চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-১২

0
559

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_১২

কনকনে শীত,ভরা শীতে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর মজাই আলাদা। এই মুহূর্তে সায়েনও তাই করছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সকাল আটটা বেজে গেছে তবুও সায়েনের ওঠার নাম নেই। সে ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছেই। শাফিন হুড়মুড়িয়ে সায়েনের রুমে এলো। কম্বল টেনে সায়েনকে জাগিয়ে তুলে বলল,’আর কত ঘুমাবি ওঠ।’

সায়েন কম্বল টেনে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,’শীত লাগছে ভাইয়া তুই যা তো??আমার ঘুম হয়নি।’

‘তোর জন্য আতশবাজি এনেছি। কালকে নিউ ইয়ার। কোন প্ল্যান নেই তোর??’

সায়েন লাফ দিয়ে উঠে বসে। শাফিনের হাতের দিকে তাকালো। ব্যাগ ভর্তি আতশবাজি। সায়েন খুশিতে লাফিয়ে উঠে। প্রতিবছর সায়েন আর শাফিন নিউ ইয়ার পালন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।সায়েন ব্যাগটা টেনে নিয়ে দেখতে লাগল। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। শাফিনকে উদ্দেশ্য করে সায়েন বলল,’ঘুরতে নিয়ে যাবি ভাইয়া?? নাকি ভাবির সাথে ঘুরবি??’

শাফিন সায়েনের পাশে বসে বলল,’রুহির সাথে কালকে ঘুরব আজকে বাড়িতেই আছি। কিন্তু মা তোকে যেতে দেবে?? সেদিনের পর থেকে মা ভয়ে আছে খুব।’
সায়েন মাথা নাড়িয়ে বলল,’তাহলে সবাই মিলে যাই?? মা’কে বলে আসি।’

সায়েন উঠে দৌড়ে চলে গেল। জয়নব বেগম সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন। সায়েন গিয়ে অনেকটা ভয় জড়ানো কন্ঠে বলল,’মা কালকে তো নিউ ইয়ার। সবাই কত মজা করবে।’

‘হুম!! তুমি আর শাফিন ও করো।’

‘বলছি চলো আমরা বাইরে ঘুরে আসি আজকে??’

জয়নব বেগম চোখ ঘুরিয়ে সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলল,’কেন??এতো ঘোরাঘুরি করার কি প্রয়োজন??’

সায়েনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখ গোমড়া করে চলে যেতে নিলে জয়নব বেগম বলল,’আজকে ঘুরাঘুরি করার দরকার নেই। কালকে সবাই একসাথে ঘুরতে বের হবো।’

খুশিতে সায়েন একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো। মা’কে হালকা জড়িয়ে ধরে দৌড়ে চলে গেল সে। শাফিনের কাছে গিয়ে বলল,’ভাইয়া মা কালকে আমাদের সাথে ঘুরতে যাবে বলেছে।’

শাফিন খুশি হওয়ার বদলে মুখটা গোমড়া করে ফেলল। রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সায়েনের দিকে। কিন্তু সায়েন বুঝলো না। বলল,’কি হলো?? তুই খুশি হসনি??’

‘চুপ বেয়াদব!!কি করলি এটা?? কালকে রুহির সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা আর তুই দিলি সব ভন্ডল করে??’

সায়েন জিভ কামড়ে বলল,’ইশশশ আমার একটুও মনে ছিল না। আচ্ছা আমরা বিকালে যাব তুই না হয় সকালে যাস ঘুরতে। একটু ম্যানেজ করে নে না??’

‘সবসময় আমাকে বাশ না খাওয়ালে তোর হয় না??’
সায়েন দুষ্টু হেসে বলে,’নাহ হয় না। জেনে হোক আর না জেনে, তোকে বাশ খাওয়াবোই আমি। যা যা!!’

সায়েন হাতের ব্যাগটা নিয়ে ছাদে চলে যায়। আতশবাজি গুলো রোদে শুকাতে দেবে। ছাদে সবগুলো শুকাতে দিয়ে সায়েন চিলেকোঠার ঘরের দিকে তাকালো। আরাদ নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে সায়েন আর সেদিকে গেল না। পরে খাবার নিয়ে আসবে ভাবলো। কালকে কিছু বলতে চেয়েছিল আরাদ কিন্তু সায়েনের সময় ছিল না। তখনই জয়নব বেগমের ডাক পড়ে। তাই সায়েন দৌড়ে চলে আসে। আরাদের আর বলা হলো না। সায়েন নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো। সময় বুঝে আরাদকেও খাবার দিয়ে এলো।

সারাদিনে আরা আরাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি সায়েনের। আজকে বাবা ভাইয়া বাড়িতে। সবার সাথে সময় কাটাচ্ছে সায়েন। শুধু দুপুরের খাবার টা দিয়ে এসেছিল।
সন্ধ্যা নামতে এখনও দেরি আছে। ত্রিশ কি চল্লিশ মিনিট বাকি। জয়নব বেগম রান্নাঘরে পাকোড়া ভাজছে। আজকে সবাই আড্ডা দেবে অনেক রাত পর্যন্ত। শফিকুল ইসলাম বাজারে গিয়েছেন আর শাফিন রুমে বসে আতশবাজি গুলো চেক করছে। এই সুযোগে সায়েন ছাদে চলে গেল। চিলেকোঠার ঘরের দিকে এগোতেই চোখ পড়লো আরাদের দিকে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ। গায়ে চাদর নেই। সায়েন আরাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’আপনার চাদর কোথায়??ঠান্ডা লেগে যাবে তো??’

সায়েনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো আরাদ। সায়েন চোখ কুঁচকে বলে,’হাসছেন কেন?? সত্যি তো বললাম।’

সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো আরাদ বলল,’তোমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম সায়েন।’

মাথা নেড়ে সায়েন বলে,’বলুন!! আমার সময় খুব কম। এরপর আর আসতে পারব না।’

আরাদ আবার হাসলো বললো,’এমন একদিন আসবে সেদিন তুমি শুধু আমার কাছে থাকবে। দূরে যাওয়ার কোন বাহানা থাকবে না তোমার কাছে।’
সায়েন ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরাদের দিকে। আরাদ আগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়েনের দিকে। সায়েন যে ওর কথার আগাগোড়া বুঝতে পারেনি তা বেশ বুঝতে পেরেছেন আরাদ। মুচকি হেসে বললো,’আমি সেদিনই চলে যেতে পারতাম সায়েন। কিন্তু তুমি যেতে দাওনি আমাকে। তুমি কি জানো তোমার মধ্যে এক অদ্ভুত সত্তা লুকিয়ে আছে যা আমাকে সেদিন টেনে ধরেছিল। আমি যেতে পারিনি সায়েন। তাই দিনের পর দিন এই নোংরা চিলেকোঠার ঘরে পড়ে আছি শুধু তোমার জন্য। তোমার মধ্যে কি এমন আছে বলতে পারো??’

সায়েন চুপ করে তাকিয়ে আছে আরাদের দিকে। আরাদের এবারের কথাগুলো বোধগম্য হলো না সায়েনের। আরাদের কথাগুলো মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে। আরাদ আলতো করে সায়েনের হাত দুটো দুহাতে নিলো। ঠান্ডা হাতের স্পর্শে খানিকটা কেপে উঠলো সায়েন। শুকনো ঢোক গিলে তাকালো আরাদের দিকে। আরাদ কোনরকম ভনিতা না করেই বলল,’আই লাভ ইউ সায়েন।’

প্রতিত্যুরে সায়েন কিছু বলল না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল আরাদের দিকে। কথা বলার মতো অবস্থায় সায়েন নেই। আরাদ সায়েনের হাত ধরে আরেকটু কাছে টেনে এনে বলল,’শত চেষ্টা করেও নিজেকে আটকাতে পারিনি। কি করব বলো??ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। তোমার মায়ায় আটকে গেছি খুব বাজে ভাবে। এই মায়া থেকে বের হওয়ার কোন পথ নেই আমার কাছে।’

আরাদের হাত সায়েনের হাত ছেড়ে ওর গালে স্পর্শ করলো। সায়েন নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গভীর ভাবে নিজের অধরজোড়া সায়েনের ঘন চুলে ছোঁয়ায় আরাদ। সায়েনের একদম কাছে সে। ফিসফিস করে বলল, ‘আমার উওরটা হ্যা হবে আমি জানি। কিন্তু তবুও তোমায় সময় দিলাম। কালকে নিউ ইয়ার সায়েন। তোমার জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আমি চাই কালকেই তোমার উওরটা নিতে।’

আরাদ ছেড়ে দিলো সায়েনকে। দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলল,’এখন যেতে পারো!!!’

সায়েন এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। দৌড়ে চলে গেল সিঁড়ির কাছে। আরাদ জোরে বলে উঠলো,’তোমার মনের চিলেকোঠার ঘরে আমি থাকতে চাই সায়েন। ভালোবাসা দিয়ে সাজাবো সেই ঘর। আমাদের চিলেকোঠার প্রেম নতুন করে তখন শুরু করব না হয়?? শুধু তোমার সম্মতির অপেক্ষায়।’
সায়েন থমকে দাঁড়িয়ে আরাদের কথা শুনলো। তবে পিছনে ঘুরে তাকালো না আবার সামনের দিকে পা বাড়ালো সে। কি হলো??কেন হলো?? কিভাবে হলো?? কিছুই মাথায় ঢুকছে না সায়েনের শুধু এটাই জানে যে আরাদ ওকে ভালোবাসে। মনের মধ্যে সুখ অনুভব করছে সায়েন। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাঁসি ঝুলছে তার। আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল সায়েন।

_____________

রাত বারোটা বাজতে এখনো ত্রিশ মিনিট বাকি। নিজের ফ্ল্যাট থেকে রেডি হয়ে বেরিয়েছে আরাদ। আজকে প্রায় দুমাস পর নিজের বাড়িতে যাবে সে। মা নিশ্চয়ই রাগ করে বসে থাকবে। সবাইকে মানাতে হবে গিয়ে। নিউ ইয়ার আর কিছুক্ষণ বাদেই, বাড়ির সবার সাথে নিউ ইয়ার পালনের জন্য যাচ্ছে আরাদ। তবে সায়েনের বাড়িতে আর ফিরবে না। কালকের পার্টি শেষে একেবারে সায়েনের বাড়িতে যাবে। সব সত্যি বলে দেবে সায়েনকে। সায়েনের মনে যে আরাদ রয়েছে তা জানে আরাদ। সায়েন কিছুতেই আরাদকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়িতে পৌঁছে গেল আরাদ। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এখনও পনেরো মিনিট বাকি বারোটা বাজাতে। সদর দরজা খোলাই ছিল। বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবার গম্ভীর মুখখানা দেখতে পেল আরাদ। সাথে জোনায়েদ ও রয়েছে। জোনায়েদের মুখ দেখে মনে হলো যে সে আচ্ছামতো ধোলাই খেয়েছে। সোফায় বসে আছে আরাদের বাবা মা আর কাকি। ভাইবোন গুলো একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আরাদের উপর তারা রাগ করতে পারেনা। এক ধমকেই তারা চুপ করে যায়। কিন্তু আরাদের মা ই একটু গোলে মেলে। ওনাকে মানাতে কাঠখড় পোড়াতে হয় অনেক। আরাদ গুটিগুটি পায়ে মায়ের পাশে বসে। মায়ের হাত ধরতেই তিনি ছাড়িয়ে নিলেন। আরাদ বলল, ‘মা আমার সাথে কথা বলবে না?? এতদিন পর এলাম আর তুমি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছো??’

নিলিমা বেগম কটাক্ষ করে বললেন,’এসেছিস কেনো??ওই মেয়েটার কাছে গিয়ে পড়ে থাক গিয়ে।’
মায়ের এরকম কথা শুনে চোখ তুলে জোনায়েদের দিকে তাকালো আরাদ। সব বলে দিয়েছে গাধাটা। চোখ গরম করে তাকালো আরাদ। জোনায়েদ কানে হাত দিয়ে জিভ কেটে মাথা নাড়লো। আরাদ নিলিমা বেগমের হাত ধরে বলল,’আ’ম সরি মা!!আসলে!!’

নিলিমা বেগম রেগে বললেন,’আসল নকল বাদ দে!!কোন মেয়ের জন্য পড়ে আছিস তুই?? আবার নাকি নোংরা চিলেকোঠার ঘরে থাকছিস?? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। মাথা ঠিক আছে তোর??’
মাথাটা আরো গরম হয়ে গেল আরাদের। সবটাই বলে দিয়েছে জোনায়েদ। রাগ দমিয়ে সে বলল,’তেমন কিছুই না মা!!’

‘আবার কথা বলছিস তুই??তোর সাথে আমার কোন কথাই নেই। যা যা ওই মেয়ের কাছে গিয়ে পড়ে থাক।’

নিলিমা বেগম গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেলেন রুমে। এতক্ষণে ইমজাদ ওয়াহেদ মুখ খুললেন,’এটা ঠিক করিসনি আরাদ। তোর মা কষ্ট পেয়েছে। তোর সবটা জানানো উচিত ছিল।’
বাবার দিকে অসহায় হয়ে তাকালো আরাদ। ফেসে গেছে সে। এখন মাকে কিভাবে মানাবে??আরাদ হাসি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,’কাকিমনি তুমি একটু মা’কে বোঝাও।’

হাসি বেগম মুখ ঘুরিয়ে বললেন,’ভাবি তো ঠিকই বলেছে। কোথায় তুই আমাদের বলবি। আমরা মেয়েটাকে দেখব জানব তারপর নাহয় বিয়ে শাদির কথা ভাববো। তা না করে তুই ওখানে থেকে গেলি তাও আবার ওই নোংরা ঘরে!!’
আরাদের কাকা ইমান ওয়াহেদ বললেন, ‘তোমরা থামো??ছেলেটা এতো দিন পর এলো। তোমরা বকাবকি করছো??আরাদ তুই তোর মায়ের কাছে যা তো!!ক্ষমা চেয়ে নে তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।’

আরাদ তাই আবার মায়ের রুমে গেল। নিলিমা বেগম খাটের উপর পা তুলে বসে আছে। আরাদ গিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। বলল,’আমি যত ভুল করি তুমি তা ক্ষমা করে দাও। আজকের এই ভুলটা কি ক্ষমা করা যায় না??প্লিজ মা?? কালকে আমার জিবনের বড় একটা দিন আর তুমি রাগ করে থাকবে??’

ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট নিলিমা বেগমের রাগ ভাঙানোর জন্য। মুচকি হাসলেন তিনি। ছেলেদের মাথায় যত্ন করে হাত বুলাতে লাগলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাসি বেগম জোনায়েদ আর আরাদের ভাইবোন গুলো রুমে ঢুকলো।তামিম উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,’ভাইয়া!!ভাবি কেমন দেখতে রে?? কিভাবে কি হলো??’

আরাদ ঘাড় ঘুরিয়ে তামিমের দিকে তাকালো। সম্পর্কে চাচাতো ভাই তামিম। আরেক বোন ও আছে নাম তনয়া। আর আরাদের নিজের বোনের নাম আরশি। তনয়া আর আরশি এক বয়সি। কিন্তু তামিম ওদের থেকে বড় আর আরাদের ছোট। আরাদই পরিবারের বড় সন্তান। তামিমের প্রশ্নে আরাদ বিরক্ত হয়ে বলল,’এতকিছু জেনে তোদের কি হবে যা ভাগ।’

তামিম চুপ করে গেল। ওরা তিন ভাইবোন আরাদকে যমের মতো ভয় পায়। আরাদের কথার পিঠে কেউ কোন কথা বলে না। হাসি বেগম এসে বসে বলল,’তামিম তো ঠিকই বলেছে। বল না কিভাবে কি হলো??’

‘তুমি কাকি হয়ে এখন ছেলের প্রেমের কথা শুনবে??’

‘তো কি হয়েছে??বল আমরা শুনি নাইলে তোর ছুটি নেই।’

আরদ বুঝলো যে পুরো হিস্টোরি না শুনে এরা ছাড়বে না। জোনায়েদের উপর ভিশন রাগ হচ্ছে আরাদের। এখন কি আর করার?? একে একে সব বলল আরাদ। আরাদের বলা শেষ হতেই আশেপাশে তাকালো সে। নিলিমা বেগম বড়বড় চোখে তাকিয়ে আছে আরাদের দিকে। হাসি বেগম গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। আরশি,তনয়া, তামিম মেঝেতে বসে পড়েছে। জোনায়েদের কোন ভাবান্তর নেই কারণ সে আগে থেকেই সব জানে। সবার এরকম অবস্থা দেখে আরাদ বলল,’কি হলো সবাই চুপ করে আছো কেন??’

তামিম হুট করেই হাততালি দিতে লাগল। তামিমের দেখাদেখি তনয়া আর আরশি ও হাততালি দিয়ে উঠলো। হাসি বেগম ধমক দিয়ে বললেন,’তোরা থাম তো!!আরাদ তোর কি অসুখ করেছে??এমন করছিস কেন?? তাও একটা মেয়ের জন্য??’

আরাদ উঠে বসে বলল,’আমার অসুখ সায়েন ব্যতীত কেউ সারাতে পারবে না। আমি আসি কালকে অনেক বড় একটা দিন আমার কাছে। জোনায়েদ চলে আয়।’

জোনায়েদ ভয়ে ভয়ে চলল আরাদের পিছু পিছু। ছেলের কান্ড দেখে হাসলেন নিলিমা বেগম। কিন্তু আরাদ যে এভাবে কোন মেয়ের প্রেমে পড়বে তা তিনি ভাবতেই পারেনি। যাক ছেলে খুশি হলেই তিনি খুশি।

রুমে গিয়ে আচ্ছা মতো ঝাড়লো জোনায়েদ কে। আরাদের মুখের উপর কোন কথাই বলল না জোনায়েদ।

আজকে নিউ ইয়ারের প্রথম দিন। সবাই উপভোগ করছে দিনটা। কিন্তু আরাদ ওর কাজে ব্যস্ত। আজকে সন্ধ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় বিজনেস পার্টিতে যাবে ও। সাথে পরিবারের সবাই যাবে। সেরা বিজনেসম্যানের পুরষ্কার কার হাতে উঠবে সেটা নিয়ে সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। সন্ধ্যায় সবাই রেডি হয়ে নিয়েছে। জাঁকজমক পোশাকে সবাই নিজেদের সাজিয়েছে। আরাদের বাড়ি থেকে দুটো গাড়ি বের হলো। একটাতে আরাদের বাবা মা কাকা কাকি আরেকটাতে আরাদ, তামিম,তনয়া আর আরশি। আর জোনায়েদ ওর বাড়ি থেকে বের হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেল। এত বড় অনুষ্ঠান, সুন্দর করে সাজানো হয়েছে চারিদিক। আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো আরাদ। পরনে তার জিন্স আর হোয়াইট শার্ট,উপরে ব্লু রঙের স্যুট। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ভেতরে ঢুকলো সে। তামিম ও কম নয়,সেও ভাব নিয়ে আরাদের পিছু পিছু ছুটলো। আরশি আর তনয়া সেলফি তোলায় ব্যস্ত। দুজনে বাড়ি থেকেই ঠিক করে এসেছে যে কোন ছেলেকে আজকে পাত্তাই দেবে না। সেটাই করছে তারা। অনেক ছেলেরা এসেছিল ওদের সাথে কথা বলতে কিন্তু ওরা পাত্তাই দেয়নি।
সবাই যার যার আসনে বসে পড়েছে। ইয়াং ছেলে মেয়েদের অভাব নেই এখানে। কিছু মেয়েরা তো আরাদকে চোখ দিয়েই গিলে খেতে পারলে ছাড়ে না। সব বড়বড় ব্যবসায়ীদের ছেলেমেয়ে।
অবশেষে কঙ্খিত সময়টা চলে এলো। ঘোষণা করা হলো এই বছরের সেরা বিজনেস ম্যানের নাম। তামিম আরশি আর তনয়া তো আগে থেকেই আরাদের নামে স্লোগান দিতে শুরু করে দিয়েছে। অবশেষে সব প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আরাদের নামটা ঘোষণা করা হলো। সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে মুখরিত হলো পুরো হলরুম। তরুনদের মধ্যে সেরা বিজনেস ম্যানের এওয়ার্ড আরাদের হাতে উঠলো। মুচকি হেসে আরাদ স্টেজে উঠে গেল। মাইক হাতে নিয়ে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে এওয়ার্ড হাতে নিয়ে নেমে এলো। আরশি তনয়া গিয়ে সেলফি তুলছে আরাদের সাথে। সাথে তামিম ও যোগ হলো।
আরাদ একটুও শ্বাস ফেলার সুযোগ পাচ্ছে না। ইমজাদ ও ইমান ওয়াহেদ কে সবাই ঘিরে ধরেছে। কথা না বলতে চাইলেও বলতে হচ্ছে।আরাদকে কতগুলো ছেলে মেয়ে ঘিরে ধরেছে।

কিন্তু এত মানুষের ভিড়ে একটা চেনা চেহারায় চোখ আটকে গেল আরাদের। অবাক হয়ে তাকালো আরাদ। সায়েন এখানে কিভাবে??ভিড় ঠেলে সে হলরুমের শেষ প্রান্তে চলে গেল যেখানে সায়েন দাঁড়িয়ে আছে। অবাকতা এখনও কাটেনি আরাদের। সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’সায়েন তুমি!!’

মুচকি হাসলো সায়েন। হাত বাড়িয়ে দিলো আরাদের দিকে বলল,’আপনার ফোন আর পাওয়ার ব্যাঙ্ক ফেলে এসেছিলেন চিলেকোঠার ঘরে।’

আরাদ এখনও অবাক চোখে সায়েনের দিকে তাকিয়ে আছে। আনমনেই হাত বাড়িয়ে সে ফোনটা নিলো। সায়েনের ঠোঁটে এখনও সেই হাসিটা বিদ্যমান।

#চলবে,,,,,,,,,,