ডেভিল পর্ব-০৫

0
393

#ডেভিল
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

[5]

ফোনের শব্দে ঘুম ভাংলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোন স্কিনে তাকিয়ে দেখি বাপি(বাবা) ফোন করেছে—

_হ্যালো বাপি!! কেমন আছো

_ভাল আছি রে মা তুই কেমন আছিস?

_তোমায় ছাড়া একটু খারাপ আছি।আচ্ছা তুমি ঔষধ ঠিকমতো খেয়েছিলে?? এখানে নতুন পরিবেশে এসে তোমায় ফোন করতেই গেছি সরি বাপি

_আমি জানি আমার মামুনি টা অনেক আনন্দ প্রিও।একটু আনন্দে থাকলেই বাকি সব ভুলে যায়।আমারো কাজের চাপে ফোন দেওয়া হয়নি। যাক যে জন্য তোকে ফোন করেছিলাম সেটা হলো কাল আমি বাসায় যাচ্ছি

_ওয়াও কাল কখন আসবে?

_ভোরে রওনা দিবো।সকাল ৯টার দিকে পৌঁছাবো। রাখি রে মা পরে ফোন দিবোনি একটা ফাইল দেখতে হবে।

_ও আচ্ছা।আর হ্যা ঔষধগুলা মনে করে খেয়ো

_আচ্ছা টাটা।।

ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম গিয়ে দেখি নীলা আর আন্টি রান্না ঘরে রান্না করছে।ইসস রে আমি এতোক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমালাম আর এদিকে আন্টি কষ্ট করে রান্না করছে।

_আন্টি তুমি সরো তো আজ আমি রান্না করবো

_তুই রান্না করবি কেনো?? আগুনের তাপে তো আমার এই মিষ্টি মেয়েটার স্কিন খারাপ হয়ে যাবে

_ধুর কি যে বলো না তুমি।দাও আমি রান্না করছি

_না আমি থাকতে তুই রান্না করবি কেন শুনি?? তুই বরং এক কাজ কর কফিটা নীলের ঘরে দিয়ে আয়

_আচ্ছা দাও

নীল ভাইয়ার রুমের দিকে যাচ্ছি। খুব সুন্দর একটা পারফিউম পাচ্ছি। দরজায় নক দিবো তাতেই দেখি দরজাটা খোলা।কি লোক রে বাবা ঘরের দরজাটা খোলা রেখেই ঘুমোচ্ছে।বিছানার সাথেই একটা ড্রেসিং দেখলাম তাই কফিটা ওখানেই রেখে নীল ভাইয়া কে ডাকছি–

“ভাইয়া, ভাইয়া আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি।ওনার কোনো সাড়া নেই। হঠাৎ চোখ পড়লো ওনার চুল গুলায়।ছেলেদের চুলও এতো সুন্দর হয়?? অনেকটাই অগোছালো হয়ে আছে তারপরেও ওনাকে এলোমেলো চুলগুলাই দারুণ মানিয়েছে।গালে খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়ি”
আচ্ছা উনি কি আমার থেকে ফর্সা?একবার দেখিতো।ওনার হাতের কাছে আমার হাত নিয়ে দেখছিলাম কে ফর্সা এমন সময় ভাইয়ার ঘুম ভেঙে গেলো–

_কি করছো তুমি( ঘুম ঘুম কন্ঠে)

_ন…ন…না মা…মা….মানে

_এখানে কি করছো?

_কফি দিতে এসেছিলাম

_তা বুঝলাম। আমার হাতের সাথে হাত দিয়ে আছো কেন

_মা..মানে ভাইয়া আমি দেখছিলাম কে বেশি ফর্সা আপনি না আমি(ফর্সা পরিক্ষা করার জন্য ওনার হাতের সাথে আমার হাতটা লেগে দেখছিলাম)

_দেখা হয়ে গেলে যাওতো এখান থেকে আমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলো যত্তসব

_হু যাচ্ছি যাচ্ছি। একটু হাত লেগেছে তো কি হয়েছে শুনি?আমার একটু স্পর্সে আপনার হাতটা কি পুরে গেছে নাকি

_যেতে বলছি না?আর তুমি ঘরে ডুকলে কিভাবে। কারো ঘরে ডুকলে নক করতে হয় জানোনা? (রাগি দৃষ্টিতে)

_দরজা খোলা রাখলে তো যে কেউ ডুকবে তাই না

_কফি দিয়েছো?

_হ্যা

_এবার যাও

_হ্যা যাবোই তো আমি কি এখানে থাকতে আসছি নাকি? কালকেই আমার বাসায় যাচ্ছি

_ঠিক আছে যেও।এখন আমার রুম থেকে যাও। এমনিতেই ঘুমটা নষ্ট করছো

_বা রে!! কফিটা যে আনলাম খাবেন না? আর ক টা বাজে খেয়াল আছে?আবার ঘুমাচ্ছেন যে?

_ও মাই গড!! এই তুমি যাও তো (একটু চেচিয়ে)

_যাচ্ছি তো এতো চিল্লান কেন মাইকের মতো

উনি বিরক্ত হয়ে সারা গায়ে কম্বল মুড়ি দিলেন।হাহাহাহা ওনাকে জ্বালাতে কি যে ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। মিঃ নীল এই নেহা কি চিজ সেটা আপনি জানেন না।আপনায় তো এতো সহজে ছাড়ছি না।উমম কি করি কি করি!! হ্যা পেয়েছি। ওনার একটা নখ কফিতে দিলে কেমন হয়?? উফফ নেহা তোর কি বুদ্ধি!!

চুপি চুপি গিয়ে ওনার ডান হাতের একটা নখ কফির ভেতরে ধরতেই এক লাফে বিছানা থেকে উঠে নখে ফু দিয়ে যাচ্ছে।

আর এদিকে হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করেছে।পেটে হাত দিয়ে একতালে হেসেই যাচ্ছি।এবার একদম ঠিক হয়েছে।ওনার মতো ডেভিল লোকের জন্য এটাই পারফেক্ট। উনি রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে এগোতে লাগলো আর নিমিষেই আমার হাসি থেমে ভয় পেয়ে গেলাম।উনি এক পা করে এগোচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে আমায় দেয়দলের সাথে চেপে ধরতেই ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করলাম।তারপর

বেশিক্ষণ ফোনের স্কিনে তাকালে আমার চোখের একটু সমস্যা হয় তাই পার্ট গুলি ছোট হচ্ছে।পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।

ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে আছি, ওনার গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে,কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।তারপর অনুভব করলাম যে ওমার নিশ্বাস আর আমায় স্পর্শ করছে না।ভয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।একি উনিতো সামনে নেই? গেলো কোথায়?ভুত নাকি?যাই হোক এখন এখান থেকে পালাই নইলে মরেই যাবো। এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে আসলাম।

আন্টি__কিরে মা এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?পড়ে যাবি তো

সাধে কি দৌড়াইছি নাকি?তোমার সাইকো ছেলেটার জন্যই তো।মাগো আর একটু হলে মরেই যেতাম(মনে মনে ফিসফিস করতে করতে)

আন্টি_কি ভাবছিস??

আমি_না কিছু না।আমি কলেজে যাই কলেজের সময় হইছে। ওই নীলা তুই যাবি না?

নীলা_না রে আজ ভাল লাগছে না।তুই যা

_ঠিক আছে তুই রেস্ট নে আমি রেডি হয়ে আসি

তারপর আমার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে কলেজ যেতেই —

আন্টি__খাবি না?

– না আন্টি কলেজের দেরি হয়েছে।ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো

_না খেয়ে তারপর যাবি।দারা বলছি(রেগে ধমক দিয়ে)

_আচ্ছা।ইসস রে কলেজের সময় হইছে (আন্টির যেকোনো কথা আমি ফেলতে পারি না)

_তুই বস আমি খাইয়ে দিচ্ছি

আমি সোফায় বসলাম।আন্টি আমায় খাইয়ে দিচ্ছে।আমায় কখনো এভাবে কেউ খাইয়ে দেয়নি।বাবা তো ব্যাস্ত ছিলেন ছোট থেকে অনেকটাই একাকি বড় হয়েছি।অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো।

আমি_জানো আন্টি আমায় না কেউ এভাবে খাইয়ে দেয়নি।হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ছে।মা থাকলেও আমায় এভাবে খাইয়ে দিতো(এতক্ষনে কান্না করে দিছি)

_পাগলি মেয়ে একটা আমি কি তোর শুধু আন্টি? মা না??

_(নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি)

__আজ থেকে আমায় মা বলে ডাকবি কেমন?এখন থেকে
মার ২টা মেয়ে

_আন্টিকে জরিয়ে ধরে কান্না করছি)

“আচ্ছা মা তোমার ২টা মেয়ে?তাহলে ছেলেটা কোথায় গেলো?”(শিড়ি দিয়ে নামতে নামতে নীল ভাইয়া শার্টের কলার ঠিক করে কথাটি বললো)

আন্টি_কোথায় ভুললাম।আমিতো মেয়ের কথা বলছি

নীল ভাইয়া _আমি বেড় হলাম

আন্টি_কোথায় যাবি?

_একটা কাজ আছে সেখানে যেতে হবে

_খেয়ে যা

_না এখন খাবো না বাইরে খেয়ে নিবো

_তুই তো বাহিয়ে খেতে পারিস না। আয় এখানে বোস।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

_মা আমার সময় নেই।

_বসতে বলছি(ধমক দিয়ে)

নীল ভাইয়া বাধ্য ছেলের মতো সোফায় বসলো।আন্টি একবার আমায় আর একবার নীল ভাইয়া কে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া শেষে–

খাবো না খাবো না করছিলি এখন খাবারগুলা কার পেটে গেলো হ্যা?আমার হয়েছে যত্তো জ্বালা।

আমি আন্টিকে বিদায় জানিয়ে রাস্তায় দারিয়ে আছি।একটা রিক্সাও নেই।বুঝতে পারছি না এখন রিক্সাগুলা এখানে আসে না কেনো।এমনিতেই লেট হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় দেখি নীল ভাইয়া বাইক নিয়ে বেড় হচ্ছে। আচ্ছা নীল ভাইয়াকে বললে আমায় পৌছে দিবে?উনিতো আমায় সহ্যই করতে পারেন না,থাক বলবো না বললে আমাকেই অপমান করবে।কোনো উপায় না পেয়ে হাটতে লাগলাম।পিছন থেকে হঠাৎ একটা বাইক আমার সামনে কষে ব্রেক করলো।আমি তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছি।একি!!এটাতো নীল ভাইয়া!! উফফ এই লোকটা সকাল থেকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে।

নীল ভাইয়া_বাইকে ওঠো।কলেজে পৌছে দিচ্ছি

_না ভাইয়া থাক আমি যেতে পারবো

_তোমার নাকি কলেজে দেরি হচ্ছে?রাস্তায় তো কোনো রিক্সাও নেই চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি

_হেটেই যেতে পারবো

_উঠতে বলছি (রাগি লুক নিয়ে)

_উঠছি তো রাগ দেখানোর কি আছে একটু ভাল করে বললেও তো হয়

মিঃ নীল আপনি যদি নাও বলতেন তবুও আমি বাইকে উঠতাম।কিন্তু আপনার মুখ থেকে শুনার জন্য না করেছিলাম হিহিহি।আজকে আপনার খবর করবো চলুন শুধু কলেজে।

নীল _কি ভাবছো?ভাল করে বসো।আমি জোরে বাইক চালাই পরে গেলে কিন্তু তোমায় খুজে পাওয়া যাবে না

_কিন্তু হেলমেট তো একটাই। আপনি কি পড়বেন?

_আমার লাগবে না।তুমি পরে থাকে তাহলেই হবে

_আচ্ছা

নীল ভাইয়া বাইক স্টার্ট করলো।যেমন কথা তেমনি কাজ,বাতাসের বেগে বাইক চালাচ্ছে। আর এদিকে আমার অবস্থা অশোচনীয়। এ লোকটা কি পাগল নাকি?এতো স্পিডে কেউ বাইক চালায়? মনে তো হচ্ছে আকাশে উড়ছি।ওনার শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি, এভাবে চালালে নির্ঘাত আমার হার্ট এটাক হবে।ওনার পিঠে একটা চিমটি দিলাম।চিমটিটা একটু জোরেই হয়েছে মনে হয়।নীল ভাইয়া খুব কষে ব্রেক করলেন।আর আমি সম্পুর্ন ঝুকে ওনার গায়ের ওপর পড়লাম।

ভাইয়া_এই পাগল মেয়ে সমস্যা কি?

_আপনি আর আপনার বাইক

_সাট আপ(চেচিয়ে)

_(চুপ করে আছি)

_তুমি জানো বাইক চালানো অবস্থায় এতো জোরে চিমটি দেওয়ায় কতো বড় এক্সিডেন্ট হতে পারতো?কোনো আইডিয়া আছে? ইউ ফুল

_আমি তো আস্তে চিমটি দিছি(ইনোসেন্ট মুডে)

_ও মাই গড আর কি বলবো এই মেয়েকে

_পনি কি বলবেন হ্যা? এবার তো আমি বলবো।এতে জোরে কেউ বইক চালায়? আমার চেহারাটা দেখছেন?কতো চিকন আমি। যদি উড়ে যেতাম তাহলে কি আমায় আটকাতে পারতেন?আর আমাকেই জ্ঞান দিচ্ছেন যে (ওনার চেয়ে দ্বিগুণ চেচিয়ে বললাম।এখন ভাল লাগতাছে)

উনি পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাইক স্টার্ট করলেন।একটু পর কলেজে পৌছালাম। গেইটে কিছু বান্ধবিকে দেখে ওদের কানে ফিস ফিস করে নীল ভাইয়াকে জব্দ করার বুদ্ধি দিলাম।

_কিরে তোরা পারবি তো?

_হ্যা পারবো না মানে খুব পারবো তুই শুধু দেখ (হারামি গুলা সবাই মিলে বললো)

নীল ভাইয়া গাড়ি ঘুরাচ্ছে তখনি হারামিগুলা ওনাকে বললো–

চলবে?