চোখের দেখাই সব নয় পর্ব-০২

0
181

#গল্প_চোখের_দেখাই_সব_নয়
#দ্বিতীয়_পর্ব

সেই সুন্দরী পা*পিষ্ঠা মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আর এই যে আপনাকে কি বলবো! আপনি তো এখানে এসে ভালোই ব্যবসা শুরু করেছেন! করেন যতোদিন এই রূপ-যৌবন থাকে আপনার!

যা রুপ আপনার! তাতে অবশ্য পুরুষ পটাতে আপনার খুব একটা কষ্ট করতে হবে না। তবে এই রূপ-লাবণ্যে আকৃষ্ট হয়ে যারা আপনার কাছে আসবে তারাও একদিন ধ্বং*স হবে, আর আপনিও একদিন ধ্বং*স হয়ে যাবেন!

জানেন, অনেক করুণ পরিনতি হবে আপনার! না জানি কত মানুষের ঘর আপনার দ্বারা ভেঙে গেছে? কত মেয়ের চোখের জল মুছতে হয়েছে আপনার জন্য? আমি তা জানি না! কিন্তু আমার চোখের এই অশ্রুবিন্দু আপনার জন্য অ*ভিশাপ বয়ে আনবে নিশ্চিত জানবেন। আপনিও একদিন আমার মতোই কাঁদবেন।

কেঁদে কেঁদে অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ভি*ক্ষা করে বেড়াবেন। কিন্তু কেউ সেদিন আপনার দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাবে না পর্যন্ত! এতোটুকু সাহায্যও আপনি তখন কারও কাছ থেকে পাবেন না। আমি নিজের মুখে আপনাকে এই অ*ভিশাপ দিয়ে গেলাম। কথাটা মনে রাখবেন। আমার হৃদয় বলছে একদিন এটাই চরম বাস্তবতায় পরিণত হবে।

কথা বলতে বলতে আমার চোখের জল নাকের জল এক হয়ে গেল। মারুফ বললো, প্লিজ সায়মা! তুমি দয়াা করে চুপ কর। তুমি যা ভাবছো সত্যি তেমন কিছু না। আর তা হতেও পারে না! যা সম্ভব নয়, তুমি কিন্তু তাই ভেবে যাচ্ছো! আমি চোখের জল নাকের না মুছেই জিজ্ঞেস করলাম, তবে কি মারুফ?

তুমি নিশ্চয়ই এটা সেটা বলে এখন আমাকে বোকা বানাতে চেষ্টা করবে! কিন্তু সেটা যদি ভেবে থাকো তবে ভুল ভাবছো। আমি ততোটা সহজসরল বোকা মেয়ে নই মারুফ! যে এখন সাত-পাঁচ বোঝালেই আমি বোঝে যাবো?

মারুফ তুমি কি কখনো শুনেছো চো*র ধরা পড়ে গেলেও সত্যি কথা বলে? বললাম, তা কখনো বলে না মারুফ! তোমরাও নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে এখন হাজারটা মিথ্যা কথা বলে যাবে। তা আমি ভালো করেই জানি! আর যদি আমাকে বোঝাতে চেষ্টা কর। তবুও তাতে কোন কাজ হবে না মারুফ!

মহিলাটি আমার কথা বলা দেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে অবাক হয়ে আমার দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে! আমি আবারও তাঁর দিকে তাকিয়ে আমার মনে জমে থাকা ঘৃ*ণার বি*ষবা*ষ্প তাঁর দিকে ছুঁড়ে দিলাম।

চোখের জল মুছে বললাম, অপর কে কাঁদিয়ে প্রাণ ভরে ইচ্ছে মতো আনন্দ ফূর্তি করে নিন। একদিন এমন দিন আসবে আপনার জীবনে এই আনন্দ ফূর্তির রেশ মাত্রও থাকবে না। দেহ-মনের শান্তি আপনার হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। তখন এই আনন্দ ফূর্তির কথা ভেবে কেঁদে কেঁদে অসহায়ের মতো বুক ভাসাবেন! তখন একটুখানি সহানুভূতির জন্য আপনি পা*গলের মতো ছুটবেন। কিন্তু বিচার তখন আপনার শুরু হয়ে যাবে। শান্তি কি জিনিস খুঁজে পাবেন না! চারিদিকে শুধু শাস্তি আর শাস্তি দেখতে পাবেন। দেহ মনের প্রচন্ড যন্ত্রণায় আপনি জ্ব*লে পু*ড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবেন!

তখন রাস্তায় রাস্তায় অলিতে-গলিতে ঘুরে পাবেন শুধু মানুষের ঘৃ*ণা আর ঘৃ*ণা! ছি! শত ধিক্কার জানাই আপনার এমন জীবনের প্রতি! আমার কথা শুনে মহিলাটি নিরবে চোখের জল তাঁর শাড়ির আঁচলের কোণে মুছে চলেছেন। আমার কথাগুলো হজম করতে না পেরে তিনি অবশেষে বললো, হয়তো তোমার কথাই ঠিক হবে ভাই! যে আপনজনের মনে কষ্ট দেয় তাঁর কপালে তো এমন দুঃখদুর্দশাই হওয়ার কথা! দেখো তোমার কাছেই কতটা অপমান আমাকে সইতে হলো। আমার জীবনে এরচেয়ে দুঃখ দূর্দশা আর কি হতে পারে? আমি জানি আমার কপালে এমন কিছুই ঘটবে!

যে মানুষ জীবনের শুরুতে ভুল করে। তাঁর পৃথিবীতে এরচেয়ে বেশি ভালো কিছু আশা করা অন্যায়! তুমি আমাকে যা বলার বলে যাও! কিন্তু তোমার স্বামীটিকে কিছু বলো না। ওর কোন দোষ নেই!

আমি উনার এমন ন্যাকামি দেখে আরও জ্ব*লে উঠে বললাম, কেন ওর উপর অনেক মায়া বসে গেছে আপনার! তাই কি ? আপনাদের মতো জঘন্য পা*পিষ্ঠাদের গায়ে এমন সামান্য কথাও তাহলে দাগ কাটে? ছি! আপনার ও আমার স্বামীর প্রতি রীতিমতো আমার ঘে*ন্না হচ্ছে! নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থু শব্দ করে মেঝেতে থুথু ছিটিয়ে দিলাম। প্রচন্ড ক্রো*ধের সাথে বললাম ছি! আপনার চাইতে বাজারের মেয়ে মানুষও অনেক ভালো! তারা অন্তত ভদ্র পাড়ায় এসে অভদ্রতা করে না। কারও স্বামীকে রূপের প্রলোভন দেখিয়ে সংসার ভা*ঙবার চেষ্টা করে না। নারী নামের ক*লঙ্কিনী আপনি!

কথাগুলো বলে আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। চোখে রীতিমতো ঝাপসা দেখতে শুরু করেছি। হাঁপিয়ে ওঠেছি। শরীর রীতিমতো অস্থির অস্থির লাগছে! আর নিজেকে সামলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় আমার চোখের সামনে এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটে গেল।

মারুফ আমার কথাগুলো শুনে প্রচন্ড রা*গান্বিত হয়ে গেল। ও চেঁচিয়ে উঠে বললো, তুমি কাকে কি বলছো! তুমি জানো, তিনি কে? মারুফের এমন অ*গ্নিমূর্তি আমি এর আগে আর কখনো দেখিনি! সে রীতিমতো ভ*য়ানক ভাবে তেড়ে আসছিলো আমাকে মারার জন্য।

নিজের হাতটা উঁচিয়ে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে আসছিলো সে! কিন্তু মহিলাটি মারুফ কে থামিয়ে দিল। বললো, তুমি উ*ত্তেজিত হয়োনা মারুফ! তুমি কি পা*গল হলে নাকি? উনি তোমার স্ত্রী! তাই স*ন্দেহ করে তাঁর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে! তাই বলে কি তুমিও মাথা নষ্ট করবে নাা-কি?

খেয়াল করলাম আমার স্বামী ঐ মহিলার এই,সামান্য কথাতেই একেবারে শান্ত ভদ্র হয়ে গেল! মনে মনে ভাবলাম, এই কয়দিনেই তোমাদের এতো গভীর ভালোবাসা! হে পা*পিষ্ঠা নারী! আজ তোমারই জয় ঝংকার বেজে উঠুক। সত্যি যদি আমি পতিব্রতা স্ত্রী হয়ে থাকি। তবে একদিন নিশ্চয়ই মারুফ আমার মতো নারীর জন্যই আফসোস করবে? যে অন্য কোন পুরুষ নয় শুধু স্বামীকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে। তাইতো আজ এতো আ*ঘাত আমার হৃদয়ে এসে লাগলো। হে ক*লঙ্কিনী পথভ্রষ্ট নারী এই ক্ষনিকের আনন্দ ফূর্তিটা না-হয় তোমার কাছেই রইলো। আমি আজ এখন থেকে সবকিছু ত্যাগ করলাম!

আমি ওদেরকে আর কিছু না বলে চলে এলাম। আসার সময় দরজার উপর জোরে ধাক্কা দিয়ে মনের আ*গুন কিছুটা মিটাতে চাইলাম। আমার মনে হচ্ছিল সবকিছু জ্বা*লিয়ে পু*ড়িয়ে ছাঁই করে দিতে পারলেই হয়তো আমার হৃদয়ে কিছুটা প্রশান্তি মিলতো!

মারুফ তৎক্ষনাৎ আমার পিছু পিছু ডাকতে ডাকতে চলে আসতে লাগলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, তুমি আমার একটা কথা শুনো! আমি তোমাকে সব কথা বুঝিয়ে বলছি সায়মা! প্লিজ শুধু শুধু ভুল বোঝে দূরে সরে যেওনা!

আমি মারুফের কোন কথাই শুনতে রাজি হলাম না। ওর আগে দৌড়ে এসে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে কেঁচি গেইট লাগিয়ে তালা বন্ধ করে দিলাম। সে আমার এমন আচরণ দেখে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে, এটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে যাচ্ছে! আমি কি সারারাত বাড়ির বাইরে থাকবো না-কি?

আমি শুধু বললাম, আপাতত আমি যতোক্ষণ এই বাড়িতে আছি ততক্ষণ! মারুফ রা*গান্বিত হয়ে একটা আধ টুকরো ইটের উপর লা*থি মেরে বলে, তুমি কিন্তু আমার সাথে এমন করতে পারো না, সায়মা! একদিন নিশ্চয়ই তুমি নিজের এমন আচরণের কারণে ল*জ্জিত হবে! আমি একটা পা সিঁড়িতে রেখে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে বললাম, তোমার কি মনে হয় সেই অপেক্ষায় আমি তোমার কাছে বসে থাকবো?

মারুফ এবার নিরুত্তাপ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে তুমি কি করতে চাও? আমি ঘৃ*ণা মিশ্রিত কন্ঠে জবাব দিলাম তা সময় হলেই জানতে পারবে।

ঘরের ভিতর প্রবেশ করে না খেয়ে বাতি নিভিয়ে দিলাম। তারপর নিজের বি*ধ্বস্ত দেহমন বিছানার উপরে কোনরকমে ছেড়ে দিলাম। আমার কাছে সবকিছুই আজ অর্থহীন হয়ে গেছে। বাঁচতে চাইছে না, আমার এই অস্থির যন্ত্রণা কাতর হৃদয়।

মারুফ যেভাবেই হোক কেঁচি গেইট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করে দরজায় টোকা দিতে লাগলো। ওর আত্মসম্মান বোধ অনেক বেশি তাই দরজাটা জোরে ধাক্কা দিচ্ছে না। যদি পাশের ফ্ল্যােটের কেউ ব্যাপারটা বোঝে যায়। দরজা খুলে দেবার জন্য আমাকে অনেক অনুরোধ করলো। কিন্তু আমি বিছানার উপরে স্থবির হয়ে পড়ে রইলাম।

অনেকক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম, সে চলে গেছে! মনের কাছে জিজ্ঞেস করে জবাব পেলাম। বোধহয় সেখানেই হয়তো ফিরে গেছে সে? চোখের জলে সারারাত বালিশ ভিজে গেল। এতোকিছুর পরেও একটু চোখ লেগে এসেছিলো আমার। হঠাৎ চোখ মেলে দেখলাম ভোর হয়ে গেছে। হতাশাগ্রস্ত মনে দূর্বল শরীরটাকে কোনরকমে টেনে তুললাম বিছানা থেকে। তারপর একে একে আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ব্যাগের মধ্যে ভরে নিয়ে ওটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর ঘরের চারপাশে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলাম একবার।

হঠাৎ মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন খোঁচা দিয়ে উঠে, নিজের অজান্তেই কোন ভুল করছি না তো আমি? যা করছি সেটাই কি একমাত্র সমাধানের রাস্তা? সবকিছু জোর করে মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ভাবলাম চোখের দেখা কি মিথ্যা? তা কখনো হতে পারে না! আমি সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। আর যাইহোক এমন মানুষের সাথে আমি অন্তত এক ছাদের নিচে থাকতে পারবো না!

চাবিটা পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর কাছে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের কাল রাতে কি হয়েছিল? ভাই কে দেখলাম অনেক ডাকাডাকি করে নিরাশ হয়ে কাজের ছেলের সাথে সিঁড়ি ঘরে শুতে গেল?

আমি একটুখানি হেসে জবাব দিলাম, ঐ হাল্কা একটু মনোমালিন্য! এছাড়া আর কিছু নয়। ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কিন্তু আপনার ভাবসাব দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক কিছু!

বললাম চাবিটা ওকে দিয়ে দিবেন। ভাবী পিছনে ডেকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু আপনার না গেলেই কি নয়? আমি উনার দিকে একটুখানি ফিরে তাকিয়ে নিচে নেমে এলাম।

সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে দেখলাম। সিঁড়ি ঘরের দুয়ারে মারুফের একটা জুতো পড়ে আছে। সেটা দেওয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে গেইট খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

পাশের বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় মনে হলো আরও কয়েকটি কথা ঐ মহিলাকে শুনানো উচিৎ। তাই তাঁর ঘরের সামনে এসে হাজির হলাম। দরজায় টোকা দিলাম। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম দরজায় তালা ঝুলছে!

অপর একজন মহিলা আমাকে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো, এই মহিলা কাল গভীর রাতে তাঁর কিছু জিনিস পত্র নিয়া পলাইয়া গেছে! আমি সকালে উঠে তারে দেখতে পাই নাই।

দরজার ফুটো দিয়া ঘরের ভিতর চাইয়া দেহি ঘরের ভিতর কোন মানুষ নাই! সব জিনিস পত্র নিয়া উধাও! অবশ্যি তাঁর জিনিস পত্রও তেমুন কিছুই আছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেছে বলতে পারবেন? মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কেমনে কমু কন! আমি বুঝতে পারলাম না। এখন আমি কি করবো?

চলবে,,,
লেখক মোঃ কামরুল হাসান