গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-১৩

0
417

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

রাত ৯টা।নিচে ফারিহা আর ইহানের রিসিপশন নিয়ে সবাই মাতামাতি করছে।কালকেই রিসিপশনের সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে।ড্রইং রুমে বাড়ির সব ছেলে-মেয়েরাই আছে শুধু লাবিবা আর ইথান বাদে।হুট করে রুশান বলে উঠলো,,

রুশান—-আচ্ছা আমাদের লেবু কোথায়?ওকে তো কোথাও দেখতে পারছি না।

রুশানের কথা শুনেই ইহান বলে উঠলো,,

ইহান—-ওরা তো শপিং এ গেছিলো।হয়তো অনেক টায়ার্ড।তাই ওদের না ডাকায় ভালো।

ইহানের কথা শুনে রুশান আর কিছুক্ষন চুপ করে থেকে উৎসাহিত কণ্ঠে আবারো বলে উঠলো,,

রুশান—-আচ্ছা ভাইয়া তোমার আর ফারিহা ভাবির প্রেম কাহিনি কবে থেকে শুরু হলো আবার?না মানে আমরা তো কখনো এই বিষয়ে কিছুই টের পায়নি।হুট করেই তুমি ইথান ভাইয়ের বিয়ের দিন ফারিহা ভাবিকে বিয়ে করে আনলে।সব কি তুমি আগে থেকেই প্লান করে রেখেছিলে নাকি বিয়ের জন্য?

রুশানের এমন কথায় বেশ থতমত খেয়ে গেলো ইহান।বিয়ের প্লান তো সে করেছিলো ঠিকই কিন্তু তার পেছনে যে আরো বড় উদ্দেশ্য আছে তার।ইহান আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,

ইহান—-আসলে লাবিবার সাথে যেদিন ওকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই ভালো লেগে গেছিলো।তারপর ওর সাথে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব করি।দেন প্রোপজ করি আর তারপর থেকেই সবকিছু শুরু হয়।আর ভইথান ভাইয়ার বিয়ের দিন বিয়ে করেছিলাম যাতে সবার সামনে বেপারটা ইজিলি মেনে নেই পরিবার।কিন্তু সবকিছু তো গোলমাল পাকিয়ে গেলো ভাইয়ার রিপোর্ট আর দিদুনের নিয়মের জন্য।

ইহানের কথাগুলো শুনে সবাই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।আসলেই এই কয়েকদিনে তাদের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।একের পর এক ঝটকা খেয়েছে তারা।এবার অর্থী ইহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

অর্থী—-তারমানে তুমি ফারিহা ভাবিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলে?

অর্থীর কথা শুনে ইহান মুচকি হেসে বলে উঠলো,,

ইহান—-হ্যা।ওকে প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলি আমি।আর সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসে যেতে চাই।ওকে অন্যকারোর সাথে দেখলে যে একদম সয্য হয় না আমার।।

ইহানের এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসতে রইলো।আর ফারিহা তো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।মনে মনে ভাবতে লাগলো, এই লোকটার কি লজ্জা নাই।সবার সামনে কি সব বলে যাচ্ছে।

আসলেই ইহান ফারিহাকে খুব ভালোবাসে।যখন ও লাবিবার সাথে ওকে প্রথম দেখেছিলো তখন থেকেই এই ভালোবাসার সূত্রপাত ঘটে।ফারিহাকে অন্য কারোর সাথে একদমই সয্য করতে পারে না ইহান। একমাত্র ফারিহাকে হারানোর ভয় ছাড়া আর কোনোকিছুতেই তোয়াক্কা করে না সে।

ওদের মজা করার মাঝেই বাড়ির ছোট বউ ওরফে ইহানের মা এসে সবার উদ্দেশ্যে গম্ভীরভাবে বলে উঠলো,,

ইহানের মা—-সবাই খেতে চলো।অনেক রাত হয়েছে।কালকে সকালে উঠতে হবে আবার।

কাউকে কিছু বলতে না দিয়েই সে সেখান থেকে চলে গেলো।আসলে ইহানের এমন হুট করে বিয়ে করা মোটেও পছন্দ হয়নি তার।ফারিহাকে বউ হিসেবে মানতে কোনো আপত্তি নেই তার কিন্তু ইহানের এমন কাজে খুবই বিরক্ত সে।

ইহান সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

ইহান—-তোরা সবাই যা খেতে আমি একটু আসছি।একটা ফোন করতে হবে আমার।বলেই সেখান থেকে চলে এলো ইহান।

টানা আধা ঘন্টা যাবত গলা আর নাক দিয়ে রক্ত পরেছে লাবিবার।রক্তের দাগ রুমের ফ্লোরে স্পষ্ট।লাবিবার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না তার চোখ দুটোকে মেলে রাখার।আস্তে আস্তে তার কাছে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো।মাথা ঘুরে বিছানাই আবার ঢলে পরলো সে।

রাত ১১টার দিকে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে লাবিবার।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় সে।কোনোভাবে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ জানো রসগোল্লার মতন গোল গোল হয়ে গেলো।অবাক হয়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-মা এতো রাতে তুমি আমাকপ ডাকছো কেনো?কিছু হয়েছে?

লাবিবার কথা শুনে ওর মা ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,,

লাবিবার মা—-তোর কি মাথাটা গেছে লাবিবা?সেই শপিং থেকে এসে আর তো বাহিরে গেলি না।নিচে এসে খাবার ও খেলি না।তাই ভাবলাম আমি রুমে এসে তোর খাবারটা দিয়ে যাই।কিন্তু এসে দেখি বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছিস তুই।নিজের জামাটাও চেন্জ করিসনি।হয়েছে টাকি তোর?

লাবিবা মায়ের কথা শুনতেই টাসকি খেলো।তখনের কথা মনে পরতেই তাতারি করে ফ্লোরের দিকে তাকালো সে।কিন্তু সেখানে তাকাতেই তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।রক্তের ছিটেফোঁটাও নেই ফ্লোরে।আশ্চর্য!রক্তটা গেলো কোথায়?উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো সে,,

লাবিবা—-মা এখানে না রক্তের দাগ ছিলো?সেগুলো গেলো কই?সার্ভেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করিয়েছো কি?

লাবিবার কথা শুমে ওর মা অবাক কণ্ঠে উত্তর দিলো,,

লাবিবার মা—-এখানে কোথা থেকে রক্ত আসবে শুনি?আর সার্ভেন্টরা তো সেই সন্ধ্যার পর থেকে আর তোর ঘরেই আসে নি।তাহলে পরিষ্কার কেমন করে করবে?তোর মাথাটা এবার সত্যি গেছে রে লাবিবা!

মায়ের কথা শুনে লাবিবা আরেক দফা অবাল হলো।রক্তটা তাহলে গেলো কই?তার স্পষ্ট মনপ আছে এখানে রক্তের দাগ ছিলো।কেউ নিশ্চয় সেটা মুছে দিয়েছে।কিন্তু সে কে?

লাবিবার চিন্তার মাঝেই ওর মা বলে উঠলো,,

লাবিবার মা—-এখনো কি ভাবছিস বলতো?তাতারি গিয়ে কাপড়টা পাল্টে আয়।তারপর আমি আমার মেশেকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিবো।

মায়ের কথা শুনে লাবিবা কিছু না বলে ওয়াশরুমের গিয়ে চেঞ্জ করে নিলো।চোখে-মুখে পানি দিয়ে এসে মায়ের হাতে খাবারটা খেয়ে নিলো।খাওয়া শেষে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আচ্ছা মা ইথান ভাইয়া কোথায়?উনি খেয়েছে?

লাবিবার কথা শুনে ওর মা কিঞ্চিৎ হেসে বলে উঠলো,,

লাবিবার মা—–না এখনো খায়নি।তবে আমি ওর রুমে খাবার দিয়ে এসেছি।ছেলেটা মনে হয় কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তা করছে।ওর চোখ-মুখও লাল ছিলো।মনে হয় রেগেও আছে।

মায়ের কথা শুনে লাবিবা অবাক হলো না।বরং ভেংচি কেটে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-ওনার তো ওইটাই কাজ।সারাক্ষণ এটা ওটা নিয়ে রেগপ বোম হয়ে থাকা।

লাবিবার কথা শুনে ওর মা ফিক করে হেসে দিলো।মায়ের সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো নিজেও টের পেলোনা সে।বড্ড ক্লান্ত লাগছিল তার।

লাবিবা ঘুমিয়ে যেতেই ওর মা রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

রাত ২টা।সবাই গভীর ঘুমে বিভোর শুধু একজন বাদে।তার যে একটুও ঘুম আসছে না আজ।ইথান সোফার উপর বসে আছে।প্রচুর রাগ লাগছে তার।সঙ্গে ঘেন্নাও লাগছে তার কারোর প্রতি খুব।কখনো ভাবেওনি তার সাথে তার নিজেরই কেউ এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করবে।রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে।ইথান এবার নিজে নিজেই বলে উঠলো,

ইথান—-অনেক সয্য করেছি এইসব নাটক।এইবার আসল নাটক তো আমি করবো।আর সেই নাটকে তোর জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।আমাকে আর লাবিবাকে যেই কষ্ট দিয়েছিস তার দিগুণ কষ্ট আমি তোকে দিবো।এতোদিন ইথানের ভালোবাসা দেখছিা এবার তার রাগ দেখবি তুই।কালকে রিসিপশনে সবার জন্য বড় ধামাকা ওয়েট করছে,,,

#চলবে?