তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-০৫

0
707

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ05

আফরিনের আজ আর তেমন টাইম নেই। কোনো রকম শাওয়ার নিয়ে আসে। লাল ড্রেসে গোল্ডেন ইস্টোন বসানো। আফরিনকে অনেক মানিয়েছ। কমড় অব্দি লম্বা চুলগুলো খোলা হালকা হালকা পানি ঝড়ছে। কোনো কিছু মুখে না দিয়ে ভার্সিটির জন্য দৌড়। আফরিনের মা তাদের খেতে বললে ওরা বলে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবে। ভার্সিটিতে আজ প্রথম এভাবে এসেছে আফরিন। আফরিনকে দেখে মাত্র এক জোড়া চোখ আটকে গিয়েছে। প্রশান্তির দোলা বয়ে যাচ্ছে আরেক মনে। এক সাথে দুজনের মনে জেগে উঠেছে এক নতুন অনুভূতির দোলা,,,,,, আহান এসেই অহনার হাত ধরে আফরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে

—– শালীসাহেবা অনেক অনেক ধন্যবাদ,, সারারাত। আমার বউকে দেখেশুনে রাখার জন্য এখন আমরা ডেটে যাবো। ।।।।। অহনা যেতে না চাইলে আহান বলে

—– তুমি কি চাচ্ছো এই ভরা ভার্সিটির মধ্যে আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাই? আর এই সব কি কালকে থেকে হিজাব করে আসবা। এখন চল। বলেই চলে যায় অহনাকে নিয়ে। আফরিন তাদের ক্লাসের দিকে যেতেই দেখে অন্যা নিচে আসছে। আফরিন বলে

—– কি হয়েছে নিচে যাচ্ছিস কেন?অন্যা বলে

—– আজকে ক্লাস হবে না। আমাদের ডান্স প্রেকটিস আছে আর আমি ডান্স করব। আর বড়রা সিলেক্ট করবে তুই ও চল।

সেই কখন থেকে একা একা বসে আছে আফরিন আর অন্য দিকে কৌশাল আর অন্যা ডান্স করতে ব্যাস্ত। একসময় বিরক্ত হয়ে আফরিন চলে আসে তাদের ভার্সিটির পাশে লেকটায়।

_____________

আফরিন একমনে চেয়ে আছে নদীর দিকে আর মনে করছে সেই দিনটার কথা। সবে তখন কলেজে উঠেছে আফরিন। একদিন কলেজ শেষে সব বান্ধবীরা যায় সপিং করতে। ইচ্ছে মতো সপিং করে সবাই। আফরিনের হাত ভার্তি ছিল সপিং ব্যাগ আর তার আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিল আর তখনই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে আফরিনকে। একটা ভিরের মতো জর হয়েগিয়ে ছিল সেদিন। চোখ বুঝার ঠিক মিনিট দুয়েক আগে। আফরিন রুমালে মুখ বাঁধা অবস্থায় তার দিকে কাউকে আসতে দেখে। পরে মনে নেই তার কিছু যখন সেন্স আসে তখন দেখেছিল তার মা-বাবা আর ভাইয়া সবাইকে কিন্তু তাকে দ্বিতীয় বার জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে দেওয়া ব্যাক্তিটাকে আর দেখেনি। আজ একবছর হয়েগেলো এই ঘটনার। তখনই তার পাশে এসে বসে একজন। কিন্তু এতে যেন আফরিনের ভ্রুক্ষেপ নেই সে নিজের মতো করে অতীতর ছেড়া স্মৃতির পাতায় চোখ বুলাচ্ছে। একবার সেই ব্যাক্তিটাকে পেলে ধন্যবাদ দিত।

তখনই সেই লোকটা বলে

—– তোমাকে যে এই রূপে কতটা ভয়ংকর লাগছে জানো? আফরিন ব্যাক্তিটার দিকে তাকায়।

রেড শার্ট আর ব্লাক পেন্ট মুখটা রুমালে দিয়ে বাঁধা। চোখ গুলো অসম্ভব রকম সুন্দর। সিল্কি চুলগুলো ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে কপালের সাথে। আফরিনের কাছে খুব চেনে এই চোখ। কিন্তু কে।

ছেলেটা আফরিনের হাতটা নিয়ে বলে

—- বাহ বেস সুন্দর মানিয়েছে ঘড়িটা তোমার হাতে। দেখ তোমাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি। আর এভাবে আসবে না। সেই ছোট পিচ্চি টাই আমার জন্য যথেষ্ট। এত সুন্দর বড় লম্বা চুলগুলো নিয়ে খেলার একমাত্র অধিকার আমার।

আফরিন বলে

—– কিসের অধিকার খাটাচ্ছেন আর কে আপনি? ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে বলে

—– অধিকার দিতে হয় না আদায় করে নিতে হয়। আর আমি তোমার খুব কাছের হয়েও দূরের কেউ । কাল থেকে এভাবে আসবে না।

_________

আফরিন পিছন থেকে বলে

—- আমি এখন থেকে এইভাবেই আসবো। ছেলেটা রেগে এসে আফরিনকে কোলে তুলে নিয়ে বলে।

—– এভাবে তুলে এই পানিতে ফেলে দিব। আফরিন ভয় পেয়ে আকরে ধরে ছেলেটার গলা। ছেলেটা বলে

—– কি এইভাবে আর আসবে। আফরিন বলে

—– জীবনে না,, এই জন্মেকি কোনো জন্মে আসতাম না। ভাইনা ভালো প্লিজ আমাকে নামান। হঠাৎ করে আফরিন খেয়াল করে দেখে দূর থেকে কেউ তাদের ছবি তুলছে। আফরিন তাকানো মাত্র ছবি তোলা ছেলেটা চলে যায়। আফরিনের কানে কানে রুমাল পরা ব্যাক্তিটা বলে

—- এখন আমাকে যেতে হবে। খুব জলদি আবার দেখা হবে। বলেই কোলে থেকে নামিয়ে হাটা দেয়। আফরিন বলে

—- কে আপনি দাড়ান। কিন্তু তার আগেই আরেকটা ছেলে বাইক নিয়ে আসে। এটা সেই ছেলে যে পিক তুলেছিল। তারপর রুমাল পরা ব্যাক্তিটা বাইকে উঠে চলে যায়।

_____________

রাত সাড়ে বারোটা বেজে। সিগারেট হাতে বেলকনিতে দাড়ি আছে আদিত্য। আর নিচে বসে আছে কৌশাল, আর আহান। কৌশাল বলে

—– আদিত্য সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে না? এইভাবে আর কত দিন?

আহান বলে

—– আমরা খুব কাছে আমাদের লক্ষ্যর। কৌশাল বলে

—- কিন্তু আদি আমরা যেটা করছি সেটাতে আরেকজনের জীবন নষ্ট হওয়ার,,, আদিত্য সিগারেট শেষ টানটা দিয়ে বললো

—– আদিত্য কখনো কিছু না ভেবে মাঠে নামে না। যা ভাবার সেটা আমি আগেই ভেবে রেখেছি। সব কিছুর আগে আমার পরিবার। আদিলা, মাম্মা-পাপা নেক্সট সপ্তাহে দেশে ফিরবে।

আহান বলে

—– তাহলে আমাদের বেচালার পার্টি? আদিত্য আহানের পাশে বসতে বসতে বললো

—- আমার বাসাটাকে কি বার পাইছো?। অহনাকে এটা বললে তোর মাথা এবার ফাটিয়ে দিবে। আহান বলে

—- আসতাগফিরুল্লাহ কি বলছ এই গুলা। ভাই অহনা যে এত রাগী আগে জানতাম না। হইছে ভাইয়ের মতো৷ ঘাড়ত্যাড়া। কৌশাল বলে

—– ওয়াও কত সুন্দর একটা রেকর্ডিং। তারপর প্লে করে দেখে আহান এতখন যা বললো সব। আহান মিকি হাসি দিয়ে বলে

—– ব্র আমি তোমার দুলা ভাই + বেস্ট ফ্রেন্ড + ছোট বলার ফ্রেন্ড লাগি তুমি আমার লোগে তোমার বইনের বিয়েটা একবার হইতে দাও পরে। কৌশাল বলে

—- পরে কি? হ্যা পরে কি? কিছু বলবিতো এখনই ভিডিও সেন্ড করমু। আদিত্য নিজের মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। জ্বলজ্বল করছে একটা হাসি মাখা ছবি। কৌশাল আদিত্যর কাঁধে হাত রেখে বলে

—– সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিসনা। আদিত্য বলে

—- তোরা বস আমি নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বেয়ার নিয়ে আসি। বলেই উঠে চলে যায়।

______________

রাত ১টা বাজে। কিন্তু আফরিনের ফোনটা বেজেই চলেছে। সে কানে ফোনটা রেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে

—– কে? কলের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটা বলে

—- ইশশশশ,,, ভুল সময় কল দিয়ে ফেললাম। আচ্ছা এখন আমার সাথে কথা বলো বেশিনা পাঁচ মিনিট।

আফরিন কন্ঠ শুনেই বুঝে যায় এটা সেই ব্যাক্তি রেগে গিয়ে উঠে বসে আর বলে

—– এই মিয়া কে আপনি? আর আমার নাম্বার কোথায় থেকে পেয়েছেন? আর আমাকেই বা এতো রাত কল দিয়েছেন কেন? এই ফালতু পেচাল শুনতে?
আপনিকি বাংলালিংক সিম কোম্পানির মতো যে যখন তখন কল মেসেজ দিবেন!!

ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে বলে

—– আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে। বাসায় এসে মাথায় তুলে আছাড় মারবো। আওয়াজ নিচে। আফরিন ভয় পেয়ে যায় কারন দুপুরেও যেই কাহিনী করেছে সাইকোটা এখন আবার যদি সত্যি সত্যি চলে আসে।

ওপাশ থেকে বলে

—– বাসায় ঠিক মতো পৌছাতে পেরেছিলে? আফরিন ছোট করে হুম বলে তারপর ওপাশ থেকে আবার ছেলেটা প্রশ্ন করে

—– খাওয়া দাওয়া হয়েছে। আফরিন রেগে বলতে লাগে

—– হ্যা, খাওয়া দাওয়া, পড়া, ভাইয়া আর অনুর সাথে ঝগড়া সব হয়েছে। বায়। ফোন কেটে ঘুম।

চলবে।