গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-০৩

0
602

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৩
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

আমাকে এখানে দেখে ইথান আর ফারিহা দুজনেই কিছুটা অবাক হলো।হয়তো ভুল সময়ে এসেছি আমি।ওদের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,,

আমি—-সরি দরজায় লক না করেই ঢুকে পরেছি।আসলে আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো ফারিহা ভাবি।

লাবিবার এমন কথা ইথানের জানো কলিজায় গিয়ে লাগলো।মাত্র কয়েক ঘন্টায় ওর মুখটা একদম ফেকাসে হয়ে গেছে।চোখ দুটো ফুলে উঠেছে।কেমন জানো অগোছালো লাগছে।লাবিবাকে এভাবে দেখে ইথানের বুকটা ধক করে উঠলো তবুও মুখ দিয়ে কোনো কিছুই বলল না।লাবিবার কথায় ফারিহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,,

ফারিহা—-কি কথা বল লাবিবা?আর আমাকে ভাবি কেনো বলছিস?ভুলে যাস না তোর ভাবি হওয়ার আগে আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড।

ফারিহার এমন কথায় লাবিবা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,

লাবিবা—-বেস্টফ্রেন্ড!আচ্ছা ফারিহা আদৌ কি তুই বেস্টফ্রেন্ডের মানে বুঝিস??তোর কি মনে হয় আমি এখনো তোর বেস্টফ্রেন্ড আছি??

লাবিবার এমন কথায় ফারিহা মাথা নিচু করে নিলো।কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা।ইথান ব্যাপারটাকে এড়ানোর জন্য বলে উঠলো,,

ইথান—-প্লিজ লাবিবা তোর যা বলার আছে তারাতারি বল।আমরা দুজনেই টায়ার্ড তাই রেস্ট নিবো।

ইথানের প্রত্যেকটা ব্যাবহার আজকে লাবিবার মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে।নিজের চোখের পানি আটকে রেখে মায়াভরা কণ্ঠে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আসলে এই গহনাগুলো দিতে এসেছিলাম তোমাকে ফারিহা ভাবি।তোমার জিনিস তোমার কাছেই রাখো।

লাবিবার কথায় ফারিহা কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো,,

ফারিহা—-এগুলো তো তোর গহনা।আমার কবে থেকে হলো??

লাবিবা—-আমার ছিলো।এখন থেকে তোর হয়ে গেছে।

ফারিহা—-মানে?কি বলতে চাইছিস তুই?

লাবিবা—-এই গহনাগুলো বড় কাকিয়া ইথান ভাইয়ার বউয়ের জন্য কিনেছিলো।যেহেতু তার বউ এখন তুই তাই গহনাগুলো এখন থেকে তোর।আমি অন্যকারোর জিনিস নিজের কাছে রাখি না।আসলে কি বলতো,তোর মতন অন্যের জিনিস ছিনিয়ে নেয়ার অভ্যাসসটা নেই আমার।তাই তো নিজ থেকে ফিরিয়ে দিতে এলাম।

লাবিবার বলা কথাগুলো ফারিহাকে খুব আঘাত করছে তবুও সে চুপটি করে সহ্য করে নিচ্ছে।ভবিষ্যতে এই কষ্টই হয়তো তাদের প্রত্যেকের জীবনে সুখ আনবে।ফারিহা মনে মনে বলে উঠলো,,
আমি কারোর জিনিস কেড়ে নেইনি লাবু।তুই সত্যিটা জানলে হয়তো আজকে এতো বড় কথা বলতে পারতিস না।

ইথান লাবিবার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।লাবিবার এই কাজটা মোটেও পছন্দ হয়নি তার।রেগে গিয়ে খপ করে লাবিবার হাত থেকে গহনার বক্সগুলো নিয়ে রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-ঠিক বলছিস তুই।এই গহনাগুলো শুধু আমার বউয়ের জন্য।তাই এগুলো আমার কাছেই থাকুক।সঠিক সময় এলে আমি নিজ হাতে আমার বউকে যত্ম করে পরিয়ে দিবো।

ইথানের কথায় লাবিবা আর কিছু বললো না।মনের মধ্যে এক পাহাড় সমান অভিমান জমেছে তার ইথানের প্রতি।অবশ্য এ অভিমানের কিছুই যায় আসেনা ইথানের।লাবিবা রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে গিয়েও ফিরে এসে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে আমাকে ফারিহা?কি এমন দোষ করেছিলাম আমি যে এইভাবে আমাকে ঠকালে?আমার মনটাকে বিষে ভরে দিলে।আমার জীবনটাকে তচনচ করে দিলে।আমার থেকেই আমার প্রিয় জিনিসটাকে কেড়ে নিলে?শেষের কথাটা বলার সময় লাবিবার চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি গড়িয়ে পরলো।

লাবিবার চোখে পানি দেখে ইথানের মাথায় রাগ উঠে গেলো।চোখ দিয়ে জানো আগুন বের হচ্ছে তার।এই এজটা জিনিস সে একদমই সহ্য করতে পারেনা।দ্রুত গতিতে লাবিবার কাছে গিয়ে তার দু বাহু আরড়ে ধরে পাগলের মতন বলতে লাগলো,,

ইথান—-এই লাবুপাখি কি হয়েছে তোমার?এইভাবে কাদছো কেনো?কে কষ্ট দিয়েছে বলো আমাকে?প্রমিজ তাকে আমি জানে শেষ করে দিবো।

এতোক্ষণে লাবিবা জানো তার আগের ইথানকে ফিরে পেয়েছে।তার মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠলো।তার ইথান তাকে এখনো ভালোবাসে।ভাবতেই মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো তার।ইথান লাবিবার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে তাকে এবার বুকের সাথে চেপে ধরলো।কেনো জানি দম বন্ধ লাগছে তার।তার লাবুপাখির চোখের পানি যে সে একদম সহ্য করতে পারে না।

ফারিহা ইথানের এমন কাজে কিছুটা ভরকে গেলো।দ্রুতো পায়ে এগিয়ে এসে লাবিবাকে ধাক্কা দিয়ে ইথানকে দূরে সড়িয়ে আনলো।কিছুটা রাগী গলায় বলে উঠলো,,

ফারিহা—-কি হচ্ছেটা কি এখানে??আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি যে নতুন বউ রেখে অন্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন??

ফারিহার কথায় ইথানের হুস ফেরে।সে বুজতে পেরে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠে,,

ইথান—-এখান থেকে যা লাবিবা।তোর ওই নেকা কান্না দেখলে আমি আগের মতন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।দূর হয়ে যা প্লিজ।আজকে আমাদের বাসর রাত।এখানে এসে আমাদের ডিসটার্ব করিস নাতো।

ইথানের এইটুকু কথা শুনেই লানিবার মুখের হাসি বিলিন হয়ে গেলো।তার প্রতিটি কথা লাবিবার বুকে তীরের মতন বাধলো।এক মিনিটে কেমন পাল্টে গেলো ওনি।এই মানুষটা আসলেই খুব খারাপ।মিনিটে মিনিটে রং বদলায়।

লাবিবা—-সরি আপনাদের টাইম ওয়েস্ট করার জন্য।কথাটা কোনোভাবে বলেই দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো লাবিবা।

অন্যদিকে লাবিবা চলে যেতেই ইথান ফারিহার কোনো কথা না শুনে সোজা ইহানের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।আবার সে তার লাবুপাখিকে অনেক আঘাত দিয়ে ফেললো।চোখে পানি টলমল করছে তার।

লাবিবা রুমে এসে দরজা লক করে ফ্লোরে বসে হেচকি তুলতে তুলতে কাঁদতে রইলো।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।মনে হচ্ছে ইথানের রুমে না গেলেই হয়তো ভালো হতো।অন্তত এই কথাগুলো তো আর শুনতে হতো না তাকে।আজকে রাতটা তার জীবনের সবথেকে জঘন্য রাত যেই রাতে কিনা তার প্রিয় মানুষটা অন্যকাউকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে।এমন রাত জানো কোনো মেয়ের জীবনে না আসে।আমার শত্রুর জীবনেও না।কথাগুলো ভাবতে থাকলো আর কাঁদতে রইলো সে।

হেচকি তুলতে তুলতে হঠাৎ করেই লাবিবা লক্ষ করলো তার ঠোঁটের উপর গরম কিছু তরল জাতীয় গড়িয়ে পরছে।ঠোঁটে হাত রাখতেই লাল জিনিস দেখতে পেয়ে এক সেকেন্ডে বুঝে গেলো যে এটা রক্ত।মুহূর্তেই তার মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো।

লাবিবা—-এই রক্ত!এটা কোথা থেকে আসলো??নিজের নাকে হাত দিতেই এবার গলগল করে রক্ত পরতে শুরু করলো লাবিবার।বুঝতে পারলো এটা তার নাক থেকেই বের হচ্ছে।কিন্তু নাকে তো আঘাত লাগেনি তার।তাহলে এমন কেনো হচ্ছে??রক্তের গতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বেড়ে চলেছে।লাবিবার এবার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।টিসু দিয়ে মুছতে মুছতে এক বক্স প্রায় শেষ।এবার লাবিবার কেমন জানি লাগছে।চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখতে পাচ্ছে।বুজতে পারছেনা হচ্ছেটা কি তার সাথে!

ফারিহা নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিতেই ইহান পদ্মার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো।ফারিহার মনটায় বারবার কু ডাকছে।মনে হচ্ছে কিছু খারাপ হতে চলেছে।তখন ওইভাবে লাবিবাকে ধাক্কা না দিলেও পারতো।ভুল বুজলো নাতো আবার তাকে।এসব চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়।তখনই ইহান এসে ফারিহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো যার জন্য কিছুটা চমকে উঠলো সে।

ইহান—-আজকে আমাদের বাসর রাত।প্রত্যেকের জীবনেই এ রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে।আমার ও আছে বউ।প্লিজ তুমি এমন মন মরা হয়ে থেকো না।
ইহানের কথায় ফারিহা মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।ইহান ফারিহাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপর শুয়িয়ে দিলো।তারপর ফারিহার দিকে এগিয়ে গিয়ে গভীর ভাবে ওর ঠোঁটে একটা কিস করলো।একে একে তারা নিজেদের ভালোবাসার রাজ্যে ডুব দিলো।

অদ্ভুত এই পৃথিবী।কেউ ভালোবাসায় ডুবে থাকে তো কেউ যন্ত্রণায় কাত্রে মরে।রাত প্রায় ১টা।অন্ধকার রুমে কোনো এক সুদর্শন যুবক সোফার উপর বসে দাবার গুটি সাজাচ্ছে।সব সাজানো হয়ে গেলে একটা সয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,

—-এইবার আমার প্লান এমন ভাবে সাজিয়েছি যে তুমি চাইলেও আমার জাল থেকে কিছুতেই বেরুতে পারবেনা মিস্টার ইথান এহসান আদিল।তুমি থাকবে তোমার রিপোর্ট নিয়ে অন্যদিকে তোমার প্রাণপাখি লাবিবা কাট্টি হয়ে যাবে।আফসোস এই জনমে হয়তো তুই তোর রিপোর্টটা আর পাবিনা ইথান।আর পেলেও ততদিনে তোর লাবিবা শেষ,,,,,

#চলবে??