ঝরা স্রোতধারা পর্ব-০১

0
500

#ঝরা_স্রোতধারা
#সূচনা_পর্ব
Tahrim Muntahana

১.
শেষ বারের মতো নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা করতে এসেছে রিয়াব। হ্যাঁ শেষ বার! এরপর আর কখনো এই দুটো চোখ তার প্রেয়সীকে দেখতে পারবে না। সে চলে যাবে বহুদূর। যতদূর গেলে প্রেয়সী নামক ছায়াটা আকড়ে ধরার ইচ্ছে হলেও ধরতে পারবে না, মায়াবী মুখখানা হাজার চেষ্টা করলেও দেখতে পারবে না, একটু ছুঁয়ে দিতে পারবে না ততদূরে চলে যাবে। থাকবে না এই কুলষিত শহরে। যে শহরটা তাকে শুধু হারানোর ব্যাথায় জর্জরিত করেছে, বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে সে একা; সেই শহরে আর নয়। শহরটা ত্যাগ করে শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু আদও শান্তি কি মিলবে? তার জীবনে শান্তি বলে কিছু নেই তো। অশান্তির আঁধারে ডুবে থাকে তার জীবন। যতটুকু সুখ তার জীবনে ছিলো আজ সেও চলে যাচ্ছে। অন্যের ঘরে, অন্যের বউ হয়ে। এখন থেকে তার প্রেয়সী বাঁচবে অন্যের পরিচয়ে, অন্যের বাহুডরে।
ভাবতেই গড়গড়িয়ে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। এ ব্যাথা যে সহ্য করার নয়। আগ্নেয়গিরির উত্তাপে যেমন শরীর পুড়ে দগ্ধ হয় তেমনি হৃদয়টা জ্বলছে। নিজেকে কিছুটা সামলে সামনে তাকালো। লোকে লোকারণ্য, রঙিন সাজসজ্জায় ফুটে উঠেছে দুতালা বাড়িটি। গেটের উপরে নেইম প্লেটে জ্বলজ্বল করছে তার প্রেয়সীর নাম। সাথে আরেকটা নামও যোগ হয়েছে। তাহিব! যে নামটা তার প্রেয়সী থেকে তাকে আলাদা করেছে।

বড় গেইট টা পেরিয়ে রিয়াব ঢুকে পড়লো বিয়ে বাড়িতে। ঢুকতেই চোখে পড়লো তার ভালোবাসার মানুষ অনিন্দিতা কে। লাল বেনারসিতে কোনো অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না। নামের মতোই রূপ! একবার দেখলে একজন পুরুষ কে দ্বিতীয় বারের মতো চাইতে বাধ্য করবে। মায়াবী মুখটাই আজ হাসির রেষ মাত্র নেই। কালো মেঘে ঢেকে আছে মুখখানা। রিয়াবের বুকটা চিনচিন করে উঠলো। সে যদি চাইতো তার প্রেয়সী এখন তার কাছেই থাকতো। অনিন্দিনা সবাই কে লুকিয়ে তার কাছে গিয়েছিলো, সারাজীবনের জন্য। একসাথে ঘর বাঁধার কথাও বলেছিলো কিন্তু রিয়াব বুকে পাথর চেপে অনিন্দিতা কে ফিরিয়ে দিয়েছে। একরাশ আশা নিয়ে অনিন্দিতা গিয়েছিলো কিন্তু আবার তাকে একরাশ উৎকুন্ঠা নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তবুও অনিন্দিতার মনে রিয়াবের প্রতি ঘৃণা জন্মেনি। কারণ সে জানে রিয়াব তাকে কতটা ভালোবাসে। বারবার কারণ জানতে চেয়েছে। রিয়াব মুখ খুলেনি সবটা সময় নিচের দিকে চেয়ে ছিলো। হয়তো প্রেয়সীর চোখে চোখ রাখার সাহস হয়নি। নিজেকে দুর্বল করতে চায়নি।

অনিন্দিতার চাচাতো বোন ইশা তাদের সম্পর্কে সবটা জানতো। অনেকবার লুকিয়ে দেখা করতে সাহায্যও করেছে। ইশারও আজ মন খারাপ। সেও কারণ খোঁজেছে অনেক পায়নি। রিয়াব কে দেখে ইশা ছুটে গিয়ে অনিনিন্দার কানে কানে বলল। ফট করে সামনের দিকে তাকাতেই অনিন্দিতার চোখ পানিতে টলমল করে উঠলো। এই বুঝি গাল স্পর্শ করবে। অনিন্দিতার চোখ অনুসরন করে রিয়াব কে এখানে দেখে রেগে গেলো তাহিব। সে সবটাই জানে। তাই তো এত রাগ। আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো অনিন্দিতা। সামনে এগোবে তার আগেই খপ করে হাত ধরে ফেললো তাহিব। কোথাও যেতে দিবে না। কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে তাকালো অনিন্দিতা। ছেড়ে দিলো হাত। অনিন্দিতার রাগ সম্পর্কে তাহিব ভালো করেই জানে তাই আর কোনো রিস্ক নিতে চায়না। এলোমেলো পায়ে হেটে এসে রিয়াবের বরাবর দাড়ালো। দুইজনের চোখই বলে দিচ্ছে তাদের ভালোবাসা কিছু মানুষের নির্মমতায় ঢেকে গেছে। রিয়াবের মুখে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অনিন্দিতা হাত ধরে খাবারের সেন্টারের দিকে যেতে লাগলো। রিয়াব শুধু অনিন্দিতাকে দেখছে। আজ দেখেই যাবে। বিয়ে বাড়িতে ইতিমধ্যে কানাঘুসো শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ খারাপ মাইন্ডে রেখে আলোচনা করছে, কেউ কেউ ভাবছে বন্ধু বা ভাই। একেক জনের মনোভাব একেক রকম। অনিন্দিতার বাড়ির লোক একপ্রকার ক্ষোভ নিয়ে পেছন পেছন আসলো। এসেই তাদের চোখে পড়লো রিয়াবকে হাতে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে অনিন্দিতা। দুজনেরই চোখে পানি টলমল করছে হয়তো লোকলজ্জার ভয়ে গড়াতে দিচ্ছে না। খাওয়া শেষ হতেই অনিন্দিতা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

জানোতো রিয়াব পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পায় না। তোমার কাছে আমি যে শান্তি খোঁজে পাই, এখন বর্তমানে আমার বাবা-মার কাছেও পাইনা। কি ভেবেছিলে আমি জানবো না কিছু। এরা তোমাকে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে আমাকে তোমার জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো; আবার এরাই তোমার নামে আমার কানে খারাপ মন্তব্য ঢুকায়। সন্দেহ তো তখনই হয়েছিলো যখন আমার ভাই তোমাকে নিয়ে যেচে কথা বলতে আসে। তারপরেই সবটা ক্লিয়ার হলো। এরা তো জন্ম দিয়েছে; বাবা-মার ঋণ শোধ করা যায়না। এই প্রথম কোনো আবদার করলো যদিও তুমি আমাকে ফিরিয়ে না দিলে আবদার পূরণ হতো না। এরা আমাকে সুখী দেখতে চায়নি, ভালো জীবন দিতে চেয়েছিলো। হ্যাঁ এরপর পারবে দামি বাড়িতে, দামি খাটেতে ঘুমাবো, দামী গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াবো অথচ এত এত দামীর মাঝে আমার মনটাই তোমার কাছে পড়ে থাকবে। যারা তোমাকে সস্থা ভেবে এমন করলো সেই সস্তার কাছেই পড়ে থাকবে।

অনিন্দিতা থামলো। একপলক বাড়ির সবার দিকে তাকালো সবাই মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। রিয়াবের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে গালে হাত রেখে বলল,

আমি চাই আমার রিয়াব সবসময় ভালো থাকুক। এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাও রিয়াব। এসো না এই শহরে। এই শহরটা হারানোর যন্ত্রণা বারবার মনে করিয়ে দিবে। হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হবে। বারবার দগ্ধ করবে হৃদয়। বোনকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাও। আমার ছায়াও যেখানে পড়বে না। নতুন করে জীবন শুরু করো। আমি না বড্ড স্বার্থপর। তোমাকে অন্যের সাথে দেখতে পারবো না। কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়িও না রিয়াব। জড়ালেও এমন কাউকে জড়িও যে আমার মতো ছেড়ে যাবে না। চলে যাও! এসো না আর এই শহরে ! এই শহর, শহরের মানুষ বড্ড খারাপ! খুব খারাপ! কাছের মানুষগুলোর রূপ আরো খারাপ!

বলতে বলতেই স্ট্রেজের দিকে যেতে লাগলো অনিন্দিতা। রিয়াব ও উঠে দাড়ালো। তাকে দেখলে অনিন্দিতা আর নিজেকে সামলাতে পারবে না, আর নিজেও সে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। দৌড় ছুটলো রিয়াব। সবাই কে অবাক করে দিয়ে অনিন্দিতা হাসতে লাগলো। হাসিতে কোনো উচ্ছাস নেই। আছে হারানোর ব্যাথা। বাড়ির লোক পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজীকে নিয়ে গেলো স্ট্রেজে। অনিন্দিতাকে কবুল বলতে বললেই একপলক বাড়ির লোকদের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে কবুল বলে উঠলো। তাহিব চমকে উঠলো। সে জানতো কবুলে ভালোবাসা না থাকলেও বিষাদ থাকবে কিন্তু এই কবুলে যে ক্ষোভ থাকবে সে ভাবতে পারেনি। তাহলে কি সে ভুল করলো। নিজের ভালোবাসা পেতে নিজের জীবনটাকেই হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলো?

২.
বিদায় পর্বে কনের চোখে একফোটা পানিও ছিলো না। তাকে হাতে ধরে বিদায় দিতে হয়নি। কবুল বলার পরই গটগট পায়ে হেটে গাড়িতে চড়ে বসেছে। যে পরিবার তার সুখের চেয়ে ভালো থাকাটা বেশী দেখেছে সেই পরিবার আর যাইহোক তার ভালোবাসার যোগ্য না। তাহিব খানিকটা ভবেঘুরেই ছিলো। মনে হচ্ছিলো সে নিজের মধ্যে নেই তাকে অন্যকেউ পরিচালনা করছে। অনিন্দিতার বাবা-মা মেয়েকে ধরে একটু কান্না করার সুযোগ পেলো না তখন বুঝলো কতবড় ভুল করেছে মেয়ের সাথে। তারা তো মেয়েকেই হারিয়ে ফেললো। গাড়ি গুলো শা শা করে ছুটতে লাগলো। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো রিয়াব। এতক্ষণ প্রেয়সীকে আরেক নজর দেখার আশায় চলে যেতে চেয়েও থেকে গিয়েছে। চোখে পানি মুখে হাসি নিয়ে অনিন্দিতার বাবার দিকে তাকালো। যা দেখে অনিন্দিতার বাবা মাথা নিচু করে ভেতরে চলে গেলো। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।

অনিন্দিতার বাবাকে একপ্রকার পালিয়ে যেতে দেখে রিয়াব তাচ্ছিল্য হাসলো।এখন এমন করে কি লাভ! সেই তো দুটো দেহের এক আত্মাকে ভেঙেচুরে খানখান করে দিয়েছেই। আর দাড়িয়ে না থেকে নিজের বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো রিয়াব। বোনটা না খেয়ে অপেক্ষা করছে।
হাটতে হাটতেই মনে হলো চোখ তার আবারো নিজের কথা শুনছে না। পানির ধারাটা প্রবাহিত হয়েই যাচ্ছে। এত জ্বালা কেন করছে বুকে? একটা মেয়েই তো চলে গেছে জীবন থেকে? আরো অনেক মেয়ে আছে দেশে! মন বলছে, না ওই মেয়েটা যে বেঁচে থাকার অক্সিজেন ছিলো, ওই মেয়েটা যে অসময়ে পাশে ছিলো, ওই মেয়ের মতো আর কোনো মেয়ে হৃদয়ে জায়গা নিতে পারবে না। এসব মনে করতেই রিয়াবের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। শক্ত কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো,

আমাকে যে ভালো থাকতে দিলো না, আমার প্রেয়সীর মুখের হাসি যারা কেড়ে নিলো, আমার কাছের মানুষদের যারা হেনস্তা করলো, দুটো প্রাণকে যারা নির্জিব করে দিলো তাদের ভালো থাকতে দিবো না! তাদের জীবন থেকেও সুখ নামক পাখিটা কেড়ে নিবো! প্রতিনিয়ত দগ্ধ করবো তাদের হৃদয়। শেষ পযর্ন্ত আফসোস করবে। একটু ভালোভাবে বাঁচার তাগিদে এদিকওদিক ছুটে বেড়াবে! কিন্তু? হাহাহা! না পারবে ভালোভাবে বাঁচতে, না পারবে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেতে! শেষ করে দিবো তাদের জীবনের সুখ! হা হা হা!

এই মুহূর্তে রিয়াবকে উন্মাদ লাগছে। উন্মাদের মতো বিড়বিড় করেই যাচ্ছে। ভালোবাসা হারানোর ব‍্যাথা সহ‍্য করা এত সহজ! হঠাৎ করেই রাগ সরে একরাশ অসহায়ত্ব ভর করলো রিয়াবের চোখে। হাটুগেড়ে বসে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো । অর সহ‍্য করতে পারছে না। কিন্তু তাকে তো সহ‍্য করতে হবে। অন‍্যের জীবন অতিষ্ঠ করতে তাকে সহ‍্য করতে হবে। এসব ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে পরবর্তী ভাবনায় নিমজ্জিত হলো। কিভাবে কি করবে? কোথায় যাবে? ভাবতে ভাবতেই নিজের বাড়িতে চলে আসলো সে। বাইরের কলপাড় থেকে ভালো করে মুখটা ধুয়ে নিলো। বোনকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। অহেতুক কান্নাকাটি করবে। দরকার কি এতিম বোনটাকে কষ্ট দিয়ে। মুখে মিথ্যে হাসি টেনে ডেকে উঠলো,

রিহা, বোন আমার ঘুমিয়ে পড়েছিস?

ঘরের ভেতর থেকে ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনেই রিহা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই হাসি মুখটাই আঁধার নেমে আসলো। কিছু বলবে তার আগেই রিয়াব বলে উঠলো,

রিহা সব কিছু গুছিয়ে নে আমরা সকালের বাস ধরে ঢাকা যাবো। চাকরির ইন্টারভিউ আছে অনেকগুলা। আমি এখন একটু ঘুমাবো। সকালে কথা হবে তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।

রিহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিয়াব হনহন করে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা অফ করে দিলো। রিহা মন খারাপ নিয়েই সবকিছু গুছাতে লাগলো। আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ভাই হয়তো প্রেয়সীকে হারানোর ব্যাথায় ভুলেই গেছে তার বোন তাকে ছাড়া খেতে পারে না। ভাবতেই রিহার চোখ ছলছল করে উঠলো। অনিন্দিতা কে কত ভাবিপু ভাবিপু বলে ডেকেছে। অনিন্দিতার কাছে রিহা একটি ফুল ছিলো। বাচ্চাদের মতো আদর করতো। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমন হারিয়ে যায়। রিহা মনে মনে পণ করেই নিলো আর যাই হোক জীবনে কাউকে ভালোবাসবে না। ভাইয়ার মতো কষ্ট সে পেতে চায় না। তার যে ভাই ছাড়া আর কেউ নেই।

৩.
ফুলে সজ্জিত ঘর ছেড়ে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে অন্ধকার বেলকনিতে। আজকের আকাশটাও যেন তার কষ্টটা বুঝতে সক্ষম হয়েছে । চাঁদহীন আকাশে তারাগুলোও দেখা যাচ্ছে না। নিকষ কালো অন্ধকার রাতে বেলকনিতে দাড়িয়ে দুঃখকে ভাসিয়ে দিচ্ছে এক নারী।যে কিছুক্ষণ আগে তার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে। অনিচ্ছাই বরণ করে নিয়েছে অন‍্যজনকে। নিজের ভাগ‍্যের উপর উপহাস করছে সে। হ‍্যা মেয়েটি অনিন্দিতা।

বউ আসতেই সবাই আলাপচারিতা সেরে সাজিয়ে গুছিয়ে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেক ভালোমন্দ কথাও শিখিয়ে দিয়েছে। স্বামীকে ভিষণ ভালোবাসতে হয়। আজকে রাতে স্বামী যা যা করতে চায় তাই যেন করতে দেয়। একটা কথাও যেন অমান‍্য না করে। অনেক ভাবিরা তো এও শিখিয়ে দিয়েছে,
আজকে রাতে স্বামীকে খুশি করতে পারলে নাকি স্বামী বউ এর নেউটা হয়ে যাবে। এসব শুনে অনিন্দিতার এদের চিন্তাধারা প্রতি দারুণ ইন্টারেস্টিং ব‍্যাপার অনুভব করে। শরীর দিয়ে যদি ভালোবাসা হতো তাহলে রিয়াবের সাথে তার কি ছিলো? ভাবে অনিন্দিতা। রিয়াবের কথা ভাবতে বসলেই অনিন্দিতা দারুণ সুখের রাজ‍্যে ভাসতে থাকে। এ যেন স্বরচিত কোনো রাজ‍্য। যেখানে সুখ আর সুখ। শান্তি আর শান্তি।

রিয়াবকে নিয়ে কল্পনায় মুশগোল থাকা অনিন্দিতা জানতেই পারেনি তার পাশে দাড়িয়ে তাকে কেউ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাহিব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিন্দতার দিকে। তার চোখে কিছুটা হতাশা ফুটে উঠেছে। কিন্তু অনিন্দিতা তো নিজের কল্পনায় ব‍্যস্ত। চোখে স্বপ্ন, ঠোঁটের হাসিটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে তার পাশে দাড়িয়ে থাকা অপরূপা মানবীটি অন‍্যকোন মানবকে নিয়ে কল্পনায় সংসার সাজাচ্ছে। যেখানে তাহিব নামক মানবটির কোন জায়গা নেই। তাহিব আর দাড়ালো না। অনিন্দিতাকে একলা ছেড়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। একটু ঘুমানো দরকার। মাথাটা কেমন যন্ত্রণা করছে। মাথার যন্ত্রণার থেকে বুকের যন্ত্রণা টা প্রখর। আচ্ছা আজকে কি ঘুম হবে? নাকি সমীকরণ মেলাতে মেলাতে রাতটা পার হয়ে যাবে।
একটা ঘরে দুজন মানুষ। দুজন দু রকমের চিন্তায় বিভোর। একজন হারানোর ব‍্যাথা থেকে উপশম পেতে সুখের কল্পনায় ব‍্যস্ত, আরেকজন ভবিষ‍্যতের গতি মেলাতে ব‍্যস্ত।
আহা! জীবন কত বিচিত্রময়!

চলবে….?