গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)
পর্বঃ08
নীল রঙের গাঢ জামদানী শাড়ি পরে ভার্সিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করছে আফরিন। নীল হিজাব, নীল শাড়ি, মুখে হালকা মেকাপ। অহনা আর অন্যার জোড়াজুড়িডে আজ শাড়ি পরেছে আফরিন। আফরিনকে দেখে থমকে গিয়েছে কারো হৃৎস্পন্দন (না হৃৎস্পন্দন থাইমা গেলে মইরা যাইবো) থমকে গিয়ছে তার দুনিয়া। তার হাতে ছিল এক গুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ। ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে তার সামনে বলে দিতে নিজের মনের কথা। অহনা আর অন্যাও সেম সাজ। তিনজন কেই সেই লাগছে
_________
আফরিন অহনা অন্যার সাথে ছবি তুলছিল তখনই একটা জুনিয়র ছেলে এসে আফরিনকে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে বলে
—- ভাবী ভাইয়া দিয়েছে। আফরিন বিরক্ত হয়ে বলে
—- আমি তোমার কোন জন্মের ভাবী? আর তোমাদের এই ভাইটা কে? ছেলেটা বলে
—- যার বউ তুমি। আচ্ছা এখন যাই কাজ আছে। তাছাড়া আজকে তোমাকে অনেকে সুন্দর লাগছে। আসি ভাবী আসসালামু আলাইকুম।
আফরিন আরো বিরক্ত অহনা আর অন্যার কাজ দেখে। অহনা বলে
—– আমাদের দিকে না তাকিয়ে চিরকুট টা খুলে দেখ।
আফরিন চিরকুটা খুলে দেখে
—- এইভাবে আসাটা কি খুব দরকার ছিল। থমকে গিয়েছে আমার দুনিয়া আরেকটু হলে নিশ্চিত মারা যাবো। এই গাঢ় কালে কাজল,,, ঠোঁটে কৃত্তিম রঙটা না লাগালেও পাড়তে। কারণ তোমার এই গোলাপের মতো ঠোঁটের কাছে এই রঙ তুচ্ছ। একটা গান আজ খুব মনে পরছে
—-Wo rang bhi kya rang hai
Milta na jo tere honth ke rang se hubahu
Wo khusbu kya khusbu
Thehre na jo teri saanwli julf ke rubaru
Tere aage ye duniya hai finki si
Mere bin tu na hogi kisi ki bhi
Aab ye jahir sare aam hai, ailaan hai
Jabtak jahan me subah shaam hai
Tab tak mere naam tu
Jabtak jahaan mein mera naam hai
Tab tak mere naam Tu
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনেনিয়)
আফরিনের মনে সংকেত দিচ্ছে নতুন অনুভূতির,, হয়তো মনে বয়ে যাচ্ছে প্রথম ভালোলাগার অবুজ অনুভূতি এক অন্য রকম ভালোলাগা। ভালোলাগার কারণটা আফরিন জানতে চায় না। কিছু ভালোগার কারণ হয় না বা খুঁজতে নেই। আফরিন চিরকুটা নিজের পার্সে রেখে নিজে ফুলটা হাতে নিয়ে নিল
________
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে সবাই হাসাহাসি গল্প করছে। আফরিনরাও মজা করছে। নাচগান ইত্যাদি বেস ভালোই লাগছে। অনেক সময় বসে থাকাতে আফরিনের পা ঝিমঝিম করছে। শাড়ির কুচি গুলোও অনেকটা এলোমেলো হয়েগেছে। আফরিন উঠে দাড়িয়ে বলে
—– তোরা থাক আমি আসছি পাটা ঝিমঝিম করছে আর কুচি গুলোও ঠিক করতে হবে। অহনা অন্যা আসতে চাইলে আফরিন বারণ করে দেয় সে বলে সে পারবে।
ওয়াশরুম থেকে মাত্রই বেরিয়ে এসেছে আফরিন। রাত হয়েছে চারদিকে একটা কেমন নিরবতা ভয় কাজ করছে। মাঠ থেকে গানের আওয়াজ আসছে। হঠাৎই কেউ পিছন থেকে এসে আফরিনের চোখ বেঁধে দেয় রুমাল দিয়ে আর হাত চেপে ধরে বলে
—- ভেবেছিলাম হয়তো আমি আজ সারপ্রাইজ দিব কিন্তু তুমি আমাকে চমকে দিলে। চলো তোমার সারপ্রাইজ বাকি।
আফরিন বলে
— কে আপনি ছাড়ুন আমাকে। ছেলেটা কিছু না বলেই কোলে তুলে নিল আফরিনকে হঠাৎ করে আফরিনকে কোলে তুলে নিলে আফরিন ভয়ে পেয়ে আকরে ধরে ছেলেটার গলা। আফরিনের নখ বড় হওয়াতে বেশ খানিকটা ছিলে যায়। ছেলেটা কিছু বলে না। তারপর সে আফরিনকে ভার্সিটির ছাঁদ নিয়ে চোখ খুলে দিয়ে চলে যায়। আফরিন চোখ মেলে অবাক প্রদীপ দিয়ে খুব সুন্দর করে বিশাল বড় ছাদে আই লাভ ইউ লেখা। আর একটু পরই ফানুশ উড়তে লাগে। আফরিন যেন হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে। হঠাৎ করে সেই ব্যাক্তির কথা মনে পরতেই সে দৌড়ে নিচে নামতে থাকে।
____________
শাড়িতে বেজে পড়ে যেতে চাইলে কেউ তাকে ধরে ফেলে। আফরিন ভালো করে তাকিয়ে দেখে আদিত্য। আদিত্য আজ নীল রাত পান্ঞ্জাবি আর সাদা পাজামা। বেশ সুন্দর লাগছে। আফরিন ভালোভাবে দাড়িয়ে বলে
—- ধন্যবাদ ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া আপনিকি এখান থেকে কোনো ছেলেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন?
আদিত্য বলে
—- কই নাতো? কেন আশিক নাকি? আর এখন তুমি এখানে? আফরিন আনমনে বলে
— আশিক না ছাই,,,, সাইকো একটা। আদিত্য সেটা শুনে হাসি দিয়ে বলে
—- সাইকো নামটা খারাপ না। কিন্তু এখানে কি কর? আর সাইকোটাই বা কে
—- আফরিন বলে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। আদিত্য বলে
—- তোমাকেতো দেখলাম ছাঁদ থেকে আসতে। তা সাইকো কি সেখানে ছিল? আফরিন বলে
—- যেদিন আমি সইকোটাকে দেখতে পারবো ঐদিন আপনিও দেখেন।
_______
আজ আফরিন আর অন্যা অহনাদের বাসায় থাকবে। আফরিনদের বাসা ভার্সিটি থেকে অনেক দূরে। শাওয়ান গিয়েছে কাজের জন্য সিলেট। আর তার বাবার ফিরতে অনেক লেট হবে। কৌশালদের মা-বাবা গিয়েছে গ্রামে। তাই সব মিলিয়ে তারা আজ অহনাদের বাসায় থাকবে। কৌশালও কম না সেও তার ২ বন্ধুকে নিয়ে এসেছে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই এক সাথে বাসায় ফিরেছে।
সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। কৌশাল বলে
—- আফরিন কিছু খাবে? আফরিন বলে
—- নুডলস হলে মন্দ হয় না। অহনা বলে
—- তাহলে তোমরা মুভি দেখ আমি আর আফরিন অন্যা যাচ্ছি নুডলস বানাতে। কিছু সময় পরই সবাই,একসাথে খেতে বসে। আফরিন বলে
—- এইভাবে বরিং লাগছে চলো ট্রুথ আর ডেয়ার খেলি? সবাই রাজী বোতাল ঘুরানো হলো প্রথম গেলো আহানের দিকে। আহান বলে
—- আমি সত্যবাদী টাই সত্য মানে ট্রুথ। আফরিন দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে
—- কয়টা প্রেম করছ? আহান মুখটা ছোট করে বলে
—- শালীকা তুমি এমন চিপায় আমাকে না ফালায় আমার হাতের আঙুল দরজার চিপায় রেখে চাপ দিতা বাইচা যাইতাম। আমি এই অহনাকেই লাভ করছি। অহনা বলে
— সত্যি তো? আহান বলে
—- হু মেরি জান। তারপর আবার বোতল ঘুরানো হয় যায় আদিত্যর দিকে। আহান বলে
—- আদিত্য কি নিবি? আদিত্য নুডলস চিবাতে চিবাতে বলল
—- ডেয়ার। কৌশাল বলে।।
— গান গাইতে হবে। কারণ তুই গান গাইতে পারিস ভালো। বলেই গিটার নিতে চলে গেলো। আদিত্য আজ বাধাঁ দিলো না। কৌশাল গিটার হাতে নিয়ে আসে আদিত্য পানিটা খেয়ে বললো
—– কোন গান শুনবি? আহান বলে
— তোর যেটা ইচ্ছে। আদিত্য গিটারে টুংটাং সুর তুলতে তুলতে গাইতে লাগলো
—- তুই আরেকটু আনমনে থাক
উড়ে যাক তোর কবিতা মাখা চুল।
এই শহরে হাজারো প্রেমিকেরা তোর ভালো চায়।
বলে তাই।
উপন্যাসের বন্যা দিয়ে মিছিল করে যায়।
আমি অলস তাই পিছে পরে রই।
দিশেহারা তুই আর আমি মিলে দুই
আমার নীল আকাশ ছিড়ে উড়ে গেলি তুই।
আমার বোকা অভিমান
তাসে হেরে যাওয়া দান।
তোর পুরনো কাগজে আমি মাথা গুজে শুই।
তোর পুরনো কাগজে আমি মাথা গুজে শুই।
একটা লম্বা টান দিয়ে থেমে যায় আদিত্য। আফরিন গানটা শুনে বেস ভালো লেগেছে সে বলে
—- বাহ ভাইয়া আপনার গানের গলাতো বেশ ভালো। আদিত্য কিছু না বলে নুডলস খাওয়াতে মন দেয়। আফরিন একটা ভেংচি কেটে খেলায় মন দেয়। তারপর বোতল ঘুরালে বোতলটা যায় অন্যার দিকে অন্য বলে
—– ডেয়ার। আফরিন বাঁকা হাসি দিয়ে বলে
— ঐদিন আমাকে এই এনাকন্ডার তালগাছ মানে আদিত্য ভািয়াকে প্রপোজ করতে বলেছিলি না এখন তুই কৌশাল ভাইয়াকে প্রপোজ করবি।
চলবে।