চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-০৮

0
526

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৮

জয়নব বেগম অনবরত দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আরাদ এখনও সায়েনের হাত দুটো ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়েন ভয়ে কাঁপছে, চোখে মুখে তার ভয় স্পষ্ট। আরাদ ভেবে পায় না যে এতো ভয় কেন পায় ওর মা’কে??সায়েন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,’হাত ছাড়ুন মা ডাকছে।’

আরাদ হেসে বলল,’তুমি তো চেঁচাবে বলেছিলে। তো এখন চেঁচাও??আমি দেখি!!’

‘দেখুন ফাজলামি করবেন না। আপনি তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়ুন মা দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে প্লিজ!!!’

আরাদ সায়েনের হাত ছেড়ে দিলো। তারপর বলল,’কোথায় লুকাব আমি??’
সায়েন এদিক ওদিক তাকালো উপায়ন্তর না দেখে বলল,’খাটের নিচে লুকান।’

‘কি!!!এই মাত্র গোসল করেছি ধুলোবালি মাখতে পারব না। অন্য জায়গা খোজো!!’

সায়েনের এবার রাগ হচ্ছে। একে তো মায়ের কাছে জবাবদিহি করতে হবে আর এই লোকটা অসভ্যতামি শুরু করে দিয়েছে। সায়েন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’তাহলে আলমারি তে লুকান। তাড়াতাড়ি চলুন।’

সায়েন আলমারি খুলে দিল আরাদ ঢুকে পড়লো। নিজেকে ঠিকঠাক করে দ্রুত দরজা খুলে দিল সায়েন। জয়নব বেগম রুমে ঢুকতে ঢুকতে ভ্রু কুটি করে তাকালো সায়েনের দিকে। সায়েন বারবার ঢোক গিলছে। জয়নব বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,’দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেন??কি করছিলে রুমে বসে??’
সায়েন আমতা আমতা করতে লাগলো কোনরকমে নিজেকে সামলে উওর দিলো,’ব বাথরুমে ছিলাম,গোসল করতে গিয়ে ছিলাম।’

বলেই জিভ কামড় দিলো সায়েন। কি বলতে কি বলে ফেললো??গোসল করতে তো আরাদ ঢুকেছিল!! ভুলভাল বলে ফেলার জন্য আরও ভয় হচ্ছে সায়েনের। জয়নব বেগম বড়বড় চোখে তাকালেন। তার চোখে বিষ্ময় তিনি বললেন,’এতো রাতে গোসল করছিলে??’

‘ন না মা মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। বাথরুমে ছিলাম আমি। আসলে লিমা আপুর বিয়েতে কিভাবে সাজবো গোসল করব সেটা নিয়ে ভাবছিলাম তো তাই মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে।’
জয়নব বেগম কিছুক্ষণ সায়েনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,’তোমার আলমারিতে আমার জলপাই রঙের একটা শাড়ি আছে ওটাই নিতে এসেছি।’

সায়েনের হাত আপনাআপনি বুকে চলে গেল। ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে ওর। এখন ওর মা আলমারি খুলবে নাকি?? তাহলে তো সব শেষ। আজকে বাড়ি থেকে বের করেই দেবে। সায়েন নিচু স্বরে বলল,’আমি দিচ্ছি তুমি বরং রুমে যাও।’

‘নাহ এখন দাও আমি লাগেজ গোছাচ্ছি। আমি দাঁড়িয়েছি জলদি করো।’

সায়েন কি করবে বুঝতে পারছে না। মায়ের সামনে আলমারি খুললে তো আরাদকে দেখে ফেলবে। সায়েনের এবার কান্না পাচ্ছে। বুক ধড়ফড় করছে, কিন্তু জয়নব বেগম হঠাৎ সায়েনকে অবাক করে দিয়ে খাটের উপর বসলো। এতে সায়েন যেন দ্বিতীয় বার প্রাণ ফিরে পেল। কারণ খাট থেকে আলমারি বেশ দূরে। ওখান থেকে আলমারিতে কে আছে দেখা যাবে না। সায়েন গুটি গুটি পায়ে আলমারির কাছে গেল। দরজা হালকা করে খুলল। যাতে ওর মা আরাদকে দেখতে না পায়। আলমারি খুলে সায়েন অবাক। আরাদ শাড়িটা হাতে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে সায়েনের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়েন মাথা ঘুরিয়ে একবার মা’কে দেখে নিলো। সায়েন আরাদের থেকে শাড়ি নিতে চাইলো। কিন্তু আরাদ শক্ত করে শাড়িটা ধরে আছে। সায়েন শাড়ি ধরে টানছে কিন্তু আরাদ ছাড়ছে না। সায়েন চোখের ইশারায় আকুতি করছে কিন্তু আরাদ ছাড়ছে না। ঠোঁটে তার দুষ্টু হাসি ঝুলে আছে। সায়েনের রাগ তরতর করে বাড়ছে। এই ছেলের কি ধরা পরার ভয় নেই??ধরা পরলেই বা কি হবে??যা হওয়ার তা তো সায়েনের হবে। হঠাৎ জয়নব বেগম বলে উঠলেন,’শাড়ি পাচ্ছো না??’

সায়েন মাথা ঘুরিয়ে মেকি হেসে বলল,’খ খুঁজছি!!’
জয়নব বেগম উঠে দাঁড়ালেন। সায়েনের কলিজা শুকিয়ে গেছে তা দেখে। মা’কে কাছে আসতে দেখে সে একটানে আরাদের থেকে শাড়িটা নিয়ে সশব্দে আলমারি বন্ধ করে দিলো। তাড়াতাড়ি জয়নব বেগমকে শাড়ি দিয়ে বলল,’এ এই নাও তোমার শাড়ি!! আর কিছু লাগবে??’
জয়নব বেগম শাড়িটা ওলটপালট করে দেখে বললেন,’নাহ!!’
তিনি সায়েনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন। সায়েন বুকে হাত দিয়ে খাটের উপর শুয়ে পড়লো।
‘উফ্ বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। আর ওটাকে বের করতে হবে তাড়াতাড়ি।’
সায়েন উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর আলমারির দরজা খুলল। আরাদ হাসতে হাসতে বের হলো। এতে সায়েনের গা যেন জ্বলে উঠলো। এতক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে ছিল সে আর এই ছেলেকে দেখো হেসেই কুল পাচ্ছে না। সায়েন রাগি স্বরে বলল,’আপনার আক্কেল জ্ঞান নেই নাকি??কি করতে যাচ্ছিলেন??আরেকটু হলেই তো ধরা পরে যাচ্ছিলাম।’
আরাদ খাটের উপর দু’পা তুলে বসে বলল, ‘ধরা তো পড়িনি!! রিল্যাক্স!!’
সায়েন কটমট করে আরাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,’আপনি রিল্যাক্স এ থাকুন কিন্তু আমি পারছি না তাড়াতাড়ি ছাদে চলে যান।’

আরাদ একটা বালিশ কোলে নিয়ে বসে বলল,’যাব তো আগে আমার মাথার ব্যান্ডেজ চেন্ঞ্জ করে দাও।’
সায়েন দেখলো আরাদের মাথার ব্যান্ডেজ ভিজে গেছে। সে অকপটে জবাব দিলো,’এখন গোসল করার কি দরকার ছিলো??’

‘ছিলো তা তুমি বুঝবে না।’

সায়েন এইড বক্স এনে আরাদের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দিল। ঘা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তাই সে অনটাইম ব্যান্ডেজ করে দিলো। পুরোটা সময় আরাদ সায়েনের দিকে তাকিয়ে ছিল। সায়েন কিছুটা বুঝলেও পাত্তা দিলো না। ব্যান্ডেজ শেষ করে সায়েন বলল,’এখন যান।’
‘তুমি খুব বোকা এটা কি তুমি জানো??’

‘কি বললেন??’ সরু চোখে তাকালো সায়েন।আরাদ ঠোঁট চেপে হেসে বলল,’হুম!! এই যে তুমি আমাকে বাথরুমে লুকাতে পারতে তা না করে আলমারিতে ঢুকালে।’

সায়েন অবাক হয়ে গেল। সত্যি তো!!ইশশ তখন কেন মনে হয়নি??সায়েন নিজেই বোকা বনে গেল। কি বলবে এখন??সায়েন বলল,’মা যদি বাথরুম চেক করতো?? সেজন্য আপনাকে আলমারিতে লুকিয়েছি। আলামারিতে মানিয়ে নিয়েছি কিন্তু বাথরুমে মানাতে পারতাম না।’

আরাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝার ভান করে বলল,’ওহ বুঝলাম।’

‘আ আপনি তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে।’

বলতে বলতে আরাদ সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। সায়েন ঘাবড়ে গেল, দু’পা তুলে বিছানায় বসে উবু হয়ে বলল,’আপনি শুয়ে পড়লেন কেন??প্লিজ চলে যান!!’

আরাদ ওর হাত ধরে হ্যাচকা টান দিতেই সায়েন আরাদের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সায়েন উঠতে চাইলে আরাদ আটকে দিলো। কাত হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে সায়েনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,’অনেক তো রাগ দেখিয়েছো এবার তো একটু হাসতেই পারো??’
আরাদের কথায় সায়েন ভ্রু কুঁচকে তাকালো বলল,’মানে???’

আরাদ আবার টান হয়ে শুয়ে পড়ল। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’জানো সায়েন,আমার তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মানে আমি এই বাড়ির প্রতিটি কোণে কোণে ভালোবাসা আদান প্রদান করেছি। ছাদ,ঘর,আর সবচেয়ে বেশি ভালো বাসা দিয়েছে ওই চিলেকোঠা। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি ওইরকম নোংরা চিলেকোঠায় আমি থাকব!!’
আরাদ থামলো তারপর সায়েনের দিকে ফিরে তাকাল। সায়েন অদ্ভুত নয়নে আরাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাদ নিঃশব্দে হাসলো বললো,’আচ্ছা সব চিলেকোঠার ঘর তো নোংরা হয় না। কিছু কিছু মানুষ সুন্দর করে একটা চিলেকোঠার ঘর সাজায়। বসবাসের যোগ্য করে তোলে। কেন জানো?? কারণ নোংরা চিলেকোঠাকে কজন ভালোবাসে?? সেখানে যে থাকতে পারবে সেটাই তার প্রকৃত ভালোবাসা। যেমন ধরো দুজন ছেলেমেয়ে একে অপরকে খুব ভালোবাসে। তারা দুজন দুজনের খারাপ দিকগুলো জেনেই একে অপরকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা দিয়ে খারাপ দিকগুলো শুধরে নেয়। কিন্তু কজন পারে এটা?তাই সত্যিকারের ভালবাসা টা অনেক টা ওই নোংরা চিলেকোঠার মতোই। তাকে মন দিয়ে দেখতে হয়। সাজাতে হয়।চোখ দিয়ে নয়। আমিও ঠিক ওইরকম একটা চিলেকোঠার ঘর সাজাতে চাই। আমার তাকে নিয়ে থাকতে চাই। সেখানে শুরু হবে আমাদের “চিলেকোঠার প্রেম”!!’
বলে আরাদ আবার সায়েনের দিকে তাকালো। সায়েন আগের দৃষ্টি নিয়ে আরাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাদ ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বুঝালো কি হয়েছে??সায়েন সন্দেহ ভরা চোখে তাকিয়ে বলল,’তা আপনার সে টা কে??’

আরাদের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো বলল, ‘সেটাই তো বড় প্রবলেম!!এখনও আমার তাকে খুঁজে পেলাম না। তবে শিঘ্রই পেয়ে যাব।’

সায়েন সন্দেহের সৃষ্টি আরো গাঢ় করে বলল, ‘আপনার কি সত্যি কিছু মনে পড়ছে না??নাকি নাটক করছেন আপনি??’

‘তোমার কি মনে হয়??যদি মনে হয় আমি নাটক করছি তাহলে আমি চলে যাব এই মুহূর্তে।’

সায়েনের বুকটা ধক করে উঠলো। আরাদ চলে যাবে সেটা এখনো মানতে পারছে না সে। কষ্টগুলো আবার দলা পাকিয়ে আসছে সায়েনের। এখন মনে হচ্ছে সন্দেহ না করাই ভালো। তাহলে অন্তত আরাদ থাকবে ওর সাথে। সায়েন কিছু বলছে না দেখে আরাদ বলল,’যাবো আমি??’
সায়েন চোখ ফিরিয়ে নিলো বলল,’আমার কেমন জানি মনে হচ্ছিল। আচ্ছা আর বলব না।’
আরাদ হাসলো যা সায়েন দেখতে পেল না। সে অন্যদিকে ফিরে আছে। এমনিতেই সায়েনের অস্বস্তি হচ্ছে আরাদের পাশে শুয়ে থাকার জন্য। আরাদ উঠে বসে বলল,’ঘুরতে যাবে??’
সায়েনও উঠে বসে বললো,’কোথায়??আর এই রাতের বেলা??মা জানতে পারলে আমাকে শেষ করে ফেলবে!!’

‘এতো ভয় কেন পাও তুমি??আমি বুদ্ধি বের করছি দাঁড়াও!!’

আরাদ কোলবালিশ বিছানার উপর রেখে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলো। তারপর হাসিমুখে সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলল,’এবার তোমার মা তোমাকে সন্দেহ করবে না। আর বাইরে থেকে চাবি দিয়ে লক করে যাবে ব্যস হয়ে গেল।’
সায়েন অবাক আরাদের বুদ্ধি দেখে। সে দাঁত কেলিয়ে হাসার অভিনয় করে বলল,’তাহলে বের হবো কিভাবে?? মেইন দরজা তো খুলতে হবে। মা তো পানি খেতে এসেই দরজা চেক করে।’
আরাদ খানিকটা চিন্তা করে বলল,’তোমাদের রান্নাঘরের জানালার তো গ্রিল নেই!!রাইট,ওখান দিয়ে বের হবো চলো!!’

সায়েন ঘুরতে যাওয়ার কথাটা ফেলতে পারলো না। ওর মা কখনো রাতের বেলা ঘুরতে যেতে দেয়নি এমনকি শাফিনের সাথেও না। দুজনে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো। সব রুমের লাইট অফ। পা টিপে টিপে দুজনে রান্নাঘরের জানালা খুলে বের হয়ে গেল। আগে আরাদ নামলো তারপর সায়েনকে সাবধানে নামালো। সায়েন মাথায় ভালো করে ওড়না পেঁচিয়ে নিয়েছে যাতে কেউ চিনতে না পারে!! মেইনরোডে এসে পড়েছে দু’জনে। হেডলাইটের আলোতে দুজনে হাটছে। হালকা শীত পড়েছে। সায়েনের শীত লাগছে খুব। ওড়নাটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিলো সে। আরাদ দেখে সব বুঝে গিয়েছে কিন্তু তার কিছু করার নেই। আরাদ নিজেই পাতলা একটা টিশার্ট পরেছে।

সায়েনের ভালো লাগছে রাতের শহর দেখে। মানুষজন খুবই কম। আকাশে চাঁদ নেই হাজার তারা দেখা যাচ্ছে। তবুও আকাশের এই সৌন্দর্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সায়েন মুগ্ধ হয়ে চারিদিক দেখছে। এভাবে সে কখনোই দেখেনি!!এতে সায়েনের রাগ পরে গেছে। আরাদ এটাই চেয়েছিল তাই তো সায়েনকে ঘুরতে নিয়ে এসেছে। আরাদ সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলল,’ভালো লাগছে তোমার??’
সায়েন মাথা নাড়িয়ে বলল,’খুব!!তবে রাতের বেলা নাকি লং ড্রাইভে যাওয়া অনেক মজা।’

‘তুমি যাবে??’

‘কিভাবে যাব??স্কুটি তো বাড়িতে!!না যাওয়াটাই ভালো। কখন কি হয়ে যায়। তার থেকে বরং হাঁটি।’

আরাদ কিছু বলল না। হাঁটতে লাগলো। একটু এগিয়ে আরাদ বলল,’তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি।’

সায়েন চটজলদি বলল,’কোথায় যাচ্ছেন??’

আরাদ দুষ্টু হেসে বলে,’এমারজেন্সি।’
সায়েন নাক সিটিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। আরাদ ততক্ষণে আড়ালে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর আরাদ এলো ওরা আবার হাঁটতে লাগলো। সায়েন বারবার মুখ ঢাকছে যদি চেনা কেউ দেখে নেয় তাহলে??আরো কিছু দূরে যেতেই ওরা দেখলো একটা লোক স্কুটির উপর বসে বসে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। লোকটার কাছাকাছি গিয়ে আরাদ সায়েনকে বলল,’যাবে লং ড্রাইভে??’
সায়েন অবাক হয়ে বলল,’কিভাবে??’
আরাদ লোকটার কাছে গিয়ে বলল, ‘এক্সকিউজ মি!! আপনার স্কুটিটা দেওয়া যাবে কিছুক্ষণের জন্য??আমরা আবার ফিরে আসবো।’
লোকটা কাল বিলম্ব না করে চাবি দিলো আরাদের হাতে। সায়েন তো অবাক। লোকটা এতো সহজে চাবি দিয়ে দিলো। শুধু চাবি নয় সাথে দুটো চাদর দিয়ে বলল,’এটা পরে নিয়েন। শীত পরছে তো ঠান্ডা লাগতে পারে। আমি এখানে অপেক্ষা করব আপনাদের জন্য।’
আরাদ চাবি আর চাদর নিলো। চাদরটা সায়েনের হাতে দিয়ে বলল,’লেটস গো।’
সায়েন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ওর। আরাদ বলল, ‘তাড়াতাড়ি চলো। রাত বাড়ছে তো??’

সায়েনের হুঁশ ফিরে এলো। চাদর নিয়ে গায়ে পেচাতেই আরাদ ওর হাতে চাবি দিলো। সায়েন হেলমেট পরে নিলো আরাদও পরলো।
তারপর সায়েন স্কুটি স্টার্ট দিলো। আরাদ পেছনে চেপে বসেছে।
সায়েন স্কুটি চালাচ্ছে। এতক্ষণ অবাক হলে এখন ভালো লাগছে। লাইফে প্রথম লং ড্রাইভে এসেছে সে। উপভোগ করছে খুব। খুশিগুলো বারবার দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আর আরাদ সায়েনের খুশি দেখে শান্তি পাচ্ছে। ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে আবার সেই জায়গায় ফিরে আসলো ওরা। লোকটাকে চাদর আর তার স্কুটি বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সায়েন বলল, ‘ওই লোকটা বিনা দ্বিধায় আমাদের স্কুটি দিলো কেন??সে কি আপনাকে চেনে??’

আরাদ পড়লো বিপাকে। সায়েনকে খুশি করার জন্য জোনায়েদ কে দিয়ে এতো রাতে স্কুটির ব্যবস্থা করালো আর এখন জবাবদিহি করতে হবে।

‘আসলে পৃথিবীতে এখনও এমন ভালো মানুষ আছে তা আমি দেখে সত্যি অবাক হয়েছি। সত্যি তো আমার এক বলাতেই লোকটা তার স্কুটি দিয়ে দিলো!!’
আরাদও অবাক হওয়ার ভান ধরলো। সায়েন আর এই সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করল না। সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,’পরশু চলে যাব খালামনির মেয়ের বিয়ে খেতে।’

আরাদের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। ক’দিন সায়েনের থেকে দূরে থাকবে কে জানে??

‘কতদিন থাকবে???’

‘চারদিন।’

‘ওহ!!!’

‘চিন্তা করবেন না। আমি সকাল বিকাল আসব আপনার কাছে। ছাদের দরজা খুলে দিয়ে যাব। রাতে আমার রুমে এসে ঘুমাইয়েন এই চারদিন না হয় আরামে ঘুমালেন!!’

আরাদ কিছু বলল না। সায়েনকে না দেখে থাকতে হবে এই চারদিন। সারারাস্তা আরাদ চুপ করে ছিল। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে সাবধানে ঢুকলো দুজন। আরাদ ছাদে চলে গেল আর সায়েন তার নিজের রুমে। সায়েনের ও একটু খারাপ লাগছে।

অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিন চলে আসলো। বাড়ির সবাই রেডি হয়ে নিয়েছে। সায়েন আর ওর মা স্কুটিতে যাবে। শাফিন আর ওর বাবা অটোতে করে যাবে সব ব্যাগপত্র নিয়ে। সায়েন স্কুটিতে বসে চিলেকোঠার ঘরের দিকে তাকালো। জানালা খুলে তাকিয়ে আছে আরাদ। মুখটা তার শুকনো শুকনো লাগছে। জয়নব বেগম আসতেই সায়েন চোখ ফিরিয়ে নিলো। আর তাকালো না আরাদের দিকে। স্কুটি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। আরাদ সায়েনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। না জানি আবার কখন দেখা হয় দু’জনের???

#চলবে,,,,,,,,,,,,