তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-০৭

0
685

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ07

আজ ৪ দিন পর আফরিন ভার্সিটি এসেছে। ফোনটাও ওফ করে রেখেছিল। শাওয়ান, অনু সবাই হাজারো চেষ্টার পর সে আজ বাসা থেকে বেড় হয়েছে। অহনা,অন্যা যোগাযোগ করতে চেয়েছে কিন্তু আফরিন নারাজ।একরকম সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। আফরিনকে দেখে অহনা আর অন্যা দৌড়ে আসে। সবাই কেমন দূরে দূরে থাকছে। আফরিনকে দেখে দৌড়ে আসে আর জড়িয়ে ধরে অহনা আর অন্যা। মাথায় হাতবুলিয়ে অহনা বলে

—– বেইবি এভাবে ভেঙে পরলে চলবে বল?
অন্যা আলতো হাতে আফরিনের গালে হাত রেখে বলে

—- কেমন হারামি তুই!! এত কল এতো মেসেজ দিলাম ফোন অব্দি ধরিসনি। আফরিন আস্তে আস্তে বলে

—- ফোন সেই ব্যাগেই ছিল বের করেনি।

___________

অহনা আফরিন আর অন্যা টুকটাক কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। আফরিন আনমনে হাটছিল। তখনই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে। ছেলেটা ভয়ে বলে

—– সরি সরি ভাবি আমি দেখেনি। সরি। আফরিন তো অবাক এই ছেলে তাকে ভাবি ডাকছে কেন?

আফরিন বলে

—- সমস্যা নেই কিন্তু,, ভাবি কিভবে!! ছেলেটা বলে

—- আমি কিছু বলতে পারবো না। ভাইয়া দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে, সরি ভাবি। বলেই ছেলেটা চলে যায়। আফরিন অহনা আর অন্যার দিকে তাকিয়ে দেখে ওরা নরমাল। আফরিন বলে

—- ছেলেটা আমাকে ভাবি কেন ডাকলো? অহনা হাসি দিয়ে বলে

—- হয়তো তোর চেহারা ওর ভাবির মতো দেখতে। আফরিন বলে

—- মজা করবি না আমি সিরিয়াস। তখনই বিদ্যুৎ গতিতে কেউ এসে তার হাত ধরে নিয়ে হলরুমে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই সেটা দেখেও যেন না দেখার মতো করে আছে। আফরিন খেয়াল করে দেখে এটা সেই ছেলে,,, মুখে রুমাল বাঁধা আর কেউ কিছু বলছে না কেন!!? আফরিন বলে

—- আমার হাত ছাড়ুন আর কে আপনি এই ভার্সিটির সবার সামনে আমার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

ছেলেটা আফরিনকে ভরা মাঠে সবার সামনে কোলে তুলে নিল। আফরিন আরেক দফা অবাক। আর কেউ কোনো কথা অব্দি বলছে না। তার বান্ধবীরাও না তার খুশি হয়ে চেয়ে আছে। আফরিন ছেলেটার রুমাল খুলতে চাইলে সে হাত আলগা করে দেয়। আর আফরিন সাথে সাথে ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে। ছেলেটা আফরিনের কানে কানে বলে

—– আমার সাথে তুমি কখনোই পারবে না। আর তোমার শাস্তি বাকি আছে। হলরুমে ঢুকে ছেলেটা দরজা লাগিয়ে দেয়। জানালর ফাঁক দিয়ে সূর্যের সোনালী রোদ্দুর রুমে প্রবেশ করছে। ছেলেটা আফরিনকে একটা বেন্ঞ্চের উপর বসিয়ে দিয়ে সে নিজে একটা চেয়ার টেনে বসে। আফরিন ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা তা দেখে হাসতে হাসতে অন্যদিকে তাকায়।৷ কিছু সময় পর আফরিনের হাত ধরে বলে

—– এতো দিন ভার্সিটি আসোনি কেন? আর ফোন? ফোন কোথায়!!! জানো কত মেসেজ কল৷ দিয়েছি? আমার উপর কি গিয়েছে? আর তোমারও ভুল ছিল তুমি সেখানে কেন গিয়েছিলে?

আফরিনের কোনো হেলদোল নেই। আফরিন চেয়ে আছে। ছেলেটার হাতের ঘড়িটার দিকে কোথায় তো দেখছে। কিন্তু তার মনে পরছে না। । ছেলেটা বলে

—- তোমাকে আমার দেখা দিব খুবই জলদি। কিন্তু তার আগে তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতির সৃষ্টি হোক। আমি পুরো দুনিয়ায়র সাথে তোমার জন্য লড়ে যদি তোমার কাছেই হেরে যাই। তাহলে হবে বলো? । তা আমি চাই না। আর এখন তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাবে না। আর তুমি যদি নিজে আমাকে খুঁজতে যাও আর গভীরে তলিয়ে যাবে। ওয়াদা করলাম নিজে তোমার কাছে ধরা দিব। বলেই কোপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। আফরিন কিছু সময় সে আগের মতো বসে থাকে। হুশ আসতে আফরিন দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। না কেউ নেই সামনে যাতেই দেখে,, কৌশাল আহান আদিত্যর কোনো ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করছে আর আদিত্য শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে। হাসিটা অনেক সুন্দর কিন্তু হাসে না। হাসতে টাকা লাগে যত্তসব

_________

অহনা আর অন্যা আসলে। আফরিন ওদের দিকে তাকিয়ে বলে

—– তোরা এত খারাপ!! কিভাবে পারলি একটা অচেনা ছেলের সাথে আমাকে ছাড়তে? অন্যা বল

—- অচেনা না ছেলে আমাদের জানাশুনা অনেক ভালো। আর তুই কেমন মানুষ আদিত্য ভাইয়াকে ধন্যবাদ অব্দি দিলি না?

আফরিন বলে

—- ওরা কিভাবে জানলো আমি লেকের ঐখানে? অহনা বলে

—- আমরা যখন কেন্টিনে যাচ্ছিলাম,, তখন আদি ভাইয়াদের সাথে দেখা। পরে কৌশাল ভাইয়া জানতে চাইলে আমরা বলি। তখনই একটা ছেলে এসে বলে তোকে নাকি ঐ বদটায় মারছে। পরে তো তুই জানিসই। এখন একটা ধন্যবাদ দিয়ে আয়।

আফরিন ভাবছে আরেকটা ছেলে কিভাবে জানলো!! তার সাথে তো কেউ ছিলো না তাহলে,? সেইসব চিন্তা বদা দিয়, আফরিন গুটি গুটি পায়ে গিয়ে দাড়ায় ওদের সামনে। প্রতিবারের মতো এইবার আর আদিত্য ভ্রু-কুচকে তাকায়নি আজ তার দৃষ্টি ছিল একদম শীতল। যেখানে না আছে বিরক্ত না আছে রাগ। হয়তো ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে আছে। সেটা হয়তো আবিষ্কার করারা ক্ষমতা নেই। আফরিন বলে

—- ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাদের সবাইকে। কৌশাল বলে

—- ব্যাপার না। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। আহান বলে

—- এখন ঠিক আছো তো? আফরিন বলে

—– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আচ্ছা যাই হলরুমে দেখা হবে। কালক তো অনুষ্ঠান কাজ আছে।

__________

আহান আর অহনা ঝগড়া করছে অহনার মতে এখানে কাঁচাফুল দিলে ভালো হবে আর আহান বলছে সেটা নেতিয়ে যাবে। অন্যা কৌশালের সাথে সব এগিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। আর আফরিন চেয়ারে ধরে দাড়িয়ে আছে আদিত্য কাজ করছে। আফরিন প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে। আদিত্য নিচে নেমে বলে

—- আমার সাথে আসো কাজ আছে। বলেই কেন্টিনের পাশে রেস্টুরেন্টের দিকে পা বাড়ায়। আফরিনও যায় পিছে পিছে। আদিত্য বলে তুমি গিয়ে বস আমি আসছি। আফরিন বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে বসে পরে। আদিত্য একটু পর এসে তার সামনে বসে পরে।

আফরিন বলে

—- ভাইয়া আমরা এখানে কি করছি। এতে যেন আদিত্যের হেলদোল নেই সে নিজের ফোনটা বের করে৷ কৌশালকে কল দিয়ে বলে

—- একটু সামলে নে,, কৌশাল কি যেন বলে আর আদিত্য শুনে হাসে বলে

—- শালা পরে তোকে দেখে নিব ফোন রাখ।

________

একটা ওয়েটার ২টা কফি দিয়ে গেলো। আরেকটু পর চলে এলো আইসক্রিম। ইস্ট্রবেরি, চকলেট ভেনিলা ফ্লেভারের,,আফরিন বলে

—- এগুলো দিয়ে কি হবে? আদিত্য বলে

—- আগে কফিটা শেষ করে আইসক্রিম খাও নয়তো মেল্ট হয়ে যাবে। আফরিন বলে

—- আপনি এটার সাথে বিষ টিস মিক্স করেননি তো? আদিত্য রেগে বলে

—- তুমি পাগল? আর চামচ নিয়ে নিজে একচামচ মুখে নিয়ে নেয়। আর বলে এবার খাও। আফরিন বলে

—- আপনি এটা খেয়েছেন আমি কেন খাবো? আদিত্য বলে

—- একটা কথা বলবা মাথায় তুলে আছাড় মারবো। আফরিন বলে

—- আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন? আর খাবরই বা কেন? আদিত্য বলে

—- একটা পার্সেল আসবে। আর চুপচাপ শেষ করো। একটু পর পাস্তা আসবে। আফরিন বলে

—- আজব!! খাওয়াবেন ভালো কথা,, আগে পাস্তা খাওয়াতেন তারপর আইসক্রিম,, এটা আবার কেমন নিয়ম?

আদিত্য বলে

—- একটা কথা বলবা তো তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো।

আফরিন বলে

—– এই ছিল আপনার মনে ,,,, আমি জানতাম। আদিত্য বলে

—– কোন ইস্টুপিটের পাল্লায় পরেছি আমি!! তুমি খাবে না? আফরিন বলে

—– খাচ্ছিতো। তখনই একটা মেসেজ আসে আদিত্যর ফোনে আদিত্য বলে

—- তুমি এটা শেষ কর আমি পারসেল নিয়ে আসছি। আফরিন মাথা দোলিয়ে সম্মতি দেয়। তার পাস্তা, আইসক্রিম চকলেট বরাবরই অনেক পছন্দের..

চলবে