গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-১৪

0
392

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

সকাল থেকে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরেছে ইহান আর ফারিহার রিসিপশনের জন্য।১১টার দিকে পার্লার থেকে লোক এসে ফারিহাকে সাজিয়ে দিয়ে যায়।ফারিহা আজকে খুব খুশি।অবশেষে সবার ইচ্ছায় আজকে থেকে সে তার প্রিয়া মানুষটার সাথে থাকবে।

লাবিবা আজকে ইথানের চুজ করে দেয়া পিংক কালারের লাহেঙ্গাটা পড়েছে।চোখে হালকা কাজল,৷ আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়েছে।কানে ঝুমকো দিয়েছে আর চুলগুলো একপাশ দিয়ে সিথি করে ছেড়ে দিয়েছে।বেশি সাজ তার পছন্দ না তাই অল্পতেই কমপ্লিট করেছে সবকিছু।রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো সে।তার অবাধ্য চোখ দুটো শুধু ইথানকেই খুজে চলেছে।অনেক খোজার পরও কোথাও না পেয়ে মন খারাপ করে স্টেজের পাশে থাকা একটা চেয়ারের উপর বসে পরলো।কিছুক্ষণ পরই ইহান আর ফারিহাকে স্টেজে নিয়ে আসা হলো।সবািকে ওদের বিয়ের বিষয়ে বলেও দেয়া হলো।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো এর মধ্যে একটি বারো ইথানকে কোথাও দেখতে পাওয়া গেলো না।অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে।অনেক গেস্টরাই চলে গিছে।লাবিবার এবার রাগ লাগছে খুব।মন চাচ্ছে ইথানের মাথায় থাকা সবগুলো চুল টেনে টেনে ছিড়তে।

এদিক ওদিক তাকাতাকি করার সময় তার চোখ গেলো বাহিরে গেটের দিকে।অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইথানের দেখা মিললো।ভালোভাবে গেটের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলো সেখানে ইথান সহ আরো দুই-তিন জন লোক দাড়িয়ে আছে।এদের মধ্যে ডক্টর সাহিলও আছে।লোকগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে তাদের কেউ বেজায় মেরেছে।আর ইথানের কোলে একটা ছোট্ট বাচ্চা।আরেকটু ভালোভাবে তাকাতেই সে অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আভিদ এখানে!

লাবিবা ইথানকে ডাক দেয়ার আগেই ইথান স্টেজের দিকে এগিয়ে এলো।ঘামের জন্য পড়নে থাকা সাদা টিশার্ট টা ভিজে গেছে।সিল্কি চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে আছে।মুখে ক্লান্তির আর রাগের ছাপ স্পষ্ট।দেখে মনে হচ্ছে কোথাও থেকে মারপিট করে এসেছে।লাবিবা ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক তখনই পেছন থেকে পুলিশদের আসতে দেখে ওর মাথায় জানো আকাশ ভেঙে পরলো।চোখ দুটো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।মনে মনে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-এই ইথান ভাইয়া আবার মারপিট করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা খেলো নাতো?হয়তো এইজন্য পুলিশ বাড়িতে চলে এসেছে ওনার নামে বাড়িতে নালিশ জানাতে।

ইহান স্টেজ থেকে ইথানের কোলে আভিদকে আর ওর সাথে থাকা লোকগুলো দেখে ঘামতে শুরু করলো।ভয়ে ওর হৃদপিণ্ডটা বারবার বারি খাচ্ছে।এটা বুজতে পারছে না ওর লোকগুলো ইথানের সাথে কি করছে।

ইথান স্টেজের কাছে এসে এক পলক লাবিবার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চোখ সড়িয়ে নিলো।অতঃপর ইহানের দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি দিলো সে যার অর্থ অন্যকেউ না বুজলেও ইহান হারে হারে টের পেয়েছে।ইহান ভয়ে ঢক গিললো একটা।

ইথানের কোলে আভিদকে দেখে সবাই বেশ অবাক হলো।সাথে পুলিশ দেখে সবাই জানো আকাশ থেকে পরলো।ইথানের মা অবাক স্বরে বলে উঠলো,,

ইথানের মা—-ইথান, আভিদ তোর কাছে কোথা থেকে এলো?

ইথানের মায়ের কথা শুনে ছোট্ট আভিদ ইহানের দিকে হাত উঠিয়ে তুতলিয়ে বলে উঠলো,,

আভিদ—-আমাতে ওই পঁচা আনতেল তা আতকে রেখেচিলো।কুব জোরে বকা দিতো।কুব পচা ওই আনতেলটা।

আভিদের কথা শুনে ইথানের মা চমকে উঠলো।অবাক হয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে সে।ঠিক তখনই ইথানের সাথে থাকা লোকগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো,,

লোকটি—-সাহিল স্যার ওইযে আমাদের বস।ওনিই আমাকে বলছিলো আপনাকে জানো টাকা দিয়ে বলি ইথান স্যারের রিপোর্ট ভুল বানাতে।

লোকটির কথা শুনে উপস্থিত সবাই স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে।সব জানো তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ইথানের বাবা এসে রাগী স্বরে বলে উঠলো,,,

ইথানের বাবা—-কি হচ্ছে কি এইগুলো ইথান।পুলিশ কেনো এনেছো?আর আভিদ আর ওই লোকটা কি বলছে এগুলো?

বাবার কথা শুনে ইথান শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-পুলিশের দরকার আছে তাই এনেছি।আর আভিদ আর ওই লোকটা ঠিকই বলছে।কি ইহান ঠিক বলছি তো আমি?

ইহানের দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো ইথান।

ইথানের কথা শুনে ইহানের মুখটা জানো চুপসে গেলো।কি বলবে বুজতে পারছে না সে।

ইথানের বাবা এইবার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,

—-কি বলতে চাচ্ছো কি তুমি ইথান?ক্লিয়ারলি বলোতো।কিছুই বুজতেছি না আমরা।

ইথানের বাবার কথা শুনে এবার ডক্টর সাহিল বলে উঠলো,,

ডক্টর সাহিল—-আমি ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে বলছি আপনাদের।আসলে ইথান বাবা আমার কাছেই টেস্ট করাতে দিয়েছিলো।আর ওনার রিপোর্টগুলো একদম ঠিক আছে।আমি অনেক আগেই ওনার রিপোর্ট ওনাকে দিয়ে দি।বাট এই ছেলেটা কালকে আমার কাছে এসে অনেক টাকা দিয়ে বলে আমি জানো ওনার রিপোর্টগুলো ভুল বানিয়ে দেয়।ইথান বাবা আমাকে আগেই ফোনে বলে রেখেছিলো কেউ যদি তার রিপোর্টের ব্যাপারে জানতে আসে তাহলে জানো তাকে আটকে রাখি।তাই আমিও ওনাকে নানান কথার ছলে আটকে রাখি আর ইথান বাবাকে মেসেজ করে দেই।তারপর ওনি এসে এই লোকটাকে প্রচুর মারধর করে আর হস্পিটাল থেকে নিয়ে যায়।এই ঘটনায় আমি এইটুকু বলতে পারি যে কেউ ইচ্ছা করে ইথান বাবার রিপোর্ট ভুল করাতে চেয়েছিলো।আর আজকে ছেলেটার কথা শুনে এইটুকু বুঝে গেলাম যে সে আর কেউ না বরল এ বাড়িরই আরেক ছেলে ইহান।

ডক্টর সাহিলের কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো।মুখের ভাষা জানো হারিয়ে ফেলেছে তারা।ইহানের বিরুদ্ধে এমন অপবাদ তারা মেনে নিতে পারছে না।এক ভাই হয়ে কিনূ আরেক ভাইয়ের এমন ক্ষতি করতে চাইবে।ফারিহার চোখে পানি চিকচিক করছে।সে এটা বুজতে পারছে না যে ইহান এমন কেনো করবে।ইথান তো ইহানকে নিজের ভাইয়ের মতন দেখে।

এইবার ইথান ইহানের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

ইথান—-ইহান এতোটাই নিচে নেমে গেছে যে সে আভিদকে কিডনাপ করে রিমান আঙ্কেল কে ব্লাকমেইল করেছিলে আমার রিপোর্ট ভুল করানোর জন্য।তোমরা জানো ও ইচ্ছা করে রিমান আঙ্কেলকে দিয়ে আমার বিয়ের দিনই এই রিপোর্ট টা পাঠায় যাতে আমি লাবিবাকে বিয়ে না করতে পারি।শুধু তাই নয়, ইহান ইচ্ছা করেই আমাদের বিয়ের দিন ফারিহাকে বিয়ে করে যাতে আমি ওকে বাচানোর জন্য ফারিহাকে নিজের বউ বলি।আর লাবিবা আমাকে মন থেকে ঘৃণা করতে শুরু করে।শুধুমাত্র আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ও সবার সামনে পরিবারের মাথা হেট করলো।সবাইকে কষ্ট দিলো।কিন্তু আমি তো এটাই বুজতে পারছিনা যে আমার প্রতি কেনো ওর এতো ঘৃণা?আমি তো ওকে নিজের ভাই মনে করতাম।শেষের কথাগুলো বলার সময় ইথানের চোখ দুটে ঝাপসা হয়ে এলো,,

#চলবে??