চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-১০

0
530

#চিলেকোঠার_প্রেম
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_১০

বিয়ে বাড়ির খাওয়া দাওয়া ফেলে পালাচ্ছে আরাদ আর জোনায়েদ। ভাগ্য ভালো আরাদ তখনই টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়েছিল। নাহলে নির্ঘাত সায়েনের সামনে পড়তো। কোনরকমে দু’জনে পালিয়ে বেঁচে গেছে। জোনায়েদ স্টেয়ারিং এ হাত দিয়ে বাড়ি মেরে বলল,’ধ্যাত তোকে আনাই আমার ভুল হয়েছে। আমি একা আসলেই ভালো হতো। শুধু শুধু আমার খাওয়া নষ্ট হয়ে গেলো।’

আরাদ বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বলে,’এমনভাবে বলছিস যেন জীবনে ভালো মন্দ খাসনি।’

‘আমি কি সেটা বলেছি??এতো কষ্ট করে টাইম লস করে গেলাম আর খেতেই পারলাম না।’

আরাদ জোনায়েদের সাথে কথা বাড়ালো না। কথায় কথা বাড়ে তাই সে চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সায়েনকে ঠিকমতো দেখতেই পেলো না। শুধু এক পলক দেখেছিল। আরাদ ভাবছে,যেদিন সায়েনকে সে নিজের করে নেবে সেদিন থেকে আর চোখের আড়াল করবে না সায়েনকে। অনেক হয়েছে। জোনায়েদ ড্রাইভিং এ মন দিয়ে বলে,’সায়েনকে কবে সত্যিটা বলবি??’

আরাদ দৃষ্টি জোনায়েদের দিকে ঘুরিয়ে বলল,’কেন??’

জোনায়েদ খানিকটা হেসে বলে,’এভাবে আর কতদিন??সায়েনকে যদি তুই নিজে থেকে সত্যিটা বলিস তাহলে ও কষ্ট বেশি পাবে না। আর যদি ও নিজে থেকে সবটা জানে তাহলে কি হবে?? একবার ভেবে দেখেছিস কি??সায়েন অত্যন্ত নরম মনের মেয়ে। আঘাত যত ছোট করে দিস না কেন??ক্ষতটা কিন্তু বড় করেই হবে।’

জোনায়েদের কথাটা ভাবাচ্ছে আরাদকে। সায়েন যদি সব জানার পর ওকে মেনে না নেয়??আর জয়নব বেগম ব্যপারটা কিভাবে নেবে??এভাবে তো আর চলা যাবে না। ভালোবাসা টা তো মিথ্যা দিয়ে শুরু হয়েছে। এটা সায়েন কিছুতেই মেনে নেবে না। এতদিন একসাথে থেকে এটা আরাদ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। এবার আরাদের সত্যি চিন্তা হচ্ছে। একটা মিথ্যা ওদের সম্পর্কটাকে কোথায় নিয়ে দাড় করায় কে জানে??

জোনায়েদ গাড়ি থামাতেই আরাদের ধ্যান ভাঙল। গাড়ি থেকে নামতেই জোনায়েদ বলল,’যা করার তাড়াতাড়ি করবি। আমাদের হাতে সময় খুব কম। নিউ ইয়ারের দিন বড় পার্টি আছে। তার আগে আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে। নাহলে এবার তোর হাতে সেরা বিজনেসম্যানের পুরষ্কার উঠবে না আরাদ!!’
আরাদ মাথা নাড়িয়ে বলল,’হুম!!দুটো একসাথে হবে। নিউ ইয়ারের দিন সায়েনকে সবই বলব আমি। জানি না সেদিন কি হবে?? তবুও সত্যি আমি সেদিনই বলে দেব।’

আরাদ নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেল। চেঞ্জ করে আবার ফিরে এলো সায়েনের বাড়ি। কারণ বিকেলে সায়েনের আসার কথা। যদি সময় মতো সায়েন এসে আরাদকে না পায়??তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছে আরাদ।

লিমার বিয়ে পড়ানো শেষ। এখন আরো কিছু নিয়ম মেনে লিমাকে বিদায় দেওয়া হবে। জয়নব বেগম তার বোনের সাথে কাজে ব্যস্ত। এদিক ওদিক ছোটাছুটির তালে আছেন। সায়েনের দিকে নজর দেওয়ার সময় তার নেই। তাইতো সায়েনকে সে শাফিনের হাতে দিয়েছেন। কিন্তু শাফিন কে কিছু না বলে সায়েন স্কুটি নিয়ে বের হয়ে পড়লো। ছোট টিফিন বক্সে খাবার নিলো আরাদের জন্য। আজকে ধরা পরার ভয় নেই সায়েনের। ধরা পরলে বলবে বাড়িতে এসেছিল কাজে। এতে জয়নব বেগম বকলে বকুক। কিন্তু আরাদের কাছে যাওয়াটা খুবই জরুরি। সায়েন বাড়িতে এসে দরজা খুলল। টিফিন বক্স নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করে করতে করতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। আরাদ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়তেছে। সায়েনকে দেখে সে সোজা হয়ে বসে বইটা পাশে রাখলো। সায়েন আরাদের সামনাসামনি বসে বলল,’বোর হচ্ছিলেন??’

আরাদ মুচকি হেসে বলল,’প্রথম দিন বোরিং লাগছিলো কিন্তু এখন তোমার এই বই পড়ছি তাই বোরিং লাগছে না। তোমরা কবে ফিরছো??ভালো লাগছে না আমার।’

সায়েন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’খাবার নিয়ে এসেছি খেতে চলুন। আর দু’দিন থাকব তারপর চলে আসবো। ওখানে একটুও ভালো লাগে না আমার।’

আরাদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ওকে চলো।’

টেবিলে গিয়ে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে দিলো সায়েন। আরাদ খাচ্ছে আর সায়েন গালে হাত রেখে দেখছে। খাওয়া শেষে আরাদ হাত ধুয়ে নিলো। হাত মুছতে মুছতে বলল, ‘আজকেও তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’

আরাদের কথায় নিজের দিকে চোখ বুলায় সায়েন। গাঢ় খয়েরী রঙের ল্যাহেঙ্গা পরেছে আজকে সে। জয়নব বেগম সাজিয়ে দিয়েছেন সায়েনকে। নিজেকে আজকে আয়নায় দেখার সুযোগ পায়নি সায়েন। রেডি হতে হতেই বর এসে গিয়েছিল। তাই দৌড়ে সেখানে চলে গিয়েছিল। সায়েন মুচকি হেসে বলল,’ধন্যবাদ। আপনি না বললে জানতাম না যে আজকে আমাকে সুন্দর লাগছে।’

আরাদের কপাল কিন্ঞ্চিৎ কুঁচকে এলো বলল, ‘কেন?? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হওনি??’

‘নাহ!!আসলে আমাকে সবসময় মা সাজিয়ে দেয় তো!! আজকেও দিয়েছে। তাই সময় পাইনি আয়না দেখতে।’
আরাদ সায়েনের একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে,’এখন দেখো!!’

সায়েন মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আরাদ পথ আটকে দাঁড়ালো বলল,’কোথায় যাচ্ছো??’
‘আয়না দেখতে!!!এই মাত্র তো আপনি বললেন।’

‘আমার চোখের দিকে তাকাও।’

সায়েন ঘাবড়ে গেল। চোখের দিকে তাকাবে মানে। আরাদ আবারো বলল,’গভীর দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকাও তাহলে বুঝতে পারবে।’
আরাদ কিছুটা ঝুঁকে পড়লো সায়েনের দিকে। সায়েন চোখ তুলে আরাদের চোখের দিকে তাকালো। দৃষ্টির প্রখরতা বাড়িয়ে তাকালো আরাদের চোখের দিকে। আরাদ ও সায়েনের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রয়েছে। আরাদের চোখের কালো মনিতে সায়েনকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সায়েনের পলক পরছে না। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরাদের চোখের দিকে। দিক দিশা ভুলে গেছে সায়েন। আরাদের সমস্ত অনুভূতি চোখের মাঝে দেখা যাচ্ছে। সায়েন দেখতে পারছে। কেমন যেন অস্থির লাগছে সায়েনের। চেষ্টা করছে চোখ ফিরিয়ে নিতে কিন্তু পারছে না। ঠোঁট দুটো কাঁপছে অনবরত কাঁপছে সায়েনের। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথাটাও ঘুরে গেল সায়েনের। পড়ে যেতে নিলে আরাদ সায়েনকে ধরে ফেলে। তাল সামলাতে না পেরে সায়েন দুহাতে আরাদের গলা জড়িয়ে ধরে। আরাদ একহাতে সায়েনের কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেক হাত সায়েনের গালে রেখে বলল,’সায়েন!! এনিথিং রং??কি হয়েছে তোমার? খারাপ লাগছে, অসুস্থ তুমি?? কিছু বলো??’

সায়েন নিভু নিভু চোখে তাকাল আরাদের দিকে। হঠাৎ ওর হলো কি??সায়েন তা নিজেও বুঝতে পারছে না। কয়েক মুহূর্ত আরাদের দিকে তাকিয়ে রইল সায়েন। স্বাভাবিক হয়ে নিজেকে আরাদের বাহুডোরে দেখে ছিটকে দূরে সরে এলো সায়েন। আরাদ সায়েনের আরেকটু কাছে যেতে সায়েন দু’পা পিছিয়ে গেল। আরাদ বলল,’তুমি কি অসুস্থ??’
ইতিমধ্যে ঘাম ছুটে গেছে সায়েনের। চোখে পানি টলমল করছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’আ আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি। আমি যাই।’

সায়েন এক ছুটে চলে গেল। পেছন থেকে আরাদ বলে উঠলো,’সায়েন এই অবস্থায় যেও না। স্কুটার চালাতে পারবে না তুমি।’

সায়েন শুনলো না আরাদের কথা। দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল সায়েন। হঠাৎ করে সায়েন এরকম করলো কেন তা আরাদ বুঝতে পারলো না। সে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
সায়েনের অস্বস্তি হওয়া সত্ত্বেও স্কুটি চালাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে সায়েনের। চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পরছে। কারণ সায়েন বেশ বুঝতে পেরেছে যে আরাদকে সে ভালোবেসে ফেলেছে এবং আরাদও। কিন্তু ওদের এই ভালোবাসা তো সায়েনের মা কোনদিন মেনে নেবে না। একটা অজানা অচেনা ছেলে,তার উপর স্মৃতি হারিয়েছে। আরাদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব ঘোলাটে হয়ে আছে। এমন একটা ছেলের হাতে জয়নব বেগম কিছুতেই তার মেয়েকে তুলে দেবেন না। সায়েন তখন কাকে বেছে নেবে?? একদিকে আরাদ আরেকদিকে ওর মা। মাকেও যে সায়েন খুব ভালোবাসে। সায়েনের জীবনে ভালোবাসা কখনো আসেনি। আজকে কেন আসলো?? ভালোবাসা কেন হুট করে চলে আসে??এসব ভাবতে ভাবতে সায়েন বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছে। লিমাকে এখনও বিদায় দেওয়া হয়নি। যাক ঠিক সময়ে পৌঁছে গেছে সে।
এলোমেলো পায়ে সায়েন ভেতরে ঢুকলো। সারাবাড়ি খুঁজে মা’কে বের করলো সে। জয়নব বেগম এক এক করে অতিথি বিদায় দিচ্ছিলেন। হুট করে সায়েন এসেই ওর মা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। জয়নব বেগম
সায়েনের এহেম কাজে অবাক হয়ে গেল। সায়েন আচমকাই বলে উঠলো,’আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা। খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি।’

সায়েনের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝলেন না তিনি। পাশে থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো,’মনে হচ্ছে ওর নিজের বিয়ের দিনের কথা মনে পড়েছে। তাই এরকম করছে। বিয়ের পর সব মেয়েকেই বাবা মা ছেড়ে স্বামীর ঘরে যেতে হয় মা। স্বামীর সংসার সবাইকে করতে হয়।’

জয়নব বেগম সায়েনকে ছাড়িয়ে চোখ মুছে দিয়ে বললেন,’এভাবে কাঁদে না। ওসব কথা মনে করতে নেই। চলো এখন লিমাকে বিদায় দিতে হবে।’
মায়ের হাত ধরে সায়েন বাড়ির বাইরে এলো। ওর মনের কথাটা যে অন্য তা ধরতে পারেনি সায়েনের মা। বাড়ির গেইটের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো। লিমা ওর বাবাকে ধরে কাদতেছে। সায়েন ওর মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লিমার বাবা লিমাকে গাড়িতে তুলে দিলো। গাড়ি চলে গেল। সায়েন এখনো মায়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। চলে আসতে নিলে সায়েনের চোখ গেল রাস্তার অপরপাশে গোলাপের দোকান দেখে। লাল গোলাপ গুলো যেন ডাকছে সায়েনকে। স্মিত হেসে সায়েন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’মা দেখো গোলাপ।’
সায়েনের দৃষ্টি অনুসরণ করে তিনি রাস্তার অপর পাশে তাকালেন। লাল গোলাপ জয়নব বেগম ও পছন্দ করেন। সায়েন বলল,’তুমি দাঁড়াও আমি কিনে আনছি।’

জয়নব বেগম সম্মতি দিলেন। সায়েন সাবধানে রাস্তা পার হয়ে গোলাপের দোকানে গেল। এক তোড়া গোলাপ হাতে নিয়ে তার গন্ধ শুঁকতে লাগল। ভালো লাগছে গোলাপ গুলো দেখতে। মায়ের জন্য নিচ্ছে সে গোলাপ গুলো। বাবাকে দেখতো প্রায়ই গোলাপ নিয়ে আসতে। তখন সায়েন ছোট ছিল। তবে এখনো আনে তবে খুব কম। সায়েন হাতে নিয়ে গোলাপ নেড়েচেড়ে দেখছে। হঠাৎ করেই ওর সামনে থাকা ফুলদানিটা ভেঙে গুরোগুরো হয়ে গেল। একটা দমকা হাওয়া যেন পাশ দিয়ে দ্রুত বয়ে গেল। ভয়ে সায়েনের হাত থেকে গোলাপ গুলো পড়ে গেল। পেছোতে গিয়ে সায়েন নিজেও রাস্তার পাশে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে চার থেকে পাঁচজন লোক সায়েনকে ঘিরে দাঁড়ালো। সবার হাতে রিভালবার। লোকগুলো এদিক ওদিক তাকিয়ে রিভালবার ঘোরাতে লাগলো। জয়নব বেগম দৌড়ে গেলেন সায়েনের কাছে। মায়ের বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সায়েন। হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেল?? একজন লোক সায়েনকে উদ্দেশ্য করে বলল,’কেউ আপনার দিকে গুলি ছুড়েছে ম্যাম। আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান এখান থেকে। আমরা দেখছি।’

জয়নব বেগম তাড়াতাড়ি সায়েনকে নিয়ে আসলেন। সায়েন ঘাড় ঘুরিয়ে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এরা কারা??সায়েনকে বাঁচাতে এভাবে ছুটে এসেছে??আর সায়েনের উপর গুলি চালালোই বা কে??ওর তো কোন শত্রু নেই। ওর মতো মেয়ের শত্রু থাকার তো কথাই না। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে সায়েনের। বারবার লোকগুলো কে দেখছে সে। কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে সায়েনের। তবে ভয়ের মাত্রাও বেড়েছে।

জয়নব বেগমের বুকে মাথা রেখে কাঁপছে সায়েন। খুব ভয় পেয়ে আছে সে। পুলিশ,গুন্ডা খুন খারাবি খুব ভয় পায় সায়েন। যদিও সে সাহসী বটে কিন্তু এসব খুন খারাবি সহ্য হয় না সায়েনের। থেকে থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছে সায়েন। শফিকুল ইসলাম চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। তার একমাত্র মেয়ের উপর কে আক্রমণ করলো??জানা মতে তার কোন শত্রু নেই। তাই তিনি চিন্তায় আছেন খুব। শাফিন চিন্তিত অবস্থায় সায়েনের পাশে বসে আছে। বোনের জন্য চিন্তিত সেও। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শাফিন মুখ খুলল,’মা আমার মনে হয় আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। বিয়ে তো শেষ হয়ে গেছে। বৌভাতের অনুষ্ঠানে বাড়ি থেকেই যাব। এখানে থাকলে যদি সায়েনের উপর আবার হামলা হয়??’

ভয়ে কেঁপে উঠলেন জয়নব বেগম ও। তিনি বললেন,’আমি থাকতে আমার মেয়ের উপর কেউ নজর দিতেও পারবে না। শাফিনের আব্বু, কালকে সকালেই চলে যাব আমরা। এখানে থাকব না আর।’

সায়েন ওর মা’কে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,’মা তুমি আমার কাছ থেকে কোথাও যেও না আমার ভয় লাগছে খুব।’

‘আমি এখানেই আছি। কোথাও যাব না। কিন্তু আমার একটা বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে।’

শাফিন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’কোন বিষয়ে??’

‘কারা সায়ুর উপর হামলা করলো??আর ওই লোকগুলো কারা??সায়ুকে বাঁচাতে এভাবে এগিয়ে আসলোই বা কেন??’

সায়েন ও সাথে সাথে জবাব দিলো,’আমার ও সেটা মনে হচ্ছে। লোকগুলো কারা?? আমাকে এভাবে বাঁচাতে এলোই বা কেন??’

আর কেউ কোন কথা বলল না। সায়েন মা’কে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে দেয়। ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারছে না সায়েন।

পরের দিন সকালেই সবাই বাড়িতে ফিরে এলো।‌ সায়েন আগে গিয়ে নিজের রুম চেক করলো। আরাদ নেই ওর রুমে। তাহলে কোথায়??ছাদে চিলেকোঠার ঘরে হবে। সায়েন দ্রুত ছাদে চলে গেল। চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে অবাক হয় সায়েন। কারণ সেখানেও আরাদ নেই। তাহলে কোথায় গেল??সায়েন এবার ভাবনায় পড়ে গেল। আরাদ এভাবে কোথায় গেল??চলে গেল নাকি??সায়েনের অস্থির হতে লাগলো। আরাদ যদি চলে যেতো তাহলে তো সায়েনকে বলে যেতো তাহলে আরাদ কোথায় গেল??বুক ভেঙে কান্না আসছে সায়েনের। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সায়েন। দ্রুত নিচে নেমে আসে।
সারাদিন পার হয়ে যায় আরাদের দেখা নেই। সারাদিনে অনেকবার চিলেকোঠার ঘরে গিয়েছে সায়েন কিন্তু আরাদ নেই। ওদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তবুও আরাদ আসলো না। রাতেও চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে ঘুরে এসেছে সায়েন ‌তবুও আরাদের দেখা নেই। নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে কাদতেছে সায়েন। নোনাজলে ভাসিয়ে দিচ্ছে বালিশের গা। মাঝেমাঝে নাক টানছে। নোনাজল বিসর্জন দিতে দিতে সায়েন ঘুমিয়ে পড়লো।

#চলবে,,,,,,,,,,