চন্দ্রমল্লিকা পর্ব-০১

0
743

#গল্পের নাম: চন্দ্রমল্লিকা
#পর্ব:১
#লেখিকা:আরোহী।

আগামী শুক্রবার তোমার বিয়ে।ছেলের ছবি রেখে গেলাম,দেখে নিও।আর একটা কথা মাথায় রেখে দাও পছন্দ হোক বা না হোক এই ছেলেকেই তোমার বিয়ে করতে হবে।বাবার মুখে এমন কথা শুনে খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম বাবার দিকে।বাবা আমার দৃষ্টি উপেক্ষা করে টেবিলের উপর ছবিটা রেখে হনহনিয়ে চলে গেলেন।আর আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম ২০২২ সালে দাড়িয়ে আমার সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে।জানা নেই শোনা নেই একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হবে।

বাবা আসতে পারি?বাবা খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে বললো এসো।আমি ধীর পায়ে এগিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।বাবা গম্ভীর মুখে চোখ থেকে চশমাটা খুলে বললো বিয়ের বিষয়টি ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কথা থাকলে বলো। বাবা হঠাৎ করে এই বিয়ে কেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আর তাছাড়া আমি ছেলেটাকে চিনি না সেও হয়তো আমাকে চেনে না, এভাবে কি বিয়ে হয় বলো।তোমাকে আগেও বলেছি নূর বিয়ের বিষয়ে আমি তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাই না। অবাক চোখে বাবায় দিকে তাকালাম,বাবা কখনো রেগে না থাকলে আমার নাম ধরে ডাকে না।আর কিছু না বলে চলে আসতে নিলে পেছন থেকে বাবা বললো,যা হচ্ছে তোমার ভালোর জন্যই হচ্ছে।আর মনে রেখো আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে আমার সম্মান।

দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে এলো।আজকে আমার বিয়ে।কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা খানিকটা কেপে উঠলো। নিজের অনূভুতি নিজেই বুঝতে পারছি না। বাড়িতে আজ অনেক মানুষ। সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। বাবাকে সকাল থেকে একবারো দেখলাম না।কালকে হলুদের অনুষ্ঠানটাও হলো না।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।না বোঝার মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেলো।এখন বিদায়।কি আজব না মেয়েদেরই সবসময় বাড়ি ছেড়ে কেন যেতে হয়, ছেলেরাও তো যেতে পারে তাই না।আমাকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময়ও বাবা সামনে এলো না।অথচ আমি দেখেছি বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চোখে চোখ পড়তেই ভেতরে চলে গেল।আর আমিও রওনা দিলাম এক নতুন গন্তব্য, নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।

তিন ঘণ্টা জার্নির পর গাড়ি এসে থামলো এক সুন্দর মাঝারি সাইজের দোতলা বাড়ির সামনে।বাড়িটা দেখেই বোঝা যায় কেউ খুব যত্ন নিয়ে বাড়িটা বানিয়েছে।এই তিন ঘণ্টা জার্নিতে আমার পাশের মানুষটিকে একনজর দেখেছিলাম শুধু। বেশ গম্ভীর ধাঁচের মানুষ। শুনেছি আর্মি অফিসার তাই হয়তো একটু গম্ভীর। ভেতরে এসো মা, একজন মাঝবয়সী মহিলার মসৃণ কন্ঠে আমার ঘোর কাটে, ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি বললেন দাঁড়াও আমাদের বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী নতুন বৌকে স্বামী কোলে নিয়ে বাড়িতে ভোটে।চোখ বড় বড় করে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেখে মনে হলো আমার শ্বাশুড়ি। আমার তাকনো দেখে কানের কাছে মুখ এনে বললেন চিন্তা করো না আমার ছেলে বেশ শক্ত সমর্থ তোমাকে পরে যেতে দেবে না। হঠাৎই গোমড়া মুখো লোকটা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।আমাকে নামিয়ে হনহনিয়ে ভেতরে চলে গেল।আমাকে বসানো হলো আর শুরু হলো বৌ দেখা।বেশ বিরক্ত নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। আমার শ্বাশুড়ি বুঝতে পেরে একটা পনেরো ষোলো বছর বয়সী মেয়েকে বললেন যা ভাবিকে ঘরে দিয়ে আয়।মেয়েটা আমার হাত ধরে বললো চলো ভাবি । আমিও ওর সাথে চলে গেলাম। দোতলার একদম শেষ মাথায় একটা ঘর। দেয়ালে একটা বড় ছবি দেখে বুঝলাম এটা ঐ গোমড়া মুখোর ঘর।ঘরটা খুব সুন্দর করে সাদা চন্দ্রমল্লিকা ফুলে সাজানো।আমি পাশে তাকিয়ে মুচকি হেসে মেয়েটাকে বললাম তোমার নাম কি?মেয়েটা চমৎকার একটি হাসি দিয়ে বলল নয়না। বাহ্ বেশ মিষ্টি নাম। মা আমার আর দাভাইয়ের নাম মিলিয়ে রেখেছে। তা তোমার দাভাইয়ের নামটা কি। আমার প্রশ্নে নয়না বেশ অবাক হলো মনে হয়।বিষ্ময় নিয়ে বললো তুমি দাভাইয়ের নাম জানো না।আমি এদিকে ওদিকে মাথা নাড়ালাম।হতাশ হয়ে নয়না বললো দাভাইয়ের নাম নমম।

নমম মানে পবিত্র। কিছু বললে ভাবি।না না কিছু না। আচ্ছা তাহলে তুমি থাকো আমি তাই,দাভাই এক্ষুনি চলে আসবে এই বলে নয়না ছুটে চলে গেল। আমি একা একা ঘরটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে পেছনে তাকালাম দেখি গোমড়া মুখো এসেছে। আমাকে দেখেই উনি চিৎকার করে উঠল একি??? ওনার কথা শুনে কেঁপে উঠলাম, দেখে বুঝলাম খুব রেগে গেছে। কিন্তু রাগ করার মতো কি করলাম,নাকি ওনার ঘরে আসায় রাগ করেছে। এসব ভাবতে ভাবতে দেখি উনি আমার দিকে তেড়ে আসছে।আমি ভয়ে পিছিয়ে যেতেই উনি আমার হাত থেকে কাঠের ঘোড়াটা ছিনিয়ে নিলেন। বুঝতে পারলাম এটার জন্যই রেগে গেছেন। কিন্তু এতে রাখার কি হলো। কাউকে জিজ্ঞেস না করে তার জিনিসে হাত দিতে হয় না এটা আপনি জানেন না পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন।আমি আসলে…. ।উনি হাত উঁচিয়ে বললেন আসল নকল আমি জানতে চাই না আর কখনো আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার জিনিসে হাত দেবেন না।আমি ছলছলে চোখে মাথা নাড়ালাম। খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু না ওনার সামনে একদম কাঁদা যাবে না। একটা কাঠের ঘোড়াইতো ধরেছি তাই বলে এভাবে বকবেন।

উনি গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন এভাবে ভারি শাড়ি, গয়না পরে দাঁড়িয়ে না থেকে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি মনে মনে ভেংচি কেটে বললাম এতক্ষণ বকে এখন আসছে ফ্রেশ হয়ে আসুন যান।ঢং দেখে আর বাঁচি না।এসব ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। অনেক গরম পরেছে তার মধ্যে আবার ভারি মেকআপ তাই ভাবলাম একেবারে গোসল করে নেই। গোসল করে বেরিয়ে দেখি গোমড়া মুখোটি সারা ঘর পাইচারি করছে।আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে শুরু করলাম। আয়নায় দেখতে পাচ্ছি উনি বেশ উশখুশ করছেন হয়তো কিছু বলবে।যাই বলুক তাতে আমার কি। হঠাৎ উনি কেশে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলেন আসলে আমার জিনিসে কেউ হাত দিলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।আর তাছাড়া ঘোড়াটা আমার খুব প্রিয় , কাউকে ধরতে দেই না।ঘরে ঢুকে আপনার হাতে ওটা দেখে খুব রেগে গেছিলাম। তাই ওভাবে বলে ফেলেছি।ক্ষমা করবেন। আপনার সাথে ওরকম ব্যবহার করা আমার ঠিক হয়নি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মনে মনে ভাবলাম যাক যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম অতোটা খারাপ না।মুখে বললাম ঠিক আছে আমি কিছু মনে করিনি।আর অন্যের জিনিস এভাবে না বলে ধরাটা আমারো ভুল ছিল।উনি বললেন না না এভাবে বলবেন না এই ঘরটা তো আপনারো তাই আপনি অনুমতি ছাড়াই সবকিছু ধরতে পারেন।আমি ড্যাবড্যাব করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি বললেন অনেক রাত হয়ে গেছে শুয়ে পরুন।আমি ভাবছি ওনার সাথে এক বিছানায় আমাকে শুতে হবে। ইশ্ কেমন যেন লাগছে।উনি আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বললেন ভয় নেই আপনি আমার স্ত্রী হলেও আমি আপনার ওপর কোন জোর খাটাবো না।আপনার অনুমতি ছাড়া আপনাকে ছোঁব না। এতটুকু ভরসা আপনি আমার উপর করতেই পারেন।আমি ভাবলাম যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।যেই আমি বিছানার দিকে এগোলাম হঠাৎ উনি পেছন থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন………

#চলবে