চিরকুট প্রেম পর্ব-০২

0
235

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

দুই লাইনের এই ছোট্ট চিরকুট পড়ে প্রিয়ার বুকের ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে গেল। কে লিখেছে এই প্রেমবার্তা? এত সুন্দর করে বুঝি লিখতে আছে? দুই লাইনের এই শব্দ গুচ্ছ লেখার মানুষটাকে দেখার জন্য অষ্টাদশীর হৃদ’য় যে ব্যাকু’ল হয়ে ওঠেছে।

প্রিয়া বারান্দা দিয়ে নিচে তাকাল। কিন্তু কোথাও তো কোনো মানুষ নেই। তাহলে এই চিরকুটটা আসলো কোথা থেকে? কে দিল এই চিরকুট? প্রিয়া আবারও চিরকুট টা খুলে পড়ল। আঠারো বছরের জীবনে অনেক প্রেম প্রস্তাব পেলেও, এমন অদ্ভু’ত ভাবে কেউ কখনো চিরকুট দেয়নি।

প্রিয়া চিরকুট হাতে রুমে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো চিরকুট টা কার হতে পারে। কিন্তু এমন কাউকে পেল না যে এই চিরকুট টা দিতে পারে। প্রিয়া চিরকুটের মালিককে চিনতে না পারায় বুকের মাঝে এক ঝাঁক বেদ’না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
__________
সকালে প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল সকাল ৮ টা ৩০ বাজে। প্রিয়া এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। অনেকদিন হলো কলেজে যাওয়া হয় না। প্রিয়া ঠিক করলো আজকে কলেজে যাবে। বাসা থেকে সিএনজি করে কলেজে যেতে দশ মিনিট সময় লাগবে।

প্রিয়া একবার বারান্দায় গেল। বারান্দায় গিয়ে দেখতে পেল কালকে রাতের মত আজকেও একটা কাগজ পড়ে আছে। মূহুর্তের মধ্যে প্রিয়ার বুকের ধুক’পুক বাড়তে লাগলো। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল তাতে লেখা,

“শুভ সকাল প্রিয় পাখি।
জানো তো, আগে কখনো চিরকুট লিখিনি। তোমাকে কিভাবে বোঝাতাম আমি তোমাকে ভালবাসি? তোমার সামনে গিয়ে বললে তুমি হয়তো কখনো বিশ্বা’সই করবে না আমি তোমায় ভালোবাসি। তাই তো এই চিরকুটের কথা মাথায় এলো। তোমায় ভেবে লিখতে বসলাম চিরকুট। আমি তোমার ঠোঁটে’র হাসির কারণ হতে চাই প্রিয়। আমি খুব করে তোমায় ভালোবাসতে চাই।

প্রিয়া চিরকুট টা পড়ে মুচকি হাসল। চিরকুট টা বুকের মাঝে চেপে রাখল। বুকের ভেতর টা দ্রু’ত গতিতে লাফা’চ্ছে। চিরকুট টা পড়ে প্রিয়ার মুখ’মন্ডলে ক্ষানিক’টা লজ্জা’র আভাস ফুটে উঠেছে। “আমি তোমায় খুব করে ভালোবাসতে চাই” লাইনটা পড়েই প্রিয়ার ল’জ্জা লাগছে। প্রিয়া কিছুক্ষণ চিরকুট টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর রুমে গিয়ে একটা ডায়েরির ভাঁজে য’ত্ন করে রেখে দিল চিরকুট টা।

প্রিয়া মোবাইলটা হাতে নিয়ে নিলয়কে কল দিল। রিং হওয়ার কয়েক সেকে’ন্ড পরই কল রিসিভ করল হল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভী’র গলায় বলল,

“কি জন্য কল দিয়েছিস?

ফোনের ওপাশ থেকে রাহাতের গম্ভী’র ক’ণ্ঠ শুনেই প্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সকাল বেলা এত গম্ভী’র গলায় কথা বলার কি আছে? একটু সুন্দ’র করে কি কথা বলা যায় না? প্রিয়া নিজের মনে প্রশ্ন গুলো করলেও মুখে বলার সাহ’স পেল না। অতঃপর মুখে বলল,

“আমি আজকে কলেজে যাব।

“আর কিছু বলবি?

“না।

রাহাত ঠা’স করে কলটা কেটে দিল। প্রিয়া নিজেই বিড়’বিড় করে বলল,

“খাটা’স লোক একটা।

রাহাত আর নিলয় একই অফিসে কাজ করে। প্রিয়া কলেজে গেলে ওরাই অফিস যাওয়ার সময় প্রিয়াকে কলেজে নামিয়ে দেয়।

প্রিয়া নিচে গিয়ে নাস্তা করে এলো। তারপর রুমে এসে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেল। তৈরি হয়ে ঘড়িতে দেখল ৯ টা ১০ বাজে। প্রিয়া তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে গেল। বাসার সামনে দাড়াতেই দেখল রাস্তার সামনে কয়েকটা ছেলে ওর দিকে বা’জে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া মিনিট দুয়েক দাড়াতেই গাড়ি চলে এল। গাড়ি থামতেই নিলয় গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। প্রিয়াকে দেখে বলল,

“আমি একটু আন্টির সাথে দেখা করে আসছি।

প্রিয়া মাথা নাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একবার আড়চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখল রাহাত ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া রাহাতকে দেখেই গাড়িতে উঠছে না। আবার ছেলেগুলোকে বা’জে দৃষ্টি’তে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্ব’স্তি ও হচ্ছে।

নিলয় প্রিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে এল। প্রিয়ার দৃ’ষ্টি অনুসরণ করে দেখল প্রিয়া ওপাশের ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় ছেলে গুলোর তাকানোর মানে বুঝতে পেরে বলল,

“দেখছো তো ছেলেগুলো কি রকম তাকিয়ে আছে। তারপরও গাড়িতে না উঠে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

প্রিয়া কিছু বলার আগেই রাহাত গাড়ির ভিতর থেকে কর্ক’শ গলায় বলল,

“গাড়িতে কেন উঠবে? ছেলেগুলোর তাকানো দেখে তো ওর ভালো লাগছে। নিলয় তুই বরং একটা কাজ কর। ওকে ছেলেগুলোর সামনে দিয়ে আয়। এতে ওর ও ভালো লাগবে আর ছেলেগুলোর ও ভালো লাগবে।

রাহাতের এই তাচ্ছি’ল্যমাখা কথায় প্রিয়ার শরীরটা রী-রী করে উঠলো। প্রিয়া আহ’ত দৃষ্টি’তে নিলয়ের পানে চাই’ল। নিলয় প্রিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

“তুমি গাড়িতে গিয়ে বসলেই পারতে।‌ যাইহোক এখন চল।

প্রিয়া গাড়িতে গিয়ে বসল। কলেজের সামনে প্রিয়াকে নামিয়ে দিতেই প্রিয়া কলেজে চলে গেল। ৪ টা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বাসায় ফিরে গেল।
_________
সন্ধ্যার দিকে রাহাত প্রিয়াকে পড়াতে আসলো। পড়া না পাড়ায় প্রিয়ার সুন্দ’র মসলিন হাতে স্কেলে’র বাড়িও দিল।

প্রিয়া ছল’ছল চোখে রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাত বলল,

“খালামনিকে ডেকে নিয়ে আয়।

প্রিয়া আমতা-আমতা করে বলল,

“কেন?

“যা বলছি তাই কর।

প্রিয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে মাকে ডাকতে চলে গেল। ফিরে এসে দেখল রাহাত মোবাইল টিপছে। প্রিয়া চেয়ারের কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। প্রিয়ার মা রুমে আসতেই রাহাত বলল,

“খালামনি আমি অনেক দিন তোমার হাতের রান্না খাই না। কালকে আমি তোমার হাতের রান্না খাবো। আমার পছন্দের সবকিছু রান্না করবা।

প্রিয়ার মা হেসে বলল,

” ঠিক আছে বাবা।

রাহাত চলে যেতেই প্রিয়া বই খাতা গুছাতে লাগলো। তখনি বাংলা বই থেকে একটা কাগজ পড়ল। প্রিয়া কাগজটা হাতে নিল। এই চিরকুট টা বাকি দুইটা কাগজের মতো সাদা কাগজে লেখা না। লাল কাগজের চিরকুট। প্রিয়া চিরকুট খুলে পড়ল,

“তুমি এতো বেখে’য়ালি কেন বলতো? শুনো, তুমি আমার ভালোবাসা। আমার মানে একা’ন্তই আমার। তোমাকে দেখার অধিকার ও আমার। আমার প্রিয় মানুষ শুধুই আমার, একা’ন্তই আমার।

#চলবে