তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-১২+১৩

0
601

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১২

আদ্রিয়ান তার বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সে রিলেক্সে বসে আছে। কারণ ছোঁয়া এখনো ভার্সিটিতে আসে নাই। আসলেই শুধু তার সাথে চিপকে থাকে। এটা এখন তার অসহ্য লাগে। আদ্রিয়ানের এক জিনিস বেশিদিন ভালো লাগে না। তাই তো ছোঁয়াকে তার এখন আর ভালো লাগে না। হঠাও আদ্রিয়ানের সামনে দিয়ে একটা মেয়ে যায়। মেয়েটা একটা লাল রঙের থ্রি-পিছ পড়ে আছে। ফর্সা শরীরে লাল রঙটা যেনো ফুটে ওঠেছে।

মেয়েটার ঠোঁটের কোণে নজড়কাড়া হাসি। এই
হাসি যেকোনো ছেলেকে গায়েল করে দিতে পারে। মেয়েটা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। মেয়েটার ওপর যেনো আদ্রিয়ানের চোখ দুটো আটকে যায়। আদ্রিয়ানের চোখের পলক পড়ছে না। এই মেয়েটাও কণার মতোই সুন্দরী। না না কণার থেকেও বেশি সুন্দরী। নিজের অজান্তেই আদ্রিয়ানের হাত তার বুকের বা পাশে চলে যায়।

হঠাৎ করেই মেয়েটি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। আদ্রিয়ানের কাছে মনে হচ্ছে এই হাসিটা তার বুকে গিয়ে লাগছে।
আদ্রিয়ান পড়ে যেতে নিলেই তার বন্ধরা ধরে ফেলে। মেয়েটা হেলেদুলে চলে যায়। আদ্রিয়ান তার এক ফ্রেন্ডকে জিঙ্গেস করে,

মেয়েটা কে? আগে তো দেখি নাই ভার্সিটিতে।

মেয়েটা মনে হয় নতুন। আমিও আগে কোনোদিন দেখি নাই।

মেয়েটার ফুল ডিটেলস আমার চাই। আজকের মাঝেই।

কী মামা ভাল্লাগছে নাকি? তা কয়দিনের জন্য রিলেশনে যাবা? তোমার তো আবার এক জিনিস বেশি দিন ভালো লাগে না।

শুধু ভালো লাগেনি প্রেমে পড়ে গেছি ওর। কয়দিনের জন্য না সারাজীবনের জন্য ওকে চাই। ওর রূপ আমাকে পাগল করে দিয়েছে। ওর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলা আমার মন কেড়ে নিয়েছে। ওর ঐ মনকাড়া হাসি আমার হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ তুলে দিয়েছে।

ফাহিমের এসব অসহ্য লাগছে। আদ্রিয়ানের কথা বার্তাও অসহ্য লাগছে। এতো আদিখ্যেতা তার গা রীতিমত জ্বলে যাচ্ছে। একটা মানুষ এতো নোংরা মনের কী করে হতে পারে সে ভেবে পায় না। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ঢং শুরু করে দেয়। সাথে আছে কতোগুলো চাইমছা। কতোগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। অন্য মেয়েদের জন্য তার কষ্ট হয় না বা এতো খারাপ লাগে না। কিন্তু কণা? কণাকে তো সেও মনে মনে পছন্দ করতো। এখনো করে। তার কাছে কারো চেহেরা মেটার করে না। সে কণাকে ভালোবাসে কণার মনকে ভালোবাসে, কণার সৌন্দর্যকে না। সে মনের কথা কণার সামনে প্রকাশ করে না। সে জানে কণা কোনোদিনও তার ভালোবাসা এক্সসেপ্ট করবে না। কণা যে তাকেও আদ্রিয়ান আর বাকিদের মতো ভাবে। ফাহিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওঠে চলে যায়।

২৭

সময়টা এখন গৌধুলি লগ্ন। সাফাতের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে কণা। সাফাত বোনের মাথায় আলতো ভাবে সেহ্নের সাথে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে কণা। এটাই যে তার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।

কণা কিছুক্ষণ আগেই সাফাতকে সব বলে দিয়েছে। এর পর থেকেই সাফাত ভাবছে কে তাদের সাথে এমন করছে। কার সাথে তার বাবার শত্রুতা থাকতে পারে। তাকে সবকিছু খোঁজে বের করতে হবে।

সাফাত এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় ঘুমিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই কণার ঘুম ভেঙে যায়। কণা ঘুম থেকে ওঠে দেখে সাফাত ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ সাফাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই কণার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হয়। কণা সাফাতের মুখে ফুঁ দেয়। সাফাত নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

কণা এবার সাফাতের চুল ধরে টেয় টান। সাফাত ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে। সাফাতকে এভাবে ওঠতে দেখে কণা খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। সাফাত প্রথমে বিরক্ত হলেও কণার হাসি দেখে তার মনটা ভালো হয়ে যায়। তার ঠোঁটের কোণে দেখা দেয় হাসির রেখা। সাফাত কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলে,

তুই আমার চুলে ধরে টান দিয়েছিস না দেখ আমি তোর চুলের কি করি।

সাফাত কণার লম্বা চুলে ধরে টান দেয়। কণাও সাফাতের চুল টেনে ধরে। দুপুরবেলা সাফাত আর কণা লাঞ্চ করেনি। তাই কণা আর সাফাতকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলেন তাহসিন আহম্মেদ। দুই ভাই বোনের এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখে উনার বুকের ওপর থেকে একটা বোঝা নেমে যায়। অবশেষে দুই ভাই বোনের মান অভিমানের পালা শেষ হলো। উনি স্মিত হেসে চলে যান।

২৮

শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে এক সুদর্শন যুবক। কাউকে ফোন করতে করতে গিয়ে সোফায় বসে। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো এক হাতে পিছনে ঠেলে দেয়। গম্ভীর মুখে কথা বলছে। কথা বলার মাঝেই ওপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরছে। এক আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করছে। মনে হচ্ছে কোনো ইম্পর্টেন্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

শ্যামরাঙা ছেলেটিকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সামনে বসে থাকা রমনী। ছেলেটির প্রত্যেকটা মুভমেন্ট ফলো করছে। তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে এক মধ্যবয়স্ক মহিলা।

ফুফি তোমার ছেলে এতো কিউট কেনো? দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। পুরাই চকলেট টাইপ। টসটসে গালগুলো দেখলেই ইচ্ছে করে টেনে দেই। হাসলে যেনো তার চোখও হাসে। গালের টোলগুলো দেখলেই ইচ্ছে করে লবণ রেখে বড়ুই খাই। আর ঠোঁট কামড়ানো দেখলে ঠাস ঠুস চুমু খেতে ইচ্ছে করে।

মেয়েটির কথা শেষ করতেই মহিলাটি মেয়েটির পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,

আরুহি তুই দিন দিন বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছিস। আমি যে তোর বড় সেটা তুই ভুলে যাচ্ছিস। আমার সামনে বুঝে শুনে কথা বলবি না।

তোমার সামনে বুঝে শুনে কথা বলতে হবে না কি? তুমি আমার ফুফি না আমার বান্ধবী। যার সাথে আমি সব শেয়ার করতে পারি। তোমার ছেলেকে একটু জ্বালিয়ে আসি।

কথাটা শেষ করেই আরুহি গিয়ে ঐ ছেলেটির পাশে বসে পড়ে। আস্তে আস্তে ছেলেটির গা ঘেষে বসতে শুরু করে। ছেলেটি ফোন কানে রেখেই আরুহির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জেনো চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেবে। এতে আরুহির কোনো হেলদুল নেই। সে আরোও গা ঘেষে বসতে শুরু করে। ফোনটা রেখে দিয়ে বলে,

হোয়াট দ্যা হেল। এসব কোন ধরনের বিহেভিয়ার।

আদিয়াত জানু তুমি এমন করছো কেনো? হুম? কিছুদিন পরে তো আমাদের বিয়ে। আমি তো তোমার পাশে বসতেই পারি।

কথাটা বলেই আরুহি আদিয়াতের হাত ধরে ফেলে। আরুহির হাত ধরতে হয়তো দেরি হয়েছে কিন্তু আদিয়াতের আরুহিকে ধাক্কা দিতে দেরি হয়নি। আরুহি ধাক্কা খেয়ে সোফার ওপর পড়ে যায়। আদিয়াত গম্ভীর কন্ঠে বলে,

কিছুদিন পরে কেনো কয়েক বছর পরেও আমি তোকে বিয়ে করবো না। কয়েক বছর না আমার এ জীবনে তোকে বিয়ে করবো না। মাম্মা তোমার ভাইয়ের মেয়েকে বলো আমার থেকে যাতে দূরে থাকে। তুমি ভালো করেই জানো রাগ ওঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আর নেক্সট টাইম আমাকে এসব জানু ফানু বলে ডাকবি না। আমি তোর থেকে বয়সে বড় তাই ভাইয়া বলে ডাকবি। মনে থাকে যেনো।

বিয়ে করলে তোকে আরুহিকেই করতে হবে এবং এই মাসেই।

মাম্মা তুমি ভালো করেই জানো আমি একজনকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে কল্পনা করতে পারি না। বিয়ে করলে আমি তাকেই করবো অন্য কাউকে না।

কথাগুলো বলেই আদিয়ান হনহনিয়ে চলে যায়।

২৯

কণা ভার্সিটি যাচ্ছিল হঠাৎ দেখে একটা বাচ্চা ছেলে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটির আশেপাশে কেউ নেই। কণা খেয়াল করে বাচ্চাটার দিকে একটা গাড়ি তেড়ে আসছে। কণা তাড়াতাড়ি গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রাস্তার পাশে চলে আসে। এসব দৌড়াদৌড়ির মাঝে কখন যে পিন খুলে গিয়ে মুখের ওপর থেকে স্কাফ সরে গেছে সেটা কণা খেয়ালই করে নাই।

বাচ্চাটি কণার মুখ দেখার সাথে সাথেই চিংকার শুরু করে। বাচ্চাটির মা দোকান থেকে বের হয়েই কণার কোল থেকে টান দিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে নেয়।

আমার বাচ্চাকে কোলে নেন কোন সাহসে। আমার বাচ্চাকে ধরার আগে আমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছেন। এতোই যখন বাচ্চা কোলে নেওয়ার সখ নিজে একটা বাচ্চা জন্ম দিয়ে পরে কোলে নিয়ে বসে থাকেন। নিজের চেহেরাটা তো একবার দেখবেন। কেমন বিশ্রী? আমারি তো দেখে ভয় করছে। বাচ্চারা তো ভয় পেয়ে কাঁদবেই। কোন কুক্ষণে যে দোকানে আসতে গেলাম। দোকানে না আসলে তো এমন অপয়া মেয়ের মুখ দেখতে হতো না।

কণা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। কারো উপকার করলে যে এতো কথা শুনতে হবে কণা ভাবেইনি। মহিলাটি কণাকে অপমান করেই যাচ্ছে। তখন একটা লোক দৌড়ে আসে।

চলবে…….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৩

কণা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। কারো উপকার করলে যে এতো কথা শুনতে হবে কণা ভাবেইনি। মহিলাটি কণাকে অপমান করেই যাচ্ছে। তখন একটা লোক দৌড়ে আসে। লোকটা এসেই মহিলাটিকে ধমক দেয়। ভয়ে মহিলাটি কেঁপে ওঠে। ভদ্রলোকটা হয়তো মহিলাটি স্বামী। ভদ্রলোকটা কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

ধন্যবাদ আপু। আপনি যে আমার কতো বড় উপকার করেছেন সেটা আপনি নিজেও জানেন না। আপনার জন্য আজকে আমার ছেলের জীবন বেঁচে গেলো। ধন্যবাদ দিলেও আপনাকে কম হয়ে যাবে। আপনার কাছে সারাজীবন আমি ঋণী হয়ে থাকবো। কোনোদিন যদি কোনো ভাবে আপনার উপকারে আসতে পারি। তাহলে নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপনার উপকার করার চেষ্টা করবো। আর ওর ব্যবহার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন নাহ।

পাশ থেকে মহিলাটি তেঁতে ওঠে বলে, তুমি ঐ মেয়েটাকে ধন্যবাদ বলছো কেনো? আর আমার ব্যবহারের জন্য সরিই বা কেনো বলছো? এই মেয়েটার জন্য আমার বাবুটা কখন থেকে কাঁদছে।

চুপ। একটা কথাও বলবা না তুমি। তোমার জন্য এখনি আমি আমার ছেলেটাকে হারাতে বলেছিলাম। এই আপুটা আমার ছেলেকে না বাঁচালে আজকে আমার ছেলেটীর কী হতো? তোমাকে বলেছিলাম না ওকে নিয়ে দোকানে না আসতে। কসমেটিকের দোকানে এলে তো তোমার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না। আমার…..

কণা আর কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করলো না। সে একটা রিকশা ডেকে ওঠে পড়লো। পাড়ি জমায় নিজের গন্তব্যের দিকে।

৩০

বর্তমানে বন্যা আর সাফাতের মাঝে চলছে তুমুল ঝগড়া। ঝগড়া বললে ভুল হবে কারণ বন্যা একাই বকবক করে যাচ্ছে সাফাত চুপচাপ বন্যার কথা শুনে চলেছে। বন্যা রেগে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুন দিয়ে যেন সাফাতকে এখনি ঝলসে দিবে। বন্যার রেগে যাওয়ার কারণ হচ্ছে লাবণী। লাবণী সাফাতের কলিগ। সুন্দরী আর স্মার্ট। সাফাত লাবণীর সাথে কথা বলেছিল বলেই বন্যা রেগে গেছে।

তোমাকে বলেছিলাম না ঐ লবণের সাথে কথা বলবা না। তারপর তুমি লবণের সাথে কথা বলছো। যেখানে আমি কথা বলতেই বারণ করছি সেখানে তুমি ঐ লবণের সাথে কথা বলে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছো। তুমি এখন আর আমার একটা কথাও শোনো না। শুনবে কেনো? আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি। আমাকে তো আর এখন ভালো লাগবে না। ভালো লাগবে তো ঐ লবণকে। ঐ লবণ শাকচুন্নি আমার জামাইরে কাইড়া নিল। নামটাও যেমন তিতা দেখতেও তেমন তিতা। ঐ লবণ কী দেখতে আমার থেকেও বেশি সুন্দরী? আমার………

সাফাত বন্যার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়। তারপর কপালের উপর পড়ে থেকে চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে,

পরাণ যায় জ্বলিয়া রে……
পরাণ যায় জ্বলিয়া ……
কী গো? জ্বলে নাকি বুকের ভিতর?

বন্যা রেগে উত্তর দেয়, আমি তোমার বোন না হবু বউ। তাই জ্বলাটা স্বাভাবিক না?

বন্যার কথা শুনে সাফাত হেসে দেয়। এটাই যেনো সাফাতের ভুল ছিল। বন্যা রাগে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ধুম সাফাতের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়। এতে যেনো সাফাতের হাসি আরো প্রসারিত হয়। বন্যা রেগে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। সাফাত বন্যার গাল টেনে ধরে। বন্যা নিজের গাল ছাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সাফাত টুপ করে বন্যার গালে একটা চুমু এঁকে দেয়। বন্যা সাফাতের দিকে আড় চোখে তাকায়। অতঃপর দুজনেই ফিক করে হেসে দেয়।

কেউ একজন যে তাদের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এটা হয়তো তারা খেয়ালই করেনি। তাদের ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা অন্যের চোখের পানির কারণ সেটা হয়তো তারা কখনো জানতেই পারবে না।

৩১

কণা ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে আসে আজকে ঐশির সাথে আড্ডা দেয় না। তার কেমন যেনো অস্থির লাগছে কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। কণা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রুমে ঢুকেন তিশান আহম্মেদ। তিশান আহম্মেদের হাতে মোটামুটি আকারের বাক্স। কণা বুঝতে পারছে না তার বাবা এই বাক্সটা নিয়ে তার রুমে কেনো এসেছে? আর এই বাক্সটাতেই বা কী আছে? তিশান আহম্মেদ বাক্সটা কণার সামনে রাখে।

তোর নামে পার্সেল এসেছে।

কে পাঠিয়েছে?

নাম নেই।

আজব ব্যাপার। যে পার্সেলটা পাঠালো তার নাম নেই। আর আমাকেই বা কে পার্সেল পাঠাবে। আমাকে পার্সেল পাঠানোর মতো তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কী আছে এটার ভিতরে?

আমি জানি না। তুই নিজে খুলে দেখ।

কথাটা বলতে বলতে তিশান আহম্মেদ কণার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কণা তার বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার বাবা এতো অদ্ভুত কেনো? অন্য কোনো মানুষ হলে এতক্ষণে প্রশ্নের ঝড় তুলে ফেলতো। কে এটা পাঠিয়েছে? তোকে এসব কেনো পাঠাবে? ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু তার বাবা নির্বাক। যেনো এটা খুব সাধারণ বিষয়। কণা ওব বাক্সটির ওপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে। বাক্সটির ওপর বড় বড় করে লেখা

❤ ধূলিকণা ❤

কণা নামটা দেখে অবাক হয়ে যায়। ‘ধূলিকণা’ এমন অদ্ভুত নামেও কেউ কাউকে ডাকে। কণা বাক্সটা খুলতেই দেখতে পায় হরেক রকমের চকলেট। এতো চকলেট দেখে সে অবাক হয়ে যায়। সাথে একটা চিরকুটে লেখা।

আমার চকলেট পাগলির জন্য সামান্য উপহার। তোমার জন্য বিকালে একটা সারপ্রাইজ আছে।

এগুলো দেখে কণার অজান্তেই কণার ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি ফুটে ওঠে। কণার হাসিমুখ দেখে আরেকজন তৃপ্তির হাসি হাসে।

৩২

বন্যা বাসার ভিতর প্রবেশ করতেই দেখতে পায় একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা বসে আছে ড্রয়িংরুমের সোফায়। তাদের ঘিরে বসে আছে পরিবারের বাকি সদস্যরা। এই দুজনকে বন্যার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে। পরিচিত কারো সাথে মিল পাচ্ছে কার সাথে মিল পাচ্ছে বুঝতে পারছে না। সে এটা নিয়ে মাথাও ঘামায় না। নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সে এই পরিবার কোনো কিছুতেই থাকতে চায় না এবং থাকেও না। বন্যার আর নিজের রুমে যাওয়া হলো না। তার আগেই তার বড় মামির মুখে নিজের নাম শুনে দাঁড়িয়ে যায়।

এই তো বন্যা চলে আসছে।

বন্যার বড় মামির কথা শুনে ভদ্র মহিলাটি বসে থেকে ওঠে দাঁড়ায়। বন্যার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

তুই তাহলে বন্যা। বাহ অনেক বড় হয়ে গেছিস দেখা যায়।

বন্যা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। অপরিচিত কারো কাছ থেকে তুই সম্বোধন শুনতে পছন্দ করে না। আর সে তুই সম্বোধনের সাথে এতো অভ্যস্ত নয়। বাইরের মানুষের সামনে সে নিজের বিরক্তিটা প্রকাশ করতে পছন্দ করে না। চোখ মুখ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেয়।

জ্বী আমিই বন্যা। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।

নিজের মাকে ভুলে গেলি?

বন্যা বুঝতে পারে এটাই তার মা। যে জন্ম দিয়ে একটা বাসায় আশ্রিতা রেখে নিজে দায় মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আজ এতো বছর নিজেকে মা বলে দাবি করছে। কথাগুলো ভাবতেই কণার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।

আমার তো মা নেই। তাই ভুলার প্রশ্নই আসে না।

তাহলে আমি কে?

সেই প্রশ্নটা আপনি নিজেকেই করুন। শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। মা হতে হলে যোগ্যতা লাগে।

বেশ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতে শিখে গেছিস দেখা যায়। তোর মা হতে হলে আমার যোগ্যতা লাগবে? হা হা হা। মেয়ে হতে হলেও যোগ্যতা লাগে। তোর মা হওয়ার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। আমার যে দুটো সন্তান আছে তাদের মা হলেই হবে। তোর ভাব দেখার জন্য আমি তোর সাথে কথা বলতে আসিনি। আমি তোকে কিছু বলতে চাই।

বন্যা কথাটা যাস্ট ইগনোর করে চলে যায়। সে শুনতে চায় না এই মহিলার কথা। সে প্রয়োজন বোধ করছে না এই মহিলার কথা শোনার। আনজুম বেগম ( বন্যার মা ) অনেক কিছু বলছেন কিন্তু বন্যা সেই কথাগুলো কর্ণপাত করলো না। নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসেই বন্যা হতভম্ব হয় যায়। তার রুমে দু দুটো ছেলে বসে আছে।

চলবে……