তুমি কবে আমার হবে পর্ব-৩+৪

0
333

#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পার্ট_৩
লেখনিতে #sabihatul_sabha

~তাহলে শুনো,

…..
আম্মু আম্মু তুমি কই…
আম্মু: আনিকা বেগম হাতে খুন্তি নিয়ে এসে কি হইছে গাধার মতো চিৎকার করতেছিস কেনো।
~আম্মু আপু কি বলতেছে এই সব কি সত্যি? রেগেমেগে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি।
আম্মু: কি বলছে নুসরাত?আপুর দিকে তাকিয়ে।
আপু:আম্মা আমি বলছি আজকে কলেজ না যেতে। আজতো ওকে দেখতে আসবে।
আম্মু:ঠিকি তো বলছে, আজ কলেজ যেতে হবে না। আজ তোকে দেখতে আসবে আমার বান্ধবীর ছেলে,মাশাল্লাহ ওনেক লক্ষি একটা ছেলে।

~আম্মু আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমার বয়স কতো। আমি তোমাদের এতোটাই পর হয়ে গেছি যে আমাকে তারানুর জন্য এতো পাগল হয়ে গেছো।
আম্মু :এতো কথা আমি শুনতে চাই না। ছেলে ভালো আর আমার বান্ধবীকে আমি না করতে পারবো না।নুসরাত ওকে সুন্দর করে শাড়ি পড়ে রেডি করিয়ে দে। এই বলে আম্মু রান্না ঘরে চলে গেলো। ওনেক কাজ বাকি বান্ধবী আসবে অনেক দিন পর প্রিয় বান্ধবী সাথে দেখা হবে জমিয়ে আড্ডা দিতে হবে আর এখন তো বেয়াইন হতে চলছে।

~আপু আমি এই বিয়ে করবো না আমার বয়স কতো বলো ছলছল চোখে আপুর দিকে তাকালাম (আমি কি করে বলি, আমি যে এক জন কে প্রথম দেখায় আমার এই ছোটো মনে জায়গা দিয়ে দিছি। আমি ওই মানুষ টাকে বাঁধে আর কাওকে বিয়ে করবো না,জীবনের প্রথম কাওকে ভালো লাগছে। কিন্তু বিয়ে আটকাবো কিভাবে, নূর কিছু তো একটা আইডিয়া বের কর,মনে মনে ভাবছি)
আপু: দেখ নূর দেখতে আসলেই কারু বিয়ে হয়ে যায় না। আর আমি আম্মার উপরে কোনো কথা বলতে পারবো না। তুই এদিকে আয় আমি তকে রেডি করিয়ে দেই। এই বলে আপু আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো, সুন্দর করে চুল বেঁধে দিলো, হাতে চুরি, মুখে হালকা মেকআপ বাস শেষ।মাশাল্লাহ কারো নজর না লাগে। তকে তো পুরা নীল পরি লাগছে। নীল শাড়ি,নীল চুরি,নীল টিপ,সব মিলিয়ে দেখতে পুরাই নীল পরি লাগছে। আমি আপুর দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকালাম বিরক্ত লাগছে সব কিছু। এমনি দেখি কলিং বেল বেজে ওঠেছে নিশ্চই ছেলে পক্ষ চলে আসছে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না এবার কেঁদেই দিলাম।আপু দমক দিয়ে বলতেছে মেক-আপ নষ্ট হয়ে যাবে যেনো কান্না না করি।একটু পরেই আম্মু ডাকতেছে।
আম্মু:নুসরাত নূর কে নিয়ে আয় তো।
আপু:চল আম্মা ডাকছে।
~পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছি। আমি এখনো সামনে তাকাইনি। সব কিছুই বিরক্ত লাগছে, এভাবে সামনে সং সাজিয়ে রাখার মানে মাথায় ডুকছে না। আম্মুর কোথাকার কোন বান্ধবী আমি তো কোনো দিন দেখিওনি শুধু কয়েক বার আম্মুর মুখে উনার কথা শুনছি।
আন্টি:তো মা তুমি কেমন আছো?
~জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।এই বলে সামনে তাকিয়ে আমি স্তব্ধ আমি কি জেগে জেগে সপ্ন দেখছি,নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটলাম। না এটা তো সপ্ন না সত্যি। এটা কি করে সম্ভব ওনি কি ছেলের ভাই নাকি বন্ধু আল্লাহ লাস্ট পর্যায় ক্রাশ এর ভাবি হতে হবে।

আন্টি :আনিকা দেখ আমার ছেলে অভি,বলেই উনার দিকে তাকালেন আমি এবার যেনোকথা বলার বাসা হারায় ফেলছি। চোখ চিকচিক করে উঠলো খুশিতে।তাহলে মিস্টার ক্রাশের নাম অভি ওনেক সুন্দর নাম তো।
আম্মু :মাশাল্লাহ।
আন্টি:তুই যদি কিছু না মনে করিস একটা কথা বলতাম।
আম্মু:আরেহ বল।
আন্টি :আমি আজি চাই তোর মেয়েকে আমার ঘরে তুলতে। পরে অনুষ্ঠান করবো।

~আমি চমকে উনার দিকে তাকালাম,তাকিয়ে দেখি উনার মুখ লাল হয়ে আছে, আচ্ছা উনি কি লজ্জা পাচ্ছেন না হলে মুখ এমন লাল কেনো,চোখে চোখ পরতেই আৃি চোখ ফিরিয়ে ফেললাম, আমার মনে হলো উনি আমাকে কিছু বলতে চায়।

আমি এখন অভির রুমে বসে আছি, এখনো মনে হচ্ছে আমার সব কিছুই সপ্ন এতো তারাতারি ভালোবাসার মানুষ টিকে পেয়ে যাবো ভাবতেও পারিনি।সন্ধার দিকে বিয়ের কাজ শেষ এখন বাজে রাত ১২টা আমি অভির রুমে বসে আছি।যত বার ভাবি উনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ভাবতেই লজ্জায় বুক ঢিপঢিপ করছে আমার।

আমার ভাবনার মাখে ছেদ ঘটল দরজা লকের শব্দে।আমি মূহুর্তেই বুঝে ফেললাম অভি এসেছে।আমি আরো নুয়ে বসলাম।ভারি শাড়ি আরওরনার কোনা দুহাতে মুট করে দরলাম।রাতের সাজ্জ এখনো খোলা হয়নি।সবটা যেনো সপ্ন মনে হচ্ছে আমার কাছে।সব কিছু কেমন যেনো অগোছালো এলোমেলো হয়ে ঝটপাকিয়ে যাচ্ছে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছি না। আমার চোখের সামনে ফ্লোরে কটমট সব্দ তুলে কালো সু এসে থামলো।রাশ বারি কন্ঠে বলে ওঠলো…

চলবে…
লেখার হাত ভিশন কাঁচা,ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পর্ব_৪
লেখিকা #sabihatul_sabha

আমার চোখের সামনে ফ্লোরে কটমট শব্দ তুলে কালো সু এসে থামলো।রাশ বারি কন্ঠে বলে ওঠলো, আমার খাট থেকে নামুন, খুবই শান্ত কন্ঠে বললেও ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠল। আমি উঠে সালাম করতে গেলাম, আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো, আমি ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলাম। অবাক চোখে সামনের মানুষ টার দিকে তাকিয়ে আছি। উনার চোখ দুটি অসম্ভব লাল হয়ে আছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছেন,কিন্তু কেনো?আমার ভাবনা ছেদ গুটিয়ে উনি বলে ওঠলেন।

~দেখো মেয়ে আমি তোমাকে কোনো দিনও নিজের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা, যত পারো আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে, আমি শুধু মায়ের কথা রাখার জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি,।
~আমি বিরবির করে বললাম আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন অভি ভাইয়া, আমার চোখে পানি চিকচিক করছে, গলায় কথা আটকে আসছে, আমার মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমার গলা চেপে ধরে আছে, আমার মাথা বনবন করছে,আবারও উনার দিকে তাকালাম।

~লাইক সিরিয়াসলি আমি তোমার সাথে মজা করবো,তোমাদের মতো মেয়েদের সাথে,যারা বড় লোক,সুন্দর, স্মার্ট, ছেলে দেখলেই বিয়ের জন্য নাচতে নাচতে রেডি হয়ে যায়। শুনে রাখো আমি একজন কে ভালোবাসি কিন্তু মার ওকে পছন্দ না, তোমার মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে কিভাবে পছন্দ করলো বুঝলাম না। তিন মাস পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো,এই তিন মাস তুমি আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবে না। আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে। এমন সময় উনার ফোন বেজে উঠলো…
~….
~রুহি তুমি এখন কোথায়,কিছুটা অস্থির হয়ে বললেন।
~……
~দেখো রুহি পাগলামো করো না, আমি এখনি আসছি। এই বলেই উনি রুম থেকে চলে গেলেন।

~আমি এখনো অবাকের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারিনি,দপ করে ফ্লোরে বসে পরলাম,আচ্ছা আমি কি এতোক্ষন সপ্ন দেখেছি, তাহলে আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে কেনো,চোখে হাত দিলাম মন চাচ্ছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলি আমার সাথে এমনটা কেনো হলো, আমি তো আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম,আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত, যেখানে আজ স্বামী স্ত্রী হাজারো সপ্ন দেখে, রাত পার করে একে ওপর কে চিনে জানে আপন করে নেয়, সেখানে আমার স্বামী অন্য নারীর কাছে।চোখের পানি যেনো বাদ মানছে না আজ, এত কষ্ট কেনো হচ্ছা স্বামী বলে নাকি ভালোবাসি বলে?, আজ কোনো কথার উওর নেই আমার কাছে।কতটা সময় এভাবে বসে ছিলাম জানিনা, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি নিচে শুয়ে আছি, মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে, মনে করার চেষ্টা করলাম কাল রাতে কি কি হয়েছে, আসতে আসতে সব কিছু মনে পরলো চোখ আবার জলে ভরে উঠলো। উঠে একদম গোসল করে নিলাম, শরীর এখন অনেকটা হালকা লাগছে। বসে বসে ভাবছি অনার বলা কথাগুলো। উনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন,ভালোবাসা তো পাপ নয়, ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়া খুবি কষ্টের। আচ্ছা আমি কি এখান থেকে চলে যাবো, সব ভালোবাসা যে পূর্নতা পেতে হয় এমন কোনো কথা নেই, আমি না হয় অপূর্ণ ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিবো। প্রিয় মানুষটি ভালো থাকা মানেই আমি ভালো থাকা। উনি ভালো থাকলেই আমি খুশি। এই সব ভাবছি এমন সময় উনি রুমে কিছু বলতে এসে থেমে গেলেন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

~কালো শাড়ি, কালো চুরি, কালো টিপ,গোলাপি ঠুটঁ,ফর্সা শরীর,গোলগাল চেহারা৷ একদম কালো পরি বসে আছে মনে হয়। হঠাত উনি অন্য দিকে ফিরে গেলেন, না না এই সর্বনাশিনী মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না। আমি নিজের প্রতি নিজে কখন কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো। এই মেয়ের মধ্যে আলাদা কিছু আছে কাল রাতেও কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার গলায় আটকে গিয়ে ছিলো, আর তাকাবো না আজ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে রুমে আসবো নিচের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে যাবো তাও এই মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না।
~কিছু বলবেন?
~হুম মা বলছে নিচে যেতে।
~আচ্ছা,(এই কথাটাও ঠিক করে বলতে পারেন না এভাবে গম্ভীর হয়ে বলার কি আছে আজব, মনে মনে বললাম।)
~আর শুনো?
~জি বলেন।
~আমাদের মধ্যে কাল রাতে যা হয়েছে তা যেনো কেউ না যানে। তিন মাস পর আমি নিজেই সবাইকে জানিয়ে দিবো।
~আমি উনার দিকে শান্ত চোখে তাকালাম, উনি হয়তো মেয়েটাকে একটু বেশি ভালোবাসেন। আমি নাহয় আমার ভালোবাসার মানুষ নাই পেলাম কিন্তু উনি যেনো উনার ভালোবাসার মানুষ পায়। উনার জন্য না হয় এটুকুই করলাম। তারপর থেকে উনি রুমে নিচের দিকে তাকিয়ে আসেন সারা রাত ব্যলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলেন, আমি প্রতি রাতে বেলকনি থেকে হাসির শব্দ পাই, প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো ওনেক কান্না করতাম,মনে হতো কেউ যেনো আমার বুকে ছুরি দিয়ে প্রতি নিয়তো আঘাত করছে। তবে এখন সব সয়ে গেছে,বলে ওর দিকে তাকালাম।

…..বর্তমান
আরে আরে মিম তুমি কেনো কান্না করছো,ও কিছু না বলেই আমাকে জরিয়ে দরলো,ভাবি ভাইয়া একদিন ভাইয়ার ভুল বুঝতে পারবে,কিন্তু ভুল বুঝতে বুঝতে না তোমাকে হারিয়ে ফেলে।ভাবি আমার ভাইটা কোনটা কাচ আর কোনটা হিরা বুঝলো না।
~এভাবেো বলো না মিম, তোমার ভাই সত্যি ওই মেয়েকে ভালোবাসে, দেখেছো মেয়েটা অনেক সুন্দর। তোমার ভাইয়ার পাশে খুব মানাবে।তোমার ভাইয়া খুশি আমিও খুশি।
~ভাইয়ার পাশে এক মাত্র তোমাকে মানায় ভাবি, আর কাউকেই ভালোলাগে না।
~একটু বেশি ভালোবাসো তো আমায় তাই,বলে ওর গাল টেনে দিলাম, তো আজ কে দিন টা কেমন গেলো তোমার।
~অনেক ভালো গেছে ভাবি।
~অনেক রাত হয়ে গেছে চলো বাসায় যেতে হবে।
~হুম চলো।

~রাতের খাবার খেয়ে বসে আছি, বার বার অভি আর ওই মেয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার মূহুর্তগুলো চোখের সামনে বেশে উঠছে।আপনি আমার হলে কি খুব বেশি অন্যয় হয়ে যেতো?।কি ভাবছি আমি যার মন জুড়ে অন্য কারু রাজত্ব সে কি করে আমার হবে।এমন সময় দেখি উনি রুমে আসলেন, মনে হয় এখনি আসেছেন বাসায়,এসেই ফ্রেশ হয়ে নিলেন।
~ আমি জিজ্ঞাসা করলাম খাবার দিবো কিনা?
~না আমি ডিনার করে এসেছি।বলেই বেলকনিতে চলে গেলেন, আজ মনে হলো অনেক খুশি উনি,হবেই তো প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটানোর পর কেই বা খারাপ থাকে, আবারও চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গরিয়ে পরলো ।বেশি কিছু না ভেবে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে…..
লেখার হাত ভিশন কাঁচা, ভুলত্রুটি মার্জনীয়।