তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-১০+১১

0
637

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১০

সাফাত বন্যাকে কিছু না বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা ভার্সিটি চলে আসে। সাফাত ভার্সিটিতে প্রবেশ। করেই দেখে কণা ঐশির সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। সাফাত দৌড়ে গিয়ে কণাকে জড়িয়ে ধরে। কণা তৎক্ষণাত সাফাতকে নিজের থেকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দেয়। সাফাত অবাক হয়ে কণার দিকে তাকিয়ে আছে।

সাথে সাথেই একটা গুলি কণা আর সাফাতের মাঝখান দিয়ে চলে যায়। একটুর জন্য গুলিটা সাফাতে শরীরে লাগেনি। সাফাতের শরীর ঘেষে গিয়ে একটা গাছের সাথে লাগে। বিষ্ময়ে সাফাতের চোখ মুখ বড় হয়ে গেছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না এসব কী হচ্ছে? কিন্তু কণার চোখ মুখ একদম স্বাভাবিক।

যেনো সে জানতো এমন কিছু একটাই হবে। সাফাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে এসে সাফাতকে জড়িয়ে ধরে। সেই সুযোগে কণা দ্রুত পা চালিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। সাফাত লোকটার সাথে কুশল বিনিময় করে কণার পিছনে ছুটতে থাকে। কণা ততক্ষণে রাস্তায় চলে আসে। কণা রাস্তার পাশে আসতেই একটা গাড়ি থেকে কালো পোশাক পরিহিত কিছু লোক নেমে কণাকে অঙ্গান করে গাড়িতে তুলে নেয়।

সাফাত কণার থেকে অনেকটা দূরে থাকায়। সাফাত দৌড়ে আসতে আসতে গাড়িটা অন্য গাড়ির ভীরে হারিয়ে যায়।

২১

কণাকে একটা রুমে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়ছে। কিছুক্ষণ আগেই কণার ঙ্গান ফিরিছে। ঙ্গান ফেরার পর থেকেই কণা বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু কিছুতেই হাতের বাধন খুলতে পারছে না। হাত মুচরা মুচরি করার ফলে দড়ি দিয়ে হাত ছিলে গেছে। তখনি একটা লোক রুমে প্রবেশ করে। কণা ভাবে আগে যেই লোকটা তাকে কিডন্যাপ করেছিল সেই লোকটা।

এতো ছটফট করছো কেনো জানেমান?

কণা লোকটার কন্ঠ শুনে বুঝতে পারে এটা সেই লোক না। কণা লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা মুখে মাস্ক পড়ে আছে। লোকটার শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। কণার এই চোখ দুটো অনেক চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে এই চোখ দুটো সে আগেও দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না।

কে আপনি?

লোকটা কোনো কথা না বলে কণার সামনে রাখা চেয়ারটাই বসে। কণার মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। কণা মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেনো জানি তার এই লোকটাকে দেখে রাগ লাগছে।

রাগলে তোমাকে অনেক হট লাগে। ( চোখ টিপ দিয়ে )

আপনার এইসব বাঁজে কথা বন্ধ করুন। আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন?

তোমাকে কিডন্যাপ করার একমাত্র কারণ হচ্ছে তোমাকে সাফাতের থেকে আলাদা করা।
তুমি যখন কাজের কথায় আসতে চাইছো তাহলে আমিও বলি। গত চার মাস ধরে তোমার সাথে যা হচ্ছে সব আমি করেছি। তোমার ফোনে যে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ যাই সেগুলোও আমিই দেই।

এসব করে আপনার লাভ কী?

এসব লাভ লোকসান তোমাকে জানতে হবে না। তোমাকে বলেছিলাম না এই শহর ছেড়ে চলে যেতে। তাহলে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছো কেনো? ( রেগে হুংকার দিয়ে বলে)

তুমি এই শহর ছেড়ে চলে যাও নাহলে তোমার ভাই সাফাতকে আমি খুন করে ফেলবো। এই মেসেজটা আপনি দিয়েছিলেন তাই না?

হ্যাঁ।

আমি তো আপনার কথা মতো চলে গিয়েছিলাম। তাহলে আপনি ভাইয়া ওপর এ্যাটাক কেনো করেছেন?

তুমি আবার ফিরে এসেছো তাই।

আমি কী আপনার জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিব?

আমি তো তোমাকে পড়াশোনা বাদ দিতে বলি নাই। তুমি শুধু সাফাতের থেকে দূরে থাকবা।

আমি কেনো আপনার কথা শুনে আমার নিজের ভাইয়ের থেকে দূরে থাকবো? আর আপনি এসব কেনো করছেন? আপনার সাথে আমার কীসের শত্রুতা।

তোমার নিজের ভাইয়ার জীবন বাঁচানোর জন্য তুমি আমার কথা শুনবা। তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। ইনফ্যাক্ট তোমার ভাইয়ের সাথেও আমার কোনো শত্রুতা নেই। তোমার ভাইকে তো আমি ভালো করে চিনিও না। আমার শত্রুতা হচ্ছে তোমার বাবার সাথে।
তোমার আর ভাইয়ের ঝগড়া দেখে যখন ঐ তিশান আহম্মেদ কষ্ট পাবে তখন আমি মানসিক শান্তি পাব। আমার এক পৈশাচিক আনন্দ হবে। আমি প্লেন চেইন্জ করে ফেলছি। তোমাকে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলাম না। এখন আর এই শহর ছেড়ে যেতে হবে না। এই শহরেই থাকবে তবে তোমার ভাইয়ের থেকে দূরে। সাফাত তোমার সাথে কথা বলতে আসলে ওর সাথে দুর্ব্যবহার করবে। কথায় কথায় সাফাতকে অপমান করবে। আমার কথা মতো চলবে। যদি আমার কথা মতো না চলো সুন্দরী তোমার ভাইয়ের প্রাণ পাখি ফুরুৎ।

না না এসব করার দরকার নেই। আমি আপনার সব কথা শুনে চলবো। ভাইয়াকে কিছু করবেন নাহ।

এই তো গুড গার্ল। তুমি না অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। এই জন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে। শুনো তিড়িং বিড়িং কিছু করার চেষ্টা করো না। তোমার ওপর আমার লোকেরা ২৪ ঘন্টা নজর রাখবে। তুমি কোনো ভুল করবা তো তোমার পরিবারের ক্ষতি হবে কণা পাখি। যাও এখন বাসায় চলে যাও। আমার লোকেরা তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিবে।

২২

কণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ল্যাম্প পোস্টের আলোয় রাতের ব্যস্ত শহর দেখছে। কণার রাতের শহর দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আগে সে আর সাফাত তিশান আহম্মেদ ঘুমিয়ে পড়লে প্রায়ই বাইকে করে রাতের ঢাকা শহর দেখতে বের হতো। দুইজন এক সাথে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খেতো। এখন তো এসব ধুলোময় স্মৃতি হয়ে গেছে। কণার ভাবনায় ছেদ ঘটে ফোনের শব্দে। কণা বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের স্কিনে হিরো আলমের ছবি ঝলঝল করছে। কণার আর বুঝতে বেগ পেতে হয়ে না কে কল করেছে। কণা তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে।

কীরে হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ কী খবর? হিরো আলম কেমন আছে?

অহি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, একদম আমাকে হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ বলবি না। তুই তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ।

লে টেপ রেকর্ডার স্টার্ট হয়ে গেছে।

অহি কণার কথায় অভিমানে গাল ফুলায়। মেয়েটা সব সময় তার সাথে এমন করে। সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিলেও এমন করে।

যা তোর সাথে আর কথা বলবো না। তোকে আর কোনোদিন ফোনও দিব না।

আরে রাগ করিস না। দুই দিন ধরে তোকে এমনিতেই ফোন পাচ্ছি না। আমার কতো টেনশন হচ্ছিল জানিস। আমি আর ঐশি তোকে অনেক বেশি মিস করি। আমরা তিন জন একসাথে থাকলে কতো ভালো হতো। কিন্তু তুই হুট করেই এখান থেকে চলে গেলি কাউকে কিছু না বলে। অন্য একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলি।

অহি গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চলে আসার কারণটা তো কাউকে বলা হয়নি। হয়তো কোনোদিন বলাও হবে না। নিজের মনের কথাগুলো নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথেও শেয়ার করতে পারে না। মনের কথাগুলো যদি কণাকে বলে তাহলে অনেকগুলো সম্পর্ক এলোমেলো হয়ে যাবে। সব সম্পর্ক ছন্নছাড়া হয়ে যাবে।

এক তরফা ভালোবাসাগুলো অনেক কষ্টের। একজন শুধু নিরবে ভালোবেসেই যায় আর অপরজন সেই ভালোবাসার কথা কখনো জানতেই পারে না। আরেক দিকে এক তরফা ভালোবাসাগুলো অনেক আনন্দের। এক তরফা ভালোবাসায় না থাকে কোনো চাওয়া, না থাকে কোনো পাওয়া আর না কোনো চাহিদা। একজন শুধু নিরবে ভালোবাসা দিয়েই যায়।

২৩

কণা ৩০ মিনিটের মতো মর্নিং ওয়াক করে ডান্স ক্লাসে যায়। কণার নিজের একটা ডান্স স্কুল আছে। কণা নিজেই ছোট ছোট বাচ্চাদের ডান্স শেখাই। তার কাছে ১০ টা বাচ্চা ডান্স শিখতে আসে। সব বাচ্চারা কণা আপু বলতে পাগল। তারা এখনো কণাকে দেখে নাই। হয়তো দেখলে কণার কুৎসিত চেহেরা দেখে তারাও ভয় পেয়ে যেতো। এটা কণার ধারণা। এসব কথা ভেবে কণা মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

এক ঘন্টার মতো ডান্স শিখিয়ে কণা বাসায় আসে। কলিংবেল বাজাতেই তিশান আহম্মেদ এসে দরজা খুলে দেন। কণা ড্রয়িংরুমে যেতেই অবাক হয়ে যায়। সোফায় বসে থাকা লোকটাকে দেখে সে চমকে ওঠে। এখন সে কী করবে? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।

চলবে……….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১১

এক ঘন্টার মতো ডান্স শিখিয়ে কণা বাসায় আসে। কলিংবেল বাজাতেই তিশান আহম্মেদ এসে দরজা খুলে দেন। কণা ড্রয়িংরুমে যেতেই অবাক হয়ে যায়। সোফায় বসে থাকা লোকটাকে দেখে সে চমকে ওঠে। এখন সে কী করবে? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। সে কী করে তার ভাইয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।

পারবে না সে তার ভাইয়ের সাথে মিস বিহেভ করতে। কিন্তু সাফাতকে অপমান না করলে যে ঐ লোকটা সাফাতকে মেরে ফেলবে। কণা কিছু না বলে হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। এতে সাফাতের কিঞ্চিত খারাপ লাগে। কিন্তু সাফাত নিজের খারাপ লাগাকে পাত্তা দেয় না। সে ভাবে কণা হয়তো তার ওপর এখনো অভিমান করে আছে। সাফাত সোফা থেকে ওঠে কণার পিছু পিছু যায়। কিন্তু কণা সাফাতের মুখের ওপর ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

এতে সাফাত হো হো করে এসে দেয়। তার বোনটা একটুও পাল্টায়নি ঠিক আগের মতোই আছে। কণা ছোটবেলা থেকে সাফাতের ওপর রেগে গেলে সাফাতের সাথে কথা বলে না। রুমের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। সাফাত দুই তিন বার দরজায় করাঘাত করে। কিন্তু কণা দরজা খুলে না। সাফাত চেঁচিয়ে বলে,

কণা দরজা খুল। খুলবি না দরজা? যা খুলতে হবে না দরজা। আমিও দেখি তুই কতক্ষণ আমার ওপর রেগে থাকতে পারিস। আজকে থেকে তো আমি এখানেই থাকবো। আমি তোর অভিমান ভাঙিয়েই ছাড়বো।

সাফাত এখানে থাকবে শুনেই কণার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। যার কাছ থেকে দূরে থাকতে চায় সেই কাছে চলে আসে। সাফাত এখানে থাকলে তাকে প্রতিমুহূর্তে সাফাতের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হবে।

২৪

আভিয়ান আজকে প্রায় এক মাস পরে নিজের বাসায় যাচ্ছে। আভিয়ান হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। কলিংবেল বাজাতেই পঞ্চাশ উর্ধ বয়সী এক মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়। মহিলাটির পড়নে কালো রঙের একটা সুতি শাড়ি। চোখে হাই পাওয়ারী চশমা। মাথার বেশ কিছু চুলে পাক ধরে গেছে। আভিয়ান মহিলাটিকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।

কেমন আছো মাম্মি?

আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস বাবা?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। মাম্মি পাপা আর অহি কোথায়?

তোর পাপা অফিসে গেছে আর অহি রুমে।

আমি আসছি শুনতে পায় নাই। ঐ শাকচুন্নি কই তুই? নতুন বউয়ের মতো ঘরের ভিতর লুকিয়ে আছিস কেনো?

অহি নিজের রুম থেকে বের হয় চোখ গরম করে আভিয়ানের দিকে তাকায়। আভিয়ানের চুলে ধরে টেনে বলে,

চলে আসছে বিদেশি বান্দর। আমি শাকচুন্নি না তোর বউ শাকচুন্নি।

আভিয়ান অহির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

আমার বউ কিন্তু তোর বান্ধবীই হবে। তার মানে তোর বান্ধবী শাকচুন্নি। আর শাকচুন্নির সাথে কোনো মানুষের ফ্রেন্ডশিপ হতে পারে না। তাই তুইও শাকচুন্নি।

মহুয়া জাহান আভিয়ানকে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়ার কথা বলে দ্রুত পা চালিয়ে কিচেনে চলে যান। তিনি জানেন আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে নিজেই লজ্জায় পড়ে যাবেন। এখনি তার ছেলে মেয়েরা লাগামহীন কথা বার্তা বলা শুরু করবে। তারা বেমালুম ভুলে যাবে যে তাদের সাথে তাদের মাও আছে।

তোর মতো কাইল্লার লগে আমি আমার বান্ধবীর বিয়ে দিব না।

আমি কাইল্লা না তুই কাইল্লা। দেখ আমি তোর থেকে কতো বেশি ফর্সা।

ফর্সা হয়ে লাভ কী? কোনো মেয়ে তো পাত্তা দেয় না। আমার আলা ভুলা বান্ধবীটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের গফ বানিয়ে নিয়েছিস। আর এদিকে আমাকে দেখ দিনে ১০ টা প্রোপোজেল পাই।

এতো প্রোপোজেল পেয়ে লাভ কী? জীবনে তো একটা প্রেমও করতে পারলি না। চিরকালের সিঙ্গেল। তাই ভাব কমায়া ল। আমি ভুলি ভালিয়ে আর যেভাবেই হোক প্রেম তো করি তুই তো সেটাও পারিস না। প্রেম করতে হলেও একটা যোগ্যতা লাগে। যেটা তোর নাই।

দেখ………….

তোরা আবার শুরু করছিস। একসাথে হলেই দুইটা শুধু ঝগড়া করে। আর একটু দুরে গেলেই একজন আরেক জনকে ছাড়া বাঁচে না।

বাহ বাহ মটু জিয়ানের বউ দেখা যায় এখানে। কীরে ফক্কিনি আমাদের বাসায় কী করিস?

দেখো ভাইয়া একদম ফাইজলামি করবা না।

নওমির কথা শুনে আভিয়ান আর অহি দুই জনই চোখ বড় বড় করে নওমির দিকে তাকায়। দুজনের যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না নওমি আভিয়ানকে ভাইয়া ডাকছে। আভিয়ান পড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করতেই অহি ধরে ফেলে। অহি অবিশ্বাস্য সুরে বলে,

ভাই আমি কী স্বপ্ন দেখছি?

অহিরে আমারো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। যে মেয়েকে আমি চড়ায়া থাপড়ায়া ভাই ডাকাতে পারতাম না। সেই মেয়ে আজকে নিজে থেকে আমাকে ভাইয়া ডাকছে। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। সবই মটু জিয়ানের কামাল। জয় বাবা মটু জিয়ানের জয়।

আভিয়ানের কথা বলার ধরন দেখে অহি ফিক করে হেসে দেয়। নওমি চোখ রাঙিয়ে আভিয়ানের দিকে তাকায়। আভিয়ান হো হো করে হেসে দেয়।

[ আপানারা অনেকে সম্পর্কগুলো নিয়ে কনফিউশনে আছেন। সম্পর্কগুলো আপনাদের ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। সাফাত আর কণা হচ্ছে আপন দুই ভাই বোন। সাফাতের গার্লফ্রেন্ড বন্যা। আভিয়ান আর অহি হচ্ছে আপন দুই ভাই বোন। আভিয়ান আর অহির মামাতো বোন নওমি। নওমির বয়ফ্রেন্ড জিয়ান। আভিয়ানের গার্লফ্রেন্ড ঐশি। ঐশি, কণা আর অহি হচ্ছে বেস্টফ্রেন্ড। ]

২৫

কণা পার্কে একটা লেকের সামনে বেঞ্চে বসে আছে। কণা চোখ দুটো লেকের টলমলে পানির দিকে স্থির। কণার মাথায় কিছু আসছে না। সে কী করবে? ভেবে পাচ্ছে না। সাফাত যতক্ষণ বাসায় ছিল ততক্ষণ কণা রুম থেকে বের হয়নি। সাফাত একটা জরুরী কাজে ভার্সিটি যেতেই কণা বাসা থেকে বের হয়ে আসে। কণা নিজের পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পাশ ফিরে তাকায়। নিজের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে কণা চমকে ওঠে। তার পাশে বসে থাকা ব্যক্তিটা যে বন্যা। কণা আরেক দিকে ফিরে স্কাফটা আরেকটু টেনে ভালো করে নিজের মুখটা ঢেকে নেয়।

কণা তুমি আমার কাছ থেকে কী লুকাতে চাইছো?

আমি আবার তোমার কাছ থেকে কী লুকাবো?

কেনো তুমি আমার সাথে লুকোচুরি খেলা খেলছো? তুমি কী ভাবছো আমি কিছু জানি না? আমি সব জানি। তোমার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনাটা আমি জানি। তুমি কী ভেবেছিলে তোমাকে দেখলে আমি সবার মতো তোমাকে ঘৃণা করবো? আমি তেমন মেয়ে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেও সেই সুখটা বেশি দিন টিকেনি। আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকেই কষ্ট করে বড় হয়েছি। বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরেই মা আমাকে নিয়ে নানা বাড়ি চলে যায়। নানা বাড়ি যাওয়ার মাসেক খানি পরেই মা আবার নতুন করে বিয়ের পিড়িতে বসে। লাল বেনারসি পড়ে বউ সাজে। তখন মা আমার কথা একটা বার চিন্তা করেনি নিজের সুখটায় বেছে নিয়েছিল। একবার ভাবেনি তাকে ছেড়ে আমি কী করে থাকবো? আমি নিজের চোখে নিজের মায়ের বিয়ে দেখেছি অন্য একটা লোকের সাথে। এর থেকে কষ্টের হয়তো কিছু ছিল না। মা যখন বিয়ে করে তার নতুন স্বামীর সাথে গাড়িতে ওঠছিল তখন আমি চিৎকার করে মাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু মা আমার কথা শুনেনি। আমার কান্না আম্মুর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। আমার কথা না ভেবে চলে গিয়েছিল ঐ লোকটার সাথে। তারপর থেকেই অবহেলায় অনাদরে বড় হতে থাকি। প্রথম কয়েক মাস আম্মু আমার খোঁজ নিলেও পড়ে আর আম্মু আমার খোঁজ নেয়নি। আম্মু যখন ৭ মাসের প্র্যাগনেন্ট তখন উনার দ্বিতীয় স্বামিকে নিয়ে কানাডায় চলে যায়। কানাডায় চলে যাওয়ার পর আম্মু নানা বাড়ির সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আম্মু কেমন আছে? কোথায় আছে কোনো খবর আমি জানি না। হয়তো সুখেই আছে। তবে আম্মুর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। সবারই তো ভালো থাকার অধিকার আছে।

বন্যার কথা শুনে কণা কেঁদেই ফেলেছে। তার তো সবই আছে শুধু চেহেরা নেই। এই নিয়ে সে কতো হতাশা। মরে যেতে চায়। আর বন্যা? তার তো কেউ নেই। এই পৃথিবীতে একা বড্ড একা। তাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই। তবু মেয়েটার মুখ থেকে একটু ক্ষণের জন্যও হাসি সরে না। কণা বন্যাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। বন্যার চোখের কোণেও অভি চিক চিক করছে। অনেক বছর পর তার চোখে অশ্রু এলো। মা-বাবাকে হারিয়ে যেনো সে কাঁদতেই ভুলে গিয়েছিল।

২৬

আদ্রিয়ান তার বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সে রিলেক্সে বসে আছে। কারণ ছোঁয়া এখনো ভার্সিটিতে আসে নাই। আসলেই শুধু তার সাথে চিপকে থাকে। এটা এখন তার অসহ্য লাগে। আদ্রিয়ানের এক জিনিস বেশিদিন ভালো লাগে না। তাই তো ছোঁয়াকে তার এখন আর ভালো লাগে না। হঠাও আদ্রিয়ানের সামনে দিয়ে এটা মেয়ে যায়। মেয়েটার ওপর যেনো আদ্রিয়ানের চোখ দুটো আটকে যায়।

চলবে……….