তবু কেন এত অনুভব পর্ব-০৩

0
427

#তবু_কেন_এত_অনুভব🕊
#written_by_Liza
#৩য়_পর্ব

দোয়া মনে মনে বলে “বিনা দাওয়াতে খেতে গিয়ে এই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, আর না বাপু।এবার থেকে বিনা দাওয়াতে কোথাও হাম*লা দেবো না।নয়তো নিজে মাম*লা খাবো উল্টো”

ইনান দোয়ার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে দোয়াকে বাড়িতে পৌছে দেয়, দোয়া ইনানকে বিদায় দিয়ে বাড়ির গেইটে ঢুকে গেইট বন্ধ করে দেয়। দোয়া জোরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে “আল্লাহ বাঁচলাম,মক্কেল আমার জীবনে আক্কেল এনে দিলো।যাই, কারো সামনে ধরা না পরলেই হলো”

দোয়া পা টিপে টিপে রুমে ঢুকতেই দোয়াকে ডাক দেয় কে যেনো,
“এই দোয়ামনি কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ?”
দোয়া জ্বীভে কামড় দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে পেছনে ফিরে হেঁসে দেয় আর বলতে থাকে “কাকিমা একটু ফাংশনে গিয়েছিলাম বন্ধুর বিয়ে বলে কথা”

তোর কি প্রতিদিন বন্ধুর বিয়ে হয়? নাকি ফ্রীতে কোথাও পেট পূজো কর‍তে যাস? (কাকিমা)

এমা না কাকিমা,কি যে বলো না। সত্যিই আমি আজ দাওয়াত পেয়েই গিয়েছি (দোয়া)

আচ্ছা যা ফ্রেস হয়ে রুমে আয় জলদি,আমরা সবাই অপেক্ষা করছি (কাকিমা)

দোয়া কোনোভাবে হাফ ছেড়ে বাঁচে,দোয়া দৌড়ে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়।

চলুন দোয়ার পরিবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দোয়ার বাবারা তিন ভাই, সবার বড় হলো দোয়ার বাবা, দোয়ার মেঝো কাকা তাদের সাথেই থাকে, যৌথ পরিবার। দোয়ার ছোট কাকা আমেরিকায় পরিবার নিয়ে শিফট হয়েছে।

দোয়ার বাবার নাম আজীম শেখ,মেঝো কাকার নাম নাদিম শেখ,ছোট কাকাইয়ের নাম আলিফ শেখ।
দোয়া চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে,সবার আদুরে।

দোয়া ফ্রেস হয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে “বেদনা মধুর হয়ে যায়,বার্গার যদি পাই”
আহ না এটা মিলছে না অন্যটা গাই “তুমি মোর জীবনের ভাবনা,বিনা দাওয়াতে খাবার খেতে যাবো না।”

পেছন থেকে মেঝো কাকাইয়ের মেয়ে রীধী বলে ওঠে “বুঝেছি আজ তাহলে কান্ড ঘটিয়ে এসেছিস আপু,”

দোয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে রীধীর গাল চেপে ধরে বলে “মেরি বেহেন, মেরি পেয়ার। তেরা থোবড়া সাম্বাল।”

রীধী নিজেকে ছাড়িয়ে দোয়াকে বলে ওঠে “ঠিকাছে চল এবার, সবাই অপেক্ষা করছে।”
দোয়া রীধীকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসেছে। দোয়ার মা ও কাকিমা টেবিলে খাবার সার্ভ করছে। দোয়াকে দেখে দোয়ার মেঝো কাকাই দোয়াকে পাশে বসতে বলে। দোয়া বাধ্য মেয়ের মতো মেঝো কাকাইয়ের পাশে বসে পরে।

দোয়ার মা দোয়াকে দেখে বলতে শুরু করেছে “সারাদিন টই টই করে ঘুরবে,কার বাড়িতে কার বিয়ে,গিয়ে খেয়ে আসবে।এরপর রাতে পেটের ব্যাথা নিয়ে চিৎকার করবে।তোমরা ডাক দাও না বলেই মেয়েটা এত বেড়েছে। আমি কিন্তু আজ সহ্য করবো না।তোমার মেয়েকে বলো গ্যাস্টিকের ওষুধ খেয়ে নিতে”

দোয়ার মা’কে থামিয়ে দিয়ে মেঝো কাকাই বলে ওঠে “আহ ভাবি। সবসময় মেয়েটাকে এমন করো না তো। এই বয়সে এসব একটু আধটু হয়।”

দোয়া বসে বসে তাদের কথপোকথন দেখছে আর টেবিলে থাকা সব ফ্রুট সাবাড় করে দিয়েছে। মেঝো কাকাইয়ের মেয়ে রীধী প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে “আল্লাহ আঙুর কই?”

দোয়া ঢেকুর তোলে বলে “তোমরা বসো আমি এবার যাই,অনেক কাজ আমার।” দোয়া আস্তে আস্তে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

দোয়ার মা ও রীধী হা করে প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে, দোয়ার মেঝো কাকাই ও দোয়ার বাবা আজীম শেখ হো হো করে হেসে বলে “আরে এভাবে দেখার কি আছে,আরো তো আছে নাকি? যাও ওগুলো নিয়ে এসো”

রীধী ঘ্যানঘ্যান করে বলে “এভাবে আমার সব ভাগ চলে যাচ্ছে,এই খাদক আপুকে বিদায় করা লাগবে৷ কোনো ছেলেপেলেও পাই না।পেলে বিয়ে একটা দিয়ে দিতাম।”

রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পরেছে, দোয়াকে রাফি ফোন দিয়ে বলে “কি রে তুই না বললি, তুই আটকা পরেছিস? তাহলে আমি গিয়ে পেলাম না কেন?”

দোয়া রাফির প্রতুত্তরে বলে ওঠে “আমাকে বাড়ি দিয়ে গেছে রে”

আচ্ছা শোন মজার একটা নিউজ আছে,কাল তোদের সবাইকে ট্রিট দেবো ক্যাফে চলে আসিস। (রাফি)

কি উপলক্ষে? আবার ফ্রীতে খাওয়া? না ভাই মাফ চাই।আমি আর এসবে নেই। তোরা তোরা কর। আমাকে টানিস না। আজ অনেক কষ্টে বেঁচে ফিরেছি (দোয়া)

উফফ না, ফ্রীতে না। টাকা দিয়েই খাবো। তোর বন্ধু এত গরীবস নাকি? ইয়ো কাল চলে আসবি, যা খেতে চাইবি খাওয়াবো। আমার পক্ষ থেকে তোদের ট্রিট (রাফি)

আগে বল কাহিনি কি? টাকা কোত্থেকে? (দোয়া)

আজ আমার শুভাকাঙ্ক্ষীকে বলেছি কিছু টাকা লাগবে,সে আমি বলতেই পাগল বুঝলি?সে’ই টাকা দেবে (রাফি)

তোর শুভাকাঙ্ক্ষী আমার লাইফে অনাকাঙ্ক্ষিত না বারোটা বাজায় কে জানে,তোর জন্য ঝামেলায় পড়ি আমি (দোয়া)

আরে ভুলবাল কথা বলিস না তো,আমি আছি তো। এই শুভাকাঙ্ক্ষী প্রেমিক পুরুষ।তুই বুঝবি না ফিটার খা, কাল টাইম করে পৌছে যাস। (রাফি)

দোয়া রাফির কথায় ফোন রেখে দেয়।

________________

“স্যার আমি একটু হাসি?” (ইনান)

“শাট আপ, তোমার হাসি পাচ্ছে আমার এই করূণ দশা দেখে?” আজমী রাগে গর্জে ওঠে ইনানের উপর।

ইনান গাল টিপে হেসে হেসে বলে “আচ্ছা স্যার,ফেইক আইডির ব্যাক্তিটি ছেলে হলে বুঝেন তো? তার মানে ছেলের সাথে এতদিন” আজমী রাগান্বিত চোখে তাকাতেই ইনান কথা বন্ধ করে ফেলে।

টুং টাং করে ম্যাসেজ আসছে নায়রা আইডি থেকে, আজমী ফোনের দিকে তাকিয়ে ইনানের দিকে তাকাচ্ছে, ইনান মুখে হাত দিয়ে হেসে বলছে “স্যার আমাদের ছেলেভাবিজান ম্যাসেজ করেছে, রিপ্লাই দিন।”

আজমী কিছু বলতে যাবে অমনি ইনান রুম ত্যাগ করে, আজমীর চোখে মুখে চিন্তার চাপ। আজমী কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিয়ে ম্যাসেজগুলো পড়ে।

কি হলো জান? আপনি রিপ্লাই করছেন না কেন? দুপুর থেকে ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছি। আমার তো ভুল হয়েছে আমি মানছি। প্লিজ সোনা রাগ করে না আমার (ফেক একাউন্ট)

আজমী চোখ মুখ মুছে রিপ্লাই দিতে তৈরি হলো। আজমী রিপ্লাই দিচ্ছে “আসলে জান তোমার উপর খুব অভিমান করেছি আমি, বুঝোই তো ভালোবাসা এমন’ই।”

ওহ মাই সুইটহার্ট, শুনুন না আমার কাল বেস্টির বার্থডে, এখন কি করবো সাজেশন দিন (ফেইক একাউন্ট)

বোকা জানটাহ্ আমার,আমি থাকতে এত ভাবছো কেন? আমি আছি না? তোমার নিজের বিকাশ নাম্বারটা দাও জান।আমি এক্ষুনি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্লিজ আজ বলো না তোমার নাম্বার নেই। তুমি মায়ের ফোন চালাও। এটা আজ বলো না জান (আজমী)

“হাউ সুইট,এক্ষুনি দিচ্ছি দাড়ান” এই বলে ফেইক একাউন্ট থেকে নাম্বার দেয়, আজমী ঐ নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেয়।

কথোপকথন করে দু’জনেই অফলাইন হলো। ইনান রুমে এসে আজমীর কান্ডে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আজমী ইনানকে থামিয়ে দিয়ে বলে “বোকা ভাবছো তাই না? কেন টাকা দিয়েছি সেটাই ভাবছো,ভাবার’ই কথা। এই নাম্বারের সুত্র ধরে তার কাছে পৌছাবো। তাকে ধরবো। ওয়েট এন্ড সি। আমার সাথে চালাকি। হা হা হা। তানাফ আজমী এর সাথে চালাকি এত সহজ না। বিশ্বাস নিয়ে কেউ খেললে তার মাশুল দিতেই হবে”

ইনান আজমী এর কথায় হেসে বলে “স্যার তাহলে কাল আমাদের ছেলেভাবীজানের সাথে প্রথম দেখা হচ্ছে”

আজমী রাগে কটমট করে ইনানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইনান বলে ওঠে “স্যার রাগ করছেন কেন? যদি ছেলে হয়? তাই অগ্রীম ভাবিজান ডেকে প্রেক্টিস করছি আর কি। আচ্ছা স্যার আই হ্যাভ এ গভীর প্রশ্ন। বলবো? যদি অনুমতি দেন?”

এতক্ষণ তো বলেই যাচ্ছো, অনুমতি নিয়েছো? হা*দা*রাম। (আজমী বেশ রেগে)

হেহেহে, তাও ঠিক। আচ্ছা স্যার আপনাদের যদি বিয়ে হয়, না মানে আজকাল তো এমন হচ্ছেই তাই বলা আর কি। যদি বিয়ে হয় তাহলে বাচ্ছার মা কে হবে? আজ্ঞে আমি আপনার পুরুষত্ব নিয়ে ডাউট করছি না হেহে, আপনি নিশ্চিত বাবা হবেন।কিন্তু মা হবে কে? ঐ ছেলেভাবিজান? (ইনান)

আজমী ইনানের কথায় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না, ইনানের গায়ে টেবিলে থাকা আপেল ছুড়ে মারে, ইনান ক্যাচ নিয়ে আপেল খেতে খেতে দাঁত বের করে হেসে বলে “স্যার ছেলেভাবির জন্য কাল একগাদা গোলাপ নিয়ে যাবেন প্লিজ। হাফ ছেলেদের গোলাপ পছন্দ।আমাদের ছেলেভাবিজানের ও খুব পছন্দ হবে নিশ্চয়”

এই বলে ইনান দৌড় দেয় মার খাওয়ার ভয়ে, আজমী ইনানের কান্ডে হাসতে শুরু করে।

চলবে..