চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-০৭

0
537

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৭

সকালের হালকা বাতাস সারা ছাদ জুড়ে খেলা করছে। শীত উঁকি দিচ্ছে আস্তে আস্তে। কয়েকদিনের মধ্যেই ঘন কুয়াশায় দেখা দিবে ধরার বুকে। এই বাতাস সেই আভাস দিচ্ছে। বাতাসে হালকা কেঁপে উঠেছে সায়েনের পুরো শরীর। তিরতির করে কাঁপছে সে। কিন্তু এই সামান্য বাতাসে তো এতো ঠান্ডা লাগার কথা নয় তবুও কেন এমনভাবে কাঁপছে সায়েন??সেটা কি আরাদ ওর হাত ধরেছে সেজন্য?! বুঝতে পারছে না সায়েন। আরাদ সায়েনের অবস্থা বুঝে হাত ছেড়ে দিলো। আরাদ ডাকার পর একপলক তাকিয়েছিল সায়েন। কিন্তু তারপর পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে। শ্বাস ফেলে চলে যেতে নিলে আবার আরাদ ডাকলো। সায়েন আবার থমকে দাঁড়াল। আরাদ গুটিগুটি পায়ে সায়েনের সামনে এসে দাঁড়ায় কিন্তু সায়েনের দৃষ্টি মেঝের দিকে। ঘাড় কাত করে সায়েনের মুখশ্রী ভালো করে পর্যবেক্ষন করে হাসলো আরাদ। সে সায়েনের গোমড়া মুখের কারণ কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। সাহসী হাসিখুশি সায়েনের মুখটা হঠাৎ এরকম গোমড়া হয়ে আছে কেন তাও আন্দাজ করতে পারছে আরাদ। কালকে জোনায়েদ ফোন করে জানিয়েছিল সায়েন আর ওর বান্ধবীর কর্মকাণ্ড গুলো। ওদের সাহস আছে বটে। লোকগুলো আরাদের ছিল। তারা সবসময় সায়েনের উপর নজর রাখে। যাতে সায়েনের কোন বিপদ আপদ না হয় সেজন্য। কিন্তু ওর গার্ডদের দিকে এভাবে ছুরি ধরবে তা শুনে আরাদ হেসেছিল। কিন্তু সেই মেয়ের মুখটা তো শুধু শুধু গোমড়া থাকতে পারে না।
আরাদ সোজাসুজি সায়েনের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,’মন খারাপ কেন তোমার??’

সায়েন দৃষ্টি নত করেই বলল,’কিছু না।’

‘তোমার মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই তোমার কোন কিছু হয়েছে!!আচ্ছা কালকে আমার কোন কথায় কি মন খারাপ হয়েছে তোমার তাহলে আ’ম সরি।’

‘নাহ তেমন কিছু না। আসলে মাথাটা একটু ব্যথা করছে তো তাই ভালো লাগছে না। আমি আসি মা ডাকবে।’

সায়েন হনহনিয়ে ছাদ থেকে নেমে এলো। আরাদ ঘুরে দাঁড়িয়ে সায়েনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সে যে সায়েনের মনে কিছুটা হলেও যায়গা করে নিচ্ছে তা বুঝে গেছে। এতে আরাদের খুশি লাগছে খুব। কিন্তু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে মুখটা মলিন হয়ে গেল আরাদের। যেদিন সায়েন সত্যিটা জানতে পারবে সেদিন কিরকম রিয়েক্ট করবে??তবে ততদিনে আরাদ তার ভালোবাসার জালে আটকে ফেলবে সায়েনকে যাতে সায়েন সে জাল ছিঁড়ে কখনোই বের হতে না পারে। হয়তো প্রথমে অভিমান করবে কিন্তু পরে তো ঠিকই টেনে নেবে আরাদকে। চিলেকোঠার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব একমনে ভেবে চলছে আরাদ। তখনই ছাদের দরজা খোলার শব্দ হলো। ঘোরের মধ্যে ছিল বিধায় আরাদ সাথে সাথে টের পেল না।
শফিকুল ইসলাম এসেছেন। সামনের দিকে এগিয়ে আসতেই আরাদের চোখ সেদিকে গেল। এখন কি হবে?? শফিকুল ইসলাম চোখ তুলে আরাদের দিকে তাকাতেই আরাদ মেকি হেসে বলল,’গুড মর্নিং আঙ্কেল।’

শফিকুল ইসলাম মাথা নাড়িয়ে বলল,’গুড মর্নিং।’
বলেই তিনি অন্যদিকে ঘুরলেন। কিন্তু থমকে গেলেন শফিকুল ইসলাম। কাকে দেখলেন??চোখ ঘুরিয়ে আবার তাকালো চিলেকোঠার ঘরের দিকে। ততক্ষণে আরাদ ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়েছে। শফিকুল সাহেব চশমা খুলে চোখ ঘষে ভালো করে তাকালো। নাহ কেউ নেই। তাহলে এই মাত্র তাকে গুড মর্নিং বলল কে??সায়েন খাবার নিয়ে সবে ছাদে এসেছে। আরাদের কান্ড দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু শফিকুল ইসলাম কে চিলেকোঠার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে দরজার পাশে খাবার লুকিয়ে দৌড়ে গিয়ে তাকে আটকে বলল,’আব্বু তুমি এখানে!!মা ডাকছে চলো চলো।’

‘আমি এইমাত্র এখানে একটা ছেলেকে দেখলাম।’
সায়েনের গলা শুকিয়ে এসেছে। সে কাটকাট গলায় বলল,’কই?? এখানে কেউ নেই তো??ত তুমি ভুল দেখেছো।’

‘আমি ভুল দেখব কেন??এই দেখ চশমা পড়েই এসেছি। ভুল দেখার কোন চান্সই নেই।’

সায়েন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,’তাহলে হ্যালুসিনেশন। তুমি ভুল দেখেছো আব্বু। মা যদি এটা জানতে পারে তাহলে কি হবে??আমি গিয়ে বলে আসি।’
শফিকুল ইসলাম সায়েনকে আটকে দিয়ে বলে,’সবসময় মা মা করিস কেন বলতো?? জানিসই তো তোর মা’কে একটু ভয় পাই। তারপরও কেন বলিস।’

বাবার এরকম ফ্যাকাশে মুখ দেখে সায়েন ঠোঁট চেপে হাসলো বলল,’আচ্ছা বলব না এখন নিচে যাও।’

‘যাচ্ছি যাচ্ছি,তুইও চলে আয়।’ বাবা চলে যেতেই সায়েন দরজার আড়াল থেকে খাবারের প্লেট বের করে চিলেকোঠার ঘরে গেল। দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ। সায়েন চোখমুখ খিচে বলল, ‘এটা কি করলেন আপনি??’

আরাদ নির্দিধায় জবাব দিলো,’কি করলাম?? ওহ্ আঙ্কেলকে গুড মর্নিং জানালাম। আমি আবার ভালো ছেলে তো!!’

‘হুম!! কিন্তু ধরা তো খেয়েই যাচ্ছিলেন। আমি না আসলে ধরা পড়তেন নির্ঘাত।’

‘তুমি তো বাঁচিয়ে নিয়েছো। নো টেনশন।’

সায়েনের রাগটা আরো বেড়ে গেল। কালকের রাগের সাথে এখন নতুন রাগ যোগ হয়েছে। খাবার রেখে সে চলে গেল। আরাদ বুঝলো যে যতক্ষন পর্যন্ত না সে সায়েনের রাগ ভাঙাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সায়েনের রাগ ভাঙবে না। কিন্তু সময়ের দরকার। রাত ছাড়া তো সায়েনের সাথে দেখা করার উপায় নেই।

সায়েন রেডি হয়েছে কলেজে যাওয়ার জন্য। চাবি হাতে নিয়ে বাইরে আসতেই দেখলো শফিকুল ইসলাম কি যেন ভাবছে। সায়েন সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,’কি ভাবছো আব্বু??’

‘ভাবছি তখন সত্যিই একটা ছেলেকে দেখেছি আমি। স্পষ্ট মনে আছে আমার।’

সায়েন খানিকটা চেঁচিয়ে উঠে বলল,’মা আব্বুর হ্যালুসিনেশন হয়েছে। চারিদিকে শুধু,,,’

শফিকুল ইসলাম অস্থির হয়ে বললেন,’থাম থাম আমি আর কখনো এসব বলব না। আমি যাচ্ছি।’
সায়েন স্বস্তির শ্বাস ফেলল। স্কুটিতে বসে সে স্টার্ট দিলো।

_______________

চেয়ারের উপর দুপা তুলে বসে আছে ফাহিম। আশেপাশে তার পনেরো থেকে বিশ জন গার্ড। তাদের মধ্যে সেই পাঁচজন ও আছে যাদের আরাদ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। গালে হাত রেখে ভাবছে ফাহিম,হঠাৎ করে আরাদের কি হলো??ওর লোকদের বিরিয়ানী খাইয়ে ছেড়ে দিলো!! সবকিছু কেমন যেন বিরিয়ানী হয়ে যাচ্ছে। তরুণ বিজনেসম্যান দের মধ্যে আরাদ আর ফাহিম নতুন। এজন্য বড় একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে তারা। কিন্তু আরাদের প্রজেক্ট টা যে সফল হবে তা ফাহিম নিশ্চিত। কারণ সব দিক দিয়েই আরাদ তার থেকে এগিয়ে। তাই আরাদকে পিছনে ফেলার জন্য তার প্রজেক্ট হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সে সফল হচ্ছে না। এনিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। ফাহিম বারবার হামলা চালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আরাদের বুদ্ধির কাছে সে অসফল হয়ে যাচ্ছে বারবার। এজন্য গম্ভীর ভাবনায় ডুবে আছে ফাহিম। তখনই ওদের মধ্যে একজন মুখ খুলল,’স্যার আমার মনে হচ্ছে আরাদের মাথায় বড় কোন প্ল্যান চলছে!! নাহলে আমাদের লোকদের বিরিয়ানী খাইয়ে ছেড়ে দিলো??এমন লোক তো আরাদ নয়??’

ফাহিম মাথা নাড়লো কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করলো না। আরেকজন বলল, ‘আরেকটা খবর আছে স্যার। ওই দিনের পর থেকে আরাদ বাড়িতে ফেরেনি আর না ফিরেছে নিজের ফ্ল্যাটে। কোথাও আত্মগোপন করে আছে।’

ফাহিম চকিতে তাকালো। এটা তো ভাববার বিষয়। সে বলল,’আরাদ বাড়ি ফেরেনি?? তাহলে এখন কোথায় আছে?? কিন্তু ও তো ভিতু না যে আত্মগোপন করবে??তাহলে?? সেদিন মিটিং এ আমার লোককে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল। সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আরাদকে ফলো করলেই সব জানতে পারা যাবে।’

‘কিন্তু স্যার আরাদ কখন কোথায় থাকে সেটাও তো জানতে পারছি না হুট করে চলে আসে তো হুট করে চলে যায়।’

ফাহিম থুতনিতে হাত বুলিয়ে বলল,’হুম!! ওর প্রজেক্ট কম্পিলিট। তাই বেশি আসে না। ওর একটা চামচা আছে না??কি যেন নাম??হুম, জোনায়েদ ওটাকেই ফলো কর। আরাদের সব খবরাখবর আমার চাই। যেকোন মূল্যে!!’

সবাই মাথা নুইয়ে সায় দিলো তাতে। ফাহিমের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো। সে আরাদের ধ্বংস দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছে সে। ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায়।

সায়েন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। ভালো লাগছে না তার একটুও। গোসল শেষে মায়ের সাথে লাঞ্চ করে নিলো। জয়নব বেগম ঘুমাতে চলে গেছেন। সায়েন ভাবলো সে কি যাবে আরাদের কাছে??খাবার দিতে তো যেতেই হবে। সায়েন গুটি গুটি পায়ে চিলেকোঠার দরজার সামনে এসে দাড়ালো। ভাবলো দরজা নক করবে কি না??এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে গেল। হঠাৎ দরজা খোলায় চমকে ওঠে সায়েন। আরাদ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’কি ম্যাম রাগ পরেছে আপনার??এতো রাগ কেন করছেন তা তো বুঝতেই পারছি না আমি??’

সায়েন কিছু বলল না। কিছুক্ষণ আরাদের দিকে তাকিয়ে ওর হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। কেন জানি সায়েনের ভিশন রাগ হচ্ছে আরাদের উপর। রাগের উৎস সায়েন নিজেও বুঝতে পারছে না। কলেজে গিয়ে দিশার সাথেও তেমন কথা বলেনি সায়েন। ছাদ থেকে রুমে গিয়ে আরো রেগে গেল সায়েন। কারণ শাফিনের বিড়াল সল্টু ওর খাটের উপর আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। সায়েন রেগে গিয়ে একটা ঝাড়ু দিয়ে ঠাসঠুস পেটাতে লাগলো। সল্টু হুড়মুড়িয়ে উঠে প্রান নিয়ে পালালো। সায়েনকে যমের মতো ভয় পায় সে। এর আগেও অনেকবার মার খেয়েছে সায়েনের হাতে। সায়েন বিছানা ঝেড়ে শুয়ে পড়লো।
সল্টু এক দৌড়ে চিলেকোঠার ঘরে চলে গেছে। মাছের কাঁটার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চলে গেছে। আরাদ খাচ্ছিল, হঠাৎ সল্টুকে দেখে মাছের কাঁটা দিলো সে। কিন্তু পরক্ষণে সায়েনের কথা মনে পড়তেই কাটা নিয়ে গিয়ে বলল,’নাহ তোমাকে আর খাওয়ানো যাবে না। সায়েন তোমাকে পছন্দ করে না তাই আমিও তোমাকে পছন্দ করি না। যাও এখান থেকে।’

সল্টু মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। আরাদ কপালে ভাঁজ ফেলে বলে উঠলো,’উহু তোমাকে দেওয়া যাবে না। কি করবে তুমি??সায়েনের মায়ের কাছে বিচার দিবে দাও।নো প্রবলেম এখন যাও এখান থেকে।’

সল্টু ধীরে ধীরে চলে আসলো। আসার সময় পেছনে ফিরেও তাকিয়েছিল কিন্তু আরাদ তাকে ডাকেনি। এই বাড়িতে কেউ তাকে ভালো বাসে না। শুধু মাত্র শাফিন ছাড়া। তাই শাফিনের জন্য সে রয়ে গেছে নাহলে কবেই চলে যেতো। কালো লেজটা নাড়াতে নাড়াতে সে চলে গেল।

সন্ধ্যায় শাফিন ফিরলো। খুব ক্লান্ত সে। ভার্সিটি অফিস সবমিলিয়ে ক্লান্তির শেষ নেই তার। বাসে করে যেতে তার ভালো লাগে না। কিন্তু ওর এই সমস্যা তাড়াতাড়ি ঘুচবে। শফিকুল সাহেব বলেছেন এবার শাফিনকে বাইক কিনে দেবে। এজন্য শাফিন বেশ খুশি। শাওয়ার শেষ হতে না হতেই মায়ের ডাক এলো। শাফিন সায়েন দু’জনেই বাবা মায়ের রুমে গেল। জয়নব বেগম খাটের উপর বসে আছেন। শফিকুল ইসলাম টেবিলে বসে কিসব লিখছেন। ওদের দেখেই জয়নব বেগম বললেন,’লিমার বিয়ে এটা নিশ্চয়ই তোমরা শুনেছো??’
সায়েন শাফিন দু’জনেই মাথা নাড়লো। জয়নব বেগম আবার বললেন,’আগামী পরশু লিমার গায়ে হলুদ। আমরা সেদিনই যাবো। তবে কথা হল যে,শাফিন সবসময় সায়েনের সাথে থাকবে। এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করবে না। বিয়ে বাড়ীতে যাচ্ছি। চোখ কান খোলা রাখবে। নিজেদের জিনিসপত্র সব নিজেদের দায়িত্বে রাখবে। মোট চারদিন থাকব আমরা। তাই সবকিছু সাবধানে রাখবে। কি বলেছি বুঝতে পেরেছো??’

সায়েন শাফিন আবার মাথা দোলায়। মায়ের ভাষণ শুনে দুজনেই হাঁপিয়ে উঠেছে। জয়নব বেগমের অনুমতি নিয়ে দু’জনেই বের হয়ে গেল। বের হয়ে সায়েন বলল,’কি হুকুম করলো রে ভাই!! ওটাকে তো বিয়ে বাড়ি মনেই হবে না। চারদিন থাকব কিভাবে আমি??’

শাফিন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’এর থেকে আমাকে যদি মুচিগিরি করতে বলে তাতেও আমি রাজি। ভালো লাগে না এসব।’

সায়েন শাফিনের পিঠ চাপড়ে বলল,’তুই আমার ভাই মুচিগিরি করবি কেন??তুই তো মেথরগিরি করবি ওটাই বেস্ট।’

শাফিন ক্ষেপে গেলো। সায়েনকে তাড়া করতেই সায়েন এক ছুটে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসতেই চমকে উঠে সায়েন। ওর বাথরুমে কে গেল??তাও এই রাতের বেলা। সায়েন বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল,’কে??কে আমার বাথরুমে??বের হও এখুনি।’

সাথে সাথে দরজাটা খুলে গেল। আরাদকে দেখে অবাক হয়ে গেলো সায়েন। সাথে লজ্জাও পেলো। কারণ আরাদ তোয়ালে পরে আছে শুধু। খালি গা বেয়ে পানি টপটপ করে পরছে। যা দেখে মুহূর্তেই সায়েনের গা কাটা দিয়ে উঠল। সায়েন ভরাট গলায় বলল, ‘আপনি এখানে আমার রুমে কি করছেন??আর এখানে এলেন কিভাবে??’
বলতে বলতে সায়েন চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। আরাদ দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। সায়েন আরেকটু সরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,’এগোবেন না। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জা করছে না আপনার??’

আরাদ হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,’জামাকাপড় দাও পরে নেই তারপর বাকিটা বলছি।’
সায়েন দ্রুত পায়ে আলমারি থেকে টিশার্ট আর টাউজার বের করে দিল। আরাদ তা নিয়ে আবার বাথরুমে চলে গেল। সায়েন তো ভয়ে কাঁপছে এখন যদি ওর মা আসে তাহলে কি হবে??নখ কামড়াচ্ছে আর পায়চারি করছে সায়েন। সামনে এগিয়ে পেছনে ঘুরতেই আরাদের সাথে ধাক্কা খেলো সে। আরাদ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে মাথা মুছতেছে। তবুও তার চুল বেয়ে পানি পড়ছে। তোয়ালে টা সায়েনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরাদ বলল,’স্মেলটা খুব সুন্দর মন কাড়া।’

প্রশংসাতে সায়েন খুশি হলো না। সে বলল, ‘আপনি এখানে কিভাবে এলেন??’

‘ছাদের দরজা দিয়ে,সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে সোজা তোমার রুমে ঢুকে পড়েছি। তবে কেউ দেখেনি আমাকে।’
বলেই আরাদ তৃপ্তির হাসি দিলো। সায়েন বলল,’কেন এসেছেন??মা যদি দেখে ফেলে তাহলে কি হবে??’

আরাদ সায়েনের দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে বলল,’তো কি হবে??কিছুই হবে না। তুমি বলবে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হই।’
ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো সায়েনের। রাগান্বিত স্বরে বলল,’কি যা তা বলছেন??মাথা ঠিক আছে আপনার??’

আরাদ মাথা নাড়িয়ে বলল,’একটুও ঠিক নেই। কিছু মনে করতে পারছি না।’

‘গাছের সাথে জোরে একটা গুঁতো মারব তাহলেই সব মনে পড়ে যাবে বুঝেছেন?? এখন বের হন।’
সায়েন দরজা খুলতে নিলে আরাদ তার দুহাতে সায়েনের দুহাত আবদ্ধ করে নিলো। সায়েন ছুটোছুটি করতে লাগলো কিন্তু কোন ফল পেল না। আরাদ সায়েনের দুহাত চেপে ধরে বলল,’এতো রাগ কিসের তোমার??আমি কি এমন বলেছি যে এতো রাগ করেছো তুমি??’

সায়েন হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলল,’আমি রাগ করিনি। আমি কেন রাগ করব আপনার ওপর??কে হন আপনি আমার??’

‘সেটাই তো তাহলে রাগ করেছো কেন?? বলতেই হবে তোমাকে।’

‘আমি রাগ করিনি হাত ছাড়ুন আমার।’

আরাদ বাঁকা হেসে বলল,’না বললে তো হাত ছাড়বোই না। আর আজকে এখানেই থেকে যাব।’
সায়েনের চোখদুটো রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেলো। সে বলল,’কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি??আমি চেচাবো কিন্তু??’

‘আচ্ছা চেচাও। আমিও দেখব তোমার গলার জোর কতো??’

সায়েন কিছু বলতে গেলেই জয়নব বেগমের কন্ঠস্বর ভেসে আসে। জয়নব বেগম দরজা ধাক্কা দিচ্ছেন আর সায়েনকে ডাকছেন। মায়ের গলার আওয়াজ শুনে ভয়ে সায়েনের গলা শুকিয়ে এসেছে। এখন কি হবে?????

#চলবে,,,,,,,,,,,