গোধূলি বেলায় পর্ব-০২

0
383

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্ব: ২

সাইমার কথা শুনে লিনা তেড়ে এসে বললো
‘ এখনই আমার কফি চায়। তোকে তো এই বাড়িতে এমনি এমনি রাখিনি তোর বোনকে যে মাসে মাসে টাকা দেওয়া হয় আমাদের বাড়ি থেকে সেই গুলো কি এমনি এমনি দেয় নাকি?

সিফাত রুম থেকে নিচে আসতেই লিনার কথা শুনে রেগে ধ’ম’ক দিয়ে বললো ‘ লিনাআআআআ তুই কিন্তু অতিরিক্ত করতেছিস। কিছু না বলতে বলতে বেড়ে গিয়েছিস, সাইমা তোর বড় ভাবি হয় ওর সাথে উচ্চকণ্ঠে কথা বলিস কেনো?

লিনা সিফাতের কথায় চমকে গেলেন কারন সিফাত কখনো তাকে ধ’ম’ক দেয়নি বরং তার হয়ে সাইমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।

‘ ভাইয়া তুমি ওই ছোট লোকের মেয়ের হয়ে সাফাই গাইতে এসো না। ওই মেয়ে তোমাকে কি করেছে কে জানে। আজকে তুমি ওর হয়ে আমাকে ধমক দিলে। সাইমা আমার কফি চায় আর সেটা এখনই না হলে আমি বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো আর তার জন্য দায়ী থাকবি একমাত্র তুই বলেই রুমে চলে গেলেন।’

সাইমা মাথা নিচু করে কান্না করতেছে। সিফাত সাইমার কাছে এসে বললো সাইমা ন‍্যাকা কান্না করো না তো আমি বাহিরে যাচ্ছি। তুমি লিনার জন্য কফি বানিয়ে দিয়ে আসো।

‘ আচ্ছা বলেই সাইমা কফি বানাতে চলে গেলেন। সিফাত দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বাহিরে গেলেন। সাইমা কফি বানাচ্ছে আর ভাবতেছে আজ সিফাত তার হয়ে কথা বলেছে হয়তো সিফাত আমাকে ভালোবাসে এখনো কিন্তু প্রকাশ করছে না, পর মূহুর্ত্তে কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই সাইমার মুখে অন্ধকার নেমে এলো সাইমা বললো সে তো আমাকে ডি’ভো’র্স দিতে চায় আর আমি কিনা ভাবি সে আমাকে ভালোবাসে হাস‍্যকর।

কিছুক্ষন পর কফি বানিয়ে সাইমা লিনার রুমে আসলেন। সাইমা দরজার নক দিয়ে বললো আপু আসবো?

‘ হ‍্যাঁ আয়।
লিনা বললো।

তারপর সাইমা লিনার কাছে এসে কফির কাপ দিয়ে নিজের রুমে আসলেন। সাইমার তার ছোট বোন স্মৃতিকে কল দিলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পর স্মৃতি ধরলো। সাইমা নরম কন্ঠে বললো
‘ স্মৃতি তোর পড়াশোনার জন্য আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা দেয়? সত্যি বলবি।’

‘ হ‍্যা আপু দেয়। ভাইয়া তোকে বলতে মানা করেছে।’
স্মৃতি বললো।

‘ আচ্ছা শুন এখন থেকে তুই আর টাকা নিবি না।’
সাইমা বললো।’

‘ কেনো? আর তুই প্রতি মাসে টাকা পাবি কোথায়?
স্মৃতি অবাক হয়ে বললো।

‘ কিছুদিন পরে তো আমাকে চলে যেতে হবে সেই সময় তো আর ওনি আমাদের দায়িত্ব নিবে না।এখন থেকে না হয় নিজের দায়িত্ব নিজে বুঝে নেই।’
সাইমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।

‘ কোথায় যাবি আপু? কি হয়েছে তোর সব ঠিক আছে তো
স্মৃতি উত্তেজিত হয়ে বললো।

‘ কিছু না আমি রাখি বলে কল কেটে দিয়ে আলমারি থেকে নিজের মায়ের ছবি বের করে কান্না করতে করতে বললো
‘ মা কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছে আল্লাহ্ আমাকে। আমি যে আর পারছি না। বাবা বলতো বিয়ের পর নাকি আমি সুখে থাকবো। আমারও সুন্দর একটা পরিবার হবে যেখানে সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসবে।শ্বশুর বাড়ি পেলাম মানুষ পেলাম কিন্তু ভালোবাসার মানুষ তার যে বড্ড অভাব, তুমি প্লিজ আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও।

‘ কি হয়েছে সাইমা?
সাইমার শাশুড়ি বললো।

সাইমা তার শাশুড়িকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো মা কেনো এতো কষ্ট পাচ্ছি বলতে পারেন?

সাইমার শাশুড়ি সাইমার চোখের পানি মুছে দিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো সাইমা তুমি আর চুপ করে থাকবে না। এখন থেকে তুমি সব কাজ করবে না। ওদেরকে শিক্ষা দিতে হবে।

_______________

এদিকে
সিফাত গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ ফোনে রিং বে’জে উঠলো। সিফাত একপাশে গাড়ি থামিয়ে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে রেগে বলে উঠলো
‘ সিফাত তোমার কাজ দেখে তো অবাক আমি। তুমি সাইমার হয়ে এখন কথা বলতেছো। তোমাকে আমি বলেছি না ওই সাইমার থেকে তুমি দূরে দূরে থাকবে ওর সাথে খারাপ আচরণ করবে। তবুও তুমি কেনো আমার কথা মতো কাজ করতেছো না।’
মেয়েটা বাকা হেসে আবার বললো
তুমি তো যানো তোমার পরিবারকে এক সেকেন্ড আমি পথে বসিয়ে দিতে পারি। সাইমার জীবনটাকে আমি এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারি।

‘ প্লিজ তুমি এই রকম কিছু করো না। আমি তোমার কথা মতো এখন থেকে চলবো। ‘
সিফাত বললো।

‘ তোমাকে কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ওই সাইমাকে ডি’ভো’র্স দিতে হবে। মনে আছে তো?
অচেনা মেয়েটা বললো।

‘ হ‍ুম।’
সিফাত বললো।

‘ তোমার উপর নজর কিন্তু আমার সব সময় আছে একদম কিন্তু কিছু করার চেষ্টা করবে না ওকে বেবি বাই বাই বলেই কল কেটে দিয়ে মেয়েটা হাহাহা করে হেসে বললো মিস্টার সিফাত তোমার কাছ থেকে আমি তোমার প্রিয়জনদের কে’ড়ে নিবো। যেমন তুমি আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় মানুষকে কে’ড়ে নিয়েছো।

সিফাত দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আছে। আজ তার করা একটা ভুলের জন্য তার প্রিয়জনদের হারাতে হচ্ছে। সিফাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালিয়ে নিজের গন্তব্যস্থলে যেতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর
সিফাত একটা অন্ধকার রুমের ভিতরে আসলেন। সিফাত লাইট অন করে সামনের চেয়ারে বে’ধে রাখা লোকটার কাছে আসলেন। তারপর পাশ থেকে পানির বোতল থেকে পানি তার মুখের উপর দিলেন। চোখে পানি পরতেই লোকটা পিটপিট করে চায়লেন।

‘ মিস্টার রায়হান আপনার সেবা যত্ন কেমন হচ্ছে? নিয়মিত আপনার সেবা করতেছে তো বডিগার্ড গুলো? কোনো ত্রুটি থাকলে আমাকে বলেন আমি ভালো করে আপনার যত্ন নিবো।’
মুচকি হেসে বললো সিফাত।

‘ আমাকে ছেড়েদে সিফাত আমার ছেলে জানতে পারলে তোকে জে’ন্ত খেয়ে ফেলবে।’
লোকটা বললো।

‘ তোর ওই ছেলে আমার কিছু করতে পারবে না। আমি তোকে ছেড়ে দিবো কিন্তু তোকে বলতে হবে নারী পাচার কারি এই দলের বসের নাম কি?
বাকা কন্ঠে বললো সিফাত।

‘ আমি কখনোই বলবো না। আমাকে তুই মে’রে ফেল তবুও আমি আমার বসের নাম বলবো না।’
লোকটা মুখ ঘুড়িয়ে বললো।

‘ তুই এমনি এমনি কথা শুনবি না ওয়েট বলেই পাশ থেকে কারেন্টের তার লোকটার পায়ের উপরে রাখলেন। লোকটা চিৎকার দিয়ে উঠলো।

কিছুক্ষণ পর

একটু আগেই সিফাত বাড়িতে এসেছে। সিফাত নিজের রুমে বসে আছে।
সাইমা ড্রয়িংরুমে আসলেন।

‘ এই বাড়িতে তো এখন কিছু বলা যাবে না কখন আমাদেরকে খেয়ে ফেলে তার ঠিক নাই বাপু। রাইসা কে এই বাড়ির বউ করতে চেয়েছি কিন্তু এই মেয়ে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো। এই রা’ক্ষ’সী মেয়ে সিফাতের জীবনটাকে নষ্ট করে তারপর ছাড়বে এই বলে রাখলাম। ‘
ফোড়ন কেটে বললো চাচি শাশুড়ি।

সাইমা কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো কারন এইগুলো শুনতে শুনতে অভ‍্যাস হয়ে গেছে। লিনা রুম থেকে এসে একটা লিষ্ট দিয়ে চাচি শাশুড়িকে বললো
‘ ছোট আম্মু আজ সন্ধ্যায় আমার ফ্রেন্ডরা আসবে। তুমি সাইমাকে এই লিষ্টে যা আসে সব রান্না করতে বলিও।’

‘ আচ্ছা। এই মেয়ে এইটার মধ্যে যা যা আছে সেইগুলো রান্না করবি।’
সাইমাকে ডাক দিয়ে বললেন চাচি শাশুড়ি।

‘ আচ্ছা।’
সাইমা বললো।

বেশ কিছুক্ষন পর
সাইমা রান্না করতেছে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠতেই,,

#চলবে…