চিরকুট প্রেম পর্ব-০৫

0
166

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃলক্ষী_দেব

প্রিয়া অবাক দৃষ্টি’তে বাচ্চা’টির দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চাটি মুহূর্তের মধ্যে প্রিয়ার চোখের আড়াল হয়ে যায়। প্রিয়া এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখল কাউকে দেখা যায় কি-না। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না।

প্রিয়া নদীর পাড়ে কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে যায়। চিরকুট পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে মনে জেঁকে বসেছে। কখন আজকের দিনটি শেষ হবে। আবারও সকাল হবে। সকাল হতেই চিরকুট দাতার চিরকুট হাতে পাবে।

সময় যে শেষই হয় না। সারাদিন প্রিয়া ছট’ফট করে কাটতে থাকে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে যায়। কিন্তু মোবাইল ও যে ভালো লাগছে না। মনের মাঝে শুধুই চিরকুট পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে জেগে উঠেছে।

আচ্ছা। অচেনা, অজানা একটা মানুষের সাথে চিরকুটের মাধ্যমে প্রেম করাটা কি ঠিক হবে? যদি চিরকুট দাতা খারা’প হয়? চিরকুট দাতার যদি কোন খারা’প উদ্দেশ্য থাকে? প্রিয়াকে চিরকুটের মাধ্যমে নিজের মায়ায় ফেলে যদি খারা’প কিছু করে তাহলে কি হবে?

এই জেনা’রেশনে এসে প্রাচীন কালের মতো চিরকুট প্রেমের কথা কাকে বলবে সে? যেই জেনা’রেশনে চেনা মানুষটা মূহুর্তের মধ্যেই অচেনা হয়ে যায়। প্রিয় মানুষটা ছেড়ে যেতে দুবারও ভাবে না। সেই জেনা’রেশনে দাঁড়িয়ে অজানা, অচেনা একটা মানুষের সাথে চিরকুট আদান-প্রদান করছে। এ কথা কাকে জানাবে সে? প্রিয়া আর ভাবতে পারছে না।

প্রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আম্মুর কাছে গিয়ে বলল,

“আম্মু আমি একটু খালার বাসায় যাচ্ছি।

প্রিয়া আম্মুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে গেল। কেননা আম্মু বাধা দেবে না। প্রিয়া আস্তে আস্তে হেটে ১০ মিনিটের রাস্তায় ১৫ মিনিট গেল। খালার বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজালো।

কলিং বেল বাজানোর মিনিট দুইয়ের মাথায় প্রিয়ার খালা দরজা খুলে দিল। প্রিয়া রুমে গিয়েই খালাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার ভালো লাগছে না খালা। তাই চলে এলাম।

প্রিয়ার খালা হাসি দিয়ে বলল,

“ভালো করেছিস চলে এসে। আমারও একা একা ভালো লাগছিল না।

প্রিয়া গিয়ে সোফায় বসল। প্রায় সাথে সাথেই কলিং বেল বেজে উঠল। প্রিয়ার খালা বিরক্তি’কর ভঙ্গি’তে বলল,

“এখন আবার কে এলো।

দরজাটা খুলে দিতেই দেখতে পেল নিলয় এসেছে। নিলয়কে দেখে ওনার বির’ক্ত ভাবটা চলে গেল। নিলয়কে একা দেখে বলল,

“তুই একা যে। রাহাত কোথায়?

“আসছে।

বলেই নিলয় ভেতরে ঢুকল। প্রিয়া নিলয়ের দিকে তাকাতেই বুকটা ধুক করে উঠলো। নিলয়ের হাতে কয়েকটি রঙিন কাগজ। এমন রঙিন কাগজেই তো চিরকুট দাতা তাকে চিরকুট দেয়। রঙিন কাগজ দিয়ে নিলয়ের কি কাজ?

নিলয় প্রিয়াকে দেখে বলল,

“তুমি কখন আসলে?

প্রিয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“মাত্রই এসেছি।

“আচ্ছা বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

প্রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। নিলয় রুমে গেল। রাহাত আর নিলয় একই রুমে থাকে। নিলয় রুমে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পর রাহাত বাসায় এলো। রাহাত প্রিয়াকে দেখেই কেমন অদ্ভু’ত দৃষ্টি’তে প্রিয়ার দিকে তাকাল। এমন দৃষ্টির মানে প্রিয়ার জানা নেই।

প্রিয়া রাহাতের থেকে চোখ ফেরাতেই রাহাত রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর নিলয় ফিরে এসে প্রিয়ার উদ্দেশ্য বলল,

“চলো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে চাই। অনেক দিন হলো কোথায় বের হও না।

নিলয় কথাটা বলার সাথে সাথেই রাহাত রুম থেকে বেরিয়ে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

“ঘুরতে গেলেই হবে না। আর আধা’ঘণ্টা পর পড়াতে যাব। কোথায় গেলে আধা’ঘন্টার মাঝে ফিরে আসতে হবে।

নিলয় হাসি মুখে বলল,

“আধা’ঘন্টাই যথে’ষ্ট।

নিলয় প্রিয়াকে নিয়ে রাস্তায় বের হলো। প্রিয়া বি’রস মুখে বলল,

“আধা’ঘন্টার মধ্যে কোথায় নিয়ে যাবেন?

“আজকে বরং রিকশায় ঘুরি। রাস্তায় কোথাও ফুচকার দোকান পেলে তোমাকে ফুচকা খাইয়ে চলে আসব।

ফুচকার কথা শুনে প্রিয়ার মন ভালো হয়ে গেল। বেশিরভাগ মেয়েদের ফুচকা অতি প্রিয়। যদি বলা হয় সারাদিন ভাত না খেয়ে ফুচকা খেতে তাহলে মেয়েরা নির্দ্বি’ধায় রাজি হয়ে যাবে। নিলয় বাসার সামনেই একটা রিকশা পেয়ে গেল। দুজন রিকশায় উঠতেই রিকশা চলতে শুরু করল। রিকশা করে প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা যেতেই প্রিয়া বলল,

“নিলয় ভাইয়া ওই যে ফুচকার দোকান।

নিলয় প্রিয়ার কথা শুনে রিকশা থামাতে বলল। রিকশা থামতেই প্রিয়া দোকানের সামনে চলে গেল। নিলয় রিকশা ভাড়া মিটিয়ে আসতেই হু’ট করে নিলয়ের জুতা ছিঁড়ে গেল। নিলয় প্রিয়ার কাছে এসে বলল,

“দেখেছো তোমাকে ফুচকা খাওয়াতে গিয়ে কি অঘট’ন ঘটল।

প্রিয়া ফুচকা মুখে দিতে দিতে বলল,

“সমস্যা কি? আরেক জোড়া কিনে নিবেন।

নিলয় চুপচাপ প্রিয়ার খাওয়া দেখতে লাগল। প্রিয়ার খাওয়া শেষ হতেই বিল মিটিয়ে জুতা কিনতে একটা দোকানে গেল। এক জোড়া জুতা নিলয়ের বেশ পছন্দ হল। নিলয় দোকানদারকে বলল,

“এই জুতা টা দুই জোড়া দিয়ে দেন।

নিলয়ের কথায় প্রিয়া ভ্রুঁ কুঁচ’কে তাকাল। অবাক কন্ঠে নিলয়কে বলল,

“দুই জোড়া জুতা দিয়ে কি করবেন?

“এক জোড়া আমার আর এক জোড়া রাহাতের।

“রাহাত ভাইয়ার যদি জুতা পছন্দ না হয়।

প্রিয়ার কথায় নিলয় হেসে বলে,

“রাহাত আর আমার পছন্দ একই। সব সময় আমাদের জন্য একই রকম জিনিস কেনা হয়।

জুতা কিনে ওরা বাসায় ফিরে এল। বাসায় ফিরার সাথে সাথেই রাহাত প্রিয়াকে নিয়ে প্রিয়াদের বাসায় গেল। রাহাত পড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই প্রিয়া চিরকুটের কথা মনে পড়ল। সকাল হবার অপেক্ষায় ছট’ফট করতে লাগল‌ মন।

#চলবে