ছদ্মবেশ পর্ব-১৯+২০+২১

0
309

#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– এই দুশ্চরিত্রা মেয়েকে কখনোই ঘরের বো বানানো যাবে না। এই জন্যই বলেছিলাম বিয়ের আগে ভালো করে খোজ খবর নিতে।

খুব কড়া গলায় কথা গুলো বললো মিতালির হবু স্বামী। উপস্থিত সবার দৃষ্টি সব দিক সরে এবার বরের দিকে নিক্ষেপ করলো। অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে সবাই।
বরের বাবা এগিয়ে এসে আস্তে করে বলে,
– এসব কি বলছিস? দুশ্চরিত্রা, বৌ বানানো যাবে না এসব কি?
বর আবারও বলে,
– যা শুনেছো তাই বলেছি আমি। এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে কখনোই আমি বিয়ে করবো না। যে একটা না দুইটা না একাধিক ছেলের সাথে প্রেমলিলায় মগ্ন ছিলো।
বরের বাবা এবার চার দিকে তাকিয়ে লজ্জা ভঙ্গিতে বলে,
– কি করছিস এসব? চারপাশে লোকজন তাকিয়ে আছে। মান সম্মানের একটা প্রশ্ন আছে।
কিন্তু বর তার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়বে না। ডিরেক্টলি বললো,
– সব কিছু এখানেই স্থগিত করুন। এই বিয়ে কিছুতেই হবে না।

পাশ থেকে মিতালির ভাই উচু গলায় বলে,
– বিয়ে না হলে না হবে। তবে আমার বোনের নামে এসব বলার সাহস কি করে হয় আপনার?
– সত্য কথা বলতে কোনো ভয় নেই। এমন একটা দুশ্চরিত্রা মেয়েকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, এখন আবার বড় বড় কথা?

মিতালির ভাই এগিয়ে এসে বলে,
– এসব কে বলেছে আপনাকে?
বর এবার পাশে তাকিয়ে নিলয়ের কথা বলবে কিন্তু পাশে নিলয়ের ছায়াও খুজে পেলো না সে। ভেজাল লাগিয়েই হাওয়া হয়ে গেছে নিলয়।
এতোক্ষন কথাবার্তার মাঝে নিলয়ের নাম টা জিজ্ঞেস করতেই মনে ছিলো না তার। তাই নাম না যেনে চার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলয়কে খুজতে শুরু করলো সে।
কিছুক্ষন পর বিরক্ত হয়ে বলে,
– একটা ছেলে বলেছিলো, তাকে তো খুজেই পাচ্ছি না। আর যেই বলুক, ওটা খোজার দরকার নেই। সে তো সত্য কথাটাই বলেছে। আপনাদের প্রত্যেকের নামে প্রতারণার মা’মলা করা উচিৎ।
কিছুক্ষনের মাঝেই যেনো পুরো বিয়ে বাড়িটা একটা ঝগড়া বাড়িতে পরিনত হয়ে গেলো।
আর ঐ দিকে ঝামেলা শুরু হচ্ছে তা দেখে নিলয় আগেই দৌড় দিয়েছে। এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে তা হয়তো কল্পনাও করেনি সে। কিন্তু দোষ যেহেতু করেই ফেলেছে এখন নিজের জীবন বাচানো ফরজ।

দৌড়ে রাস্তায় এসে হাপাতে লাগলো নিলয়। আর ওদিকে রাজ, নিবিড়, তুষার এদের বুঝতে বাকি নেই যে বরের কানে এসব কে পৌঁছে দিয়েছে?
তাই তারা ব্যস্ত হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে নিলয়কে। কিন্তু পুরো বিয়ে বাড়িতে নিলয়ের কোনো অস্তিত্বও নেই। আবার রুশানকেও খুজে পাচ্ছে না তারা। কোথায় গেলো দুজন?
একটু পর নিলয় ফোন দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলে,
– ভাই তোরা এখনো দাড়িয়ে আছিস? পিঠের উপর মার পরার আগেই বেড়িয়ে আয় সবাই।

আর এদিকে মেইন রোডে অনেক স্প্রিডে গাড়ি ছুটে চলছে। আর লোক টা বার বার লুকিং গ্লাসে পেছনে ছুটে চলা বাইটাকে দেখছে।
গাড়ির সাথে তাল মিলিয়ে পেছন পেছন ছুটছে বাইকও।
গাড়ির মাঝে এসি থাকা স্বত্তেও ঘামে শরির ভিজে গেলো লোকটার। গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বের করে পেছনে বাইক নিয়ে ছুটে চলা রুশানের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি চালালো সে। তবে উত্তেজনা বসত গুলি কোথায় গিয়ে পরছে তার কোনো হুস নেই।

কিছুক্ষন পর লক্ষ করে বাইক টা আর পেছনে ফলো করছে না। লোকটার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো। ভেবেছে হয়তো এতোক্ষনে লাশ হয়ে রাস্তার এক পাশে পরে আছে রুশান।
কিন্তু তার ধারণা টা মিথ্যা প্রমান করে হুট করে গাড়ির সামনে এসে দাড়ায় বাইক। গাড়ির এক চাকায় গুলি করতেই গাড়ি গিয়ে রাস্তার পাশে একটা গাছের সাথে জোড়ে আঘাত করে। এরপর আর কিছু মনে নেই তার।

রুশান নেমে দেখে লোকটার নিশ্বাস এখনো চলছে আর তার পাশে থাকা অন্য লোকটা জায়গায়ই মা’রা গেছে।
লোকটাকে গাড়ি থেকে বের করে রুশান। হসপিটাল কাছে থাকায় হসপিটালে নিয়ে চলে গেলো লোকটাকে। অন্যজন এখনো গাড়িতে পরে আছে। কালকে সকালে সবাই ভাববে সেই হয়তো গাড়ি সহ এক্সিডেন্ট করেছে।

রুশান হয়তো ভেবেছিলো লোক এটাও মা’রা যাবে। কিন্তু ভাবনা মিথ্যা হলো তার। তবুও এটা তার জন্য গুড নিউজ।

বাবার সামনে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে রুশান। লোকটাকে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে নার্সকে ডেকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলো রিদ।
রুশান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
– ও বেচে থাকা টা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট। মোটামুটি সেরে উঠতে কয়দিন লাগবে বাবা?
রিদ ছেলের কাধে এক হাত রেখে হেটে কিছুটা দুড়ে নিয়ে গেলো তাকে। তারপর থেমে বলে,
– একজন ডাক্তারকে বলে দিয়েছি যেন অল টাইম ওর সাথে থাকে। সাথে দুজন নার্সও। যত্নের ত্রুটি রাখবে না। আশা করি তারাতারিই ভালোর দিকে যাবে। তবে আমার মনে হয় ওকে এতোদিন এখানে রাখা ঠিক হবে।
রুশান বাবার দিকে চেয়ে বলে,
– চিন্তার কারণ নেই বাবা। হসপিটালের বাইরে বেশ কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড রেখে যাচ্ছি আমি। কেবিনের বাইরেও থাকবে। আর কালকে একটু ভালোর দিকে আসলেই নিয়ে যাবো তাকে।

রিদ আর কিছু না বলে ছেলের কাধে শক্ত করে হাত রেখে একটু হাসলো। ছেলের প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাস আছে তার।
,
,
পর দিন সকালে বাসায় ফিরে রুশান। এসেই দেখে সবাই সবার মতো আছে আর নিলয় এক পাশে চুপচাপ বসে আছে। আর নিবিড় বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ভাই মাপ চাই আর দরকার নেই আমাদের সাথে থাকার। নিজের রাস্তা নিজে মাপো দয়া করে।
রুশান এগিয়ে গিয়ে বলে,
– কি হয়েছে? সবাই এভাবে বকাবকি করছিস কেন ওর সাথে? আর কালকে বিয়ে খেয়ে কখন আসলি সবাই?
নিলয় পাশে হেলান দিয়ে বলে,
– আর বিয়ে,, সব রনক্ষেত্র বানিয়ে দিয়েছে আমাদের এই সত্যবাদি গুনধর বন্ধু।
রুশান একটু ভ্রু কুচকে বলে,
– কেন কি হয়েছে? বিয়ে আর রনক্ষেত্র মানে?
নিবিড় বিরক্ত নিয়ে বলে,
– কি হয়েছে বুঝতেছিস না? মিতালির জামাইকে গিয়ে সব বলে দিছে। আর সে এসব শুনে বিয়েটাই লন্ড ভন্ড করে চলে গেছে। সব এরেন্জ করা হয়ে গিয়েছিলো দেখতেই পেয়েছিস। বিয়ের সব কিছুই আয়োজন করা হয়ে গিয়েছিলো। আর ঠিক বিয়ে হওয়ার আগ মুহুর্তেই বিয়েটা ভেঙে দিলো এই হারামজাদা। কোনো ধারণা আছে একটা বিয়ের আয়োজন করতে কি পরিমান খরচাপাতি হয়? আর খরচার কথা না হয় বাদই দিলাম। ওদের মান সম্মান বলেও তো একটা কথা আছে নাকি? এখন মিতালির বাবা-মা বাসায় বসে বসে কাঁদছে।

রুশান এবার হতাশ হয়ে তাকালো নিলয়ের দিকে। নিবিড় আবারও বলে,
– আজ কোনো ইমোশনাল ড্রামা চলবে না এখানে। আজকের মাঝেই নিলয় এই বাসা ছারবে। কোথায় যাবে তা দেখার বিষয় না। হারামজাদা ঐ দিনও আমার গার্লফ্রেন্ডকে সব বলে দিয়ে ঝামেলা বাধাচ্ছিলো। এমন ফ্রেন্ড থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো।
তুষার এসব দেখে বলে,
– তোরা জানিস ও কেমন। তাও ওর সামনে এসব বলতে যাস কেন? এখন তো যাও হওয়ার হয়ে গেছে। এসব বাদ দে না।
নিবিড় তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি তো মুখে বলছি। আর তুই যদি শুনিস যে ও তোর সাথে কি করছে তাকে লা’থি দিয়ে বের করবি বাসা থেকে।
তুষার এবার দাড়িয়ে কি করেছে তা জানতে চাইলে নিবিড় চুপ হয়ে যায়। তারপর চুপচাপ চলে যায় সেখান থেকে।
,
,
পরিবেশ আজ খুব অশান্ত। সারা দিন খুব বাজে ভাবে কেটেছে আজ। সন্ধার পর রাজ আরোহিকে পড়াতে গেলে ওখানে পরে আরেক ঝামেলায়।
আসার পর থেকেই কোনো কথা বলছে না আরোহি। মানে তার হাব ভাব এমন যে, বয়ফ্রেন্ডের উপর অভিমান করেছে গার্লফ্রেন্ড। এখন তার অভিমান ভাঙাতে হবে।
কিন্তু রাজ এবার একটা ঝাড়ি মারতেই চমকে উঠে আরোহি। রাজ করা গলায় বলে,
– আমি কি তোমার ফ্রেন্ড হই নাকি অন্য কিছু? যে তুমি রাগ করে থাকবে আর আমি রাগ ভাঙাবো?
রাজের এক ধমকে আরোহি ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বলে,
– আপনি কালকে আসেন নি কেন? কালকে আমায় বাইরে নিয়ে যাওয়াত কথা ছিলো না?
রাজ বিরক্ত হয়ে বললো,
– আমি কি তোমার টিচার, নাকি পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট?
আরোহি মাথা নিচু করে বলে,
– আচ্ছা আর কোনো দিন বলবো না, স্যার।
,
,
এদিকে সন্ধায় বাধলো আরেক গন্ডগোল। তুষারের একটু সন্দেহ হলে নিলয়ের ফোন চেক করে সে। ফেসবুকে ঢুকে লগআউটে তার প্রান প্রিয় সুমাইয়া ইসলামের আইডি টা দেখে এক মুহুর্তের জন্য যেন পৃথিবী থমকে গেলো তার। তার প্রেয়শি যে নিলয়ের ফেসবুকের লগআউটে লুকিয়ে আছে তা কল্পনাও করতে পারেনি সে।
রাগে মাথায় র’ক্ত চড়ে বসে তুষারের।

এর পর চুপচাপ বসে থেকে নিবিড়কে ডাক দেয় সে। নিবিড় আসলে তাকে দেখায় বিষয় টা। নিবিড় যদিও আগেই জানতো যে এটা নিলয়ের ফেইক আইডি ছিলো তবুও তুষারকে কখনো কিছু বলেনি। আজ নিলয়ের উপর এমনিতেই অনেক রাগ। তাই রাগি গলায় বলে,
– এখনো এই হালার প্রতি দরদ দেখাবি?
তুষার রেগে বলে,
– আজকে এই হালার এক দিন কি আর আমার যা কয়দিন লাগে।

নিলয় রুমে আসা মাত্রই তুষার কোনো কথা ছারা উদম কেলানি শুরু করে। এরপর নিলয়ের কাপর চোপর ব্যাগ সব নিয়ে সাথে নিলয়কে নিয়ে বেড়িয়ে আসে সে।
গেটের বাইরে নিলয়ের দিকে সব ছুড়ে মেরে বলে,
– নিবিড় ঠিকই বলেছে। তোর মতো বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আর কখনো ফিরবি না এখানে।
নিলয় খুব অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,
– আমাদের এতো দিনের বন্ধুত্বটা এভাবে শেষ করে দিবি তোরা? এতো দিন তোদের নিয়ে একসাথে থেকেছি। এখন আমি তো পারবো না তোদের ছারা থাকতে।
নিবিড় বলে,
– তুমি এখানে থাকবে আর আমাদের একটা একটা আছোলা বাশ দিবে, না? আগেই বলেছি কোনো ইমোশনাল ড্রামা আজ এলাও না। এবার নিজের রাস্তা মাপো।

আজ সারা দিন সকলের মুখে নানান কথা শুনে অপমান হয়ে আর এখন এভাবে বাসা থেকে বের করে দেওয়া বিষয়টা খুব গায়ে লাগলো নিলয়ের। তার একটা বদ অভ্যাসের কারণে তার কাছের বন্ধুরা আজ তার সাথে এমন আচরণ করেছে। ভাবতেই দু’চোখ ভিজে উঠে তার।
ব্যাগ নিয়ে রাস্তার এক পাশে বসে নিশ্চুপ হয়ে চোখের জল ফেলছে নিলয়। বন্ধুদের ছারা কিভাবে থাকবে সে? কষ্ট হবে খুব কষ্ট হবে।

বাসায় প্রবেশ করেই অনুসূচনা জেগে উঠলো তুষারের। নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– নিলয়কে এভাবে তাড়িয়ে দিয়ে কি ঠিক করেছি? কোথায় বা থাকবে সে?
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– তাড়িয়ে দিলাম কই? যাই করুক, আমাদের বন্ধু তো। এখন এই সিচুয়েশন থেকে একটা শিক্ষা গ্রহন করা দরকার তার। তাই এমনটা করেছি। সময় হলে আমি নিজেই আবার নিয়ে আসবো তাকে।

To be continue…..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ মুখে হাত দিয়ে চিন্তা ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রইলো। ছেলের প্রতি তার বিশ্বাস থাকলেও একটু দুশ্চিন্তা হবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?

মাঝে মাঝে ছেলের দিকে অবাক ভঙ্গিতে তাকায় রিদ। রুশান কিভাবে কি করে, তা যেন মাথায়ই ধরেনা তার। মাঝে মাঝে ভাবতে থাকে এই তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন ছেলেটা কি তার?
ভাবতেই ভেতরটায় কেমন গর্ববোধ জেগে উঠে।

লোকটাকে গাড়িতে বসিয়ে বাবার থেকে বিদায় নিলো রুশান। রাতের আধারে লোকটাকে নিয়ে এক দিকে ছুটলো রুশান। আর গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রিদ।

রুশান লোকটার দিকে একবার চেয়ে বাইরের দিকে তাকালো। লোকটার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে ছিলো। হয়তো এই লোকটার কাছ থেকে কিছু সিক্রেট বের হতে পারে।

তার সহকারি আজিম ড্রাইবিং করতে করতে বলে,
– স্যার আপনার কি মনে হয়, সে কোনো তথ্য দিবে আমাদের? আগের সব গুলোও জীবন দিলো তবুও মুখ খুললো না।
বিনিময়ে রুশান একটু রহস্য জনক হাসি দিলো। আর খুব শান্ত ভাবে বলে,
– শত মানুষের মাঝে সব গুলো এক লাইনের হয় না। দুই একটা বাকা লাইনের থাকেই।
,
,
ওদিকে রাত হয়ে গেলো, তবুও নিলয়ের কোনো বন্ধু তাকে ঘরে নিয়ে গেলো না। ফোন দিলেও ফোন ধরছে না কেও। নিরুপায় হয়ে ব্যাগ কোলে নিয়ে ফুটপাতে বসে আছে সে। আজ সারা রাত কি এভাবেই রাস্তায় কাটাতে হবে তার? তার একটা ভুলের কারণে তার বন্ধুরা এভাবেই বাসা থেকে বের করে দিলো তাকে?

এবার উঠে দাড়ালো সে। ওখানে আর বসে না থেকে ফুটপাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করলো।
বার বার একটা কথাই কানে বাজছে, এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
এতো অপমান আর সহ্য হলো না তার। আত্মসম্মানে লাগছে খুব। যেখানে কেউই তাকে পছন্দ করে না, সেখানে থেকেই বা কি করবে সে? সবাই তাকে ছারা ভালো থাকলে থাকুক তারা তাদের মতো। আজ থেকে না হয় ওদের থেকে দুরেই চলে যাবে সে।
,
,
পর দিন সকাল হতেই নিলয়কে খুজতে বের হলো নিবিড় ও তুষার। নিবিড় যা ভেবেছিলো ঠিক তার উল্টো টা হয়েছে।

ভেবেছিলো নিলয় বাড়ির সামনে এসে বসে থাকবে আর বার বার অনুরুধ করতে থাকবে। আর সকাল হলে নিলয়কে কড়া ভাবে বুঝিয়ে আবার ঘরে নিয়ে যাবে।
কারণ, নিলয়ের মতো সরল একটা ছেলে একা একা কিছুই ম্যানেজ করতে পারবে না।
সে প্রথমে এই বাসায় উঠার আগে যখন রাস্তায় রাস্তায় হাটছিলো তখন নিবিড় ফরিদা আন্টির বাসায় থাকতো। তাই তার সরলতা দেখে তাকে নিয়ে এসেছিলো এই বাড়িতে। এর পর রুশান উঠলো। তারপর রুশান নিজেই তুষার ও রাজকে নিয়ে এলো। ফ্রেন্ড লিষ্ট টা তৈরি হয়েছিলো এভাবে।

কিন্তু নিবিড় সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিলে একটা মেসেজ দেখতে পায়। নিলয়ই দিয়েছিলো মেসেজ টা। যেখানে লেখা ছিলো,
– আর প্যারা নিতে হবে না তোদের। আমি চলে যাচ্ছি অন্য কোথাও। তোদেরকে কেও জ্বালাবে না আর। ভালো থাকিস সবাই।

সেই সকাল থেকে নিবিড় ও তুষার মিলে খুজে বেড়াচ্ছে নিলয়কে। কিন্তু কোথাও খুজে পেলো না। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। ভার্সিটির অন্যান্য ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেস করলেও তারা বলে নিলয় তাদের কাছে যায় নি।
তাহলে কোথায় গেলো ছেলেটা? রাতেই বা কোথায় ছিলো? টেনশনে দিশে হারা নিবিড়।
নিলয় যে বোকা-সোকা ছেলে, এ শহরে যে কেও চাইলেই তার ক্ষতি করতে পারবে। ওর যদি কোনো বিপদ হয়ে যায়?

নিবিড় ও তুষার খুজতে খুজতে একে অপরকে বকতে থাকলো। তুষার বলে, কেন নিলয়কে বের করতে গেলি?
নিবিড় বলে, শেষে তো তুই বের করলি নিলয়কে।
তুষার রাগ ঝেড়ে বলে, তো আমাকে আটকাস নি কেন তুই?
একে অপরকে বকতে বকতে খুজে বেড়াচ্ছে চার দিকে।
,
,
ওদিকে রাজ চলে গেলো ভার্সিটিতে। ভার্সিটির ক্লাস শেষে অরিন রাজকে নিয়ে চলে গেলো তাদের বাড়ি। রাজ প্রথমে জানতো না কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু অরিন গাড়ি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে রাজ বুঝতে পারে যে, অরিন তাকে তাদের বাসায় নিয়ে এসেছে।

রাজ গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটার দিকে একবার তাকালো। অরিন রাজের দিকে চেয়ে ডাক দেয়,
– ভেতরে আসো, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
রাজ আরো কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে এবার অরিনের পেছন পেছন ভেতরে গেলো।

সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই অরিন গলা ছেরে তার মা কে ডাকতে থাকে। অরিনের মা বেরিয়ে এলে অরিণ হাসি মুখে বলে,
– মা দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?
অরিনের মা একটু অবাক ভঙ্গিতে তাকালে অরিণ বলে,
– আরে ঐ যে তোমাকে বলেছিলাম না, আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আমাকে পড়ালেখায় যে হেল্প করে, রাজ।

অরিনের মা এবার মুখটা O ভঙ্গি করে বলে,
– ও আচ্ছা আচ্ছা, তো কেমন আছো বাবা?(রাজের দিকে তাকিয়ে)
রাজ মুখে হাসি রেখে বলে,
– জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– হ্যা বাবা ভালো। বসো বসো।(সোফার দিকে ইশারা করে)

পাশ থেকে অরিণ বলে,
– না আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেন্জ করে আসি। তুমি রাজের সাথে কথা বলো।
বলেই রুমের দিকে চলে গেলো অরিণ। রাজ সোফায় বসলো। সে এখনো বুঝতে পারছে না অরিণ তাকে এভাবে না বলে বাসায় কেন নিয়ে এসেছে?
অরিনের মায়ের কথায় ভাবনা ভাঙে তার। এর পর ব্যাস্ত হয়ে পরে অরিনের মায়ের সাথে কথা বলায়।

কিছুক্ষণ পর রাজের চোখ আটকে যায় অরিণের দিকে। ভেজা চুলের সাথে কালো রং এর জামায় আজ প্রথম অরিণের সৌন্দর্য টা লক্ষ করেছে রাজ। ব্লাক বরাবরই তার প্রিয় রং। আর তা অরিণকে এভাবে ম্যাচিং করেছে যে চোখ ফেরানো দ্বায় হয়ে দাড়িয়েছে আজ।
রাজের দৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্য আটকে গেলেও কেও বুঝে উঠার আগেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে।

অরিণের মা আজ খাওয়া ছারা আসতেই দিবে না। তাই ওদের সাথেই খেতে বসলো আজ।
অরিণদের বাড়িতে একটা মেয়ে কাজ করে বয়সে অরিণের চেয়ে একটু বড় হবে।
সে খাবার দিতে দিতে বলে,
– আমাদের বাড়ির পাশে একদিন একটা মাইয়া তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কোথায় যানি বসে বাদাম খাচ্ছিলো। আর ওটা তার বাপে দেখে ফেলেছিলো। এর পর বাসায় এনে মাইয়া টারে যেই মা’ইর লাগাইলো, মা গো মা, এখন আপনারে দেইখা ঘটনাটার কথা মনে পরলো। সেই মাইয়া যদি এভাবে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় যাইতো। তাহলে আল্লায় জানে ওর বাপে ওরে কি অবস্থা করতো।

মেয়েটার কথায় অবাক হয় রাজ ও অরিণ দুজনই। অরিণের মা খাবার সামনে রেখে বলে,
– তো এখানে ওই ঘটনা মনে পরলো কিভাবে?
মেয়েটা আবার বলে,
– এই যে অরিণ আফা তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাসায় আসছে, আর আপনি কিছু না বলে মেনে নিয়েছেন সব।

কথাটা শুনতেই খাওয়ার মাঝে বিষম উঠে গেলো রাজের। আরোহি দ্রুত এক গ্লাস পানি তার দিকে এগিয়ে দিলে রাজ তা পান করে কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
অরিণের মা ওই মেয়েটাকে ঝাড়ি মে’রে বলে,
– কি সব বাজে বকছিস? ওরা যাস্ট ফ্রেন্ড।
মেয়েটা ঝাড়ি খেয়েও মুখ টিপে হাসছে।

যাওয়ার আগে রাজ অরিনকে কারণ জিজ্ঞেস করলে অরিণ বলে,
– এমনি নিয়ে এসেছি, আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। আর মা ও তোমাকে দেখতে চেয়েছিলো। কেন তুমি কি রাগ করেছো?
রাজ কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে একটু মুচকি হেসে বলে,
– নাহ্,,,,

রাজ বিকেলে রাজ বাসায় এলে শুনতে পায় নিবিড় আর তুষার সব জায়গায় খুজেও নিলয়ের কোনো সন্ধান পায় নি। কোথায় চলে গেছে কে জানে? ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে আজ সারা দিন। ছেলেটার মাঝে এতো রাগও অভিমান কোথায় থেকে জন্ম হলো কে জানে?
,
,
আরো একদিন পার হয়ে গেলো। রুশান হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়া লোকটাকে একটা চেয়ারে এনে বসালো। জ্ঞান ফিরার পর দুই দিন রেস্টে থাকতে দিয়েছিলো লোকটাকে। আজ মোটামুটি ভালোর দিকে।

রুশান সামনে বসে বলে,
– আমার হাতে যেহেতু পরেই গেলি তাহলে বুঝতেই পারছিস যে মুক্তির কোনো রাস্তা নেই যদি আমি না চাই।
লোকটা কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়ালো।
রুশান চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– কার আন্ডারে কাজ করেন?
লোকটা কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে,
– এটা কোনো ছোট খাটো টিম না যে একজনের আন্ডারে আমরা কাজ করবো। এটা একটা গ্রুপের মতো। যেখানে এডমিন একজন হলেও মডারেটর লিমিটের বাইরে। কুল কিনারা খুজে পাবি না তুই। আর ওদের আন্ডারেই কাজ করে সব ছেলে-পেলে।

লোকটার কথার মাঝে বিরক্তির সাথে রাগও হলো রুশানের। সব কিছু আস্তে আস্তে বের করবে। আপাতত ওদের কাজটা কিভাবে পরিচালনা করে সেটা জানা জরুরি।
রুশান লোকটার মুখোমুখি এসে বলে,
– কোনো চালাকে করবি তো এখানেই পু’তে রেখে দিবো। যা বলবো তার সরাসরি উত্তর দিবি।
লোকটা একটু মাথা নাড়ালো। রুশান আবার বলতে শুরু করলো,
– শহরের বড় বড় বিজনেস গুলো সব তোদের দখলে চলে যায়। তোদের বিজনেস এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।
রুশান কথা শেষ করার আগেই লোকটা হাসতে হাসতে বলে,
– ওগুলো আমাদের দখলে হলেও, মালিক হয় অন্য কেও। আমরা শুধুই পরিচালনা করি এসব।
রুশান লোকটার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে,
– অন্য বিজনেস টা কিভাবে পরিচালনা করিস?
লোকটা অস্বিকার করতে চেয়ে বলে,
– কোন বিজনেস? অন্য কোনো বিজনেস নেই।
রুশার রক্তিম চক্ষু নিক্ষেপ করে বলে,
– বুঝতে পারছিস না? আগেই বলেছি আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করলে এখানেই পু’তে রেখে দিবো।
লোকটা কিছুটা ভয় পেয়ে বলে,
– পার্স সাব্লাই।
রুশান রাগি দৃষ্টিতে বলে,
– ডিটেইল্স জানতে চেয়েছি আমি।
লোকটার এবার বলতে শুরু করলো,
– মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এই বিজনেস টা। হার্ট, চোখ, কিডনি সহ শরিরের মুল্যবান জিনিস গুলো নিয়ে সেগুলো অন্য জায়গায় সাব্লাই দেওয়াটা আমাদের কাজ। আর অন্যান্য দেশে পাঠানোর কাজ টা আমাদের উচু লেভেলের লোক রা করে। আর লা’শের ভেতর করে স্মাগলিং করাটা অন্য বিজনেস। ওটাও পরিচালনার জন্য আলাদা গ্রুপ আছে। মানুষের ভেতরের মুল্যবান জিনিস গুলো নেওয়ার পর বুকের আর পেটের অংশে মুল্যবান বিভিন্ন স্মাগলিং এর অবৈধ জিনিস ঢুকিয়ে সেলাই করে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় লা’শ বলে।

To be continue………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ২১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এই বিজনেস টা। হার্ট, চোখ, কিডনি সহ শরিরের মুল্যবান জিনিস গুলো নিয়ে সেগুলো অন্য জায়গায় সাব্লাই দেওয়াটা আমাদের কাজ। আর অন্যান্য দেশে পাঠানোর কাজ টা আমাদের উচু লেভেলের লোক রা করে। আর লা’শের ভেতর করে স্মাগলিং করাটা অন্য বিজনেস। ওটাও পরিচালনার জন্য আলাদা গ্রুপ আছে। মানুষের ভেতরের মুল্যবান জিনিস গুলো নেওয়ার পর বুকের আর পেটের অংশে মুল্যবান বিভিন্ন স্মাগলিং এর অবৈধ জিনিস ঢুকিয়ে সেলাই করে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় লা’শ বলে।

এতটুকু বলেই একটা নিশ্বাস নিলো লোকটা। লোকটার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ ভেষে আছে। সেই সাথে চাপা ভয়ও। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি লোকটা। এমন অবস্থায় তার উপর মানসিক অত্যচার টা করা ঠিক মনে করছে না রুশান।
তাই চেয়ার ছেরে উঠে দাড়িয়ে তার সহকারি আজিমকে বলে, লোকটাকে খাইয়ে বিশ্রামের জন্য রুমে নিয়ে যেতে। কারণ এমন অবস্থায় লোকটা সুস্থ না হয়ে যদি উল্টো মা’রা যায় তাহলে সকল প্লেনই ভেস্তে যাবে।
,
,
সকালে ব্রাশ করে করতে ছাদে হাটছে নিবিড়। হাতে একটা পানির মগ। ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে পানির লাইনে সমস্যা হয়েছে নাকি টাংকি তে পানি নেই তা বুঝে উঠতে পারছে না সে। তাই পানি নিয়ে ব্রাশ করতে করতে ছাদে এসে উঠেছে।

হাটতে হাটতে হটাৎ চোখ পরে পাশের বাসার ছাদে। দেখে ছাদে নতুন একটা মেয়ে হাটাহাটি করছে। মেয়েটাকে আগে কখনো দেখেনি সে। হয়তো নতুন উঠেছে, নয়তো মেহমান। তবে মেয়েটা বেশ সুন্দরি আছে।

ছদের কিনারায় গিয়ে ফুল গাছ গুলোর সামনে দাড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো নিবিড়। যেন লাফ দিয়ে ওই ছাদে চলে যেতে চাইছে তার।
মেয়েটা কয়েকবার আড় চোখে তাকিয়ে নিবিড়কে লক্ষ করলো। যখন বুঝতে পারলো নিবিড় তার দিকেই তাকিয়ে আছে তখন সেও ছাদের কিনারায় গিয়ে দাড়ালো।। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে হাতে তুড়ি বাজালো মেয়েটা। যদিও নিবিড় শুনতে পেয়েছে কি না তার সন্দেহ আছে। তবুও তুড়ি বাজিয়ে বললো,
– এই যে মিস্টার, সমস্যা কি আপনার? অনেক্ষন ধরে দেখছি এদিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।
নিবিড় এবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
– চাঁদ দেখছিলাম।
মেয়েটা এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
– দিনে দুপুরে চাঁদ পেলেন কোথায়?
নিবিড় মুখে পানি নিয়ে কুলি করে তা নিচে ফেলে বলে,
– যদি বলি চাঁদ টা আপনি, তাহলে কি খুব বেশি মাইন্ড করবেন?
মেয়েটা এবার লজ্জা পেলো ক্ষনিকটা। প্রতি উত্তরে কিছু বললো না নিবিড়কে।

কিন্তু এদিকে নিবিড় জ্বিভে কামড় দিয়ে এক হাত মাথায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কারণ মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে তার মুখ থেকে ফেলা পানিটা সোজা গিয়ে পরলো তুষারের গায়ে।
বেচারা এই সাজ সকালে রেডি হয়ে কোথায় যেন বের হচ্ছিলো। দুই বাসার মাঝখানের রোড ধরে হাটতেই কিছু ফেনা যুক্ত পানি এসে আছড়ে পরে তার গায়ে। ততোক্ষনে নিবিড় জ্বিভ কামড়ে গৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। আর মেয়েটা এখনো ওভাবে দাড়িয়ে আছে।
তুষার মাথা তুলে উপরে তাকালে সেই মেয়েটাকে চোখে পরলো তার।

তুষার পুনরায় ঘরে ফিরে এসে দেখে নিবিড় বেডে বসে একটা বই খুলে সেই বইয়ের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন কিছুই জানে না সে। তুষার সামনে এসে দাড়ালে নিবিড় বলে,
– কিরে এই অবস্থা কি করে হলো তোর?
তুষার রাগি লুক নিয়ে বলে,
– দেখতে পাচ্ছিস না কি অবস্থা হলো? একটু আগে তোকেই ব্রাশ নিয়ে ছাদে যেতে দেখলাম আমি।
নিবিড় মুহুর্তেই কথা বানিয়ে বললো,
– আমি ছাদে গেলেই যে তোর উপর এসব ফেলবো বিষয়টা তো এমনও না।
তুষার রেগে বলে,
– তাহলে কে করেছে এসব।
নিবিড় বলে,
– বিপরিত ছাদের একটা মেয়ে।
নিবিড় মেয়ের কথা বললো কারণ, সে জানে যে মেয়ের কথা বললেই তুষারের রাগ সব পানি হয়ে যাবে।
ঠিক তাই হলো। তুষারের রাগি মুখ মুহুর্তেই স্বাভাবিক হয়ে এলো। আর শার্ট খুলতে খুলতে বলে,
– আচ্ছা বাদ দে ওসব। মেয়েটা হয়তো খেয়াল করেনি।
বিনিময়ে বইয়ের আড়ালে মুখ ঢেকে একটু মুচকি হাসে নিবিড়।
,
,
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে আছে রাজ, রুশান, নিবিড় আর তুষার। ফরিদা আন্টি নাস্তা বানিয়ে সবার সামনে এসে বসলো। জামার নাজেহাল অবস্থা হওয়ায় সকালে আর বের হতে পারেনি তুষার। মুড টাই নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে ফরিদা আন্টির মনটা আজ খুবই বিষণ্ন। তাদের ফ্রেন্ডস মহলের পাঁচ জনকেই যে নিজের ছেলের মতো খুব আপন করে নিয়েছে সে। তার মাঝে সবচেয়ে বোকা ছেলেটা নিলয়। আজ দুই দিন ধরে কোনো যোগাযোগ করছে না সে।
না জানি ছেলেটার কোনো বিপদ হয়েছে নাকি?

গত কাল নিবিড় ও তুষার সকাল থেকে দুপুর অব্দি খুজেছে। এর পর আবার বিকেল থেকে রাত অব্দি। কিন্তু কোনো খোজ পেলোনা তার।

তাদেরকে এমন বিষণ্ন দেখে রুশান খাওয়া ছেরে তাদের দিকে চেয়ে বলে,
– কি হলো সবাই বসে আছো কেন? আর আন্টি, আপনাকে এমন বিষণ্ন দেখাচ্ছে কেন?
(রুশান বাবার সাথে আর জবানবন্দি নেওয়া ওই লোকটার সাথে থাকার কারণে এসবে কিছুই জানে না সে)

ফরিদা আন্টি একটা নিশ্বাস ছেরে বলে,
– আমার খুব টেনশন হচ্ছে নিলয়ের জন্য। ছেলেটা একটু বোকা টাইপের যার কারণে ভুল করে বার বার। কিন্তু সবাই বকাবকি করায় হটাৎ আজ দুই দিন ধরে নিখোজ হয়ে আছে। না জানি কোনো বিপদ হয়েছে কি না?

রুশান এবার খাওয়া বন্ধ করে বলে,
– নিলয় নিখোজ মানে? কোথায় গেছে সে?
তুষার একটু ভয়ার্ত চেহারায় রুশানের দিকে তাকিয়ে সত্যটা বলে দেয়।
যা শুনে নিবিড় ও তুষারের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় সে।
তুষার আমতা আমতা করে বলে,
– ভাই আমি কিভাবে জানবো যে ও রাগ করে এভাবে হারিয়ে যাবে? আমরা ভেবেছিলাম, এবার একটা শিক্ষা পাবে আর নিজেকে শুধরে নিবে। আমি ভালোর জন্য কিছু করতে গেলেও উল্টো সেটা বিপদ হয়ে দাড়ায়।
ফরিদা আন্টি তুষারকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– এখন ওসব বলার সময় নয় তুষার। নিলয়কে খুজে বের করাটাই জরুরি এখন।

রুশান এবার শান্ত হয়ে বলে,
– আমাকে কেন জানানো হয় নি যে নিলয় আজ দুই দিন ধরে নিখোজ? রাজ তুমি কি জানতে বিষয়টা?
রাজ ও সম্মতি জানিয়ে বলে,
– হুম।
– তাহলে আমাকে বলোনি কেন?
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– ভেবেছিলাম হয়তো ওদের বন্ধুদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে ওরা আবার ঠিক করে বাসায় নিয়ে আসবে। কিন্তু এভাবে নিখোজ হয়ে যাবে সেটা ভাবিনি।

রুশান নিজের মাঝে একটু বিরক্তি প্রকাশ করলো। তার পর বলে,
– বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তোমাদের কি একটুও ধারনা নেই? টিভিতে নিউজ পেপারে দেখছো না যে হটাৎ হটাৎ কতো মানুষের নিখোজ হওয়ার ঘটনা ভেষে উঠে? আর এমন অবস্থায় নিলয়ের মতো একটা বোকা ছেলে এভাবে বাইরে থাকাটা কতোটা বিপজ্জনক।

রুশানের কথায় এবার মাথা তুলে তাকালো রাজ। মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে গেলো যে, নিলয়ও ওসব লোকদের পাল্লায় পরেনি তো?

ফরিদা আন্টি পরিস্থিতি শান্ত করে বলে,
– আমাদের অতি শিগ্রই পুলিশে খবর দিতে হবে।
রুশান হাত ধুতে ধুতে বলে,
– তার প্রয়োজন নেই। সবাই যেহেতু ব্যর্থ, সেহেতু আমিই খুজে বের করছি নিলয়কে।

বলেই উঠে চলে গেলো রুশান। তুষার ঠোট উল্টেয়ে রুশানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যার অর্থ, রুশানের হাব ভাব কিছুই বুঝতে পারেনি সে।

এর পর সারা দিন কেটে গেলো। রাতে বাসায় ফিরে এলো রুশান। সবাই উৎসাহ নিয়ে রুশানের দিকে তাকালো। কিন্তু তার হতাশার ভাবটাই দেখতে পেলো সবাই।
রুশান হতাশা ভঙ্গিতে বলে,
– সারা শহর খেজেও নিলয়কে পেলাম না। সকাল থেকে সন্ধা, সন্ধা থেকে এখন রাত। কোথাও তার কোনো খোজ পাওয়া গেলো না।

জামা টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো সে। তুষার অপরাধী চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার একটাই ভাবনা, নিলয়ের কিছু হয়ে গেলে তার জন্য শুধু সে নিজেই দায়ি।
,
,
কেটে গেলো আরো একদিন। দুপুরের খাবার শেষে বিকেলে একটু শুয়ে ছিলো নিবিড়। তখনই ফোন বেজে উঠে তার। (বাবু ৩) ফোন দিয়েছে।
ফোন রিসিভ করলে ওপাশ থেকে নিরা বলে,
– আজ সন্ধায় দেখা করবে? তোমার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।
নিবিড় শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,
– কিসের সারপ্রাইজ বাবু?
– বলে দিলে কি সেটা সারপ্রাইজ হয়?
নিবিড় হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– কখন আসতে হবে?
নিরা সোজাসুজি ভাবেই বললো,
– ৭ টার দিকে।

রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম মেরে চলে গেলো নিবিড়। আজ কি সারপ্রাইজ দিবে তা দেখার জন্য যেন আর তর সইছে না তার।
নিরার সাথে দেখা হওয়ার পর একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো দুজন।
নিরা মেনু কার্ড টা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– যা খাবে অর্ডার করো। আমার পক্ষ থেকে ট্রিট।
নিরার অতি ভক্তি যেন আজ কেমন সন্দেহ জনক। তবুও এতো কিছু ভাবার সময় নেই তার। মেনু কার্ড হাতে নিয়ে একে একে অর্ডার করলো সে।

কিছুক্ষন পর খাওয়া দাওয়া শেষে কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে নিবিড়ের। সামনে নিরা বসে আছে আর পাশে তাকিয়ে দেখে তার ৪ নাম্বার বাবু ওয়েটারের ড্রেস পরে দাড়িয়ে আছে। আর তার পেছনে একে একে তার সব বাবু এসে দাড়ালো।
ওদের মাঝে একজন খুব নরম স্বরে বলে,
– খুব ঘুম পাচ্ছে বাবু? কাঁথা বালিশ এনে দিবো?

To be contiue…….