। লিনা সাইমার ছোট ননদ তবুও লিনা সাইমাকে ম‍্যাম বলতে বলে।সাইমা মুখ ফুটে যদি কিছু বলে তাহলে কান্নাকাটি করে সিফাতকে মিথ্যা কথা বলে। সিফাত তার বোনের কথা বিশ্বাস করে সাইমার সাথে ঝগড়া করে।

রান্না ঘর মুছা থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ তাকে দিয়ে করানো হয়। সাইমার শাশুড়ি তাকে কাজ করতে বারন করলে তার চাচি শাশুড়ির কু’ট’নৈ’তি’ক কথা শুনতে হয়। সাইমা কিছু বলতে পারে না। কাকেই বা বলবে মানুষ বলে প্রেম করে বিয়ে করলে সুখ পাওয়া যায় কিন্তু সাইমার ক্ষেত্রে সেটার বিপরীত হয়েছে।

সাইমার স্বামী সিফাত বড়লোক পরিবারের ছেলে হওয়াই সাইমার বাবা ভেবেছিলেন তার মেয়ে হয়তো খুশিতে থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কিছু কু’প্রথা রয়েছে যা মানুষের ক্ষেত্রে বড় অ’ন্ত’রা’য়। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেনির মানুষ এই প্রথার শি’কা’র হলেও দারিদ্র পরিবারেই এর ক্ষ’তি’ক’র প্রভাবটা বেশি দেখা যায়। কেনো না দারিদ্রের পক্ষে যৌ’তু’ক দেওয়া সম্ভব হয় না। সিফাত বিয়ের পর পাঁচ লক্ষ টাকা যৌ’তু’ক চেয়েছে। সাইমার পরিবার দারিদ্র হওয়াই সাইমার বাবা দিতে পারেননি সেই থেকে সাইমাকে ছোটলোকের মেয়ে, অ’ল’ক্ষি আরো নানান ভাবে নি’র্যা’ত’ন করে।

সাইমা জামা কাপড়গুলো এক পাশে রেখে বিছানা গুছিয়ে রান্নাঘরে আসতেই চাচি শাশুড়ি রেগে বললো কোথায় গিয়েছিলি? তোর জন্য তরকারি পুড়ে গেছে এইবার আমরা কি দিয়ে খাবো? অ’ল’ক্ষি মেয়ে একটা ঘরে এনেছে। যেদিন থেকে এসেছে সেই দিন থেকে এই পরিবারে অ’শা’ন্তি নেমে এসেছে

সাইমা তার চাচি শাশুড়ির কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে এসে দেখে সত্যিই তরকারি পুড়ে গেছে।সাইমা মাথা নিচু করে আছে। সাইমা ঠোঁট কামরে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতেছে। কিন্তু চোখের পানি বাধাহীন ভাবে ঝড়ে পরছে।

‘ আজ বাড়িতে আসুক সিফাত তারপর তোর কি হাল করি দেখিস।’
মুখ বাকা করে বললো চাচি শাশুড়ি।

‘ ছোট মা আমার ভুল হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
ভেজা কন্ঠে বললো সাইমা।

‘ ছোটো ভুল হয়েছে তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো?
শাশুড়ি বললেন।

‘ রানির মতো থাকতে চায় এই মেয়ে। একটা কাজও করে না। তুমি ওকে লাই দিতে দিতে এমন হয়েছে। দশ মিনিটের মধ্যে যেনো খাবার টেবিলে পাই আমি।’
এই বলে সাইমার চাচি শাশুড়ি নিজের রুমে চলে গেলো।

সাইমা একটা দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে রান্না করতে চলে গেলো।

” সাইমার চাচি শাশুড়ি সাইমাকে দেখতে পারে না তার ইচ্ছে ছিলো তার বোনের মেয়ের সাথে সিফাতের বিয়ে দিবে কিন্তু সিফাত সাইমাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের এক মাস পর কাজের লোককে তাড়িয়ে দিয়েছে তার চাচি শাশুড়ি এখন সব কাজ সাইমাকে দিয়েই করান। সাইমার শাশুড়ি সাহায্য করতে গেলে তাকে কথা শুনিয়ে দেয় সেই জন্য সাইমা তার শাশুড়িকে কোনো কাজ করতে দিতে চায় না।

কিছুক্ষণ পর রান্না শেষ করে সাইমা খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন তারপর সবাই চেয়ার টেনে বসলেন। সাইমার শাশুড়ি বললো সাইমা তুই বস আমাদের সাথে।

‘ ও বসলে খাবার বেড়ে দিবে কে আপা।’
চাচি শাশুড়ি বললো।

‘ সবাই হাত দিয়ে বেড়ে নিবে তাহলেই তো হয়।
শাশুড়ি বললো।

‘ ওই ছোটলোকের মেয়ের সাথে আমি খেতে পারবো না।’
লিনা রাগি স্বরে বললো।

‘মা ও পরে খেয়ে নিবে। একজনের জন্য সবার খাওয়া নষ্ট করো না।’
বিরক্ত কন্ঠে বললো সিফাত।

সাইমা মাথা নিচু করে আছে।সাইমা ভেবেছিলেন সিফাত হয়তো লিনাকে এখন কিছু বলবে কিন্তু সিফাতের মুখে ওই কথা শুনে নিমিষেই মন ভেঙ্গে গেলো। সাইমা মুখে এক চিলতে হাসি এনে বললো তোমরা খাও আমি না হয় পরে খেয়ে নিবো।

সাইমার শাশুড়ি নিশ্চুপে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। সিফাতের বাবা মা’রা যাওয়ার পর ছেলের টাকায় সে চলে। ছেলে মেয়ের উপর দিয়ে একটা কথা বলতে পারে না তিনি যদি বলে তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবে না। তিনি ভেবে পাই না এই মেয়েটা কিভাবে এতো কিছু সহ‍্য করে আছে অন্য কেউ হলে তো অনেক আগেই চলে যেতো।

কিছুক্ষন পর সবার খাবার খাওয়া শেষ হলো। সাইমা সব কিছু পরিস্কার করে নিজে খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই শুনতে পাই সিফাত ফোনে কাউকে বলতেছে সমস্যা নাই এক সাপ্তাহের মধ্যে সাইমাকে আমি ডি’ভো’র্স দিয়ে দিবো। তুমি ওকে নিয়ে একদম চিনতা করো না।

সিফাতের কথা শুনে পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। চোখ দিয়ে অঝর ধারাই পানি পড়তে লাগলো। মাথাটা যেনো ভোঁ ভোঁ করতেছে সাইমার। সাইমা কান্নাভেজা কন্ঠে মনে মনে বললো সিফাত আমাকে ডি’ভো’র্স দিবে? কিন্তু কেনো? নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সাইমা এই কথা ভাবতেছে হঠাৎ সিফাত সাইমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গিয়ে বললো আরে তুমি নক করে আসবে তো।

‘ আমি তো কখনোই নক করে আসি না হঠাৎ এই কথা বলতেছো কেনো?
স্বাভাবিক কন্ঠে বললো সাইমা।

সিফাত আর কিছু না বলে সাইমাকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে সাইমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। সাইমা কেঁপে উঠলো। কেনো জানি আজ সিফাতের স্পর্শ ভালো লাগতেছে না। সাইমার ঘৃণা হচ্ছে সিফাতের উপরে। সাইমা হাত দিয়ে সিফাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
সিফাত কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললো কি হয়েছে সাইমা?

‘ আমার কাজ আছে। লিনা আপুর জামাকাপড় ধুয়ে দিতে হবে। রুম মুছতে হবে।’
থমথমে গলায় বললো সাইমা।

‘ সবার সবকথা শুনো আর আমি কিছু বললেই শুনতে চাও না এর জন্য তোমার প্রতি রাগ লাগে। একটু রোমান্স করবো কিন্তু তুমি কাজের অজুহাত দিতেছো। যাও কাজ করো গিয়ে।’
কিছুটা রেগে বললো সিফাত।

‘ তোমার যে আমাকে আর পছন্দ না সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারি। এখন হয়তো আমার থেকে নতুন কাউকে পেয়েছো।’
আস্তে করে বললো সাইমা।

সিফাত বুঝলো না সাইমার অস্পষ্ট কথা। সাইমা দ্রুততার সঙ্গে রুম ত‍্যাগ করলেন।

বুকের ভেতরে চাপা যন্ত্রণা নিয়ে সব জামাকাপড় ধুয়ে ছাদে শুকিয়ে দিয়ে আসলো সাইমা। সাইমার হাত ব‍্যাথা হয়ে গেছে। সাইমা ছাদ থেকে নিচে নেমে আসতেই লিনা সোফার উপরে পায়ের উপরে পা তুলে বললো আমার জন্য একটা ব্লাক কফি বানিয়ে আনতো।

‘ আমি একটু পরে বানিয়ে দিতেছি। হাতে এখন প্রচন্ত ব‍্যাথা হচ্ছে।’
সাইমা বললো।

সাইমার কথা শুনে লিনা তে’ড়ে এসে বললো,,

#চলবে…