চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-০৯

0
465

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_০৯

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

সন্ধ্যাবেলা,

সকলে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাংলোর পাশের খোলা জায়গায় এসে জড়ো হয়েছে।কারণ এখানে পিকনিকের রান্না করা হবে।আরশ,তুর আর রাত মিলে জায়গাটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।চারিদিকে লাইটিং,টেবিল-চেয়ার সাজিয়ে একদম সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে।

আরশ এসে তুরকে বললো,

“তুর রান্না করবে কে?”

“বললো তো সব মেয়েরা মিলে করবে।আর আমরা হলাম হেল্পিং হ্যান্ড।”

“আমি এইসব পারবো নাহ্।তুই সাহায্য কর বসে বসে।”

আরশ ওখান থেকে চলে যেতে নিলে মৌ এসে তার সামনে দাঁড়ালো।মৌ চোখ ছোট ছোট করে বললো,

“বিকালে তো আমাকে জ্ঞান দিয়েছিলে!এখন তোমারও কাজ করতে হবে।”

মৌ আরশকে কিছু বলতে না দিয়ে আরশের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।যা দেখে রাইতা চোখ রাঙিয়ে বসে আছে।মৌ রান্না করছে আর আরশ তার পাশে বসে আছে।আরশ মৌয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“শিশপ্রিয়া তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার আছে।”

মৌ আরশের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।তারপরে বললো,

“কি দিবে?”

“এইসব ঝামেলা শেষ হলে না হয় দিবো।”

মৌ হাসি দিয়ে বললো,
“ওকে।”

আরশও মুচকি হাসলো।

মৌ গালে হাত দিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশ বললো,

“এভাবে কি দেখছো মৌ?”

“আহা!আমার হাবিজিকে মুচকি হাসলে কি কিউট লাগে।আর গালে একটা টোলও পড়ে।”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ হেসে দিলো।

আরশ আর মৌকে এভাবে হাসতে দেখে রাইতা চেয়ার থেকে উঠে বাগানের দিকে চলে গেলো।বাগানে যেতেই তার চোখ কপালে উঠে গেলো।কারণ সে দেখলো রাজ একটা মেয়ের গলায় কিস করছে।যা দেখে রাইতা চরম ক্ষ্যাপে গেলো।সে চিৎকার করে বললো,

“রাজ……”

রাজ পিছনে ফিরে দেখে রাইতা দাঁড়িয়ে আছে।রাজ রাইতাকে দেখে মেয়েটাকে ছেড়ে রাইতার কাছে আসে।

“রাইতা তুমি এখানে?”

“ছিঃতুই আমার বর হয়ে তুই একটা হোটেলের স্টাফের সাথে এইসব করে বেড়াস!”

“রাইতা তুমি যা ভাবছো সবটা ভুল।”

মেয়েটা রাজ আর রাইতার সামনে থেকে চলে গেলো।

“আমি যা নিজের চোখে দেখেছি সেটা ভুল হয় কিভাবে?তুই আমাকে বিয়ে করে আরেক মেয়ের কাছে যাস!তোর তো চরিত্রেরই ঠিক নেই।”

রাজ রেগে গিয়ে বলে,

“তোরও তো চরিত্রের ঠিক নেই।প্রেম করলাম আর বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেলি।যেখানে তোর বর ছিলো।তুই আবার আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলিস?”

“রাজ তুমি কিন্তু নিজের লিমিট ক্রস করছো!”

“রাজ তুই কি করছিস এইসব?তোর কাজ এখনো শেষ হয়নি।এই মেয়েকে তো আমার হাতে রাখতে হবে।”

রাজ মনে মনে বললো।রাজকে চুপ থাকতে দেখে রাইতা বললো,

“কি হলো চুপ হয়ে আছো কেনো?”

রাজ হাসি দিয়ে বললো,

“আরে রাইতা শোনো ওই মেয়েটা হলো আমার এক আত্মীয়।ওর বাবা মারা গেছে তাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ছিলো।তুমি যা ভেবেছো আসলে তেমন কিছু নাহ্।”

“আমি যে দেখলাম তুমি ওর গলায়…….”

রাজ রাইতাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

“রাইতা এই তোমার ভালোবাসা।তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো!”

রাজ কথাগুলো বলে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাইতা এসে রাজের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“সরি রাজ দূর থেকে হয়তো আমিই ভুল দেখেছি।”

রাজ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।রাইতা রাজের গালে একটা চুমু দিলো।রাজ হেসে দিলো।রাজ রাইতার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“চলো আমরা দুজনে চারিপাশটা ঘুরে দেখি।”

রাইতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

“যাক মিথ্যা গল্প বলে বেঁচে গেলাম।এই মেয়ে একদম ব্রেইনলেস।নাহলে শুধু জড়িয়ে ধরা আর গলায় কিস করার পার্থক্য বুঝলো নাহ্।”

রাজ মনে মনে কথাগুলো বলে বাঁকা হাসি দিলো।

—🍁—

রাতের খাবার শেষ হলে আরশ আর মৌ একটা নির্জন জায়গায় এসে দাঁড়ায়।

“হাবিজি আমাকে জেনো কি দিবে বলছিলে।”

আরশ তার পিছন থেকে ব্যাগটা বের করে মৌকে দিলো।ব্যাগটা সে আগেই নিজের কাছে এনে রেখেছে।মৌ ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,

“কি আছে এই ব্যাগে?”

“খুলে দেখো।”

মৌ ভ্রু কুচকে ব্যাগটা খুললো।মৌ ব্যাগটা খুলতে দেখলো ব্যাগ ভর্তি চকলেট।মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।সে একবার আরশের দিকে আরেকবার ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছে।মৌ হঠাৎ করে আরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ,থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।”

মৌ আরশের গলা ঝুলে তার গালে একটা চুমু দিলো।আরশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মৌ আরশকে ছেড়ে বললো,

“কি হলো হাবিজি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো?আর ইউ ব্লাশিং?”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ হালকা কেঁশে বললো,

“অনেক রাত হয়েছে এখন রুমে যাও।”

আরশ হাঁটা শুরু করলে মৌ আরশের হাত ধরে ফেললো।মৌ আরশের সামনে এসে দাঁড়ালো।তারপরে চকলেটের ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট ক্যাটবেরি বের করলো।ক্যাটবেরীর প্যাকেট খুলে তা থেকে এক টুকরো ভেঙে নিলো।তারপরে পা থেকে জুতো খুলে এক সাইডে রেখে আরশের জুতোর উপর উঠে দাঁড়ালো।আরশ তো শান্ত চোখে মৌয়ের কর্মকাণ্ড দেখছে।তার হার্টবিট রীতিমতো বেড়ে গেছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।মৌ আরশের মুখে ক্যাটবেরির টুকরোর এক সাইড গুঁজে দিলো।তারপরে আরশের গলা জড়িয়ে ধরে আরেক সাইডে সে নিজে কামড় দিলো।মৌয়ের ঠোঁটের সাথে আরশের ঠোঁট স্পর্শ হলো।মৌয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে আরশ এক প্রকার চমকে উঠলো।মৌ হালকা করে আরশের ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে আরশের থেকে দূরে সরে আসলো।

আরশ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।মৌ আরশের অবস্থা দেখে জোরে হেসে দিলো।তারপরে হাসি থামিয়ে বললো,

“ভয় পেলে তোমাকে আরো বেশি কিউট লাগে।ইশ!তুমি আমাকে এতো লজ্জা পাও।যাক ভালো হয়েছে একদম লক্ষী বর পেয়েছি আমি।”

মৌ চকলেট খেতে খেতে ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো।আরশ তার জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

“এই মেয়ে কি পেত্নী নাকি?হঠাৎ করে এমন পাল্টে গেলো কেনো?আমার বুক যা কাঁপছে মনে হয় এখনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবো।নাহ্ এখন না ঘুমালে হয়তো জানটা বের হয়ে যাবে।”

আরশ বিড়বিড় করতে করতে তার রুমের দিকে হাঁটা দিলো।রুমে এসে দেখলো তুর ঘুমিয়ে গেছো।তাই আরশ বেশি দেরি না করে তুরের পাশে শুয়ে পড়লো।

“এখন না হয় রাতে আলাদা ঘরে থাকি।বাড়িতে গেলে কি হবে আল্লাহ জানে!”

/🌸/

মৌ আর দিথি বসে হাসতে হাসতে শেষ।

“মৌ তুই পারিসও বটে।দ্বিতীয়ও দিনই লিপকিস করে ফেললি।বেচারা তো একটু ভয় পাবেই।”

“আরে ধূর ছোট্ট একটা চুমু দিয়েছে।ভালো করে দিতে পেরেছি নাকি!”

“থাম মা জননী।আপনি এখন ঘুমান।এইসব রোমান্টিক কথাবার্তা আমাকে বলিস নাহ্।তারপরে দেখা গেলো আমারও বিয়ে করতে মন চাইবে।”

দুই বান্ধবী হাসতে হাসতে ঘুমিয়ে পড়লো।

_|💛|_

নিপা বেগম আর আমিন সাহেব বসে বসে গল্প করছেন।

“মৌ মেয়েটা অনেক ভালো।কি কাজের মেয়ে!একটু দুষ্টু হলে কি হয়েছে।সবই পারে সে।”

“বাহ্ তাহলে তো দেখছি নতুন বৌমাকে মেনে নিয়েছো।”

“আরে মৌকে তো আমি পছন্দই করি।মেনে নেওয়ার আর কি আছে!তবে দুজনে জানি সুখে থাকে আল্লাহর কাছে তাই চাই।”

“হ্যাঁ ছেলেটা জানি জীবনে একটু শান্তি পায়।”

`✨′

আরশ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তুর নাই।আরশ বিছানায় বসতেই তার রুমের কলিং বেল বেজে উঠলো।আরশ চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দেখলো মৌ দাঁড়িয়ে আছে নাস্তা ট্রে হাতে।মৌকে দেখেই আরশের রাতের ঘটনার কথা মনে পড়লো।

“এই যে হাবিজি সামনে থেকে সরো।এতোগুলো খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি!”

আরশ দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াতে মৌ রুমে প্রবেশ করলো।আরশ দরজার লক লাগিয়ে মৌয়ের পিছনে রুমে আসলো।মৌ খাবারের ট্রে টেবিলে রেখে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমরা দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।”

“কিন্তু……”

আরশকে থামিয়ে মৌ বললো,

“কোনো কিন্তু নাহ্।যা বললাম তাই করো।”

আরশ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আরশ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মৌ বসে বসে আরশের মোবাইল টিপছে।

“আমার মোবাইল দিয়ে কি করছো?”

“দেখছিলাম কোনো গুপ্তধন লুকানো আছে নাকি!এখনকার ছেলেদের তো বিশ্বাস নেই।”

“আমার গুপ্তধন তো অন্য কেউ নিয়ে গেছে।”

আরশ কথাটা বলে মলিন হাসি দিয়ে সোফায় বসলো।মৌ গিয়ে আরশের পাশে বসলো।

“রাইতা আপুকে অনেক ভালোবাসতে তাই-না?”

“এইসব কথা বাদ দেও মৌ।”

“আরশ আমি কখনো রাইতা আপুকে তোমার মন থেকে মুছে ফেলতে চাইবো নাহ্।রাইতা আপুকে যতোটা ভালোবাসতে তার থেকে একটু না হয় আমাকে বেসো।তাহলেই আমি খুশি।”

“কিন্তু আমি তো আমার মন থেকে রাইতাকে মুছে ফেলছি।ওর চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিয়েছি।এখন যেটা আছে সেটা কিছুদিনের মোহ।তাও কেটে যাবে।”

মৌ আর কথা না বাড়িয়ে আরশের মুখের সামনে খাবার ধরলো।আরশ অবাক হয়ে বললো,

“আমি তো অসুস্থ নাহ্।আর আমার হাতেও তো কিছুই হয়নি।”

মৌ মুচকি হেসে বললো,

“কালকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিয়েছো আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।আর মা বলেছে তুমি নাকি ইদানীং ঠিকভাবে খাচ্ছো নাহ্।আমি জানি তোমার যত্ন নেই।”

“মা মানে তোমার আম্মু কিভাবে জানলো আমি খাচ্ছি নাকি না খাচ্ছি?”

“আরে গাধা ওটা আমার না তোমার মা।মানে আমার শ্বাশুড়ি মা।এতো বকবক না করে খেয়ে নেও।”

আরশ মৌয়ের হাত থেকে খাবারটা মুখে নিলো।তারপরে খাবার তুলে মৌকে খাইয়ে দিলো।মৌ খাবারটা মুখে নিয়ে মুচকি হাসলো।খাওয়া শেষ হলে মৌ আরশের পাশে এসে বসলো।তারপরে আরশের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমার একটা জিনিস চাই।”

“কি চাই তোমার?”

মৌ তার মুখ আরশের কানের সামনে এনে বললো,

“একটা ছোট্ট আরশ।”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ স্তব্ধ হয়ে গেছে।সে মৌয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো কিছু বলছো না যে!দিবে না আমায়?”

“মৌ এখন এইসব নিয়ে না কথা বললে হয় নাহ্।”

মৌ কিছু না বলে আরশের গলা ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

#চলবে……………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]