চন্দ্রমল্লিকা পর্ব-০২

0
543

#চন্দ্রমল্লিকা
#পর্ব :২
#লেখিকা: আরোহী

বিবাহিত জীবনের আজ ৫ম দিন। বিয়ের সব আচার অনুষ্ঠান শেষ।বিয়েতে নিয়ন্ত্রিত অতিথিরাও চলে গেছে।বাড়ি একদম ফাঁকা।নমম, নয়না, আমার শ্বাশুড়ি আর আমি শুধু বাড়িতে। শুনেছি আমার শ্বশুড় মারা গেছেন দু’বছর আগে। বিয়ের পাঁচ দিন হয়ে গেলেও বাবার সাথে এখনো কোনো কথা হয়নি। বৌভাতের দিনও এলো না। কতবার ফোন করেছি তাও ধরেনি। বাবা কি কোন কারণে রেগে আছে আমার উপর।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।যদিও বৌভাতের দিন ওবাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু নমমের কাজ পরে যাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি।তবে মা মানে আমার শ্বাশুড়ি বলেছেন কালকে আমরা যাচ্ছি।

সকাল ৪:৫৭ মাকে সালাম করে আমি আর নমম বেরিয়ে পরেছি বাড়ির উদ্দেশ্যে।নয়নাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওর পরীক্ষা থাকায় আর আসা হলো না। গাড়িতে বসে ভাবছিলাম প্রথম রাতে পাশের মানুষটিকে কিনা ভেবেছিলাম।বাসর রাতে নমম হঠাৎ যখন পেছন থেকে আমার কোমর ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে তখন মনে হলো এইতো আসল রূপে চলে এসেছে। পুরুষ মানুষ কোন মেয়েকে একা পেয়ে ছেড়ে দেবে এটা হতে পারে না।আর তা যদি হয় বিয়ে করা বউ তাহলে তো কথাই নেই।মনে মনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এমনি করার হলে শুরুতে এত ভালো কথা কেন বললো।তখনই নমম আমাকে ছেড়ে ছিটকে সরে গেল আর আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম।নমম বলে উঠল দেখে এগোন সামনে জল ছিল এখনইতো পরে যেতেন। সামনে তাকিয়ে দেখি সত্যিই সামনে খানিকটা জল পরা ।নমম জলটা মুছে বলল নিন এবার শুয়ে পরুন।আমি লাইট অফ করে আসছি।নমম লাইট অফ করে বেশ দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পরলো। ছিঃ ছিঃ মানুষটাকে আমি কি ভাবছিলাম।সে তো আমাকে বাঁচাতেই অমন করেছিল। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল।এই পাঁচ দিন এতটুকু বুঝছি নমম খুব সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমার বেশ খেয়াল রাখে।মা আর নয়না তো আমার বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। আমারা সারাদিন অনেক গল্প করি।নামমের সাথেও সম্পর্কটা বেশ ভালো চলছে। হঠাৎ নমমের ধাক্কায় ধ্যান ভাঙলো।কি ধাক্কা দিচ্ছেন কেন? নমম বলে উঠল তোমাকে কখন থেকে ডাকছি কি এতো ভাবছো।না কিছু না। আপনি ডাকছেন কেন। সকালে না খেয়ে বেড়িয়েছো এখন কিছু খেয়ে নাও নমম বলল।না এখন কিছু খাব না একেবারে বাড়ি গিয়ে খাব। এমনিতেই আর খুব বেশি সময় লাগবে না। আচ্ছা যা ভালো মনে করো।আমি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলাম ঘন্টা খানেক পর আমারা পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে এসে দেখি আমার কাজিনগুলো সব দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে নমমের কাজ থেকে টাকা আদায় করবে বলে।খালামনি আমাকে আর নমমকে নিয়ে বসালো।আমি শুধু এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বাবাকে খুঁজছি। খালামনিকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা কোথায়। বললেন বাবা নাকি ছাদে আছে।আমি দৌড়ে ছাদের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি বাবা গাছে জল দিচ্ছে। পেছন থেকে আমি বলে উঠলাম বাবা আমি কি করেছি?আমি কি কোন অন্যায় করছি বলো আমাকে। তুমি কেন এভাবে হঠাৎ করে আমার বিয়ে দিলে, কেন আমাকে এড়িয়ে চলো,কেন আমার সাথে কোন কথা বলছো না।বলো কেন বাবা।আমি আর এভাবে পারছি না। তুমি ছাড়া তো আর আমার আর কেউ নেই তুমি এমন করলে আমার খুব কষ্ট হয়।বাবা আমার দিকে ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছে।আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম বাবার চোখে জল। আমার একুশ বছর বয়সে কখনো বাবার চোখে জল দেখিনি।আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম কি হয়েছে বাবা বলো বাবা প্লিজ বলো। বাবা জড়ানো গলায় বললো আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি রে মা।আমি এক ব্যর্থ বাবা। বাবা কথা শুনে মনে হলো কেউ আমার বুকে ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে।না বাবা তুমি এমন করে বলতে পারোনা। তুমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা।নারে মা আমি তোকে রক্ষা করতে পারলাম না। বাবার কথা শুনে বললাম যা হয়েছে আমাকে খুলে বল।বাবা কিছুই বললেন না। অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে দিয়ে কিছু বলানো গেল না।বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললো নমম খুব ভালো ছেলে। তোমায় সুখে রাখবে। নামমের বাবা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। তিনি চেয়েছিলেন তোমাকে পুত্রবধূ করতে। কিন্তু ভাগ্য দেখ তুমি তার পুত্রবধূ হয়েছ ঠিকই কিন্তু সে দেখে যেতে পারলো না।তাই হোক এখন নিচে যাও ছেলেটা ওখানে একা আছে। বাবার কথায় আমি নিচে চলে আসি।এসে দেখি নমমকে এখনও সবাই মিলে ঘিরে রেখেছে।নমম অসহায় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি দেখেও না দেখার ভান করে ঘরে চলে আসি।ঘরে এসে ফোনটা বের করে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘন্টা খানেক পর দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি নমম ঢুকছে গায়ের শার্টটা ঘামে ভেজা। আমার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার কাজিন গুলো কি বিচ্ছু।বলেই ওয়াসরুমে চলে গেল।১৫-২০ মিনিট পর বেরিয়ে এলো।আমি বললাম কোথায় ছিলেন এতক্ষণ।উনি বিরক্ত হয়ে বললেন তোমার কাজিনরা ধরে নিয়ে গেছিল আইসক্রিম খেতে।ও আপনি এতক্ষণ বাসায় ছিলেন না। বিছানায় বসতে বসতে বলল না। দরজায় টোকা পড়তেই আমি এগিয়ে দরজা খুলে দেখি খালামনি।খালামনি বলে জামাইকে নিয়ে খেতে আয়, অনেক বেলা হয়ে গেছে।আমি বললাম তুমি যাও আমরা আসছি। খালামনি চলে গেল। আমি নমমের কাছে এসে বললাম চলুন খেতে ডাকছে।
খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে এসে এসে নমম শুয়েছে।আর আমি গেলাম কাজিন গুলোর কাছে। এসেছি থেকে ওদের সাথে কোন কথা হয়নি…..

#চলবে