গোধূলি বেলায় পর্ব-০৩

0
346

#লেখেনী-আরোহী ইসলাম
#গোধূলি বেলায়
#পর্বঃ৩

সাইমা রান্না করতেছে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গেলো। রান্নাঘরে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে সাইমার শাশুড়ি দৌড়ে আসতেই দেখে সাইমা পরে আছে। তিনি তাড়াতাড়ি করে গ‍্যাসের চুলা বন্ধ করে সিফাতকে ডাক দিলো। সিফাত রুমে বসে অফিসের কাজ করতেছে মায়ের ডাকে সিফাত রুম থেকে এসে বিরক্ত হয়ে বললো কি হয়েছে? কাজ করতেছি এতো ডাক পারতেছো কেনো? তোমাদের জন্য দেখছি বাড়িতে থাকা যাবে না।

‘ সাইমা অজ্ঞান হয়ে গেছে তুই ওকে তুলে রুমে নিয়ে চল।’
সিফাতের মা বললো।

সাইমা অজ্ঞান হয়ে গেছে তা শুনে তাড়াতাড়ি করে সাইমার কাছে এসে ওকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে দিলো সিফাত।

‘ সিফাত এখনই ডাক্তার কে কল দে। ‘
চিন্তিত সুরে বললো সিফাতের মা।

‘আচ্ছা মা বলে সিফাত ডাক্তারকে কল দিয়ে আসতে বললো। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো।

‘ চিন্তার কোনো কারন নেই। ওনার শরীর দুর্বল আর চিন্তা করে অতিরিক্ত। আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি এইগুলো এখনই এনে খাওয়াবেন। ওনাকে বেশি চিন্তা করতে বলবেন না। ঠিক আছে।’
সাইমাকে দেখে ডাক্তার বললো।

‘ আচ্ছা।’
তারপর সিফাত ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে গেলেন।

সাইমা চোখ খুলে দেখে সবাই তার রুমে আছে। সাইমাকে চোখ খুলতে দেখে সিফাতের মা বললো সাইমা চোখ খুলেছে।

‘ কি হয়েছে আমার আর তোমরা সবাই এইখানে কেনো?
সাইমা মাথায় হাত দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে করতে বললো।

‘ তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। ডাক্তার বলেছে চিন্তা না করতে। এখন থেকে ঠিক ভাবে খাবার খাবি।’
শাসনের সুরে বললো।

‘ ভেবেছিলাম এইবার হয়তো আপা তুমি দাদি হতে পারবে বয়স তো কম হলো না আর। কিন্তু আমার আশায় জল ঢেলে দিলো এই মেয়ে।’
ফোড়ন কেটে বললো চাচি শাশুড়ি।

‘ছোট মা আমার মনে হয় সাইমা মা হতে পারবে না বা কোনো সমস্যা আছে।’
লিনা বললো।

‘হায়হায় কি বলিস সিফাতের জীবনতো শেষ হয়ে যাবে। আমার নাতি নাতনি দেখার কত ইচ্ছা এই মেয়ে তো আশায় জল ঢেলে দিবে মনে হচ্ছে।’
গজগজ করে বললো চাচি শাশুড়ি।

‘ ছোট চুপ থাকতো কি বলতেছিস। সময় হলে নাতি নাতনির মুখ দেখতে পারবো। এর জন্য তুই সাইমাকে এই অ’প’বা’দ দিচ্ছিস কেনো? মেয়েটার এমনিতেই শরীর খারাপ।’
রূঢ় কন্ঠে বললো শাশুড়ি মা।

সাইমা মাথা নিচু করে আছে। সাইমার শাশুড়ির কথা শুনে চাচি শাশুড়ি আর লিনা মুখ বাকা করে চলে গেলো।

‘ তোকে না বলেছি চুপ থাকবি না প্রতিবাদ করবি। তবুও কেনো চুপ থাকিস?
শাশুড়ি মা বললো।

‘ ওই উপরে যে আছেন তিনিই না হয় ওনাদের শিক্ষা দিবেন।’
সাইমা মুচকি হেসে বললো।

‘ আচ্ছা শুন তুই থাক আমি যায়। ‘
শাশুড়ি মা বললো।

‘ আচ্ছা। ‘ তারপর সাইমার শাশুড়ি চলে গেলেন। সাইমা শুয়ে রইলো।



সিফাত ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে বাড়ির ভিতরে যাবে ঠিক সে সময় কল আসলো। সিফাত পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বার দেখে অনেকটাই অবাক হলো কারন নাম্বারটা তার ম‍্যানেজার আরিফুলের। সিফাত ফোন ধরে বললো কি হইছে আরিফুল? এই সময় কল দিলেন যে? সব ঠিকঠাক আছে তো?

‘ কিছু ঠিক নেই স‍্যার। রায়হানকে কে যেনো গু’লি করেছে।’
ম‍্যানেজার বললো।

‘ হুয়াট..!” এটা কিভাবে সম্ভব ওই জায়গার ঠিকানা তো কারো পক্ষে জানা সম্ভব না। তাহলে কে এতো সিকিউরিটির মধ্যে ওনাকে গু’লি করবে কে?
রেগে বললো সিফাত।

‘ স‍্যার আপনি এখনই এইখানে আসেন ।’
আরিফুল বললো।

‘ ওকে আর শুনো সব গার্ডদের এক জায়গা দাড় করাও আমি এখনই আসতেছি বলে কল কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বের করে গন্তব্যস্থলে গেলেন।
কিছুক্ষন পর সিফাত রায়হানকে রাখা সেই রুমে এসে আরিফুলকে বললো সব গার্ডদের ডেকেছো তো?

‘ হ‍্যা স‍্যার। কিন্তু
চিন্তিত সুরে বললো আরিফুল।

‘ কিন্তু কি বলো
সিফাত নক দিয়ে মাথা চেপে বললো।

‘ স‍্যার আমাদের সব গার্ডদের মাঝে একজন গার্ডকে খুজেঁ পাচ্ছি না। আমার মনে হয় ওই রায়হানকে খু’ন করেছে।
আরিফুল বললো।

‘ তোমাদের দিয়ে একটাও কাজ হয় না। যাও এখন রায়হানকে মাটি দেওয়ার ব‍্যবস্থা করো।’
চেচিয়ে বললো সিফাত। সিফাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একদিকে ওই মেয়ের ব্লাকমেল আরেকদিকে এই রায়হান সিফাত এইগুলো ভাবতেছে আবার সিফাতের ফোন বেজে উঠাই ফোন ধরে কানে নিতেই অপর পাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো। সিফাত বললো কে? কল দিয়ে হাসতেছেন কেনো?

‘ হাহাহা মিস্টার সিফাত আহমেদ আপনার অবস্থা দেখে না আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। রায়হানকে কিডন্যাপ করে আমাকে ধরতে চাচ্ছেন হাহাহা রায়হান আমার খুব কাছের একজন ও কখনোই আমার সাথে বেইমানি করবে না। ‘
অচেনা লোকটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো।

‘ তাহলে তুই ওকে কেনো মারলি?
সিফাত ভ্রু কুচকে বললো।

‘ নিজের কাজ আদায়ে জন্য আমি নিজের ভাইকেও মে’রে ফেলতে পারি আর ও তো জাষ্ট পাটনার। আমার ভয় ছিলো যদি ওই কখনো তোকে বলে দেয় যার জন্য ওকে প্রান হারাতে হলো হাহাহা।

‘ একবার তোর নামটা যানতে পারি ট্রাস্ট মি তারপর তোকে খুজে বের করে তোর দেহটাকে হিংস্র পশুদের দিয়ে খাওয়াবো।’
রেগে চিৎকার করে বললো সিফাত।

‘ আমি তোর আশেপাশেই আছি এইবার খুজে নে হাহাহা বলেই কল কেটে দিলো। সিফাত রেগে দেওয়ালে ফোন ছুড়ে মারলো। রাগে সিফাতের ফর্সা মুখ লালচে রং ধারন করেছে।

‘ লিনার ফ্রেন্ডরা আসছে। লিনা ড্রয়িং রুম তাদেরকে নিয়ে আড্ডায় মেতে আছে। লিনার এক ছেলে ফ্রেন্ড লিনাকে বললো লিনা তোর ভাবি কোথায়? তোর ভাবি দেখার আমাদের অনেক ইচ্ছা। ছেলেটার সাথে সাথে সবাই বললো হ‍্যা লিনা ডাক দেতো দেখি তোর ভাই কাকে বিয়ে করেছে।

‘ আচ্ছা ওয়েট। তারপর লিনা সাইমার রুমে এসে বললো ‘ সাইমা একটু নিচে আয় তো।’

সাইমার শুয়ে থাকা ভালো লাগছিলো না সেই জন্য গল্পের বই পড়ছিলো হটাৎ লিনার কথায় সাইমা বললো আসছি আপু।

‘ সাইমা আমার ফ্রেন্ডরা আসছে তুই প্লিজ এই আপু বলবি না ম‍্যাম বলবি ঠিক আছে।’
লিনা কিছুটা রেগে বললো।

‘আচ্ছা ম‍্যাম।’
নিচু সুরে বললো সাইমা। তারপর সাইমা ড্রয়িং রুমে এসে দেখে কিছু মডার্ন মেয়ে বসে আছে। সাইমাকে দেখে লিনার এক মেয়ে ফ্রেন্ড বললো তুমি সিফাত আহমদের বউ?

‘ হুম। কেনো আপনাদের মতো কাউকে ভেবেছিলেন নাকি? ‘
সাইমা বললো।

মেয়েটা হেসে বললো
‘ গাইস এইটা নাকি সিফাত আহমদের বউ সিরিয়াসলি একে তো ফুটপাতের মেয়েদের মতো দেখতে লাগে। ড্রেস পরেছে কি এইগুলো আজকাল পরে নাকি?

‘ লিনা ক্রাশ বয় সিফাত কিভাবে ফুটপাতের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? তোরা এই মেয়েকে এই বাড়ির বউ করেছিস লাইক সিরিয়াসলি
লিনার আরেক ফ্রেন্ড বললো।

সাইমা মাথা নিচু করে আছে। সে চায়লেই তাদের কিছু বলতে পারে কিন্তু সে চায় না তার জন্য লিনা অপমানিত হোক। সাইমা বললো ম‍্যাম আমি যায় তাহলে?

‘ হুম যা। লিনার সারা পেয়ে সাইমা দ্রুত রুমে চলে গেলো। এদিকে লিনার এক ছেলে ফ্রেন্ড বললো তোরা কেনো মেয়েটার সাথে এই রকম করলি? কি সুন্দর মেয়েটা।

‘ নজর দিস না শেষ হয়ে যাবি।’
লিনা বললো।

‘ এমনিতেই শেষ হয়ে গিয়েছি।
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো।

তারপর লিনার ফ্রেন্ডরা কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে গেলো।

‘ সিফাতকে রাগতে দেখে আরিফুল ভয় পেলো কারন সিফাত অনেক রাগী। আরিফুল ভয়ে ভয়ে বললো,,,

#চলবে…