তুমি কবে আমার হবে পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
423

#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পর্ব_২৭ (শেষ)

লেখিকা #sabihatul_sabha

এই সাবধানে নাম,এই সময় একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।
আমি শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম এতো নিয়ম মানতে ভালো লাগে না।
~কিছু করার নেই মেনে চলতে হবে।পাঁচ মাস চলছে। এই সময় সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।

কেউ মনে হয় কিছুই বুঝছেন না। ওকে আমি বলছি…

(ওই দিন অভি কে এসে ওর প্রাক্তন প্রেমিকা জরিয়ে ধরে। তারপর অভি ওই মেয়েকে সরিয়ে আবার আমাকে কিছু বলতে আসে ততক্ষণে আমি রিক্সায় উঠে পরি।রিক্সা ছেড়ে দেয় অভি অনেক বার পিছু ডাকে কিন্তু আমি আর ফিরে তাকাই নি।
বাসা এসে শুনি আম্মুর নাকি ছেলে পছন্দ হয়েছে। আমারো অভির উপর রাগ ছিলো।পেয়েছেটা কি লোকটা।তাই ছেলে না দেখেই মাকে বলে দেই,
~তোমার ইচ্ছে হয় তাই করো।
তারপর আমার বিয়ে হয়ে যায়।
যখন রাতের ১টায় আমার রুমে আমার স্বামী আসে। এসে দেখে আমি ঘুমিয়ে আছি।

সকালে উঠেই এক চিৎকারে বাসার সবাই আমাদের রুমের সামনে।
~স্যার আপনি আমার রুমে আমার খাটে কি করছেন?
স্যার আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,’দেখো তো ভালো করে এটা কার রুম!!
আমি রুম দেখার আগেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে দরজার দিকে তাকালাম।
স্যার গিয়ে দরজা খুলতেই সাফা দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,’ কিরে নূর তুই ঠিক আছিস তো?
স্যারঃ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,’ কেনো রে আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তর ফ্রেন্ড ঠিক থাকবে না।
সাফাঃ না মানে ভাই।তাহলে চিৎকার করলো কেনো?
রুদ্রঃ তোর ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস কর!
তখন মেঘ বলে উঠলো, ‘ কিসের ফ্রেন্ড ও কোনো আমাদের ফ্রেন্ড না। আগে ছিলো কিন্তু এখন ব্রেকাপ।
মেঘা মেঘের মাথায় চাপর মেরে বললো,’ গাধা এটাকে ব্রেকাপ বলে না রে’

মেঘঃ ওই তোই আমাকে মারলি কেনো? আর একদম গাধা বলবি না আই এম চালাক..

মেঘা কিছু বলবে তখন আমি বললাম, ‘ তোরা সবাই এখানে?

হা ওরা সবাই এখানে শুধু আমি বাদ পড়ে গিয়ে ছিলাম, আমিও চলে এসেছি..।

~শান্ত স্যার আপনি?
শান্তঃ আরে শালিকা ওরফে ভাবি আপনি আমাকে স্যার ডেকে লজ্জা দিবেন না প্লিজ। আমি আপনার এক মাত্র ননদীর এক মাত্র স্বামী।

আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। আমি আবার মেঘা কে বললাম,’ আচ্ছা সব বুঝলাম তোরা এখানে কেনো? আর আমার জামাই কই?
সবাই দেখি হা করে আমার দিকে তাকাই আছে।আমি এমন কি বললাম আজব!! বিয়ের আগে জামাই দেখতে পারি নাই বইলা কি এখনো দেখতে পামু না নাকি।
তখনি দেখি হাসতে হাসতে স্যারের আম্মু আমাকে এসে বললো,’ সে কি তুমি কাকে বিয়ে করেছো এখনো সেটাই জানো না!! ওকে সমস্যা নাই আমি একটু পরেই দেখিয়ে দিবো।এখন ফ্রেশ হয়ে নাও। একটু পর অনেক মানুষ আসবে নতুন বউ দেখতে।
সাফা নূরকে রেডি করিয়ে নিয়ে আয়। বলে আন্টি চলে গেলো।

মেঘাঃ দেখেছিস মেঘ, নূর কিভাবে বললো,” তোরা এখানে কি করতে আসছোস” কত বড় অপমান করলো।
মেঘঃ হুম হুম! বিয়ে হলে সবাই পর হয়ে যায়। দেখলি না বিয়ে করে নিলো। একবার জানালোও না। বলি এই ছিলো তোর মনে । আমরা কি জানলে বিয়েটা আটকে দিতাম নাকি খাবার শেষ করে ফেলতাম কিপটা মাইয়া। ইসস আমাদের জিজুটা কত ভালো। আজ জিজু না বললে তো জানতামি না বিয়ের কথা।
মেঘাঃ ঠিকি বলেছিস। আমরা কি পর ছিলাম ওয়াশরুমে গেলেও তকে বলে যেতাম আর তুই কিনা বিয়ে করে নিলি না বলে?

~কই কোনো দিন তো ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে বলে যাসনি।
মেঘাঃ এই টা তো কথায় কথা বলছি বা**।
~আসলে তোদের জানাতাম তো।
মেঘাঃ কবে জানাতি হা, আন্টি হয়ে যেতাম তার পর!!
~আরে এতো রেগে যাস কেনো আজ কেই জানাতাম।
সাফাঃ বলি আমি তো তোর ছোট্ট বেলার ফ্রেন্ড কই আমাকে ওতো একবারো বললি না।
~আচ্ছা সাফা তোর কি আর কোনো ভাই আছে?
সাফাঃ কেনো রে? দেবর লাগবে বুঝি!!
মেঘঃ নূর তুই চাইলে আমাকে দেবর ভাবতে পারিস। আমার আবার দেবর ডাক শুনতে হেব্বি ভাল্লাগে।
~থামবি তোরা।আমি আছি আমার চিনতায়। আম্মু এতো বার করে বললো। তাও কেনো যে ছেলের ছবি দেখলাম না। এখনো কার সাথে বিয়ে হইছে তাও জানিনা।
মেঘাঃ দুস্ত সত্যি জানোস না!!
মেঘঃতুই ছেলের ছবি দেখস নাই?নাম ও শুনছ নাই?
সাফাঃ আরে ভাই সব বাদ দে। কাল রাতে কি কিছুই হয় নাই!!?
~ কাল রাতে কি হবে?
সাফাঃ ওলে লে লে বাবুটা কিচ্ছু বুঝে না৷ ওই মেঘা ওর হাতে একটা ফিটার ধরাই দে তো।
~সাফার বাচ্চা কাল রাতে কি হবে আমি তো জামাই আসার আগেই ঘুমাই গেছি।

আমার কথা শুনে সব গুলা এক সাথে,’কিইইইইইইই!!!

——

সেজেগুজে বসে আছি স্যারদের ড্রয়িং রুমের সোফায়।আমার সামনে কতোগুলো মহিলা বসে আছে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে।
হটাৎ সামনে এসে দাঁড়ালো অভি আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উনার কন্ঠ শুনে উপরে তাকালাম। দেখেই মনে হলো আমার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে অভি।
অভি একবার রুদ্রের দিকে আরেক বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
রুদ্রঃ তোর ভাবি।
অভিঃ এটা!!!?
রুদ্রঃ হুম।
অভিঃ মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। খুব মানিয়েছে তোর সাথে। সারা জীবন একসাথে থাক দোয়া রইলো।

রুদ্র স্যার আমার কাছে এসে বললো,’এই যে হাতটা ধরলাম মৃত্যুর আগে আর ছারবো না।

আরাল থেকে একজন চলে গেলো।হে আজ কাঁদবে সে খুব কাঁদবে। এটা যে একতরফা ভালোবাসার কান্না। কেনো গেলো সে এই রুদ্র নামের মানুষটাকে ভালোবাসতে। আজ সে মন খোলে কাঁদবে তারপর রুদ্র নামের কাউকে ভালোবাসতে তা ভুলে যাবে।

রুদ্র এখনো আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।

অভি কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেছে। অভি গেইটের কাছে এসে ভাবছে ওই দিনের কথা, নূর চলে যাওয়ার পর অভি রুহির গালে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় মারে। তারপর আরো অনেক কথা বলে কিন্তু রুহি তাও এসে অভির পায়ে ধরে ওকে ক্ষমা করে আবার আগের মতো ওর জীবননে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু অভি ওকে রাস্তায় ফেলেই চলে যায়।
অভির আজ কষ্ট হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ও কোনো দিন নূরকে সুখে রাখতে পারতো না। কিন্তু রুদ্র পারবে। আর নূর সুখে থাকলেই সে খুশি।

——

এভাবেই কেটে গেলো তিনটা বছর। এই তিন বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে।
কে বলে মানুষ দ্বিতীয় বার কারো মায়ায় আটকে পরে না। সঠিক মানুষ পেলে দ্বিতীয় বার প্রেমে পরতে বাধ্য। আজ আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে রুদ্র স্যার। ওনার কেয়ার, ভালোবাসা সব কিছু আমাকে ওনার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছে। আজ আমি প্রেগন্যান্ট পাঁচ মাস চলছে। বাসার সবাই খুব খুশি।শুধু নতুন অথিতি আসার অপেক্ষা।

সাফা আর রুদ্রের সম্পর্ক আগের মতোই আছে টম এন্ড জেরি। তবে একজন আরেক জনকে ভিষণ ভালোবাসে।

মেঘা আর আবিরের সম্পর্ক এখন আর সিনিয়র ভাইয়া নেই। মেঘা আর আবিরের মধ্যে বন্ধুত্য হয়। বন্ধুত্য থেকে ভালোবাসা। এখন ওদের সম্পর্কের কথা সবাই জানে। আর খুব তারাতারি ওদের সম্পর্ক নতুন মুর নিবে।

দিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে ওর স্বামী ডক্টর সানি। দিয়া যখন ভেঙে পরে তখন সানি ওকে শক্ত হয়ে উঠে দাড়াতে সাহায্য করে। আজ ওদের একটা ছেলে আছে দেখতে পুরো দিয়ার মতো।ওর নাম আদিত্য।

——

শান্ত ঘুমিয়ে আছে মনে হয় রাত ১টা বাজে। সাফা উঠেই কান্না শুরু করে দিয়েছে। শান্ত বিরক্ত হয়ে কানে বালিশ চাপিয়ে ধরলো।
সাফা এবার আরো জোরে কান্না শুরু করলো।
শান্তঃ কি হয়েছে?
সাফাঃ আমার বেবি লাগবে..বলে আবার কান্না শুরু।
শান্তঃ ঠিক আছে, কালকে মার্কেট থেকে এনে দিবো। এখন ঘুমাও।
সাফাঃ না আমার এখনি লাগবে।
শান্তঃ এখন বেবি….কি লাগবে তোমার? বলে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
সাফাঃ আমার বেবি লাগবে। নূর আমার পরে বিয়ে করে আজ বেবির আম্মু হয়ে যাচ্ছে। আর আমি…আবার কান্না শুরু।
শান্ত সাফার কথা শুনে হাসতে শুরু করলো।
সাফাঃ হাসেন কেনো। আমার বেবি চাই মানে চাই।
শান্তঃ আচ্ছা বলে লাইট বন্ধ করে দিলো।

সমাপ্ত…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।