চিরকুট প্রেম পর্ব-০১

0
426

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

“তুই আমার চোখের সামনে আসবি না। আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার জিনিসপত্র ধরার সা’হস কি করে হলো তোর?

রাহাতের ধম’ক শুনেই প্রিয়া ভয় পেয়ে যায়। গলার স্বর নিচু করে বলে,

“আমি তো শুধু…

প্রিয়া কথা শেষ করার আগেই রাহাত আবারও ধম’ক দিয়ে বলে,

“কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। আমার রুম থেকে এখনি বের হয়ে যা। আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে যেনো তোকে কখনো না দেখি।

লজ্জা’য়, অপমানে প্রিয়ার চোখে পানি চলে এলো। রক্ত’জবার ন্যায় চোখ দুটি লাল বর্ণ ধারণ করল। প্রিয়া একবার রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাহাত সাথে সাথেই হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা আ’ছাড় দিয়ে ভে’ঙ্গে ফেলল।

প্রিয়া রুম থেকে বের হতেই রাহাতের মা প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। প্রিয়ার চোখে মুখ দেখেই বুঝে গেছেন রাহাত প্রিয়ার সাথে খারা’প ব্যবহার করেছে। উনি প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“রাহাত কি করেছে তোর সাথে?

প্রিয়া কিছু না বলে রাহাতের মাকে জড়িয়ে ধরল। কান্না’ভেজা কন্ঠে বলল,

“তোমার ছেলে আমায় সবসময় ব’কা দেয় খালা। আমি কি এমন অন্যা’য় করেছি বল? আমাকে কেন সবসময় ব’কা দিবে?

রাহাতের মা প্রিয়াকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুই তো জানিস আমার ছেলেটা একটু রা’গী । রে’গে গেলে যা ইচ্ছে তাই বলে দেয়।

প্রিয়া রাহাতের মাকে ছেড়ে দাঁড়াল। চোখের পানি মুছে বলল,

“আমি বাসায় যাব খালা।

“তোকে তো বললাম দুপুরে খেয়ে যেতে। এখনি চলে যাবি?

“আমার এখানে ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যাব।

“খেয়ে তারপর যাস।

“আমি এখনি যাব।

প্রিয়া সোজা হেঁটে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। মনস্থির করল আজকে আর রাহাতের সামনে যাবে না। রাহাতদের বাসা থেকে প্রিয়াদের বাসায় যেতে দশ মিনিট সময় লাগে। প্রিয়া সম্পূর্ণ রাস্তায় মাথা নিচু করে হেঁটে গেল। বাসায় গিয়েই চিল্লি’য়ে প্রিয়ার আম্মুকে ডাকল,

“আম্মু, ও আম্মু।

প্রিয়ার ডাক শুনে প্রিয়ার মা এগিয়ে এলো। প্রিয়ার সামনে এসে বলল,

“এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি। যাওয়ার সময় বললি বিকেলে আসবি কিন্তু এখন চলে আসলি যে?

প্রিয়া মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে বলল,

“সন্ধ্যায় রাহাত ভাইয়া পড়াতে আসলে বলবা আমার শরীর ভালো নেই। আমি আজকে পড়বো না।

“তোর শরীরের তো কিছু হয়নি। শুধু শুধু মিথ্যা কথা কেন বলবো?

মায়ের প্রশ্নে প্রিয়া রে’গে গেল। রাগান্বিত স্বরে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি বলতে বলেছি তাই বলবা। আমি আজকে পড়বো না মানে পড়বো না।

প্রিয়া দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। প্রিয়ার মা কিছু বুঝতে না পেরে রাহাতের মাকে কল করে সব জেনে নিল। তারপর প্রিয়ার রুমে গিয়ে প্রিয়াকে ডাকল। কিন্তু প্রিয়া কিছুতেই দরজা খুলল না। রাহাতের করা আচরণে প্রিয়া অনেক কষ্ট পেয়েছে। যার ফলে সারাদিন দরজা লাগিয়ে রুমে একা একা বসে থাকবে।

প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী আজও সন্ধ্যায় রাহাত প্রিয়াকে পড়াতে আসলো। রাহাত প্রিয়াকে ইংরেজি পড়ায়। রাহাত প্রিয়ার রুমের সামনে যেতেই প্রিয়ার মা বলল,

“রাহাত আজকে প্রিয়ার শরীরটা ভালো নেই। তুই বরং কালকে এসে পড়িয়ে যাস।

প্রিয়ার মায়ের কথায় রাহাত নিজের ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে হাত দুটো বুকের মাঝ বরাবর রাখল। শীতল কন্ঠে বলল,

“দুপুরেই শরীর ভালো ছিল। এখন সন্ধ্যা হতে না হতেই শরীর ভালো না। তোমার মেয়ের কি এমন শরীর খারাপ হয়েছে খালামনি?

প্রিয়ার মা কি বললে ভেবে পেল না। রাহাত উনাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,

“তোমার মেয়েকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। ও যে তোমাকে আগে থেকে এই কথা গুলো শিখিয়ে রেখেছে এটা বুঝতে আমার এক মিনিটও সময় লাগে নি। এখন সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।

প্রিয়ার মা রাহাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাহাত প্রিয়ার দরজার সামনে গিয়ে দরজায় হালকা ধাক্কা দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

“প্রিয়া দরজাটা খুল।

রাহাত ডাক দেওয়ার মিনিট দুয়েক পর প্রিয়া দরজাটা খুলে দিল। সারাদিন না খাওয়ায় চেহারার বেহাল দশা। চুল গুলো এলোমেলো। প্রিয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে সোজা পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। রাহাত রুমে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে প্রিয়ার মা রাহাতের উদ্দেশ্যে বলল,

“সারাদিন কিছু খায়নি। পড়া না পারলেও ব’কা দিস না।

রাহাত বিরক্তি’কর কন্ঠে বলল,

“তোমাদের আশ’কারায় আজ ওর এই অবস্থা।

রাহাত প্রিয়াকে পড়াতে গেল। রাহাত ভেবেছিল আজকে প্রিয়া কোনো পড়াই পারবেনা। কিন্তু রাহাতকে অবাক করে প্রিয়া সব পড়াই দিল। পড়া ব্যাতিত কোনো কথাই বলল না। রাহাত প্রিয়াকে পড়ানো শেষ করেই চলে গেল।

রাত আটটার দিকে খাবার নিয়ে প্রিয়ার রুমে উপস্থিত হলো নিলয়। নিলয় রাহাতের চাচাতো ভাই। রাহাতদের বাসায় থাকে। প্রিয়া সারাদিন কিছু খায়নি শুনেই তাড়াহুড়ো করে প্রিয়ার কাছে চলে এসেছে।

নিলয় রুমে ঢুকে দেখল প্রিয়া থম মেরে বিছানায় বসে আছে। নিলয় খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে প্রিয়ার পাশে বসে বলল,

“প্রিয়া , শুনলাম তুমি নাকি সারাদিন কিছু খাওনি।

প্রিয়া কোনো উত্তর দিল না। চুপ করেই রইল। নিলয় আবারও বলল,

“তোমাকে কতবার বলেছি খাবারের সাথে রা’গ দেখাবেনা। তাও তুমি প্রতিবার এমন করো। এখন প্লেটের খাবারটা শেষ করো দেখি।

প্রিয়া আগের ন্যায় চুপ করেই রইলো। নিলয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আমার কথা শুনবে না?

প্রিয়া এবার নড়েচড়ে বসল। রাহাত সব সময় প্রিয়ার সাথে রুড বিহেভ করলেও নিলয় প্রিয়ার সব আবদার পূরণ করে। প্রিয়া চাইলেও নিলয়কে অবগ্যা করতে পারে না। প্রিয়া নিলয়ের দিকে ফিরে বলল,

“আমি তো রাহাত ভাইয়ার একটা উপন্যাসের বই হাতে নিয়েছিলাম। এতে উনার কি এমন ক্ষ’তি হয়েছে বলুন। যার জন্য আমাকে ধম’ক দিয়ে উনার রুমে যেতেই মানা করলেন।

“রাহাতের প্রিয় কোনো উপন্যাস হয়তো ছিল। তোমাকে ধমক দিয়েছে বলে তুমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবে? খাও এখন।

প্রিয়া কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শেষ করলো। খাবার শেষ হতেই নিলয় বলল,

“এবার একটা হাসি দেও তো।

“আমার ইচ্ছে করছে না। আমি একটু একা থাকতে চাই।

নিলয় প্রিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই প্রিয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দায় দাঁড়ানোর মিনিট পাঁচেক পরেই বারান্দায় কিছু পড়ার আওয়াজ হলো। প্রিয়া তাকিয়ে দেখল একটা কাগজে ইটের কনক্রিট মুড়িয়ে ফেলেছে। প্রিয়া কাগজটা খুলে দেখল কাগজে কয়েকটা শব্দে লেখা ,

“শুনছো প্রিয়,
তোমার মুখের সৌন্দর্য ওই মিষ্টি হাসি
যেই হাসি আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।

#চলবে